ভিলেন অফ দিওয়ানাপান,পর্ব_২৫

0
3733

ভিলেন অফ দিওয়ানাপান,পর্ব_২৫
লেখিকা: তামান্না

—-“নাহিল প্লিজ ছাড়েন ভেতরে নিহা আছে। ওর কাছে যেতে হবে প্লিজজজ। নাহিলের বুকে কিল ঘুষি দিচ্ছি ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছড়াছড়ি করছি। কিন্তু নাহিল এমনভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন যে ছাড়লেই আমি হারিয়ে যাবো।
—“প্লিজ নাজুপাখি বুঝার চেষ্টা করো নিহা আর আমাদের মাঝে নেই। সে আগুনে…….না না আপনি মিথ্যে বলছেন। ছাড়েন আমাকে প্লিজ আমার বেস্টি…

—“নাজু প্লিজ শান্ত হও। না…নাজু তু…তুমি আমি নাজিয়ার মুখ নিজের দিকে করে দেখি সে অজ্ঞান হয়ে গেল। দেরি না করে তাকে কোলে করে গাড়িতে বসালাম।
ড্যাড মিহু সিয়ামের গাড়ি করে বাসার দিকে আছে।
আমি আগে থেকে নাজিয়াকে নিয়ে চলে আসলাম। ট্রিটমেন্ট করাতে ডক্টরও চলে আসল।
রাস্তার মধ্যেই ডক্টর কে চৌধুরী হাউজে চলে আসতে বললাম।

—“দোস্ত ভাবির কি খবর?
সিয়াম নাহিলের কাঁধে হাত রেখে জিগ্গেস করে।
মিহুও চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রুমের মধ্যে।
নাহিল সিয়ামের দিকে একবার অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আবার নাজিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

ডক্টর চেক আপ করে ইনঞ্জেকশন দিয়ে নাহিল এর দিকে তাকায়। নাহিল দাঁড়িয়ে বলে।

—“জি আমার ওয়াইফ এখন কেমন আছে?

—“মেয়েটা মনে হয় খুব বড় শকের মধ্যে থেকে গেল। একটু উইক হয়ে পড়েছে প্রপার খাবার মেডিসিন দিলে সুস্থ হয়ে যাবে। আপাত দুইঘন্টা ঘুমের মধ্যে কাটাবে কারণ ঘুমের ইনঞ্জেশন পুশ করেছি। টেক কেয়ার।

ডক্টরের কথায় সবাই স্বস্তি পেল। সিয়াম ডক্টরকে নিয়ে বাহিরে পাঠিয়ে দিতে যায়।
ডক্টর যাওয়ার পর সিয়াম বাহিরের দরজার ফিলার ঠেসে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির নানা চেনা জিনিসগুলির চলাচল দেখতে থাকে। সে যাকে ভালোবাসলো আজ তাকেই হারিয়ে ফেলল। নিরবে ভালোবেসে কথাটা নিরবেই রয়ে গেল। নিয়তির মধ্যে হয়তো এটাই লিখা ছিল।

মিহু দূরে দাঁড়িয়ে সিয়ামকে লক্ষ করছে। হিল হাউজে ঘটনাটা ঘটার পর থেকে কেমন যেনো চুপচাপ হয়ে গেল। ঠিকভাবে কথা বলছে না মিশছে না।

—“চাইলেই সবকিছু পাওয়া যায় না; হয় বিসর্জন দিতে হয় না হয় কোনো ভাবে হাসিল করতে হয়।
মিহু কথাগুলো ভেবে নিজের রুমের দিকে যায়।

____

—“এখন কেমন লাগছে?
নাহিল আমার কাঁধ জড়িয়ে ঠিকভাবে বেডের হ্যান্ডেল এর সাথে হেলান দিয়ে আমার হাতজোড়া নিজের হাতের সাথে চেপে ধরে।

—“হুম লাগছে ভালো। কিন্তু নিহার কথা মনে পড়ছে। ঠিকভাবে আছে কি সে? আচ্ছা নাহিল শুনেন না।

