ভালোবেসে_থাকবো_পাশে? #পর্বঃ_০২

0
1833

#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে?
#পর্বঃ_০২
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

‘যেই জায়গার আমার নাম টা লেখার কথা ছিলো সেই জায়গায় আজ অন্য কারো নাম বিরাজ করছে। কী এমন ক্ষতি হতো যদি ফারিয়ার জায়গায় আমার নামটা লিখা থাকতো। আল্লাহ খুব বেশি কিছু চাইছিলাম কী তোমার কাছে? একটা মানুষই তো চাইছিলাম তাও কেড়ে নিলা? এসব ভাবতে ভাবতেই আরিয়ার চোখটা ঘোলাটে হয়ে যাই।’

সারাদিন অনেক দখল গেছে। মাথাটাও প্রচুর যন্ত্রণা করছে যার ফলে বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই চোখ টা লেগে গেছে।

সন্ধ্যায় মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে আরিয়ার।

আরু মা কখন থেকে ঘুমাচ্ছিস সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আসরের নামাজ হয়তো পড়িস নি। মাগরিবের নামাজ আদায় করে ড্রয়িং রুমে আয় কেমন!

ঠিক আছে আম্মু।

আজান শুনে ওয়াশরুমে ঢুকে ওজু করে নিলো আরিয়া।
নামাজ আদায় করে সকলের জন্য দোয়া করলো। মা, বাবা, ভাই, রাতুল, ফারিয়া সবার জন্যই।
‘হে আল্লাহ তুমি আমার ধৈর্য শক্তি বাড়িয়ে দাও। আমি যেনো রাতুলকে ভুলে যেতে পারি।
রাতুল আর ফারিয়াকে ভালো রেখো। ওরা যনো সুখী হতে পারে।’

নামাজ শেষে আরিয়া ড্রয়িং রুমে চলে গেলো।

আরিয়াকে দেখে আরিয়ার আব্বু বলল, ‘কী হয়েছে মা? আজ মুখ টা এতো শুকনো লাগছে কেন? সাঁদ কী আবার কিছু বলেছে?’

‘না আব্বু।’

তাহলে?

‘আচ্ছা আব্বু তুমিই বলো আমি কী দেখতে খুব খারাপ? আমাকে কী ভালোবাসা যাই না? আমি কী সত্যিই কারো যোগ্য না। আব্বু তুমিই বলো সত্যি কারের ভালোবাসার কেন কোনো দাম নাই? মানুষ কেন সৌন্দর্যের মোহে পড়ে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটায়?’ (আরিয়া)

‘ আরু মা জানি না তোমার কী হয়েছে। তবে একটা কথা বলি মন দিয়ে শুনো, ‘ মানুষ সময়ের সাথে বদলায় সাথে পছন্দও বদলায় এটা যেমন সত্যি ঠিক তেমনি এটাও সত্যি যে সবাই এক হয় না মা। এখনো পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেয় না৷ বাহিরের চাকচিক্য দেখে যারা ভালোবাসে সে ভালোবাসা কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। তিনিই সব ঠিক করে দিবেন। যে সত্যিকারের ভালোবাসবে সে সৌন্দর্যের দোহাই দিবে না। ধৈর্য ধরো তোমার জীবনেও এমন কেউ আসবে যে তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবে।
❝Don’t Cry Anyone.! Because Allah Already Fixed Your Life Partner.!?❞

কথাটা বলে একটু দম নিয়ে তিনি আরিয়ার মাথায় হাত রেখে বললেন, বুঝতে পেরেছো আরু?

হ্যাঁ আব্বু।

গুড। এখন রুমে যাও। কাল নিশ্চয় ভার্সিটির ক্লাস আছে পড়তে বসো।

আচ্ছা, বলেই রুমে চলে আসলো আরিয়া। আর কিছু না ভেবেই পড়তে বসে গেছে।
পড়তেও পারছে না ভালো করে। বার বার রাতুল আর ফারিয়ার করা বিশ্বাসঘাতকতার কথা মনে পড়ছে। এত সহজে কী সব ভুলা যায়!

