ভিতর_বাহির
২য়+৩য় পর্ব
শাহরিয়ার
এইতো এখুনি যেতাম খাবারটা শেষ করলাম চল চল তাড়াতাড়ি চল আজ সোহান ভাইয়া সবাইকে গান শোনাবে বলতেই সবাই আনন্দে হুররে বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
সোহান আমার দিকে চেয়ে আছে আমি সোহানের হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি ছাদ এর দিকে আজ সোহান পুতুলের মত আমার সাথে হেঁটে যাচ্ছে দুজন সিরি বেয়ে ছাদ এ উঠছি।
আমি বার বার সোহান এর দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছি বেচারা আমাকে মেরে মনে মনে অনুতপ্ত হয়েছে এটা বোঝাই যাচ্ছে। সিরিতে কয়েক পা দিতেই হঠাৎ করে আমার পা পিছলে গেলে আমি পরে যেতে নিলাম। ঠিক তখনি সোহান আমার হাত ধরে টান দিতেই আমি সোহানের বুকে চলে গেলাম।
আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলাম যখন চোখ মেলে তাকালাম তখন আমি সোহানের বুকের সাথে লেপটে আছি। আমি দ্রুত নিজেকে সরিয়ে নিতেই দেখি আমার ঠোটের লিপিস্টিক সোহানের টিশার্টে লেগে আছে। দেখে আমি হেসে দিলাম।
সোহান এই গাধা হাসবি না, এখুনিতো পড়ে নাক মুখ মাথা সব ফাটাচ্ছিলি।
বললেই হলো আমি পড়তাম নাকি আমি তো ইচ্ছে করেই এমনটা করছি, আর মনে মনে ভাবছি এইবার সবার সামনে যাও দেখবে সবাই তোমাকে নিয়ে কি হাসাহাসিটাই না করে।
দুজন ছাদ এ উঠে পড়লাম। জ্যোৎস্না রাত সবাই সোহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। আমি কিছু বলছি না, আমাদের সবার আদরের পিচ্চি ছোট রাফি বলে উঠলো ভাইয়া তোমার জামায় কি লেগে আছে লাল লাল ঐগুলা।
সোহান নিজের টিশার্টের দিকে তাকিয়ে আমার দিকে রাগান্নিত চোখে দেখে বলতে শুরু করলো আর বলিস না একটা পেত্নী সিরিতে পড়ে যেতে নিয়েছিল তাকে বাঁচাতে যেয়ে এই অবস্থা আর একটু হলেই পেত্নীটাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হতো।
আমি রেগে সোহানকে কিল মারতে মারতে বললাম আমি পেত্নী না পাড়লে আমার থেকে সুন্দরি একটা মেয়ে বিয়ে করে নিয়ে এসে দেখাও তবেই মানবো আমি পেত্নী। সব কাজিনরা হাসাহাসি করতে শুরু করলো।
তারপর সবাই এক সাথে গোল হয়ে বসলাম। সোহান গান শুরু করবে। সবাই সোহানের গান শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছে, সোহান বরাবরই খুব ভাল গান গায়। এক কথায় বলা যেতে পারে বাড়ির ছোট বড় সকলেই ওর গানের বক্ত।
বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হবে আর সেখানে সোহান গান গাইবে না তা কোন ভাবেই হয়না। এভাবেই সোহান সবার মনের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে, আমিও কমনা খুব ভাল নাচতে পাড়ি গানের সাথে। কিন্তু আমার নাচাতে সবার আপত্তি আছে। সবার একই কথা আমাদের পরিবারের একটা সম্মান আছে কাজেই পরিবারের কোন মেয়ে নাচতে পারবে না। তবুও আমি চুপি চুপি মাঝে মাঝেই একা একা ঘরের দরজা লাগিয়ে নাচি।
