ভালোবেসে_থাকবো_পাশে? #পর্ব_০৫

0
1765

#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে?
#পর্ব_০৫
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

– ভার্সিটি আর লাইব্রেরি কী তোর বাপের? আমরা কোথায় দাঁড়াবো সেটা কী তুই ঠিক করবি?(ফারিয়া)

ওই বেদ্দপ মাইয়া একদম বাপ তুইল্লা কথা কইবি না। কানের নিচে এমন একটা দিমু যে তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীর নাম ভুইল্লা যাইবি। তোর মতো বেহায়া মেয়ের সাথে কথা বইল্লা আমার টাইম আর মুখ নষ্ট করতে চাই না৷ (ছোঁয়া)

হ দোস্ত এই খবিশ বেডির লগে বেহুদা কথা কইয়া আমাগোর লাভ নাই!(আহিল)

রাতুল বাবু দেখছো ওরা আমাকে কীভাবে অপমান করতাছে!(ফারিয়া)

রাতুল পাশ থেকে বলে উঠলো, ”ছোঁয়া তোমরা কিন্তু এখন একটু বেশিই বারাবাড়ি করতাছো। লাইব্রেরি থেকে বের হও না হয় চুপচাপ থাক। আর একবার ফারিয়াকে অপমান করলে তোমার খবর আছে।

এই তুই কোন উগান্ডার নেতা রে। তোর কথা কেন শুনবো? আর তুই আমার কী খবর করাবি? তুই তো এখনও তোর গার্লফ্রেন্ডের কাছে বাবু-ই রয়ে গেলি। আরু এই বাবু আমাদের ভার্সিটিতে কী করে? ওর তো এখন মায়ের হাত ধরে শিশুপার্কে যায়া ঘুরার কথা। (ছোঁয়া রাতুলকে দেখিয়ে কিছুটা মজার স্বরে বলে উঠলো।)

এই মেয়ে বয়সে তোমার থেকে বড়। সম্মান দিয়া কথা বলো!(রাতুল)

হপ বেডা কিসের বড় হইলি? আগে তোর বেহায়া গার্লফ্রেন্ড সামলা। যত্তসব আজাইরা পিপলস।(ছোঁয়া)

এটা শুনে রাতুল রাগে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,, আরু তুমিই ওদের বলেছো আমাদের অপমান করতে তাই না। আসলে তোমাদের মতো থার্ডক্লাশ মেয়ের থেকে এর বেশি আর কী আশা করা যায় বলো৷ আমাকে পাও নি তাই এখন আমাকে আর ফারিয়াকে অসম্মান করতে উঠে পড়ে লেগেছো। মা-বাবা হয়তো শিক্ষায় দেয় নি কার সাথে কী ভাবে কথা বলতে হয়।

কথাটা শুনেই আরিয়া রাগে ফুঁসে উঠলো। রাতুলের দিকে ঘৃনা ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়া বলতে শুরু করল, ”হেই লিসেন মিস্টার রাতুল! আগেও বলেছি আর এখনও বলছি ডোন্ট কল মি আরু। অনলি আরিয়া ওকে! তোমাদের মতো বিশ্বাস ঘাতকদের মুখে আমার আরু নাম টা শুনতে চাই না। কি বলছিলে আমি ওদের বলছি তোমাদের অপমান করার জন্য? সম্পুর্ন ভুল। আর সব থেকে বড় কথা তোমরা তো এটারই যোগ্য। ইচ্ছে তো করছে তোমার গালে একটা টাটিয়ে থাপ্পড় মারি। কিন্তু দিতে পারছি না কারণ মা-বাবা এসব শিক্ষা দেই নি। সব থেকে বড় কথা তোমাকে থাপ্পড় দিয়া আমি আমার হাত নোংরা করতে চাই না। কি যেন বলছিলে তুমি আমার মা-বাবা আমাকে শিক্ষা দেয় নি? ওই হ্যালো কান খুলে শুনে রাখো আমার মা-বাবা আমাকে খুব ভালো শিক্ষা দিয়েছে। শিক্ষা হয়তো তুমি পাও নি৷ পেলে কাউকে ঠকাতে পারতা না। নেক্সট টাইমে আমার সাথে কথা বলতে আসলে ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলবা। আবার যদি একি ভুল করো আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। যত্তসব আজাইরা ম্যানার্সলেস পিপলস।

একনাগাড়ে কথা গুলা বলে থামলো আরিয়া। আহিল, ছোঁয়া আর অন্তুকে উদ্দেশ্য করে বলল, তোরা এখানেই থাকবি নাকি ক্লাসে যাবি?

