ভালো বেসেছিলাম তারে পর্ব-১৪ (অন্তিম পর্ব )

1
648

ভালো বেসেছিলাম তারে
পর্ব-১৪ (অন্তিম পর্ব )
মাসুরা খাতুন

সকাল থেকেই নিশিতার মন কেমন করছে।খুব কু গায়ছে,মনে হচ্ছে আজ কিছু একটা হতে চলেছে। খুব খারাপ কিছু, খুবই ভয় ংকর।তায়তো ক্লাস করাতে ভালো লাগছে না।একটা ক্লাস বাকি রেখেই চলে আসে বাসায় ও।আর আসার সময় নিশানের স্কুল থেকে ওকে ও নিয়ে আসে।এমনিতেই মন ভালো নেই ছেলেটা কাছে থাকলে হয়তো ভালো লাগবে। আসার পথে বেশ কয়েক বার আরাফাত কে কল করেছে নিশিতা। সেদিন আরাফাতের শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো দেখেনি,ওর আবার কিছু একটা হয়নি তো? মনের ভেতর ধক করে ওঠে নিশিতার। না না, কি সব ভাবছে ও? আরাফাতের কিছু হয়নি,হতে পারে না।ওর কিছু হলে কি করে সহ্য করবে নিশিতা।আজ এতোদিন পরেও যে মানুষটা মনের গহিনের বসবাস করছে তার খারাপ কিছু হলে সহ্য করতে পারবে না নিশিতা।সেদিন আরাফাতের বলা কথাগুলো কতোটা যন্ত্র না দিয়েছিল তা শুধু নিশিতায় জানে।মানুষ টা কতোটা ভেঙে পড়েছে, নিশিতা পারেনি,পারেনি একটু খানি আরাফাতের হাতদুটো ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে,তোমার কিচ্ছু হবে না আরাফাত, আমি আছিতো।
কিন্তু অনেক বার কল করলেও বারবার কে টে যাচ্ছে। রিসিভ হচ্ছে না।নিশিতার ভয়টা আরো জরালো হলো,কিন্তু কি করবে ও? আরাফাতের অফিসের ঠিকানা ও তো ওর জানা নেই।

বাসায় গিয়ে হালকা ফ্রেশ হয়ে এসেই নিশিতা বসে আছে বকুল গাছটার নিচে,যেন সেই আগের মতো আরাফাতের সাথেই বসে ও গল্প করছে।ছোট ছোট দু একটা আদুরে ফুল ঝরে পড়ছে নিশিতার গায়ে। নিশিতা সেগুলোকে পরম যত্নে তুলে নিয়ে ঘ্রাণ শুকে নিল,এতো তার খুব পরিচিত গন্ধ।খুব খুব পরিচিত,শত চেষ্টা করলেও এ গন্ধ ও ভুলতে পারে না।খুব পরিচিত প্রিয় মানুষটার গায়ে যে এ গন্ধ সবসময় ভেসে বেড়াতো।কতশত স্মৃতি মানুষ টাকে ঘিরে চারটা বছর জুড়ে কতো কতো স্বপ্ন দেখে গেছে ওরা।আরাফাত অন্য কারো দিকে তাকিয়ে হাসলেও রেগে যেতো নিশিতা। কেন হাসবে ও? ও কি জানে না, এই হাসিতে ওকে ভয় ংকর সুন্দর লাগে।অন্য মেয়েরাও যে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ওর সুন্দর মুখখানার দিকে। আর নিশিতা কিছুতেই এই সৌন্দর্য কাউকে দেখতে দেবে না।এমনই খুনসুটি লেগে থাকতো ওদের ভালোবাসায়।

নিশিতা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে যখন অতীত ভাবছিল তখনই খেয়াল করে মেইন গেট পেরিয়ে সোহান আসছে কোলে একটা বাচ্চা মেয়ে পেছনের দিকে মুখ ফিরিয়ে আছে। একদম কাছাকাছি আসলে দেখলো বাচ্চাটি আর কেউ নয় সুপ্তি।নিশিতা দৌড়ে গেলো সোহানের কাছে,

“সোহান কোথায় গিয়েছিলে তুমি? আর সুপ্তিকে পেলে কোথায়?”

