ভিতর_বাহির
পর্ব :- ৪+৫+৬
শাহরিয়ার
সোহান আমাকে ক্রশ করে যেতেই আমি রিয়াদকে বললাম ভাইয়া হয়েছে বের হয়ে গেছে পোকা।
রিয়াদ হাত সরিয়ে নিলো। আমি ফুচকা শেষ করে রিয়াদকে ধন্যবাদ বলে বিদায় নিলাম।
বাসার দিকে যাচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি এবার কেমন লাগে সোহান বোঝবে। ভাবতে ভাবতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করলাম। চিন্তা করতে শুরু করলাম রিয়াদের সাথে আর একটু মজা করা যায়, ভেবে রিয়াদকে কল দিলাম।
রিং বাজতেই রিয়াদ কল ধরে কি ব্যাপার আপনার জন্য কখন থেকে অপেক্ষা করছি, কয়েকবার কল দিলাম আপনি কল ধরছেন না, আমাকে অপেক্ষা করাচ্ছেন অথচ আসতেছেন না।
কে বললো আমি আসিনি? আমিতো এসেছিলাম,
আচ্ছা আপনি কেমন মানুষ বলুনতো আপনাকে আমি আসতে বলছি আর আপনি অন্য মেয়ে নিয়ে সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। আপনারা ছেলে মানুষরা পারেন ও বটে।
রিয়াদ বলে উঠলো এই কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলছেন। ঐটা আমার ছোট বোনের বান্ধবি ওর কোচিং সেন্টার এখানেই আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ও কোচিং থেকে বের হয়েছে আর দেখা হয়ে গিয়েছে। আপনাকে কল দিলাম ধরলেন না তাই ওর সাথে বসে বসে কথা বলছিলাম।
দেখুন শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করবেন না, একটা মেয়ে কোচিং এ শাড়ি পড়ে আসে তাই না?
আর আপনি যে মেয়েটার গালে মুখে হাত দিয়েছেন তা কি আমি দেখিনি কি ভেবেছেন আপনি এগুলা কি আমি বুঝি না।
রিয়াদ আরে ওর চোখে পোকা পড়েছিল ঐটাই বের করে দিয়েছিলাম, আপনি এখন কোথায় আছেন বলেন আমি দেখা করবো।
কোন দরকার নেই, যদি দেখা করার প্রয়োজন মনে করি আমিই আপনাকে ফোন দিবো আর আপনি আমাকে ফোন দেবার চেষ্টা করবেন না। বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে হাসতে হাসতে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে দুপুরের খাবার খেয়ে নিজের রুমে শুয়ে আছি। এমন সময় সোহান ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে বলতে শুরু করলো আসতে পাড়ি? আমি একটু অবাক হলাম বললাম বাহ ভালতো আমার রুমে ঢুকতে অনুমতি। আসেন স্যার আসেন।
সোহান রুমে ঢুকে বলতে শুরু করলো কি করবো বলেন, ছোট মানুষ যে কখন বড় হয়ে যায় তা বুঝাটা মুশকিল হয়ে গেছে।
আমি এমন ভাব নিলাম যেন কিছুই জানি না, কি বলো তুমি এগুলা তোমার কথারতো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। যা বলবে একটু সহজ করে বলো, ভাল করেইতো জানো আমার মাথায় গবর ছাড়া আর কিছু নেই। তাই কঠিন কথা কম বুঝি। আর বড় হলাম কোথায় আসোতো মাপ দেই দেখি তোমার সমান হয়েছি কিনা। বলেই আমি খাট থেকে উঠে দাঁড়ালাম।
সোহান বলে উঠলো এই ইয়ার্কি করিস আমার সাথে, আগে ভাবতাম তোর মাথায় গবর আছে কিন্তু সে ভাবনাটা ভুল ছিল। এখন বুঝতে পারছি যাকে এতদিন বোকা ভেবেছি সে আসলে গভীর জলের মাছ।
আমি সোহান কে রাগানোর জন্য বললাম এই সব উল্টা পাল্টা ফালতু কথা বলবা না। যা বলবা সোজা করে বলবা।
সোহান বলে উঠলো সোজা করেই বলেছি আর আমি কি বলছি তা তুই ভাল করেই জানিস বুঝিস।
আমি বললাম না জানি না বুঝি না, কি বলতে চাও সরাসরি বলো।
সোহান রেগে বলতে শুরু করলো ঐ ছেলেটা কে যার সাথে পুরো দুপুর কাটিয়ে আসলি? তুই কি ভেবেছিস কেউ কিছু দেখবে না? তার জন্য আজ এতো সেজেগুজে গিয়েছিলি কোচিং এ।
আমি বললাম দেখ না জেনেশুনে উল্টা পাল্টা কথা বলবা না। ঐটা আদিবার ভাই কোচিং থেকে বের হতে উনার সাথে দেখা হয়েছে দুজন ফুচকা খেয়েছি তারপর আমি চলে এসেছি।
শুধু কি ফুচকা খেয়ে দেখা করে চলে এসেছিস? আমি কি দেখিনি ঐই ছেলে তোর সাথে কি করেছে।
কি করেছি আমি হ্যাঁ আর করলেই তোমার কি?