সোহান বলে উঠলো আমার গান গাওয়া শেষ হলে আজ ইকরা সবাইকে নাচ দেখাবে। ওর কথা শোনে সবাই তালি দিয়ে উঠলো। আমি বললাম না না আমি পারবো না কেউ দেখে ফেললে পড়ে বকা শোনতে হবে। সোহান বলে উঠলো ছাদ এ কেউ আসবে না আর আসলেতো আমরা সবাই আছি।
তারপর সোহান গান গাইতে শুরু করলো।
“চোখ যে মনের কথা বলে,
চোখ যে মনের কথা বলে
চোখে চোখ রাখা শুধু নয়
চোখের সে ভাষা বুঝতে হলে
চোখের মত চোখ থাকা চাই।।
ছোট্ট এ মন কখনও চোখে
অনুরাগের পত্র লেখে।
চিঠির সে ভাষা বুঝতে হলে
মনের মত মন থাকা চাই।।
তাই তো এ চোখ কখনও হাসে
অশ্রু জলে কখনও ভাসে।
ভাবের সে ভাষা বুঝতে হলে
ছবির মত ছবি আঁকা চাই”
গানের মাঝে যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম, কখন গান শেষ হয়েছে সে দিকে খেয়ালই করি নাই। সবাই যখন তালি দিয়ে উঠলো তখন চমকে উঠলাম। কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছিল। গানের ভিতর নিজে হারিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু কাউকে বোঝতে দেয়া যাবে না।
সবাই মিলে শুরু করলো আমাকে নাচ করতে হবে,
অতএব শুরু হলো আমার নাচ একটা পুরো গানের সাথে নাচলাম। নাচা শেষ হতেই সবাই আমাকেও তালি দিলো। সোহান বলে উঠলো বুঝলি ইকরা তুই খুব ভাল নাচ করিস ভাবতাছি কোন অনুষ্ঠান হলে তোকে নাচতে বলবো সবার সামনে।
আমি বলে উঠলাম কোন দরকার নেই, শেষে সবার বকা শোনে বাড়ি থেকে বের হতে হবে।
তারপর বলতে শুরু করলাম আজ থেকে আর আমি ছাদ এ আসবোনা তোমরা চাইলে আসতে পারো আমাকে কেউ ডাক দিবা না। সামনেই আমার ফাইনাল পরীক্ষা আমাকে অনেক পড়তে হবে।
সোহান বলে উঠলো আমরা মনে হয় আর পরীক্ষার সময় মজা করি না আড্ডা দেইনি। ঠিক আছে তোর আসতে হবে না। পরীক্ষার পরেই দেখা যাবে কি রেজাল্ট আছে ভাল না হলে চাচাকে বলবো সোজা বিয়ে দিয়ে দিতে।
তুমি আমার বিয়ে নিয়ে এতো পড়ে আছো কেন? নিজে বিয়ে করলে বলো আমরা সবাই যেয়ে বলি, আর তা ছাড়া তুমিতো বাড়ির বড় ছেলে বিয়েটাতো আগে তোমার হবে।
সোহান বলে উঠলো মোটেও না আগে বাড়ির বড় মেয়েকে বিদায় করবো তারপর আমি বিয়ে করবো। পড়ে হিংসায় জ্বলে আমার বউয়ের কানে কান পড়া দিবি সে আমি ভালই বুঝি। এই নিয়ে দুজনের মাঝে আবারও শুরু হলো তুমুল ঝগড়া, আমাদের ঝগড়া দেখে ছোট গুলো হাসতে হাসতে শেষ।
ঝগড়া করতে করতে কখন যে গভীর রাত হয়ে গেছে সেদিকে কারো খেয়াল নেই। শেষে সোহান বলে উঠলো এবার সবাই চল ঘুমাতে যাবো, না হলে বাবা এসে সব গুলারে বকা দিবে।
আমি বললাম এতো বড় ছেলেকেতো আর বকবে না বকলে আমাদের বকবে তার চেয়ে বরং তুমি সারা রাত ছাদ এ বসে বসে গান করো আমরা বরং নেমে যাই।
তোদের জন্যইতো আমাকে বকবে বলবে এতো রাত পর্যন্ত আড্ডা দিচ্ছি এদিকে দেখি রাফি ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়েছে। সোহান রাফিকে কোলে তুলে নিয়ে বললো নে এবার সবাই নেমে পড় আমি ওরে নিয়ে যাচ্ছি।
