ভিতর_বাহির
পর্ব- ৭ম+৮ম+৯ম
শাহরিয়ার
সোহান বললো এখন মুড নাই, বৃষ্টিতে ভিজবো বৃষ্টি শেষ হলে তারপর পড়াবো।
আমি আর কোন কথা না বলে দাঁড়িয়ে আছি।
সোহান বললো তুই নেমে যা না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে। আমি বললাম লাগলে লাগুক তাতে কার কি।
সোহান বললো কারো কিছু না সামনে তোর পরীক্ষা।
আমি বললাম পরীক্ষায় ফেল করলে কোন সমস্যা নেই, মেয়ে মানুষ বিয়ে হয়েই যাবে। এভাবেই দুজনের তর্ক চলতে থাকলো। এক সময় বৃষ্টি থেমে গেল।
আমি বললাম চলো নামি, সোহান বললো চল, নামতে নামতে সোহানকে বললাম তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো বলে আমি আমার রুমে চলে আসলাম সোহান নিচে নেমে গেল।
আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম, কিছু সময়ের ভিতরে সোহান আমার রুমে আসলো। বই বের করা পড়তে শুরু করলাম।
পড়ার মাঝে সোহান বললো তোকে যে গল্পের বই দুইটা দিয়েছি পড়েছিস?
আমি বললাম না, কখন পড়বো পরীক্ষার পড়া পড়েই শেষ করতে পাড়ি না।
সোহান আর কিছু না বলে পড়াতে শুরু করলো,
রাত প্রায় দশটা পর্যন্ত পড়ার পর বললাম আজ আর পড়বো না। চলো ডিনার করবো বলে দুজনে উঠে পড়লাম পড়ার টেবিল থেকে।
সকলের সাথে যেয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
এভাবেই আরও এক সপ্তাহ প্রায় চলে গেল, আমার ফাইনাল পরীক্ষার আর মাত্র পনের দিনের মত বাকি এমন সময় রাতে খাবার টেবিলে বড় চাচা এসে বলতে শুরু করলো, শান্তা আপুর বিয়ে সবাইকে এক সপ্তাহের জন্য গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে।
শান্তা আপু হচ্ছে বড় ফুপুর মেয়ে, কথাটা শোনে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল সামনেই আমার পরীক্ষা আমিতো কোন ভাবেই যেতে পারবো না।
বড় চাচা বললেন কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার ইকরা মাকে নিয়ে ওরতো পরীক্ষা, ওকে একা রেখেও যাওয়া যাচ্ছে না আবার সাথেও নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।
আমি বললাম সমস্যা নেই তোমরা সবাই যাও আমি একা থাকতে পারবো কোন সমস্যা হবে না।
বড় চাচা বললেন তা কি করে হয়, তুই এখন বড় হয়েছিস এতো বড় মেয়েকে কোন ভাবেই একা রেখে যাওয়া যাবে না।
মা এসে বললেন আপনারা সকলে চলে যান আমি থাকবো। আমি বললাম মা কি যে বলো তোমরা না গেলে কি হবে তোমরা সকলে যাওতো আমি একাই থাকতে পারবো।
সোহান বলে উঠলো বেশী পাকা হয়ে গেছিস না, চাচী আপনারা সকলে যান আমি থাকবো তাছাড়া আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।
আমি বললাম অসম্ভব আমি তোমার সাথে থাকতে পারবো না, সারাদিন ঝগড়া করে আমার পড়ার বারটা বাজিয়ে দিবে তার চেয়ে আমি একাই থাকবো।
অবশেষে সে রাতে সিদ্ধান্ত হলো সোহানই থাকবে আমার সাথে বাড়িতে, আর বড় চাচা খুব কঠিন করে সোহান কে বলে দিল যদি আমার মাকে তুই জ্বালিয়েছিস শুনেছি বা ওর চোখ থেকে এক ফোটা অশ্রু পরেছে তবে তোর এই বাড়িতে থাকা বন্ধ।
পরদিন সকালে সকলে মিলে গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দেবার আগে সোহানকে কিছু টাকা দিয়ে বললো যদি রান্না করে খেতে পারিস দুজন মিলে তবে রান্না করে খাবি না হলে বাহির থেকে খাবার কিনে এনে খাবি।
আর খবরদার ওকে জ্বালাবি না সামনেই ওর পরীক্ষা বলে সকলে বিদায় নিয়ে চলে গেল। সবাই যাবার পর বাড়িটা কেমন শূন্য শূন্য লাগতে শুরু করলো।
পড়াশোনাও যেন ভাল লাগছিল না। কি করবো না করবো কোন কিছুই বোঝতে পারছিলাম না। আবার মনে মনে ভয়ও পাচ্ছিলাম যদি সোহান উল্টা পাল্টা কিছু করে। পরক্ষণেই চিন্তা করলাম না সোহান এতো খারাপ ছেলে না আমি ওকে ভাল করেই চিনি। ওহ আমাকে রাগাতে পারে কিন্তু কখনো খারাপ কিছু করবে না।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল সোহান আমার দরজায় এসে নক করে বললো মহারানী আসবো নাকি?