তুমি বলেছো না যদি পাড়ি তবে তোমাকে দেখাতে।
সোহান রেগে গিয়ে আমার উপর হাত তুলতে চেয়েও তুললো না। রাগে দাতে দাত কামড়ে বলতে শুরু করলো এমন কিছু করিস না যাতে এ বাড়ির বদনাম হয়, মনে রাখিস তুই বাড়ির বড় মেয়ে বলেই হাঁটা শুরু করলো। আমিও পেছন থেকে বললাম আমি এমন কিছু করছি না যাতে কারো কোন বদনাম হয়, তুমিও এমন কিছু করো না যাতে করে বাড়ির বদনাম হয়।
বলে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়া এসে খাটে শুয়ে পড়লাম। এই প্রথম আমি সোহানের মুখে মুখে তর্ক করলাম। নিজেকেই নিজের কাছে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে রাগের বসে কি করতে কি শুরু করেছি আমি। এমনটা করা একদমই আমার ঠিক হচ্ছে না। খুব কান্না পাচ্ছে আসলেইতো সোহান ঠিক বলেছে আমি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিলে তা পরিবারের উপর পরবে, আর আমার ছোট অনেক গুলো ভাই বোন আছে।
ভাবছি আর দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে অশ্রু পড়ছে। না এমনটা করা যাবে না। কিন্তু আমি কেন সোহানের কথা শোনবো আর ওকে অন্য কারো সাথে দেখলেই বা আমার কেন খারাপ লাগবে? তবে কি আমি ওকে ভালবেসে ফেলেছি? না না এগুলা আমার ভুল ধারণা কই কখনোতো আমার মনে হয়নি ওকে ভালবাসি ওর প্রতি আমি দূর্বল।
তবে এখন কেন আমার এমন মনে হচ্ছে ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম। সন্ধ্যার পর পর দরজায় টোকার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।
দরজা খুলতেই দেখি সোহান দাঁড়িয়ে আমি বললাম কি কিছু বলবা? সোহান বললো ফ্রেশ হয়ে পড়তে আয়, সন্ধ্যা শেষ হয়েছে। আমি আর কিছু না বলে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে এসে বই নিয়ে পড়তে বসলাম। সোহান ভাইয়া বললো গতকাল যে পড়া গুলো দিয়ে ছিলাম সে গুলো বের কর।
আমি সেই পড়া গুলো বের করে দিতেই সে আমাকে প্রশ্ন করতে শুরু করলো, আমার সব প্রশ্ন গুলোই মুখস্থ হয়েছিল তাই সব গুলোর সঠিক উত্তর দিলাম। সোহান ভাই বললো বাহ তোরতো সত্যি সত্যই অনেক বুদ্ধি হয়েছে সব পড়া একদম মুখস্থ বলে দিলি।
তারপর আবার নতুন করে পড়া দেখিয়ে দিলেন আমি মনোযোগ দিয়ে পড়া বুঝে নিচ্ছি। পড়া বুঝানো শেষ করে সোহান উঠে দাঁড়িয়ে বললো কাল সব পড়া বুঝে নিবো ভুল হয়না যেন।
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি, দেখে সোহান আচমকা আমার হাত চেঁপে ধরলো, আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সোহান বলে উঠলো তুই কি আমার উপর এখনো রেগে আছিস? আচ্ছা সরি আর কখনো তোকে কিছু বলবো না। তবে যা করবি ভেবে চিন্তে করিস। তুই বড় হয়েছিস নিজের সিদ্ধান্ত নিজের নেবার মতত তোর বুদ্ধি হয়েছে।
আমার প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছিল, কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম। মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে আছি এই মুহুর্তে খুব ইচ্ছে করছে সোহানকে জড়িয়ে ধরে একটু কান্না করি। কিন্তু তা পারছি না। আমি বুঝতে পারছি আমি সোহানকে ভালোবেসে ফেলেছি, কিন্তু এটা মোটেও ঠিক না, কারণ আমি জানি সোহান অন্য জনকে ভালোবাসে তাইতো আমার সাথে গতকাল এমন রিয়াক্ট করেছে।
