ভালোবেসে_থাকবো_পাশে? #পর্বঃ_১২,১৩

0
1415

#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে?
#পর্বঃ_১২,১৩
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা?
পর্বঃ_১২

আরিয়া দুজনের কাছে গিয়ে বললো,, ফারু এন্ড জিজু দু’জনকেই কংগ্রেস। ছোঁয়া তোরাও আয় ফারু আর জিজুকে হলুদ লাগাবি।

আরিয়া হাতে হলুদ নিয়ে ফারিয়া আর রাতুলের পুরো মুখে মেখে দিল। সবাই আরিয়ার দিকে বিষ্ময় ভরা চোখ নিয়া তাকিয়ে আছে। আরিয়া যে এমন করবে কেউ ভাবতেই পারে নি।

আরিয়া এটা কী করলি? তুই জানিস আমি এসব একদম পছন্দ করি না তাই সবাই এতক্ষণ ধরে অল্প করে হলুদ দিচ্ছিল আর তুই পুরা মুখে একদম লেপ্টে দিলি!

কুল ডাউন ফারু। আজ এত রাগলে শ্বশুর বাড়ির লোক তোর আসল চেহেরা টা দেখে নিবে। সো আজ যা যা করবো চুপচাপ দেখে যা।

ফারিয়া আস্তে করে বলল,, আরিয়া কাজ টা একদম ঠিক করলি না।

ধ্যাত তোর ভালো আর খারাপ তোর খুলে নিয়া বসে থাক। আমার কী!

হঠাৎ আরিয়ার চোখ যায় রাতুলের দিকে! রাতুলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,, আরে জিজু তুমি কী নিজের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছ না? আবার একটু হলুদ দিব নাকি জিজু! বলেই একটা চোখ টিপ দিল।

রাতুল ঢোক গিলে বলল,, আরে না না অনেক দিছ আর দেওয়া লাগবে না।

হেই কও কী তুমি রাতুল! ওওও সরি জিজু আমরাও তো বাকি আছি। আফটার অল ফারিয়া আমাদের ফ্রেন্ড আর তুমি তো জিজু সো আমাদেরও তো একটা দায়িত্ব আছে নাকি! বলেই ছোঁয়া, অন্তু আর আহিল আরো কিছু হলুদ লেপ্টে দিল তাদের মুখে।

ফারুরে তোরে তো সেই সুন্দর লাগছে একদম গাছে থাকা হলুদ শাঁকচুন্নির মতো! বলেই আরিয়া ফিক করে হেসে দিল।

আর এইদিকে তূর্য(শিশির) মুগ্ধ হয়ে আরিয়ার হাসি দেখতেছে। আরুপাখি কবে যে তোমাকে মনের কথা টা বলবো! কবে যে তোমাকে আমার নিজের করে পাবো! আমি নিজেও জানি না তুমি যেদিন জানবা আমিই সেই অচেনা কেউ তখন কী রিয়েক্ট করবা। অনেক টাই তো বদলে গেছো আজ তুমি। সেই আগের আরুপাখিটা যে আর নাই।ভেবেই তূর্য তপ্ত শ্বাস ছাড়লো।

তখনি আহিল এসে তূর্যর কাঁধে হাত করে শান্ত গলায় বলল,, ভাইয়া তুই আরুর কথায় ভাবছিস তাই না। যে ও বদলে গেছে।

হুম!

আমিও সেটাই ভাবছি রে। জানিস ভাইয়া মানুষ বদলায়…. বদলাতে না চাইলেও পরিস্থিতি মানুষকে বদলাতে বাধ্য করে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাদুকর সময়। যার জন্য এক সময় প্রচন্ড ভালোবাসা থাকে তার মায়াও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। তীব্র রকমের ভালোবাসাও ফুরিয়ে শুকনো নদী হয়ে যায়..!!

