ভালো বেসেছিলাম তারে পর্ব -২,০৩

0
437

ভালো বেসেছিলাম তারে
পর্ব -২,০৩
মাসুরা খাতুন
০২

খাবার টেবিলে বসে আছে আরাফাত, সাথে সুপ্তি আর নিশান। সোহান এখনো বাসায় এসে পৌঁছাতে পারে নি।নিশিতা সার্ভ করছিলো,এমন সময় আরাফাতের প্লেটে কয়েক টুকরা লাউয়ের ডগার তরকারি তুলে দিতেই নিশিতা খেয়াল করলো আরাফাতের চোখের পাতা ভিজে উঠেছে, কেমন যেন সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকালো নিশিতার দিকে, না না সেই দৃষ্টিতে কোন পাপ ছিলো না, সে যেন মনে মনে বলছিলো ” নিশু তোমার এখনো মনে আছে আমার প্রিয় খাবার গুলোর কথা,এতোটা মনে রাখো আমাকে? আজ এতো দিন পরে ও”
আমি তার চোখের কথা বুঝতে পেরেও কিছু বললাম না।পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম বাচ্চাদের দিকে।আরাফাত ও মুখে কিছুই বললো না,আমার ও যেন আজ আরাফাতের সাথে কথা বলতে জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে আসছে, অথচ এই আমিই ক্লাসে যখন স্টুডেন্টদের রবীন্দ্রনাথের ” একরাত্রি ” পড়াই তখন মাঝে মাঝেই কতো কতো বার পার্থনা করেছি, ইস একবার যদি আমার ও সেই বেইমানটার সাথে দেখা হতো! তবে আমি কিছুতেই সুরবালার মতো চুপ করে থেকে চলে যেতাম না,বরং একের পর এক প্রশ্ন বাণে জর্জরিত করতাম মানুষটাকে।তীক্ষ্ণ কথার ধারে একেবারে ফলা ফলা করতাম নিষ্ঠুর হৃদয়টাকে।কেন? কেন আমাকে স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেই ভেঙে দিলো? কি দোষ ছিলো আমার?
কিন্তু কি আশ্চর্য, আজ এতো কাছে পেয়েও আমি তাকে কিচ্ছু বলতে পারছি না,কোন প্রশ্ন আসছে না মুখে,অদ্ভুতভাবে আমার সব কথা হারিয়ে যাচ্ছে। ওর চোখ দুটো যখন অসহায় ভাবে বারবার তাকাচ্ছে আমার দিকে আমার সব কথা হারিয়ে যাচ্ছে।

আরাফাতই নিরবতার অবসান ঘটালো,খুব শান্ত অথচ অনেক মায়া মায়া কন্ঠে প্রশ্ন করলো

” তুমি খাবে না নিশু?

আমি উত্তর দেওয়ার আগেই নিশান হাত দিয়ে মাছি তাড়াবার ভঙ্গিতে বললো,

” না না আঙ্কেল, মাম্মাম তো এখন খাবে না, বাবাই আসলে তারপরই একসাথে খাবে,জানো আঙ্কেল, বাবাই না রোজ অফিস থেকে এসে মাম্মামকে খাইয়ে দেয়। ”

আমি চোখ রাঙিয়ে নিশানের দিকে তাকাতেই ও থেমে গেলো। লক্ষ্য করলাম আরাফাত কেমন যেন কাঁপছে, কান্না গলায় আটকে গেলে যেমনটা হয় তেমন,ফর্সা সুন্দর মুখখানি কেমন লাল হয়ে গেছে, নাকের ডগা টা টুকটুকে লাল।