আমি বললাম ঢং বেড়েছে নাকি তোমার?
সোহান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো নারে রং লেগেছে, আগেতো বাসায় সবাই ছিল এখন তুই একা তাই তোকে ভয় ভয় লাগছে।
আমি বললাম ফাজলামোর কথা বাদ দিয়ে বলো কেন এসেছো?
সোহান বলতে শুরু করলো দুপুর হয়ে গেছে কি খাবি বল?
আমি বললাম তুমি যা নিয়ে আসবে তাই খাবো।
সোহান বললো আচ্ছা ঠিক আছে তুই থাক আমি হোটেল থেকে বিরিয়ানী নিয়ে আসতেছি বলে সোহান রুম থেকে বের হয়ে গেল।
সোহান বের হবার কিছু সময় পর ওর ফোনটা বেজে উঠলো ও ভুল করে ফোন রেখে চলে গেছে।
ফোনের রিং বেজে চলেছে ধরবো কি ধরবো না ভাবতে ভাবতে রিসিভ করলাম।
অন্য প্রান্ত থেকে একটা মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসলো, আমি বললাম সোহানতো বাসায় নেই ফোনটা ভুল করে রেখে বাহিরে গেছে। অপরপ্রান্ত থেকে মেয়েটা বলে উঠলো তুমি ইকরা রাইট?
আমি বললাম হ্যাঁ কিন্তু আপনি কে?
মেয়েটা বলে উঠলো ওর নাম অর্নি সোহানের সাথেই পড়াশোনা করছে। আমি বললাম ও আচ্ছা আসলে বলবো।
উনি বলে উঠলেন তুমিতো খুব ভাগ্যবতী মেয়ে।
আমি বললাম আপনার কথা ঠিক বোঝতে পারলাম না।
অর্নি বলে উঠলো তুমি কি জানো না সোহান তোমাকে কতটা ভালবাসে?
আমি বললাম মানে কি? এসব আপনি কি বলছেন সোহান আমাকে কেন ভালবাসবে আপনার ভুল হচ্ছে ও অন্য কোন মেয়েকে ভালবাসে।
অর্নি বললো আমার কোথাও ভুল হচ্ছে না সোহানের একমাত্র মেয়ে বন্ধু আমি বলতে পারো আমি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড ও আমার কাছে সব কিছুই শেয়ার করে। ও আমাকে সব বলেছে আর তোমাকেতো ও চিরকুট ও দিয়েছে তোমার জন্মদিনে তুমি পাওনি?
আমি কি বলবো সে মুহুর্তে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমি বললাম আমি ফোনটা রাখছি আর আপনি প্লীজ সোহানকে বলবেন না যে আপনি আমাকে এগুলা বলেছেন।
অর্নি বললো ঠিক আছে বলবো না আমি ফোনটা রেখে দিলাম।
আমার কাছে সব কিছু কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হতে লাগলো। অর্ণি যা বলেছে তা কি সত্যি? কোন কিছুই যেন আমার মাথায় ঢুকছিল না। সোহান বিরিয়ানী নিয়ে আসলো।
আমার মুখ দিয়ে খাবার যাচ্ছিল না, আমি অপলক সোহানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
সোহান বলে উঠলো কিরে খাচ্ছিস না কেন?
আমি বললাম খুদা নেই তুমি খাও।
সোহান খাচ্ছে আর বলছে বিরিয়ানীটা খুব মজার খেয়েনে ঠান্ডা হয়ে গেলে মজা পাবি না।
আমি বললাম খায়িয়ে দাও তবেই খাবো, সোহান বললো পারবো না। আমি বললাম তাহলে তোমার বিরিয়ানী তুমিই খাও বলে চলে আসলাম।
অল্প সময়ের ভিতর সোহান প্লেটে করে খাবার নিয়ে আমার রুমে ঢুকে বললো এতো রাগ ভাল না মেয়েদের।
আমি বললাম রাগের সাথে আবার মেয়ে ছেলের কি সম্পর্ক?
সোহান বললো আছে অনেক সম্পর্ক সে তুই বুঝবি না, এখন চুপ চাপ খেয়ে নে।
আমি বললাম বলছিতো খায়িয়ে দিলে খাবো নয়তো খাবো না।
সোহান তুই কবে বর হবিরে?
