ভীন_দেশের_গল্প #পর্ব_১১ (শেষ পর্ব – ২য় অংশ)

2
2069

#ভীন_দেশের_গল্প
#পর্ব_১১ (শেষ পর্ব – ২য় অংশ)
লেখনীতে- #অলিন্দ্রিয়া_রুহি

পিটপিট করে চোখ খুলতেই চোখ ধাঁধানো আলোয় নিজেকে আবিষ্কার করল লাবণী। আলোর তীব্রতায় সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। কপালে পড়া ঈষৎ কয়েকটি ভাঁজ এবং ঠোঁটের কুঁচকানি জানান দিলো, তার হুশ ফিরে এসেছে। স্মৃতির পাতায় কয়েক ঘন্টা আগের ঘটা ঘটনাগুলো এক এক করে হৈচৈ লাগাতেই সে অস্পষ্ট কণ্ঠে ডেকে উঠে,
-‘আপু!’
সে আশা করেছিল, কোনো জবাব আসবে না। এখানে নিশ্চিত সে একা। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে পরিচিত কণ্ঠটি নড়ে উঠল তৎক্ষনাৎ।
-‘লাবণী? লাবণী তুমি উঠেছো? থ্যাংক গড!’
লাবণী ঝট করে চোখ খুলল। এবার আলোর তীব্রতা কমে এলো তার কাছে। চোখে সয়ে গেছে। সে আশেপাশে তাকিয়ে অপরিচিত কাউকে দেখতে না পেয়ে স্বস্তির ভারী নিঃশ্বাস ফেলল। পরমুহূর্তেই জুলিয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করতে চমকে উঠল। জুলিয়ার চেহারার অবস্থা করুণ,অনেকটাই রুগ্ন লাগছে তাকে। সেই সাথে চোখের উপর কিছু একটা বেঁধে রেখেছে। লাবণী ভাবল, নিশ্চয়ই শয়তানের দল গুলো এই কাজ করেছে। জুলিয়ার চোখ বেঁধে দিয়েছে। সে দ্রুত জুলিয়ার চোখের পট্টি খুলতে হাত বাড়ালে, জুলিয়া বুঝতে পেরে হৈহৈ করে উঠল।
-‘আরে আরে,করছ কী! স্টপ লাবণী। প্লিজ।’
লাবণী বিব্র‍ত ভঙ্গিতে সরে গেল। জুলিয়া রুক্ষতার সহিত বলল,
-‘এই পট্টি খুললেই আমি অন্ধ হয়ে যাবো লাবণী।’
-‘অন্ধ হয়ে যাবেন! অন্ধ কেন হবেন?’
নিজের বিস্ময়তা লুকোতে না পেরে সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো সে। জুলিয়া ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
-‘আমি কয়েকটা কথা কনফেস করতে চাই তোমার কাছে। কিন্তু তার আগে তোমার থেকে কিছু উত্তর জানতে চাই। আমি যা যা প্রশ্ন করব, তুমি তার ঠিক ঠিক উত্তর দেবে?’
লাবণী উৎসুক হয়ে উঠেছে। জুলিয়া তাকে কী বলতে চায়! তা আক্ষরিক অর্থে ধরতে না পারলেও নিজের ভেতরকার সমস্ত কথাগুলো সত্য আকারেই তার সামনে পেশ করতে মন সায় জানাচ্ছে।
লাবণী উপর-নিচ মাথা দুলিয়ে বলল,
-‘হুম। বলেন।’
কোনোপ্রকার ভণিতা ছাড়াই প্রশ্ন-উত্তরের পর্বমালা শুরু করে জুলিয়া।
-‘তুমি কে?’
আকস্মিক এ ধরনের প্রশ্নে যারপরনাই বিস্মিত হয়ে লাবণী। একই সঙ্গে হতবিহ্বল।
হতভম্ব হয়ে যাওয়া গলায় তোতলাতে তোতলাতে উত্তর করে,
-‘আ..আমি..আমি লাবণী। মানে..আর কী পরিচয় দেবো আমার?’
-‘তোমার সম্পর্কে সব কথা বলো। তুমি কোথা থেকে এসেছো, কেন এসেছো, আগে কোথায় থাকতে, ওখানটা কেন ছেড়ে এসেছো, আর তুমি নাকি ভাইয়াকে বলেছো, তোমার কেউ নেই। সব মানুষেরই পরিবার থাকে। তাহলে তোমার পরিবার কোথায়?’