ক্লাসে চল। এদের লগে ফালতু বেহুদা কথা বইলা আমাদের টাইম নষ্ট করার কোন মানে হয় না।(অন্তু)

বলেই সবাই লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে গেলো।

রাতুল আর ফারিয়া রীতিমতো অবাক। যেই মেয়েটা তাদের এত ভালোবাসতো সম্মান করতো সেই আজ এত অপমান করলো।

এসব থেকে আড়াল থেকে কেউ একজন বাঁকা হেসে বেরিয়ে গেলো। আর খুশি যেনো উপচে পড়ছে। খুশি হবেই না কেন তার প্রেয়সী আজকেও বেইমানদের যোগ্য জবাব টাই যে দিয়েছে।

লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে দেখে সায়ান দাঁড়িয়ে আছে। সায়ান আরিয়াদের দুই বেজ সিনিয়র আর রাতুলের ক্লাসমেট(যদিও রাতুল বর্তমানে বাবার সাথে বিজনেস সামলায়)। সায়ান ছোঁয়া কে ভালোবাসে। কিন্তু ছোঁয়া পাত্তা দেয় না। যদিও সে মনে মনে সায়ানকে পছন্দ করে। আরিয়াকে একদম বোনের মতোই ভালোবাসে।

সায়ান ভাইয়া কখন এলে?(আরিয়া)

সায়ান ছোঁয়া কে দেখিয়ে বলল,, যখন থেকে তোমার এই দজ্জাল বান্ধবী রাতুল আর ফারিয়াকে ধুয়ে দিচ্ছিল তখন থেকেই দাঁড়িয়ে আছি।

এটা শুনেই ছোঁয়া রাগে ফুঁসে উঠলো। কী আমি দজ্জাল? এই ছেলে সাবধানে কথা বলবেন না হলে কিন্তু ওদের থেকে বেশি খারাপ অবস্থা করবো আপনার।

কিভাবে করবা গো? একটু ভালোবাসো আমারে তাহলেই তো হয়।

আমার টেকা পড়ে নি আপনারে ভালোবাসতে। যত্তসব ঢং!

একটা কথা কী জানিস আরু,, যে আমাকে পাত্তা দেয় তাকে পাত্তা না দিয়ে,, যে আমাকে পাত্তা দেয় না তার পিছনে ঘুরে ঘুরে,, পাত্তাহীনতায় বেপাত্তা আমি।?

সায়ানের কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে দিল। এটা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো! ছোঁয়া মুহুর্তে রণচণ্ডীর রুপ ধারণ করে সায়ানকে বলল,, এই বেডা আপনারে কইছি আমার পিছনে ঘুরতে? ফারদার যদি এই কথা কইছেন তাইলে কিন্তু আপনারে দেইক্কা নিমু হুহ্!

কেন বেবি এই দুইবছর আমাকে দেখেও তোমার মন ভরে নি? আর কত দেখবা বল? আচ্ছা চল আমরা এখনি বিয়ে করে ফেলি তাহলে আরো ভালো হবে। সারাদিন তোমার সামনে বসে থাকবো। তখন যত মন চাই দেইখো।

আরে আজব আমারে আপনার কোন দিক দিয়া বেবি মনে হলো হে? যদি বেবিই হতাম তাহলে এখন আমি শিশু পার্কে মায়ের খুলে আসে বসে পিটার খাইতাম। ভার্সিটিতে থাকতাম না। যত্তসব ন্যাকা মার্কা ডায়ালগ। এই আমি ক্লাসে গেলাম মন চাইলে তোরাও আয়। বলেই ছোঁয়া চলে গেলো।

আরু এইডা কী হইলো? তোর বান্ধবী আমারে এত্তগুলা কথা শুনাই গেলো আমারে।

ভালো হয়ছে। তুমি জানো না ও এসব ন্যাকা মার্কা কথা শুনলে রাগ করে। একটু আগেও তো রাতুল আর ফারিয়াকে অপমান করে আসলো।

হু তোর শাঁকচুন্নি বান্ধবী এডা ছাড়া আর কী পারে।

তুমি তো আমার ওই শাঁকচুন্নি বান্ধবীর পেছনেই পরে আছো হুহ্!? (একটু ভাব নিয়া বললো আরিয়া)

সায়ান মুচকি হেসে বলল,, ওরে রাগাইতে ভাল্লাগে তাই এমন করি। আচ্ছা শুন যেটার জন্য আসছি!

