ভাড়াটিয়া-১৪,১৫,১৬

0
606

ভাড়াটিয়া-১৪,১৫,১৬
নাবিল মুহমুদ
১৪

মামুন অফিস ঘরে বসে আছে। এখন দুপুর দুইটা বাজে। এ সময় অফিসে সবাই লাঞ্চ করে। মামুনের কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না।

মামুন অফিসে আসতে আসতে লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। কারো সাথে কথা বলা হয়নি। ইচ্ছেছিলো লাঞ্চের আগে অফিসে আসবে। রাস্তায় জ্যামের কারণে দেরি হয়ে গেছে!

ঢাকা শহরে চলাচল করাটা বড্ড কষ্টকর হয়ে গেছে! অনেকটা সময় রাস্তায় চলে যায়!

যদিও স্যারের সাথে একটু কঠিন করে কথা বলেছে। কাজে অতিরিক্ত চাপ নিতে চায় না। কাজ হবে তার নিজের মতো। খুব দ্রুত স্যার কে একটা রেজাল্ট দেখাতে চায় মামুন।

আজই কাজে নেমে পড়তে হবে। মেয়েটাকে শেষবার ওয়ারিতে দেখা গেছে। এখান থেকেই শুরু করতে হবে।

জয়ি লাঞ্চ শেষ করে এসে দেখল মামুন স্যার এসেছেন। আগে দেখলে লাঞ্চের ওফার করা যেত। স্যার কখনো লাঞ্চ টাঞ্চ আনেন না। কেন আনেন কে জানে?

অবশ্য অফিসের নিচে একটা ক্যান্টিন আছে। ওদের খাবারটা খারাপ না। ভালোই রান্না করে।

জয়ি দরজায় দাঁড়িয়ে বলল,” ভিতরে আসব স্যার?”

মামুন জয়ির দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল,” এসো জয়ি।” জয়ি এ গোয়েন্দা বিভাগের একজন নতুন অফিসার। দারুণ মেধাবী আর দুরন্ত সাহসি। লম্বায় পাঁচ ফুট সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি লম্বা। ফিট বডির অধিকারী।

“লাঞ্চ করেছেন স্যার?”

মামুন কোনো জবাব দিলো না। আবার হালকা করে হাসল। এ হাসির মানে কী? তা জয়ি বুঝতে পারল না! মামুনের স্যারের মাঝে একটা গাম্ভীর্য ভাব আছে। সব সময় কেমন একটু দূরত্ব বজায় রাখে। এ জন্য সবাই তাকে একটু ভয়ও পায়!

“বোস জয়ি। ইসমাইল কোথায়?”

“নতুন কোনো কেস আছে স্যার?”

“হ্যাঁ, আই জি স্যারের কেস একটা পাওয়া গেছে।”

এ সময় ইসমাইল ঘরে ঢুকে সালাম দিলো। ইসমাইলের দিকে তাকিয়ে মামুন বলল, “এসো ইসমাইল।”

সামনের চেয়ারটা টেনে বসল ইসমাইল। ইসমাইল একজন কম্পিউটার ইন্জিয়ার। দেখতে শুনতে দারুণ স্মার্ট একটা ছেলে। বয়স পঁচিশ ছাব্বিশ হবে।

মামুন বলল, “জয়ি এক কাজ করো শাহাদাত ভাই কে ডেকে নিয়ে এসো। আর ইসমাইল তুমি এ ছবিটা প্রোজেক্টের সেট করো।”

জয়ি ঘর থেকে বের হলো শাহাদাত ভাইকে ডাকার জন্য। শাহাদাত এ অফিসের সবচেয়ে বয়স্ক এবং অভিজ্ঞ অফিসার। অফিসের প্রধান মামুন হলেও শাহাদাত কে সবাই সম্মান করে। খুব মজার মানুষ শাহাদাত।

শাহাদাতের প্রিয় কাজ হচ্ছে খাওয়া। সব সময় কিছু না কিছু খেতেই থাকে। এবং সাস্থটা হয়েছে সেই রকম। ফ্যামিলি প্যাক বডি। কাঠেলর মতো একটা বুড়ি বের হয়ে আছে।