সোহানকে রাগানোর জন্য বললাম, এইতো খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে হলেই বড় হয়ে যাবো।
তোর মুখে কি বিয়ে ছাড়া আর কোন কথা নাইরে?
থাকবে না কেন কত কথাইতো বলি, কেন তুমি কি শোনতে পাওনা?
তোর কথা তুই শোন তার আগে আয় তোকে খায়িয়ে দেই বলে প্লেটটা আমার সামনে নিয়ে এসে খাওয়াতে শুরু করলো।
আমার মনে আবারও শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল, আমি ইচ্ছে করেই সোহানের আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দিলাম। সোহান চিৎকার করে উঠলো আমি বললাম সরি সরি আমি ইচ্ছে করে দেইনি।
কামড়টা খুব জোড়ে লেগে যাবে বুঝতে পারিনি সোহানের আঙ্গুল দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করলো। আমি দৌড়ে যেয়ে আম্মুর রুম থেকে সেভলন ক্রিম নিয়ে আসলাম।
তারপর হাত পরিষ্কার করে ক্রিম লাগিয়ে দিলাম, নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগছে দুষ্টমি করতে যেয়ে বিপদ ঘটিয়ে ফেললাম।
সোহান বললো তুই ইচ্ছে করেই এমনটা করেছিস আমি বুঝিতো। আমি বললাম না বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে করেনি। সোহান বললো সে আমার বুঝা হয়েছে।
যেহেতু তুই আমার আঙ্গুল কামড়ে দিয়েছিস সেহেতু যে কয়দিন ভাল না হবে সে কয়দিন তুই আমাকে খায়িয়ে দিবি।
আমি বললাম পারবো না নিজেই খেতে পারি না আবার তোমাকে খাওয়িয়ে দিবো।
সোহান বললো তাহলে কি দুজনকে না খেয়ে থাকতে হবে।
আমি বললাম পারবো না, সোহান বললো সময় হলেই দেখা যাবে বলে হনহন করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমি ওর চলে যাবার পথের দিকে চেয়ে রইলাম।
চলবে…
ভিতর বাহির
-৮ম পর্ব
শাহরিয়ার
আমি বললাম পারবো না নিজেই খেতে পারি না আবার তোমাকে খাওয়িয়ে দিবো।
সোহান বললো তাহলে কি দুজনকে না খেয়ে থাকতে হবে।
আমি বললাম পারবো না, সোহান বললো সময় হলেই দেখা যাবে বলে হনহন করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আমি ওর চলে যাবার পথের দিকে চেয়ে রইলাম।
আমি বিছানায় শুয়ে পরলাম একটু ঘুমানোর জন্য, দু’চোখ বন্ধ করে রাখতে রাখতে এক সময় ঘুমিয়ে পরলাম। সন্ধ্যার আগে আগে ঘুম ভাঙলো, আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে সোহানের রুমের সামনে যেয়ে দেখি রুম তালা দেয়া।
আমি আবার উপরে চলে আসলাম, এসে ফোনটা নিয়ে সোহানকে ফোন দিলাম। সোহান ফোন ধরে বললো সে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে আমি বললাম তাড়াতাড়ি বাসায় এসো আমার একা থাকতে ভয় লাগে।
সোহান বললো কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবে রাতের খাবার নিয়ে, আমি ফোন রেখে বই নিয়ে পড়তে বসলাম। রাত নয়টার দিকে সোহান খাবার নিয়ে আসলো।
এসে বলতে শুরু করলো খুব নাকি সাহস তোর তাহলে ফোন করে বললি কেন ভয় লাগছে।
আমি বললাম ভয় পাবো কেন? একা একা ভাল লাগছিল না তাই তোমাকে আসতে বলছি।
সোহান হয়েছে হয়েছে আর ঢং করতে হবে না, খাবার নিয়ে এসেছি খেয়ে নে।
পারবো না খায়িয়ে দাও।
তোকে আমি খাওয়াবো জীবনেও না।
কেন খাওয়াবে না?
দুপুরের কথা কি আমি ভুলে গেছি বরং তুই আমাকে খায়িয়ে দে।
আমি তোমাকে খায়িয়ে দিবো? ওকে দিতে পারি একটা শর্তে।
সোহান কি শর্ত?
আজ থেকে আমাকে তুমি করে বলবা।
আমার সাথে ফাজলামো হচ্ছে খেয়ে নে একা একা।
বললামতো পারবো না।
দেখ জিদ দেখাছ নে, আমার হাত নিয়ে আমি নিজেই খেতে পারবো না তোকে কি করে খাওয়াবো?
আমাকে না খাওয়ালে তুমি করে বলো আমি তোমাকে খাওয়াবো।
আচ্ছা তুমি করে বললে কি হবে শুনি?