দীর্ঘ দিন পাড়ি দেওয়ার পর তার কথা আর নিয়ম করে মনে পড়ে না। সময়ের সাথে সব কিছু কেমন জানি বিলিন হয়ে যায়..!! আজ থেকে দশ বছর আগে যার জন্য হৃদয় পুড়ে ছাই হয়ে যেত, প্রতিটি নিঃশ্বাসে যে মানুষটা বেঁচে থাকত, যার জন্য বাঁচা অসম্ভব হয়ে যেত, সময়ের আবর্তনে সেই মানুষটাকে ঘুনাক্ষরেও আর মনে পড়ে না..!! তবে চির তরে ভুলা যায় না কোন বিশেষ দিনে বা দিবসে তাকে মনে পড়ে। তখন আগের পাগলামি গুলোর কথা মনে পড়ে হাসি পায়..!! সময়ের বিবর্তনে আমাদের সব শোক শুকিয়ে দেয়। বাস্তবতার মুখোমুখি হলে জীবন আমাদের পথ চলা ঠিক‌ই শিখিয়ে দেয়..!!

মানুষ বদলায় খুব বদলায়। সময়ের সাথে সাথে বদলায় রুচি। তুই যে দেখছিস সে দেখার চোখ‌ও বদলায়, আর অনুভবের হৃদয় অদ্ভুত ভাবে বদলায়..!! মানতে কষ্ট হলেও এটাই বিশ্বাস করতে হবে যে, তুই যে জীবনে বাস করছিস সে জীবন ছাড়াও আরো অনেক জীবন আছে, তুর মনে হতে পারে সে জীবন গুলোতে তুই বাস করতে পারবি না..!! কিন্তু সময় বড় অদ্ভুত জাদুকর সময়ের সাথে সাথে তুই সে জীবন গুলোতে কখন যে পদার্পন করবি তুই নিজেও টের পাবি না..!!

— জীবনে কোন কিছুই অপরিহার্য নয় কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না। এ পৃথিবীতে এমন কেউই নেই যাকে ছাড়া বাঁচা যায় না-!!
কষ্ট পেতে পেতে মানুষ এক সময় পাথর হয়ে যায়৷ অবহেলা পেতে পেতে মানুষ বদলে যায়। ঠিক আমাদের আরুও আজ বদলে গেছে।

কথা গুলা ঠিক। কিন্তু তুই তো দেখি কবি হইয়া গেছিস।

আরে ভাইয়া সত্যি কথায় কইলাম। এখন চলো আরুদের কাছে যাই।

এই আরু রাতুল তোর দিকে সেই কখন থেকে তাকিয়ে আছে! ব্যাপার টা কী রে?(ছোঁয়া)

আজব আমি কেম্নে কমু। তুই গিয়া জিজ্ঞেস কর।

আরে এম্নে কস কে? বাই দ্যা সোফা ও আবার তোরে ভালোবাসতে শুরু করল নাকি?

পাগল হইছিস তুই? রাতুল আমাকে না ফারিয়াকে ভালোবাসে। আর তাই ফারিয়াকেই বিয়ে টা করছে।

তাহলে এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কী?

হয়তো আমাকে এভাবে থেকে অবাক হয়ে গেছে। ও হয়তো ভাবছিলো আজকে আমি ওর কাছে ভালোবাসা ভিক্ষা চাইবো না হয় ওদের বিয়েতে সিনক্রিয়েট করবো।

তখনি ফারিয়া এসে বলে, তুই তো সত্যিই বদলে গেছিস আরু সরি আরিয়া। সত্যিই ভেবেছিলাম তুই ভেঙে পড়বি, আমাদের বিয়েতেও আসবি না। কিন্তু না তুই তেমন কিছুই করলি না। একটু বাজে সিনক্রিয়েট করলেই পারতি। সবার চোখে খারাপ বানাতে পারতাম। ধ্যাত এমন কিছুই করলি না। আসলেই অনেক বেশিই বদলে গেছিস। আর বলছিলি তো আমাদের জবাব দিবি, তো কেম্নে দিবি? কী করতে পারবি তুই সেটাই দেখব!

তুই কখনোই ভালো হবি না তাই না। আমাকে কষ্ট দিতে পারলেই তুই শান্তি পাস তাই না ফারু?কিছুটা করুন কন্ঠে বলল আরিয়া।

হ্যাঁ অনেক বেশিই শান্তি পাই আমি।

ছোঁয়া আরিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে ফারিয়াকে বলল,, ফারু প্লিজ আজ অন্তত চুপ থাক। ওর বদলে যাওয়াটাই অবাক হওয়ার কী আছে। তোরাই তো ওকে বদলাতে বাধ্য করছিস। প্লিজ যা এখান থেকে।

