ভালো বেসেছিলাম তারে পর্ব – ৬,০৭

0
282

ভালো বেসেছিলাম তারে
পর্ব – ৬,০৭
মাসুরা খাতুন
০৬

পৌষের সকাল, প্রকৃতি গ্রীষ্মের দাবদাহ ছেড়ে শীতের শীতলতায় মেতেছে। প্রায় গাছেরই পাতা ঝরে গেছে, আর যে দুই একটা গাছে এখনো পাতা আছে সেগুলোও কচি সবুজ নয় বরং হোলদেটে রং ধারণ করেছে। উত্তরের হীমেল হাওয়ায় কেপে উঠছে প্রকৃতি।গাছের পাতা গুলো থেকে রাতের ঝরে পড়া শিশির বিন্দু চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে।শুক্রবার হওয়ায় নিশানের স্কুল ও বন্ধ, শুক্রবারে সবাই দেরিতে ঘুম থেকে ওঠে, সোহান ভোরে একবার ওঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ টা পড়ে আবারও শুয়ে পড়েছে, কিন্তু নিশিতা নামাজ পড়ে আর বিছানায় যায় নি।কেন যেন আজ নিশিতার মন ভালো নেই।সে খালি পায়ে নিচে এসে খয়েরী রঙের শালটা গায়ে জরিয়ে দরজা খুলে বাইরে গেলো।নিশিতার নরম পায়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে শিশির বিন্দু গুলো। মনের ভেতরের গুমোট ভাব টা কাটাতে বকুল তলায় গিয়ে বসলো নিশিতা। ছোট ছোট বকুল ফুল ঝরে পড়ে আছে গাছের তলায়। মাদকময় গন্ধের এ ফুল গুলো খুব একটা পছন্দ ছিলো না নিশিতার, কিন্তু যেদিন আরাফাত একগুচ্ছ শুভ্র বকুল মালা দিয়ে ওকে ভালোবাসার কথা জানালো সেদিন বকুলের গন্ধে আলাদা এক অনুভূতি খুঁজে পেয়েছিলো নিশিতা। তার পর থেকেই বকুলের গন্ধ ওর ভিষণ ভালো লাগতে শুরু করলো।সেদিনের পর থেকে যতোবার আরাফাতের আশেপাশে গিয়েছে ততোবারই বকুলের গন্ধ পেয়েছে নিশিতা, হয়তো ছেলেটা বকুলের গন্ধ মেশানো পারফিউম ব্যবহার করে নয়তো সবসময় একগুচ্ছ বকুল মালা পকেটে নিয়ে ঘুরতো নিশিতার জন্য। আলতো হাতে একটা একটা করে বকুল ফুল কুড়িয়ে আরেক হাতে জড়ো করে নিশিতা।
অতীতের সাগরে ডুব দেয় নিশিতা।
নিশিতা তখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী, সবে সবে ইউনিভার্সিটি তে পা রেখেছে। স্কুলের ধরাবাঁধা জীবনকে ছেড়ে নিজেকে চেনার, নতুন এক জগতে পা দিয়েছে নিশিতা। ক্যাম্পাসের উচ্ছল তরুণ তরুণীর মুক্ত জীবন বরাবরই ওকে টানতো।এসময় সোহান টাও নেই, মা বাবাকে নিয়ে অষ্ট্রেলিয়া গেছে। ও থাকলে ভিষণ ভালো হতো।আপাতত নিশিতা ক্যাম্পাসের এক সাইডে একটা দেবদারু গাছের নিচে বসে ওর বন্ধু অনুর সাথে সুনীল স্যারের ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার প্ল্যান করছে।ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ফুসকা খাওয়ার স্বাদই আলাদা। ফুসকা এমনিতেই লোভনীয় হলেও ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ফুসকা খেলে তার স্বাদ যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। যারা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ফুসকা খেয়েছে তারাই জানে এর স্বাদ।তায়তো ওরাও আজ ক্লাসের মাঝে বের হবে।এমনই সময় অনুর একটা কথায় নিশিতা জোরে হাহা করে হেসে উঠলো। ওদের থেকে একটু দূরে যে থার্ড ইয়ারের পাঁচ ছয়জন মেয়ে বসে ছিলো তা খেয়াল করেনি নিশিতা। মেয়ে গুলো ওকে হাত ইশারায় ডাকলো। কাছে যেতেই নিশিতা সালাম দিলো ওদের,