শাহাদাত কে পাওয়া গেল। ওয়েটিং রুমে। হাতে একটা বড়ো মাপের কফির কাপ। কাপে চুমুক দিচ্ছে আর মোবাইলে কথা বলছে।

জয়ি কে দেখে একটু হাসল শাহাদাত। জয়ি ইশারায় ডাকার কথা জানাল। ইশারায় অপেক্ষা করতে বলল জয়ি কে।

শাহাদাত এসে মামুনের ঘরে এসে বসতে বসতে বলল, “নতুন কেস মনে হচ্ছে? ”

মামুন শাহাদাতের দিকে একটু হাসি দিলো।

ইসমাইল প্রোজেক্টরে সুইটির ছবিটা দেখাল।

ছবি দেখে শাহাদাত বলে উঠল।” আরে বাপস্ এত পুরাই আগুন! দেখতে তো সেই মেয়েটা!”

সবাই একটু হাসল।

মামুন বলা শুরু করল। এই ম্যাডাম আমাদের আই জি স্যারের খুব আপন! স্যারের খুব ইচ্ছে ওনাকে একটু আপ্যায়ন করবেন। কিন্তু ম্যাডাম শুক্রবার থেকে লাপাত্তা!

খুব দ্রুত ম্যাডাম কে খুঁজে বের করতে হবে। স্যার আমাদের কে চব্বিশ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন!

ম্যাডামের সম্ভবত ছদ্মনাম সুইটি। শেষবারের মতো উনাকে ওয়ারিতে দেখা গেছে। ”

শাহাদাত একটু আফসোসের সুরে বলল, “ওহ! চিটিং কেস! এই মেয়ের পাল্লায় পড়লে বড়ো মাথাওয়ালার মাথাও ঠিক থাকবে না! নিশ্চয়ই বড়ো স্যারের মাথা খেয়ে ভাগছে!”

মামুন একটু কড়া দৃষ্টিতে শাহাদাতের দিকে তাকাল।

জয়ি বলল, “শুধু একটা ছবি দিয়ে মেয়েটা কে খুঁজে বের করা তো কঠিন হয়ে যাবে স্যার।”

“কঠিন বলেই তো দায়িত্বটা আমাদের কে দেয়া হয়েছে জয়ি। মাথা খাটাও।”

শাহাদাত কে গভীর ভাবে ভাবতে দেখা যাচ্ছে৷ কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। হঠাৎ করে শাহাদাত বলল, “আচ্ছা মেয়েটা কে ওয়ারিতে দেখা গেছে বৃহস্পতিবার রাতে। মানে শুক্রবার সকাল পালিয়েছে। এক কাজ করা যায়। শুক্রবারের ঢাকা শহরের রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করে দেখা যায়। কোথায় কোথায় গেছে। বাড়ি থেকেই যদি ছদ্মবেশে বের হয় তাহলো হয়ত বের করা করা যাবে না। কিন্তু বাড়ি থেকে ছদ্মবেশে বের হওয়ার কথা না।”

মামুন বলল, “গুড পয়েন্ট শাহাদাত ভাই। আপাতত এটা ধরেই আমরা আগাই দেখি কী পাওয়া যায়। ইসমাইল তুমি এক কাজ করো। শুক্রবারের ঢাকা শহরের সকল রাস্তার ফুটেজ দেখার ব্যবস্থা করো।”

ইসমাইল বলল, “ওকে স্যার।”

ট্যাফিক কন্টোল রুমে বসে আছে ইসমাইল। ঢাকা শহরের যে সব রাস্তায় ক্যামেরা আছে তার ফুটেজ দেখা হচ্ছে।

মালিবাগ রেল ক্রোসিংয়ের একটা ক্যামেরা ফুটেজে সুইটি এবং একজন বয়স্ক মহিলার ফুটেজ পাওয়া গেছে। এটা সকাল আটটার সময়ের ফুটেজ।

ইসমাইল ঘটনাটা মামুন কে জানাল।

মামুন বলল, “আর কোনো জায়গায় এদের দেখা গেছে? ”

