ভাড়াটিয়া-১১,১২,১৩
নাবিল মুহমুদ
১১
সকালবেলা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে সুইটি আর রাশিদা বেগম। মনে হয় বাসার কেউ টের পায়নি। অবশ্য দেখলেও তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। সবকিছু রেডি করাই ছিল।
কাজ এটা ভালোই ভালোই শেষ করা গেছে। শুরুতে রাশিদা বেগম বেশ ভয় পেয়েছিলেন। সরকারি বড়ো কর্মকর্তা কে বোকা বানানোটা এত সহজ হবে বুঝতে পারেননি। মানুষ লোভ আর মায়ায় পড়লে আন্ধা হয়ে যায়! বাড়ির একজন যখন অন্ধ হয় তার প্রভাবে বাকিরাও চোখে দেখে না।
এ বাড়ির বাড়িওয়ালী প্রথমে মায়ায় পড়েছেন। তার মায়া সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। রাশিদার ধারণা ফাতেমা মেয়েটা কিছু একটা বুঝতে পারছে। এখন অবশ্য বুঝে লাভ নাই। কাজ শেষ হয়ে গেছে।
এখন যেতে হবে আসলামের কাছে। ও আছে মালিবাগের একটা বাসায়। এ বাসাটা সুইটির নামে নেয়া। আপাতত গয়না টয়না বিক্রি করা যাবে না। কেশ টাকা দিয়ে চলতে হবে। গয়না বিক্রি হবে বছরখানেক পরে।
ভাগের ক্ষেত্রে চল্লিশ পার্সেন্ট সুইটির। ত্রিশ ত্রিশ করে রাশিদা আর আসলাম নিবে। সুইটি কে দশ পার্সেন্ট বেশি দিতে হয়। তার জন্যই কাজগুলো করা যায়।
রাশিদা আর সুইটি সোজা চলে এসেছে বাসায়। আসলাম বাসায় ছিলো।
রাশিদা বলল,” নগদ টাকা কত পাওয়া গেছে আসলাম ভাই?”
“লাখ ত্রিশের মতো হবে। গুনা হয় নি। তোমরা এসে পড়েছ এখন গুনা যাবে।”
রাশিদা একটু অবিশ্বাসের চোখে তাকাল আসলামের দিকে। তার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। হাতে টাকা পেয়ে মানুষ না গুনে বসে থাকতে পারে!
“এবারের আয় খারাপ হয়নি। আমি রংপুর চলে যাব আসলাম ভাই।”
“ঠিক আছে যাও। ঢাকা থাকাটা এখন নিরাপদ না। বড়ো পার্টি হাঙ্গামা করতে পারে।”
সুইটি বলল,” আমার তো ঢাকায় থাকতেই হবে! ”
“সেটা নিয়ে একটু চিন্তায় আছি। সমস্যা নাই। ভালো করে মেকআপ করে নিলে চিনতে পারবে না।”
রাশিদা বেগম টাকা গুনতে বসে গেছেন। ওনার টাকার প্রতি আগ্রহ বেশি। বয়স তো কম হয়নি। ছেলে মেয়ে নেই। আত্মীয় স্বজন বলতে একবোন আছ। রাজশাহীতে থাকে। সেই বোনও ওনাকে খুব একটা পছন্দ করে না।
শাহিন সাহেব বসে আছেন। ওনাকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। যদিও আনোয়ারার অবস্থা এখন অনেকটা ভালো। ডাক্তার এসে দেখে গেছেন। আপাতত ঘুমিয়ে আছেন। আচানক এমন একটা ধাক্কা সহ্য করতে পারেনি।
শাহিন সাহেবের ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। এমন কিছু হতে পারে। সুইটির মতো এমন একটা কাজ করল! এতদিনে তিনি মানুষ চিনতে পারলেন না। রুবিনার মেয়ে মনে করে তিনি আবেগে পড়ে গেছিলেন। এই মেয়ে যে রাশিদা না কী যেন নাম মহিলার মেয়ে হতেই পারে না। সুইটি যদি রুবিনার মেয়ে হয়? তাহলে এ সবের সাথে জড়িত হলো কী করে! হিসাব মিলাতে কষ্ট হচ্ছে।
সকালে ফাতেমা যখন জানল মামার ব্যাগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন নিজের করা সন্দেহটা আর গাঢ় হলো। মামা কে বলল, “মামা আমার মনে হয় সুইটি মেয়েটা ভালো না! গতকাল ওর মা কি যেন একটা নিয়ে গেছে। আমি ঠিক মতো দেখতে পাইনি।”
“এ সব কি বলিস রে মা! তুই আমাকে আগে কেন বলিসনি? কি সর্বনাস!”
