ভিলেন অফ দিওয়ানাপান,পর্ব_২২
লেখিকা: তামান্না
—নাজু……হুম বলো। কালকের জন্যে আয়োজন করবে না?
নাহিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় তেল দিচ্ছে। মাথায় তেল মেখে বলল।
আয়োজন এর কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে উনার মুখের দিকে তাকায়। উনি কোনো উওর না পেয়ে আমার দিকে ঘুরে তাকায়।
আমার মুখের এক্সপ্রেশন বুঝেই বলেন।
—-“আরে ভুলে গেছো? ওও তোমার কি মনে থাকবে তখন তো তুমি পুচকি ছিলে।
—-“এ্যাহ এক্সকিউজ মি আপনি কিসের কথা বলছেন? কোন সময় পুচকি ছিলাম।
কোমরে হাত রেখে উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে বলি।
—“কখন আবার যখন তোমার সাথে বিয়ে হয়ছে।
—-“কখন বিয়ে হয়ছে?
দুষ্টুমির ভাব করে বললাম।
উনি চোখজোড়া স্থির করে বলেন—“পুচকি ছিলা বলে বাসরে ছাড় পেয়েছো কিন্তু এবার কিভাবে পাবা?
—-“ওও আল্লাহ বলে কি মানুষটা?
—-“কি এমন বললাম? বউ তুমি তোমার সাথে বাসর না করলে কি পাশের বাসার জরিনার সাথে করব?
—“উহ ওর সাথে কেন করতে যাবেন? আমাকে কি হুদাই বিয়ে করেছেন?
কথাটা বলে মুখ ফুলিয়ে বসে পড়ি।
উনি আমার পাশে এসে বসে আমার কোমরে হাত রেখে উঠিয়ে নিজের হাটুর উপর বসালেন। তাও আমি চুপ করে মুখ ফুলার ভান করে থাকলাম।
—“কলিজা কথার কথা বলছি সিরিয়াসলি কেন নিচ্ছো?
আমার গালে ঠোঁট রেখে বলছেন।
—-“উহ আপনার তো শখ জরিনা তরিনার কাছে যাওয়ার।
—-“এক চড় লাগাবো? আমি কবে বললাম যে জরিনার কাছে যাবো? আমি তো উদাহরণ দিছিলাম আমার কলিজার নাজুপাখি উম্মমাম….
—“নাহিল শুন…..সিয়াম দরজার কাছে এসে নক না করেই হঠাৎ ঢুকে যাওয়ায় নাহিল আর আমাকে দেখে ফেলে।
তার সাউন্ড পেতেই আমি নাহিলকে ধাক্কা মেরে নিজ থেকে সরিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
বেচারা নাহিল ব্যবলাকান্তের মতো ফেস করে একবার আমার দিকে তো আরেকবার সিয়ামের দিকে তাকায়।
সিয়াম চোখজোড়া বড় করে বলে।
—“জানি না কোন আমলের গাঁজা খাইছি? বার বার তোদের রোমান্স টাইমে আইসা পড়তাছি। ধুর ভাই তুই…তুই রোমান্স কর আমি যা……
ওই হালা শুন কই যাবি হ্যাঁ? নাহিল দাঁড়িয়ে রাগী লুক দিয়ে বলে।
—“আরে দোস্ত মাফ কর তুই কর আমি যায়।
শালা চুপ কর মুডটাই তো নষ্ট কইরা দিছস আবার বলিস করতে চল কাজে যায়।
নাহিল বলে নাজিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দে।
নাহিল সিয়ামের সাথে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
উনার হঠাৎ চমকানো গুলি দেখে নিজেই অবাক হয়।
—“নাহিল ভাইয়া কি সেই ভাইয়া যে শুধুই আমারে বকতো এক দুইবার চড় তত লাগাতোই।
সেই ভাইয়া যে আমার বর ভাবতেও স্বপ্ন লাগে। উনার ভালোবাসা পাচ্ছি। আল্লাহ যেনো আমাদের কখনো আলাদা না করে ইনশাআল্লাহ।
আমি কিচেনের দিকে চলে আসলাম।
সাভেন্টস ও গতকালের কান্ডের পর থেকে নাহিল ভাইয়া সবাইকে কাজে আসতে বলে। উনার কথায় যে যেখানে তাকে সেখান থেকে টাইম মতো সবাই চলে আসে।
কিচেনে এসে মনিয়াকে বলি।
—-“মনিয়া আমাদের জন্যে আজ সিম্পল খাবার রেডি করো।
—“ওকে ম্যাম।
আমি মনিয়ার সাথে বাসার কোথায় কি কাজ করতে হবে সব আবারোও বলে কিচেন থেকে চলে আসতে লাগলে নাহিল ভাইয়ার কল আসে।
কল উঠিয়ে কানে ধরলাম।
—-“হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম হ্যাঁ বলেন।
—“ওয়ালাইকুমুসালাম পাখি রে তোমারে বলিতে ভুলিয়া গিয়ে ছিলাম।
—“কি বলেন কি ভুলছেন?
