#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে?
#পর্বঃ_১৬(সারপ্রাইজ)?
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা
লোকটি আরিয়ার অস্তিত্ব বুঝতে পেরে গান ধরলো__
অবুঝ মন ডাকছে তোমায় ভালবাসার আকাশে!
ভিজবো দুজন স্বপ্ন নিয়ে সুখেরই আবেশে।
হো… জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে!
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবাসো আমাকে।
হো… জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে।
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবেসো আমাকে।(২বার)
অনুভবের আড়ালে তুমি জোছনা স্বপ্নেরই আঙ্গিনায় হারিয়ে যাই, চলনা(২বার)
এ প্রণয়ের সবটা জুড়ে তোমারই আরাধনা।
জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে!
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবাসো আমাকে!
হো… জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবাসো আমাকে।
__ও দুচোখের আড়ালে কভু যেওনা ভালবাসাতে আমায় বেধে রাখোনা।(২ বার)
এ প্রণয়ের সবটা জুড়ে তোমারই আরাধনা।
হো… জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে।
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবেসো আমাকে!(৩ বার)
__অবুঝ মন ডাকছে তোমায় ভালবাসার আকাশে!
ভিজবো দুজন স্বপ্ন নিয়ে সুখেরই আবেশে।
হো… জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে!
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবাসো আমাকে।
হো… জীবন আমার রঙ্গিন হলো তুমি কাছে আসাতে।
এর বেশি চাইনা কিছু ভালবেসো আমাকে।(২বার)
ভয়েস টা আরিয়ার খুব চেনা লাগছে। কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না। গান শেষ হতেই আরিয়া লোকটির কাছে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে অচেনা লোকটির দিকে হাত বাঁড়িয়ে দিলো। তখনি লোকটি পিছনে ফিরলো! লোকটিকে দেখে আরিয়া অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেছে। কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,, আ….আপনি এখানে কেন মিস্টার তূর্য?
–অন্য কেউ থাকার কথা ছিল বুঝি?(তূর্য)
–হ্যাঁ! আপনি কী করছিলেন এখানে?(আরিয়া)
–গান গাইছিলাম। কেন শুনতে পাও নি?(তূর্য)
–আরে এখানে তো অন্য একজন থাকার কথা। কোথায় সে!(আরিয়া)
–যদি বলি আমিই সেই লোকটি!(তূর্য)
–না না এটা অন্য কেউ।(আরিয়া)
–তাই নাকি আরুপাখি!(তূর্য)
তূর্যের মুখে আরুপাখি ডাকটা শুনে আরিয়া চমকে উঠলো। এ লোকটা কী বলছে! আমাকে তো সেই অচেনা লোকটি আরুপাখি বলতো। তূর্য কেন বলছে! তাহলে কী তূর্যই সেই লোকটা? না না এটা হতে পারে না!
–কী ভাবছো আরুপাখি?(তূর্য)
–আপনি আমাকে আরুপাখি কেন বলছেন? এটা তো অন্য কেউ বলতো আমায়। তাহলে কী আপনিই সেই লোকটা?(আরিয়া)
–হুম আরুপাখি আমিই তোমার সেই অচেনা লোকটা। যে তোমাকে খুব ভালোবাসে। যে তোমাকে প্রতিনিয়ত মিস করে!(তূর্য)
–না না আমি এটা বিশ্বাস করি না। আপনি মিথ্যা বলছেন। বলেই আরিয়া ঘুরে দাঁড়ালো বেরিয়ে আসার জন্য। তখনি তূর্য আরিয়ার সামনে গিয়ে একগুচ্ছ কাঠগোলাপ ফুল নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বলতে শুরু করলো__
কতটা ভালোবাসি তোমায় বুঝাতে পারবো না। প্রথম যেদিন তোমাকে প্রায় ৫ বছর আগে আহিলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখেছিলাম তখন তোমার ওই মিষ্টি হাসিটার প্রেমে পড়েছিলাম। তোমার মায়াবী চোখের প্রেমে পড়েছিলাম। সেদিন তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম কি না জানি না, তবে শুধু মনে হয়েছিলো আমার তোমাকে লাগবেই আরুপাখি।
আরিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তূর্যের দিকে। তূর্য একটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো,,
আমার হৃদয় হৃৎপিণ্ডের চাইতেও অনেক গভীরে, রক্ত আর শিরা উপশিরারও অনেক গহীনে যে অস্পৃশ্য অবিনশ্বর রুহ আছে, সেই রুহবিন্দু থেকে তোমাকে ভালোবাসি আরএপাখি। তোমার রুপ অবয়ব বা বয়স নয়, তোমার আত্মাটাকে ভালোবাসি। কারন ভালোবাসার শুধু শারীরিক চাহিদা নয় । ভালোবাসা মানে নিজের অপর সত্ত্বাকে তোমার মাঝে খুজে পাওয়া। যাকে ছাড়া আমি অপূর্ণ। আমার হৃৎপিণ্ডের একটু উপরে, অল্প ডানপাশে, আমি নতুন হৃদস্পন্দন টের পাই। তোমার জন্য এই হৃদস্পন্দনের জন্ম। তুমিই আমার সেই হৃদয়ের টুকরো, যা দিয়ে তোমাকে তৈরি করা হয়েছে, আর যাকে খুজেঁ না পাওয়া পর্যন্ত আমি শূন্য ছিলাম । তোমার কাছে কিছু চাওয়ার সাহস নেই আমার। আমি বরং তোমার কাছে নিজেকে দিয়ে দিলাম। আমার স্থাবর অস্থাবর সম্পদ সম্পত্তি দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সবকিছুর উপর কর্তৃত্ব থাকলো শুধু তোমার। তোমায় ভালোবাসি আরুপাখি। কোনকিছু ছাড়াই ভালোবাসবো। একটু ভালোবাসবে আমায় প্লিজ!
