ভালোবেসে_থাকবো_পাশে? #পর্ব_০৬

0
1851

#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে?
#পর্ব_০৬
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা

ছেলেটা আরিয়ার দিকে কিছুটা ঝুকে বললো,, এই যে ম্যাম মন কোথায় থাকে? এইবার তো একটু নিজের মতো করে বাঁচতে শিখুন। নিজের জন্য না হলেও অন্যের জন্য নিজের একটু খেয়াল রাখুন। কেউ তো আছে যে আপনাকে তার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। সো নিজের প্রতি খেয়াল রাখুন। বাই আরুপাখি।

ছেলেটার প্রতিটা কথা আর ভারী নিঃশ্বাসে যেন আরিয়ার বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। আরিয়া এখনও যেন ঘোরের মধ্যে আছে।

ছোঁয়া আরিয়া এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করল, এই আরু কই হারিয়ে গেলি? আর এই ছেলে তোকে কানে কানে কী বলে গেলো?

কো…কোন ছেলে?

তুই এভাবে তুতলিয়ে কথা কেন বলছিস? আর ছেলেটা তোকে কী বলে গেলো?

কথা গুলা মনে পড়তেই আরিয়ার গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেলো!

এই আরু এখন আবার লজ্জা পাচ্ছিস কেন?(অন্তু)

আরিয়া ওদের সব টা খুলে বলল।

সব শুনে ছোঁয়া বলল,, আচ্ছা ছেলেটার সব কথায় নরমাল লাগলো। বাট আরু পাখি কেন বলল? এই ছেলেটা কে রে বল!

আমি কেমনে বলব! আমি তো ছেলেটার ফেইস-ও ভালো করে দেখি নি।

আরু সত্যি করে বল কে এই ছেলে।

আরে আজব আমি কেমনে জানবো।

আহিল সবার আড়ালে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,, গায়েস এটা রাস্তা ভুলে যাস না। আর ছেলেটা যেই হোক সেটা নিয়ে পড়ে থাকলে তো আর হবে না। এখন বাসায় চল। এমনিই অনেক সময় পার হয়ে গেছে।

হুম চল। আগে কিছু খেয়ে তারপর যাবো।(অন্তু)

তুই খাওয়া ছাড়া আর কী জানিস কাইন্ডলি একটু বলবি প্লিজ!(আহিল)

অন্তু কিছুটা ভাব নিয়ে বলল,, ডান্স করতে জানি আমি।

যেই না ডান্স করছ! পারস তো খালি গরুর মতো লাফাইতে।(আহিল)

কী এত বড় কথা। আমার রুমে যখন ডান্স করতে দেখবি তখন বুঝবি কত ভালো ডান্স পারি হুহ্।

ওহ্ তার মানে তোর ডান্স দেখতে আমাদের সবাইকে তোর রুম পর্যন্ত যেতে হবে?(আহিল)

ধ্যাত এইডা কই নি। তিনদিন পরে তো ডান্স কমপিটিশন আছে তখন দেখিস।(ছোঁয়া)

হ দেখমু নে। এখন চল খেয়ে বাসায় যায়।

রেস্টুরেন্টে গিয়ে সবাই খাবার অর্ডার দিলো।

খাবার খেয়ে সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

বাসায় এসে আরিয়া শাওয়ার নিয়ে শুয়ে পড়ল। আর ভাবতে লাগলো সত্যিই তো কে এই ছেলে। আমাকে আরু পাখিই বা কেন ডাকলো।

______________?

তিনদিন পর_____

আরু এই আরু উঠ না!
এই আরুরুরু…..

আরিয়া লাফ দিয়ে উঠে বসলো। সামনে থাকা ব্যত্তিদের দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো আরিয়া।

এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আরু?

আরিয়া টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে অন করে দেখে ৭টা বেজে ৪ মিনিট।

কি রে কথা বলা ভুলে গেলি নাকি? তোরে ভুতে ধরলো না তো!

কী আবোল-তাবোল বলছিস। আগে ক তোরা দুই ফকিন্নি এত সকালে আমাগোর বাসায় কেন? আন্টিরা কী খাইতে দেয় নি নাকি বাসা থেকে বের করে দিছি যার ফলে ভিক্ষা করতে করতে এখানে চলে আসলি!