—-“আয়োজনের কথা রিম্মেবার?
—“ওও হ্যাঁ তো কিসের আয়োজন আর কেনোই বা করব?
—-“বেব আমাদের বিয়ের কত বর্ষ চলছে তোমার ধারণা আছে কি?
—“কত চলছে?
কথায় লজ্জাভাব চলে আসছে। নিজেই জানলাম না এতোদিন আর উনিই বা মনে রেখেছে।
—-“কি চুপ হলে যে?
—“আব বলেন শুনি।
—-“বেব আমাদের বিয়ে হয়েছে ঠিক 2008 এ যখন তুমি সাতবছর ছিলে আর এখন চলছে 2021 তো বুঝিই তো পুরো তেরো বছর অপেক্ষা করেছি এই পূর্ণিমার রাতের জন্যে। তোমার আর আমার একরাত।
আমি মুচকি হেসে হুমম আচ্ছা আমি আয়োজিত করব। আপনি ঠিক টাইমে চলে আসবেন।
—-“শুনো আলমারির মধ্যে তোমার জন্যে একটা পেকেট রেখেছি। খুলে দেখিও।
—-“বাবাহ্ জামাই তো দেখি হেবি রোমান্টিক।
—-“হাহ সামনে আরো দেখবা।
এখন কল রাখি। রাতে দেখা হবে।
উনি কল কেটে দিলেন। আমিও মনিয়ার কাছে গিয়ে বাকি সব সাভেন্টদের ডাকতে বললাম।
সবাই আসলে আমি আয়োজনের কথাটা বললাম।
আয়োজিত নিয়ে সবার মতামত ব্যক্ত করে বলি।
—-“পার্টিটা না হয় আমরা কোনো হিল হাউজে করি?
মনিয়া কথাটা শুনে সাভেন্টস এর দিকে একবার তাকিয়ে বলে।
—“ম্যাম আপনার আইডিয়াটা বেটার হবে কারণ বাসায় করলে আমাদের ও কষ্ট হবে তার চেয়ে ভালো কোনো হিল হাউজে করলে সবাই প্রাকৃতিক পরিবেশটাও উপভোগ করবে সাথে নিজ দায়িত্বে খাবার নিয়ে খাবে।
মনিয়ার কথায় বেশ ভালো লাগল। তাকে বললাম তোমরা রেডি হয়ে নাও প্রয়োজনীয় সব জিনিস এক করে নাও। আমি হিল হাউজ ঠছজবুক করছি ওয়েট!
রুমে এসে ড্রয়ার থেকে হিল হাউজ পেমেন্ট বুক পেলাম। সেটা বের করে হিল হাউজ হিসেবে রোজ গার্ডেন প্যালেস এর দিকে ঠিক রেড রোড এর সাইডে হিল হাউজের জায়গা খালি দেওয়া আছে। সেখানের ম্যানেঞ্জারকে আমাদের আসার আর পার্টির এরেঞ্জমেন্টের বিষয়টা বুঝিয়ে দিলাম।
—-“যদি স্বপ্ন হয় তাহলে সেটা সত্যিও হবে।
মুচকি হেসে কাবার্ড থেকে উনার দেওয়া পেকেটটা বের করলাম।
পেকেট খুলি দেখি। পিংক কালারের গাউন তার উপর ওয়াইট কালারের স্টোন লাগানো জরজেট সিল্কি টাইপ সাথে ওয়াইট কালার স্টনের অনামেন্টর্স।
আমি পেকেটটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
_____
—-“ভাই কি মনে হয়? এবার নোইয়ামুল কি খেলা করবে?
সিয়াম নাহিলের সাথে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে।
—“সেটা নিয়েই ভাবতেছি। কারণ তার সাথী যারা ছিল সব তো শেষ এখন তো সে একলা।
নাহিল থুতনীতে হাত রেখে ভাবান্তর হয়ে বলে।
—-“ভাই সে তো এখন একলা আমাদের তত তাহলে তাকে মারা খুব সহজ হবে। এখনই লোকেশন বের করে জায়গাটা খুঁজতে পারব কি বলিস?
—-“হুম সব পারব কিন্তু খেলা যতটা সহজ ভাবতেছিস ততটা সহজ না।
খেলার মোড় বদলায় খেলা নির্ভর করে খেলোয়াড় এর মাইন্ডের উপর।
এখন নোইয়ামুল লুকিয়ে প্লেন করতেছে সে এখনো সামনে আসতেছে না বা ধামাকা করতেছে না শুধু মাএ কোনো রহস্যের উদ্দেশ্য। সে অপেক্ষা করতেছে এমন সময় এর যখন সবকিছু একসাথে থাকবে। আর তখনই নিজের শয়তানি কাজ কার্যিত করবে।
তবে এক কথা জানিস?