“সুইটি মেয়েটা আর কোথায় দেখা যায়নি। তবে সুইটির সাথের মহিলাটিকে গাবতলি একটা ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে। ”

“তারমানে সুইটি ছদ্মবেশ ধারণ করেছে। বা বোরকা টোরকা পরে ঘুরছে। তুমি মহিলার একটা ছবি প্রিন্ট করে নিয়ে আস।”

অনেকটা কাজ হয়ে গেছে। সুইটি মেয়েটা মনে হয় ঢাকা শহরেই আছে। বা ছদ্মবেশে ঢাকা শহরের বাইরে গেছে। তবে মামুনের মনে হচ্ছে মেয়েটা ঢাকাতেই আছে।

যেহেতু সাথের মহিলাটি ছদ্মবেশ ধারণ করেনি। তারমানে এ সব ক্যামেরার কথা ওদের মাথায় ছিলো না।

গাবতলি দেখা গেছে মানে ঢাকার বাইরে কোথাও গেছে। গাবতলি থেকে কত জায়গার গাড়ি যায়। কোথায় গেছে? কী করে পাওয়া যাবে!

অফিস ঘরে বসে আছে সবাই। কী করা যায়। যে সূত্র পাওয়া গেছে তা দিয়ে এই মহিলা কে খুঁজে বের প্রায় অসম্ভব!

জয়ি বলল, “স্যার ইদানিং দূর যাত্রার বাসগুলো ছাড়ার পূর্বে যাত্রীদের ভিডিও করা হয়। আমরা যদি গাবতলীর বাসগুলোর শুক্রবারের ভিডিওগলো চেক করি তাহলে কিছু একটা পাওয়া যেতে পারে।”

শাহাদাত ভাই বলল,” খুব ভালো আইডিয়া জয়ি!”

ইসমাইল বলল, “আইডিয়া খারাপ না। কিন্তু স্যার একদিনে কত হাজার বাস গাবতলি থেকে ছেড়ে যায় কে জানে? সব বাস এমন ভিডিও করে কিনা! জানি না।”

মামুন বলল, “খোঁজ নিয়ে দেখা যাক কী পাওয়া যায়।”

শাহাদাত বলল, আমরা এক কাজ করতে পারি। বাস সমিতির সাথে কথা বলে। সকল ক্যামেরাম্যান কে একজায়গায় করা যেতে পারে। তাহলে ভিডিও চেক করা সহজ হয়ে যাবে। না হলে এত এত ফুটেজ চেক করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা মহিলার ছবি দেখিয়ে বলে দিলাম।

সবাই চেক করে দেখ কার ক্যামেরায় মহিলা কে দেখা গেছে। সেখান থেকে বুঝা যাবে কোন বাসে মহিলা উঠছে। জানি না কতটা সফল হওয়া যাবে!”

মামুন বলল, “এ ছাড়া তো কোনো পথ নেই শাহাদাত ভাই। দেখা যাক কী পাওয়া যায়?”

চলবে–
ভাড়াটিয়া-১৫

চারজন লোক কে আসতে দেখেই দ্রুত অফিসে ঢুকল মঞ্জু।

ইমতিয়াজের কাছে গিয়ে বলল,” বস পুলিশ আসছে।” ইমতিয়াজ হলো বাস মালিক সমিতির সভাপতি। শ’খানেক বাসের মালিক।

ইমতিয়াজ একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “পুলিশ ক্যান! থানায় হপ্তা দেস নাই ঠিক মতো?”

“দুইদিন আগেই তো হিসাব মতো টাকা দেয়া হয়েছে বস।”

“আচ্ছা দেখি কী বলতে এসেছে! যা চা বিস্কিটের ব্যবস্থা কর।”

মামুন অফিসঘরে ঢুকল সাথে শাহাদাৎ, ইসমাইল ও জয়ী। মামুন কে ঢুকতে দেখে ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়াল। বড়ো করে সালাম দিলো। মামুন একটু অবাক হলো। ওরা কেউই পুলিশের পোশাক পরে আসেনি। তবুও এরা কী করে বুঝে ফেলে কে জানে?

