ভালোবেসে তোমায়,পর্ব: ২
Writer: Jannat
কেঁদে কেঁদে সারা রাত কাটিয়ে দিয়েছে , পেটের উপর হাত রাখল ।
আজও সে প্রেগনেন্ট ,কিন্তু তার কোনো ভরসাই নেই । হয়ত ২-১ মাস পর এটাও মিস্ক্যারেজ হয়ে যাবে ।
ফজরের নামাজ আদায় করে নিল । আল্লাহর কাছে ২হাত তুলল ,,
“__ইয়া আল্লাহ বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হয়েও তাদেরকে নিঃস্ব করে দিয়েছি । তার বিনিময়ে তো আমাকেও বারবার সন্তানহারা করে দিয়েছ ।
আমি খুব পাপী গো আল্লাহ , আমি খুব নিঃস্ব । অন্তত এবার এই অসহায়ের প্রতি একটু সদয় হও । আমার পেটের ধন ,আমার বুকে এনে দাও ।
এই পোড়া মনটায় একটু আশার আলো জ্বেলে দাও । বেঁচে থাকার এই শেষ সুযোগটা কেঁড়ে নিও না “__
.
২হাত তুলে আল্লাহর কাছে অজরে কেঁদে কেঁদে সাহায্য চাইল । আরও কিছু টাইম প্রার্থনায় কাটালো ।
বারবার বাচ্চা মিস্ক্যারেজ হয়ে যাওয়া ,এটা হয়ত বাবা-মায়ের চোখের জলের প্রতিদান । সন্তান হারানোর কষ্ট আজ তীলে তীলে বুঝতে পারতেছে । আগে যদি এই যন্ত্রনা সামান্য পরিমান অনুভব করতে পারত ,কখনোই বাবা-মায়ের চোখের জলের কারন হত না ।
.
সকালের সূর্যটাও উকি দিচ্ছে ,তিশা উঠে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো ।
আলোতে পরিপূর্ন সূর্যটা চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়ছে শুধু জীবনের আলোটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে । আশাগুলো নিরাশাময় হয়ে যাচ্ছে । ধীরে ধীরে বোধহয় জীবনটা গতি হারিয়ে ফেলতেছে ।
কি ছিলাম ,কি হলাম আর কি হব ?
চারদিকে আলোতে জ্বলমল করতেছে ,এতক্ষনের শান্ত নগরিটা ব্যাস্ত হয়ে উঠতেছে । ধীর পায়ে কিচেনে ঢুকে নিজেও ব্যাস্ত হয়ে পড়ল ।
বিয়ের পর থেকে শায়ন এমন কোন দিন ছিল না শান্তিতে রান্না করতে দিত ,,,
__বউ ,এই বউ (জড়িয়ে ধরে)
__সকাল সকাল আবার জ্বালানো শুরু করে দিয়েছ …?
__রেগে যাচ্ছ কেন (নাকের ডগায় চুমো দিয়ে)
__ছিঃ ছিঃ ঘেমে একাকার হয়ে গেছি , আর ওনি চুমো খাচ্ছে
__ভালো লাগে তোর ঘামে ভেজা মুখটা । ঠোঁটের ছোয়ার মুছে দেওয়ার লোভটা সামলাতে পারিনা
__সকাল সকাল ন্যাকামি । একদম ডিস্টার্ব করবে না ..
__উহু, নো ন্যাকামি শুধু হেল্প করছি
__ হু হেল্প না ছাই । আমার কাজের ১২টা বাজাচ্ছে
__এই একদম বকবক করবে না ,তারাতারি রান্না কর অফিসের দেরি হয়ে যাবে
__তাইলে ছাড়
__উহু এভাবেই
__দূর ছাই ,যত মসিবত ।
.
এভাবেই প্রতিটা সকালের রান্নায় শায়ন হেল্পের নামে জ্বালিয়ে মারত । শায়ন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাখত , কখনো বা চুলগুলো ছেড়ে মুখ গুজে দিত ।
তিশা মুখে মুখে যতই রাগ দেখাত ,কিন্তু অন্তরে ভিন্ন অনুভূতি বয়ে যেত । আর কখনো হয়ত এই মুহূর্তগুলো ফিরে আসবে না । পিছু তাকালেই শুধু অতিত হাতরে বের হয় ।
.
রান্না প্রায়ই শেষ । এখন ওনাদেরকে ডাকা উচিত বাট মেয়েটার নামটাই জানা হল না ।
আনমনা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ রান্না ঘরে কিছু ভাঙার শব্দে পিছু ফিরে তাকালো তিশা ।
কাঁচের বাটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে ,মেয়েটা সেই কাঁচের টুকরো গোছাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল,,
__আরে রে করছ কি ? হাতে বিধে যাবে তো , সরো তো দেখি আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি
__সরি ,আসলে আমি খেয়াল করিনি ।
__সরি কেন?
তোমার সংসার তুমি ভাঙবে ,তুমি তুমি গড়বে । হঠাৎ করে কেউ তো আর পাক্কা ঘরওয়ালী হয়ে আসে না ।
__আমাকে শিখিয়ে দেন ,বাকী খাবারগুলো আমি তৈরি করে দেই
__তুমি এ বাসায় নতুন , অন্তত কয়েকটাদিন বিশ্রাম কর । তারপর না হয় এসব কাজ-বাজ কইরো ।
তোমার বর উঠছে..?