ফারিয়া আর কিছু না বলেই চলে গেলো।

ফারিয়া চলে যেতেই ছোঁয়া আরিয়ার হাত ধরে নিয়ে গেলো। পিছন পিছন অন্তুও আসলো। এক জায়গায় নিয়ে বসিয়ে ছোঁয়া আরিয়াকে বললো,,

আরু শুন তুই যতই ভালো মানুষ হস না কেন এই সমাজে প্রতিষ্ঠিত না হলে তোকে কেউ দাম দিবে না। কেননা, এই সমাজে ভালো মানসিকতা নয় এই সমাজে সুন্দর এবং প্রতিষ্ঠিত মানুষদের দাম দেওয়া হয়। তোর মধ্যে যদি সৌন্দর্য না থাকে এবং তুই যতটা সবার কাছে এভিলেভেল হয়ে যাবি ঠিক ততটাই মানুষের কাছে তুই স্বস্তা হয়ে যাবি এবং অবহেলা পাবি। কেননা এই সমাজের মানুষ গুলা কিছু ফ্রি-তে পেয়ে গেলে সেই মানুষটা যতই মূল্যবান ও ভালো হোক না কেন তাকে কদর করতে জানে না। একটা সময়ই সবকিছুই বুঝতে শুরু করবি তখনি নিজেকে বদলে নিতে শুরু করবি। আর এই যান্ত্রিক সমাজের যান্ত্রিক মানুষ গুলোর মতই নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলবি। আর ঠিক তখনি তুই তখনি আগের মানুষ গুলোর কাছ থেকে শুনতে পাবি তুই অনেকটা বদলে গেছিস। আর এই বদলে যাওয়ার জন্য তারা তোকেই ব্লেইম করবে। কিন্তু নিজের ভুল গুলা কখনোই স্বীকার করবে না। যেমন টা একটু আগে ফারিয়া করলো। তাই বদলে যাওয়ার পর লোকে কী বললো সেটা শোনার প্রয়োজন নেই। কারণ লোকে অনেক কথাই বলবে কিন্তু দিন শেষে নিজের মতো করে নিজেকেই ভালো থাকতে হবে। কারণ জীবনটা তোর অন্যের নয়। তাই নিজের মতো করে নিজেকেই ভালো থাকতে হয়। হুম একটা সময় বদলে তোকেই যেতেই হবে তাই সময়ের সাথে সাথে নিজেকে বদলে নে-!! নিজের মতো করে ভালো থাকতে শিখ। নিজের মতো করে বাঁচতে শিখ।

হুম আরু ছোঁয়া একদম ঠিক কথা বলছে। কোনো বেইমানের জন্য নিজের লাইফ থামিয়ে রাখলে চলবে না।(অন্তু)

হুম এটা সত্যি যে আমি মাঝে মাঝে এখনও রাতুল কে ভেবে কষ্ট পাই। কিন্তু আজ থেকে ওকে পুরোপুরি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবো। আর নিজের লাইফে মুভ অন করবো। তোরা আমার পাশে থাকলেই হবে।

হুম আমরা সবসময় তোর পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ।

তূর্য দূর থেকে আরিয়ার কথা শুনে মুচকি হাসলো। তারপর মনে মনে বললো,, হুম আমিও তোমার পাশে আছি আরুপাখি। আমি তোমাকে সাহায্য করবো রাতুলকে ভুলতে। কোন একটা সময় তুমি রাতুলকে পুরোপুরি ভুলে যাবা। তখন শুধু আমিই তোমার মনে থাকবো। আর সেই সময়টা খুব তাড়াতাড়ি আসতে চলেছে।

তূর্য আরিয়াদের কাছে গিয়ে বললো,, অনুষ্ঠান প্রায় শেষ তোমরা সবাই রুমে যাও। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে যেও।

জ্বী ভাইয়া গুড নাইট।(আরিয়া)

আবার ভাইয়া? দয়া করিয়া এই অদম কে আর ভাইয়া ডাকিওনা! বুক টা হাডি যায়।

তূর্যের কথা শুনে সবাই হেসে দিল।

হয়ছে এখন রুমে যাও ফ্রেশ হও।

_______________
ফ্রেশ হয়ে খেয়ে শুয়ে আছে আরিয়া। তিনজন একসাথে। আরিয়া মাঝখানে তাই শান্তি তে ঘুমাতেও পারছে না।

এই তোদের কী আমারে কোলবালিশ মনে হয়? এম্নে জড়ায় ধরে আছিস কেন?