হাসি হাসি মুখে ইমতিয়াজ বলল,” কেমন আছেন স্যার?”

মামুন এ প্রশ্নের কোনো জবাব দিলো না। আলগা একটা হাসি দিয়ে বলল,” আমি মামুন। গোয়েন্দা বিভাগ থেকে এসেছি। ”

অফিস ঘরটা বেশ সাজানো গুছানো। সাধারণত বাস মালিক সমিতির অফিস টফিস এত গুছানো থাকে না। বুঝা ইমতিয়াজের রুচিবোধ ভালো। টেবিলের সামনের চেয়ারটাতে বসল মামুন। শাহাদাত বসল তার পাশের চেয়ারে। ইসমাইল আর জয়ী দাঁড়িয়ে রইল।

ইমতিয়াজ হাসি আর প্রসারিত করে বলল, “কী খেদমত করতে পারি স্যার?”

মামুন একটু বিরক্ত হলো। লোকটা এত গদ গদ আচরণ দেখে। এরা কি কোনো দুইনাম্বার কারবারি টারবারি করে কি না কে জানে? না হলে পুলিশ দেখেই এত গলে যায় কেন!

একটু ভারি গলায় মামুন বলল,” আপনাদের বাসগুলো ছাড়া পূর্বে য়াত্রীদের একটা ভিডিও ফুটেজ রাখার কথা। সেটা কি নিয়মিত রাখেন?”

“জি স্যার। একটা বাস খুঁজে পাবেন না যারা ভিডিও ফুটেজ না রেখে বাস ছাড়ে।”

“গুড। তা এ সব ভিডিও ফুটেজ কতদিন সংরক্ষিত রাখা হয়?”

“এক মাস রাখি স্যার। তারপর ডিলেট করে দিই। বুঝেন তো স্যার এত এত ভিডিও রাখা সম্ভব না।”

“গত শুক্রবারের সব বাসগুলোর ভিডিও ফুটেজ আমি দেখতে চাই।”

“আপনি বলেন কোথায় পাঠাতে হবে। আমি সব পাঠিয়ে দিবো স্যার।”

“পাঠানোর দরকার নাই। আপনি সকল কেমেরাম্যান কে ডাকার ব্যবস্থা করেন। শুক্রবারের ফুটেজ সহ। ”

ইমতিয়াজ কে একটু চিন্তিত মনে হলো। এ তো বিরাট ঝামেলার কাজ। শুকনো একটু হাসি দিয়ে বলল, ” একটু সময় লাগবে স্যার।”

“আমরা অপেক্ষা করছি আপনি ব্যবস্থা করুন। আশেপাশে কোনো কমিউনিটি সেন্টারে সবাইকে আসতে বলুন।”

ইমতিয়াজ সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “ছেলে-পেলে কে কোথায় আছে কে জানে? এত অল্প সময়ে সবাইকে ডাকাত কঠিন কাজ! ”

মামুন মাথাটা ইমতিয়াজের দিকে একটু আগিয়ে একটু কঠিন গলায় বলল,” কঠিন কাজটাই করতে হবে। আই,জি স্যারের কাজ। সময় নষ্ট করার মতো হাতে নাই।”

ইমতিয়াজ উঠে দাঁড়াল।” দেখি স্যার কী করা যায়।”

টেবিলের ওপাশ থেকে বেরিয়ে একটু উঁচু গলায় বলল,” মঞ্জু স্যারদের জন্য চা পানির ব্যবস্থা কর।”

ইমতিয়াজ ব্যস্ত ভঙ্গিতে বেরিয়ে গেল।

মঞ্জু আর একটা ছেলে ঠান্ডা একটা পানির বোতল এনে টেবিলে রাখল। সাথে একটা ট্রে-তে চা। অফিস ঘরের পাশেই একটা চায়ের দোকান। ওই দোকান থেকেই চা আনা হয়েছে। সাথে একটা জাম্বু সাইজের বিস্কিটের প্যাকেট। এত বিস্কুট কে খাবে কে জানে?

মঞ্জু বলল,” স্যার, চা নেন। এখানকার চা টা খুব ভালো!”