তারপর একে একে সবাই নেমে গেলাম। রাতে ঘরের দরজা লাগিয়ে সোহানের কাছ থেকে নেয়া গল্পের বইটা পড়তে বসেছি। বইটা পরের দিন ফিরিয়ে দিতে হবে পুরো বইটা পড়া হয়নি, তাই সারা রাত জেগে বইটা পড়ে শেষ করতে হবে।
সোহান যত নতুন বই কিনে সব গুলোই আগে আমি পড়ি তারপর সোহান পড়ে। এটা নিয়ে আমাদের মাঝে মাঝেই ঝগড়া হয়, সোহান বলে নিজে কিনে পড়তে পারিস না আমি কিনলেই কেন তোর পড়তে হবে। আমি বলি তোমার মানেই আমাদের তুমি আমাদের সবার বড় না। তোমারটাইতো আমরা নিবো তারপর সোহান আর কিছু বলতে পাড়ে না।
বই পড়তে পড়তে এক সময় ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠে দেখি নয়টা বেজে গেছে আর এক ঘন্টা পড়েই আমার কোচিং শুরু হবে আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে রেডি হয়ে কোচিং এর জন্য বের হয়ে গেলাম।
কোচিং শেষ হতে হতে প্রতিদিন বারটা বাজে কিন্তু স্যারের শরীর অসুস্থ থাকায় স্যার ত্রিশ মিনিট আগেই ছেড়ে দিলো। আমি বান্ধবিদের সাথে গল্প করতে করতে বাসার পথে হাঁটা শুরু করছি।
এমন সময় দেখি সোহান রিক্সায় একটা মেয়ের পাশে বসে হাত ধরে হাসতে হাসতে কোথায় যেন যাচ্ছে দেখেই আমার মেজাজটা গরম হয়ে গেল।
মেয়েটা অনেক সুন্দরি হ্যাঁ আমার চেয়েও সুন্দরি তাইতো সোহান আমাকে এতো কিছু বলে। এবার আমি বোঝতে পাড়ছি নিশ্চই ঐ মেয়ের সাথে সোহানের রিলেশন আছে। থাকলে থাকুক আমার কি আমিও ওর থেকে স্মার্ট ছেলের সাথে ঘুরে দেখিয়ে দিবো।
কিন্তু সোহানের পাশে মেয়েটাকে কেন জানি আমার সহ্য হলো না ইচ্ছে করছিল রিক্সা থেকে মেয়েটাকে নামিয়ে দেই। কিন্তু আমার কেন হিংসা হবে। আমার কি সোহান যার সাথে খুশি তার সাথে ঘুরবে তাতে আমার কোন কিছু যায় আসেনা।
বাসায় এসে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে সোহানের বইয়ের ভিতরের সব গুলো পৃষ্ঠা কেচি দিয়ে কেটে কুচি কুচি করে সুন্দর করে বইটা টেবিলে সাজিয়ে রেখে দিলাম তবুও কেন জানি কোন ভাবেই রাগ কমতে চাচ্ছে না।
মন চাচ্ছে সোহানের সব গুলো চুল টেনে টেনে ছিড়ে ফেলি তবেই যদি রাগ কমে আর নয়তো ঐ মেয়েটাকে যেয়ে কতগুলো কথা শুনিয়ে আসি তবেই যদি রাগটা কমে। কিন্তু আমি এটাই বুঝতে পারছি না আমার এতো রাগ উঠছে কেন?
সোহানের উপরতো কখনো আমার রাগ উঠে না। বা ওর কোন কাজে আমার কোনদিন মনও খারাপ হয়না তবে আজ কেন এমন হচ্ছে। না নিজের রাগকে কন্ট্রল করতে হবে নাহলে হয়তো উল্টা পাল্টা কিছু করে বসবো এমনিতেই ওর নতুন বই কেটে ফেলেছি এটা নিয়েই অনেক কিছু হবে।
সেই ভয়ে দুপুরে খেয়ে বইটাকে ব্যাগের ভিতর লুকিয়ে চুপচাপ বসে আছি। বিকেলের দিকে সোহান আমার রুমে এসে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করলো আমার বই কই?
