ভাড়াটিয়া -৫,৬,৭
নাবিল মুহমুদ
৫
রুবিনার বাবা তো মানা করে দিলেন। শাহিন ভেবেছিলো। রুবিনা ইউনিভার্সিটিতে পড়া মেয়ে। ও নিশ্চয়ই বাবার অন্যায় কথা মেনে নিবে না।
ওদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক চলছিলো বলা যায়। অনার্স শেষ হওয়ার পর হুট করে রুবিনা কোথায় যেন হারিয়ে গেল!
ওদের ঠিকানায় গিয়ে দেখা গেল ওখানে ওরা থাকে না। রুবিনা তো শাহিন কে বলতে পারত। কেন যে কিছুই বলল না কে জানে?
ছেলের অবস্থা বুঝতে পেরে আমজাদ খান ওনার বন্ধুর মেয়ে আনোয়ারার সাথে শাহিনের বিয়ে দিয়ে দেন। আনোয়ারা খুব ভালো মনের মানুষ! শাহিন কে আপন করে নেন খুব দ্রুত।
আজ এত বছর পরে রুবিনার মেয়ে শাহিন সাহেবের বাসায় বসে আছে।
শাহিন সাহেব সুইটির কাছে গেলেন। উনা কে দেখে সুইটি দাঁড়িয়ে সালাম দিলো।
“বসো মা।” উনিও সুইটির পাশের সোফায় বসলেন।
“কেমন আছেন আংকেল? ”
“ভালো আছি। তুমি কেমন আছ?”
“জি, ভালো।”
“তা তোমার বাবা মা কেমন আছে?”
” ভালোই আছে।”
শাহিন সাহেব বুঝতে পারছেন না। মেয়েটির মায়ের নাম জিজ্ঞেস করবেন কি-না? এ মেয়ে কে দেখে তো মনে হচ্ছে না। নানার সংস্কৃতি ধারণ করে আছে। একে অনেক স্মার্ট মনে হচ্ছে।
শাহিন সাহেব প্রশ্নটা করতে পারলেন না। ওনার খুব ইচ্ছে হচ্ছে সুইটিদের বাসায় যেতে! রুবিনা কে দেখতে। তা বোধহয় সম্ভব না। আনোয়ারা কে বলতে হবে এদের কে বাসায় দাওয়াত দিতে। তাহলে দেখা হয়ে যাবে। বা রুবিনা নিশ্চয়ই আগের মতো পর্দা করে না। ছাদে-টাদে গেলে দেখা হতে পারে।
আনোয়ারা একটা ট্রেতে চা আর কিছু পিঠা নিয়ে এলেন। ঢাকা শহরে বড়ো হলেও আনোয়ারা খুব ভালো পিঠা বানাতে পারেন। বিকালের নাস্তায় হাতে বানানো পিঠাই খাওয়া হয়।
ট্রেটা টি টেবিলে রেখে আনোয়ারা বললেন, “নাও মা।”
সুইটি একটু লজ্জিত মুখে একটা পিঠা হাতে তুলে নিলো। আলত করে একটু কামড় দিলো। যে ভাবে মানুষ প্রেমিকা কে চুমু খায়। না, পিঠা খেতে বেশ ভালো লাগছে! শাহিন সাহেবও একটা পিঠা নিলেন। এই পিঠা ওনার খুব পছন্দ!
শাহিন সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,” তুমি কীসে পড় মা?”
“অনার্স থার্ড ইয়ার।”
“কোন সাবজেক্ট? ”
“বাংলা।”
“বাঃ! বাংলা সাহিত্যের একজন ছাত্রী পাওয়া গেল। সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা শুনা যাবে। ”
ওনার কথা শুনে সুইটি একটু হাসল। মনে হচ্ছে সুইটি কত সাহিত্য বুঝে! পাশ করার জন্য যতটুকু পড়তে হয় ততটুকু পড়ে। তাছাড়া এ সব কবিতা-টবিতা ভালোও লাগে না!