আরিয়ার কথা শুনে ছোঁয়া রাগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিয়ার কানে কেউ টেনে ধরলো।

আহ্ আম্মু কী করছো লাগছে তো আমার। ছাড়ো প্লিজ!

মেয়ে গুলা কতদিন পর বাসায় আসছে তাদের বসতে না বলে অপমান করে যাচ্ছিস।

আরিয়া বিরবির করে বলল,, আমার এত আরামের ঘুমটা ভেঙে দিছে তাদের নাকি আবার বসতে বলব।

কী বিরবির করছিস?

কিছু না আম্মু।

তোমরা বসো। আরিয়া তুইও ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোদের জন্য খাবার আনছি।

না আন্টি আমরা খেয়েই এসেছি। আপনি বরং আরিয়ার জন্য খাবার নিয়ে আসুন।(ছোঁয়া)

আরে মা তোমরা বস আমি আসছি বলেই আরিয়ার মা চলে গেলো।

এই ফকিন্নির দল এখন বল কেন আসছিস?

তখনি ছোঁয়া কিছুটা হতাশ সুরে বলল,, আর বলিস না দোস্ত এই অন্তুর বাইচ্ছা আমারে তো সকাল সাড়ে ছয়টায় ঘুম থেকে তুইল্লা নিয়া আইছে৷ তার নাকি একা একা সাজতে ভাল্লাগে না। আর এমনিও তো ঢিলা কোম্পানি।

সবসময় আমারে অপমান না করলে হয় না তোর ফকিন্নি?

নাহ্!

এই তোরা থাম আগে ক তোরা সাজবি কেন?

আজ যে ভার্সিটিতে ফাংশন আছে ভুইলা গেছেস তুই?

ওহ্ হ্যাঁ সরি।?

হয়ছে এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়া আয়।

হুম বলেই আরিয়া ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

আরিয়া আর ছোঁয়ার সাজ কমপ্লিট। আরিয়া হাল্কা মেকআপ করছে, লাল পাড়ের সবুজ শাড়ি, কাজল, হাল্কা লিপস্টিক, চুল গুলা কুপা করা আর চুলে বেলি ফুলের মালা । আর ছোঁয়া হাল্কা গর্জিয়াস মেকআপ করছে। দু’জন কেই সুন্দর লাগছে।

এই অন্তুর বাইচ্ছা আর কতক্ষণ লাগবো তোর?

দোস্ত দাঁড়া একটু কাজল টা দিয়া নিই তাহলেই শেষ।

আরিয়া কিছুটা রাগি গলায় বলল,, এই নিয়া কতবার কইলি শেষ শেষ?

এমন করস ক্যা? ডেইলি কি আর সাজতে বসি নাকি!

কথা অফ কর আর তাড়াতাড়ি কর।

এই নে শেষ আর দেখ কেমন লাগছে!

আরিয়া ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,, দোস্ত আমরা কী কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছি?

না তো! কেনো?

আরে দেখিস না এই কুত্তী কত গর্জিয়াস মেকআপ করছে।

ছোঁয়া বলল,, তবে খারাপও লাগছে না।

হুম। এইবার চল, সাজতে সাজতেই তো টাইম শেষ।

সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার আগে আরিয়ার আম্মু জোর করে সবাইকে খাইয়ে দিলো। যদিও অন্তু খাইতে চাইনি ওর সাজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে।

ভার্সিটিতে অনেকেই আরিয়া, ছোঁয়া, আর অন্তুর দিকে তাকিয়ে আছে। তিনজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে। ড্রেসআপও সেইম।

আহিল এসে ওদের দেখে বলল,, দেখলি সবাই কেমনে তাকিয়ে আছে। আমার কথা মতো সেজেছিস বলেই এত সুন্দর লাগছে হুহ্।

হয়ছে নিজের প্রশংসা অফ কর আর চল।

ছোঁয়া উৎফুল্ল হয়ে বলল,, আরু রে এটা কী সত্যিই আমাদের ভার্সিটি নাকি রে? আমি তো চিনতেই পারছি না।

আরিয়া কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,, এই যে মিস ন্যাকার ন্যাকামো শুরু।

কী বললি আমি ন্যাকা?