এক সঙ্গে এতগুলো প্রশ্ন শুনে লাবণী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সেই সঙ্গে অতীতের জ্বালাময়ী চ্যাপ্টার গুলো একের পর এক চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছে,এই যে,এই তো মাজহাবের বিয়ে হচ্ছে মহুয়ার সঙ্গে। মঞ্চের উপর দু’জনে জোড়া সেজে বসে রয়েছে কত সুন্দর ভাবে!
লুকোতে চাইলে অনেক কিছু লুকানো যায়। কিন্তু কেন যেন জুলিয়ার তোপে পড়েও কোনোকিছু লুকোতে ইচ্ছে করল না লাবণীর। খাঁচা টা স্টিলের তৈরি। মেঝে পরিষ্কার। লাবণী সেদিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকে বলতে শুরু করল,

-‘আমি লাবণী। আমার বাবা-মা কে,জানি না। আমি থাকতাম এক গায়ে, এক মামার বাড়িতে। সে আমার আপন মামা কীনা তাও জানি না। তবে বুঝ হওয়ার পর থেকেই তাকে দেখেছি, আমার দেখভাল করতে। তাদের গোয়াল ঘরে শোয়ার স্থান টুকু এবং প্রতি বেলায় একটু আহার করার বিনিময়ে তাদের ঘরের, ক্ষেতের প্রায় সমস্ত কাজ আমি করে দিতাম। সেখানেই আমার শ্বাশুড়ি আলেয়া খাতুনের সঙ্গে আমার দেখা হয়। তিনি কেন গিয়েছিলেন ওই গ্রামে আমি জানি না। আমি ক্ষেতে কাজ করছিলাম, তখন নাকি তিনি আমাকে দেখেন। আমার প্রতি তার মায়া হয়। ওই মামার সঙ্গে কথাবার্তা বলে আমাকে নিয়ে আসেন নিজের সঙ্গে। তারপর আস্তেধীরে শহরের পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখি। শুদ্ধ ভাষাটা রপ্ত করি। কমবেশ সবকিছুই আমি রপ্ত করতে পেরেছিলাম, শুধু স্বামীর মন ছাড়া। আমার শ্বাশুড়িই তার মেজো ছেলের সঙ্গে আমার বিবাহ দিয়ে যান উনার মৃত্যুর আগে আগে। উনি যতদিন ছিলেন আমি সম্মানের সহিত ওই বাড়িতে ছিলাম। যেই না উনি চলে গেলেন, আমার আসল স্থান কোথায়, তা সবাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে লাগল। আমার স্বামীর আমার মতো ক্ষেত,গেঁয়ো,আনস্মার্ট কাউকে দিয়ে জীবন চলবে না তাই তিনি পুনরায় দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয় বিয়ের পর আমাকে তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলা হলো। আমার তো কেউ নেই,কোথায় যাবো? কাউকে চিনি না,জানি না। তখন আমার বড় ভাবী, মানে আমার স্বামীর বড় ভাইয়ের বউ,আমাকে বলল,তার চাচা বিদেশে কাজের লোক পাঠান। আমি চাইলে আমার জন্যেও ব্যবস্থা করে দিবে। আমি রাজী হয়ে গেলাম। এছাড়া তো আর কোনো পথ ছিল না। এভাবেই আপনাদের কাছে এসে পৌঁছালাম। এরচেয়ে বেশি আমার ব্যাপারে বলার মতো আর কিছুই নেই আপু।’

লাবণী থামলো। তার চোখদুটো ছলছল করছে রাগে,দুঃখে,অপমানে। একটা বাড়িতে দীর্ঘদিন যাবত কোনো কুকুর থাকলেও তার সাথে এভাবে ব্যবহার হয় না যেভাবে লাবণীর সাথে করা হয়েছে এবং তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

জুলিয়া ছোট্ট করে বলল,
-‘ওহ।’
পরক্ষণেই চুপ হয়ে গেল। লাবণীকে দেখতে পারছে না সে, তবে লাবণীর মনের অবস্থাটা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারছে। কথাগুলো বলার সময় তার গলার স্বরের তারতম্য বলে দিয়েছে,প্রতিটি কথা সত্য। এক বিন্দু মিথ্যে নেই এতে। এর মানে এই দাঁড়ায়,লাবণী সহজ-সরল সাধারণ একজন মানুষ। যার আগেপিছে কোনো কিছুই নেই জুলিয়াদের প্রতি। সে স্রেফ একজন কাজের লোক হিসেবেই এসেছে ওদের বাড়িতে।