আরিয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তূর্যের দিকে! এই লোকটা আমাকে ৫ বছর ধরে ভালোবেসে আসছে! অথচ কখনো জানতেই পারলাম না! আমাকে আগে কেন বলে নি উনি! কী ভাবে ফিরিয়ে দিবো আমি লোকটাকে! কী ভাবে উপেক্ষা করে যাব তাকে।
আরিয়ার ঘোর কাটে তূর্যের কথায়!
আরুপাখি এভাবে কতক্ষণ থাকবো বলো! পা ব্যাথা হয়ে গেলো তো। তূর্যের ফেইসটা দেখে আরিয়া হাসি পাচ্ছে। দেখতে অনেক কিউট লাগছে কিন্তু কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না।
–কি হলো আরুপাখি?(তূর্য)
–কিছু না।(আরিয়া)
–ফুলটা অন্তত নেও প্লিজ।(আরিয়া)
আরিয়া সাথে সাথেই ফুল গুলা নিয়ে নিলো। তা দেখে তূর্য মুচকি হাসলো। সে জানে আরিয়া কাঠগোলাপ অনেক ভালোবাসে!
–আরুপাখি একটু দয়া কর!(তূর্য)
আরিয়া না চাওয়া সত্বেও তূর্যকে ধরে তুলল।
–আমি জানি তোমার মনে আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে আমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো৷ তার আগে চলো কেক টা কেটে নিই।
–আমি বাড়ি যাবো! আর আপনিই যে সেই অচেনা লোকটি তার কি প্রমাণ আছে!(আরিয়া)
–আগে কেক কাট তারপর তোর সব প্রমাণ পাবি।
আরিয়া পরিচিত কারো কন্ঠ শুনে পেছনে তাকালো। ভেতর থেকে সায়ান, আহিল, ছোঁয়া আর অন্তু বেরিয়ে এলো। তাদের দেখে আরিয়া চিল্লিয়ে বলে উঠলো, তোরা এখানে কখন এলি? আর আমি তোদের ভেতরে ঢুকতে দেখলাম না কেন??
–আরু তোর সব প্রশ্নের উত্তর আমরা পরে দিবো আগে কেক টা কাট।(আহিল)
আরিয়াকে সবাই একপ্রকার জোর করেই কেক কাটতে নিয়ে গেলো। কেক কাটার পর সবাই জোর করলো প্রথমে তূর্য কে খাওয়াতে হবে। সবার জোরাজোরিতে আরিয়া এক প্রকার বাধ্য হয়ে তূর্যকে কেক খাইয়ে দিলো। সাথে সাথে তূর্যও আরিয়াকে জোর করেই খাইয়ে দিলো। সবাইকে কেক খাওয়ানোর পর আরিয়া ছোঁয়া কে প্রশ্ন করলো __তোরা এখানে কখন আসলি?
–তোর বাসা থেকে বের হওয়ার পর আহু আমাদেরকে সবটা বলছে আর আমরা সোজা এখানে চলে আসছি।(ছোঁয়া)
–তার মানে আহিল্ল্যা কুত্তা তুই সব জানতি!(আরিয়া)
আহিল একটু ভাব নিয়ে উত্তর দিলো_ হুম।
–তুই আমাকে আগে বলিস নি কেন? আর ছোঁয়া তোরা তো সকালে জানতে পারছিলি আমায় একটা ফোন বা মেসেজ করে তো বলতে পারতি।(আরিয়া)
–আগে বলে দিলে সারপ্রাইজ টা কী থাকতো?(অন্তু)
–তোরা জানিস এই শিশুকে দেখে আমি কতটা ভয় পাইছিলাম!(আরিয়া)
–আবারও আমাকে শিশু বলো? দু’দিন পর যখন তোমাকে বিয়ে করবো আর আমাদের ফুটফুটে ১০-১২ টা বাচ্চা হবে তখনও বইলো আমি শিশু!(তূর্য)
তূর্যের কথা শুনে আরিয়া লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলল।
–ভাইয়া এত বেবি দিয়া কী করবি?(আহিল)
–ক্রিকেট টিম বানাবো।(তূর্য)
তূর্যের কথায় সবাই হেসে উঠলো৷ আর এই দিকে আরিয়া লজ্জায় শেষ। তূর্যের এমন লাগামহীন কথা শুনে আরিয়ার ইচ্ছে করছে ওর মুখে সুপারগ্লু লাগিয়ে দিতে।
–এই আরু তুই লজ্জা কেন পাচ্ছিস? আর ভাইয়ার উত্তর টা দে।(ছোঁয়া)
–কিসের উত্তর?(আরিয়া)
–ভাইয়াকে ভালোবাসিস?