সোহান আমার হাত ছেড়ে দিয়ে আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি দৌড়ে যেয়ে ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে এসে কান্না করতে শুরু করলাম।
আমার ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে, কিন্তু আমার কিছুই করার মত নেই। সব কিছু জেনেও আমি কি করে এতো বড় ভুল করলাম এটাই বু্ঝতে পারছি না। সোহান আমার প্রতি দূর্বল ছিল না যে আমার ওকে ভালবাসতেই হবে তারপরেও কি করে আমি ওকে ভালবেসে ফেললাম এটাই বুঝতে পারছি না।
এখন আমার কি করা উচিৎ আমি কি সোহানকে বলবো সোহান আমি তোমাকে ভালবাসি বিশ্বাস করো তোমার পাশে অন্য মেয়েকে দেখে আমি এমনটা করেছি, অন্য কোন মেয়েকে আমি তোমার পাশে সহ্য করতে পারি না।
ভাবতে ভাবতে দরজায় টোকা পরলো, মা খাবারের জন্য ডাকতে এসেছে। আমি যেয়ে সবার সাথে বসে রাতের খাবার খেতে বসলাম কিন্তু কোন ভাবেই যেন আজ গলা দিয়ে খাবার নামছিল না।
মনে হচ্ছিল আমার সব চেয়ে কাছের জিনিসটাই আমি হারাতে বসেছি। অনেক কষ্টে কিছুটা খাবার খেয়ে আমি রুমে চলে আসলাম।
রুমে এসে ভাবতে শুরু করলাম সোহান যা বলেছে সব সঠিক বলেছে আমাকে কোন ভুল করা যাবে না। আমি ফোন বের করে আদিবাকে ফোন দিয়ে বললাম তোকে একটা কথা বলি,
আদিবা হ্যাঁ বল কি বলবি?
আদিবা তোর কাছ থেকে আমি রিয়াদ ভাইয়ার নাম্বার নিয়ে তাকে ফোন দিয়েছিলাম, তোকে যদি নাম্বার দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে এটা কার নাম্বার প্লিজ তুই বলিস না আমার নাম্বার রিয়াদ ভাইয়া জানে না এটা আমার নাম্বার।
আদিবা আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না আমি বলবো না। আমি আদিবাকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রেখে দিয়ে বই নিয়ে পড়তে শুরু করলাম ব্যস্ত না থাকলে কোন ভাবেই সোহান কে ভুলে থাকা যাবে না। আর আমি চাইনা সোহানের পথে কাটা হয়ে দাঁড়াতে। পড়তে পড়তে এক সময় ক্লান্ত হয়ে গেলাম, বই রেখে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
চলবে…
ভিতর_বাহির
৫ম_পর্ব
শাহরিয়ার
আদিবা আচ্ছা তুই চিন্তা করিস না আমি বলবো না। আমি আদিবাকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রেখে দিয়ে বই নিয়ে পড়তে শুরু করলাম ব্যস্ত না থাকলে কোন ভাবেই সোহান কে ভুলে থাকা যাবে না। আর আমি চাইনা সোহানের পথে কাটা হয়ে দাঁড়াতে। পড়তে পড়তে এক সময় ক্লান্ত হয়ে গেলাম, বই রেখে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
হঠাৎ করে বাহির থেকে রাফির ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে গেল, আমি দরজা খুলতেই দেখি রাফি একটা ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বুঝতে পাড়লাম এটা সোহানের কাজ, আমার রাগ ভাঙানোর জন্য এই কাজ করছে।
আমি রাফির কাছ থেকে ফুল নিয়ে জিজ্ঞাসা করতে যাবো কে ফুল দিয়েছে? তখনি একে একে সব কাজিনরা একটা করে ফুল হাতে নিয়ে এসে আমাকে দিতে শুরু করলো।
আমি কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। সবার শেষে সোহান এসে দুইটা বই আর একটা ফুল হাতে দিয়ে বলতে শুরু করলো শুভ জন্মদিন ইকরা বুড়ি। আমি অবাক হলাম, কি বলবো বুঝতে পারছি না। এই কয়েক দিনের চিন্তায় নিজের জন্মদিনটাই ভুলে গিয়েছিলাম।