নিরবতা ধীরেদ ধীরে গ্রাস করে নিলো তাদের দু’জনকে। প্রহর গুলো খুব লম্বা মনে হতে লাগল। লাবণী চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল, জুলিয়া চুপ করে বসে রয়েছে। আঙুলের ডগা দিয়ে চোখের কার্নিশে জমা জল ফোঁটা গুলো মুছে নিয়ে লাবণী বলল,
-‘আপু,আপনি কী যেন বলবেন বলছিলেন।’
-‘উম?’ নড়েচড়ে বসে জুলিয়া। নিজের ভাবনার জগতটাকে আপাতত স্থগিত রেখে সে উপরনিচ মাথা দোলাতে শুরু করে। হালকা গলায় জবাব দেয়,
-‘বলব। তার আগে তোমাকে একটা ওয়াদা করতে হবে। সবকিছু জানার পর আমাকে বা আমার পরিবারকে মোটেও ভয় করতে পারবে না তুমি। আমরা কাউকে নিজ থেকে ক্ষতি করি না। তোমাকে এইসব কিছু জানানোরও কোনো ইচ্ছে আমার নেই৷ কিন্তু এখন তোমার থেকে যেসব সাহায্য আমার প্রয়োজন, তা করতে গেলে তুমি হাজারটা প্রশ্ন করবে। তাই শুরুতেই সব বলে দিতে চাইছি। আর হ্যাঁ, এই কথাগুলো তুমি ব্যতীত আর কেউ যেন না জানে। কেউ না। লাবণী, গট ইট? কেউ না!’

চমকের উপর চমক যেন আজ অপেক্ষা করছে লাবণীর জন্য। অস্ফুটস্বরে ঠোঁট চিঁড়ে বেরিয়ে আসে,
-‘আচ্ছা।’
পরমুহূর্তেই সব শান্ত,নিস্তব্ধ। লাবণী চোখ গোল করে তাকিয়ে রয়েছে রহস্যময়ী কিছু শোনার জন্য। এই পরিবারটাকে একটু হলেও অদ্ভুত লেগেছিল তার। এখন হতে পারে সেই রহস্যের সবকিছু খোলাসা হতে চলেছে।

জুলিয়া শক্ত কণ্ঠে বলতে শুরু করল,
-‘লাবণী, আমি..আমরা মানুষ নই। আমরা র’ক্তচোষা।’

এতটুকু বলতেই লাবণীর চোখজোড়া ছানাবড়া। র’ক্তচোষা মানে কী তা সে জানে না। শুধু ‘আমরা মানুষ নই’ এইটুকু শুনেই তার হাত-পায়ে অসম্ভব কাঁপন ধরে গেল। ছিটকে একটুখানি পিছনে সরে যেতেই জুলিয়া সরল কণ্ঠে বলে উঠল,
-‘কেন ভয় পাচ্ছো লাবণী? তোমাকে কী আমি কিছু করব? আর প্রথমেই বলেছি না,তোমার কোনো ক্ষতি আমরা করব না। আমি তোমার নড়াচড়া টের পাই চোখে না দেখলেও। লাবণী, আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোনো প্লিজ!’

বুক চিঁড়ে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। নিজেকে কোনোরকমে ধাতস্থ করে জুলিয়ার বাকি কথাগুলো শোনার জন্য। কম্পমান গলায় বলে,
-‘ব…বলেন।’
জুলিয়া মৃদু স্বরে পুনরায় বলতে শুরু করল,
-‘লাবণী, দেখো, ভয় পাওয়ার কিছুই নেই এখানে। আমরা মানুষ নই, তাই বলে তোমার কোনো ক্ষতি করব বা আমরা ভয়ংকর এমন কিছু না। আমরা র’ক্তচোষা। আমরা বিভিন্ন প্রাণীর র’ক্ত গ্রহণ করে থাকি। সত্যি বলতে মানুষের র’ক্তও আমাদের অনেক পছন্দ তবে সেটা খুউউউব কম করে থাকি। আমাদের চোখের রঙ,গায়ের রঙ এবং কথাবার্তা,আচার-আচরণে তাই পরিবর্তন আছে৷ আমরা যদি নিজে থেকে পরিচয় না দেই, তবে কেউ ধরতে পারবে না। কিন্তু হ্যাঁ, আমরা যে অদ্ভুত তাতে মানুষের সন্দেহ বাড়বে। লাবণী, আরও একটা কথা, আমরা অতিরিক্ত আলো সহ্য করতে পারি না। যত কম আলো হয়, ততই মঙ্গল। একদম অন্ধকার তো আমাদের খুব পছন্দের।’