আগে থেকেই আরাফাত দেখতে খুব সুন্দর, বিদেশ থেকে এমবিএ কমপ্লিট করে আরাফাত যখন দেশে আসে তখন কতো মেয়ে যে আরাফাতের জন্য পাগল ছিলো তার হিসেব নেই,জিম করা সুন্দর পেটানো শরীরে আরাফাত যখন শার্ট পড়ে হাতা ফোল্ড করে রাখতো তখন কোন মেয়ের সাধ্য ছিলো আরাফাত কে এড়িয়ে যায়। ধবধবে ফর্সা ছেলে টাকে দেখতো কোন রুপকথার রাজপুত্র থেকে কম লাগতোনা। ব্যবসায়িক পরিবারের ছেলে হলেও ব্যবসায় দিকে তার খুব একটা নজর ছিলো না।বড় ভাই আহমেদ আহানাফ এবং বাবা মিলেই ব্যবসা টা সামলাতো। বিদেশ থেকে এসে সে চায়তো আগে নিজের লাইফ টা এনজয় করতে। বন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরা, আড্ডা, লং ড্রাইভে যাওয়া এইসব ছিলো ওর নিত্য রুটিন। ছোট বেলা থেকেই মা না থাকায় একমাত্র ভাবি আহমেদ সাবিহা কখনো প্রিয় ভাই সম দেবরটাকে কষ্ট কি তা বুঝতে দিতোনা।রাত করে বাড়ি ফিরলেও সেটা স্বামী ও শ্বশুরের কাছ থেকে কিভাবে লুকিয়ে রাখতে হয় তা সাবিহা জানে।
আর সেই স্ট্রং পারসোনালিটির আরাফাতের চোখে কিনা অশ্রু! তা বুঝতে পেরেই নিশিতা খাবার আনার ভান করে কিচেনে চলে গেলো, এখানে আর কিছু ক্ষন থাকলেই সে ধরা পড়তো।ওই লোকটার সামনে নিজের চোখের জল কিছুতেই বুঝতে দিতে চায়না নিশিতা।নিজেকে এতোটা দুর্বল ভাবে তার সামনে প্রকাশ করতে চায় না।সেদিন ও করে নি,যেদিন আরাফাত গ্রাম থেকে এসে সরাসরি নিশিতার মুখের ওপর বলেছিলো, সে নিশিতাকে বিয়ে করতে পারবে না। গ্রামে গিয়ে সে বিয়ে করে ফেলেছে, নিশিতা যেন ভুলে যায় ওকে।কখনো কোন ভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা না করে।
নিশিতা সেদিন অন্য এক আরাফাতকে দেখেছিলো।যেই ছেলেটা নিশিতার এতো এতো প্রত্যাক্ষান কে অবজ্ঞা করে নানা রকম পাগলামি করে জয় করেছিলো নিশিতার মন,সেই ছেলেটা এটা নয়।
নিশিতা সেদিন ও আরাফাতের সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে নি।শুধু কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে একটা প্রশ্ন করেছিলো আরাফাত কে,

” আ আমার অপরাধ?
নিশিতার প্রশ্নের উত্তর আরাফাত দিতে বাধ্য নয়,শুধু এতোটুকুই বলেছিলো আরাফাত।

নিশিতা আর কোন প্রশ্ন না করে সেখান থেকে চলে আসে,বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো মুখে আঁচল গুজে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে পালিয়ে আসে নি নিশিতা, বরং ভিষণ শান্ত ভাবে ধীর পায়ে হেটে চলে যায় নিশিতা।

কিন্তু আরাফাতের চোখে পানি দেখলো কেন নিশিতা। সে নিজেই প্রত্যাক্ষান করেছে, তবে ওর চোখে পানি কেন?

সোহান ব্যবসায়ি হলেও সারাদিনের মিটিং, অফিস কোন কিছুই তার পরিবারের দায়িত্ব পালনে এতোটুকুও টলাতে পারে না। তার স্ত্রী, সন্তান সব কিছুর উর্ধ্বে। এই ছেলেটার জন্যেই তো আজকের নিশিতা রহমান তৈরি হয়েছে, নয়লে কি নিশিতা পারতো ওমন ভেঙে যাওয়ার পর ও উঠে দাঁড়াতে ? একদম নিজের মতো করে এই গুড়িয়ে যাওয়া নিশিতা কে গড়ে তুলেছে সোহান।সবসময় নিশিতার পাশে থেকেছে। তায়তো এই মানুষটাকে নিশিতা সবথেকে বেশি সম্মান করে।

খাওয়া দাওয়া শেষে আরাফাত বাসায় চলে যাবে বলে ড্রয়িং রুমে একটু বসেছিলো, আসলে মুখে যতোই বলুক মনে মনে আরাফাত ও চাচ্ছিলো আর একটু সেই চির পরিচিত রমণীর সাথে কাটাতে,যদিও সেই পরিচিত রমণীটির আগাগোড়াই এখন অপরিচিতার চাদরে মোড়ানো।