আমি চুপ করে বসে আছি দেখে আবার জিজ্ঞাসা করলো আমার বই কই।
আমার কেন জানি প্রচন্ড রাগ উঠলো, আমি রেগে যেয়ে বললাম বই নাই ফেলে দিছি। সোহান আমার কথার কোন রিয়াক্ট না করে সোজা ব্যাগ খুলতে শুরু করলো। আমি দৌড়ে যেয়ে ওর হাত ধরে ফেললাম।
চলবে…
ভিতর_বাহির
৩য়_পর্ব
শাহরিয়ার
বিকেলের দিকে সোহান আমার রুমে এসে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করলো আমার বই কই?
আমি চুপ করে বসে আছি দেখে আবার জিজ্ঞাসা করলো আমার বই কই।
আমার কেন জানি প্রচন্ড রাগ উঠলো, আমি রেগে যেয়ে বললাম বই নাই ফেলে দিছি। সোহান আমার কথার কোন রিয়াক্ট না করে সোজা ব্যাগ খুলতে শুরু করলো। আমি দৌড়ে যেয়ে ওর হাত ধরে ফেললাম।
সোহান আমাকে বললো হাত সরিয়ে নিতে। আমি বললাম না সরাবো না সোহান জোড় করে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে ব্যাগ খুলে বই বের করলো।
বই বের করে আমাকে বলতে শুরু করলো তুই দেখি মিথ্যা কথাও বলতে শিখে গেছিস, বলেই বইটা খুলতেই ফ্যানের বাতাসে বইয়ের কাটা পাতা গুলো উড়ে পড়তে শুরু করলো।
বইয়ের পাতা গুলোর বেহাল অবস্থা দেখে সোহান অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে আর কি করবে তা হয়তো ঠিক করতে পারছে না। দীর্ঘ সময় চুপ থেকে চিৎকার করে বলে উঠলো এটা কি করছিস তুই?
আমি বইয়ের দিকে তাকিয়ে আল্লাহ এটা কি করে হলো মনে হয় ইদুর করেছে আমি করি নাই বিশ্বাস করো বলেই হাসতে শুরু করলাম।
সোহান মিথ্যা কথা বলতে তোর শরম লাগছে না ইকরা। তুই আমার নতুন বইটা কেন এমন করলি।
করেছি বেশ করেছি, আরও করবো রাগ এখনো কমেনি তোমার চুল ছিড়বো তবেই আমার রাগ কমবে। কি ভেবেছো কেউ কিছু দেখবে না, বোঝবে না, জানবে না আর তুমি রিক্সায় করে মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। বলেই চোখ বড় বড় করে সোহানের দিকে তাকালাম।
সোহান বলতে শুরু করলো তাতে তোর কি তুইতো কোন দিনও পাড়বি না কারো সাথে ঘুরে বেড়াতে আমারটা দেখে তোর হিংসা হয়। যা না পাড়লে ঘুরে দেখা। তবেই বোঝবো যে তোকে দিয়ে কিছু হবে।
কি বললে তুমি আমাকে চ্যালেঞ্জ করছো বেশ আমিও তোমাকে দেখিয়ে দিবো ঘুরে মনে রেখ। আমার কথা শোনে সোহান বইটা ছুড়ে মেরে রাগে ফুসফুস করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
আমিও খাটে বসে কান্না করতে শুরু করলাম। কি বলতে কি বলেছি রাগের মাথায়, এখন কি করবো আর আমি এমনই বা কেন করছি বুঝতে পারছি না।
হঠাৎ করে মনে হলো রিয়াদ ভাইয়ের কথা, উনি আমাকে খুবই পছন্দ করেন একসময় ভালোবাসার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম বান্ধবীর ভাই বলে। সোহন কে দেখাতে হলে আমাৱ আর কোন উপায় নেই, রিয়াদ ভাইয়ার সাথেই যোগাযোগ করতে হবে।
আমি ফোনটা বের করে আদিবাকে কল দিলাম আদিবা কল ধরতেই আমি বললাম রিয়াদ ভাইয়ের নাম্বারটা দে। আদিবা আমার কথায় চমকে উঠলো বলল কি বলছিস ভাইয়ার নাম্বার দিয়ে তুই কি করবি।
আমি বললাম তোর এত কিছু জানতে হবে না দিতে বলেছি দে, আদিবা নাম্বার দিতেই আমি ওকে ধন্যবাদ দিয়ে ফোন রেখে দিলাম। তারপর ঘরের দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে রিয়াদ ভাইয়াকে কল দিলাম।
কল রিসিভ করতেই আমি বলে উঠলাম কাল আমার সাথে দেখা করতে হবে পারবেন?