একটু পর বাড়ির সকলে আসলো বাবা, মা একটা কেক নিয়ে আসলো। সোহান বলে উঠলো যে কেক কাটার আগে আজ ইকরা আমাদের সবাইকে নেচে দেখাবে। আমি মানা করলাম। কিন্তু সোহান তা শোনলো না, সবাই সোহানের কথায় রাজী হলো।
অবশেষে আমি নাচতে শুরু করলাম, নাচ শেষ হতেই সবাই তালি দিলো আমার কিযে ভাল লাগছিল বলে বোঝাতে পারবো না। আনন্দে মনে হচ্ছিল আমি কান্না করে দিবো।
সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কেক কেটে সকলে মিলে খেলাম। সোহান বলে উঠলো ইকরার জন্মদিন উপলক্ষে আমরা সবাই কাল শিশু পার্কে ঘুরতে যাবো। আমি বললাম না আমার পড়া আছে, বাবা মা বলে উঠলেন একদিন না পড়লে কিছু হবে না।
তারপর একে একে সবাই। রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল, সোহান যাবার আগে বললো এই বই দুইটা আবার কাটিস না, খুব কষ্টের জমানো টাকায় কিনা বাবাতো এখন আর টাকা দিতে চায় না। তুই পড়ে আমাকে পড়তে দিস। বলে বের হয়ে গেল।
আমি কেন সোহানকে ভালবেসেছি তা খুঁজে পাচ্ছিলাম না এই কয়েক দিন। কিন্তু আজ তা খুঁজে পেয়েছি ওর মাঝে সব মানুষকে আপন করে নেবার একটা শক্তি আছে।
আমি হয়তো অযথাই ওর উপর রাগ করি, সবার মনেই আলাদা কাউকে ভাল লাগতে পারে, কাউকে ভালবাসতে পারে, আর আমিতো কখনো সোহানকে বলিনি কিংবা আমি নিজেই বুঝতে পারিনি কখন কিভাবে ওকে ভালবেসে ফেলেছি।
হয়তো ওর দুষ্টমি আর আমার অভিমান গুলোয় ভালবাসায় রূপ নিয়েছে। কিন্তু আমি ওকে ভালবাসতে চাইনা, ওকে ভালবেসে মিছেমিছি কষ্ট পাচ্ছি ভাবতেইই দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। কি করবো বুঝতে পাড়ছিলাম না, এক সময় কান্না করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসতেই সোহান এসে হাজির।
কিরে তোর এখনো হয়নি কখন রেডি হবি আর কখন যাবি?
আমি এতো তাড়া কিসের? মনে হয় কেউ পার্কে অপেক্ষা করছে?
সোহান হুম করছেতো কত সুন্দর সুন্দর পরী আছে পার্কে তারা আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে, তোর কি তাতে?
আমার কিছুই না, আর তাই আমার যাওয়ার ও দরকার নেই বলে খাবার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়াতেই সোহান আমার হাত ধরে টান দিয়ে আবার চেয়ারে বসিয়ে দিলো। বলতে শুরু করলো চুপচাপ খেয়ে রেডি হয়ে আস।
সবাই রেডি হচ্ছে তুই রেডি হলেই বের হবো ততক্ষনে আমিও রেডি হয়ে আসি বলে সোহান টেবিল থেকে উঠে পড়লো।
আমি নাস্তা করে আম্মুর রুমে যেয়ে বললাম আমাকে শাড়ি দিতে। মা কয়েকটা শাড়ি বের করে দিতেই আমি আকাশি রঙ এর একটা শাড়ি বেছে নিয়ে রুমে চলে আসলাম।
শাড়ির পড়া শেষ হলে চোখে হালকা কাজল দিচ্ছি এমন সময় সোহান নীল রঙের একটা পাঞ্জাবী পড়ে পেছনে এসে দাঁড়ালো। আমাকে বলতে শুরু করলো কিরে তোর এখনো হয়নি সবাই রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি বললাম এইতো হয়ে গেছে শুধু কপালে টিপটা পড়বো,সোহান বলে উঠলো দে আমি পড়িয়ে দিচ্ছি বলে টিপটা হাতে নিয়ে আমার কপালে পড়িয়ে দিলো, তারপর কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে শুরু করলো তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
আমি বললাম কেন আগে কি আমাকে সুন্দর লাগতো না?
