ভালোবেসে তোমায়,পর্ব: ৩
Writer: Jannat
হায়রে মেয়ে ,তুই সামান্য এইটুকু মেনে নিতে পারবি না আর সেখানে দিব্যি সুখে শান্তিতে আমার স্বামীকে নিয়ে কিভাবে আমার গড়া রাজ্যে রাজত্ব করতেছিস …..
সময় তার আপন গতিতে পাড় হয়ে যাচ্ছে ।
তিশা প্রেগনেন্ট ৭মাস । খুব দূর্বল হয়ে পড়তেছে । রাতে তো একদম ঘুমাতেই পারে না । রুম থেকে বারান্দা আবার বারান্দা থেকে রুমে পায়চারি করে রাত পাড় করে দেয় ।
__এইইই (বালিশ দিয়ে মাইর দিয়ে)
__কি হল তিশু পাখি
__কি হয়নি বল ,আমাকে অশান্তিতে রেখে নিজে ঘুমাচ্ছ ক্যান ?
__আমি আর অশান্তি …! তাও তোমাকে ?
__তুমি না তো কে হ্যাঁ । আমি প্রেগনেন্ট এর জন্য দায়ী কে হ্যাঁ ? খাটাশ লোক একটা
__আরেরে তিশুপাখিটা রাগতেছে ক্যান ?
__একদম স্পর্শ করবে না আমায় ,তোমার বাবুরা আমাকে ঘুমাত দেয়না ক্যান হ্যাঁ (এলোপাথারি মাইর আর সাথে তো বকা আছেই) ।
আমি ঘুমাবো ,আমার বুঝি ঘুম পায়না (কাঁদো কাঁদো হয়ে)
__কিহ,ওদের এত্তবড় সাহস । আমার তিশুমনিকে জ্বালায় ,এদিকে এসো বকে দিচ্ছি (বুকের সাথে লেপ্টে নিয়ে) ।
তিশুপাখি …
__হু
__বাবুরা বড় হচ্ছে তো তাই তোমাকে জানান দিচ্ছে ,মাম্মাম আমরা আসতেছি । আর একটু সহ্য কর পাখিটা , আর কয়টাদিন তো ।
__তাইলে তোমাকে ক্যান জ্বালায় না ?
__বাবুরা তো তার মাম্মামকে বেশি ভালোবাসে তাই মাম্মামকে জ্বালায় । এখন আমার তিশুপাখিটা ঘুমাবে
__উহু , কোলে নাও
__এখন …! সকালে অফিস আছে তো…
__গোল্লায় যাক তোমার অফিস । তারাতারি কোলে নাও
__বাধ্য হয়ে কোলে তুলে নিল নয়তো হরতাল শুরু করবে ।
__ আমি না ঘুমানো পর্যন্ত আমাকে কোলে নিয়ে হাটবে ,বুঝেছ
__এ্যাআআআ…!
__এ্যাআআ না হ্যাঁ । তোমার বাবুরা যতক্ষন আমাকে জ্বালাবে ততক্ষন তোমাকে আমি জ্বালাবো ।
.
ফিক করে হেসে উঠল তিশা । তিশার হাসির শব্দে শাশুড়ি জেগে উঠছে ,,
__কিরে মা কি হইল ,হাসতেছিস ক্যান ?
.
শাশুড়ির কথায় হুস ফিরে পেল তিশা । সে তার অতিত হাতরে বেরাচ্ছিল এতক্ষন । ইশ কতটা যত্নে গড়া ভালোবাসা আজ তা সবই অতিত ।
শায়ন যদি পাশে থাকত তাইলে আজও এভাবে জ্বালাতো ।
চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করতেছে ।
মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে বড্ড মায়া হচ্ছে । কোন পাপের বিনিময় এমন সন্তানের মা হল কে জানে । হঠাৎ বিয়ে করে নিয়ে আসার জন্য মানতে পারেনি মেয়েটাকে কিন্তু তবুও কখনো তো ছেড়ে দিতে বলেনি । এমন ছেলের মা পরিচয় দিতেও বিবেকে বাধাঁ দেয় ।
তিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে শাশুড়ি আর তিশার ২চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তেছে ,কতদিন কারো ভালোবাসার স্পর্শ পায়নি ।
__আটকাতে পারলি না রে মা ?
__যে যেতে চায় তাকে আটকে কয়দিন রাখা যায়
__বুঝি না বাপু ,তোরা এযুগের হয়েও এমন কাজ কেমনে করলি । একটা বাচ্চা তো এডোপ্ট ও নিতে পারতি
__বলছিলাম মা । তবে অক্ষমতা তো আমার ,তার তো আর না
__কষ্ট হয়না এখানে থাকতে ..?
__বড্ড কষ্ট হয়, মা
__যাবি আমার সাথে ..?
__তিশার চোখেমুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠছে ।
যাবেনা মানে একটা আশ্রয়ের অভাবেই তো এখানে পড়ে থাকা ।
.