আরে না আমি কী আমার কিউট বান্ধবীটারে ন্যাকা কইতে পারি তোরাই বল।

আরিয়ার কথার জবাবে আহিল আর ছোঁয়া একসাথে মাথা নাড়িয়ে বলল না না।

তখনি সায়ান ভাইয়া আমাদের কাছে এসে কুশলাদি বিনিময় করল।
আরু তোদের কে আজ খুব সুন্দর লাগছে।

ধন্যবাদ ভাইয়া।

ছোঁয়াকে উদ্দেশ্য করে সায়ান ভাইয়া বলল,, কিন্তু তোর বান্ববী টাকে শাঁকচুন্নির মতো লাগছে।

ছোঁয়া সায়ান ভাইয়ার দিকে রাগি লুক দিলে আর বললো আপানারে কে বলছে এই শাঁকচুন্নির দিকে তাকাতে।

এভাবে তাকিয়ো না গো প্রেয়সী মরেই যাবো।

সায়নের মুখে মরার কথা শুনে ছোঁয়ার বুকটা ধ্বক করে উঠলো। সে আর কাউকে কিছু না বলেই হাঁটা শুরু করলো।

কেউ একজন আরিয়াকে দেখেই বলে উঠলো মাশাল্লাহ.!!

আজকের প্রতিযোগিতায় স্পেশাল গেস্ট শিশির আহমেদ তূর্য। দেখতে মাশাল্লাহ। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। হাইট ৫ ফুট ৮। তিনি একজন singer. পাশাপাশি বাবার ব্যবসা সামলায়।

প্রতিযোগিতা শুরু হলো। প্রথমে কবিতা আবৃত্তি, তারপর নাচ, নাটক। ছোঁয়া আর অন্তু অনেক ভালোই ডান্স করছে। সায়ান, রাতুল আর কয়েকটা ছেলে স্টেজে নাটক প্রদর্শন করলো তা দেখে হাসতে হাসতে সবাই কাহিল। এর পর এলো গানের প্রতিযোগিতা। আরিয়া আর আহিল সবার শেষে গাইবে এর আগে হলো ফারিয়া ও জয়। মাঝে আরো তিনটা পারফরম্যান্স। ফারিয়া আর জয় স্টেজে আসতেই তালির বর্ষণ শুরু হলো। তারা গান গাইলো।
❝তোর মন খারাপের দেশে যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে,, তোর মনটা ভালো করে দিবো অনেক ভালোবেসে।৷(২ বার)
ডাকলে কাছে আসিস পারলে একটু বাসিস মুখটা পেতে রাখিস ভালোবাসা দিতে। সব অভিমান ভেঙে দিবে তোর কাছে এসে….❞

ছোঁয়া আর অন্তু অবাক হয়ে আরিয়া আর আহিলকে বললো,
দোস্ত এটা তো তোদের গান।
আহিল বললো,
“হ্যাঁ।”
তাহলে ওরা কেন গাচ্ছে? নিশ্চয়ই চুরি করেছে। আমি এখনই যেয়ে দেখছি।
আরিয়া বাঁধা দিয়ে বললো,
কি বলবি? আমরা যে এটা গাইতাম তার প্রমাণ কি?
তাহলে এখন কি করবি?

দেখতে থাক কী কী হয়।

আরিয়া আহিলের দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। আহিলও উওরে হাসি দিলো।

আর এদিকে আরিয়া আর আহিলকে দেখে কেউ একজন বাঁকা হাসি দিল। সে কখন থেকেই আরিয়াকে দেখে যাচ্ছে। একদম নিজের মনের মতো সেজেছে আরিয়া।

পরপর তিনটা গান হওয়ার পর আরিয়া আর আহিল গান গাওয়ার জন্য স্টেজে গেলো।
করতে লাগলো। এরই মাঝে আরিয়া আর আহিল গান ধরলো_____

“”কত টা হাত বাড়িয়ে দিলে তোমার মন ধরা যায়
কতটা পথ পাড়ি দিলে তোমার প্রেম ছোঁয়া যায়।
পাবো কী পাবো না জানি না, তোমাকে তো বুঝি না।

#চলবে.!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here