ভিনদেশি_তারা পর্ব-১৬

0
2143

ভিনদেশি_তারা পর্ব-১৬
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া

৪৬.
আমেরিকার জীবন-যাপন আমার কাছে অসহ্য হয়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। একদিকে পরিবার ছেড়ে সাড়ে তিনবছর যাবৎ এখানে পড়ে আছি। আবার মনটাও খুব খারাপ হয়ে যায়। স্কাইপিতে দেখে কি শান্তি লাগে? ওদের সাথে একটেবিলে বসে হৈ-হুল্লোড় করে খাওয়ার মাঝে যে কি আনন্দ সেটা আমি ছাড়া আর কে-ই বা বুঝবে! ভাত-ডালের বদৌলতে
হটডগ, চাউমিনে যে আমার মন তৃপ্ত হয়না সেটাই বা কে বুঝবে। আমি চাই কাঠফাটা রোদ, ঝুমঝুম বৃষ্টি আর এখানে আছে তুষারের শুভ্রতা আর কনকনে ঠান্ডা। তবে মাঝে মাঝে যে এখানকার রোদ আমার ভালো লাগেনা, সেটা ভুল। আমি চাই একটু অগোছালো, নিয়মবিহীন জীবন। আর এখানে নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে কাজ কর‍তে করতে আমি হাঁপিয়ে গেছি। মানবজনম এমন কেন? বাস করি পৃথিবীতে। কিন্তু মনেমনে নিজের ছোট্ট, অনুন্নত দেশটাকেই চাই, আরও চাই পৃথিবীর ওই কোণের দেশটাতে মরতে। এটাই কি দেশপ্রেম? বিশ্বপ্রেমী না হয়ে দেশপ্রেমী হয়ে আমি কি পৃথিবীর সাথে অন্যায় করছি! জানা নেই। তার উপর আছে নিঝুমের অত্যাচার। এটাসেটা করে আমাকে একেবারে পাগল করে দিচ্ছে। এই এতোদিনে আমি বেশ বুঝে গেছি লোকটা আসলে নিজের জিদের দাস। সে কখনোই আমাকে ভালোবাসেনি। প্রথমে হয়তো আমার রুপ দেখে বিয়ে করতে চেয়েছিলো কিন্তু পরে তা না হওয়ায় জিদের বর্শবতী হয়ে সব ছেড়ে এখানে এসেছে। কিন্তু ভালোবাসাহীন মানুষকে আমি চাইনা। যার ভেতর ভালোবাসা, মমত্ববোধ নেই সে কি করে একজনকে ভালো রাখবে। সে আসলে নিজের ভালো আর স্বস্তি চায়। এদেরকে স্বার্থপর ছাড়া আর কিছু বলা যায়না।

এই একঘেয়ে জীবন থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে চাচ্ছিলাম তেমনই একটা সময়ে আমি কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ক্লেভের সাথে বেরিয়ে গেলাম লস অ্যাঞ্জেলসে। ছোটবেলায় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে দেখেছিলাম এখানের আর্চেস ন্যাশনাল পার্ক। অনেকদিনের স্বপ্ন, তা-ই ওখানে যাওয়া। মারোলা ফ্লোরিডায় তাঁর বাবার কাছে, নিঝুমের বিষয়ে বাবার সাথে ডিসকাস করতে গিয়েছে। বুদ্ধিটা আমারই। আর বাকিরা পড়াশোনায় ব্যস্ত। আমি অনেক কষ্টে ক্লেভকে রাজি করালাম কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য। সে যেতে চাইছিলোনা আমাকে নিয়ে অতদূর, তাও আবার একা। তাই অনেক জোরটোর করে জেনিফারকে সঙ্গে নিয়ে নিলাম। লাইব্রেরি থেকেও ক’দিনের ছুটি নিয়ে নিলাম।

লস অ্যাঞ্জেলস থেকে অ্যারিজোনার পেজ হয়ে সিনিক বাইওয়ে-১২ ধরে মোয়াবের দিকে রওনা হলাম আমরা। উটাহর পূর্বদিকের একটা শহর এই মোয়াব একইসাথে আর্চেস ন্যাশনাল পার্কের প্রবেশপথও। সিনিক বাইওয়ে ধরে এগোলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর রুট-৬৬, রেড ক্যানিয়ন, ডিক্সি ন্যাশনাল ফরেস্ট, ব্রাইস ক্যানিয়ন, ক্যাপিটাল রিফ পেরিয়ে আসতে হয়।