” নাম কি?”এক মেয়ে প্রশ্ন করলো নিশিতাকে
” জ্বি আপু, নিশিতা “ভদ্রভাবে উত্তর দিলো নিশিতা।
” ফ্রাস্ট ইয়ার?”প্রশ্ন করলো নিশিতা কে।
নিশিতা হ্যাঁ বলতেই একসাথে জোরে জোরে হেসে উঠলো মেয়ে গুলো। সবাই এক সাথে বলে উঠলো,
” ফ্রাস্ট ইয়ার ”
দলের মধ্যে এক মেয়ে দূরে পরে থাকা একটা খালি পানির বোতল দেখিয়ে নিশিতা কে বলল আনতে।নিশিতা গিয়ে এনে দিলো বোতল টি।আনার সাথে সাথেই বোতল টা আবার ছুড়ে ফেলে দিলো আর নিশিতা কে আনতে বললো নিশিতা এবার ও এনে দিলো বোতল টা। এভাবে একে একে তিন বার নিশিতা বোতল টা এনে দিলো। মেয়ে টা বোতল আবারও ছুঁড়ে নিশিতা কে আনতে বললে বিরক্ত চোখে তাকালো নিশিতা,
” কি ব্যাপার আপু আপনারা এভাবে বোতল ছুঁড়ে ফেলছেন কেন? আর আমাকেই বা আনতে বলছেন কেন? ”
” কেন আমরা ছোড়াছুড়ি খেলছি, তুমি বুঝতে পারছো না?”দলের মধ্যে একজন উত্তর দিলো।
” কিন্তু আমি তো আপনাদের সাথে ছোড়াছুড়ি খেলতে চায়নি।আপনাদের খেলতে ইচ্ছে হয় নিজেরাই খেলুন।”পরিষ্কার উত্তর নিশিতার।
” এই মেয়ে তোমার সাহস তো কম নয়, তুমি আমাদের মুখের ওপর কথা বলছো? তুমি জানো আমি কে? “গর্জে উঠলো মেয়েটি।
” আপনারা সিনিয়র আপু, তায়তো আপনাদের প্রাপ্য সম্মান যথেষ্ট দিয়েছি, এর বেশি চায়লে সরি “উত্তর দিলো নিশিতা।
” তোমার এতো সাহস তুমি এই ববির মুখের ওপর কথা বলছো! নিজের ভালো চায়লে এখনি সরি বলো” রেগে বললো ববি।
” সরি! নিজের যোগ্যতায় এখানে পড়তে এসেছি কারো রেফারেন্স এ নয় যে আপনাদের পা চাটতে হবে “কড়া চোখে তাকিয়ে উত্তর দিলো নিশিতা।
এতোক্ষণে অনেক ছেলে মেয়ে এসে ভির করেছে, সবাই দেখছে,যারা নতুন তারা অনেকেই মনে মনে খুশি হচ্ছে, কেননা এই ববি নামের মেয়েটা ওদের ও অনেক বার হ্যারাজ করেছে। আর যারা ববি কে চেনে তারা নিশিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছে, আদৌও কি এই মেয়ে টা এখানে পড়তে পারবে কি না,ববিদের সাথে পাল্লা দিয়ে। এদিকে ববি নিশিতাকে চড় মারার জন্য হাত বাড়াতেই হাতটা ধরে ফেলে নিশিতা, তার পর ছুড়ে দেয় ববির দিকে।ভির ঠেলে এক সুদর্শন পুরুষ এসে নিশিতার পাশে দাঁড়ায়। এতোক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে থাকলেও এবার আর দূরে থাকতে পারলো না।
