ভালোবেসেছি_তোরই_মতো পর্বঃ১৫,১৬

0
1983

ভালোবেসেছি_তোরই_মতো
পর্বঃ১৫,১৬
লেখিকাঃ শাদিয়া_চৌধুরী_নোন
পর্বঃ১৫

নোরিন চিৎকার না করলেও চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। নিবিড় নোরিনের সহনশীলতা দেখে অবাক। এতো ব্যাথাও কেউ সহজে মেনে নিতে পারে? দেখে মনে হবে যেন শুধু মাথায় বারি খেয়েছে।

সবার মাঝে নোরিনের গাছ থেকে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই, আতঙ্ক ছড়িয়ে পরলো। নোরিনের বাবার কানে এই খবর পৌঁছলে তিনি তুলকালাম কান্ড বাঁধাবেন। একমাত্র মেয়ে তার৷ গায়ে সামান্য আঁচড়ও লাগতে দেন না। একবার তো দিলারা নোরিনকে মেরেছিলো বলে, তিনদিন পর্যন্ত রাগ করে ছিলেন। নানুমণি উত্তোজিত হয়ে পরলো ভীষণ,
—- আমার সুন্দরী বানু গাছ থেইকা পড়লো কেমনে? আমার বাছাটা! ঘরে মানুষ ছিলো না? মা ছাড়া মাইটারে তোমরা দেইখা রাখলা না? কত আর বয়স! আমার নোর রে…..!! আজমল শুনলে আর এখানে থাকতে হবে না।
নানুমণি কথা বলতে বলতে একেবারে কেঁদে দিলেন।

এপার্টমেন্টের নিচে নিবিড়ের মা হলুদের বাটি নিয়ে গেলো। নোরিন ঠোঁট কামড়ে হালকা গোঙাচ্ছে। নাক লাল হয়ে গেছে। নিবিড় এখনো শার্ট উপরে তুলে আছে। নোরিনের অবস্থা খারাপ। নিবিড়ের মা তেমন কিছুই করলেন না৷ স্বাভাবিক ভাবে এসে হলুদ গুঁড়ো লাগিয়ে দিলেন। নোরিনকে নড়তে দেখেই বললেন,
—- মামণি লজ্জা পেতে হবে না। বাচ্চা মেয়ে। এতো লজ্জার কিছু নেই৷

নোরিন ভেতরে গুড়গুড় হয়ে যাচ্ছে। কিছু বলতে পারছে না। নিবিড় এভাবে থাকলে, ও তো আর নিজেকে ধরে রাখতে পারবে না। ক্রমশই ভেঙে পড়বে।

নিবিড় তার মা’কে উদ্দেশ্য করে বললো,
—- ও’কে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। এভাবে হবে না৷ একটা এক্স-রে করিয়ে আনলে ভালো হবে।

নোরিন মনে মনে নিবিড়কে গালি দিলো, ব্যাটা আমি তোকে এক্স-রে মেশিনে ঢুকাবো। আস্ত একটা কলুরবলদ। তখন পেছন থেকে ডাকলি কেন? আমিতো তোর ডাক শুনে ভয়ে পড়ে গেছি। তুই যদি কোনোদিন গাছে উঠিস, আমি তোকে ধাক্কা মেরে একেবারে ভূত বানিয়ে দেবো।

নিবিড় পাঁজকোলে করে নোরিনকে গাড়ি অব্দি নিয়ে গেলো। জেরুও গেলো। নোরিন আকুল স্বরে নিবিড়ের মায়ের অর্থাৎ মিসেস আয়েশার হাত ধরে বললেন,
—- প্লিজ আপনি আমার চলুন। আমি বাবাকে ছাড়া কোনোদিন হসপিটাল যাইনি। আমার ভয় করছে।

মিসেস আয়েশার চোখে জল চলে এলো। মা হারা মেয়েটাকে পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
— মামনি ভয় পেয়ো না। বিয়েবাড়ি না হলে আমি অবশ্যই যেতাম৷ এতো ঝামেলা, বাড়ি ভর্তি আত্মীয় আমাকে একা সামলাতে হচ্ছে। তোমার নিবিড় ভাইয়া একটু দুষ্টু হলেও সামলাতে পারবে। তুমি যাও মা,ভয় পেয়ো না।
মিসেস আয়েশা কেঁদে কেঁদে বিদায় দিলেন। নোরিনের জন্য কষ্টে বুকটা ফেটে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আহা এতো মিষ্টি একটা মেয়ের নাকি মা নেই। চোখের দিকে তাকালেই মায়া হয়। কেমন করে হাত ধরে ছিলো! ভয় পেয়েছে খুব।