“সুপ্তি আজ থেকে আমাদের সাথেই থাকবে নিশু,”শুকনো মুখে উত্তর দিলো সোহান।

“আমাদের সাথেই থাকবে মানে? আরাফাত কোথায়, আরাফাত সুপ্তিকে ছেড়ে কোথায় গেছে? “ভিষণ উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলো নিশিতা।

সোহান চুপ,একদম চুপ।কোন কথায় বলছে না সোহান।

“কি হলো সোহান? বলো আরাফাত কোথায়? আমি ওকে ফোন করছি,ও ফোন তুলছে না কেন,প্লিজ বলো আমাকে।”

সোহান চুপ থাকা দেখে সুপ্তি উত্তর দিলো,
“আন্টি, বাবাই তো বিদেশে গেছে অনেক দিনের জন্য, ওখানে তো বাবাইয়ের অনেক কাজ, তায়।তুমি বাবাইয়ের সাথে কথা বলবে? ঠিক আছে, তাহলে বাবাই যখন রোজ আকাশে চাঁদ হয়ে আসবে আমার সাথে দেখা করতে,তখন তুমিও কথা বলিও।কেমন?”

দু’হাতে জরিয়ে নেয় নিশিতা সুপ্তিকে।
”সত্যি করে বলো সোহান আরাফাত কোথায়? কি বলছে সুপ্তি এসব।চুপ করে থেকো না.”

এতোক্ষণে কথা বলে সোহান, ও ভয় পাচ্ছে।নিশিতার জন্য ও ভয় পাচ্ছে। কেমন করে সামলাবে মেয়েটাকে ও।একবার কতোটা ভেঙে পড়েছিল নিশিতা তা সোহান জানে।অনেক কষ্টে ওখান থেকে বের করে এনেছে নিশিতাকে ও।সোহান এবারও বুঝতে পারছে ওমন কিছু একটা আবার ও হবে।

“তুমি আরাফাতের সাথে দেখা করতে চাও নিশু,তাহলে চলো আমার সাথে। আমি তোমায় নিয়ে যাব।”

কথাটা বলতেই সুপ্তিকে ছেড়ে গেইটের দিকে দৌড়ে যায় নিশিতা।
“চলো সোহান,আমি এখনি যাব,আমাকে নিও চলো প্লিজ। ”

সোহান সুপ্তিকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে গিয়ে নিশানের কাছে গিয়ে সুপ্তিকে রাখে,
“মামুনি,তোমার আন্টিকে বাবাইয়ের সাথে দেখা করিয়ে আনি।তুমি খেলো নিশানের সাথে। তুমি তো এইমাত্র এলে।ঠিক আছে বাবু?”

“ওকে আঙ্কেল। বাই বাই।”

কাজের মেয়েটার কাছে বাচ্চা দুটোকে রেখে সোহান এসে দেখে নিশিতা অলরেডি গাড়িতে বসে আছে।
“তাড়াতাড়ি এসো সোহান, দেরি করো না প্লিজ। আমার মন কেমন করছে। ”