ভার্সিটিতে একটা কাজে এসেছিলো আরাফাত। ক্যাম্পাসের এই দিকটা আসতেই ওর চোখ আটকে যায় এক শুভ্র রঙা জামা পরিহিতা রমণীকে দেখে।তরণীটির প্রতিটি কথা হাসিতে যেন উচ্ছলতা ঝরে পড়ছে।কি অসাধারণ তার মুখশ্রী,মায়াবী গড়ন।চোখ ফেরানোই দায়।বিদেশ বিভূঁইয়ে শত শত সাদা চামরার সুন্দরীদের দেখে দ্বিতীয় বার ফিরে তাকানোর ইচ্ছা জাগেনি আরাফাতের। আর এই মেয়েটির থেকে ও চোখই ফেরাতে পারছেনা।যেই হাসি দেখে ও বিমোহিত, মুগ্ধ হচ্ছে অথচ সেই হাসিরই দায়ে মেয়েগুলো যখন মায়াবতী কে অপমান করছে,রাগে গা রিরি করে উঠলো আরাফাতের। কিন্তু যখন দেখলো শুধু অপমান নয় বরং রীতিমতো টর্চার করছে মেয়ে গুলো তখনই আসার জন্য পা বাড়ায় আরাফাত। কিন্তু তখনই থমকে যায়,মেয়ে গুলোকে দেওয়া নিশিতার প্রত্যেকটি জবাব মুগ্ধ করে ওকে।এই একরত্তি মেয়েটার এতটা ব্যক্তিত্ব দেখে বারবার প্রেমে পড়ে আরাফাত। তায়তো আর সামনে এগোয় না।কারণ প্রতিটি মানুষের উচিত নিজের ওপর হওয়া অন্যায়ের জবাব নিজেকেই দেওয়া। তায়তো নিশিতা কে সে সুযোগ দেয় আরাফাত। কিন্তু ব্যাপার টা এই পর্যায়ে চলে গেলে সে আর দূরে থাকতে পারলো না।
” কি হয়েছে এখানে, এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার? “ববির দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বলল আরাফাত।
” এই যে মিস্টার,নিজের ভালো চান তো কেটে পড়ুন এখান থেকে, এটা আমাদের বিষয় আমরাই বুঝবো”জবাব দিলো মেয়েটি।
” জাস্ট শাট আপ রাবিশ! মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ। “রেগে বললো আরাফাত।
” কি আপনি এই ববিকে ধমকাচ্ছেন! “আপনার সাহস তো কম নয় ”রেগে উত্তর দিলো মেয়েটি।
আরাফাতের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে রাগে।এই মেয়েটার এতটা সাহস কি ওর সাথে এভাবে কথা বলে,
” তোমার কপাল ভালো তুমি মেয়ে, নয়তো? “রাগে কথা বলতে পারছে না আরাফাত।
এমম সময় কয়েক টা বাইক এসে থামলো ওদের থেকে একটু দূরে। ববির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।প্রথম বাইকের ছেলেটির নাম রকি।ববির বয়ফ্রেন্ড,ছেলেটি ভার্সিটির ভিপি বড়ো ভাই। ওরই পাওয়ারে ববি সবার সাথে এমন করে।রকি আসতেই ববি ওর কাছে দৌড়ে গিয়ে ন্যাকা কান্না শুরু করে দিলো।
এদিকে সবার কানাঘুঁষোয় নিশিতার ও একটু ভয় হচ্ছে, তা নিজের জন্য নয় বরং অপরিচিত ভদ্রলোক টার জন্য, শুধু শুধু ওর জন্য বিপদে পড়তে হবে লোকটাকে।এদিকে অনু বোতল টা কুড়িয়ে এনে ওদের কে রিকুয়েষ্ট করছে নেওয়ার জন্য,আর সরি ও বলেছে নিশিতার হয়ে অনেক বার।কিন্তু নিশিতা অটল।ও কিছুতেই ওই অসভ্য মেয়েগুলো কে সরি বলবে না।নিশিতা আরাফাতের কাছে গিয়ে বললো,
” প্লিজ আপনি চলে যান, শুধু শুধু আমার জন্য ঝামেলায় জড়াবেন না।আপনি চলে যান আমি সবটা সামলে নেবো। প্লিজ। ”
নিশিতার কথায় মিষ্টি একটা হাসি ফিরিয়ে দিলো আরাফাত,এমন হাসি বুঝি ওর ঠোঁটেই শোভা পায়।
এদিকে রকি সবে হেলমেট টা খুলেছে, আর ববি ন্যাকা কান্না করছে।রকি সামনে তাকিয়েই দৌড়ে আসে আরাফাতের দিকে।
” আসসালামু আলাইকুম বড়ো ভাই, বড়ো ভাই আপনি ক্যাম্পাসে এসেছেন আমাকে ফোন দেন নি?”কথা গুলো বললো রকি
” আসলে একটা কাজে এসেছিলাম, কিন্তু এসে যা দেখলাম “কথাগুলো বিরস মুখে বলল আরাফাত।