গাড়িতেও নোরিন কাঁদল। ব্যাথায় নয়, মায়ের জন্য। মা’কে ভীষণ মনে পড়ছে। মা’কে শেষবিদায় হাসপাতালেই দিয়েছিলো। মা হাসপাতালের বেডে শুয়ে তার হাত ধরে ওয়াদা করিয়েছিল। নোরিনের সেই মুহূর্তটা এখনো চোখে ভাসে। দিলারা নোরিনের হাত ধরে বলছিলো,
—- মা’রে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি বোধহয় আর বাঁচব না। আমার জানটাকে আমি পৃথিবীতে রেখে যাচ্ছি। আমার মেয়েটা যে তার মা’কে ভীষণ ভালোবাসে। শুধু মায়ের কথায় শোনে।

নোরিন কান্না জন্য কথা বলতে পারছিলো না৷ মায়ের প্রত্যেকটা কথা তার কলিজা এফোঁড়ওফোঁড় করে দিচ্ছিলো। দিলারা বলেই যাচ্ছিল,
— নোরিন, মা যদি না থাকি, কথা দাও ভালোমতো পড়ালেখা করবে? বড় হয়ে অনেক বড় কিছু করবে। নিজের নামে বড় হবে। কখনো অন্যের দয়ায় চলবে না৷ বাবার সাথে থেকো। আমিও না থাকলে, তোমার বাবা ভীষণ একা হয়ে পড়বে। ভালোমতো চলবে। মায়ের দোয়া সবসময় তোমার সাথে আছে৷ আমাকে গালি শুনিও না কোনোদিন, তোমার নামের সাথে যেন আমাদের নামও উজ্জ্বল হয় একদিন। পরকালে আমি তোমার কাছে হিসেব চাইবো। মা’রে আমার প্রাণটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমাকে শক্ত করে ধর।

দিলারার সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। নোরিন কি করবে বুঝতে পারছিলো না। আজমল সাহেব দিলারার অন্য হাত শক্ত করে ধরেছিলেন৷ কিছু সময় পর দিলারা নোরিনকে মা হারা করে চলে গেলো৷ নিজের মায়ের মৃত্যু চোখের সামনে সহ্য করতে পারেনি নোরিন৷ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সেই থেকে হাসপাতালে আসতে নোরিন ভয় পায়। আসলেও শক্ত করে বাবার হাত ধরে আসে যেন এই বুঝি বাবাকে অথবা ওকে কেউ নিয়ে গেলো। মায়ের বেলাতেই নোরিনের যত পাগলামি!

এতোদিন পর এতোসব কথা মনে পড়ায় নোরিন কান্নার গতি বেড়ে গেলো। মান-অভিমান, স্মৃতিকাতরতা, ভয়, রাগ, দৃঢ় প্রত্যয় সব যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো৷ জেরু কিছু বলেও শান্ত করতে পারলো না। নিবিড় ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিতে পারছে না৷
— বুড়ি কাঁদিস না। তুই ভালো হয়ে যাবি। কেনো এতো পাকনামো করে গাছে উঠতে গেলি বলতো? এখন কি হলো। প্লিজ কাঁদিস না৷

নোরিনের হুঁশ হলো। চোখ মুছে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো। এই নিষ্ঠুর লোকের সামনে কিছুতেই দুর্বল প্রমাণ করা যাবে না৷ জেরু পেছন থেকে মৃদু চিৎকার করলো,
— একি নিবিড় ভাইয়া কাঁদছো কেনো?

—- কই কাঁদছি? সূর্যের আলো চোখ বরাবর পরছে। চশমা আনিনি তাই পানি পরছে।

এক্স-রে রিপোর্টে দেখা গেলো,পা ভাঙেনি তবে চোট পায়েছে নোরিন। শুধু একটু মচকে গেছে তবে ভাঙেনি। ডক্টর সেখানে একটা পেঁচানো ব্যান্ডেজ করে দিলেন। মেরুদণ্ডে ব্যাথার জায়গায় স্প্রে করে ওষুধ দিলেন কিছু। নোরিন জেরুর গায়ে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললো বাকিটা সময়৷ নিবিড়কে ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেয়নি৷