এরপর সুইটির বাসায় গিয়ে দেখা গেল। বাসায় কেউ নেই। বাসা তালা মারা। ইলিয়াস সাহেব বাসার তালা ভাঙার ব্যবস্থা করলেন। তখনও বাড়ির অন্যরা কিছু জানে না। বাসায় ঢুকে দেখলেন বাসা মোটামুটি ফাঁকা! সোফাসেট, খাট, একটা টেবিল আর গুটিকয়েক চেয়ার ছাড়া কিছুই নেই। বড়ো এ সব জিনিসপত্র নিতে পারেনি তাই হয়ত রেখে গেছে।
ইলিয়াস সাহেব বুঝতে পারছেন না কি করবেন? টাকা পয়াস গেছে এটা তেমন কোনো সমস্যা না। আজ বাড়িতে একটা বিয়ে হওয়ার কথা। আত্মীয় স্বজন সবাইকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। এখন সবাইকে কি বলবেন। ওনার খুব চিন্তা হচ্ছে। আনোয়ারার জন্য। বোনটা তার খুব ইমোশনাল! বিয়ের অনুষ্ঠান হবে কমিউনিটি সেন্টারে। আচ্ছা অনুষ্ঠান হলো সবাই খাওয়া-দাওয়া করে চলে গেল। দূরের মানুষজন কিছু জানল না। এমনটা করলে কেমন হয়? এমনিতে তো কমিউনিটি সেন্টারের বিল দিতেই হবে। মাথা ঠিক কাজ করছে না!
ফাতেমা বলল, “মামা ব্যাপারটা ভাইয়াকে জানাও। ভাইয়ার বন্ধুরা পরিস্থিতি ম্যানেজ করতে পারবে।”
“দেখি কী করা যায়। জানাতে তো হবেই! এটা লুকানো যাবে বলে মনে হয় না।”
ফাতেমার একটু খারাপ লাগছে! ওর আগেই মনে হয়েছিল সুইটি মেয়েটা ভালো না। কাউকে বলতে পারেনি। কেন যে বলল না! অবশ্য সবাই সুইটি বলতে পাগল হয়ে গেল। তখন বললেও লাভ হতো বলে মনে হয় না। সবাই ভাবত ফাতেমা সুইটি কে হিংসা করে এ সব বলছে।
খবরটা শুনে আনোয়ারা কেমন অস্থির হয়ে গেল! প্রেসার ট্রেসার বেড়ে অবস্থা খারাপ হয়ে গেল।
ইলিয়াস এ ভয়টাই পেয়েছিল। বোনটা বড্ড বেশি ইমোশনাল। খুব সহজে মানুষ কে বিশ্বাস করে ফেলে। জগৎটা খারাপ মানুষে বড়া! এখানে মানুষ কে বিশ্বাস করা মানে ধরা খাওয়া।
শাহিন বসে আছেন নিজের ঘরে। আনোয়ার অবস্থা এখন ভালো। ওকে নিয়ে আর চিন্তা নাই। খুব ভয় পেয়ে গেছিলেন। এতটা ভেঙে পড়ল আনোয়ারা!
এতক্ষণ আনোয়ারা কে নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। অন্য কিছু ভাবার সময় পাননি। অন্যদিকের একটা ব্যবস্থা করতে হবে। কয়েকজন মন্ত্রী কে পর্যন্ত দাওয়াত দেয়া হয়েছে। তাদের না করা যাবে না।
ইলিয়াস বসে আছে শাহিন সাহেবের পাশে। ইলিয়াস বলল,” দুলা ভাই, দ্রুত একটা কিছু করতে হবে। এত মানুষ কে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। ”
শাহিন সাহেব কিছু বলছেন না। চোখবুঁজে ভাবছেন কী করা যায়। এমন পরিস্থিতি কখনো পড়েননি আগে!
“দুলা ভাই, এক কাজ করি। মানুষজন কে বলার দরকার নাই। অনুষ্ঠান যেমন হওয়ার কথা তেমন হোক। সবাই খেয়ে-টেয়ে চলে যাক। কী বলেন?”