এর মাঝেই ববি এসে রকির বাহু জরিয়ে ধরে বললো,
” বেইবি, এই অসভ্য লোক টা আমাকে অপমান করেছে, তুমি কিছু বলো”

” তুমি কাকে কি বলছো ববি,? তার মানে তুমি বড়ো ভাইয়ের সাথে অসভ্যতামি করছো? যাও সরি বলো”কড়া ধামকি রকির।

” কি তুমি আমাকে এই লোকটার কাছে সরি বলতে বলছো? কিছুতেই না।”জেদ ধরে বললো ববি।

” সরি বলো বলছি ববি,নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা, যাও সরি বলো “রকির অপমানে ববি প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় আরাফাতকে সরি বলতে গেলো,

” সরি,ভুল হয়ে গেছে। ”

আরাফাত মুচকি হাসলো,ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ববির দিকে না তাকিয়েই বললো,

” উনার সাথে অভদ্রতা করেছো তুমি তায় সরি টা উনাকেই বলো”।

রাগে অভিমানে ববি রকির দিকে তাকালে রকির চোখ রাঙানিতে নিশিতার সামনে গিয়ে সরি বললো ববি।
সকলেই প্রায় অবাক হয়ে উপভোগ করছে ব্যাপার গুলো।নিশিতা নিজেও অবাক।
সেদিনের ব্যাপারটা ওখানেই শেষ হয়ে যায়।নিশিতা আরাফাতের কাছে ধন্যবাদ জানানোর জন্য গেলে আরাফাত নিশিতার কানের কাছে মুখ এনে বলেছিলো ” সুন্দরী মেয়েদের কাজল দিতে হয় মায়াবতী, নয়লে সবার নজর লেগে যেতে পারে। ”

কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে ওঠে নিশিতা। সোহান কখন থেকে এসে বসে আছে বুঝতেই পারে নি নিশিতা।
” আরে তুমি! কখন এলে?”
” এইতো কিছুক্ষন আগে। “কফির মগে ঠোঁট ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে বললো সোহান।
” একায় কফি বানিয়েছো?, আমায় ডাকোনি কেন? ”

” ওপর থেকে দেখলাম ম্যাডাম স্মৃতিচারণ করছেন,তায়তো আর বিরক্ত করিনি। “মজা করে বললো সোহান।

” শয়তান কোথাকার! চলো একটু হেঁটে আসি”বললো নিশিতা।

সোহান যেন এতোক্ষণ এই কথাটা শোনার অপেক্ষায় ছিলো, তায়তো লুফে নিলো সুযোগ টি।
” ওকে চলুন ম্যাডাম”

দুজন পাশাপাশি হেঁটে এগোতে লাগলো সামনের দিক, আর পেছনে ফেলে গেলো বকুল গাছ,আর বকুল ফুল পছন্দ করা একটি পাগল প্রেমিক পুরুষের স্মৃতি।

চলবে,,,,,,

ভালো বেসেছিলাম তারে
পর্ব -৭
মাসুরা খাতুন

রবিবার, প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততায় ছুটে চলেছে নগর জীবন। ফুটপাতের ফেরিওয়ালা থেকে শুরু করে উচ্চ পদস্থ চাকুরীজীবি প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত।টিকে থাকার এ লড়াইয়ে কেউ কাওকে এক বিন্দু ছাড় দিতে রাজি নয়।জীবনের লড়াইয়ে প্রত্যেকেই মহা যোদ্ধা। ভরা ক্লাস রুমে মনমরা হয়ে বসে আছে সুপ্তি।তার আজ মন ভালো নেই, একটু ও নেই। নিশান পাশে বসেই হাসানোর নানা চেষ্টা করছে সুপ্তি কে। নানা রকম মুখভঙ্গি করে,কখনো বা হাতদুটো মাথার উপর তুলে ধরে খরগোশ ছানা হয়ে।ছয় সাত বছরের বাচ্চাদের এটা একটা গুন,ওরা কাছের বন্ধুর মন খারাপ কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। তারা চায় তার পাশে থাকা বন্ধু টিও তার মতো হাসবে,খেলবে সবসময়।
” এই সুপ্তি কি হয়েছে রে তোর?”নিজেও মন খারাপ করে বললো নিশান।

” আজ আমি খেলবো নারে নিশান, তুই যা খেল, আমার ভালো লাগছে না।”শুকনো মুখে উত্তর দিলো সুপ্তি।

” কি হয়েছে বলবি তো,বাবাই বকেছে? নাকি হোমওয়ার্ক করিস নি?”হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে প্রশ্ন গুলো করলো নিশান।

” আমি হোমওয়ার্ক ও করিনি,কিন্তু আমার মন টা সেজন্য খারাপ না।”

” তাহলে কি হয়েছে বলবি তো,আমার বাবাই বলে,মন খারাপ হলে কষ্টের কথা কারো সাথে শেয়ার করতে হয়,তাহলে মন খারাপ ভ্যানিস হয়ে যায়”ভিষণ চমৎকার ভাবে হাতগুলো উপরে তুলে কথা গুলো বলল নিশান।

” আচ্ছা নিশান, বড়ো হয়ে গেলে মানুষের কষ্ট বেড়ে যায় বুঝি?তখন তারা খুব ড্রিংক করে?”

” ধুর বোকা,ড্রিংক করাতো খারাপ কাজ,কই আমার মাম্মামের যখন মন খারাপ থাকে ড্রিংক করে না। চুপ করে একদিকে তাকিয়ে থাকে, আর মুখটা এরকম ফুলিয়ে। “নিজের মুখটা যথাসম্ভব ফুলানোর মতো করে বললো নিশান।

” কিন্তু আমার বাবাই যে রোজ ড্রিংক করে, রোজ রাতে বাবাই ছাদে গিয়ে বসে থাকে আর কান্না করে,মাম্মামের সাথে কথা বলে,আর ড্রিংকস করে। “একনিশ্বাসে কথা গুলো বলল সুপ্তি।