সোহান কোন কথা না বলে গাড়িতে বসে, ফুল স্পিডে গাড়ি স্টার্ট দেয়।দ্রুত ছুটে যায় গাড়ি। সোহান বুঝতে পারে, আরাফাতের সাথে নিশিতাকে অবশ্যই দেখা করাতে হবে,এতো বড় অন্যায় নিশিতার সাথে করতে পারবে না সোহান।আজ ও নিয়ে যেতে দেরি করে ফেললে কোন দিন নিশিতা ওকে ক্ষমা করবে না। গাড়িতে বসে পুরো ঘটনা খুলে বলে সোহান নিশিতাকে। কেন সেদিন আরাফাত ঐ মিথ্যে নাটকটা করেছিলো,এতো ভালোবাসার পরও কেন দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো নিজের ভালোবাসা কে।আরাফাতের পুরো জীবনের গল্প শোনায় নিশিতাকে সোহান। সবটা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় নিশিতা।ঢুকরে কেঁদে ওঠে গাড়িতেই।শুধু ওকে সুখি করতে এতোগুলো বছর আরাফাত এতোটা যন্ত্র না সহ্য করে এসেছে। সোহানের বাহু জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কাঁদে নিশিতা।

হাসপাতালের সামনে এসে দাঁড়ায় কালো রঙের গাড়িটি।নিশিতা কে নিয়ে তাড়াতাড়ি জরুরি বিভাগের দিকে ছুটে চলে সোহান। নিশিতা ওর আগে আগে গিয়ে প্রতিটি রুমে খুঁজতে থাকে। সোহান ওকে নির্দিষ্ট রুমে পৌঁছে দেয়।অনেক ডাক্তার নার্সে জমা হয়ে আছে রুমে।আরাফাত প্রায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে, নিশ্বাস ও নিতে পারছে না ঠিকমতো, তায় অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হয়েছে। ডাক্তারদের হাতেও কিছু করার নেই, তায়তো তারাও অপেক্ষা করছে কখন পুরোপুরি ভাবে মাস্কটা খুলে মুখটা ঢেকে দেওয়া হয়।অবসান ঘটে একটি চির নিশ্চিত যুদ্ধের।
বাইরে বারান্দায় আমেনা খালা বসে কাঁদছে, আরাফাতের কিছু বন্ধুরাও শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে আছে আশপাশে।তারাও চাচ্ছে ওদের বন্ধু এই জীবন মৃ ত্যু টানাপোড়েন থেকে মুক্তি পায়। একটু সুখের ঘুম আসতে পারে ছেলেটা।আরাফাতের রুমে কাউকে এলাউ করছে না ডক্টররা।কিন্তু নিশিতা গিয়ে যখন দরজায় থামলো তখন সবাই একদৃষ্টে চেয়ে আছে ওর দিকে।পাগলের মতো উস্কখুস্ক চুল,শুকিয়ে যাওয়া মুখখানি দেখে সবাই বুঝতে পারলো এ কে।

দীর্ঘদিন এখানে চিকিৎসা নেওয়ায় অনেক ডক্টররাও জানতো ওদের সম্পর্কে। তায় আরাফাতের পরিচিত ডক্টরটি নার্স সহ সবাই কে বাইরে আসতে বলল,নিশিতা কে বলল ভেতরে যেতে। সোহান ও বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকল।

ডক্টররা বাইরে বেরিয়ে গেলেও কিছুক্ষণ দরজাতেই দাঁড়িয়ে থাকল নিশিতা।সে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না এ তার আরাফাত। সেই প্রাণোচ্ছল, হাসি খুশি ছেলেটা নয়,বরং একটা রোগাক্রান্ত অসার দেহ পড়ে আছে বেডে।ওর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে কখনো আরাফাতকে এভাবে দেখতে হবে।

এক পা দুপা করে সামনে এগিয়ে বেডের সামনে যায় নিশিতা। নিশিতা রুমে ঢুকতেই বকুলের গন্ধে ভরে উঠলো পুরো রুম।চারদিকে মা দকময় গন্ধে ভরপুর।খুব কষ্ট করে টেনে টেনে চোখ খুললো আরাফাত। চোখ খুলেই ঘোলা চোখে আবছা দেখতে পায় সেই মুখ জানি,সেই প্রিয় পরিচিত,অতি আপন নয়ন জোড়া। সে এসেছে তা বুঝতে পারে আরাফাত। তার অন্তগহীনে লুকিয়ে থাকা প্রিয়তমা এসেছে ওকে দেখতে তা বুঝতে পারে আরাফাত। যেই মুখখানি দেখলে ওর দুচোখ জুড়াতো,যেই মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে হাজার বছর পার করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলো আজ “সে”এসেছে।
শত কষ্টের মাঝে ও মুচকি হাসে আরাফাত।