আরিয়া কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না! সেও তো তূর্যকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছে।
আরুপাখি তোমার এখনই কিছু বলতে হবে না। তোমার যখন মনে হবে তুমিও আমাকে ভালোবাসো তখন বলো। আমি ততদিন অপেক্ষা করবো। আর আমি তোমাকে ৫ বছর ধরেই ভালোবেসে এসেছি। তবে সেটা বুঝতে আমার দুই বছর লেগেছিলো! যখন আমি বাহিরে চলে গেছিলাম। আমি সবসময় তোমাকে ফলো করতাম। সেটা কেউ বুঝো নি তোমরা। আহিলকেও তখন কিছু বলে নি। বাহিরে যাওয়ার ১ বছর পর দেশে এসেছিলাম। তখন আহিলকে বললাম আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর আহিল যা বললো সেটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি ভাবতেই পারছিলাম না আমার আরুপাখি অন্য কাউকে ভালোবাসে! সে অন্য কারো বউ হবে এটা ভাবতেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো। অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম আরুপাখি। কিছুদিন পরেই আবার বাহিরে চলে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ওখানে কাজে বিজি থাকলে তোমাকে ভুলে যাবো। হ্যাঁ সেটা শুধু দিনের বেলা পর্যন্ত পেরেছি। সারাদিন নিজেকে কাজে, লেখাপড়ায়, আর গানের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতাম। আর রাতে যখন ঘুমাতে যেতাম তখনই একাকিত্ব আমাকে গ্রাস করতো। এভাবেই চলতো আমার দিন। কিছুদিন আগে আহিল ফোন দিয়ে বললো তুমি যাকে ভালোবাসতে সে তোমাকে ঠকিয়ে চলে গেছে। জানো তখন আবার আশাটা ফিরে পেয়েছিলাম। আমি আমার আরুকে নিজের করে পাবো! হ্যাঁ আমি ওকে আমার করেই ছাড়বো! এটা ভাবতেই জানো কতটা খুশি হয়েছিলাম ভাবতে পারবে না। আবার কষ্টও হচ্ছিল তুমি কতটা আঘাত পেয়েছো ভেবে। জানো আরুপাখি হৃদয় ভাঙ্গার কোন শব্দ হয় না বলে বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব হয় না ভেতরে ঠিক কতটা ক্ষত হয়েছে । তবে যেসব মানুষের একবার হৃদয় ভাঙ্গে তারা বোঝে অপর মানুষটা হৃদয় ভাঙলে ঠিক কতটা যন্ত্রনা হয়। যেসব মানুষগুলো তার প্রিয় মানুষটাকে কাছে পেয়েও হারিয়ে ফেলেছে, তারা যখন কোন মানুষকে প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয়ে কাঁদতে দেখে তখন তারাও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না। মুহুর্তের মধ্যে যেন সব অতীতের স্মৃতিগুলো তরতাজা হয়ে চোখের কোনে শ্রাবন এনে দেয়। হৃদয় ভাঙ্গা মানুষগুলো কাউকে যেমন চট করে বিশ্বাস করতে পারে না। ঠিক তেমনি দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসার জন্য একটা হৃদয় ভাঙ্গা মানুষকে খুঁজে। কারণ, মানুষ মানুষের কষ্ট তখনই বোঝে যখন সেম একই কষ্ট দুজনেই ভোগ করে। তাই হৃদয় ভাঙ্গা মানুষগুলোর কারো হৃদয় ভাঙবে না।
__আর আমি জানতাম সে সময় তোমাকে প্রপোজ করলেও তুমি রাজি হতে না। আমি যতটা পেরেছি আড়ালে থেকে তোমাকে মেন্টালি সাপোর্ট দিয়েছি৷ তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসা তৈরি করতে আড়ালে থেকেছি। জানি না কতটুকু জায়গা করতে পেরেছি। তবে হ্যাঁ তুমি যেটা বলবে সেটাই মেনে নিব আমি। হ্যাঁ বা না যেকোনো একটা। আমি সবটা মেনে নিব।
বলেই তূর্য চলে যেতে নিবে তখনি আরিয়া পেছন থেকে তূর্যের হাত ধরে ফেললো। তার আর বুঝতে বাকি নেই এই সে অচেনা লোকটা। যাকে সেও মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছে। তাই তূর্যের উদ্দেশ্যে সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো, ভা…ভালোবাসি! আপনাকেও আমি ভালোবাসি।
আরিয়ার কথা শুনে তূর্য একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিলো।
#চলবে….!