” তায়! আচ্ছা ঠিক আছে, আংকেলের সাথে দেখা হলে অনেক বকে দিবো। বড়দের মতো করে বলে নিশান।

” এই নিশান একদম না, তুই কিচ্ছু বলবিনা বাবাই কে,আমি একদিন রাতে ছাদে গিয়েছিলাম, বাবাই তখন ড্রিংকস নিচ্ছিল, আমি বললাম, বাবাই,তুমি ড্রিংকস করছো কেন, এটা তো পঁচা লোকেরা করে,তুমি কি পঁচা?”
তখন বাবাই বলেছিলো,” আমার তো অনেক কষ্ট মামুনি,তায় ড্রিংক করি,ড্রিংকস করলে কষ্ট কমে যায়”
আমি বললাম ” বাবাই তাহলে আমায় ও একটু খানি দাওতো,আমারও যখন মন খারাপ হবে তখন আমি ও একটু ড্রিংক করবো।”
তখন জানিস বাবাই আমার ওপর রেগে গিয়েছিল, বলেছিলো,” সুপ্তি তোমাকে না বারন করছি রাতে এইসময় ছাদে আসতে? তুমি কেন ছাদে আসছো,যাও নিচে যাও বলছি, আর কখখোনো আসবে না ছাদে”

” ওও এই নিয়ে তোর মন খারাপ, আরে বড়রা তো বকা দেয়ই,তায় বলে কি সবসময় মন খারাপ করে থাকতে হয়?”হেসে বলল নিশান।

” না না এটা নিয়ে মন খারাপ নয়, বাবাই তো পরে আমাকে সরি ও বলেছিলো,আসলে জানিস, আমার বাবাইয়ের না খুব অসুখ, কি যেন বড়ো অসুখ করেছে, বাবাই আমাকে বলে না।কিন্তু আমি জানি। ”

” তুই কি করে জানলি অসুখ করেছে? “প্রশ্ন করলো নিশান।

” আমি শুনেছি তো,ঐ যে আমাদের স্কুলে প্যারেন্টস মিটিং হলোনা? ঐ দিন রাতে বাবাই খুব ড্রিংক করেছিলো,সকালে রুমে বাবাই কে না পেয়ে ছাদে গিয়ে দেখি সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে, আমি কান্না শুরু করে দেই,পরে আমেনা দাদু এসে ডক্টর কে ফোন করে, তখন ডক্টর এসে বাবাই কে বলেছিলো,” কি হলো মিস্টার আরাফাত, আপনাকে না কে না বললাম ড্রিংক না করতে? তাও কেন করছেন? আপনি বুঝতে পারছেন না কেন, আপনার শরীর দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে, রোগ টাও হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দিন দিন। “ডাক্তারের মতো ভঙ্গিমা করে বললো সুপ্তি।

এতোক্ষণে ক্লাস টিচার এসে পড়েছেন, তারপরও নিশান ফিসফিস করে সুপ্তিকে বললো ” তুই চিন্তা করিস না সুপ্তি, সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

শীতের কুয়াশা ভেজা সকালকে দূরে ঠেলে সোনালী রোদ ঝলমল করছে চারদিক।আবছা আবছা উঁকি দেয়া সূর্য তখন মাথার ওপর অবস্থান করছে। মাছের কাটা বেছে বেছে নিশানকে ভাত খাওয়াচ্ছে নিশিতা।সোহান বাসায় ফেরেনি। আজ ফিরতে প্রায় রাত হয়ে যাবে। বিদেশি ক্লাইন্টের সাথে একটা জরুরি মিটিং আছে সোহানের। তায়তো খুব বিজি আছে আজ।
রুই মাছের পেটি থেকে কাটাগুলো সরিয়ে নিশানের মুখে পুরে দিচ্ছে নিশিতা। খাওয়া নিয়ে ছেলেটার অনেক বাহানা।কার্টুন দেখিয়ে, গল্প শুনিয়ে কতো কি করে তবেই খাওয়াতে হয় ওকে।
মুখের ভেতর খাবার চিবোতে চিবোতে নিশিতা কে প্রশ্ন করলো নিশান,
” আচ্ছা মাম্মাম,ড্রিংকস করলে কি মন খারাপ ভালো হয়ে যায়? কষ্ট ভ্যানিস হয়ে যায়? ”
” অনেকের হয়তো হয়,কে বলেছে তোমাকে এসব বাবু?”