-‘এইজন্যেই আপনি ওইসময় বলছিলেন, যে আপনি অন্ধকারে দেখতে পান, তাই না?’
এ পর্যায়ে কথার মাঝখানে ফট করে বলে বসল লাবণী। জুলিয়া মাথা ঝাকিয়ে ‘হ্যাঁ’ উত্তর করে।
-‘হুম যাক এবার বুঝছো তাহলে।’
-‘ওহ, এই জন্যেই এই আলো গুলো আপনাকে সমস্যায় ফেলেছে। আপনি চোখে পট্টি বেঁধে আছেন, না?’
পুনরায় প্রশ্ন ছোঁড়ে লাবণী। জুলিয়া আপ্লুত কণ্ঠে বলল,
-‘হ্যাঁ হ্যাঁ, এই তো, কত দ্রুত সবটা বুঝে গেলে তুমি। ট্যালেন্টেড!’
লাবণী মৃদু শ্বাস ফেলে। ভয়ে ভয়ে একটু এগিয়ে যায় জুলিয়ার দিকে। জুলিয়া তার নড়াচড়ার উপস্থিতি বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলে,
-‘আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না লাবণী৷ ভয় পেও না। এই দেখো..’
বলে নিজের একটা হাত বাড়িয়ে দিলো। লাবণী রয়ে সয়ে সেই হাতের উপর নিজের হাতটা ছোঁয়াতেই জুলিয়া খপ করে ধরে ফেলে। লাবণী কেঁপে উঠল। জুলিয়া হেসে বলল,
-‘আমরা তোমাদের মতোই। সাধারণ, তবে তোমাদের চোখে অন্যরকম, এই যা। বিশ্বাস করো, আমার কাছে তুমি নিরাপদ। এবং আমার পরিবারের কাছেও।’
এতক্ষণ ধরে অন্তর খামচে ধরা ভয় আর ধুকপুকানিটা কিছুটা হলেও কমে একরাশ স্বস্তি ধীরে ধীরে জায়গা দখল করতে শুরু করল।
জুলিয়া বলল,
-‘এবার আমাকে একটা সাহায্য করো প্লিজ। এই আলো গুলো সরিয়ে দাও। নইলে আমি চোখ খুলতে পারব না। আমার সমস্ত শক্তি এই চোখেই।’
-‘হুম। আমি দেখছি।’
লাবণীর প্রত্যুত্তর। সে সাহস নিয়ে উঠে দাঁড়াল, খাঁচার পাশে গিয়ে ছোট ছোট উজ্জ্বল আলো দেওয়া লাইট গুলো সরানোর জন্য হাত বাড়ালো।