ব্রাইস ক্যানিয়ন নাকি ভীষণ সুন্দর। ব্রাইসে ঢোকার মুখে দুটো রেড ক্যানিয়ন আর্চ রয়েছে।
জেনিফারের অতি উৎসাহের কারণে ওখানে নামতেই হলো। প্রচণ্ড ঠান্ডা চারদিকে। ভিজিটর সেন্টারে পেরিয়ে গেলাম সানরাইজ পয়েন্ট, দেখতে পেলাম ‘হুডুজ’। মানুষের মতো কিন্তু পাথরের স্তম্ভ! সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আমি বললাম, ‘ওয়াও!’

জেনিফার বললো, ‘না আসলে মিস করতাম। কিন্তু এটা এমন অদ্ভুত কেন দেখতে? কিন্তু সুন্দর!’

ক্লেভ বললো, ‘হুম। কিন্তু এর একটা ইতিহাসও আছে।’

আমি উৎসাহী হয়ে বললাম, ‘কী?’

ক্লেভ বললো, ‘নাভাহো জনজাতির লোককথায় আছে, হুডুজ আসলে পাপিষ্ঠ মানুষ। অভিশাপে ঈশ্বর ওদের পাথর করে দিয়েছেন। ব্রাইস ক্যানিয়নের পাহারাদার এখন ওরাই।’

‘ অদ্ভুত ভাবনা।’

‘ তোমার কাছে অদ্ভুত। কিন্তু ওদের কাছে এটা বিশ্বাস।’

জেনিফার জিজ্ঞেস করলো, ‘এগুলো এতো উঁচু কেন?’

‘ এই স্তম্ভগুলির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮ হাজার ফুট।’

আমরা ঘুরে ঘুরে স্তম্ভগুলো দেখলাম। হালকা নরম মিষ্টি রোদ দোল খাচ্ছে। বাতাস বন্য! ফরফর করে গায়ের কাপড় ছুঁয়ে যাচ্ছে। কেঁপে উঠে শরীর। হুডুজের চার পাশ দিয়ে চলেছে নাভাহো লুপের হাইকিং পথ। তুষারে ঢাকা সব।

প্রথমদিন বলে আমরা অনেক ক্লান্ত ছিলাম। তাই সেখানে খানিক ঘুরাঘুরি আর ফটোসেশান করে আমরা ফিরলাম মোয়াবে। সময় লাগলো ঘন্টা দুয়ে’র বেশি। উঠলাম হোটেলে। হোটেলে চেক ইন করার সময় জানলাম স্থানীয় রেস্তরাঁ সানসেট গ্রিলে নাকি মজাদার খাবার পাওয়া যায়। হোটেলে ব্যাগপত্র রেখে, ফ্রেশ হয়ে ক্লেভ আমাদের সেখানে নিয়ে গেলো। ম্যাশড পটেটো, সুস্বাদু টার্কি দিয়ে সেখানেই থ্যাঙ্কস গিভিং ডিনার সারলাম। একটা ক্লান্তিকর, দারুণ, চোখ ধাঁধানো আর নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে পাড়ি দিলাম ঘুমের রাজ্যে।

৪৭.
পরদিন ঘুম ভাঙতেই এক আশ্চর্য সুন্দর সকালের রুপে আমি মুগ্ধ হলাম। এক টুকরো রোদ তুষারের আবরণে ঢেকে চিকচিক করছে। নাম না জানা পাখিদের ঝাঁক উড়ে যাচ্ছে সুদূর। জেনিফার তখনো ঘুমে। আমি ওকে ডেকে তুলে সকালটা দেখালাম এবং সে বাদামি চোখ মেলে অভিভূত হয়ে তাকিয়ে রইলো। একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেগুনি রঙা শার্ট আর জিন্স পড়ে রেডি হলো জেনিফার, আমি পড়লাম ফতুয়া আর জিন্স।উপরে সাদা উইন্ডব্রেকার। ক্লেভকে ফোন দিতেই সে আমাদের বেরুতে বললো। পাশের রুমে ছিলো ও। নাস্তা সেরে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম।