রাতে নোরিনের গা কাঁপিয়ে জ্বর এলো। জ্বর এলে সে হুঁশে থাকে না৷ স্বপ্ন নাকি বাস্তব সব গুলিয়ে ফেলে। রাত ক’টা বাজে জানা নেই তার। নোরিন চোখ আদোআদো চোখ মেলে দেখলো, নিবিড় তার শিয়রের পাশে বসে আছে। নোরিনের প্রচন্ড অভিমান হলো। মাঝেমধ্যেই তো সে দেখে নিবিড় তার পাশে বসে আছে। আজ এতো দেরি কেন হলো?
— নিবিড় আমার গায়ে একটু হাত দিয়ে দেখো তো, জ্বর এসেছে বোধহয়।

নিবিড় কপালে হাত রাখলো।

নোরিন আবার অভিযোগের সুরে বললো,
— একি এতো দূরে বসেছো কেনো? আমার পাশে এসে বসো। আমি কি তোমার পর নাকি?

নিবিড় নড়লো না৷ নোরিন এবার নিবিড়ের হাত ধরে টানতে লাগলো। নিবিড়ের ঘড়ি খুলে ফেললো৷ শার্টের কাছে হাত রাখতেই নিবিড় কথা বললো,
— নোরিন এমন করিস না প্লিজ। সর্বনাশ হয়ে যাবে। সর্বনাশ হয়ে যাবে বলছি।

— আমি কিছু জানি না নিবিড়! আমার তোমাকে চাই। এক্ষুনি!

— নোরিন পাগলামি করিস না। শেষ হয়ে যাবো।

— শেষ হয়ে যেতে চাই নিবিড়৷ একেবারেই শেষ হয়ে যেতে চাই৷
.
.
সকাল হলো। নোরিনের ঘুম ভাঙলো খুব সকালে। মাথা চেপে শোয়া ছেড়ে উঠে বসলো। সারা শরীর ঘামে চিটচিটে হয়ে আছে। জ্বর আর নেই। তবুও মাথাটা ভারভার লাগছে। নোরিনের হঠাৎ কাল রাতের সব কথা মনে পড়ে গেলো। মাথা চেপে ভাবতে লাগলো, নিবিড় কি সত্যি এসেছিলো কিনা বাস্তবে? নোরিন লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো৷ প্লিজ গড! এটা যাতে স্বপ্ন হয়। নোরিন হাসফাস করতে করতে দেখলো, বিছানার এককোণে একটা ঘড়ি। এটা তো নিবিড়ের কালো রোলেক্স ঘড়িটা। নোরিনের মাথায় যেন বাজ পড়লো। গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেলো মুহূর্তেই। নোরিন আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না। রাতের গায়ে দেওয়া স্লিপিং স্যুট নিয়েই ট্রলি ব্যাগ গুছিয়ে আধ মচকানো ব্যান্ডেজ বাঁধা পা দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতেই নিবিড়দের বাড়ি ত্যাগ করলো। পোশাক পাল্টানোর সময় নেই। রাস্তায় লোকে যা বলবে বলুক, নোরিনের কিছু যায় আসে না তাতে। আগে এই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে। আর জীবনে আসবে না এখানে। বাড়ির সবাই গভীর ঘুমে মত্ত। নোরিন এক কাজের লোককে বলে এলো,নিচে তার বাবা এসেছে। নানুমনি জাগলে বলতে।
নোরিনকে খোঁড়ানো পা নিয়ে ট্রলি ব্যাগ বইতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হলো। রাস্তায় এসে রিকশা নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালো। লোকাল বাসে উঠেই, ড্রাইভারকে ফোন করলো। বাবাকে পায়ের কথা জানতে দেওয়া যাবে না৷ গুগল মেপ ঘেটে নোরিন নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি নিয়ে আসতে বললো ড্রাইভারকে। বাবা একটু পরেই অফিসে চলে যাবে৷ সরকারী গাড়ির সরকারী ড্রাইভার বাবাকে অফিসে নিয়ে যাবে, সুতরাং বাড়ির ব্যক্তিগত ড্রাইভারের চিন্তা আপাতত বাবার মাথায় থাকবে না। নোরিন সব কিছু ঠিক করে বাসের সিটে মাথা এলিয়ে দিলো। এই শহরে আর আসা যাবে না৷ বাসের কিছু লোক তার দিকে তাকিয়ে আছে বুঝতে পারলো সে। তবুও চোখ বন্ধ করে রাখলো। স্লিপিং ড্রেস পরে, পায়ে ক্যাটস নিয়ে, আবার একপায়ের গোড়ালিতে ব্যান্ডেজও দেখা যাচ্ছে; এমন এমার্জেন্সি পেসেন্জার তারা আজতক দেখেছে কিনা সন্দেহ!