আরাফাতের খুব কাছে পাশে বসে নিশিতা। আজ সেও সবকিছুর উর্ধে, মানবে না কোন বেড়াজাল,রাখবে না কোন সমাজের দুরত্ব। আজ সে আরাফাতকে ছোঁবে। শেষ বারের মতো হলেও ছোঁবে আরাফাত কে।ঐ রোগাক্রান্ত দুর্বল হাতখানি আবারও ধরবে আজ এতোবছর পর।লাগে লাগুক যত কলঙ্ক। করে করুক লোকে ছি ছি।আজ যে ওর প্রিয়র অন্তিম যাত্রা। এসময় কিছুতেই কষ্ট পেতে দেবেনা ওকে।

অক্সিজেন মাস্কের পাশে আরাফাতের ভাঙা গালে হাত রাখে নিশিতা।
“আরাফাত, আরাফাত শুনছো তুমি আমাকে? দেখো আমি এসেছি, তোমার নিশু এসেছে আরাফাত। কথা বলবে না আমার সাথে? ”

অক্সিজেন মাস্কটা হাত দিয়ে সরিয়ে
দূর্বল কন্ঠে টেনে টেনে বলল আরাফাত,
“তুমি এসেছো নিশু? আজ আর রাগ করে নেই তো আমার ওপর? ঘৃণা করবে না তো আমায়? আমি তোমার চোখে ঘৃণা দেখতে পারিনা নিশু,খুব কষ্ট হয় আমার। “দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল আরাফাতের চোখ দিয়ে।

নিশিতা পরম যত্নে মুছে দিল পানিটা।

“না আরাফাত, তুমি ভুল দেখেছো,আমি কোনদিন ঘৃণা করতে পারিনি তোমায়।রাগ ছিল,অভিমান ছিলো,কিন্তু ঘৃণা কখনো ছিলো না আরাফাত। তুমি কেন আমায় মিথ্যে বলেছিলে আরাফাত? কেন?”

“মিথ্যে না বললে যে আজ তুমি নিশানের মা হতে না নিশু,তুমি ছেড়ে যেতে না কিছুতেই আমাকে।আমি তোমাকে চিনি। ”

“এই এতোটায় চিনলে আমায় আরাফাত। না পাওয়ার যন্ত্র না নিয়ে হাজার বছর বেঁচে থাকার চেয়ে পূর্ণতার একটি রাতই যে বড় সুখের, বড় পাওয়ার আরাফাত।”
খুব শান্ত ভাবে বলে নিশিতা কথাগুলো।

“কিন্তু আমি চায়নি নিশু,আমার এ কলঙ্কিত জীবনের সাথে তোমার জীবন টা জড়াক”

“তোমার সাথে জড়ানোর কমতি ছিলো কোথায় বলোতো? এরপর ও বলছো আমি তোমার সাথে জড়ায়নি? শরীরে জড়ালেই বুঝি জড়ানো হয়? মনের জড়ানোর কোন দাম নেই? “অভিমানী প্রশ্ন নিশিতার।

“আজও এমন করে অভিমান করে কথা বলো তুমি নিশু? আমি ভেবেছিলাম তুমি বদলেছো,কিন্তু এখন দেখছি এতো স্টুডেন্টদের পড়িয়েও তুমি একটু ও বড় হওনি।”মুচকি হাসি দিয়ে বলল আরাফাত।