” হয় আমি জানি, আচ্ছা মামুনি তোমার ও যখন মন খারাপ থাকে আমি তোমাকে বিরক্ত করলেই তো বলো,” নিশান আমার মন ভালো নেই, একদম বিরক্ত করো না”
তুমি ও ড্রিংকস করলেই তো পারো মামুনি,তোমার ও সব মন খারাপ ভ্যানিস হয়ে যাবে।”

নিশানের দিকে চোখ গরম করে তাকালো নিশিতা। কিন্তু বুঝলো এভাবে হবেনা, ওকে বোঝাতে হবে তায়তো আবার ও বললো,
” তোমাকে হটাৎ এসব কথা কে বললো, বলতো বাবা? এসব কথা ছোটদের একদম বলতে নায়।আর ড্রিংক করা একদম ভালো নয়। ”

” কিন্তু সুপ্তির বাবাই যে প্রতিদিন ড্রিংক করে? “উতলা হয়ে বললো নিশান।

” প্রতিদিন ড্রিংকস করে? কে বলল তোমাকে বাবা? ”

” সুপ্তিই তো বললো,ঐ যে সেদিন প্যারেন্টস মিটিংয়ের দিন,উনি নাকি রাতো খুবই ড্রিংক করেছেন, তারপর সকালে সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলো।তায়তো সুপ্তি স্কুলে এসে খুব মন খারাপ করে ছিলো। ” বড়দের মতো করে কথা গুলো বলল নিশান।
নিশানের বলা কথা গুলো যে কতটা বিষাক্ত ভাবে বিঁধে গেলো একটি হৃদয়ে তা হয়তো কেউ দেখলোনা।তার মানে আরাফাত সেদিন নিশিতার বলা কথাটার জন্য এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়েছে? এতোটা ছেলে মানুষ আছে আরাফাত আজও। তবে সুপ্তি? সুপ্তি তো ওর মেয়ে। আরাফাত তো নিজেই বলেছিল ও বিয়ে করেছে।দিব্যি তো বিয়ে করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখে ছিলো, তাহলে? তাহলে এতোদিন পর কেন আরাফাতের এতোটা ছেলেমানুষী। নাকি নিশিতার দেখার মাঝেও কিছু ভুল ছিলো।নিশানের কথায় ঘোর কাটে নিশিতার,

” জানো মাম্মাম,সুপ্তির বাবাই না রোজ রাতে ছাদে গিয়ে ওর মাম্মামের সাথে কথা বলে আর কাঁদে, ড্রিংকস করে।সুপ্তি একদিন বলেছিলো ” বাবাই তুমি ড্রিংকস নাও কেন? তখন উনি নাকি বলেছেন,উনার নাকি খুব কষ্ট, অনেক দুঃখ তায়তো ড্রিংকস করে। “আরেক লোকমা ভাত মুখে নিতে নিতে বললো নিশান।

অন্য দিন নিশান খেতে খেতে কথা বলায় বিরক্ত হতো নিশিতা, কিন্তু আজ নিশানের কাছ থেকে হাজারটা কথা শুনতে ইচ্ছে করছে, মনে হচ্ছে নিশান সবটা বলুক,কি কি শুনেছে সুপ্তির কাছ থেকে।তায়তো আবারও প্রশ্ন করলো,
” অনেক কষ্ট বুঝি? তা কি কি বলল সুপ্তি? “যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখে প্রশ্ন করলো নিশিতা।

” সুপ্তির বাবাইয়ের না অনেক বড়ো অসুখ করেছে, তায়তো সুপ্তির ভিষণ মন খারাপ, ওর আর কেউ নেইতো বাবাই ছাড়া, ”

আরাফাতের বড় অসুখ? কি হয়েছে ওর,কেন এমন বলেছে সুপ্তি?আর অসুস্থ শরীর নিয়ে আরাফাত ড্রিংক করে? বারবার কেপে ওঠে নিশিতার হৃদয়। হ্যাঁ হয়তো একরাশ অভিমান,এক আকাশ রাগ, দুঃখে একেবারে মরচে ধরেছে আরাফাতের প্রতি ওর অনুভূতি গুলো, হয়তো আগের মতো মন থেকে আরাফাত কে ভালোবাসি কিছুতেই বলতে পারবে না,হয়তো আগের মতো ভালোবাসেও না,কিন্তু তায় বলে ঘৃণা? ঘৃণা কি করতে পেরেছে আরাফাত কে? মনের ভেতর থেকে উত্তর আসে,না।পারেনি,কখনো আরাফাত কে ঘৃণা করতে পারেনি।আজও হয়তো ঘৃণা করে না, আদৌও কি, ঐ মুখশ্রী, ঐ হাসি,ঐ এতো এতো পাগলামি করা মানুষ টিকে ঘৃণা করা যায়? না না কিছুতেই যায়না।
সেদিনের সেই ক্যাম্পাসের ঘটনার পর থেকে প্রায় আরাফাত কে মোড়ের চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়া দেখা যেতো।নিশিতা ঐ পথ দিয়েই যাওয়া আসা করতো,আর যাওয়া আসা প্রতিবারই দেখা যেতো আরাফাত কে।তখনও কেউ কারো নামটাও জানতো না।শুধু নিশিতা কে দেখেই আরাফাত ওর সেই একপাক্ষিক হাসিটা দিতো। এভাবেই শুরু হয়েছিল ওদের প্রেম কাহিনী। এমনই একবার নিশিতার খুব জ্বর হয় টানা দুইদিন কলেজে যেতে না পারায় আরাফাত অস্থির হয়ে ওঠে নিশিতার খোঁজ জানার।তারপর ওর বন্ধু অনুকে ধরে নিশিতার নাম ঠিকানা জানে।ঐদিন বিকালেই নিশিতাদের এলাকায় ওদের বাসার সামনে এসে ঘুরঘুর করে আরাফাত। নিশিতা জ্বর হালকা কমায় বারান্দায় যায় একটু বাইরের হাওয়া খেতে, তখনই হটাৎ নিচে একটি পরিচিত প্রিয় মুখ দেখে চমকে যায়।নিচ থেকে আরাফাতই সেদিন প্রথম কথা বলেছিলো,
“ক্যাম্পাসে আসোনি কেন মায়াবতী? ”
ভয়ডর হীন আরাফাত কে দেখে সেদিন খুব হেসেছিল নিশিতা,ওরই বাড়ির সামনে এসে ওকেই মায়াবতী বলে ডাকছে? কেউ দেখে ফেললে যে ঝামেলায় পড়বে তার কি হুঁশ নেই ছেলেটার।এভাবেই কিছু কথা,কিছু ভালোলাগা দিয়েই তৈরি হয় ওদের প্রেম কাহিনী।