অন্তু ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,, চুপ কর দয়া করে ঘুমাইতে দে। কাল সকাল সকাল উঠে সাজতে হবে। প্লিজ ঘুমা।

তুই সাজা ছাড়া আর কী বুঝিস! তোরে বলাই বৃথা। এই ছোঁয়া তুই অন্তত একটু সর প্লিজ। আমার দম বন্ধ হইয়া আসছে।

আরে এত রাতে কী শুরু করলি তুই? একটু শান্তিতে ঘুমাইতে দে। আর আমরা জড়ায় ধরছি বলে বকবক করছিস যখন জামাই জড়িয়ে ধরবে তখন কী করবি শুনি? তখন তো কইবি যে,, ওগো বালিশ একটাই রাখো আমি তোমার বুকে ঘুমাবো। এখন যত্তসব ডং!

ছোঁয়ার এমন লাগামহীন কথা শুনে আরুর অবস্থা এমন,, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!?

চুপ কর মেরি মা। নে ঘুমা আমি আর কথা কমু না।

হুম এই তো গুড গার্ল। নে জানু উম্মাহ।

লুচি মেয়ে কোথাকার।

হঠাৎ আরিয়ার মোবাইলের কথা মনে পড়লো। অচেনা লোকটা হয়তো মেসেজ দিয়েছে। দুইটা দুইদিক থেকে যেভাবে জড়িয়ে ধরছে এখন তো উঠে গিয়ে ফোন টাও আনতে পারমু না৷ ধ্যাত কেন যে ফোনটা নিয়ে শুইলাম না। ভেবেই মনে মনে আরিয়া নিজেকে গালি দিতে লাগলো। এক মিনিট আমি ওই লোকটা কে নিয়ে কেন ভাবছি? ওই লোকটার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি না তো আবার। না আরু এটা হতে পারে না। আর কারো মায়ায় নিজেকে জড়াস না। পৃথিবীতে মা-বাবা ছাড়া কেউ আপন না। কেউ কারো না। সবাই স্বার্থপর।
নিজেকে বুঝাতে বুঝাতে হঠাৎ ঘুমিয়ে গেলো আরিয়া।

_______________________

বিয়ে বাড়িতে মানুষ গমগম করছে। বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে শতাধিক পরিচিত, অপরিচিত মানুষের আনাগোনা। সবাই সবার কাজে ব্যস্ত।

আরিয়াকে দেখে হঠাৎই তূর্যের চোখ আটকে যায়। হাল্কা খয়েরী রংয়ের লেহেঙ্গা, হাল্কা মেকআপ, খয়েরী চুড়ি, আর মেচিং করা অর্নামেন্ট পড়েছে। এক কথায় অপূর্ব লাগছে।

ছোঁয়া, আর অন্তুও সেইম ড্রেস আর তিনজন সেইম ভাবেই সেজেছে।

ওয়াও আরু আজ তোদের কে খুব সুন্দর লাগছে।

ধন্যবাদ আহু।

অপরদিকে রাতুল আরিয়ার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

ব্যাপার টা তূর্য ঠিকি লক্ষ্য করছে। ইচ্ছে তো করছে রাতুলের নাক ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু বেচারা তো পারছে না। নাক ফাটিয়ে দিলে তো সব বানচাল হয়ে যাবে।

এইরে ভুল করে ফোনটা রুমেই রেখে আসছি। তোরা একটু দাঁড়া আমি ফোন নিয়ে আসছি।

আরু আসবো আমি?

না আমি পারবো তোরা থাক!

আরিয়া ফোন নিয়ে আসতে যাবে তখনি কেউ একজন তার হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে গেলো।

— আরিয়া খেয়াল করলো লোকটার মুখে মাস্ক লাগানো। দরজা, জানালা আটকানো তাই পুরা রুম অন্ধকার হয়ে আছে। ফেইস টাও ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।

#চলবে…….!!!?

#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে?
#পর্বঃ_১৩
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা?

আরিয়া খেয়াল করলো লোকটার মুখে মাস্ক লাগানো। দরজা, জানালা আটকানো তাই পুরা রুম অন্ধকার হয়ে আছে। ফেইস টাও ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। আরিয়া ছোটার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

এতো ছটফট করছো কেন আরুপাখি?লোকটি ঘোর লাগা কন্ঠে বলল।

আরিয়া ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,, কে….কে আপনি? হাত ছাড়ুন দয়া করে?