আনোয়ারার খুব ভালো লাগছে! শাহিন মেয়েটা কে পছন্দ করেছে। খুব আগ্রহ নিয়ে কথা বলছে। অবশ্য সুইটি পছন্দ করার মতো একটা মেয়ে।
সুইটি উঠে দাঁড়াল। মিষ্টি করে হেসে বলল, “আজ তাহলে আসি আন্টি। ”
“দুপুরে খেয়ে যাও।”
হালকা হেসে বলল, “আরেকদিন আসব।” আসি আংকেল।”
শাহিনের মেয়েটার সাথে গল্প করতে বেশ লাগছিল। মেয়েটা ওর মায়ের মতো খুব সুন্দর করে কথা বলে। অবশ্য রুবিনা কে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। সন্ধ্যার সময় একবার কি যাবে ওদের বাসায়? বাড়িওয়ালা হিসাবে সে তো যেতেই পারে। নাকি ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে ঠিক বুঝতে পারছেন না।
আনোয়ারা বললেন,” কেমন লাগল মেয়েটাকে? ”
শাহিন আনোয়ার মুখের দিকে তাকালেন। কেমন আত্মতুষ্টির হাসি ওর মুখে।
“ভালোই তো।”
“শুধু ভালো!”
“না, অসম্ভব ভালো বলা যায়।”
“তোমার পছন্দ হয়েছে? ”
একটু অবাক হয়ে আনোয়ারার দিকে তাকিয়ে বললেন, “কীসের কথা বলছ তুমি?”
“হ্যাঁ, তুমি যা ভাবছ তাই। দুইজন কে ভালো মানাবে। ”
“তোমার সব কিছু তে বাড়াবাড়ি! চেনা নাই জানা নেই। সব কিছু ভেবে বসে আছ।”
“আঃ! খবর নিবো। মেয়ে তো আর আকাশ থেকে উড়ে আসে নাই। চোখের সামনেই আছ।”
“সে না হয় নিলা। মেয়ে যদি তোমার ছেলে কে পছন্দ না করে?”
“কেন করবে না! আমার ছেলে খারাপ কীসে শুনি?”
“মেয়ের তো পছন্দের ছেলে থাকতে পারে, কি পারে না?”
আনোয়ারার মুখটা একটু মলিন হয়ে গেল! আজকালকার ছেলে-মেয়েরা বয়স না হতেই সম্পর্ক করে ফেলে। ছোটো ছোটো মেয়েরা প্রেম ট্রেমে পড়ে যায়। তার ছেলেটাই একটু ব্যতিক্রম। এত বয়স হয়ে গেছে এখনো এ সবে জড়ায়নি।
চলবে–
ভাড়াটিয়া-৬
রায়হান ঘরে শুয়ে আছে। এ সময়টাতে সাধারণত ও শুয়ে থাকে না। দুপুরে খাবার আগের সময়টাতে বই-টই পড়ে সময় কাটায়।
এ সময়টা কেমন যেন কোনো কিছুই করতে ভালো লাগে না! বাইরে যাওয়া যায় না। ঘুমানো যায় না। গল্পের একটা বই নিয়ে অবশ্য পড়া যায়। গত কয়দিন ধরে একটা উপন্যাস পড়ছে, বইটা শেষ করা যায়। কিন্তু এখন পড়তেও ইচ্ছে করছে না।
আনোয়ারা ছেলের ঘরে উঁকি দিলেন। এ সময় ছেলে কে শুয়ে থাকতে দেখে একটু অবাক হলেন। জ্বর-টর হলো কি-না! আনোয়ারা ছেলের ঘরে ঢুকলেন। রায়হান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
আনোয়ারা ছেলের পাশে বসে আলত করে কপালে হাত রাখলেন। মায়ের হাতের শীতল স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলল রায়হান।
মায়ের দিকে তাকিয়ে হালকা একটু হাসি দিলো।
“কী হয়েছে বাবা?”
“কিছু হয়নি তো মা।”
“অসময় শুয়ে আছিস! শরীর খারাপ লাগছে? ”
“না, মা। আমি ঠিক আছি।”
“উঠে গোসল কর।”
“দুপুরে কি তোমার কোনো গেস্ট আসবে?”
“হ্যাঁ।” আনোয়ারা রহস্যময় হাসি দিলেন।
রায়হান কিছু বলল না। সে জানে, মা মানুষ কে খাওয়াতে ভালোবাসে। প্রায়ই সময়ই অজানা মানুষজন ধরে নিয়ে আসে খাওয়ার জন্য। কিন্তু আজ কেন জানি মনে হচ্ছে বিশেষ কেউ আসবে। মা কেমন করে যেন হাসছেন!
“গোসল করে ডাইনিং আয় তাড়াতাড়ি। ” ছেলেকে তাগাদা দিয়ে চলে গেলেন আনোয়ারা।
আজকের আয়োজনটা করা হয়েছে শাহিন সাহেবের কথায়। সুইটির পরিবারের সাথে পরিচয় হওয়ার জন্য। আসলে তিনি রুবিনা কে দেখতে চাচ্ছেন। আচ্ছা এত বছর পর রুবিনা তাকে দেখে কী করবে?