সোহান হেসে দিয়ে বললো তা লাগতো কিন্তু শাড়ি পড়া অবস্থায় তোকে কখনো এভাবে দেখা হয়নি তাই হয়তো বোঝতে পাড়িনি।
আমি বললাম হয়েছে আর দেখতে হবে না নজর লেগে যাবে তখন আর আমার বিয়ে হবে না।
সোহান হাসতে হাসতে বলতে শুরু করলো বিয়ে করার খুব সখ জাগছে মনে দেখছি।
বড় হচ্ছি আজ হোক কাল হোক এ বাড়িতো ছেড়ে যেতেই হবে।
সোহান কোন কথা বললো না, দেখে মনে হলো ওর মনটা খারাপ হয়ে গেল কথাটা শোনে কিন্তু ওর মন খারাপ হবে কেন? আমিতো ওর শত্রু আমি বিদায় হলেই ওর ভাল।
সোহান বলতে শুরু করলো নে চল এবার সবাই অপেক্ষা করছে। তারপর দুজন রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমে দেখি সবাই দাঁড়িয়ে আছে। আমরা নামতেই সকলে বলতে শুরু করলো বাহ বাহ দুজনকেতো বেশ সুন্দর লাগছে।
আমি একটু লজ্জা পেয়ে গেলাম, তারপর সকলে মিলে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়লাম পার্কে যাওয়ার জন্য।
আমরা সব কাজিনরা একটা গাড়িতে আর বাবা চাচারা আর একটা গাড়িতে। গাড়িতে উঠেই সবাই হইচই শুরু করে দিলো। সবাই মিলে বললো সোহাকে গান গাইতে, সোহান বললো না এখন পারবো না।
আমি বললাম না গাইতে হবে, কে জানে আগামী বছর তোমাদের সাথে জন্মদিন পালন করতে পাড়ি কিনা। সোহান হাসতে হাসতে বললো তুুই বুড়ি হয়ে যাবি আমাদের সাথে জন্মদিন পালন করতে করতে।
আমি বললাম হয়েছে আর ঢং করতে হবে না। সোহান বললো আচ্ছা করবো না কি গান শুনবি বল। আমি বললাম তোমার ইচ্ছেতে। সোহান গান গাইতে শুরু করলো।
“এক মুঠো স্বপ্ন এসে ছুয়ে যায় সারাক্ষন
চেয়ে থাকি আমি তার আশায়
এক মুঠো ইচ্ছে রাখি লুকিয়ে হৃদয়ে
হয়না সাজানো ভালোবাসা।
কখনো মন রোদেলা কখনো হয় মেঘলা
যায় না তারে ভোলা, কাটে না যে বেলা
একাকি একলা, ভালোবাসা একি জ্বালা
কাটে না যে বেলা একাকি একলা
ভালোবাসা একি জ্বালা।
অাধো আলো আধো ছায়া বুঝিনা এ কেমন মায়া
অাধো আলো অাধো ছায়া বুঝিনা এ কেমন মায়া
কখনো মন রোদেলা কখনো হয় মেঘলা
যায় না তারে ভোলা”
গান শেষ হতে হতে আমরা পার্কে চলে আসলাম।
সবাই নেমে পার্কে ঢুকার জন্য সিরিয়ালে দাঁড়ালাম
বাবা যেয়ে টিকিট কেটে নিয়ে আসলো। আমার পেছনেই সোহান দাঁড়িয়ে, আমি দুষ্টমি করে বললাম তোমার পরী কই আসতে বলোনি?
সোহান হাসতে হাসতে বললো একটা পরীতো সাথেই আছে, আর পার্কের ভিতর কতশত পরী আছে, এতো পরীর মাঝে যদি আর একটা পরীকে আসতে বলতাম তাহলে নিশ্চই চুল টানাটানি লেগে যেত সব পরীরা।
মনটা খারাপ হয়ে গেল, তার মানে সোহানের গফ ঐটা আমার ধারণা ভুল না। আমি বললাম আমিতো পরীনা পেত্নী, সো আমি তোমার পরীদের সাথে লাগতাম না বোঝলে। তোমার কতশত পরী তারা নিজেরা নিজেরাই মারামারি করতো।
সোহান হাসতে হাসতে বললো তোর কি কম হিংসা লাগে নাকি?
