ভাড়াটিয়া,পর্ব-০১

0
1553

ভাড়াটিয়া,পর্ব-০১
নাবিল মুহমুদ

মেয়েটিকে দেখেই লম্বা সময় ধরে তাকিয়ে রইলেন আনোয়ারা বেগম। এমন সুন্দরী মেয়ে হয়!

হালকা সিম রংয়ের একটা থ্রি পিস পরেছে মেয়েটা। লম্বাও তো কম না। পাঁচ ফুট পাঁচ হবে মনে হয়। গায়ের রংটাও কী সুন্দর কাঁচা হুলুদের মতো।

মনে মনে একটা পরিকল্পনা করে ফেলেছেন আনোয়ার বেগম। ছেলেটা তার খারাপ না। এবার মাস্টার্স শেষ করেছে।

চাকরি -বাকরি এখনো হয়নি। না হলেই বা কী? তাদের কী কম আছে। ঢাকা শহরে চারটা বাড়ি। সবই তো ওই ছেলের।

মেয়েটার বিয়ে হয়েছে কি-না কে জানে? মনে হয় হয়নি। বিয়ে হলে নিশ্চয়ই বাবা -মার সাথে থাকত না।

আজই নতুন ভাড়াটিয়া আসছেন বাসায়। ভাড়াটিয়াদের দেখার জন্য আনোয়ারা বেগম বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওনাদের এমন সুন্দর একটা মেয়ে আছে কে জানত।

আনোয়ারা বেগম ঠিক করলেন। নতুন ভাড়াটিয়া কে দুপুরে বাসায় দাওয়াত দিবেন। ওরা বাসা চেঞ্জ করার ঝামেলায় নিশ্চয়ই রান্না বান্না করতে পারবেন না।

কী যেন নামটা বলেছিল লোকটা? মনে পড়েছে আসলাম। এটা তো মনে হয় মুসলমান নাম। অবশ্য আজকাল নাম দেখে হিন্দু মুসলমান বুঝা যায় না।

কিছুদিন আগে রায়হানের বাবার এক কলিগ আসল। নাম সান্তানু ধর। ধর-টর এ সব হিন্দুদের নামেই থাকে। তিনি হিন্দু মনে করেই রান্না বান্না করলেন। পরে জানা গেল উনি মুসলমান!

ধর্মটা জানা দরকার আছে। ধর্মের সাথে খাবারের একটা সম্পর্ক আছে। মুসলমান হলে গরুর মাংস খাওয়ান যায়। হিন্দু হলে বিরাট সমস্যা।

আনোয়ারা বেগম চিন্তা করলেন তিনি মুরগির মাংস করবেন তাহলে সমস্যা হবে না। মুরগির মাংস হিন্দু মুসলিম উভয়ই খেতে পারে।

সাথে কী করবেন? পোলাও না সাদা ভাত। মেহমান আসলে পোলাও করতে হয়। এক কাজ করা যায় পোলাও করল সাথে সাদা ভাতও থাকলো। অনেকে আবার পোলাও খেতে পারে না।

আনোয়ারা বেগম ভিতরে ঢুকে রহিমা কে ডাকলেন। রহিমা এ বাড়িতে কাজ করে। অবশ্য তাকে কাজের মেয়ে বলে মনে হয় না। কারণ রহিমা খুব ছোটোবেলা থেকে এ বাড়িতে বড়ো হয়েছে। আনোয়ারা বেগম কে মা বলে ডাকে। অনেকটা বাড়ির মেয়ের মতো থাকে।

আনোয়ারা বেগমের কোনো মেয়ে নাই। রহিমা কে মেয়ে মনে করে। শুধু যে মেয়ে মনে করে তা না। মানুষও করেছে মেয়ের মতো। রহিমা এবার এইচ,এস সি পরীক্ষা দিয়েছে। ছাত্রী হিসাবে সে ভালো। এস এস সি তে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। এবারও মনে হয় ভালো রেজাল্ট করবে।

ডাক শুনে ছুটে আসল রহিমা। ‘কী হয়েছে মা?’

‘ফ্রিজ থেকে মুরগির মাংস বের কর তো মা। আর দেখ তো বাসায় পোলাও চাল আছে কি না? না থাকলে আব্বাস কে দিয়ে পোলাও চাল আনা।’

‘পোলাও চাল দিয়ে কী করবা?’

‘বাসায় মেহমান খাবে।’

‘এ সময় মেহমান পেলে কোথায়! কে আসবে বলো তো?’

‘নতুন ভাড়াটিয়াদের দুপুরে খাওয়াব। ওরা তো এসেই রান্না করতে পারবে না। দুপুরের খাবারটা আমাদের এখানে খেল। রাতের মধ্যে রান্নার ব্যবস্থা করে ফেলবে। ‘

রহিমা একটুও অবাক হলো না আনোয়ারার কথায়। রহিমা জানে তার মার খুব মায়া।

আনোয়ারা বেগম আবার বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। বড়ো একটা ট্র্যাক থেকে মালামাল নামান হচ্ছে। মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে না।

মেয়ের বাবা আসলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন। আনোয়ারার মেয়েটা কে দেখতে ইচ্ছে করছে! মেয়েটা কী করছে? মায়ের সাথে জিনিসপত্র গোছাচ্ছে। নাকি শুয়ে পড়েছে?

অনেক মেয়ে আছে একটু জার্নি করলেই ক্লাত হয়ে যায়। এরা অলস ধরনের মেয়ে। এ মেয়েটা কেমন কে জানে?

অলস মেয়ে হলে একটু সমস্যা। রায়হান অলস মানুষ পছন্দ করে না।

একবার গিয়ে দেখে আসা যায়। বাড়িওয়ালা হিসাবে সে খবর -টবর নিতেই পারে। সাথে দুপুরের দাওয়াতটাও দিয়ে এলো।

চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here