———-
তারপর কেটে গেলো অনেকগুলো দিন। নোরিনের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ৷ রেসাল্টও দিয়ে দিয়েছে৷ মাঝখানের সময়টাতে বাবার সাথে বিদেশ ভ্রমণে গেলো। তারপর নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য৷ কয়েকদিন পরই আর্মির সার্কোলার বেরুবে। প্রেম-ভালোবাসাকে ঝাঁটা মেরে বিদেয় করে দিয়েছে জীবন থেকে৷ নিবিড় নামক কোনো প্রাণী এই পৃথিবীতে কেনো আশেপাশের কোনো গ্রহেও নেই৷ সেদিন রাতের পর থেকে নোরিনের ঘৃণা জন্ম নিলো সবকিছুর প্রতি৷ নিজের প্রতিও রাগ লাগলো৷ কীভাবে এতো নির্লজ্জ হতে পারলো সে? এবার আর কোনো ভুল নয়। তার একমাত্র লক্ষ্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তার স্বপ্ন।

নোরিনের খুব ভালো লাগে আজকাল। তার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। আর মাত্র কয়েকটা সিঁড়ি পেরুলেই স্বপ্নটাকে সত্যি করতে পারবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনছিলো একদিন। নোরিন যেন নতুন করে অনুপ্রেরণা পায়। জাতির পিতার সব কথা আজ সত্যি হয়েছে। তিনি যদি দেখে যেতে পারতেন! নোরিন সিডি প্লেয়ারে ক্যাসেট রেখে অন করলো। স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে উঠলো বাঙালি জাতির পিতার ছবি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে দেওয়া তার যুগান্তকারী ভাষণ,
—–আমি তোমাদের প্রধানমন্ত্রী আসতে পারে অনেক, যেতে পারে অনেক, প্রধানমন্ত্রী যেতে পারে অনেক। আমি তোমাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বলছি না। আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসেবে আদেশ দিচ্ছি। কারণ জাতির পিতা একবারই হয়, দু’বার হয়না।প্রধানমন্ত্রী অনেক হবে, অনেক আসবে। প্রেসিডেন্ট অনেক হবে, অনেক আসবে, কিন্তু সেই হিসেবে আমি তোমাদের ভালোবাসি তোমরা জান। তোমরা সৎ পথে থেকো, মাতৃভূমিকে ভালোবেসো৷ ”

নোরিন উজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে আছে। শরীরের সমস্ত লোম কাটা দিয়ে উঠছে বারেবারে। কি তেজী, কি জীবন্ত প্রত্যেকটা শব্দ! নোরিনের চোখ জ্বলজ্বল করছে। কীভাবে পারলো বাঙালী, এমন একজন মানুষকে হত্যা করতে!
স্ক্রীনে জাতির পিতা আবার বললেন। নোরিন সমস্ত মন-প্রাণ এক করে তাকিয়ে আছে মুগ্ধকর দৃষ্টিতে,

—— ” তোমাদের একটা জিনিস মনে রাখা দরকার,দেশ যখন আমার আছে, মাটি যখন আমার আছে, বাংলার সোনার মানুষ যখন আছে,যদি আমরা সোনার ছেলে পয়দা করতে পারি ইনশাআল্লাহ আমার যে স্বপ্ন সোনার বাংলা,তা একদিন পূরণ হবে।আমি দেখে না যাওয়ার পারি, কিন্তু ; ইনশাআল্লাহ হবে। আজ ইনশাআল্লাহ বাংলার সম্পদ আর কেউ লুট করে নিবার পারবে না। বাংলার মাটিতে বাংলার সম্পদ থাকবে৷ বাংলার মানুষ ভোগ করবে। যে জাতির ত্রিশ লক্ষ লোক রক্ত দিতে পারে স্বাধীনতার জন্য, সেই জাতি দরকার হলে কোটি লোকের জীবন দেবে বাংলার স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য। ”