রিয়াদ ভাইয়া বলে উঠলো কে? আমি বললাম দেখা করলেই বুঝতে পারবেন কে। কাল দুপুর বারটা পনের মিনিটের সময় রিয়াদকে সেই ফুচকার দোকানের সামনে আসতে বলে কল কেটে দিলাম।
বিকেল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমার বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ভাল লাগে, তাই নিজেকে আর ঘরের কোনে আবদ্ধ করে রাখতে পাড়লাম না। সিঁরি বেয়ে ছাদ এ উঠে পড়লাম। ছাদের শেষ কর্ণের রিলিং ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছি আর ভাবছি আমি কেন এতো হিংসা করছি।
সোহান যা খুশি করুক তাতে আমার কি আমার কেন এতো জ্বলবে, আর আমি যা করতে যাচ্ছি তা কি ঠিক হচ্ছে? নিজেকেই বার বার নিজে প্রশ্ন করছি কিন্তু কোন উত্তরই যেন পাচ্ছি না।
সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি থেমে গেলে আমি নিচে নেমে এলাম রুমে ঢুকে জামা চেঞ্জ করে বই নিয়ে বসতেই সোহান ভাই এসে বললো বই দে আমি তোকে পড়া দেখিয়ে দিচ্ছি।
আমি তোমার কাছে পড়বো না।
বেশী পাকনামো না করে দে আমি তোকে দেখিয়ে দিচ্ছি ফেল করলে আমার মান ইজ্জত যাবে, সবাই বলবে সোহানের কাজিন ফেল করেছে।
আমি আর কিছু না বলে বই এগিয়ে দিলাম সোহান আমাকে পড়া দেখিয়ে দিচ্ছি আর আমি সোহানের দিকে চেয়ে আছি।
কত সুন্দর করে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছে মনে হচ্ছে যেন সব আমার মাথার ভিতর আটকে আছে প্রায় এক ঘন্টা টানা পড়া বুঝিয়ে দিয়ে বললো কাল রাতে এসে এই পড়া গুলো সব বুঝে নিবো যদি না পারছিস তবে তোর খবর আছে বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
সোহান চলে যাবার পর আমি একা একা পড়ছি কিন্তু পড়াতে মন বসাতে পারছি না। বার বার মনে মনে ভাবছি আর একটু পড়ালে কি এমন হতো।
রাতে সবাই এক সাথে খেয়ে উঠলাম, সোহান বললো আজ থেকে আমরা কেউ আর ছাদ এ যাবো না যতদিন না ইকরার পরীক্ষা শেষ হচ্ছে বলে সোহান খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেল, আমরাও একে একে সবাই উঠে যার যার রুমে চলে গেলাম।
রুমে এসে খুব চিন্তা হতে লাগলো কাল রিয়াদের সাথে দেখা করবো কি করবো না। যদি না করি তবে যদি নাম্বারটা আদিবাকে দেখায় তবে আদিবা বলে দিবে এটা আমার নাম্বার তখন ব্যাপারটা আরও খারাপ দেখাবে।
দেখা করবো দেখা করলে কি এমন হবে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে, খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়লাম কপালে কালো টিপ পড়লাম, চোখে কাজল দিয়ে নাস্তা করতে বের হলাম। মা এসে জিজ্ঞাসা করলো এতো সাজুগুজু কেন আজকে?
আমি মাকে মিথ্যা বললাম যে আজ কোচিং এ আমরা পার্টু করবো সবাই সেজে আসবে তাই আমিও সেজে এসেছি। তারপর নাস্তা করে কোচিং এর জন্য বের হয়ে গেলাম।
সময় মত কোচিং এ চলে আসলাম, কোচিং এ আজ কোন ভাবেই মন বসাতে পাড়ছিলাম না। কোন রকমে দুই ঘন্টা পার করতে লাগলাম। সময় যেন কোন ভাবেই আজ যাচ্ছিল না। অবশেষে বারটার সময় কোচিং শেষ হলে সবার সাথে বের হলাম।
সবাইকে বললাম তোরা যা আমার একটু কাজ আছে, সবাই চলে যাবার পর আমি ফুচাকার দোকানের সামনে যেয়ে দেখি রিয়াদ বসে আছে আমাকে দেখে রিয়াদ দাঁড়িয়ে গেল। বলতে শুরু করলো তুমি এখানে?