এমন সময় কলিং বেল টা তীব্র শব্দে বেজে উঠলো,নিশিতা দের বাড়ির দরজাটা সামান্য সাইডে,তার ওপর নিশিতা হাজার টা গাছ লাগিয়ে খানিকটা আড়াল করে ফেলেছে ড্রয়িং রুম থেকে।

বেলের শব্দেই নিশিতা এগিয়ে গেলো দরজা খুলতে, দরজা খুলেই চিরপরিচিত মুখ দেখে খানিকটা মুচকি হাসি ফিরিয়ে দিলো নিশিতা। কর্নারের সোফাতে বসে তা খুব সহজেই দেখতে পেলো আরাফাত। অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ মিটিং টা তাড়াতাড়িই শেষ করে বাড়ি ফিরলো সোহান, প্রতিদিনের অভ্যাস বশত বাড়িতে ঢুকেই টুপ করে একটা মিষ্টি চুমু খেলো নিশিতার কপালে।অথচ তারা জানলোই না খানিকটা দূরে বসে এক জোড়া চোখ খুব কষ্ট সহকারে গিললো তাদের এ মিষ্টি দৃশ্য টা।

” সরি সরি,একটু দেরি হয়ে গেছে, আমি কি খুবই লেইট? কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে প্রশ্ন করলো সোহান।

মিষ্টি হেসে উত্তর দিলো নিশিতা ” হ্যাঁ, একটু লেইট বলা যায়।”

” উনারা কি চলে গেছেন?একটু মন খারাপ করে বললো সোহান।

” না এইতো ভেতরে আসো, উনি অপেক্ষা করছেন। ”

ড্রয়িং রুমে পা দিতেই আংশিক মুখ চেনা এক ভদ্রলোক কে দাঁড়াতে দেখলো সোহান,,,,

চলবে,,,,,

ভালো বেসেছিলাম তারে
পর্ব -৩
মাসুরা খাতুন

সোহান বাসায় ঢুকেই খুব সুন্দরভাবে কথা বললো আরাফাতের সাথে, যেন পূর্ব পরিচিত। সারাদিনের অফিস, মিটিং কোন কিছুতেই যেন এই ছেলেটার ক্লান্তি আসে না, নাহলে কি কেউ পারে এতোক্ষণ ধরে বোরিং মিটিং শেষ করে এসে আবার ও এতোটা প্রাণোচ্ছল ভাবে কথা বলতে।
মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার খুব সুন্দর একটা গুণ আছে সোহানের। অপরিচিত মানুষের সাথে ও খুব অল্প সময়ে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে। আর তায়তো এতোবড় ট্রমা থেকে নিশিতা কে বের করতে পেরেছিলো।দিন গুলো যে কেমন গিয়েছিল তা শুধু সোহানই জানে।

” আরাফাত সাহেব আপনি এসেছেন আমার খুব খুব ভালো লাগলো, অনেক দিন থেকে ইচ্ছে ছিলো আপনার সাথে পরিচিত হওয়ার ”

আরাফাত যেন একটু থমকালো, সোহানের হাসিমাখা কথা টা শুনে,

” সরি,আপনি আগে থেকে আমার সম্পর্কে জানতেন? মানে বিষয় টা বুঝলাম না?
খুব আতংকিত হয়ে কথাটা বললো আরাফাত, সেই সাথে সুন্দর মুখখানায় বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিলো।

” আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, একটু একটু জানতাম তো,নিশান তো প্রায় স্কুল থেকে এসে আপনার কথা বলতো,সুপ্তির বাবাই আজ আসছিলো ওরে স্কুল থেকে নিতে, তুমি কেন যাও না? এমন কত্তো প্রশ্ন ছেলেটার। ”
হাত নেড়ে নেড়ে উত্তর গুলো দিলো সোহান,একদম বাচ্চাদের ভঙ্গিতে।

সোহানের দিকে তির্যক ভাবে তাকাচ্ছিলো নিশিতা, সোহান মিথ্যে বললো কেন, কই নিশানকে তো কখনো এমন কথা বলতে শোনেনি ও।