—-“হুম বলো।

—“অরিফা আছে না নিহার বোন? তাকে এখন থেকে আমরা আমাদের সাথেই রাখব প্লিজ।

নাহিল মুচকি হেসে নিজের মাথা নাড়ায়। আমি খুশি হয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। নিজের মনটাকে হালকা করতে উনার বুকে মাথা রাখলেই যেনো সব শান্তি মনের মাঝে ছড়ে বসে।
মিসেস মনিয়া হাতে খাবার নিয়ে এসে নক করেন। নাহিল আমাকে ছেড়ে দরজার দিকে গিয়ে দরজা খুলে মিসেস মনিয়ার থেকে খাবারের প্লেট নেন।

খাবার নিয়ে আমার কাছে বসলেন। এক লোকমা করে করে দুইজন দুইজনকে খাওয়ায় দিতে থাকি। খাওয়া শেষে উনি নিজে আমার হাত পরিষ্কার করে দিলেন। মেডিসিন দেন। প্রথমে খেতে না চাইলেও নাহিলের বাচ্চামির জন্যে খেতে হলো।
পুরো রাত নির্ঘুম কাটাবো ধারণা ছিল কিন্তু পার্টিতে হওয়া দুর্ঘটনার পর রাতটা নিরবে নাহিলের বুকে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম।

সিয়াম নিজের রুমে মেঝেতে বসে নিহার ছবি নিয়ে চোখের জল ফেলাতে থাকে।

—“শুধু একবার বলতে চেয়ে ছিলাম ভালোবাসি।
আসলেই আমার জীবনটায় দুভাগ্য ছাড়া কিছু নেই।
হাজার ভালোবাসলেও পরিশেষে এর প্রস্তাব করার আগেই শেষ হয়ে যায় ভালোবাসার গল্পটি।
আল্লাহহহহহ আমার নিয়তি কেনোই বা এমন করে বানালেন? কিভাবে থাকব আমি নিহাকে ছাড়া?

নিহার ছবি বুকে রেখে সিয়াম স্মৃতির গভীরে ঢুব দে।
মিহু সিয়ামের রুমের পাশ কেটে যাচ্ছিলো তখন তার রূমের দরজা হালকা খোলা থাকায়। ফাঁকের মধ্যে থেকে সিয়ামের অবস্থা দেখল।

—“খুব ভেঙ্গে পড়েছে আমার কলিজা। তাও আমার হাত বদ্ধ কি মুখ কি অধিকার নিয়ে তোমায় আপন করব? তোমার অন্তর জুড়ে তো শুধু নিহার বসবাস। পারব কি আমি তোমার ভালোবাসার মানুষ হতে? পারব কি তোমার জীবনের হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা পূরণ করতে! অবশ্যই পারব শুধু একবার সুযোগ দিয়ে দেখলে।
মিহু মনের মধ্যে ভেবে রুমে চলে আসে। তার রুমে পানির মগে পানি না থাকায় পানি খেতে রুম থেকে বেরিয়ে ছিল।

সকালে…..

পাখির কিচিরমিচির শব্দ জানালা ভেদ করে ভেতরে আসতে থাকে। রোদের রশ্নিও মুখের উপর আঁচড়ে পড়ছে। হাই তুলে উঠলাম পাশে তাকিয়ে দেখি নাহিলের বাচ্চার মতো ফেসটা। যে চেহারায় আছে প্রচুর নিষ্পাপ ভাব। তার কপালে চুমু দিয়ে উঠে পড়লাম। অযু করে বের হলাম। নাহিলকে ডেকে ডেকে উঠিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলাম।

উনার অযু বানানো হলে একসাথে নামাজ আদায় করলাম।
রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমে এসে দেখি আব্বু আম্মু চলে আসছে। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। এতোদিন কতোই মিস করেছিলাম।
মাফুজ আঙ্কেল আরভী খানের কাঁধে হাত রেখে বলেন।

—“চলেন ভাইসাহেব এবার শ্বশুরবাড়ি বানিয়ে দি আপনার মেয়ের জন্যে।
উনার কথায় আব্বুও সাড়া দিলেন। মিসেস মনিয়াকে দিয়ে মিস্টি আনেন।
নাহিল দাঁড়িয়ে ফোন টিপতেছে। এ দেখে আমি রাগে উনার কাছে ফোনটা কেড়ে নিলাম। উনি অবাক হয়ে বলে।

—“কি ফোন নিলা কেন?