ইলিয়াসের প্রস্তাব খারাপ না। এ ছাড়া গতি আছে বলে মনে হচ্ছে না। ঘটনা দুয়েকদিন আগে ঘটলে মানুষ কে জানান যেত। আর কয়েকঘন্টা পরে বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। কমিউনিটি সেন্টার তো সব আয়োজন করে বসে আছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন শাহিন সাহেব, “মানুষ কনে দেখতে চাইলে?”
“হঠাৎ করে কনে অসুস্থ হয়ে গেছে বলা যায়।”
“হ্যাঁ, এটা ভালো বলেছ।”
“তুমি দেখ তো রায়হানের কী অবস্থা। ওকে একটু বুঝাও।”
“আপনি চিন্তা করবেন না দুলা ভাই। আমি সব ব্যবস্থা করছি।”
ইলিয়াস সাহেব বের হয়ে গেলেন। রায়হানের কাছে। ভাগনের মনের অবস্থাটা তিনি বুঝেন।
শাহিন সাহেবের মনটা এখন একটু হালকা হয়েছে। বড়ো একটা চিন্তা মাথা থেকে সরে গেছে। ইলিয়াসের বুদ্ধিটাই ভালো।
ভাড়াটিয়া-১২
সুইটি বিউটি পার্লারে গিয়ে নিজের লম্বা চুল ছোটো করে ফেলল। চুল কাটলে মানুষ কে চেনা একটু কঠিন হয়ে যায়। চুলের সাথে সাথে চেহেরা অনেকটা বদল হয়ে যায়। আসলাম বলে গেছেন কিছুদিন বাসা থেকে বের না হওয়ার জন্য।
সুইটির বের হতেই হবে। সুইটির খারাপ লাগছে! আনোয়ারা বেগম মানুষটার জন্য। কেমন আপন করে নিয়েছিলেন। আজকাল এমন মানুষ পাওয়া যায় না!
সাদা রংয়ের একটা শার্ট, নীল রংয়া প্যান্ট পরেছে সুইটি। ওকে দেখতে অনেকটা ছেলেদের মতো লাগছে। খুব আপন কেউ না হলে সুইটি কে চিনবে না।
টাকা পয়সা সব ভাগাভাগি হয়ে গেছে! সুইটি পনেরো লাখ টাকা পেয়েছে। বাকিটা ওরা দুইজন নিয়ে গেছে। গয়নাগুলো বিক্রি করা হবে পরে। আপাতত রেখে দেয়া হয়েছে।
শাহিন সাহেব অফিসে বসে আছেন। পিয়ন এসে একবার চা দিয়ে গেছে। চা এখনো তিনি খাচ্ছেন না। মেজাজটা ভালো না।
বিয়ের ঝামেলটা কোনোরকমে সামাল দেয়া গেছে৷ আনোয়ার অবস্থা এখন পুরোপুরি ভালো। রায়হানের মনের অবস্থা ভালো না। ভালো থাকার কথা না। এমন একটা ধাক্কা ছেলেটা খেলো!
সুইটি মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে। এদের ছেড়ে দেয়া যাবে না।
পুলিশের আইজি শাহিন সাহেবের বন্ধু মানুষ। ওকে ব্যাপারটা বলতে হবে। ওদের ছবি টবি থাকলে ভালো হতো। আছে কিনা কে জানে? বাড়া দেয়ার সময় ছবি আইডি কার্ড নেয়ার কথা৷ আনোয়ারা নিয়েছে বলে মনে হয় না!
দুষ্ট লোকেরা কেমন করে আপন হয়ে যায়! তখন সাধারণ নিয়ম কানুনের কথা মনে থাকে না!
শাহিন সাহেব বাড়িতে কল দিলেন। ফাতেমা কল ধরলো “কী খবর বাবা?”
“ভালো। কী করিস রে মা?”
“বই পড়ছিলাম বাবা।”
“তোর মা কই?”
“মা রান্না করে।”
“আচ্ছা শোন, সুইটিদের কোনো ছবি টবি আছে বাসায়?”
“ওনাদের সবার ছবি তো নাই! সুইটির একটা ছবি মামার কাছে আছে।”
“তোর মামা কে বল, ছবিটা আমার মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিতে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে বাবা।”
ইলিয়াস সাহেবের মেজাজ ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। ওনার কাছে একটা প্যাকেট এসেছে। প্যাকেটা খুলে উনি বসে আছেন। এটা পেয়ে খুশি হওয়ার কথা। কারণ কাজটা হয়েছে।
বন্ধু খুব অল্প সময়ে বিরাট একটা কাজ করে দিয়েছে। বন্ধু কে বড়সড় একটা ধন্যবাদ দিতে হয়। সুইটি মেয়েটার পাসপোর্ট করেছেন। এবং সেই পাসপোর্ট মরিশাসের ভিসাও লাগিয়ে ফেলেছে! বিরাট কাজ করেছে বন্ধু!