অনেক কিছুই হবে ধরো মনে হবে আমি বড় হয়ে গেখি, আর আমাদের মাঝে ভালবাসার একটা সম্পর্ক আছে।
আহারে কি ঢং,
ঢং এর কি হলো?
কিছু না খায়িয়ে দিবি কিনা বল? না হলে চলে গেলাম।
বলবা নাতো আচ্ছা দিচ্ছি খায়িয়ে, কিন্তু তুমি যদি প্রতিশোধ নেবার জন্য আমার হাতে কামড়ে দাও?
আমারতো আর কোন কাজ নেই যে তোকে কামড়ে দিবো।
এই দেখ ভাল হবে না কিন্তু আমি কি ইচ্ছে করে কামড়ে দিয়েছি নাকি।
আচ্ছা বাদদে এখন খায়িয়ে দে।
আমি সোহানকে খায়িয়ে দিচ্ছি সোহান ছোট বাচ্চাদের মত খেয়ে নিল। খাওয়া শেষ করে সোহান বললো দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পর সকালে এসে পড়াবো। বলে সোহান রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আমি উঠে দরজা লাগিয়ে এসে সোহানের দেয়া বই দুইটা বের করলাম পড়ার জন্য।
বই খুলতেই একটা হলুদ খাম বেরিয়ে আসলো,
আমি খামটা খুলতেই সাদা কাগজে লেখা একটা চিরকুট বেরিয়ে এলো। আমি তা খুলে পড়তে শুরু করলাম।
তাতে লেখা,
প্রিয় ইকরা আমি আজকের দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আজ তোর ১৮তম জন্মদিন, দেখতে দেখতে তুই কত বড় হয়ে গেছিস। কিন্তু এখনো সেই ছোট বেলার মতই তোকে রাগাই জ্বালাই, কেন রাগাই জ্বালাই কিংবা ঝগড়া করি তা জানি না। তবে তোর সাথে মিষ্টি মিষ্টি ঝগড়া করতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। আচ্ছা আমার যেমন ভাল লাগে তোর কি তেমন ভাল লাগে?
তোর সাথে ঐ ছেলেটাকে দেখে আমার খুব রাগ হয়েছিল, যেমনটা তোর হয় অন্য কোন মেয়ের সাথে আমাকে দেখলে। আচ্ছা এটাকে রাগ বলে নাকি অভিমান বলে আমি ঠিক জানি না।
তোর আমার মাঝে সেই ছোট বেলা থেকেই ঝগড়া লেগে থাকে, কিন্তু কেন এর কারণ খুঁজে পেতে আমার অনেকটা সময় লেগে গেছে। জানি না বড্ড দেরী করে ফেলেছি কিনা।
তাই তোর সামনা সামনি হয়ে কথা গুলো বলার মত সাহস আমার হয়ে উঠেনি। যে কারণে তোকে চিরকুট লেখা, আমি আরও ছয় সাত মাস আগেই বুঝতে পারি যে আমি তোকে ভালবেসে ফেলেছি, কিন্তু বলবো বলবো করেও কেন জানি বলতে পারিনি। তাই আজকের দিনটাকে বেছে নিয়েছি বলার জন্য। আমি জানি না কিভাবে কেমন করে আর কবে থেকে তোকে ভালবাসতে শুরু করেছি।
তবে তোকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি, এগুলা শুধু আমার কথা তোর কথা আমি জানি না। তুই যদি কাউকে ভালবেসে থাকিস তবে নির্ভয়ে আমাকে বলতে পারিস আমি তোকে কথা দিচ্ছি তার সাথে তোকে মিল করিয়ে দিবো।
শোন আমাকে ভালবাসিস আর না ভাসিস কিন্তু রোজ রোজ ঝগড়া করতে ভুলবি না বুঝলি, তোর সাথে ঝগড়া না করলে সে দিনটা যেন কেমন পানসে পানসে লাগে আমার কাছে।
তোর সাথে এই ঝগড়াটাই হয়তো তোকে ভালবাসার প্রধান কারণ বলা যেতে পারে। তাই এ ঝগড়াটা বাদ দিবি না কোন দিনও যতদিন দুইজন পাশাপাশি আছি।
আমার খুব ইচ্ছে সারাটি জীবন তোর পাশে থেকে এমনি করে খুনছুঁটি ঝগড়া করে কাটিয়ে দেবার। কিন্তু তোর মনের ইচ্ছেতো আর আমার জানা নেই, আর মানুষ চাইলেও তার সব ইচ্ছে পূর্ণ হয়না।