আরুপাখি শান্ত হও আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না। আমার কথাটা শোনো।

তবু আরিয়া শান্ত হয় না। মনে মনে ভাবছে আল্লাহ রক্ষা করো। জানিনা এই লোকটা কে! কোনো ক্ষতি করবে না তো আমার। আব্বু আম্মু তো মরেই যাবে।

–হাত ছাড়ুন বলছি৷ না হলে কিন্তু..

আরিয়া পুরো বাক্য উচ্চারণ করার আগেই লোকটি বলল,, কী করবে আরুপাখি? মারবে আমায়? তোমার কী মনে হয় তুমি আমার সাথে পেরে উঠবে?

লোকটি কথা থামাতেই আরিয়া লোকটির হাতে কামড় দিলো! লোকটার কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। সে ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে আরিয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরিয়া হাত ছাড়ানোর জন্য জোড় জবরদস্তি করতে লাগলো। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। লোকটার সাথে কিছুতেই আরিয়া পেরে উঠছে না।

আরু পাখি এভাবে ছটফট করে, কেন শুধু শুধু নিজের এনার্জি লস করছো বলতো। আমি বলছি তো কোন ক্ষতি করব না তোমার। যাকে ভালোবাসি কী করে তার ক্ষতি করব বলো?

মা…মানে!

লোকটি আবার বলল,, আমি তোমাকে খুব খুব বেশি ভালোবাসি আরুপাখি! নিজের থেকেও অনেক বেশি তোমাকে ভালোবাসি আরুপাখি।

❝ভালোবাসি আরুপাখি❞ কথাটা যেন বার বার আরিয়ার কানে বাজছে। তাহলে কী এই সে অচেনা লোকটা। যে আমাকে চিঠি লেখতো, মেসেজ দিত। কিন্তু এভাবে লোকচুরি কেন করছে লোকটা।

এই আরুপাখি কী ভাবছো?

আপনি কে? আর আমাকে আরুপাখি বলে কেন সম্মোধন করেন?

তোমাকে ভালোবাসি তাই। আর আমি কে সেটা সময় হলেই জানতে পারবে।

এখন কেন সামনে আসছেন না? কিসের জন্য এতো লোকচুরি? আড়ালে কেন আছেন? কেন ধূয়াশায় পড়ে আছেন?

এত প্রশ্ন একসাথে! শুনো উপযুক্ত সময়ে তোমার সামনে আসবো৷ আমি জানি তুমি একবার ভালোবেসে প্রতারিত হয়ছো। তাই আমি নিশ্চিত যে তুমি দ্বিতীয় কাউকে তোমার মনে জায়গা দিতে পারবে না, আর কাউকে বিশ্বাস করতেও পারবে না।

আরিয়া কিছু বলল না। সে নিজেও জানে তার পক্ষে আর কাউকে বিশ্বাস করা সম্ভব না আর কাউকে ভালোবাসতেও পারবে না।

–তাই যেদিন তোমার মন থেকে এসব ভাবনা দূর হবে সেদিন তোমার সামনে আসব!

আরিয়া কী বলবে বুঝতে পারছে না। তাই হুট করেই বলে ফেলল,, আচ্ছা কাল আপনি মেসেজ দেন নি কেন?

আরিয়ার কথা শুনে লোকটি চমকে উঠলো৷ মুচকি হেসে বলল,, কেন আরুপাখি আমাকে মিস করছিলে? আমার মেসেজের অপেক্ষায় ছিলে বুঝি!

আরিয়া লোকটির কথা শুনে লজ্জা পায়! সে বুঝতে পারছে এই প্রশ্ন টা করা একদম উচিত হয়নি। নিজেই নিজেকে মনে মনে গালি দিতে শুরু করলো।

আমি কেন আপনাকে মিস করতে যাব৷ আর আপনার মতো লুচু লোককে কেই বা মিস করবে!

কী আমি লুচু? তোমার সাথে লুচুগীরি কখন করলাম আমি!