উনি চিন্তা করছেন। ভাগ্যিস ইয়ার টিকিটটা কাটা হয়নি। না হলে কাকে পাঠাতেন এখন?
ফাতেমা উঁকি দিলো মামার ঘরে। দেখল মামা চেয়ারে বসে আছেন। টেবিলের ওপরে রাখা একটা প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে আছেন।
“কী করো মামা?”
ইলিয়াস ফাতেমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করল।” কিছু না রে মা। আয় ভিতরে আয়।”
ফাতেমা ঘরে ঢুকে খাটের ওপরে বসল।
ইলিয়াস বললেন, “কিছু বলবি? না এমনিতেই এসেছিস। ”
মামার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, “বাবা কল দিয়েছে। তোমার কাছে সুইটি মেয়েটার একটা ছবি আছে না?”
“শুধু ছবি কি রে! একটা পাসপোর্ট আছে। অবশ্য পাসপোর্ট দিয়ে কোনো কাজ হবে না। পাসপোর্ট এ বাড়ির ঠিকানা দেয়।”
“বাবা বলছেন, ছবিটা বাবা কে পাঠাতে।”
“আচ্ছা পাঠিয়ে দিচ্ছি। মেয়েটা কে ধরা দরকার।”
ইলিয়াস সুইটির ছবিটা শাহিন সাহেবের মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিলেন।
“তোর মা কই?”
“মা রান্না করে।”
“আমাকে এক কাপ চা খাওয়াতে পারবি রে মা।”
“আমি চা নিয়ে আসছি মামা।” ফাতেমা উঠে দাঁড়াল।
শাহিন সাহেবের সামনে বসে আছেন পুলিশের আইজি মিলন খন্দকার। শাহিন সাহেবের কল পেয়ে চলে এসেছেন।
“কি খাবা বলো?”
“সে পরে হবে। আগে তোমার জরুরি কথাটা শুনি। আচানক এমন ভয়ংকর তলব করলা! দুইদিন কাটেনি ছেলের বিয়ে দিয়েছ। এরমধ্যেই পুলিশ দরকার হয়ে পড়ল! “হা হা হা।
“ফোনে তো তোমাকে বলেছি।”
“সে তো বলেছ। এখন কি চাও এটা বলো?”
এ সময় শাহিন সাহেবের পিয়ন ঘরের ভিতরে ঢুকল। উনি বোধহয় বেল চাপ দিয়েছেন।
“দুই কাপ কফি দাও। আর কিছু? ”
“না আপাতত কফিই চলুক। পরে দেখা যাবে তোমার মামলা বুঝে।”
“আমি চাই মেয়েটা খুঁজে বের করতে ব্যস।”
“ছবিটা দাও। দেখি কী করা যায়।”
পিয়ন এসে দুই কাপ কফি টেবিলে রাখল। কফির কাপটা হাতে নিয়ে আলত চুমুক দিলেন মিলন খন্দকার। বন্ধুর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন। একটু বিরক্তও হলেন!
কী করে এত বড়ো ভুলটা করল! আরে মেয়ে মানুষ বাসায় বসে থাকে। দুনিয়াদারির খবর তো ওদের কাছে থাকে না। মানুষ এখন কী পরিমান ধুরন্ধর হয়েছে তা কি শাহিন জানে না?
ভাড়াটিয়া একটা মেয়ের সাথে চেনা নাই জানা নেই বিয়ে ঠিক করে ফেলল! এটা কোনো কথা?
ভেবেছিল কিছু কঠিন কথা বলবেন। কিন্তু শাহিনের মুখোমুখি হয়ে কিছু বলতে পারলেন না! মানুষ তো এমনই হওয়ার কথাছিল। কতটা উদার মনের হলে। সাধারণ একটা ভাড়াটিয়ার মেয়ের সাথে একমাত্র ছেলের বিয়ে দিতে চায়!