আরাফাত খানিকটা দম ফেলে বলল,
” ওহো তায় বলুন।

আরাফাতের উত্তরের বিনিময়ে কিছুটা হাসি ফিরিয়ে দিলো সোহান।এদের কথা বার্তায় নিশিতা একদম চুপচাপ শ্রোতা। নিশান গেছে সুপ্তি কে নিজের রুম দেখাতে আর গত সপ্তাহে ওর বাবা যেই বড়ো রিমোট কন্ট্রোল কার এনে দিয়েছে তায় দেখাচ্ছিলো।

” কি ব্যাপার আরাফাত সাহেব কে তোমার হাতের স্পেশাল রান্না গুলো খাইয়েছো? নাকি আমি নিয়ে আজগুবি সব গল্প করছি”
নিশিতার দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে কথা গুলো বলল সোহান। সোহান কখনোই কারো সাথে উচ্চবাচ্যে কথা বলতে পারেনা।লম্বা চওড়া গড়নের উজ্জ্বল শ্যামা রঙের ছেলেটা ফর্সা না হলেও অনেক মেয়েকে পাগল করতে ওর হাসিটায় যে যথেষ্ট তা বুঝি ও জানে,তায়তো ছোট ছোট কথার মাঝেই সুন্দর সেই হাসিটা দেয়,

” আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি খেয়েছি এইতো বের হচ্ছিলাম, আপনি আসায় আবারও বসলাম, আমরা বের হবো,তার চেয়ে বরং আপনি খেয়ে নেন,আপনি না খাওয়ায় আপনার স্ত্রী ও না খেয়ে আছে ”
” আপনার স্ত্রী ” কথাটা নিশিতার দিকে তাকিয়ে বলতে গিয়ে আরাফাতের ভিষণ কষ্ট হচ্ছিল, এমন মনে হচ্ছিল যেন ওর কলিজাটা কেউ ছু* রি দিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটছে । যেই নিশিতার দিকে কেউ তাকালে পর্যন্ত আরাফাত পারলে তার চোখ উঠিয়ে নিতো,নিশিতার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারতো না আর আজ সেই নিশিতাকে অন্য কারো বউ বলতে হচ্ছে।সময় মানুষকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যায়।মানুষ গুলো ঠিকই থাকে শুধু সম্পর্ক গুলো বদলে যায়। আজ নিশিতা এতো এতো টা কাছে থাকার পরও যেন হাজার মাইল দূরে, সম্পূর্ন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

” উহু বললেই হলো,এতো সহজে আপনাকে ছাড়ছি না,এতোক্ষণ অফিসের অত্যন্ত ঝামেলায় আসতে পারিনি,এখন যখন আসতে পেরেছি তখন এখনই ছাড়ছি না,অনেক কথা হবে, আড্ডা হবে। আমি আবার একটু বাচাল মানুষ, আপনার সমস্যা হচ্ছে না তো? আর নিশিতার খাওয়ার কথা বলছেন? ওর সমস্যা নেই,না খেয়ে থেকে ওর অভ্যাস আছে”

” উহু একদম নেই, ও তো না খেয়ে থাকতেই পারে না ”
মনের ভুলে মুখ ফসকে বলে ফেললো কথাটা আরাফাত, তার পরই ও বুঝতে পেরে একদম চুপসে গেলো।

” সরি মেয়েরা তো প্রায় এমনই হয় তায় বললাম আর কি”
নিজের ভুল টা ঢেকে নেওয়ার সামান্য চেষ্টা আরাফাতের।

আরাফাতের উত্তরের প্রেক্ষিতে শুধু একটু ফিচেল হাসলো সোহান।
” আপনি ঠিকই বলেছেন, ও আগে এমনই ছিলো, কিন্তু এখন না খেয়ে থাকতে পারে, একটা সময় খুব না খেয়ে থেকেছে তো,তায়”

এসব কথার মাঝেই উত্তর দিলো নিশিতা,
” আমার মনে হয় উনার তাড়া আছে সোহান,উনি যেতে চাচ্ছেন যাক, মানে আমরা তো অন্য দিন ও আড্ডা দিতে পারি।”

” কি ব্যাপার নিশিতা,তুমি এমন করছো কেন,আমাদের ছেলে মেয়েরা একই স্কুলে একসাথে পড়ে, ওরা বন্ধু, আমরা অভিভাবকরা ও বন্ধু হলে সমস্যা কোথায়। আমি উনার সাথে ফ্রী হওয়ার চেষ্টা করছি।
সোহান খুব মায়াভরা চোখে তাকালো নিশিতার দিকে,