সবার সামনে নিশ্চয়ই না চেনার একটা ভান করবে। অভিনয় ভালোই করতে পারবে মনে হচ্ছে। মেয়েরা বিয়ের পর অভিনয়টা ভালোই শিখে যায়। কত ধরনের অভিনয় মেয়েদের করতে হয়।
ডাইনিং রুমে এসেই রায়হান একটা ধাক্কা খেল! সেই মেয়েটি বসে আছে। সাদার ওপরে কালো ছাপের একটা জামা পরে আছে। দেখতে মেয়েটাকে বেশ সুন্দর লাগছে!
মেয়েটার পাশে একজন বয়স্ক মহিলা। বয়স দেখে মনে হয় মেয়ের মা হবে। যদিও চেহেরায় কোনো মিল নেই। রায়হান বুঝতে পারছে না, মা এ মেয়েকে পেলো কোথায়!
সুইটির মা কে দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছেন শাহিন সাহেব। এটা কী করে সম্ভব! এতো রুবিন না। ওনার নাম না-কি রাশিদা। উনি এখনো ঘোরের মধ্যে আছেন। সুইটি মেয়েটার চেহারা রুবিনার মতো। তবে কি তিনি রুবিনার চেহেরা ভুলে গেছেন! এটা সম্ভব না। রুবিনার মুখ উনি কোনোদিন ভুলতে পারবেন না।
আনোয়ারা বেগম রায়হান কে ডাকলেন, “আয় বাবা।”
রায়হান মায়ের পাশের চেয়ার বসল। মুরুব্বিদের সাথে দেখা হলে সালাম দিতে হয়। রায়হান সালাম দিলো না। কারণ আসলাম সাহেব ও রাশিদা বেগম খাবার খাচ্ছেন। খাবারের সময় সালাম দেয়া নিষেধ।
আনোয়ারা বেগম বললেন, “এ হলো আমার ছেলে রায়হান।”
সুইটি আড় চোখে একটু তাকাল। রায়হানের মনে হলো মেয়েটা ওকে দেখে ঠোঁট বাঁকিয়েছে!
“এ হলো আসলাম সাহেব আর রাশিদা বেগম। আর ও হলো সুইটি। ওনারা আমাদের তিনতলায় উঠেছেন।”
আসলাম সাহেব মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, “কেমন আছ বাবা?”
রায়হান একটু লাজুক হাসি দিয়ে বলল, “ভালো। আপনি কেমন আছেন? ”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা।”
সুইটি রায়হানের দিকে মিটিমিটি হাসছে। ছেলেটা কী লজ্জা পায়! পায়ে দিয়ে একটা গুঁতা দিলে কেমন হয়? বোকাটা আবার বলে দিবে না তো! বলা যায় না। এ সব মিচকা শয়তানগুলির বিশ্বাস নাই। থাক পরে দেখা যাবে। তবে বলদটা কে সুইটির পছন্দ হয়েছে!
খাবারের আয়োজন ভালো। অনেক পদের আয়োজন করা হয়েছে। কয়েক প্রকার ভর্তাও আছে। এত সব আয়োজন কেন করেছে কে জানে? আসলাম সাহেবের ভালো লাগল। পরিবারটা খুবই ভালো! তিনি যতটুকু শুনেছেন তারচেয়ে বেশি ভালো মনে হচ্ছে।
ছেলেটাকেও খারাপ লাগছে না। সহজ সরল ছেলে। দেখতেও বেশ স্মার্ট। এত বড়োলোকের ছেলে এমন হয়!
“আপনি তো ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে যাবেন তা-ই না?”
প্রশ্নটা শুনে রিকশায় বসা রায়হান ঘুরে তাকাল। সুইটি দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। আজ পরেছে একটা কালো রংয়ের শাড়ি। কালো রংয়ের শাড়িতেও মেয়েটা কে বেশ ভালো লাগছে! এ মেয়ে যা পরে তাতেই মনে হয় ভালো লাগে!
কিছু মানুষ আছে এদের সব পোশাকে ভালো লাগে! আবার এমন মানুষ আছে এদের কোনো পোশাকেই ভালো লাগে না! যাই পরে দেখলেই মনে হয় এমন বাজে একটা জামা কী করে পরল!
“হ্যাঁ, কেন বলুন তো?”