মামুন কিছু বলল না। সে চা খাবে কি-না এখনো বুঝা যাচ্ছে না। জয়ীর অবশ্য চা খেতে ইচ্ছে করছে।

শাহাদাত চায়ের একটা কাপ হাতে তুলে নিলো। জয়ির দিকে তাকিয়ে বলল, “নাও চা খাও। আপাতত কোনো কাজ টাক নেই। ” ইসমাইল আর জয়ী পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে।

ইসমাইল হাত বাড়িয়ে চায়ের একটা কাপ জয়ীর দিকে এগিয়ে দিলো। জয়ী হালকা হেসে ধন্যবাদ বলল।

ঘন্টাখানেক সময় পেরিয়ে গেছে। ইমতিয়াজের কোনো খবর নাই। মঞ্জু অবশ্য একটু পর এসে বলছে, “স্যার কিছু লাগবে কিনা?”

দুই ঘন্টা পর মঞ্জু এসে বলল, “স্যার চলেন।”

মামুন উঠে দাঁড়াল। ওরা এখন এসেছে একটা কমিউনিটি সেন্টারে। ঘরটাতে সাউন্ড সিস্টেম আছে। মনে হয় মিটিং টিটিং হয় এখানে। সারি সারি চেয়ারে বসে আছে অনেকগুলো ছেলে। এদের সবার হাতে ক্যামেরা দেখা যাচ্ছে।

মামুন চারিদিকে তাকাল। ইমতিয়াজ কে দেখা যাচ্ছে না। এতক্ষণ বিরক্ত হলেও। মামুনের এখন ভালো লাগছে! ইমতিয়াজ লোকটা ভালোই কাজের মনে হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে সব কিছু ব্যবস্থা করে ফেলবে মামুন আশা করেনি। ও ভেবেছিল লম্বা সময় বসিয়ে বলে দিবে,” স্যার আজ তো পারা গেল না! আগামীকাল আসেন সবাই কে পাবেন।”

ইসমাইল দ্রুত একটা প্রোজেক্টর রাশিদা বেগমের ছবিটা সেট করে ফেলল। মামুন আর শাহাদাত বসে আছে সামনের সারির চেয়ারে। সামনে জয়ী আর ইসমাইল।

এ সময় ইমতিয়াজ ঢুকল। মামুনের সামনে এসে বলল, “মোটামুটি সবাই এসেছে স্যার।”

মামুন একটু হেসে বলল,” ধন্যবাদ ইমতিয়াজ ভাই। খুব ভালো একটা কাজ করেছেন। ”

ইমতিয়াজ একটু উচ্চ স্বরে হেসে বলল,” কী যে বলেন স্যার। আপনাদের সাহায্য করা তো আমাদের দায়িত্ব। আইনের জন্য যে কোনো সাহায্য করতে আমরা রেডি স্যার।”

সবাইকে ছবিটা ভালো করে দেখার জন্য বলা হয়েছে। ইসমাইল বলল,” আপনারা সবাই শুক্রবারের ভিডিও ফুটেজ চেক করে দেখেন। এই মহিলা কোন বাসে চড়েছে?”

সবাই ভিডিও দেখছে। ক্যামেরায় এভাবে ভিডিও চেক করাটা একটু কঠিন। অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর। একজন দাঁড়িয়ে বলল, “স্যার পেয়েছি। ”

চলবে–
ভাড়াটিয়া-১৬

শ্যামলি পরিবহনের একজন ক্যামেরাম্যান উঠে দাঁড়াল। ইসমাইল লোকটার আওয়াজ শুনে কাছে এগিয়ে গেল।

ক্যামেরার ভিডিওতে রাশিদা বেগম নামের মহিলা কে দেখা যাচ্ছে।

উনি বসে আছেন ঢাকা-রাজশাহির শ্যামলি পরিবহনের একটা বাসে। সিট নাম্বার ফোর ডি।

মামুন এবার উঠে দাঁড়িয়ে সামনে আসল। সবাইকে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ দিলো।

সবাই বের হয়ে গেল। শুধু শ্যামলি পরিবহনের ক্যামেরাম্যান কে থাকতে বলা হলো।

আর কয়েকবার ভিডিওটা চালিয়ে দেখে নিল মামুন। এটাই সুইটির সাথে পাওয়া মহিলার ছবি। যার নাম রাশিদা বেগম। অবশ্য এটা ওনার আসল নাম কি-না কে জানে? এদের নাম তো আর একটা থাকে না!