আর্চেস পার্কের ভিজিটর সেন্টারে পৌঁছে দেখলাম একদম খালি, শূন্য। গেটের সামনে দর্শক নেই, হয়তো ঠান্ডার কারণেই। অন্যদিন নাকি প্রচুর ভিড় হয়ে থাকে। কিছু ডলার এন্ট্রান্স ফি দিয়ে আমরা ঢুকে পড়লাম পার্কের ভিতরে। ডানপাশের বেঁকে যাওয়া রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলাম। সেখানে নানা উচ্চতার প্রায় ২ হাজার বালিপাথরের মনোলিথ এবং আর্চ নজরে পড়ল। পার্কটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় চারহাজার ফুট উঁচুতে।

আমরা ক্লেভের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। সে হেসে বললো, ‘কিছু জানতে চাও নাকি?’

‘ হুম।’

‘হাজার হাজার বছর আগে গোটা অঞ্চলটি সমুদ্রের নীচে ছিল। জল শুকিয়ে লবণযুক্ত শিলা ক্ষয়ে গিয়ে আর্চগুলো তৈরি হয়েছে। বুঝলে?’

‘ না বুঝিনি। তুমি তো দেখি দুনিয়া ঘুরে বসে আছো। আর্চেসের ইতিহাস নিশ্চয়ই জানো?’

‘ জানি। কিন্তু ইন্ডিয়ার ট্যাজমহলের ইতিহাসটা ভালো জানি। শুনতে চাও নাকি তোমাদের অত্যাচারী সম্রাট শেজাহানের কথা?’ ক্লেভ বাঁকা হেসে বললো।

আমি রেগে বললাম, ‘অত্যাচারী মানে? ওনি খুবই দারুণ একজন মানুষ।’

‘ জানি জানি।’

‘ কি জানো?’

‘ এই যে, তোমরা শেজাহানের ট্যাজমহলটাই দেখলে শুধু। অত্যাচারটা দেখলে না যে!’

জেনিফার অবাক হয়ে বললো, ‘কে এই শেজাহান?’

ক্লেভ গম্ভীর গলায় বললো, ‘ট্যাজমহলের নাম জানোতো জেনি?

‘ ইয়াহ! বাট এর বেশি কিছু জানিনা।’

‘ It was bulit by emperor Shahjahan.He loves his wife Mumtaz. But Mumtaz died at a young age. Taj Mahal was built over a period of 22 years to preserve the memory of Shah Jahan’s wife. Then he cut off the hands of its craftsmen so that no one else could make this amazing thing. So isn’t he an oppressor, Jenny?’

জেনিফার মনোযোগ দিয়ে সবটা শুনলো। তারপর ক্লেভের সাথে একমত হয়ে বললো, ‘এতো বড় অত্যাচারী লোক! মাই গড।’

ক্লেভ বিজয়ের হাসি হেসে দ্বিতীয় কথাটা বললো, ‘ মোমোট্যাজ আর শেজাহানের বাচ্চা ছিলো ষোলোজন। চিন্তা করো জেনি, তখন মোমোট্যাজের বয়স কম। প্রথম স্বামী থেকে ছিনিয়ে আনে শেজাহান আর অল্প বছর বয়সে মোমোট্যাজ মারা যায়। তাহলে এটা কি টর্চার নয়?’

‘ ইয়াহ, ইয়াহ!’ জেনিফার শুকনো গলায় বললো।

ওদের দুজনের সিরিয়াস কথার মধ্যে আনমনে বলে উঠলাম, ‘Madman Nijhum told me to build the Taj Mahal, ha ha ha.’

ক্লেভ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ব্যাকপ্যাক থেকে পানির বোতল বের করে নিজের মাথায় ঢাললো। আমি, জেনিফা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। চুলগুলো পানিতে ভিজে চুপচুপ করছে। রুমাল বের করে মুখটা মুছে নিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়লো। আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, ‘কি হলো ক্লেভ?’

ক্লেভ কালো মুখ করে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, ‘ওই বাস্টার্ড করবে ট্যাজমহল? আর তুমিও চলে যাবে, তাইনা?’