অচেনা একটা মেয়ের হাত ধরে অন্ধকার রুমে নিয়ে আসলেন এটা কী ভালো মানুষের কাজ? না তো! এটা শুধু লুচু বেটারাই পারে।

প্রথমত আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমার খুব কাছের কেউ, অচেনা কেউ না। আর এখন পর্যন্ত তো তোমার সাথে লুচুগীরির কিছু করি নি! তা এখন করবো নাকি। বলেই একটা চোখ টিপ দিল।

একদম না। দূরে সরে দাঁড়ান। আর আমাকে যেতে দেন প্লিজ।

লোকটা আরিয়ার দিকে কিছুটা ঝুঁকে দাঁড়ালো। সাথে সাথেই আরিয়া চোখ বুজে ফেলল। লোকটার নিঃশ্বাস আরিয়ার মুখের উপর আঁচড়ে পড়ছে। চোখ খুলার সাহস পাচ্ছে না। হঠাৎ লোকটা আরিয়ার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিল। আরিয়ার পুরো শরীলে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো। এ কোন অনুভূতি? কী দেবে এই অনুভূতির নাম। রাতুলও তো মাঝে মাঝে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলতো ভালোবাসি আরু। তখন তো এমন অনুভুতি হতো না।

লোকটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,, আরু পাখি এখন যেতে পার৷ তোমার ফ্রেন্ডরা তোমার জন্য ওয়েট করছে।

আরিয়া তখনও ঘোরের মধ্যেই আছে। লোকটা বুঝতে পেরে আরিয়াকে হালকা ধাক্কা দিল!

কী…কী হয়ছে?

এখন তো যেতে দিলাম যাচ্ছো না কেন? আমার কাছ থেকে যেতে মন চাচ্ছে না কি? তাহলে চল এক কাজ করি আমরাও আজ রাতুল আর ফারিয়াদের সাথে বিয়েটা সেরে ফেলি। কাজি তো বাড়িতেই আছে। কিছুটা দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বলল।

রাতুল আর ফারিয়ার বিয়ের কথা মনে হতেই আরিয়ার পিলে চমকে উঠলো।

বলল মোটেও না। আপনার মতো লুচু লোককে বিয়ে করবো! কখনোই না।
–দেখা যাবে।

–বেরিয়ে যাওয়ার আগে আরিয়া পেছনে ফিরে তাকিয়ে লোকটার উদ্দেশ্যে বলল,, আমি হয়তো আপনাকে ভালোবাসতে পারব না। হ্যাঁ, আপনার ধারনাটাই ঠিক! আমি দ্বিতীয় বার কাউকে আমার জীবনে জায়গা দিতে পারব না। এমনকি বিশ্বাসও করতে পারব না। সবাই ঠকবাজ! কেউ কথা রাখে না সবাই ছেড়ে চলে যায়। থেকে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি তো শুধু মন রক্ষার্থে দেয়। ভালোবাসি বলে শুধু অভিনয় করে। ভালোবাসা সে তো শুধু মিছে বাহানার প্রবাদ বাক্য হয়। তবে সত্যি বলতে কী জানেন, আমার এখন আর কষ্ট হয় না, অনুভূতি গুলো আর কাজ করে না, আমার কোনো অস্থিরতা নেই আমার বুকের ভেতর আমার আর খারাপ লাগে না, আমার কোন কিছু হারানোর নাই আমার সব সহ্য করার ক্ষমতা হয়ে গেছে, আমার কোন সমস্যা হয় না, আমার বুকের ভেতর নিঃশ্বাস নিচ্ছি সেটা ও আমার এখন অনুভব করি না।

আরিয়া থামলে লোকটি বলল,, আমি জোর করব না তুমি আমাকে ভালোবাসো! কিন্তু আমি তো তোমায় ভালোবাসি আরুপাখি। জানো আরুপাখি,, “ভালোবাসি” কথাটা একই থাকে শুধু ভালবাসার মানুষ পরিবর্তন হয় আর বদলে যায় ভালবাসার তালিকা। কিছু মানুষ অতিরিক্ত ভালোবেসে ফেলে ভুল মানুষকে যার ফলে ঠকে যেতে হয়। ভালোবাসার জন্য একটা পারফেক্ট মানুষ খুঁজতে গিয়ে হাজার ভুল মানুষের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা হয়ে যায়। এই ভাবে কিছু মানুষ একটু ভালো থাকার জন্য ভালবেসে বার বার ঠকে যাওয়ার পর আবারও কাউকে বিশ্বাস করে ভালোবেসে ফেলে। আর কিছু মানুষ একবার ভালবেসে ঠকে গেলে দ্বিতীয়বার আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। তাদের ভালোবাসা শব্দটির প্রতি ঘৃণা চলে আসে। তারা মনে করে ভালবাসায় জড়ানোর থেকে একা থাকাই ভালো। হয়তো অনেক কষ্ট হবে কিন্তু কাউকে পেয়ে হারানোর ভয় থাকবে না।