নোরিন বারবার ক্যাসেট’টা বাজিয়ে শুনলো। যতবারই শুনলো মনে হলো যেন নতুন করে শুনছে। ইশশ কত সুন্দর হবে সেই দিন গুলো যখন সে ভাটিয়ারী’তে যাবে মিলিটারি ট্রেনিংয়ে। একজন ক্যাডেট অফিসার হবে। জাতির পিতার একটা কথা বারবার তার কানে ভাসছে, ” তোমরা আমার মুখ কালা করো না, দেশের মুখ কালা করো না, সাড়ে চার কোটি ( তৎকালীন সময়ে এদেশের জনসংখ্যা) মানুষের মুখ কালা করো না৷ তোমরা আদর্শবান হও, সৎ পথে থেকো।মনে রেখ, ‘ মুখে হাসি, বুকে বল, তেজে ভরা মন, মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন৷ ‘ মাঝে মাঝে আমরা অমানুষ হয়ে যাই। ”

নোরিন চোখ বুজে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে গা এলিয়ে দিলো। সে কি পারবে আদর্শ সৈনিক হতে?

চলবে..

#ভালোবেসেছি_তোরই_মতো
#পর্বঃ১৬
লেখিকাঃ #শাদিয়া_চৌধুরী_নোন

সেনাবাহিনীর সার্কোলার ছাড়া হয়েছে। নোরিন দেরি না করে আবেদনপত্র জমা দিয়ে এসেছে আজমল সাহেবের সাহায্যে।
যতই দিন এগিয়ে আসছিলো, নোরিনের মনে সংশয়ের দানা বাসা বাঁধছিল। জীবনের এই প্রথম কোনো পরীক্ষার আগে, নিজেকে নিয়ে বারবার দ্বিধায় পড়তে হচ্ছিলো। এটা যে তার স্বপ্ন! তার হাজার রাত নির্ঘুমের কারণ। যদি কোনো বাঁধা আসে? যদি কোনো কারণে বাদ পড়ে যায়?

একদিন লাঞ্চে বসে বাপবেটি খাবার খাচ্ছিলো। আজমল আলী সেরনিয়াবাত শুধু একবার বললেন,
—- মামণি, প্রিপারেশন কেমন? তুমি কি প্রস্তুত?

সামান্য এই কথায় নোরিনের হাত থেকে চামচ পড়ে গেলো। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো সে বাবার দিকে। আজমল সাহেব মেয়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলেন,
—- তুমি কি কোনো কারণে সংশয়ে ভুগছো?

—- বাবা, আই ওয়ান্ট টু বি দ্যা বেস্ট ক্যাডেট। আ’ম রেডি। কিন্তু….

—- বুঝতে পেরেছি। মা একটা কথা জেনে রেখো, আমরা যে জিনিসটাকে খুব করে চাই, যাকে নিয়ে দূর থেকে হাজারো স্বপ্ন দেখি, সেই স্বপ্ন যদি একদিন আমাদের খুব কাছে চলে আসে;দরজায় কড়া নাড়ে তখন তুমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়বে। নিজেকে নিয়ে দ্বিধায় ভুগবে। মনে হবে, আমি কি এটার যোগ্য? স্বপ্নের কাছে নিজেকে ছোট মনে হবে। তখন তোমার কি উচিত? তোমার উচিত নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখা। মনোবল না হারানো। আর অবশ্যই নিজের সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করা। কারণ তিনি যেমন উঁচুতে ওঠাতে পারেন , তার চেয়ে কম সময়ে নিচে নামাতে পারেন। আশা করি তুমি আমার কথা বুঝতে পারছো। আই নো, ইউ আর এ্যা গুড লিসেনার।

নোরিন একটা বড় দম নিলো। বাবাকে আশ্বস্ত করে বললো,
—- ইয়েস বাবা, আই’ল বি দ্যা বেস্ট। ওয়ানডে দে উইল এনাউন্স দ্যাট, দ্যা সোর্ড অব অর্নার ব্যাচ ইজ গোজ ফর নোরিন আলী সেরনিয়াবাত। কিপ এ্যা বিগ ক্লেপ ফর হার।

আজমল সাহেব হো হো করে হাসলেন। এটাই তো চাই তাঁর। নোরিনের মুখে হাসিটাই তিনি চান। এই হাসির বিনিময়ে সবকিছু করতে রাজি।
খাবার খেয়ে নোরিন তড়িঘড়ি করে প্রার্থনায় বসলো। নোরিন দু-হাত তুলে বললো,
— “আমি একাকিত্ব অনুভব করছি। ”