সকালে একটা পার্সেল এসেছে শাহিন সাহেবের বাড়িতে। পার্সেলটা ইলিয়াসের নামে। প্রেরকের নাম সুইটি! ইলিয়াস বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে পার্সেলটার দিকে।
ওনার পাসপোর্ট সহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব পাঠিয়ে দিয়েছে মেয়েটা। ওনার মনটা ভালো হয়ে গেছে! বিরাট ঝামেলা থেকে বাঁচা গেছে। ইলিয়াস সুইটি মেয়েটাকে ক্ষমা করে দিলেন। এখন মনে হচ্ছে মেয়েটা খুব একটা খারাপ না! কেন যে এমন একটা কাজ করল!
চলবে —
ভাড়াটিয়া-১৩
রায়হান ঘরে বসে বসে একটা বই পড়ছে। পড়তে ভালো লাগছে না! বারবার মেয়েটার কথা মনে পড়ছে। আজব একটা মেয়ে!
বাসায় চুরি করার জন্য বিয়ের নাটক করার কী আছে।
মায়ের সাথে তো ভালোই সম্পর্ক করে ফেলেছিল। চুরি তো করাই যেত। বিয়ের নাটক করার প্রয়োজন ছিল না।
বাইরে যেতেও ইচ্ছে করছে না! মানুষজন কী ভাববে কে জানে? অবশ্য খুব কাছের কয়েকজন ছাড়া কেউ জানে না। তবুও কেমন একটা খারপ লাগা কাজ করছে!
ফাতেমা এক কাপ চা নিয়ে রায়হানের ঘরে হাজির হলো। আনোয়ারা ফাতেমা কে পাঠিয়েছে। ছেলেটা ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ওনার খুব খারাপ লাগছে!
ফাতেমা রায়হানের পাশে বসল। ফাতেমার দিকে আড় চোখে তাকাল রায়হান।
“ভাইয়া তোমার চা।”
রায়হান চা টা নিলো। এক কাপ চা পেয়ে তার ভালোই লাগছে। মাথাটা কেমন ঝিম মেরে ছিলো। রায়হান ফাতেমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল।
“কি করো ভাইয়া?”
“একটা বই পড়ছি। তোর কোচিং এ ক্লাস নাই?”
“আজ ক্লাস নাই।”
“এ কয়দিন তো পড়াশোনা হয়নি। ভালো করে পড়।”
মামা জিজ্ঞেস করল,” তুমি কি ঘুরতে যাবা?”
“কোথায় যাবে?”
“এখন ঠিক করেনি। তুমি গেলে ঠিক করবে।”
“তোরাও যাবি নাকি?”
“হ্যাঁ।”
“না, না তোর এখন কোথাও যাওয়ার দরকার নাই। পরীক্ষার তো সময় বেশি বাকি নাই। এখন এ সব ঘুরাঘুরি বন্ধ। ”
“দুইদিনের জন্য গেলে কী হয়!”
“এখন বাদ দে। তোর পরীক্ষার পরেই সবাই মিলে যাব। যা পড়তে বোস।”
ফাতেমা মনখারাপ করে উঠে দাঁড়াল। ভাইয়াটা জানি কেমন!
মামুন এসে বসে আছে অফিস ঘরের বারান্দায়। এ অফিসটা পুলিশের আইজির। মামুন একজন গোয়েন্দা অফিসার। ইদানিং কয়েকটা জটিল কেস সমাধান করায় বেশ নামডাক হয়েছে।
গতকাল রাতে মিলন সাহেব মামুন কে অফিসে দেখা করতে বলেছেন। মিলন সাহেব মামুন কে খুব পছন্দ করেন। পছন্দের মাত্রাটা একটু বেশিই বলা যায়!
মামুন নয়টার সময় এসে বসে আছে। মিলন সাহেব এখনো অফিসে আসেননি।
দশটার পরে মিলন খন্দকার অফিসে এলেন। মামুন কে দেখে একটু হাসি দিয়ে বললেন, “কেমন আছ মামুন?”
“ভালো আছি স্যার।”
“কখন এসেছ? তোমাকে মনে হয় অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছি!”
“না স্যার। খুব বেশি সময় হয়নি স্যার।”
“এসো ভিতরে এসো। ”
ঘরের ভিতরে ঢুকলেন। সরকারি অফিস খুব বেশি ঝাঁকঝমক না। সাদামাটা একটা বড়ো ঘর। একটা বড়ো টেবিল আর গুটিকয়েক চেয়ার। দেয়ালে জাতির পিতার একটা বড়সড় ছবি ঝুলছে।
মিলন খন্দকার চেয়ারে গিয়ে বসলেন। মামুন ঘরে ঢুকে দাঁড়িয়ে আছে।
মিলন খন্দকার মামুনের দিকে তাকিয়ে বললেন,” দাঁড়িয়ে আছে কেন মামুন! বোস। এ চেয়ারটাতে বোস।”
মামুন ওনার সামনের চেয়ারটাতে বসল। মামুন ঠিক বুঝতে পারছে না কেসটা কী? কোনো ভয়ংকর কেস টেস বলে মনে হচ্ছে না। তেমন কিছু হলে স্যার কে চিন্তিত লাগত!