আমার মাথায় একটু দুষ্টমি বুদ্ধি খেলে গেল আমিও রিয়াদকে বোকা বানানোর জন্য বললাম আমান কোচিং এখানেই আর আমি এই দিক দিয়েই বাসায় যাই কিন্তু আপনি এখানে কেন?
রিয়াদ বললো এইতো এমনি একটা বন্ধু আসার কথা কিন্তু এখনো আসছে না হয়তো চলে আসবে।
আমি বললামও আচ্ছা তাহলে আমি আসি আপনি আপনার বন্ধর জন্য অপেক্ষা করেন।
রিয়াদ আরে না কোন সমস্যা নেই, তুমি বস বলে দুই প্লেট ফুচকার অর্ডার দিলো। তারপর পকেট থেকে ফোনটা বের করে কল দিলো আমার নাম্বারে
আমি মনে মনে হাসছি কারণ ফোনটা সাইলেন্স মুডে আমার ব্যাগের ভিতর। আর রিয়াদ কল দিয়েই যাচ্ছে।
তিন বার কল দিয়ে বললো মনে হয় বন্ধ এখনো ঘুমাচ্ছে আজ আসবে না কল ধরছে না। এর ভিতর ফুচকা রেডি হয়ে গেছে। উনি ফুচকার প্লেট দুটো নিয়ে এসে একটা প্লেট আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
আমি প্রশ্ন করলাম তারপর বলেন কেমন আছেন?
আর থাকা আমার তোমার কথা বলো, কাউকে কি পছন্দ করেছো? তোমাকে কিন্তু আজ খুবব সুন্দর লাগছে শাড়িতে।
আমি ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনাকেতো বলেছি এইসব প্রেম ভালবাসার ভুত আমার মাথায় কখনো চাপবে না।
তার চেয়ে বরং আপনার কথা বলুন কাউকে কি পেয়েছেন?
না সে চেষ্টা আর করিনি, একবার করেই বুঝেছি আমার দ্বারাও হবে না। তার চেয়ে বরং যেমন আছি তেমনি থাকাটাই ভাল।
আমি ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে বার বার এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছি সোহান আসছে কিনা,
অনেক সময় পর দেখলাম সোহান হেঁটে হেঁটে আসছে। আমি এমন ভাব করলাম যেন সোহানকে দেখি নি, আর আমি এমন জায়গায় বসলাম যেন সোহান আমাকে দেখতে পায়।
সোহান আমার কাছাকাছি আসতেই আমি চোখে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ও মা বলে উঠলাম। রিয়াদ বললো কি হয়েছে তোমার আমি বললাম মনে হয় চোখের ভিতর পোকা পড়েছে একটু দেখে দিবেন প্লীজ। রিয়াদ ভাই আমার চোখের পাপড়ি টেনে মুখটা চোখেন সামনে এনে ফু দিচ্ছে, আমি অন্য চোখে চেয়ে দেখলাম সোহান আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে দেখছে আর হাঁটছে। মনে মনে হয়তো জ্বলে যাচ্ছে।
সোহান আমাকে ক্রশ করে যেতেই আমি রিয়াদকে বললাম ভাইয়া হয়েছে বের হয়ে গেছে পোকা।
রিয়াদ হাত সরিয়ে নিলো। আমি ফুচকা শেষ করে রিয়াদকে ধন্যবাদ বলে বিদায় নিলাম।
বাসার দিকে যাচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি এবার কেমন লাগে সোহান বোঝবে। ভাবতে ভাবতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করলাম। চিন্তা করতে শুরু করলাম রিয়াদের সাথে আর একটু মজা করা যায়, ভেবে রিয়াদকে কল দিলাম।
চলবে..
১ম পর্বের লিংক…..