আমি মজা করে বললাম, ‘ হুম। যাবোই তো। মহল কেউ এমনি এমনি ছেড়ে দেয় নাকি। আমার মহলের নাম হবে চিত্রামহল। সেই চিত্রামহলে আমি রাণীর বেশে বসবাস করবো।’

জেনিফার বললো, ‘শেহজাহানের মতো নিঝুমও একটা অত্যাচারী। আর তুমি জেনেশুনে অত্যাচারীর মহলে থাকবে চিট?’

আমি হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, ‘কি আর করবো? বছর বছর বাচ্চা পয়দা করা ছাড়া ওই শিষমহলে আরাম আয়েশ করে কাটিয়ে দিবো। নিঝুমের ভালোবাসার পাগলামি তো আমাকে দূরে যেতে দিবেনা, বলো!’

জেনিফার মুখ ভার করে বললো, ‘কি ভয়ংকর কথা চিট!’

ক্লেভ তখনো কালোকালো মুখ করে বলতে লাগলো, ‘খনিজ সম্পদে ভরপুর এই জায়গাটার প্রথম সন্ধান পেয়েছিলেন আলেকজান্ডার রিংফার। ১৯২০থেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিজের উদ্যোগে এই জায়গা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে শুরু করেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই পর্যটকরা ভিড় জমাতে শুরু করেন। ১৯২৯ সালে আমাদের প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভার আর্চেস ন্যাশনাল মনুমেন্টটি স্থাপন করেন। পরে ১৯৭১ সালে এটি ন্যাশনাল পার্ক হয়ে ওঠে। আর কিছু জানা বাকি চিট?’

‘ নাহ। ইতিহাসটা বেশ মজার।’

ক্লেভ রাগী গলায় বললো, ‘এখানে মজার কিছু নেই।’

৪৮.
ক্লেভের এই রাগী ভাবটায় আমি মজা পাচ্ছি প্রচুর। তবে রাগের কারণটা আমি ঠিক জানিনা, হয়তো নিঝুমকে সহ্য করতে পারেনা তাই। ও বড়বড় পা ফেলে সামনে এগুচ্ছে। ওর সাথে তাল মিলিয়ে আমরা হাঁটার চেষ্টা করেও পারছিনা আমরা এগিয়ে গেলাম। সামনে পড়লো থ্রি গসিপস। লাল পাথরের তিনটি মনোলিথ পরপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। মূল রাস্তাটার একদম পাশে ব্যালান্সড রক। ভারসাম্য বজায় রেখে একটি বোল্ডারের উপর আর একটি পাথর অদ্ভুত ভাবে দাঁড়িয়ে।পার্কের সমস্ত শিলাস্তম্ভগুলোর মধ্যে ব্যালান্সড রক নাকি সবচেয়ে জনপ্রিয়।

পয়েন্ট প্যানোরামা ভিউ হয়ে ডেলিকেট আর্চ রওনা দিলাম। গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরের আকর্ষণীয় জগৎ দেখতে দেখতে পৌঁছলাম ডেলিকেট আর্চের ট্রেল হেডের সামনে।ডেলিকেট আর্চের দুটো ভিউ পয়েন্ট হলো আপার এবং লোয়ার। আপার ভিউপয়েন্ট অসম্ভব জনপ্রিয়। পাহাড়ের খাড়া রাস্তা ধরে হাইকিংয়ের পথ। তবে, লোয়ার ভিউ পয়েন্ট সমতলে। ডেলিকেট আর্চটি এখান থেকে অনেকটা দূরের। তাই এর জনপ্রিয়তা কিছুটা কম।

ক্লেভ আপার ভিউপয়েন্ট যাওয়ার জন্য বললো। প্রায় ৩ মাইলের হাইকিং পথ ধরে যাত্রা শুরু করলাম। ‘উল্ফরাঞ্চ’ এর পাশ দিয়ে এর ট্রেল হেড।

ক্লেভের গম্ভীর মুখখানায় তখনো ‘রা’ নেই। বোবারোগে ধরলো নাকি মিয়াকে? নিঝুমকে যে সহ্যই করতে পারছেনা এটা বেশ বুঝতে পারছি। কিন্তু ঘুরতে এসে মুখ ফুলিয়ে থাকলে আনন্দটাই তো মাটি হবে। আমি আর জেনিফার গল্প করছি কিন্তু ক্লেভ তখনও চুপ দেখে আমি মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটা নাকি কোন নেকড়ের তৈরি?’