আর এই যে বই দুটো দিলাম এগুলো পড়ে আমাকে পড়তে দিবি কিন্তু। তুই না পড়লে সে বই আমি কখনোই পড়ি না সে তুই ভাল করেই জানিস কাজেই পড়ে আমাকেও পড়তে দিস।
তুই খুব লক্ষী একটা মেয়ে, আমার বাবা তো তুই বলতে পাগল, তোর জন্য যে কত বকা আমি খাই তার হিসেব নেই, বাবার কানে শুধু যেতে পারলেই হলো তোকে কিছু বলেছি তাহলেই আমার বারটা বাজিয়ে দেয়। অনেক কিছু লেখেছি আর লেখতে পারবো না। শুধু শেষ বারের মত বলছি তোকে খুব ভালবাসি তবে তোর মনের বিরুদ্ধে কখনোই যাবো না।
চিঠি পড়ে মনে হতে থাকলো আমি পৃথিবীর সব চেয়ে সুখি মেয়ে, যে কিনা এভাবে যাকে ভালবাসে তার চিরকুট থেকে সেই ভালবাসার কথাটা জানতে পেরেছে।
আমি একবার বিছানার এপাশ একবার ওপাশ করছি, আনন্দে যেন দুচোখের ঘুম হারিয়ে গিয়েছিল। কি করবো না করবো কোন কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমার ভিতর যেন নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হচ্ছিল। এতোদিন পর্যন্ত আমি যা ভাবতাম যা বুঝতাম সব কিছুই আমার ভুল ছিল।
কিন্তু সোহানকে এখুনি বলা যাবে না আমি ওর চিরকুট পড়েছি, পরীক্ষার পর বলবো, তার আগে পর্যন্ত জ্বালিয়ে এখন থেকে আমি ওর হার মাংস এক করে দিবো। এতোদিন পর্যন্ত ও আমাকে জ্বালাইছে এখন থেকে আমি শুরু করবো।
শুরু করবো মানে কি এখুনি করবো, ওরে আজ ঘুমাতেই দিবো না ভাবতে ভাবতে ফোনটা হাতে নিয়েই সোহানকে কল দিলাম।
রিং বাজতেই সোহান রিসিভ করে, কিরে এতো রাতে কেন ফোন দিলি?
আমার না খুব ভয় করতাছে কেমন জানি মনে হচ্ছে ঘরের ভিতর কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে তুমি আসবে একটু আমার রুমে।
সোহান ফোন রাখতো যত সব আজাইরা কথা বার্তা, রুমের লাইট জ্বালিয়ে শুয়ে থাক।
তুমি আসবা কিনা বলো না হলে আমিই চলে আসবো তোমার রুমে।
সোহান তোর কি মাথা খারাপ হইছে এতো রাতে আমি তোর রুমে যাবো? তোর কি ভয় লাগে না।
তোমাকে কেন ভয় লাগবো তুমি কি ভুত নাকি? কত কিউট একটা পোলা।
এই তুই ফোন রাখ আমি ঘুমাবো।
রাখবা না ফোন তাড়াতাড়ি আস আমার ভয় লাগছে সিরিয়াসলি আমি দরজা খুলে রাখছি তাড়াতাড়ি আস বলে ফোন কেটে দিলাম।
আমি জানি সোহান ঠিকই চলে আসবে, আমি দরজা খুলে পুরো রুম অন্ধকার করে দরজার পেছেনে দাঁড়িয়ে রইলাম। সোহান রুমে ঢুকলেই ওকে ভয় দেখাবো বলে।
অল্প কিছু সময়ের ভিতরেই সোহানের হাঁটার শব্দ শোনতে পেলাম। সোহান দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ভিতরে ঢুকে বলছে কিরে তোকে না বলছি লাইট অন করে রাখতে, ইকরা কই তুই বলে খাটের কাছে যেতেই আমি পেছন থেকে হালকা চিৎকার করে উঠলাম।
সোহান ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠলো। আমি সোহানকে ধাক্কা দিয়ে খাটের উপর ফেলে দিয়ে দৌড়ে লাইটের সুইচ অন করতেই বেচারার ভয়ার্ত মুখটা দেখে আমার হাসি যেন থামতেই চাচ্ছিল না।
সোহান আমাকে একটা ধমক দিয়ে বলতে শুরু করলো বেশী ফাজিল হয়ে গেছিস না, যদি ভয়ে আমি হার্ট এট্যাক করে মারা যেতাম?