—“কি?
—“আমরা একসাথে আছি তাই আমাদের কাজ হবে একতাই বল। কিন্তু সে আছে একলা। এবার খেলার মোড় সে কিভাবে ঘুরাতে চাই সেটা দেখবো।
এই খেলায় হয় সে মরবে না হয় আমি মরব। তবুও আমার দেশের মাতৃভূমির কিছু হতে দেবো না।
সিয়াম হাসির চেহারা করে নাহিলের কাঁধে হাত রেখে বলে।
—-“প্রাউড তোর মতো বেস্টু পেয়ে।
—“হু নো মেনশন।
নাহিলের ফোন কল আসল সে দেখল তার বাবা কল দিচ্ছে।
সে কল উঠিয়ে কানে ধরল।
—-“হ্যালো ড্যাড আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছো নাজিয়া কি বাসায়?
—“আরে আস্তে আস্তে একসাথে এতো প্রশ্নের উওর দিবো কিভাবে? বুড়ার বয়স হয়ছে তো।
—-“ওপস সরি ভুলেই গেছিলাম তুমি যে বুড়া।
দুষ্টুমির ভাব নিয়ে বলে।
—-“এই বাপের সাথে এভাবে কথা বলে? যাই হোক ওয়ালাইকুমাসালাম আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।বউ মা আছে খাবার রেডি করতেছে।
তুই বাসায় কবে আসবি?
—-“ড্যাড রাতেই আসব।
—“আচ্ছা শুন বাসায় না সোজা রেড রোড রোজ গার্ডেন প্যালেস এর পাশে নদীর কিনারা বরাবর যে হিল হাউজ সেখানে আছিস।
—-“ওখানে কেন?
—-“বউমা বলছে তাই। আমার যা মনে হয় বউমা ভালোই করছে হিল হাউজে পার্টির জন্যে বুক করে। সেখানের পরিবেশটাও সুন্দর সাথে অলরেডি পার্টির আয়োজন ও করা। আজ রাত পূর্ণিমার বড় রাত। চাঁদ সুন্দর ভাবে পুরো পৃথিবীর মধ্যে আলো ছড়িয়ে দিবে। হিল হাউজে চাঁদের মনোরঞ্জন উপভোগ করতে পারব।
নাহিল কিছু একটা ভেবে বলে।
—-“ড্যাড নাজিয়া মিহুকে তোমার সাথে রেখো।
আমি আসার আগ পর্যন্ত ওদের কোথাও যেতে দিও না।
—-“আচ্ছা বাবা তুই যেটা ভালো বুঝিস।
কল কেটে দিল নাহিলে বাবা। সিয়াম নাহিলের কাছে এসে বলে।
—-“কি??
নাহিল সিয়ামকে নাজিয়ার কথাগুলো বলে।
—-“গার্ডস সাথে নিলে ভালো হয়। কারণ হিল হাউজে অহরহ মানুষের ভীড় জমবে। সেখানে ছন্দবেশী হয়েও নোইয়ামুল আসতে পারে।
—-“হুম সিকিউরিটির ব্যবস্থা কর। কাউকে কার্ড ছাড়া হলে ঢুকতে দেওয়া হবে না সেই রুল জারি কর। যারা কার্ড ছাড়া ঢুকতে চাইবে তাদেরকে আমার কাছে আনতে বলিস।
সিয়াম নাহিলের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল। সে সম্মতি দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।
______
—“আমার থেকে যেভাবেই হোক হিল হাউজের পার্টিতে যেতে হবে। না হয় সবাই বোম ব্লাস্টে মারা যাবে।
নোইয়ামুলের গেমে সবাই শেষ হবে তা আমি হতে দেবো না।
কিন্তু অরিফার কি হবে? আমি ছাড়া এর আছেই বা কে?
নিহা অরিফার কাছে এসে বসে তার চুলের মধ্যে বিলি কেটে দিতে থাকে।
ভাবছে যে আজ রাত এতো বড় ধামাকা থেকে সে যে কিভাবে এই কথা নাহিল ভাইয়া আর নাজিয়াকে জানাবে। যতই হোক আমার বেস্টু আর তার পরিবারকে কিছুই হতে দেবো না। অরিফার জন্যে নাজিয়া আছে। সেও তো আমার বোনকে ভালোবাসে। দেখে রাখবে অরিফার কপালে চুমু দিল।
সাথে ঝড়ে পড়ল এক ফুট চোখের পানি।
……..চলবে…..