আমি বললাম আমার হিংসায় কারো কিছু যায় আসেনা। কথা বলতে বলতে সবাই ভিতরে ঢুকে পড়লাম।
তারপর সবাই ঘুরাঘুরি নাগরদোলা উঠা ট্রেনে উঠা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ঘুরতে ঘুরতে বিকেল তিনটার মত বেজে গেল। সকলে মিলে দুপুরের খাবার খেলাম, অনেক অনেক মজা করলাম। খাওয়া শেষ করতেই সোহান বলে উঠলো সকলে মিলে জাদু ঘরে যাওয়া যায়। সবাই রাজী হয়ে গেল। রাস্তা পার হলেই জাদুঘর তাই কেউ মানা করলো না।
তারপর সকলে মিলে জাদু ঘরে ঢুকলাম দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে আমরা ঘুরবো, আমাদের গ্রুপের লিডার সোহান, আর বড় চাচা ঐ গ্রুপের লিডার।
দুই ভাগ হয়ে আমরা ঘুরতে শুরু করলাম। ঘুরতে ঘুরতে পা ব্যথা হয়ে গেল। আমি সোহানকে বললাম আমার পক্ষে আর ঘুরা সম্ভব না। সোহান বললো আচ্ছা ঠিক আছে সবাই মিলে রেষ্ট নিবো।
সকলে মিলে ঘুরে রেষ্ট নিতে নিতে সন্ধ্যা হয়ে এলো। সোহান বড় চাচাকে ফোন দিয়ে বললো বেড় হয়ে আসতে। তারপর সকলে বের হয়ে গেটের সামনে দাঁড়ালাম, অল্প সময়ের ভিতরে সকলে চলে আসলো বাহিরে।
সকলে মিলে আবার বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলাম,
গাড়িতে বসে সোহানকে বললাম ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা জন্মদিন আমাকে উপহার দেবার জন্য।
সোহান হেসে বলতে শুরু করলো আরে কি যে বলিস বাড়ির বড় মেয়ের জন্মদিন বলে কথা। যেই সেই ভাবে করা যাবে কিনা। আমরা কথা বলছি এর ভিতর সোহানের ফোন বেজে উঠলো।,বাবা ফোন দিয়েছে।
চলবে…
ভিতর_বাহির
৬ষ্ঠ_পর্ব
শাহরিয়ার
সকলে মিলে আবার বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলাম,
গাড়িতে বসে সোহানকে বললাম ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা জন্মদিন আমাকে উপহার দেবার জন্য।
সোহান হেসে বলতে শুরু করলো আরে কি যে বলিস বাড়ির বড় মেয়ের জন্মদিন বলে কথা। যেই সেই ভাবে করা যাবে কিনা। আমরা কথা বলছি এর ভিতর সোহানের ফোন বেজে উঠলো।,বাবা ফোন দিয়েছে।
সোহান ফোন রিসিভ করলো, বাবার সাথে কি যেন কথা হলো, ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরিয়ে কোথায় যেন নিয়ে যেতে বললো। আমি বললাম কোথায় যাবো এখন আমরা?
সোহান বললো যাবার পরেই দেখতে পারবি।
আমি বললাম আহা বলো না,
সোহান আমি জানি না, চাচা যেতে বললো আর কিছু বলেনি। আমি আর কিছু না বলে চুপ করে বসে রইলাম।
কিছু সময় পর গাড়ি একটা রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়ালো, রেস্টুরেন্টের পাশে ঝিল অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ। বাবা বললেন বাসায় যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে যাবে তার চেয়ে বরং এখানেই সকলেই রাতের খাবারটা খেয়ে নেই।
তারপর সকলে এক সাথে রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে বসলাম। সোহান আমার হাতে মেনু কার্ডটা ধরিয়ে দিয়ে বললো আজ তোর মনের মত সবাই খাবে। তুই যা অর্ডার করবি তাই।
আমি বললাম মোটেও না আজ তোমরা যা অর্ডার করবে আমি তাই খাবো, আবার ও দুজন তর্ক শুরু করলাম। বড় চাচা এসে সোহানকে একটা ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললো মা তুমিই অর্ডার করো সকলের জন্য।
বড় চাচার কথা আমি কখনো ফেলতে পারি না, ছোট বেলা থেকেই বড় চাচা আমাকে মা বলে ডাকেন। আমি নাকি দেখতে আমার দাদীর মত সুন্দরী হয়েছি, মুখটা নাকি একদম দাদীর মত। আমার দাদীরও নাকি ঠোটের নিচে একটা তিল ছিল তবে দাদীরটা একটু বড় আর আমারটা ছোট।
বড় চাচার কথামত সবার জন্য খাবারের অর্ডার করলাম। সোহান আমার পাশে বসে খাচ্ছে আর বলছে সেইতো অর্ডার করলো আমাকে বকা খাওয়ানোর পর এর শোধ আমি তুলবো।
আমিও ছেড়ে দিতে রাজী না তারপরেও বললাম আজ আমার জন্মদিন তাই কিছু বলছি না, যদি আর কিছু বলো তখন কান্না শুরু করবো তখন দেখবা বড় চাচা তোমার কি অবস্থা করে।
সোহান বলে উঠলো পারবিতো শুধু নাকে কান্না করতে জীবনে কি আর কিছু কখনো পেরেছিস?