কেন আসছো ভাইয়া তোমার বিয়ের দাওয়াত দিতে?(অন্তু)

আরে না বিয়েটা তো তোমাদের বান্ধবীরেই করমু।

তো?

শুনো তিনদিন পর কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আর সেই দায়িত্ব আমাদের উপর পড়েছে। রাতুলও থাকবে। কিছুক্ষণ পর প্রিন্সিপাল স্যার যাবে সব ক্লাসেই বলতে।
যেটা বলতে আসছি- আরু তোকে আর আহিলকে কিন্তু গান গাইতে হবে। আর অন্তু তুমি আর ছোঁয়া ডান্স পারফরম্যান্স করবা।

আরিয়া মনে মনে ভাবছে,, যার জন্য গান গাইতাম সেই তো আর আমার নেই।

কি ভাবছিস আরু? (আহিল)

আরিয়া কিছুটা মন খারাপ করে বলল,, ভাইয়া আমি এই মুহূর্তে প্রস্তুত না। আমি পারবো না।

আরু আমি জানি তোর মনের অবস্থা টা। কিন্তু তোকে পারফরম্যান্স করতেই হবে।(সায়াম)

আমি পারবো তো ভাইয়া?

আহিল আরিয়াকে বলল,, আরু চিন্তা করছিস কেন? আমি আছি তো তোর পাশে। আমরা দু’জন মিলে গান গেয়ে পুরো স্টেজ কাঁপিয়ে দিবো।

এ্যাহ্ আসছে অস্বর নিয়ে স্টেজ কাঁপাইতে।

এই অন্তু ফকিন্নি একদম অস্বর কইবি না। আমিও দেখবনি তুই কেমন ডান্স করিস।

হুহ্ দেখিস। এইবার ক্লাসে চল।

হুম আরু তোরা ক্লাসে যা বাই বলেই সায়ান চলে গেলো।

ক্লাসে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে প্রিন্সিপাল স্যার অনুষ্ঠানের কথা বলে আসলেন। বড়দের সব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর ক্লাসে বলে গেলেন কে কোন পারফরম্যান্সে অংশ গ্রহণ করবে তার লিস্ট বড়দের কাছে দিতে। আর সেই লিস্ট তৈরি করার দায়িত্ব আরিয়ার উপর দিয়েছে।

ক্লাসের কয়েকজন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে। ফারিয়াও গানের প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে। ফারিয়া আর তার ফ্রেন্ড জয় গাইবে।

হাতে আর চারদিন সময় আছে তাই সবাই কাল থেকেই গানের রিয়ারসেল শুরু করবে। দুই বেল শেষ হওয়ার পর ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে।

___________?

পরের দিন ভার্সিটিতে গিয়ে সবাই রিয়ারসেল শুরু করলো। প্রায় দুই ঘন্টা প্র্যাকটিস করে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো শপিং করতে যাবে তাই। সবাই টুকটাক প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস পত্র কিনে মার্কেট থেকে বেরিয়ে গেলো। রাস্তা পার হওয়ার সময় ছোঁয়া, অন্তু, আহিল একটু এগিয়ে গেলো।
আরিয়া পেছন পেছন একটু অন্যমনষ্ক হয়ে হাঁটছিল। আর তখন কেউ পেছন থেকে কেউ একজন আরিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে পেছনে নিয়ে যায় আর গাড়ি আরিয়াকে ছুঁই ছুঁই হয়ে দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে যায়। চমকে উঠলো আরিয়া।

হঠাৎ সবাই পিছনে ফিরে দেখে আরিয়ার হাত কেউ একজন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ দেখা যাচ্ছে না কারণ মুখে মাস্ক লাগানো ছিল। সবাই দৌড়ে আরিয়ার কাছে চলে আসলো।

ছোঁয়া উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে আরিয়া?

আমি ঠিক টাইমে না আসলে আপনাদের বান্ধবী মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে লাশ হয়ে রাস্তায় পরে থাকতো। সবাই একটু সতর্ক হয়ে রাস্তায় চলা-ফেরা করবেন।

জ্বি ঠিক আছে।

ছেলেটা আরিয়ার দিকে কিছুটা ঝুকে বললো,, এই যে ম্যাম মন কোথায় থাকে? এইবার তো একটু নিজের মতো করে বাঁচতে শিখুন। নিজের জন্য না হলেও অন্যের জন্য নিজের একটু খেয়াল রাখুন। কেউ তো আছে যে আপনাকে তার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। সো নিজের প্রতি খেয়াল রাখুন। বাই আরুপাখি।

চলবে…..!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here