মনে মনে নিজে নিজেই বললো” আমি বলেছিলাম না নিশু,একদিন তোমাকে খুব সুন্দর একটা বিকেল উপহার দেবো,তোমার পুরনো স্মৃতি, পুরনো দিন কে আমি আরো একদিন সাজিয়ে দেবো তোমার সামনে,আমি কথা রেখেছি নিশু,আমি কথা রেখেছি,আর এর প্রতিদান হিসেবে হলেও তোমার চোখে আমার জন্য অগাধ শ্রদ্ধা আর সম্মান টা সরিয়ে একটু খানি ভালোবাসা দেখতে চায়।

সোহান কোন বিশেষ উত্তর বোধহয় পেলো না,পাবে কি করে? কেউ কি আর কারো মনের ভেতরের প্রশ্ন শুনতে পায়, নাকি উত্তর দিতে পারে।

কিছুক্ষন হালকা আড্ডা দেওয়ার পর যখন আরাফাত এই কষ্টপুরি থেকে যাচ্ছিলো তখনই দরজার সামনে বড়ো এক টবে মাঝারি আকারের বকুল গাছ দেখে আনমনেই আরাফাত মুচকি হাসলো।বকুল গাছটাতে যে কেউ খুব যত্ন করে প্রতিদিন পানি দেয় আগাছা পরিষ্কার করে তা খুব বোঝা যাচ্ছে,আর গাছটাতো থোকা থোকা বকুল ফুটে থাকতে দেখে বকুলের গন্ধে আরাফাত যেন সেই আগের রঙিন দিন গুলোকে অনুধাবন করতে পারছে।বকুল ফুলের গন্ধ আরাফাতের ভিষণ পছন্দের ছিলো। শত শত সুবাসিত সুন্দর ফুলের মাঝেও এই অযত্নে বেড়ে ওঠা ছোট ছোট ফুলগুলোর প্রতি আরাফাতের ছিলো বিশেষ দুর্বলতা।শত কাজের ভিড়ে ও কোথাও গেলে আর বকুল ফুল পড়ে থাকতে দেখলে সেখানে দাঁড়িয়ে বকুলের ঘ্রাণ নিতে ভুলতো না আরাফাত।
তায়তো নিশিতাকে যেদিন প্রথম প্রেম নিবেদন করেছিলো সেদিন লাল গোলাপের বদলে আরাফাত দিয়েছিল একগুচ্ছ সাদা শুভ্র বকুল মালা।
হয়তো তায় ওদের প্রেম লাল গোলাপের মতো রঙিন হয়নি,হয়েছে সাদা বকুলের মতো রংহীন।

এবাড়িতে আসার পর থেকে আরাফাত প্রতিটি কোণায় কোণায় ওর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে, পেয়েছিলো সেদিন ও, যেদিন সু্প্তিকে আনতে ওর স্কুলে যায়।আর সুপ্তির প্রিয় বন্ধু হিসেবে নিশানের সাথে পরিচিত হয়।তখন নিশানের নামটা শুনেই কিছুটা হোঁচট খায় আরাফাত। অনেক অনেক দিন আগে এই নামটায় ওর ছেলের নামে ঠিক করে রেখেছিলো ও আর ওর একান্ত আপন প্রিয় মানুষটি।

হাতের কাজ শেষ করে নিশিতা অনেক টা দেরি করেই বেডরুমে যায়।ও চায়ছিলো না এই ব্যাপারে সোহানের মুখোমুখি হতে । ও জানে মুখে যতোই সোহান স্বাভাবিক থাকুক,ভেতরে ভেতরে ছেলেটা অনেক টা আহত, নিশিতা কিছুতেই পারবে না এই সময় সোহানের সামনে যেতে। তায়তো প্রতিদিনের থেকে অনেক টা দেরিতে ও বেডরুমে গেলো নিশিতা।

রুমে কাউকে না দেখে ব্যালকোণি তে পা বাড়াতেই নিশিতার নাকে নিকোটিনের কড়া গন্ধ নাকে এলো,সোহান স্মোক করছে?,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here