একটু হাসি দিয়ে বলল,” আমিও অদিকে যাব।”
“ও আচ্ছা। ”
সুইটি রিকশার কাছে এসে বলল,” সরে বসুন। আমিও আপনার সাথেই যাব।”
রায়হান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছু বলল না।
“আমার সাথে যেতে কোনো আপত্তি নেই তো?”
রায়হান না সূচক মাথা দুলাল। মুখে কিছু বলল না। এমন সুন্দরী একটা মেয়ে ওর সাথে রিকসায় যেতে চাচ্ছে! যার সাথে এখনো ঠিকমতো পরিচয়ই হয়নি।
“তাহলে এমন শক্ত হয়ে বসে আছেন কেন!”
রায়হান একদিকে চেপে বসল। সুইটি উঠে পাশে বসল। সুইটি মিটিমিটি হাসছে। বলদটা কে দারুণ একটা চমক দেয়া গেল। এ এখন কচ্ছপের মতো হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে। যেন সুইটির দেহের সাথে স্পর্শ হলেই বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে!
“আপনার তো মাস্টার্স শেষ তা-ই না?”
“জি।”
“প্রতিদিন ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে কী করেন? ”
“প্রতিদিন তো যাই না। মাঝেমধ্যে যাই।”
“ও প্রতিদিন যান না! “ঠোঁট টিপে হাসছে সুইটি।
” মাঝে মাঝে কি গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যান?”
“না তো এমনই বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাই।”
“কেন! আপনার বুঝি ব্রেকআপ হয়ে গেছে! ”
“একটু বিরক্ত হলো রায়হান। ব্রেকআপ হবে কেন! আমি প্রেম-ট্রেম করিনি।”
“কী বলেন! আপনার মতো এমন সুইট ছেলেকে কেউ পছন্দ করল না!”
বড়ো চোখে সুইটির দিকে তাকাল রায়হান। অবশ্য কিছু বলল না। সুইটি ঠোঁট টিপে হাসছে।
রিকশা চলে এসেছে টি এস সির সামনে। রায়হান নেমে রিকশাওয়ালা কে ভাড়া দিলো। সুইটির দিকে তাকিয়ে বলল, “আসি।”
“আপনি কখন বাসায় যাবেন?”
“ঠিক নেই। কেন বলুন তো?”
“একসাথে যাওয়া যেত। আমরা তো একই বাড়িতে থাকি তা-ই না?”
রায়হান সুইটির দিকে তাকিয়ে রইল কিছুটা সময়। মেয়েটা কি চায়? ঠিক বুঝতে পারছে না!
চলবে–
ভাড়াটিয়া -৭
শাহিন সাহেবের মনখারাপ! মানুষের মনখারাপ হতে কারণ লাগে না! কারণ ছাড়াই এ একটা মাত্র রোগ মানুষের দেখা যায়। শাহিন সাহেবের মনখারাপের অবশ্য একটা কারণ আছে। তিনি খুব আশা করেছিলেন এত বছর পরে রুবিনা কে দেখবেন। কিন্তু ওনার আশা পূরন হয়নি!
আবার আশাভঙ্গের কথা উনি কাউকে বলতেও পারছেন না! আনোয়ারা কে তো আর বলা যাবে না। সুইটি নামের মেয়েটির মতো সুন্দরী আমার একজন প্রেমিকা ছিলো। আমার বাবার হলের ব্যবসা থাকার কারণে আমাদের বিয়ে হয়নি! এতবছর পরে রুবিনার কথা খুব মনে পড়ছে।
ফাতেমা চা নিয়ে শাহিন সাহেবের রুমে আসল। ওকে দেখে শাহিন সাহেব বললেন, “কী রে মা চা নিয়ে এসেছিস?”
“হ্যাঁ, তোমার কী মাথা ব্যথা করছে?”
“একটু একটু করছে! তোর ব্যস্ত হতে হবে না।”
ফাতেমা চায়ের কাপটা শাহিন সাহেবের সামনের টি-টেবিলে রাখল। শাহিন সাহেবের পিছনে গিয়ে দাঁড়াল।মাথায় আলত করে হাত দিয়ে বলল,” মাথা বানিয়ে দিই বাবা?”