অতীত থেকে বেরিয়ে আসে নিশিতা দেয়াল ঘড়ির দুটো বাজার শব্দে। খেয়াল করে চোখের কোণে একবিন্দু অশ্রু এসে জমেছে। তাচ্ছিল্য করে নিশিতা হেসে ফেলে।এখন আর সে সেই আগের মতো তরণী নেয় যে হুটহাট প্রাক্তন প্রেমিকের কথা মনে করে কেঁদে ফেলবে।কাঁদে না নিশিতা,হাজার মন খারাপেও একটুও কাঁদে না।কেদেছিলো তখন, যখন আরাফাত ওকে এক আকাশসম ভালোবাসা শিখিয়ে ছেড়ে চলে গেছিল,কেঁদেছিল সেদিন, খুব কেদেছিল, আরাফাতের কাছ থেকে শান্ত ভাবে আসলেও বাড়িতে এসেই বাঁধ ভাঙিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিয়েছিলো।নিশিতা অনেক বেশি ডিপ্রেশনে চলে গেছিল। কোথাও বের হতোনা,কারো সাথে কথা বলতো না,বললেও খুব রেগে যেতো। আর এই ভেঙে যাওয়া নিশিতাকে একটু একটু করে গড়ে তুলেছে সোহান। অস্ট্রেলিয়া থেকে সোহানের বাবা মা ওকে ওখানে একেবারে চলে যাওয়ার জন্য তাড়া দিলে সোহান না করে দেয়,এমনিতেই ও নিশিতাকে ছেড়ে যেতে চায়নি,তাতে এখন আবার নিশিতার যে অবস্থা, ও নিশিতাকে ওভাবে রেখে কিছুতেই যেতে পারবে না।তখন সোহানের মা সিদ্ধান্ত নেয় এখানে সোহানের ভালো মন্দ দেখভাল করার জন্য, অথবা জীবনে চলার জন্য সোহানের একজন সঙ্গী দরকার। তায়তো অন্য কোথাও মেয়ের খোঁজ না করে নিজের ননদের মেয়ে অর্থাৎ নিশিতার সাথে বিয়ে দেওয়ার। প্রথমে সোহান অমত করে,কারণ ও খুব ভালো করেই জানতো নিশিতা আরাফাত কে ভালোবাসতো,আর আরাফাত ছেড়ে চলে যাওয়ায় কতোটা ভেঙে পড়েছে নিশিতা। আর এখন নিশিতা যদি শোনে সোহান ওকে বিয়ে করতে চেয়েছে, আর নিশিতা যদি রাগ করে ওর সাথে বন্ধত্ব টায় নষ্ট করে দেয়, কথা বলায় বন্ধ করে দেয়, এই ভয়ে। কিন্তু সোহান অবাক হয় যখন শোনে নিশিতা নিজেই রাজি এই বিয়েতে তখনও ও নিশিতার কাছে গিয়েছিল, বুঝিয়েছিল নিশিতা কে যে রাগের বশে সব কিছু করে ফেলিস না,কারণ আরাফাত যদি ফিরে আসে? কিন্তু সেদিন নিশিতা এতোটাই রেগে ছিলো যে ও সোহান কেই বিয়ে করবে জানিয়ে দেয়।আর ও সোহানকে এটাও বলে,যে ওর পক্ষে এখনি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব না,যদি অন্য কোথাও বিয়ে হয় তাহলে ওকে না চায়লে ও স্বামী কে মেনে নিতে হবে,যা নিশিতা কিছুতেই পারবে না।আর একমাত্র সোহানই পারে ওকে সেই সুযোগ টা দিতে।
সোহান সেদিন মেনে নিয়েছিলো নিশিতার কথা,সে বলেছিলো,” তুই কি করে ভাবলি নিশু,আমি তোকে বিয়ে করেই নিজের অধিকার ফলাবো।এতোটাই সেলফিশ মনে হয় তোর আমাকে? আমি তোর স্বামী হওয়ার আগেও তোর বন্ধু। তায় তোকে সব রকম সাপোর্ট করা আমার দায়িত্ব। আমি তোকে সেদিনই গ্রহন করবো যেদিন তুই নিজে চাইবি,তুই নিজে যেদিন আমাকে স্বামী হিসেবে মানবি।আর আজ তোর এইরকম অবস্থায় আমার উচিত আগে তোকে স্বাভাবিক করা,তুই ডিপ্রেশনে ভুগছিস,আগে তোকে ডিপ্রেশন থেকে বের করা।তুই প্রতিদিন একটু একটু করে মরে যাচ্ছিস নিশু,আমি আগে তোকে বাঁচাতে চায় “সেদিন সোহানকে ধরে অনেক অনেক কেঁদেছিল নিশিতা। তারপর থেকেই শুরু হয় স্বামী স্ত্রী নামক সম্পর্কের মিথ্যে অভিনয়। আর এমন অভিনয় করতে করতেই সোহানের যত্ন,সোহানের ভালোবাসা সবকিছুর কাছে হেরে যায় নিশিতা। অভিনয় করতে করতে সত্যিকারের স্ত্রী হয়ে ওঠে সোহানের। সোহান নিশিতার ডায়েরি পড়ে জানতে পারে ও আর আরাফাত মিলে চেয়েছিল নিশিতার মেয়ে হলে নাম রাখবে নিশা, আর ছেলে হলে নিশান।তায়তো নিশান হওয়ার পর ওর নাম রাখে নিশান রাখে সোহান নিজেই। নিশিতা প্রশ্ন করলে বলে,” ওমা নিশিতার ছেলের নাম তো নিশানই হওয়া উচিত। ছেলের নাম মায়ের নামের সাথে মিল রাখতে হয়, তুমি জানো না বুঝি” কিন্তু নিশিতা আজও জানেনা নিশানের নামটার পেছনে কোন সত্যি টা লুকিয়ে আছে। আর এভাবেই শুরু হয় নিশিতা সোহানের সংসার।কিন্তু দিনশেষে যে একটি বকুলের মালা নিয়ে অপেক্ষা কারি ছেলের কথা মনে হয়ে মনটা গুমোট ভার হয়ে আসে নিশিতার তা সোহান বুঝতে পারে, তায়তো সে নিশিতা কে সেসময় টা দেয়, কারণ সোহান বিশ্বাস করে প্রতিটি মানুষেরই আলাদা স্পেস থাকা দরকার।যেটা একমাত্র তার,শুধুই তার একপাক্ষিক, সেখানে কারো হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।