“আমি বদলাতে চায়নি আরাফাত।আমি কখনো বদলাতে চায়নি,তুমি দোষী, তুমি দোষী আরাফাত। পরকালে ঠিক আমি তোমার কাছে হিসেব চাইবো।কেন তুমি আমাকে মিথ্যে বলে দূরে সরে যেতে বাধ্য করলে? কেন তুমি আমাকে ভালো রাখার জন্য এতোগুলো বছর নিজেকে পো ড়ালে? কে চেয়েছিলো তোমার কাছে এতোটা সুখ? আমি তো তোমায় বলিনি আমার এরকম একটা সুখী জীবন লাগবে।আমি সবসময় বলতাম সুখে দুঃখে সবসময় তোমার পাশে থাকবো।কেন দাওনি আমায় সেই সুযোগ? “কেঁদে ফেলে নিশিতা।

আরাফাতের নিশ্বাস আটকে আসে,মাস্ক টা মুখে লাগিয়ে একটুখানি নিশ্বাস টেনে নিয়ে বলে আরাফাত,ওর কথা খুব স্পষ্ট বোঝাও যাচ্ছে না, কেমন ঘোরঘোর শব্দ বের হচ্ছে কথার মাঝে।

“সোহান খুব ভালো ছেলে নিশিতা, তুমি ওর সাথে ভালো থাকবে”

চেঁচিয়ে ওঠে নিশিতা,
“চুপ করো তুমি,একটাও কথা বলবা না।তুমি খারাপ, খুব খারাপ। কে বলেছিল তোমাকে আমার জন্য এতোটা ভাবতে।কেন করেছিলে ওমন? এইযে সাতটা বছর একা একা ছিলে,এই সাতটা বছর তো আমরা একসাথে থাকতে পারতাম। এই সাতটা বছর তো আমি তোমার সাথে থাকতে পারতাম,তোমার সেবা করে নিজে ধন্য হতাম। এই সাত বছরের ভালোবাসা, সুখ স্মৃতি নিয়ে আমি সাত জন্ম পার করতাম আরাফাত। তুমি কেন করলে এমন?”
কাঁদে নিশিতা, মাথাটা আরাফাতের বুকের ওপর রেখে খুব কাঁদে।
কাঁদে আরাফাতও,চোখ বেয়ে নোনা জল গড়াতে থাকে অবিরত।

” আমার সুপ্তি কে দেখে রেখো নিশিতা, ভাবির খুব ইচ্ছা ছিলো তোমার সাথে দেখা করবে,কিন্তু সে সুযোগ ভাবি পায়নি,”

“আমি তোমার সুপ্তি কে দেখে রাখবো আরাফাত।সারাজীবন আগলে রাখবো।”

“ওর হাসিতেই তুমি আমার হাসিটা খুঁজে পাবে নিশু।”

এরই মাঝে প্রচন্ড শ্বাসটান অনুভব করে আরাফাত, আস্তে আস্তে চোখ টাতে টান অনুভব করে।চোখ দুটো যেন আর শায় দিচ্ছে না।বুকের পাঁজর খুব ওঠানামা করছে।
নিশিতা চিৎকার দেয়,”আরাফাত, আরাফাত তুমি এমন করছো কেন? কথা বলো আরাফাত, চোখটা খোল,৷ না না আমাকে দেখার ইচ্ছে তোমার এতো তাড়াতাড়ি শেষ হতে পারে না। তুমি কথা বলো আরাফাত। তোমার নিশুকে ফেলে যেওনা।”

নিশিতার চিৎকারে বাইরে থেকে সবাই ছুটে আসে, ডক্টর রাও এসে পড়ে। তাড়াতাড়ি অক্সিজেন মাস্কটা লাগায়।কিন্তু আরাফাতের আর অক্সিজেন নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।আজ এই অতিপ্রয়োজনীয় অক্সিজেন টাও ওর কাছে বড় অপ্রয়োজনীয়। আস্তে আস্তে বুকের ওঠানামা থেমে যায়। শান্ত হয়ে যায় আরাফাত।চির সুখের নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সে।আজ বহুদিন পর আরাফাত ঘুমাবে।অনেক দিন ঘুম হয়না আরাফাতের। আজ সে ইহজাগতিক সকল কষ্টের উর্ধে।তার কোন কষ্ট, আকাংখা,না পাওয়ার যন্ত্র না কিছুই নেয় আরাফাতের।