শাহিন সাহেবের মাথা ব্যথা নেই। মেয়েটা এমন করে বলল, মনে হলো মাথা ব্যথা নেই এটা বললে ওর খারাপ লাগবে! মাঝেমধ্যেই ফাতেমা শাহিন সাহেবের মাথা বানিয়ে দেয়। ওনার খুব ভালো লাগে! সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হচ্ছে মাথা বানানোর সময় ফাতেমা গুটর গুটর করে গল্প করে। মেয়েটার গল্প শুনতে খুব ভালো লাগে!
শাহিন সাহেব খেয়াল করেছেন একই কাজ ফাতেমা আনোয়ারার সাথেও করে। এবং আনোয়ারাও মেয়েটা কে খুব পছন্দ করে।
মেয়েটা ওনার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের মেয়ে। বাবা মা দুইজনেই মারা গেছে! প্রথম যখন ফাতেমা কে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। শাহিন সাহেবের মনে হয়েছিল আনোয়ারা মেয়েটা কে সহজভাবে নিবে না। কাজের মেয়ের মতো ব্যবহার করবে।
উনি চাননি ফাতেমা কাজের মেয়ের মতো থাকুক। ওনাকে অবাক করে দিয়ে আনোয়ারা মেয়েটা কে এত আপন করে নিলো। যা উনি কল্পনাও করেননি!
“তোর রেজাল্ট কবে দিবে রে মা?”
“সামনের সপ্তাহে দেয়ার কথা।”
ফাতেমা আলত করে চুল টেনে দিচ্ছে। শাহিন সাহেব চোখ বন্ধ করে আছেন।
“কোচিং-এ যাচ্ছিস ঠিক মতো?”
“হ্যাঁ।”
“বুঝলি মা। জীবনের এ সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একবার ভালো একটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারলে আর চিন্তা নাই!”
“চিন্তা নাই কে বলল বাবা! ভালো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেই হবে। ভালো রেজাল্ট করতে হবে না? তারপর পাশ করলেও তো হবে না! ভালো চাকরি পেতে হবে। চিন্তা ছাড়া জীবন নাই বাবা!”
“তা ঠিক বলেছিস রে মা। একবার চিন্তা শুরু হলে আর শেষ হয় না! একটা শেষ হলে আরেকটা শুরু হয়! এমন করে চলতেই থাকে! সব কাজের চিন্তা শেষ হলে শুরু হয় মরন চিন্তা!”
“তোমার মাথা ব্যথা এখনো আছে?”
“না রে মা। এখন মাথাটা খুব হালকা লাগছে। তোর মা কই?”
“মা গেছে তিনতলার বাড়াটিয়ার বাসায়।”
“তুই কি জানিস তোর মা চায়। সুইটি মেয়েটার সাথে রায়হানের বিয়ে দিতে।”
“হ্যাঁ।”
“মেয়েটা কে তোর কেমন মনে হয়?”
মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দর। ফাতেমার কেন জানি মনে হয় মেয়েটা ভালো না। সে অবশ্য ভালো না লাগার কারণটা জানে না। তাই কিছু বলল না।
“ভালোই তো।”
“তোর কি মনে হয় রায়হান মেয়েটাকে পছন্দ করবে?”
“ভাইয়া মেয়েটা কে পছন্দ করে বাবা।”
শাহিন সাহেব অবাক হওয়া কন্ঠে বললেন, “তা-ই নাকি! তোর সাথে আলাপ হয়েছে বুঝি?”
“না, ভাইয়া কারো সাথে আলাপ করে না।”
আদুরে কন্ঠে বললেন, ” তুই কেমন করে বুঝলি?”
“মেয়েরা অনেক কিছু বুঝতে পারে বাবা।”
“তাহলে তো ভালোই হলো। মেয়েটা কে আমার ভালোই লাগে! মেয়েটার মধ্যে কেমন একটা মায়া আছে।”
ফাতেমা কিছু বলল না। অবশ্য ওর বলার মতো কিছু নাই। ও দেখেছে রায়হান ভাই মেয়েটার কে নিয়ে প্রায়ই ঘুরতে যায়। ওর ধারনা দুইজনের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে গেছে। মেয়েটা দেখতে খারাপ না। বাবার কথা ঠিক চেহেরায় কেমন একটা মায়া আছে। কেন জানি তার মন বলছে মায়াটা আসল না!