ও আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো, ‘কে বলেছে?’

‘ কোথায় যেন পড়লাম।’

‘ ভুল জানো। এটা জন ওয়েলেসলি উল্ফ নামক একজন তৈরি করেছিলেন। আর তুমি ওনাকে নেকড়ে বলে ওনাকে অপমান করলে!’

‘ আমিতো উল্ফ মানে নেকড়েই বুঝি। আচ্ছা স্যরি। আমিতো জানতাম না!’

‘ হুম। কিন্তু না জেনে, না বুঝে কিছু বলা উচিৎ নয়।ওনি ছিলেন একজন সিভিলিয়ান যোদ্ধা। ১৮ শতকের শেষ দিকে এটা তৈরি করেন। তাই এমন নামকরণ। বুঝলে!’

‘ হুম।’

তারপর আবার নিরবতা। কেউ কিছু বললাম না। সেখানে পৌঁছে হাইক করে আমাদের পৌঁছতে হলো আপার ভিউ পয়েন্টে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৮২৯ ফুট উঁচু। কমলা রঙের রিংটি কোনও কিছুর সাহায্য ছাড়াই ৩৬০ ডিগ্রি বেঁকে গিয়ে আর্চের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রায় ৬০ ফুট উঁচু ডেলিকেট আর্চ! পিছনে বরফে মোড়া লা-সল-মাউন্টেন। প্রায় ৩৫ মাইল দূরে। রোদের আলোয় তখন কি আশ্চর্য সুন্দর লাগছে ডেলিকেট আর্চকে, সেটা বোঝানোর ক্ষমতা প্রকৃতি আমাকে দেয়নি। খুব উপভোগ করছি আমি, মনে হচ্ছে জীবন সার্থক! পৃথিবীর এই অপার অবারিত সৌন্দর্য না দেখে মরে গেলে সত্যিই আফসোস হতো আমার।

ক্লেভ হাত নাড়িয়ে বললো, ‘চলো।’

জেনিফার ছবি তুলছে, কথাটা শুনলো না। আমি বললাম, ‘কোথায়?’

‘ ডেভিলস গার্ডেন। এটাই অন্যতম মূল আকর্ষণ।’

‘ ওরে বাবা!’

‘ কী?’

‘ শয়তানের বাগানে নিয়ে তুমি কি আমাদের মেরে ফেলতে চাও ক্লেভ?’

‘ আবোলতাবোল কথা!’

‘ সত্যি কথা। তোমার মনে কি চলছে বলোতো ক্লেভ? আমাদের ওখানে নিয়ে যেতে চাচ্ছো কেন?’

‘ ওটা একটা সুন্দর দেখার জায়গা। ওখানে কোনো ভূতপ্রেত নেই চিট!’ অসহায় দেখালো ওকে।

‘ যেতে হলে তুমি যাও, আমি না।’

ক্লেভ রেগে বললো, ‘সাধারণ একটা জায়গায় যেতে চাচ্ছোনা, অথচ নিজ্জঝুমের মহলে যেতে চাও। ওরকম ভয়ংকর জায়গায় ওর সাথে থাকবে কিভাবে তুমি, একবারো ভাবলে না। আবার বলো মোমোট্যাজের মতো বছর বছর তোমাদের বেবি হবে!’

আমি থতমত খেয়ে ‘হা’ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। কথাটা মজা করে বলেছি আর এই উল্লুক সিরিয়াস ভেবে এতোক্ষণ মুখ ফুলিয়ে, কালো করে বসেছিলো? পাগল নাকি ও? নিঝুমকে এতো জেলাস করছে কেন ও?

চলবে….ইনশাআল্লাহ। ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। খটোমটো, বিশ্রি আর বিরক্তকর পর্ব দেওয়ার জন্য দুঃখিত। তথ্যগুলো কালেক্টেড! কিছু জায়গায় বাংলিশ/ইংলিশ ব্যবহার করায় দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here