— এই ভালোবাসার জন্য ঠকানো, ঠকে যাওয়া ,ছেড়ে যাওয়া, মৃত্যুর সমান যন্ত্রণা সহ্য করা। এই একটা শব্দ পিছনে ছুটে বেড়ায় গোটা দুনিয়া। আর তারই সুযোগ নাই কিছু নিকৃষ্ট মানুষ। এরা ভালোবাসার নামে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে বহু মানুষের জীবন নষ্ট করে দেয়। এই ভুলগুলোর জন্যই কত মানুষ ভালবাসতে ও ভালো থাকতে ভুলে গেছে । আর এই মানুষগুলোর জন্য ভালোবাসা শব্দটা অস্তিত্ববিহীন হয়ে গেছে। “আসলে ভালোবাসা জিনিসটা হচ্ছে আমাদের একরকম নেশা, অভ্যাস,ভালোলাগা নামের পৃষ্ঠাগুলোর সমন্বিত একটা বই এর মতোই। শব্দটা হয় এমন যে আমি তোমায় ভালোবাসি কিন্তু আসলে আসল জিনিসটা কি জানো তা হবে আমি তোমার প্রতি আসক্ত, তুমি আমার অভ্যাস, সবচেয়ে বড় কথা তুমি নামক যে জগতটা সেইখানে সব ভালোলাগার মূলেই তুমি। আসলে ভালোবাসাটা হচ্ছে প্রয়োগ করার মতো ওই কয়েকটা শব্দই আসল অর্থই হচ্ছে এইগুলো। তো এবার বলি যে এই অভ্যাস,ভালোলাগা, আশক্তি সবই পরিবর্তনশীল মনুষ্যজীবন এর জন্য। এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার। আর ভালোবাসা জিনিসটাও এইসব পরিবর্তনশীল জিনিসগুলোকেই ঘিরে। হয়তোবা কষ্ট হয় এসব ভুলতে কিন্তু একটা না একটা সময় না ঠিকি আবার জীবন সব গুছিয়ে নেয়। তখন ই দেখা যায় কারুর ক্ষেত্রে আবার সেই আসক্তি, ভালোলাগা,অভ্যাস তৈরি হয়েই যায় তখন এ আমরা আবার তার নাম দেই দ্বিতীয় ভালোবাসা। আমি বলবো কি ভালোবাসা একবারই হয় ওইটা ভুল মানুষ এর জীবন এ ভালোবাসা অবিরামও হতে পারে আর মনে রাখার বিষয়টা হচ্ছে কিছু কিছু অভ্যাস আমরা কখনই ভুলতে পারি না আবার অনেকের ক্ষেত্রে ভুলতে চাই না। ওই অভ্যাস এর মধ্যে দিয়েই হয়তো তাকেও ভুলতে পারি না।

–আমি কখনোই জোর করবো না তুমি রাতুল কে ভুলে যাও। ভুলতে বলবোও না। কারণ ও তো তোমার প্রথম ভালোবাসা। আর আমি তোমার শেষ ভালোবাসা হতে চাই। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমার হাতটা ধরে রাখবো। খুব তাড়াতাড়ি একটা বিশেষ দিনে তোমার সামনে আসব৷ ততদিনে প্লিজ একটু বুঝতে চেষ্টা করো। এটা মনে রেখো সবাই প্রতারক না। মানুষ ছেড়ে যাওয়ার জন্য আসে না। কিছু মানুষ আমৃত্যু পাশে থাকবে বলে হাত ধরে পাশে থাকে। আমিও সেই মানুষদের মতো হতে চাই। আমিও তোমার হাত ধরে সারাজীবন একসাথে চলতে চাই। তোমার পাশে থাকতে চাই। শুধু একবার হাতটা ধরে রাখো। আমার মনের আঙিনায় রাণি করে রাখব তোমায়। কথা দিচ্ছি সারাজীবন #ভালোবেসে_থাকবো_পাশে আরুপাখি। (লোকটি)

আরিয়া কিছু না বলে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। বাহিরে যেতেই দেখলো ছোঁয়া আর অন্তু এদিকেই আসছে!