মামুন বলল, “টিকিট কাটার সময় আপনারা যাত্রীর মোবাইল নাম্বার এন্টি করেন না?”

ইমতিয়াজ বলল,” জি, স্যার। টিকিট কাটার জন্য যাত্রীর মোবাইল নাম্বার নেয়া হয়।”

শ্যামলি পরিবহনের কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল। রাশিদা বেগমের কোনো মোবাইল নাম্বার নেই! কাউন্টারের লোকটা কিছুই বলতে পারল না। কী করে মোবাইল নাম্বার ছাড়া টিকিট কেটেছে।

কাউন্টারের লোকটা বলল, স্যার মহিলা বলেছেন,” ওনার সাথে কোনো মোবাইল নাই।”

“টিকিটে নাম কী লেখা হয়েছে? ”

কাউন্টারের লোকটা চেক করে জানাল। “নাম রাশিদা বেগম দেয়া হয়েছে স্যার।”

মামুন বলল,” এই গাড়ির সুপারভাইজার কে ছিলো?”

কাউন্টার থেকে জানাল,” লতিফ।”

“লতিফ এখন কোথায় আছে?”

“আমি জানি না স্যার।”

ইমতিয়াজ বলল,” স্যার আপনারা আমার অফিসে এসে বসেন। আমি লতিফ কে আনার ব্যবস্থা করছি।”

অফিস রুমে এসে বসে আছে মামুনরা। অফিসের সহকারী মঞ্জু নাস্তার ব্যবস্থা করেছে। শাহাদাত কে দেখা বুঝা যাচ্ছে প্রচন্ড বিরক্ত! জয়ী আর ইসমাইল বসে গল্প করছে। মামুন গম্ভীর হয়ে বসে আছে।

এতটুকু বুঝা যাচ্ছে। রাশিদা নামে এই মহিলা রাজশাহী গেছেন। রাজশাহী কোনো ছোটো-খাটো জায়গা না। কোন জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে বসে আছে কে জানে?

সুপারভাইজার লোকটার কাছে থেকে জানা যাবে কোন স্টেশনে নেমেছে। যদি তার মনে থাকে।

তিনটা বেজে গেছে। এখনো পর্যন্ত লাঞ্চ করা হয়নি। শাহাদাত প্রচন্ড রকমের বিরক্ত হয়ে বসে আছে। ক্ষুধা তার মোটেই সহ্য হয় না। এখানে আসার পর কয়েক গ্লাস পানি আর দুইকাপ চা খাওয়া হয়েছে। ক্ষুধা অবশ্য মামুনের লেগেছে। কিন্তু কিছু বলছে না। কাজটা শেষ না করে উঠা ঠিক হবে না।

অবশ্য এখানে কোনো রেস্টুরেন্টে খাওয়া যায়। সুপারভাইজারের সাথে কথা বলার পর যেতে হবে।

ইমতিয়াজ ফিরে এলো ঘন্টাখানেক পরে সাথে লতিফ নামের সুপারভাইজার। ইমতিয়াজ এসেই বলল, “স্যার, লাঞ্চের সময় হয়েছে অনেক আগে। কিছু খেয়ে নিলে ভালো হতো না?”

মামুন কিছু বলল না। একটু হেসে বলল, “সুপারভাইজার কে পাওয়া গেছে”

“জি,স্যার এই হলো সেই সুপারভাইজার লতিফ।”

লতিফ কে একটু ভিতু মনে হচ্ছে। কেমন আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইমতিয়াজ পরিচয় বলার পর। সামনে এসে সালাম দিলো।

মামুন ছেলেটার দিকে তাকাল। একটু গভীরভাবে দেখে নিলো। পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের একটা ছেলে। লম্বায় পাঁচ ফুট সাত আট ইঞ্চি হবে। একটু ময়লা গায়ের রং। নীচের দিকে তাকিয়ে আছে।

মামুন লতিফের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি শুক্রবার ১২৯৫৭৩ নাম্বার গাড়িটা নিয়ে রাজশাহী গিয়েছিলেন? ”

“জি, স্যার।”

ইসমাইল ল্যাপটপে রাশিদা বেগমে ছবিটা বের করল।

“দেখুন তো মহিলা কে চিনেন কি-না?”