আমি হাসতে হাসতে বললাম তুমি এতো ভিতু আগেতো জানতাম না। আমিতো মনে করতাম তুমি খুব সাহসি এখনতো দেখছি তুমি আসলে একটা ভিতু।
সোহান বলে উঠলো খবরদার এইসব কথা বলবি না, বললে তোর খবর আছে। আমি বললাম কি যে খবর করতে পারবে তা আমার জানা আছে তুমি একটা ভিতু ভিতু ভিতু বলে সামনে যেতেই সোহান আমার হাত ধরে টান দিয়ে খাটে ফেলে দিলো।
আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম, হঠাৎ মনে হলো সোহান খাটের উপর থেকে নেমে গেছে। আমি চোখ মেলে তাকাতেই সোহান বলে উঠলো বেশী পাকনা হয়ে গেছিস, ঘুমিয়ে পড় সকালে তোর আবার কোচিং আছে বলে সোহান ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি খাট থেকে নেমে দৌড়ে যেয়ে টেবিল থেকে দুই গ্লাস পানি খেয়ে জোড়ে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লাম, তারপর খাটে এসে শুয়ে শুয়ে ভাবতে শুরু করলাম, একটু বেশীই করে ফেলছি আমি। না আর এমন করা যাবে না তবে সোহান যে খুবি ভাল তার প্রমাণ আরও একবার পেলাম ভাবতে ভাবতে কখন জানি দুচোখ এক হয়ে গেল।
চলবে…
ভিতর বাহির
-৯ম পর্ব
শাহরিয়ার
আমি খাট থেকে নেমে দৌড়ে যেয়ে টেবিল থেতে দুই গ্লাস পানি খেয়ে জোড়ে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লাম তারপর খাটে এসে শুয়ে শুয়ে ভাবতে শুরু করলাম, একটু বেশীই করে ফেলছি আমি না আর এমন করা যাবে না। তবে সোহান যে খুবি ভাল তার প্রমাণ আরও একবার পেলাম ভাবতে ভাবতে কখন জানি দুচোখ এক হয়ে গেল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সোহান আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আমি লাফিয়ে উঠে বললাম তুমি কি করছো?
সোহান বলে উঠলো তোকে দেখছিলাম তুই এমন কেনরে ঘরের দরজা না লাগিয়ে ঘুমিয়ে ছিলি। যদি চোর এসে সব নিয়ে যেত?
আমি রাতে আনন্দে ভুলেই গিয়েছিলাম যে ঘরের দরজা লাগানোই হয়নি ঘুমানোর আগে। আমি বললাম চোরের তো আর কাজ নেই এই ঘরে আসবে মেইন গেইটতো তালা মারাই ছিল চোর কি করে আসবে?
টেবিলে নাস্তা রাখা আছে খেয়ে কোচিং এ চলে যা, বলেই সোহান খাট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যেতে যেতে বললো ঘুমন্ত অবস্থায় তোকে খুব মায়াবী লাগে মনেই হয়না তুই এতো ঝগড়া করতে পারিস।
আমি বললাম কি বললা তুমি আমি শুধু ঝগড়াই করি তাই না, সোহান একবার পেছনের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে চলে গেল।
আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কোচিং এ যাবার জন্য রেডি হয়ে বের হলাম, নিচে নেমে দেখি সোহানের ঘরের দরজা বন্ধ করা। তার মানে সোহান বাসা থেকে বের হয়ে গেছে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।
আমিও বের হয়ে কোচিং এ চলে আসলাম কোচিং শেষ করে বের হতেই ফুচকার দোকানে দেখি রিয়াদ ভাইয়া। আমাকে দেখেই ডাক দিলো আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম আদিবা কি তবে রিয়াদ ভাইয়াকে বলে দিয়েছে? কিন্তু আমাকেতো আদিবা কিছু বললো না।
আমি ভয়ে ভয়ে ফুচকার দোকানের সামনে যেতেই রিয়াদদ ভাই বললো কেমন আছ ইকরা?
ভাল ভাইয়া আপনি কেমন আছেন?
এইতো ভালই আছি, কোচিং শেষ হলো?
জ্বি ভাইয়া এইতো শেষ হলো।
বসো ফুচকা খাও বলে দুই প্লেট ফুচকার অর্ডার দিল। আমি বললাম না ভাইয়া আমি খাবো না। উনি বললো আরে খাওতো বেশী সময় লাগবে না।
আমি বললাম না ভাইয়া অন্য একদিন, উনি বললেন অন্য একদিন না হয় আবার খাবে সমস্যা নেই বলে জোড় করেই আমাকে বসালো বলতে হবে।
ফুচকার প্লেট দুটো নিয়ে এসে একটা আমাকে দিয়ে বললো নেও খাও, তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?
জ্বি ভালই চলছে ভাইয়া। আপনার জব কেমন চলছে?