আমার অন্য কিছু পারার দরকার নাই, তুমিতো পার। চুপ করে খেয়ে নাও। তারপর সোহান আর কিছু না বলে চুপ করে খেয়ে নিল।
সকলে সেখান থেকে রাতের খাবার খেয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে যে যার রুমে চলে গেল, আর আমি আমার রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত কিন্তু কেন জানি ঘুম আসছিল না। বারবার ঘুরে ফিরে আজকের সারাদিনের কথাই মনে হতে শুরু করলো।
মনে খুব ইচ্ছে জাগতে শুরু করলো সারাটা জীবন সোহানের পাশাপাশি হাঁটতে, এইরকম মিষ্টি ঝগড়া করতে। কিন্তু সে ভাগ্য কি আর আমার আছে ওতো অন্য মেয়েকে ভালবাসে। ভাবতে ভাবতে অবশেষে কখন জানি দু’চোখ এক হয়ে গেল।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল দশটা বাজে মাকে বললাম তুমি আমাকে আগে ডাক দিবা না, আজ কোচিংটা মিস গেল। মা বললো তোর শরীর ঠিক আছে? সেই কখন থেকে তোকে ডেকে যাচ্ছি তুই উঠছিস না উল্টা আমাকে বলছিস ডাকিনি।
আমি বললাম শরীর খুব ক্লান্ত ছিল তাই হয়তো শুনিনি সামনেই পরীক্ষা এর ভিতর কোচিংটা মিস দেওয়া। ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে নিলাম, ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে যেতেই দেখি সোহান নাস্তা করছে।
আমাকে দেখেই বললো মহারানীর ঘুম ভেঙেছে তাহলে, আমি কোন কথা না বলে খেতে শুরু করলাম। সোহান বললো কিরে কথা বলছিস না কেন?
আমি বললাম মন ভাল নেই,
সোহান বললো কেন কেন আজ তাহার সাথে দেখা হবে না বলে নাকি?
আমি বললাম আমার কোন তাহা তোহা নেই, সেদিনই বলেছি সে আমার বান্ধবির বড় ভাই, এক কথা প্রতিদিন বলতে ভাল লাগে না বলেই টেবিল থেকে উঠে নিজের রুমে চলে আসলাম।
আমি টেবিলে বই নিয়ে বসতেই সোহানও চলে আসলো। এসে বললো কিরে মন খারাপ কেন বললি না।
আমি বললাম অনেক পড়া আর আজ কোচিং এ যেতে পাড়লাম না।
সোহান বললো এটা কোন সমস্যা নাকি নে আজ আমি তোকে পড়িয়ে দিচ্ছি, বলে সোহান পড়াতে শুরু করলো। আমি পড়া বুঝে নিচ্ছি, আর মনে মনে বলছি আজ সারা দিন আমার পাশে বসে তুমি পড়াও সোহান কোথাও যেও না।
ভাবতে ভাবতেই সিয়ামের ফোন বেজে উঠলো, সোহান বলে উঠলো এইরে আমাকে এখুনি বের হতে হবে বলে ফোন রিসিভ করে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আমি শুধু নিরবে চেয়ে রইলাম, আমার বুঝতে বাকি রইলো না ফোনটা ঐ মেয়েই করেছে তাইতো সোহান ফোন পেয়েই বেরিয়ে গেল। ইচ্ছে করছে সোহানের পিছু পিছু যেয়ে ঐ মেয়েকে বকে দিয়ে আছি। কিন্তু তা সম্ভব নয়।
মন খারাপ করে বসে রইলাম কিছু সময় তারপর ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে এসে আবারও পড়তে বসলাম। কিন্তু কোন ভাবেই পড়াতে মন বসাতে পারছিলাম না।
ভাবতে শুরু করলাম কি করা যায়, বুদ্ধি করলাম সোহানকে ফোন দিয়ে বাসায় নিয়ে আসবো বলবো আমি পড়া বুঝতে পারছি না।
যেমন ভাবা তেমনি কাজ সোহানকে ফোন দিলাম,
সোহান ফোন ধরে হুম বল কি বলবি?
আমি কি বলবো মানে তুমি কই?