__তোমার বর শব্দটা শুনে মেয়েটা উদ্ভুদভাবে তাকালো ।
.
তিশা খানিকটা হাসল ওর এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে ।
__কি হল যাও ওনাকে উঠিয়ে নিয়ে এসো ।
ওহ ভালো কথা ,তোমার নামটাইতো জানা হল না
__হেনা
__তোমার নামের মতই তুমি খুব মিষ্টি
__আপু…
__কিহ,কিছু বলবে ?
ভয় পেয় না । আগলে যখন রাখতে পারিনি তখন আর কেড়ে নিব না । তোমার সংসার তুমি বুঝে নাও ,তবে কাজের লোক হিসেবে থাকতে দিও ।
বুঝোই তো পালিয়ে এসেছি । সো , আর কোনো আশ্রয় নেই । তবুও যদি তোমাদের বিশেষ অসুবিধা হয় ,তখন না হয় ঠিকানা খুঁজে নিব । আল্লাহর দুনিয়াতে আর না হোক ,সাড়ে ৩হাত জায়গা তো পাব ।
.
হেনা যতই তিশাকে দেখতেছে ততই যেন অবাকের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে ।
একটা মানুষ কতটা কঠিন হলে এভাবে স্বাভাবিক থাকতে পারে ।
স্বামী এমন একটা মূল্যবান ধন ,মেয়েরা সব ভাগ দিতে রাজী শুধু স্বামী ছাড়া ।
আর সেখানে তিশা যেন অনুভূতিহীন মানবী ।
.
এই এক মাসে অনেকটা খাতির জমিয়ে ফেলছে হেনার সাথে ।
যদিও সেদিনের পর থেকে কখনো শায়নের মুখটা দর্শন করেনি ।
সর্বদা সতর্ক থাকে ,যাতে মৃত্যুর আগে কখনো ওই মানুষটার মুখটা সামনে না পড়ে ।
বড্ড ঘৃনা হয় ,কতটা নীচ মেন্টালিটির হলে এমন জগন্য কাজ করতে পারে ।
আরে তোমায় ভালোবেসেই তো সব ছেড়েছি আর দিনের শেষে তুমিই আমাকে ছেড়ে দিলে ।
খুব বেশি বেইমান তুই ।
.
শায়ন বাসায় এসে প্রায়ই আড়চোখে তিশাকে খুঁজে বেড়ায় । মাঝে মাঝে ওর মুখটা দেখতে ইচ্ছা করে ,কিন্তু বাসায় থাকলে তো তিশা রুম থেকেই বের হয় না আর খাওয়া দাওয়া তো দূরের কথা ।
আর যদি কখনো মুখোমুখি হয়েও যায় তখন ১২হাত কাপড়ের ১৩হাত ঘোমটা টেনে দেয় । এভাবে একটা মানুষ বন্দি থাকলে তো তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলবে তাই সময় পেলেও খুব কম টাইমই বাসায় থাকে শায়ন ।
তবে মনে মনে শান্তিও পায় । সতিনের সংসারে নাকি ঝামেলা বেঁধেই থাকে কিন্তু সেখানে হেনা নূন্যতম অভিযোগ তোলে না ।
তুলবেই বা কেমনে সেই সুযোগটাই তো পায়না । বিয়ের দিন ভেবে নিয়েছে তিশাকে একটা আলাদা ফ্লার্ট ভাড়া করে দিবে বাট এখন বোধহয় তার আর প্রয়োজন নেই ।
.
খাবারের সময় ইদানিং আড়চোখে তিশাকে খোঁজে শায়ন ,যেটা হেনার চোখকে এড়ায় নি ।
যদিও মনের ভিতর একটু অশান্তি হয় তবু কিছু বলে না ।
তবে হঠাৎ একদিন বলেই ফেলল ,,,
__আপু আপনি তো আমাদের সাথে বসেই খেতে পারেন
.
__কষ্ট হবে না তোমার , তোমার স্বামীর পাশে ,তোমার সতিনে বসে খাবার খাইলে …?
.
হেনা মাথা নিচু করে চলে গেল । আসলেই তো ,হ্যা শুধু কষ্ট না বড্ড বেশি তার চেয়েও বেশি কষ্ট হবে । আমি মেনে নিতে পারব না শায়নের পাশে কাউকে ।
হেনার এভাবে চলে যাওয়ায় উত্তরটা ভালোভাবেই পেয়ে গেছে তিশা ।
হায়রে মেয়ে ,তুই সামান্য এইটুকু মেনে নিতে পারবি না আর সেখানে দিব্যি সুখে শান্তিতে আমার স্বামীকে নিয়ে কিভাবে আমার গড়া রাজ্যে রাজত্ব করতেছিস …..
.
.
চলবে