হুম খুবি ভাল চলছে, আচ্ছা তোমাকে যে কথা বলার জন্য ডাক দিয়েছি।
কথাটা শোনার সাথে সাথেই আমার বুকটা কেঁপে উঠলো, আমি বললাম আমার একটু তাড়া আছে আমি উঠি ভাইয়া
হ্যাঁ উঠবেতো আগে শোন, আমি নিরুপায় হয়ে বসলাম। রিয়াদ ভাই বলতে শুরু করলো আগামি মাসেই হয়তো আমার বিয়ে হয়ে যাবে। বাসা থেকে আমার জন্য মেয়ে দেখেছে।
আমি বললাম আলহামদুলিল্লাহ এটাতো খুশির কথা, আমি আদিবার কাছ থেকে ডেট জেনে নিবো তারপর চলে আসবো।
রিয়াদ বলে উঠলো তোমাকে আমি কতটা ভালবাসি তা হয়তো তোমাকে বোঝাতে পারিনি। কিংবা তুমি বুঝতে চাওনি। তবে কি জান ইকরা আমি তোমাকে সত্যিই খুব ভালবাসতাম।
কথাটা বলতেই পাস দিয়ে সোহান হেঁটে যাচ্ছিল, কথাটা যে সোহান শোনেছে তা আমি নিশ্চিত। সোহান একটু দাঁড়িয়ে আবার চলে গেল।
আমি রিয়াদকে বললাম ভাইয়া আজ আমি যাই, দোয়া করি আপনি বিয়ে করে সুখে সংসার করেন আর আমি আপনাকে আগেই বলেছি আপনাকে ভালবাসা আমার পক্ষে সম্ভব না। বলেই আমি আর রিয়াদের কোন উত্তরের আসা না করে সোজা হাঁটা শুরু করলাম।
মনে মনে ভাবছি আজ আবার কত গুলো কথা শোনতে হবে সোহানের কাছ থেকে। সে আসল কাহিনী কিছুই জানবে না অযথা ঝগড়া করবে গাল ফুলাবে পারেও বটে ছেলেটা ভালবাসে সেটা বলতে পারে না শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া।
ভাবতে ভাবতে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে রুমে রেস্ট করছি, আর অপেক্ষা করছি সোহান কখন আসবে। দুপুর আড়াইটা বেজে গেছে সোহান আসার কোন নাম নেই এদিকে আমার প্রচন্ড খুদা লেগেছে। আমি বুঝতে পারছি সোহান রেগে গেছে আমাকে রিয়াদ ভাইয়ার সাথে দেখে।
যতই যা হোক এখন খেতে হবে ভেবে সোহানকে ফোন দিলাম, রিং বেজেই চলছে ফোন রিসিভ করছে না, চতুর্থবার কল দেয়ার পর ফোন রিসিভ করলো। বল কি বলবি?
তুমি কই আমার খুব খুদা লেগেছে খাবার নিয়ে আস।
আমার দেরী হবে অপেক্ষা কর।
কি বললা কি এমন কাজ করছো যে তোমার দেরী হবে?
যা খুশি করছি তাতে তোর কি? ফুচকা খেয়ে পেট ভরেনি?
দেখ উল্টা পাল্টা কথা বলবা না খাবার নিয়ে বাসায় আসো তারপর সব বলছি।
বললামতো আমার দেরী হবে।
ওকে আমি বড় চাচাকে ফোন দিচ্ছি বলে ফোন কেটে বসে রইলাম, জানি কিছু সময়ের ভিতরেই সোহান খাবার নিয়ে চলে আসবে। বড় চাচাকে সোহান ভীষণ ভয় পায়।
অল্প সময়ের ভিতর সোহান গম্ভীর মুখ করে খাবার নিয়ে এসে আমার টেবিলের উপর রেখে বের হয়ে যেতে নিলো। আমি ডাক দিয়ে বললাম তুমি খেয়েছো? সোহান বলে উঠলো আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। তোর খাওয়া দরকার খা।
আর আমি যে বই দুইটা দিয়েছি ঐ গুলোদে আমি পড়ে তারপর তোকে আবার দিবো।
আমি বুঝতে পারলাম সোহান চিঠির জন্য বই গুলো চাচ্ছে দিলে সে চিঠিটা সরিয়ে ফেলবে। আমি বললাম না তাতো দেয়া যাবে না, তুমিতো ভাল করেই জানো নতুন বই আমি পড়ার আগে তুমি পাবা না।
দেখ তোরতো পড়তে অনেক সময় লাগবে তার চেয়ে বরং আমাকে দে আমি আগে পড়ে তোকে দিচ্ছি।
জ্বি না তা হচ্ছে না, আমি পড়বো তারপর তুমি পড়বা, এখন বসে খেয়ে নাও।
খাবো না বলে সোহান হাঁটা শুরু করতেই আমি ওর হাত ধরে টান মেরে খাটে ফেলে দিয়ে আমি ও খাটের উপর উঠে বসলাম। আস্তে করে সোহানের মুখের কাছে আমার মুখটা নিয়ে গেলাম, সোহান ভয়ে বলতে শুরু করলো এই তুই কি করছিস।
এই প্রথম আমি সোহানকে এতোটা ভয়ার্ত দেখলাম। আমি ওকে আরও একটু ভয় দেখানোর জন্য বললাম কেন তুমি বুঝতে পারছো না আমি কি করছি।
ভয়ে সোহানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। সোহান বলে উঠলো সরে যা আমার উপর থেকে। আমি বললাম না কেন সরবো?