গতবারের জটিল কেসটার জন্য যখন তাকে ডাকা হলো। স্যার খুব টেনশনে ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের চাপ আরেকদিকে মিডিয়ার চাপ ছিলো।
এমন কোনো কেসের খবর তো শোনা যাচ্ছে না। নাকি স্যার অন্যকোনো কারণে ডেকেছেন কে জানে?
“চা খাবা মামুন?”
মামুন একটু হেসে না বলল। ছেলেটাকে এই জন্যই মিলন খন্দকারের আর ভালো লাগে! খুব সুন্দর করে না বলতে পারে।
“খাও এক কাপ। তোমার সাথে চা খাব বলে আমার চা খাওয়া হয়নি।”
এখন আর না বলা যায় না। ইচ্ছে না করলেও খেতে হবে। এক কাপ চা অবশ্য খাওয়া যায়। মিলন মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল।
মিলন খন্দকার একটা বেল চাপল। একজন পিয়ন ছুটে আসল সাথে সাথে।
“দুই কাপ চা দাও।”
মিলন খন্দকার একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি টেবিলে রাখলেন। মামুনের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই ছবিটা দেখ মামুন”
মামুন দেখল। নীল রংয়ের একটা শাড়ি পরা মেয়ের ছবি। মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দরী! চোখদুটো খুবই মায়াবী। দেখলেই কেমন আকর্ষণ করে।
“এই মেয়েটির নাম সুইটি। বাবার নাম আসলাম আর মায়ের নাম রাশিদা বেগম। ”
মামুন একটু অবাক হলো। এমন একটা মেয়ের জন্য স্যার মামুন কে ডেকেছেন!
“আমার ধারণা এ সব তথ্য সব ভুয়া। মেয়েটার নামও হয়ত সুইটি না। এ ছাড়া যে সব কাগজ পত্র আছে সব ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক।”
মামুন বুঝতে পারল। এটা একটা ঠকবাজি কেস।
“তাই বলা যায়। আমাদের কাছে শুধু এক কপি ছবিই আছে। এ ছাড়া তোমাকে আমি কিছু তথ্য দিতে পারি। মেয়েটাকে শেষবার ওয়ারির একটা বাড়িতে দেখা গেছে গত বৃহস্পতিবার।”
মামুন হালকা একটু হাসি দিলো।
“মামুন আমি তোমাকে চব্বিশ ঘণ্টা সময় দিলাম। তুমি মেয়েটা কে খুঁজে বের করো। তোমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”
“মামুন একটু হেসে বলল, স্যার, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কেস সমাধান করে ফেলা। এ সব সিনেমা টিনেমায় হয়! চব্বিশ ঘণ্টা খুব সামান্য সময় না। কিন্তু আপনি জানেন, খুবই সাধারণ কেস। দেখে মনে হয় এটা তো মুহূর্তেই সমাধান হয়ে যাবে। এমন অনেক কেস আছে আমরা চব্বিশ বছরেও সমাধান করতে পারিনি! আবার অনেক জটিল কেস খুব অল্প সময়ে সমাধান হয়ে গেছে।
আমি আপনাকে এটা বলতে পারি। এ কেসটা আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব এবং যত দ্রুত সম্ভব একটা সমাধান দিবো। ইনশাআল্লাহ।”
মিলন খন্দকার মামুনের দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুটা সময়। কিছু বললেন না। মামুন বাস্তব কথাই বলেছে। স্যার কে খুশি করার জন্য যা ইচ্ছা বলেনি।
পিয়ন দুই কাপ চা নিয়ে এলো। মিলন খন্দকার ও মামুন দুইজনই এখন নীরব হয়ে বসে আছেন।
“চা নাও মামুন।”
মামুন চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আলত চুমুক দিয়ে আড় চোখে স্যারের দিকে তাকাল। স্যারের এক্সপ্রেশন বুঝতে চেষ্টা করল। ও বুঝতে পারছে। মেয়েটা স্যারের কোনো কাছের মানুষ কে ধোঁকা দিয়েছে!
চলবে–