চিৎকার করে কাঁদে নিশিতা। কাঁদতে কাঁদতে ডাকতে থাকে আরাফাত কে।”কথা বলো আরাফাত, প্লিজ কথা বলো,দেখ তোমার নিশু এসেছে আরাফাত, এই সামান্য কটা কথায় তোমার আমার কথা শেষ হতে পারে না আরাফাত। হাজার হাজার কথা জমে আছে তোমার আমার।তুমি নাকি আমার কান্না দেখতে পারো না? আজ একবার চোখ খুলে দেখো আরাফাত, আমি কাঁদছি, তোমার নিশু কাদছে আরাফাত। ”

আস্তে আস্তে পুরো রুম থেকে বকুলের গন্ধ উধাও হয়ে গেলো,একটু আগেও যে ঘরে বকুলের মাদ কময় গন্ধে নিশ্বাস ফেলার জো ছিলো না সেখানে আর একটু ও বকুলের গন্ধ নেই।বকুলের গন্ধ রাও চলে গেছে নিশিতা কে ছেড়ে আরাফাতের মতো।

আরাফাতের কবরে একটা বকুলের চারা নিজ হাতে লাগিয়ে দিল নিশিতা। সোহান, নিশান, সুপ্তি সহ এসেছে আরাফাতের কবরে।আজ একমাস হলো আরাফাত নেই। সুপ্তিও বুঝতে পেরেছে ওর বাবাই চলে গেছে। নিশিতা প্রতিদিন আসে আরাফাতের কবরে।প্রতিদিন অফিস থেকে এসে সোহান নিয়ে আসে ওকে।দিনের বেশির ভাগ সময় বসে থাকে বকুল গাছটার নিচে।
চারাগাছ লাগানো শেষে নিজ হাতে গাঁথা একটি বকুলমালা ঝুলিয়ে দিলো কবরের গায়ে।
এই কবরের নিচেই যে শুয়ে আছে সারাজীবন কেঁদে যাওয়া একটি ব্যথাতুর দেহ।পাশেই ভাই ভাবি সহ আরাফাতের বাবা ও শুয়ে আছে।

কবরস্থান থেকে সামনে এগোতে লাগে নিশিতা,সোহান ধরে রেখেছে নিশিতা কে।যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে,খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। আর ওদের সামনে এগোতে থাকে নিশান আর সুপ্তি।সুপ্তিকে ও না না রকম কথা বলে হাসানোর চেষ্টা করছে নিশান।কে জানে, হয়তো ওদের কে নিয়ে ও তৈরি হবে এমন এক প্রেমের গল্প। যেখানে হয়তো আরাফাতের মতো করুন কাহিনী নাও থাকতে পারে।ওদের প্রেমকাহীনির একটা নতুন গল্পের অপেক্ষায়।

সমাপ্ত।

(আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক পাঠিকা,অনেক কষ্টের পর শেষ হলো আরাফাত নিশিতার প্রেমের উপাখ্যান। এতোদিন সাথে থেকেছেন,আমি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ আপনাদের কাছে।অনেক কষ্ট দিয়েছি হয়তো,আবার অনেককে করেছি খুব বিরক্ত, সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । আশা করবো আগামী গল্প গুলো তেও এভাবেই সাথে থাকবেন।আর আজকে অন্তত নেক্সট মন্তব্য না করে নিজেদের অনুভূতি শেয়ার করবেন।শুভ কামনা সবাই কে। )

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here