লতিফ অনেকটা সময় ধরে ল্যাপটপের স্কিনের দিকে তাকিয়ে রইল। চিনতে পারছে বলে মনে হচ্ছে না।

ইসমাইল বলল, “এই মহিলা শুক্রবার আপনার বাসে রাজশাহী গেছেন। ওনার সিট নাম্বার ছিলো ফোর ডি। এবার চিনতে পারছেন?”

একটা ছোটো শ্বাস ছেড়ে লতিফ বলল, “হ্যাঁ, মনে পড়ছে স্যার।”

“গুড। এবার বলেন তো এই মহিলা কোন স্টেশনে নেমেছে? ”

লতিফ কে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। সে কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করছে। কিছুটা সময় ভেবে বলল,” স্যার বিনোদনপুর স্টেশনে নেমেছে। ”

ইসমাইল লতিফের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি শিউর? ”

“জি,স্যার।”

“কী করে শিউর হচ্ছেন? ”

“স্যার, উনি বারবার আমাকে বিনোদনপুর স্টেশন আসছে কিনা জিজ্ঞেস করেছেন। তাই মনে আছে।”

“কয়টার সময় নামিয়ে দিয়েছেন?”

“স্যার রার দশটার দিকে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান।”

মামুন উঠে দাঁড়াল।

ইমতিয়াজ বলল,”স্যার লাঞ্চটা করে যান।”

মামুন ইমতিয়াজের দিকে আলগা হাসি দিয়ে বলল, “ধন্যবাদ।”

ইমতিয়াজ কী বলবে বুঝতে পারছে না! এই মানুষ অন্যরকম। অন্য পুলিশের মতো না। তাই কিছু না বলে হালকা হাসি দিলো।

একটা রেস্টুরেন্টে আসল চারজন। একটা টেবিলে বসেছে। ওয়েটার কে ভাত দিতে বলল মামুন।

জয়ী বলল, “রাজশাহী যেতে হবে স্যার?”

“এ ছাড়া উপায় তো নেই জয়ী! অবশ্য বলা যাচ্ছে না। বিনোদনপুরে পাওয়া যাবে কি-না। দেখা যাক কী হয়। ইসমাইল তুমি একটা প্লান করে ফেল।”

ইসমাইল বলল,” মোবাইল নাম্বারটা থাকলে ট্রেস করাটা সহজ হতো স্যার।”

শাহাদাত বলল, “ক্রাইম সিরিয়াল দেখে অপরাধীরা অনেক কিছুই এখন জানে। কী করে পুলিশ ওদের ধরে! তাই আগ থেকেই সাবধান হয়ে যায়।”

ইসমাইল বলল, “কিছু ভুল তো করেই। ”

“বেশি সর্তক হয়ে সাধারণ জিনিস মনে থাকে না। এখনকার অপরাধীরা সাধারণ ভুল করে।”

ওয়েটার সাদা ভাত নিয়ে এসেছে। সাথে কয়েকপ্রকার ভাজি। সবাই প্লেটে ভাত তুলে নিলো।

ওয়েটার বলল, “কী তরকারি দিবো স্যার?”

শাহাদাত বলল,” আমাকে গরু দে। ভালো দেখে দিবি।”

মামুন মনে হয় সবজি দিয়েই খাবে। জয়ী আর ইসমাইল মুরগির মাংস নিলো।

রাজশাহী তে জয়ী প্রথম এসেছে। এই শহরটা বেশ সাজানো গুছানো। ঢাকার মতো নোংরা না। খুব ভালো লাগছে ওর। মামুন অবশ্য কয়েকবার এসেছে রাজশাহীতে।

চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here