সকাল থেকে তিশা যাবতীয় ,যা যা প্রয়োজন আরকি সব গুছিয়ে নিচ্ছে । বিকেলে রওনা দিবে শাশুড়ির সাথে ।
শাশুড়ি নামাজ পড়তেছে ,হেনা সাওয়ার নিচ্ছে আর এদিকে অনাবরত কলিংবেল বেজেই চলছে ।
তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দিয়ে ,তারাতারি সরে যেতে নিলে কাপড়ের সাথে পা আটকে পড়ে যেতে নিল কেউ একজন ধরে ফেলল ।
স্পর্শটা তিশার খুব ভালোভাবেই চেনা । কিছুক্ষনের জন্য যেন জমে বরফ হয়ে গেল । তার সেই চিরচেনা ২টো হাত তাকে আকরে ধরেছে । যে হাত ২দুটোকে ভরসা করে সব ছেড়ে এসেছিল ।
তবে আজ আর সেই স্মেলটা পাচ্ছে না । যে স্মেলটা পাগল করে দিত ,দূর থেকে তার উপস্থিতি জানান দিত ।
এই স্মেলটার জন্য কতই না পাগলামী করত । রিলেশন চলাকালীন যখন দেখা করত , শায়নকে দেখার সাথে সাথেই জড়িয়ে ধরে বুকে নাক গুজে দিয়ে প্রানভরে স্মেলটা নিঃশ্বাসের সাথে মিশিয়ে নিত শরীরের প্রতিটা শিরা-উপশিরায় ।
আবার যাবার সময় সেইম কাজটা করত ।
একদিন তিশা ফ্রেন্ডদের সাথে শপিং গেল ,হঠাৎ তার নাকে তার পাগল করা স্মেলটা এসে লাগল ।
সাথে সাথেই শায়নকে ফোন দিল ।
__তিশুপাখি ,আমি বিজি আছি । পরে ফোন করছি
__একদম ফাজলামী করবে না আমার সাথে। তুমি নিউ-মার্কেটে আছ …?
__ তোমাকে কে বলল হ্যাঁ ..?
__কেউ না ,তোমার উপস্থিতি কেউ বলে দিতে হবে ক্যান । তোমার শরীরের স্মেলটা আমি এখানে পেয়েছি
__হ্যাঁ, আমার বউটা সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেল গো এবার । এই স্মেলটা কি অন্য কারো থাকতে পারে না..?
__না পারে না । আমার হৃদয়ে হৃৎপিন্ডের চাইতেও অনেক গভীরে ,রক্ত আর শিরা-উপশিরারও অনেক গহিনে ,যে অস্পর্শ অবিনশ্বর রুহ আছে সেই রুহুবিন্দুর সাথে মিশে আছে তোমার স্মেল ।
সেই অনুভূতিটা কি মিথ্যা হতে পারে ।
__শপিং মলের আড়ালে দাড়িয়ে কথাগুলো শুনতেছিল শায়ন । শুধু শুনতেছিল না প্রানভরে অনুভব করার চেষ্টা করতেছিল কতটা ভালোবাসলে এতটা সিরিয়াস হতে পারে ।
তিশা কথাগুলো শেষ করে সামনে তাকানোর সাথে সাথেই থমকে যায় । শায়ন ২হাত দুদিকে ছড়িয়ে দাড়িয়ে আছে ,তিশা চোখ বুঝে এক দৌড়ে শায়নের বুকে জায়গা করে নিল ।
হ্যা তার অনুভূতি ,অনুভব গুলো ঠুকনো না ।
__এত ভালবাসিস ক্যান পাগলী ?
__যেদিন ব্যাখ্যা করতে পারব সেদিন তুমি আমি ভালোবাসাময় রের্কড গড়ব ।
.
চোখ ২টো ভিজে উঠল তিশার । শায়ন চোখের পানি মুছিয়ে দেওয়ার স্পর্শে হকচকিয়ে উঠল সে । চোখ মেলে তাকিয়ে
শায়নের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল ,চোখগুলো নামিয়ে ফেলল তিশা ।
এই দৃষ্টিতে ডুবে গিয়ে আজ খেসারত দিতে হচ্ছে ,বড্ড ঘৃনা করে এই দৃষ্টিটাকে আজ ।
__দেখে চলতে পার না ..?
__দেখতে দেখতে বড্ড ক্লান্ড এবার না হয় ,না দেখেই বাকীটা জীবন পাড় করলাম ।
__যদি পড়ে যেতে
__বেশি কিছু হলে মরেই যেতাম । সেইটুকুই তো বাকী আছে ।
.
খুব যত্নে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ,শায়নের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল । শায়ন চেয়ে আছে ওর যাওয়ার পানে । কতদিন পর মুখটা দেখছে হিসেব নেই ,আর হিসেব করার সময়ই বা কোথায় । বেশ ভালোই আছে নতুন সঙ্গীকে নিয়ে । তবে বুকের ভিতর হঠাৎ চিনচিনিয়ে ব্যাথা করতে ,এই কি সেই তিশা । যার কাজল টানা চোখের জালে আটকে গেছিলাম ।আজ আর চোখে কাজল নেই কিন্তু চোখের নিচে কষ্টের কালো ছাপ পড়ে আছে….
.
.
চলবে…