অনেক গুলো প্রশ্ন জেগে ওঠে নিশিতার মনে,আরাফাত ড্রিংক করে? সে প্রতিদিন রাতে কাঁদে, সুপ্তি বলেছিলো ওর বাবাই চাঁদ হয়ে যাওয়া ওর মাম্মামের সাথে কথা বলে রাতে,আরাফাত তো নিশিতাকে ও চাঁদ বলতো,মায়াবতী বলতো,তাহলে আরাফাত কোন চাঁদকে মনে করে কাঁদে। আর আরাফাতের অসুখ? তাও আবার বড়অসুখ,অস্থির হয়ে ওঠে নিশিতার মন।তায়তো অতিপরিচিত সেই পুরাতন নাম্বার টায় আজ এতোদিন পর আবারও একবার ডায়াল করে,যেই নাম্বার টা ছিল কল লিস্টে সবার ওপরে,সেই নাম্বার টা আজ আনসেইভ।যেই আইডি টা ছিলো একদিন চ্যাটলিস্টের সবার ওপরে সেই আইডিটা আজ ফ্রেন্ড লিস্টেই নেই।এটায় সময়ের ব্যবধান।
ওপর পাশ থেকে হ্যালো শব্দ টা ভেসে আসতেই একরাশ জড়তা চেপে ধরে নিশিতা কে।
” হ্যালো,হ্যালো কে বলছেন?”
ভেসে আসে সেই পরিচিত কণ্ঠস্বর,,,,,

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here