সোহান কোন কথা বলতে পারছে না, ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ওর চোখে মুখে, সোহান অনেক কষ্টে বললো কেউ দেখে ফেলবে। আমি বললাম বাড়িতে তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই, তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেন?
সোহান কিছু বলতে পারছে না, নিজের দুচোখ বন্ধ করে নিয়েছে। আমি আস্তে করে সোহানের উপর থেকে মুখ সরিয়ে নিলাম।
সোহান লাফ দিয়ে উঠে বসলো, টপটপ করে সোহানের কপাল থেকে ঘাম পড়ছে, আমার কেন জানি খুব হাসি পাচ্ছিল, এতো সাহসী সোহানকে এই রকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে। সোহান হয়তো কখনো কল্পনাও করতে পারিনি এমন কিছু আমি করতে পারি।
কিছুটা সময় পর সোহানকে খেতে বললাম, সোহান বললো আমার খুদা নেই। আমি জোড় করে সোহানকে খায়িয়ে দিলাম। সোহান খেয়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বললো সময় হলে এর প্রতিশোধ আমি নিবো। আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম আমিও দেখবো ভিতুর ডিম তুমি কি করতে পারো।
দেখতে দেখতে সুন্দর মুহুর্ত গুলো কেমনে করে যেন কেটে যায়। সাত দিন খুব আনন্দ করলাম, সাত দিন পর আবারও বাড়িতে সকলে চলে আসলো। আবারও আগের মত সবাই আড্ডা গল্পতে ভরে উঠলো বাড়িটা। এদিকে আমারও পরীক্ষা চলে আসলো।
আমাকে পরীক্ষা কেন্দে নিয়ে যাবার দ্বায়িত্ব পরলো যথারিতি সোহানের উপর। সোহান বেচারা কি করবে কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
প্রথম পরীক্ষার দিন সোহান আমাকে সাথে নিয়ে রওনা হলো। ওর দ্বায়িত্ব যতক্ষণ না আমার পরীক্ষা শেষ হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকবে। শেষ হলে সোজা আমাকে নিয়ে বাসায় চলে আসবে।
দেখতে দেখতে চারটা পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল, এর ভিতর শুক্র, শনিবার সহ তিন দিনের পরীক্ষার একটা বন্ধ পরলো। পরীক্ষা দিয়ে বের হতেই সোহান বললো চল কোথাও থেকে ঘুরে আসি তিন দিনতো তোর পরীক্ষা নেই।
আমিও মানা করলাম না দুজন মিলে রিক্সা নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে পড়লাম। আমি রিক্সায় উঠেই সোহানের কাঁধে মাথা রেখে দিলাম, সোহান বললো মাথা সরিয়েনে।
আমি পারবো না শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে।
সোহান মানুষ দেখলে কি মনে করবে?
যা খুশি মনে করুক তাতে আমার কি? আর তুমি এতো ভয় পাও কেন?
সোহান আমি আমার জন্য ভয় পাইনা, আমি ছেলে মানুষ কিন্তু তুই মেয়ে মানুষ লোকে দেখলে তোর বদনাম হবে।
কি যে বলো না তুমি আমরা এমন কোন কিছু করছি না যে কেউ দেখলে বদমান করবে।
সোহান কিছু না বলে চুপ করে বসে রইলো, আমি ওর হাতটা টান দিয়ে আমার হাতে নিতেই সোহান বলে উঠলো এই তুই কি করছিস। আমি বললাম কি করছি তোমার হাত ধরছি। কেন কোন সমস্যা?
সোহান বললো না কোন সমস্যা নেই, আমি বললাম আচ্ছা যদি তোমার গফ তোমার সাথে বসতো তুমি এখন কি করতা?
সোহান বলে উঠলো আমার কোন গফ নেই।
কথা বলতে বলতে বৃষ্টি শুরু হলো। আমি বললাম উফ কত সুন্দর রোমান্টিক ওয়েদার, সব সময় গল্পের ভিতর এমন সব কিছু পড়েছি। নায়ক নায়িকা রিক্সায় ঘুরছে আর এমন সময় বৃষ্টি আরম্ভ হয়।
চলবে