কিছুক্ষণ পর আরিয়ার আম্মু এসে খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে যায়।
খেতে না চাইলেও জোর করে সবার সাথে খেয়ে নিল।
খাওয়া শেষ করে রুমে এসেই ফোন টা অন করলো। ডাটা কানেক্ট করে ফেসবুকে ডুকলো।

সাথে সাথে চোখ আঁটকে গেলো রাতুল আর ফারিয়ার এনগেজড রিলেশন স্টাটাসের উপর। আরো দুজনের কাপল পিক। এসব দেখে আরিয়ার দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বুকের ভিতর কষ্ট অনুভব হচ্ছে। চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।

যেখানে আজ তার থাকার কথা ছিলো সেখানে অন্য একটা মেয়ে। পৃথিবীর কোনো মানুষই তার ভালোবাসার মানুষটার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারে না। সেখানে আরিয়া কেমনে পারবে৷ কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে।

তখনি আরিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড অন্তু মেসেজ দিলো।
দোস্ত এসব কী দেখছি? রাতুল আর ফারিয়ার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে মানে কী? রাতুল তো তোকে ভালোবাসতো? তাহলে ফারিয়াকে কেন বিয়ে করবে ও?(অন্তু)

হ্যাঁ রাতুল আমায় ভালোবাসতো কিন্তু আর বাসে না। আব্বু বলল, মানুষ নাকি সময়ের সাথে সাথে বদলে যায়। রাতুলও বদলে গেছে। তার পছন্দও বদলিয়েছে। আমাকে ভালো লাগতো এখন আর ভালো লাগে না। এটাই স্বাভাবিক। (আরিয়া)

”দোস্ত আমার বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে যে রাতুল এত বদলে গিয়েছে। ও কাল ভার্সিটি আসুক তখন ওরে জিজ্ঞেস করবো কেন করলো ও তোর সাথে এমন টা।(অন্তু)

না কিচ্ছু জিজ্ঞেস করতে হবে না। আমাকে ভালো লাগে না তার। আর সত্যিই তো সে আমার থেকে আরো ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করে। আমি ওদের মাঝে কাটা হয়ে থাকতে চায় না। ভালো থাকুক এটাই চাই।
এটা বলেই আরিয়া তার আইডি ডিএক্টিভ করে ফোন টা রেখে ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়লো। আসলেই কী সে ঘুমাতে পারবে?

”আরিয়া শুয়ে শুয়ে ভাবছে,, অন্ধকারে যেখানে নিজের ছায়াটাও ছেড়ে চলে যায়, সেখানে কিছু মানুষকে আপন ভেবে ভাবাটা বোকামী ছাড়া আর কিছুই না। কারণ নিজের ছায়াটা ছেড়ে যেতে হলে তবুও অন্ধকারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কিছু আপনজন নামের মুখোশধারী মানুষ ছেড়ে যেতে হলে অন্ধকারের প্রয়োজন হয় না। মুখে ভালোবাসি বললে যেমন ভালোবাসা হয় না,, ঠিক তেমনি একসাথে চললে সবাই আপন হয় না। কারণ, কিছু মানুষ স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে দিন শেষে আর আমাদের পাশে রয় না। এই মানুষ গুলো গিরগিটির চাইতে অনেক বেশি ভয়ংকর হয়। কারণ, গিরগিটি রং বদলায় আত্ম রক্ষার্থে, আর মানুষ রং বদলায় স্বার্থ রক্ষার্থে। মুখোশধারী মানুষ গুলা আমাদের জীবনে অনেক ভাবেই এসে থাকে। কখনো বন্ধু হয়ে আবার কখনো ভালোবাসার মানুষ হয়ে৷ যেই মানুষটা আমাকে বলতো তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না, সেই মানুষটাই নিজের স্বার্থে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো,, সেই মানুষটাকেই বদলে যেতে দেখতেছি। আবার দিন শেষে আমার সামনে দিবি হেঁসে, খেলে বেঁচে থাকতে দেখতেছি। তাহলে আমি কেন পারছি না!
রাতুল আর ফারিয়া আমার চোখে আঙুল দিয়ে শিখিয়ে দিয়ে গেছে আমাদের পাশে সবসময় যারা আপন সেজে ঘুরে বেরায় তারা সবাই-ই আপন হয় না। আর সবাইকে আপনজন ভাবাটা বোকামী ছাড়া কিছুই নাহ্।

রাতুল এমন টা কেমনে করলো! আমার ভালোবাসা তো আর মিথ্যে ছিল না।
আমি কি পারবো রাতুলকে ভুলতে নাকি সারাজীবন ওর স্মৃতি আমাকে একাই বয়ে বেরাতে হবে!

এসব ভাবছে আর কান্না করছে আরিয়া। কান্না করতে করতেই সে রাতে ঘুমিয়ে গেলো।

____________________________?

সকালে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হলো বের হলো আরিয়া।

রাস্তায় হঠাৎ একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মেরে চলে যায় আরিয়াকে। আর সে মাটিতে লুটিয়ে পরে। কেউ তাকে সাহায্য করার জন্য আসছে না।

কিছুক্ষণ পর, আরিয়া লক্ষ করলো একটা ছেলে দৌড়ে আরিয়ার দিকে এগিয়ে আসছে।
ছেলেটার মুখ দেখার আগেই….

#চলবে…!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here