——
পাঁচটা বাজেই তো আশার কথা বলেছিল সুইটি। এখন বাজে পাঁচটা চল্লিশ! পাক্কা পাঁচ পঞ্চাশ মিনিট ধরে বসে আছে রায়হান। এত সময় ধরে অপেক্ষা করতে কার ভালো লাগে? তবে রায়হানের কেন জানি খুব একটা খারাপ লাগছে না! ওর কেন জানি মনে হচ্ছে আজ সুইটি আসবেই না।
রমনায় বসে না থেকে পাবলিক লাইব্রেরির দিকে গেলে ভালো হতো। সুইটি না আসলেও সমস্যা হতো না। লাইব্রেরিতে বসে বসে বই পড়া যেত। অবশ্য অপেক্ষার সময় বই পড়া যায় না! মনের মধ্যে কেমন একটা অস্থিরতা কাজ করে!
রায়হান সিদ্ধান্ত নিলো। আর বিশ মিনিট বসে থাকবে। ছয়টা বাজলে বাসায় চলে যাবে।
সুইটি মেয়েটা কেমন জানি! হুট করে বলল,” আপনার সাথে জরুরি কথা আছে। পাঁচটার সময় রমনায় থাকবেন।”
আসবে না ভেবেও না এসে পারল না রায়হান। কেন জানি মেয়েটা কে ওর খুব ভালো লাগে! হ্যাঁ, মেয়েটা একটু গা ঘেঁষা।
সুইটি কি প্রেমের কথাটথা বলবে না-কি কে জানে? এ মেয়ের বিশ্বাস নেই! প্রথম দিন আচানক রিকশায় উঠে বসল! এরপরেও বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে ক্যাম্পাসে। বাসায় তো প্রায়ই সময় চলে আসে।
সারাজীবন প্রেম না করে রায়হানের সুইটির কথা ভাবতে ভালো লাগে! সুইটির সাথে একটা সম্পর্ক হলে খারাপ হয় না।
ছয়টা বাজার পাঁচ মিনিট আগে সুইটি উপস্থিত হলো। আজ একটা সাদা শাড়ি পরেছে। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে একটা সাদা পরী নেমে এসেছে! যে কোনো সময় শাড়ির মধ্যে থেকে দুইটা ডানা বের করে উড়াল দিবে!
সুইটি কাছে এসে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, “কখন এসেছেন? ”
“পাঁচটার সময়।”
“স্যরি! আপনাকে লম্বা সময় অপেক্ষা করালাম। আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আসবেনই না।”
রায়হান কিছু বলল না। সুইটির দিকে তাকিয়ে রইল।
“এখানেই বসি কেমন?”
রায়হান হালকা হেসে মাথা নাড়াল। সুইটি রায়হানের পাশেই বসল। কিছু সময় নীরব কাটল। কেউ কিছু বলল না।
“আপনা কে যে কথাটা বলার জন্য আসতে বলেছি।”
রায়হান সুইটির দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। রায়হান খুব খুশি!
“দেখুন, আমরা আপনাদের বাড়িতে এসেছি মাসখানেক হয়েছে। আমার সম্পর্কে আপনার তেমন কিছু জানেন না। কিন্তু আপনি কি জানেন? আপনার মা আমাদের নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখছেন! ”
“খুব বেশি কিছু জানার দরকার?”
“অবশ্যই দরকার। না জেনে একটা সম্পর্ক হয়?”
“অনেক জানার পরও তো কত সম্পর্ক টিকে না তা-ই না?”
সুইটি অবাক দৃষ্টিতে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলল,” তারমানে আন্টির কর্মকান্ড আপনি সব জানেন! ”
“তা ঠিক না। আমি কিছুই জানতাম না। পরে শুনেছি।”
“আন্টিকে নিষেধ করেননি কেন?”
রায়হান কোনো জবাব দিলো না। আবার আলগা হাসি দিলো। রায়হান মায়ের এ সব ব্যাপার জানত না। কিন্তু জানার পরও খারাপ লাগেনি। সুইটি মেয়েটাকে ওর ভালোই লাগছে। তাই মা কে সাপোর্ট দিয়েছে বলা যায়।
“আপনার পছন্দের কেউ আছে?”
একটু হেসে বলল, “না তা নেই। তবুও এমন হুট করে হয় বলেন!”
“কেন হয় না? পৃথিবীর অনেক কিছুই হঠাৎ হয়ে যায়। অবশ্য আপনার আপত্তি থাকলে বলুন।”
সুইটি কিছু বলল না। লাজুক হাসি দিলো। রায়হান যা বুঝার বুঝে গেল। “তাহলে তো মা কে বলতে হয় সব কিছু দ্রুত করতে।”
“আপনিও তো দেখি আন্টির চেয়ে কম না!” একটু লজ্জিত হলো সুইটি।
চলবে–