নোরিনের মনে হলো, কেউ যেন তার কানে কানে বলছে,
—- ” আমি তোমার নিকটেই। ”

নোরিন প্রশান্তির হাসি নিয়ে বললো,
—- ” আমাকে একা করে দিও না। মুখ ফিরিয়ে নিও না কখনো। ”

আবার কানে কানো কেউ বললো,
—- “আমাকে স্মরণ করো, আমি তোমাকে স্মরণ করবো।”

নোরিন এবার ভাঙা মনে বললো,
—- “আমার জীবন অনেক সমস্যা দ্বারা আবৃত। কিছু কে আমি ভুলতে পারি না৷ কিছু মুহূর্ত আমাকে শান্তি দেয়না৷ আমার সম্মুখে-অন্তরালের কোনো কিছুই তোমার অজানা নয়। ”

আবার উত্তর এলো,
— “আমাকে ভয় করো। আমি একটি উপায় বের করে দেবো। ” [আল্ কুরআন]

—- শোকর আলহামদুলিল্লাহ।

——————-
নোরিন নিজের স্বপ্ন সিঁড়ির একটিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্যের প্রথম ধাপ সে খুব সহজেই পার করে এসেছে। প্রিলিমিনারী পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষায় খুব সহজেই উত্তীর্ণ হতে পেরেছে৷ মৌখিক পরীক্ষায় নোরিন নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে৷ একজন ক্যাপ্টেন তো নোরিনকে মুখের উপরই বলে দিলো,
—- ওখানে এতো স্কিন কেয়ার করার সময় পাবে না৷ এখনো সময় আছে৷ অনেক খাটনি আছে। তুমি পারবে?

নোরিন শান্ত মুখে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি নিয়ে বললো,
— আমাকে নিয়ে চিন্তা করার জন্য ধন্যবাদ। জেনে বুঝে আগুনে ঝাপ দেয়না কেউ৷ বাঁচতে নয়, বাঁচাতে চাই।

পরের প্রশ্ন ছিলো,
—- তুমি কেনো একজন আর্মি হতে চাও?

—- আপনাদের মতো ঐ পোশাক পরে, নিজের স্বার্থকতার স্বাদ নিতে৷ নিজেকে অনেক বেশি ভালোবাসি৷ সুতরাং নিজের স্বপ্নের দামও আমার কাছে অনেক বেশি।

— নিজেকে ভালোবাসলে তো জীবনের মায়াও আছে নিশ্চয়ই? তুমি মরবে না এর কোনো নিশ্চয়তা আছে? একজন আর্মি অফিসার হয়ে তুমি কি আশা করবে?

নোরিন তার অভিনব কৌশল খাটিয়ে বললো,
— আপনি যে আজীবন বেঁচে থাকবেন তার কোনো গ্যারান্টি আছে? আপনার কাছে একটা স্যালুট আশা করবো। তবে আজ নয়, যেদিন নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করবো, সেদিন আপনার একটা স্যালুটের আশায় থাকবো আমি। দেহের মৃত্যু হলেও, মনের মৃত্যু কখনোই হয়না৷ সুতরাং মৃত্যুকে আমি ভয় পাবো না৷ আমি চ্যালেঞ্জ পছন্দ করি।

নোরিনের কথা শোনে ক্যাপ্টেন হকচকিয়ে গেলো। কি অসীম মনোবল মেয়েটার! কি সাহস! এতোক্ষণ সব প্রার্থীর চোখে ভয় ছাড়া কিছুই চোখে পড়েনি, চোখে চোখ রেখে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছিলো৷ কথা বলায় জড়তা আর এই মেয়েটা? এমন ভঙ্গিতে কথা বলছে যেন সে ভাইভা না, স্বাভাবিক বন্ধুদের সাথে কথা বলছে৷ কি দারুণ গাম্ভীর্য চোখে, এতোটুকু বয়সে কি কঠিন কথা বলে ফেললো! ভয়ের লেশমাত্র নেই। খোঁচা মেরে আত্মবিশ্বাস যাচাই করতে গিয়ে, নিজেই ফেঁসে গেছে ক্যাপ্টিন৷ তিনি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারেন, সামনে বসে থাকা তরুণীকে একদিন স্যালুট করতে হতে পারে। করতে হয়তো বাধ্য হবেন তিনি৷