এই আরু হাঁপাচ্ছিস কেন?
–দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে গেছি।
–কেন আরু এখানে কী দৌড় প্রতিযোগিতা চলছে? আর সেই কখন ফোন আনতে গেছিলি! তা বলি তুই কী রুমে ফোন আনতে গিয়ে নিজেই ফোন হয়ে গেছিলি? নাকি উদাও হয়ে গেছিলি?

আরে ছোঁয়া এত প্রশ্ন একসাথে করলে কীভাবে উত্তর দিবে ও! তুই বরং ওরে নিয়ে একজায়গায় বসা আর পানি দে।
–ওকে আহু।

ওরা চলে যেতেই আহিল ভাবছে আরু তো বেরিয়ে আসলো। কিন্তু ভাইয়া কেন আসছে না।

আরিয়া কিছুটা শান্ত হয়েছে। ছোঁয়া আরিয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তখনি আরিয়ার আম্মু চলে আসে!

–এই আরু কই ছিলি এতক্ষণ? সেই কখন থেকে তোরে খুঁজে যাচ্ছি।
–আম্মু রুমে গিয়েছিলাম। তা বল কেন খোঁজছো।
–ফারিয়া সেই পাঁচ মিনিট ধরে বসে আছে। কবুল বলছে না। বলল তুই না যাওয়া পর্যন্ত নাকি কবুল বলবে না। আসলে মেয়েটা তাকে খুব ভালোবাসে।
–ছোঁয়া বিরবির করে করে বলল ভালোবাসা না ছাই। ভালোবাসলে কখনো রাতুলকে আরিয়ার কাছ থেকে কেড়ে নিত না।
–ছোঁয়া মা কিছু বললে?
–ছোঁয়া আমতা আমতা করে জবাব দিলো,, না না আন্টি কিছুই বলি নি।
–আচ্ছা। আরু চল মা।

__আরিয়া জানে ফারিয়া তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বসে আছে। তার চোখের জল নাকি ফারিয়াকে খুব আনন্দ দেয়। আরিয়া যত এগোচ্ছে তত তার নিশ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। কিন্তু এমন টা কেন হচ্ছে। তার ভালোবাসা আজ সম্পূর্ণ ভাবে অন্যকারো হয়ে যাবে বলে! তার উপর আর কোন রকম অধিকার থাকবে না বলে! কিছুক্ষণ আগেও তো সেই অচেনা লোকটাকে কত কথা শুনিয়ে আসলো। তার আর অনুভূতি কাজ করে না, বুকের ভেতর আর কষ্ট হয় না, কাউকে হারানোর ভয় নেই তার মনে, তার সব সহ্য করার ক্ষমতা হয়ে গেছে! তাহলে এখন কেন এমন লাগছে। তাহলে কী আমি রাতুলকে এখনও ভালোবাসি! কথাটা ভাবতেই আরিয়া কেঁপে উঠলো।বিবেক বলছে না না আরু নিজেকে আর দুর্বল করিস না। রাতুল কিছুক্ষণ পরে পবিত্র কালেমা পড়ে, কবুল বলে সম্পূর্ণ ভাবে অন্যকারো হয়ে যাবে। আরিয়া নিজের লেহেঙ্গার দুই পাশে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে পড়লো।

–ছোঁয়া আরিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে আরিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। আরিয়া শান্ত করার চেষ্টা করছে। আরু প্লিজ শান্ত হ। পাগলামি করিস না। দেখ আরু তুই তো বলছিলি নিজেকে শক্ত রাখবি তাহলে এখন কেন ভেঙে পড়ছিস? নিজেকে শক্ত কর! বেইমানদের সামনে চোখের জল ফেলতে নেই। তোর চোখে পানি দেখলে ওরা আরো মজা পাবে। আরু জানিস তো,, ভেঙে পড়লে চলবে না,, চিরদিন কেউ পাশে থাকে না।

—এই আরু তাড়াতাড়ি আয় মা।
–হ্যাঁ আম্মু আসছি। ছোঁয়া, অন্তু চল।
–আরু কথা গুলা মাথায় রাখিস প্লিজ!
-আচ্ছা চল এবার।

#চলবে………!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here