সোহান আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি কেন কি সমস্যা তোর?
আমার অনেক সমস্যা তুমি কি লাঞ্চ করছো?
সোহান না করিনি বাসায় যেয়ে করবো।
ঘড়িতে কয়টা বাজে দেখেছো। আর আমাকে যে অর্ধেক পড়িয়ে চলে গেছো আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না তুমি তাড়াতাড়ি আসো।
সোহান আচ্ছা আসতেছি আকাশের অবস্থা ভাল না যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে। যদি বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় তাহলে মনে করবি দেরী হবে বলে সোহান ফোন রেখে দিলো।
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি আকাশ অনেক মেঘলা। আমি মনে মনে চাচ্ছি বৃষ্টি আসুক বৃষ্টিতে ভিজবো।
অল্প কিছু সময়ের ভিতর বৃষ্টি শুরু হতেই আমি বই খাতা সব গুছিয়ে রেখে ছাদ এ উঠে পড়লাম।
ছাদ উঠে ভিজতে শুরু করলাম বৃষ্টি হবে আর আমি ভিজবো না তা কখনো হতে পারে না। অনেক সময় ধরে রেলিং ধরে রাস্তার পাশের গাছ গুলো দেখছি আর ভিজছি।
হঠাৎ করে পেছন থেকে কেউ এসে চোখ চেপে ধরলো, আমি ভয় পেয়ে চিৎকার করতে যাবো অমনি চোখ ছেড়ে দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি সোহান।
আমার কি যে ভাল লাগছিল সে সময়টায় বলে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু আমি এমন ভাব করলাম যেন আমি রেগে গেছি। সোহানকে বললাম তুমি না বৃষ্টি থামলে আসবে বললে তোমার পরীরা তোমাকে ছেড়ে দিলো?
সোহান হাসতে হাসতে বললো ওরাতো আর তোর মত বৃষ্টিতে ভেজা পরী না তাই ছেড়ে দিলো বাসায় এসে তোর রুমে যেয়ে দেখি তুই নাই। তাই ভাবলাম ছাদ এসেছিস আমি চলে আসলাম। এসে দেখি এক রূপসি পরী ছাদ এ ভিজছে অনেক সময় ধরেই পেছনে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। তা ঐদিকে কি কেউ আছে নাকি অপেক্ষায়?
সব সময় উল্টা পাল্টা কথা ছাড়া কি তোমার মুখে আর কোন কথা নেই? নিজে যেমন সবাইকে তুমি তেমনি ভাব এটা তোমার একটা বড় সমস্যা বুঝলে।
সোহান কি বললি আমি কেমন? হ্যাঁ তোর মত নাকি রাস্তায় বসে অন্য ছেলেদের সাথে ফুচকা খাই?
তোমাকে কতবার বলেছি এই কথা না বলার জন্য?
ঐটা আদিবার ভাই আর যদি একবার এই কথা বলছো তবে,
তবে কি? সত্যি কথাই বলেছি।
বেশ করেছো সত্যি বলেছো তোমার জ্বলে কেন এতো, আমিতো তোমার মত রিক্সায় হাতে হাত রেখে হাসতে হাসতে ঘুরে বেড়াই না। কিংবা ফোন দিলেই ছুটে চলে যাই না।
পাড়লেতো যাবি তুই আর ফোন আমার বন্ধুরা দিয়েছিল।
দুজনের মাঝে সব সময় ঝগড়া আমি সোহানকে বললাম আমার সাথে ঝগড়া করতে এসো না বাড়ির সবাইকে বলে দিবো।
সোহান বললো বল তাতে আমার কি আমি ছেলে মানুষ কোন সমস্যা নেই, আমিও বলে দিব তোর কথা।
মনটাই খারাপ করে দিলো তবুও চুপ করে বললাম চল আমাকে পড়াবে।
সোহান বললো এখন মুড নাই, বৃষ্টিতে ভিজবো বৃষ্টি শেষ হলে তারপর পড়াবো।
আমি আর কোন কথা না বলে দাঁড়িয়ে আছি।
সোহান বললো তুই নেমে যা না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে। আমি বললাম লাগলে লাগুক তাতে কার কি।
সোহান বললো কারো কিছু না সামনে তোর পরীক্ষা।
আমি বললাম পরীক্ষায় ফেল করলে কোন সমস্যা নেই, মেয়ে মানুষ বিয়ে হয়েই যাবে। এভাবেই দুজনের তর্ক চলতে থাকলো। এক সময় বৃষ্টি থেমে গেল।
চলবে…….