নোরিনের পরীক্ষার বহর এখনো শেষ হয়নি। বুয়েট, মেডিক্যাল বা অন্যান্য পরীক্ষায় হয়তো শুধু মেধা নির্বাচন করা হয় কিন্তু নোরিন যাকে ভবিষ্যতের জন্য বাছাই করেছে, সেখানে মেধা ছাড়াও বেশি প্রাধান্য পায় মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা, বুদ্ধিমত্তা, ব্যক্তিত্ব,বিচারবোধ, উপস্থিত বুদ্ধি, পরিকল্পনা ক্ষমতা,নেতৃত্ব এবং শারীরিক দক্ষতা। নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে নোরিনের পরবর্তী ধাপ ছিলো ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ড ( আইএসএসবি) এর চারদিন ব্যাপী পরীক্ষা। চোখে এক সমুদ্র স্বপ্ন নিয়ে নোরিন এগিয়ে যেতে লাগলো। অদম্য উৎসাহ নিয়ে সে বাকি ধাপ গুলোও অতিক্রম করলো। চূড়ান্ত মেডিক্যাল এবং সাঁতার পরীক্ষার পর নোরিনের সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হলো। মনে হলো যেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ কোনো পরীক্ষা ছিলো না, এসব ছিলো তার একেকটা সিঁড়ি। সামনে তার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। আর কয়েকদিন পরই সে চলে যাবে চট্টগ্রামে। যেখানে অবস্থিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী। যেখানে, তরুণ ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়। যারা আগামী দিনে দেশকে রক্ষা করবে।
নোরিনকে বিএমএ লং কোর্সের জন্য আগামী তিন বছর চট্টগ্রামে থাকতে হবে। আর কয়েকদিন পরই তার বাস। নোরিন তুমুল আগ্রহ নিয়ে সেখানকার জীবন কেমন হতে পারে তার পরিকল্পনা করছে, ব্যাগ প্যাক করছে, কলেজে গিয়ে টিচারদের দোয়া নিলো। সুযোগ করে একদিন নানুমণিকেও সালাম করে আসলো৷ দিনে গিয়ে, দিনেই চলে চলে এলো। আজমল সাহেব দূর থেকে হাজারো দীর্ঘশ্বাস ফেলেন৷ যে মেয়েকে কোনোদিন একা ছাড়েননি, একটা ফুলের আঁচড় লাগতে দেননি সেখানে তিনি কিভাবে পারবেন তিনটে বছর মেয়েকে ছাড়া থাকতে! এতো পেশা থাকতে বেছে নিয়েছে ওই মরণ পেশাকে।
একসন্ধ্যায় ঝড়ো হাওয়া বয়ছিলো। নোরিন আর বারান্দার চেয়ারে বসে বাইরে তাকিয়ে। মনে মনে উসখুস করছে সে। আর বেশিদিন বাকি নেয়। আর কয়েকদিন পরেই চট্টগ্রাম চলে যেতে হবে। এমন সময় আজমল সাহেব এসে নোরিনের পাশে বসলো। চেয়ারে বসতেই তিনি অবুঝ বাচ্চার মতো অঝোরে কাঁদতে লাগলেন৷ নোরিনের সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকালো।
—- বাবা কেঁদো না৷ তিনটে বছরই তো। আসবো ছুটি পেলে।

আজমল সাহেব ফুপিয়ে বললেন,
— সে-ই তো আবার চলে যাবি।

নোরিন খানিকটা রাগ নিয়ে বললো,
—- কেঁদো না তো! আমার বিরক্তি লাগছে।

আজমল সাহেব রুমাল বের করে চোখ মুছলেন।
—- মা রে, তুই ডাক্তার হতি, আমি তোকে বেস্ট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়ে দিতাম, তুই ইন্জিনিয়ার হতে পারতি কিংবা ভার্সিটি প্রফেসর কিন্তু তুই এটা কেনো বেছে নিলি মা? তোর এতো খাটতে হবে কেন?আমার এতো টাকা খাবে কে! সারাজীবনের এতো সঞ্চয় কার জন্য করলাম! তোর মা নেই, এখন তুইও থাকবি না। তুই সারাদিন রোদে রোদে দৌড়াবি, কসরত করবি, এক আধখানা রুটি খাবি আর এদিকে এসির নিচে বসে কীভাবে বিরিয়ানি খাবো বল? আমার কলিজা একমাত্র মেয়ে তুই৷ তুই ছাড়া আর কেউ নেই। আমি বাবা হয়ে তোকে এতো কষ্ট কীভাবে পেতে দিই?