—-“কেন নিছি? এখানে সবাই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতেছে আর আপনার কোনো খেয়ালই নাই।

—“কিসের এতো গুরুত্বপূর্ণ তোমার আমার বিয়েই তো।
ডোন্ট কেয়ার ভাব করে নাজিয়ার হাত থেকে ছুঁ মেরে ফোন নিয়ে আবারো ফোন টিপাতে মনোযোগ দিল।

আমিও আবার ফোন নিয়ে বলি।

—-“বাহ্ বিয়ে করবেন না বললেই তো হয়। এতো বনিতা করার দরকার আছে নাকি?

—-“হাহ বিয়ে করবা না করবা এটা একান্ত তোমার ব্যাপার।

—“তার মানে আপনি আমায় বিয়ে করবেন না?
—“না প্রথম বউ থাকতে দ্বিতীয় বিয়ে কেন করতে যাবো আজব?

—“প্রথম বউ মানে কি???? আপনার ফাস্ট ওয়াইফ কে হ্যাঁ? এখনই নাম বলেন তাকে খুন করে আপনার প্রথম বউ হবো বলেনন।
রাগী সুর নিয়ে বলি কোমরে হাত রাখলাম।

উনি আমার ফেসের রিয়েকশন দেখে হু হা করে হাসতে থাকে। সবার দিকে তাকিয়ে দেখি সবাই মুখ টিপে হাসছে। কিন্তু কেন?
ভেবে আমি নাহিল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলি।

—-“হাসছো কেন আমার প্রশ্নের জবাব তো দাও!

—“ওরে আমার বোকা বউ রে। আমার ফাস্ট ওয়াইফ তো তুই-ই তোকেই তো একবার বিয়ে করছি। তো দ্বিতীয় বার বিয়ে করে কি নিজেকে ফাঁসিতে ঝুলাবো।
প্রথম দিকের কথাগুলো শুনে ভালো লাগলেও শেষের দিকে কথা ঘুরিয়ে অপমান করল।

—-“ওই আমি তোকে ফাঁসিতে ঝুলাই তাই না?

—“তা না হলে কি হ্যাঁ? মিস কাজলকে যেভাবে চড় লাগাইছো উফফফ বুঝলাম না তার থেকে কামড় দেওয়ায় মনে হয় অসুখ আছে।

—“ব্যসস খামোস বেশি বলছিস ওয়েট।
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু আছে না খুঁজতে থাকি। নাহিল ভাইয়া হাসার মাঝেই জিগ্গেস করলেন কি খুঁজতেছো?

আমি কিছু না সোজা ঝাড়ু নিয়ে উনার হাত পায়ে সুড়সুড়ি দিয়ে দৌড়াতে থাকি।

____

মিহু সিয়ামের রুমে এসে দরজায় নক করতে করতে বলে।

—“সিয়াম দরজা খুল আমি মিহ। প্লিজ দরজা খোলো কথা আছে।

সিয়ামের সাড়া না পেয়ে মিহু কিছুটা ঘাবড়ে যায়। সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে গেলে পিছ থেকে সিয়াম দরজা খুলে ডাক লাগায়। মিহু এসে তার রুমে ঢুকে।

—“সিয়াম একটা কথা বললে মাইন্ড করবে না।

—“হুম বলো।

—“আমি…….মিহুওওওও সিয়ামওও তাড়াতাড়ি আসো বের হতে হব।

সিয়াম মিহু আর কথা বলতে পারল না। নাজিয়ার ডাকে তারা সিড়ি বেয়ে নিচে আসল।

নাহিল গাড়িতে উঠতে বলে। মিহু সিয়াম জিগ্গেস কল এখন কোথায় যাচ্ছি?

—“নিহার বাসায়। অরিফাকে নিতে।
নাহিল বলেই গাড়ি চালাতে থাকে।

নিহার বাসার সামনে আসলাম। সবাই বাসায় ঢুকে তার রুমের মধ্যে লাগানো আমাদের পুরো ফ্রেন্ডশিপের ছবি।ফটোশপ করে রাখছে।
আমি নিয়ে অরিফাকে খুলে। রাতে ঘুমাইছে এখনো ঘুম হয় নি। দেখে অরিফার মাথায় খুব ব্যথা হচ্ছে।
অরিফাকে……

…….চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here