নোরিন বাবার কাঁধে হাত রেখে বললো,
— বাবা তুমি প্র্যাকটিক্যালি কেনো চিন্তা করছো না? তুমি নিজেই দেখো, তুমি কিন্তু আমাকে আমার স্বপ্নের পথে বাঁধা দিচ্ছো। কোনো মেয়ে কি চাই বলো, তার বাবা তার স্বপ্নে বাঁধা দিক? মা কিন্তু জানলে খুব রাগ করবে।
নোরিন এবার মোলায়েম কণ্ঠে বললো,
— বাবা আমিও তোমাকে মিস করবো। খাবার টেবিলে একসাথে খাওয়াটা মিস করবো, দুজন মিলে একসাথে গালি দেওয়াটা মনে পড়বে ভীষণ, সকাল আর বিকেলে তোমাকে চা করে দেওয়া আর প্রেশারের ওষুধটা না দিতে পারার দুঃখে কাদঁতে ইচ্ছে করবে, দুজন মিলে মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকা আর প্রতি ছুটিতে ঘুরতে যাওয়াটাও অনেক মিস করবো। তবে শুধু তিন বছরের জন্য৷ আমরা আবার একসাথে, এক বাড়িতে থাকবো বাবা। অনেকদিন!

আজমল সাহেব নোরিনের কথা শুনে আবারো কেঁদে উঠলেন৷ এতো কঠোর কেনো হলো মেয়েটা? কার স্বভাব পেয়েছে? নোরিনের চোখও ছলছল করছে কিন্তু এক ফোঁটা পানিও গড়ালো না৷ আজমল সাহেব অভিমানি কণ্ঠে বললেন,
—- এতো কিছু জানিনা৷ তোকে আমি বিয়ে দিয়ে দেবো। কোনো পছন্দের ছেলে আছে কি-না বল। তারপর দুজনে মিলে তোকে ঘরে বেঁধে রাখবো৷ যেতে দেবো না৷

নোরিনের বুকে চিনচিন ব্যাথা শুরু হলো। আজ বহুদিন পর একজনের ছবি মানসপটে ভেসে উঠলো৷ খুব দ্রুত আবার ছবিটাকে মুছে ফেললো নোরিন৷ এই কাজটা সে খুব ভালো করে পারে সে। বাবাকে চমৎকার হাসি নিয়ে বললো,
—- বাবা আমিতো বিয়েই করবো না! বিয়ে করে কি হবে?

আজমল সাহেব মনে মনে বললেন, ‘ মেয়েটা এতো সুন্দর হাসি কোথা থেকে শিখলো? আমি কীভাবে পারবো টানা এতোগুলো দিন এই মিষ্টি চেহারা না দেখে থাকতে? আমার মা… ‘

— ভালোবাসবি! বিয়ে করে তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসবি৷ জানিস মা? ভালোবাসা খুব মিষ্টি একটা অনুভূতি। “ভালোবাসা” খুব ভারী একটা শব্দ। এটাকে সংজ্ঞায়িত করা ভীষণ কঠিন। এটা জীবন্ত একটা অনুভূতি।

নোরিন মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মনে মনে বললো,
— ভালোবাসাটা যে বিয়ের চেয়ে জ্যন্ত। ভালোবাসলেই কি বলে বেড়াতে হবে? যে ভালোবাসা যত বেশি গোপন, সেই ভালোবাসার গভীরতা তত বেশি। আজ একটা কথার বড্ড মিল পাচ্ছি, পৃথিবীতে বালিকার প্রথম প্রেমের মতো সর্বগ্রাসী প্রেম আর কিছুই নেই। প্রথম যৌবনে বালিকা যাকে ভালোবাসে, তার মতো সৌভাগ্যবানও কেউ নেই। যদিও সে প্রেম অধিকাংশ সময় অপ্রকাশিত থেকে যায় কিন্তু সেই প্রেমের আগুন বালিকাকে সারাজীবন পোড়ায়। বাবা, এখন সময় পেরিয়ে গেছে, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও আমি তাকে গ্রহণ করবো না৷ ভালোবাসা প্রকাশিত হলে তার দাম কমে যায়। আমি নোরিন আলী সেরনিয়াবাত এখন নিজেকে ভালোবাসি, নিজের মূল্য অনেক বেশি আমার কাছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here