মালোকো এবং আলিজাকে বন্দী করা হয়েছে। রাজবন্দী নয়, সাধারণ জনগণকে যেভাবে টেনেহিঁচড়ে, অসম্মানের সহিত বন্দী করা হয়, ঠিক তেমন ভাবে। মালোকো অতি আশ্চর্য হয়ে গেছে এরকম আচরণ দেখে। সে এতোটা নিকৃষ্টতা এবং নিষ্ঠুরতা আশা করেনি। এখন তো মনে হচ্ছে,এতদিন যাদের জন্য ভেবেছিল সে এবং তার দাদা, পরদাদারা- তারা সবাই ভুল করেছে। তারা চিনে যেতে পারেনি আর্নিশ বংশের র’ক্তচোষাদের আসল রূপ, আসল চেহারা।
আলিজা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগে গজগজ করে বললেন,
-‘দেখলে মালোকো, দেখলে তুমি। কাদের জন্য নিজেকে ত্যাগ করে এসেছো এতদিন?’
মালোকো নিস্তরঙ্গ গলায় বললেন,
-‘দেখলাম।’
-‘ম্যাক্সকে একবার ফিরে আসতে দাও, সব ক’টাকে দেখে নেবো আমি।’
-‘একটু চুপ থাকো আলিজা। প্রার্থনা করো,ম্যাক্স যাতে ফিরে আসতে পারে।’
কথাটুকু বলেই মালোকো চুপ হয়ে গেলেন। আলিজা অবাক দৃষ্টিপাত করে বললেন,
-‘তুমি কী বলতে চাইছো মালোকো? এতকিছুর পরও কী আমার ছেলের প্রতি তোমার বিশ্বাস জন্মায় না?’
মালোকো বিরক্তির স্বরে বললেন,
-‘আলিজা, তুমি নিজেও জানো আমার পরে এই বংশের হাল ধরার জন্য যোগ্য যদি কেউ হয়ে থাকে তবে সে ম্যাক্সই। কিন্তু…ওকে আরও সাবধানী হতে হবে। একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগে সেটা যেন না ঘটতে পারে সেই বিষয়ে হুশিয়ার থাকতে হবে।’
-‘আজব কথা বলছো মালোকো। বিপদ কী আসার আগে তোমাকে টেলিফোন করে আসবে যে আমি আসতেছি?’
এত দুশ্চিন্তা ও কঠোর সময়ের মাঝেও আলিজার এমন কথা শুনে মালোকোর অধরে হাসি ফুঁটে উঠে। সে স্ত্রীর দিকে মমতা নিয়ে তাকান। আলিজা রাগে ফুঁসছে। তার নাসিকাপথ বেয়ে ফোঁসফোঁস আওয়াজে গরম বায়ু বেরিয়ে আসছে৷ মালোকো মেকী ভয় পাওয়ার অভিনয়ে বললেন,
-‘ওরি বাপরে, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার ঘাড়ে ফুঁটো করতে তোমার দাঁত গুলো হিশহিশ করছে আলিজা।’
আলিজা শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেললেন। ক্লান্ত ভঙ্গিতে কারাঘরের ভেতরে থাকা বেঞ্চের উপর ধপ করে বসে পড়লেন। বললেন,
-‘মালোকো, তোমার এই মজা করার স্বভাবটা আপাতত বন্ধ রাখো। আমার কিছুই ভালো লাগছে না। আমার ক্লান্ত লাগছে মালোকো।’
মালোকো চোখে স্নেহ নিয়ে স্ত্রীর পাশে গিয়ে বসলেন। আলিজাকে টেনে তার মাথাটা নিজের বুকের উপরে রেখে আরেক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আশ্বাসের সুরে বললেন,
-‘এখনই ক্লান্ত হয়ে গেলে সামনে কী হবে রাণী? আপনি যে আমার মনের রাণীর পাশাপাশি এই বংশেরও রাণী। আপনাকে যে শক্ত থাকতে হবে। আপনার ছেলে এসে আপনাকে এই অবস্থায় দেখলে তার কী ভালো লাগবে? সে ‘ব্লাড স্টোন’ এবং জুলিয়াকে নিয়ে ফেরা মাত্রই আমরা আমাদের আসনে পুনরায় বসতে পারব৷ আর তখন..দেখে নেবো সব ক’টাকে। সেই পর্যন্ত আপনাকে ধৈর্যের সহিত শক্তভাবে অপেক্ষা করে যেতে হবে রাণী।’
আলিজা প্রত্যুত্তরে কিছু না বলে শুধু মাথাটা আরেকটু শক্ত করে মালোকোর বুকের ভেতর ঢুকে গেলেন।

থু করে এক দলা থুতু ছুঁড়ে মারে শারু। সে বসে রয়েছে একটা গাছের গুড়ির উপরে। তার কপালের উপর রাগ এবং বিরক্তির মিশ্রণে বেশ কয়েকটি ভাঁজ পড়ে রয়েছে অবহেলায়। তার বা হাতে ধরা সিগারেট, ধোঁয়া উড়ছে লঘু আকারে। শারু অপেক্ষা করছে পরবর্তী চালের। আর কতক্ষণ এখানে এভাবে বসে থাকতে হবে কে জানে। আর সেই-বা কেন আসছে না এখনো? সে তো বলেছিল, ম্যাক্স ‘ব্লাড স্টোন’ নিয়ে চলে আসার আগ মুহূর্তেই সে চলে আসবে। নিজ হাতে ম্যাক্সের হাত থেকে ছিনিয়ে নিবে পৃথিবীর অতি দামী ‘ব্লাড স্টোন’ পাথরটি,রত্নটি। তাহলে সে কই? আর কিছুক্ষণ পরই সকাল হবে। রাতের আঁধার ধীরে ধীরে কেটে যেতে শুরু করেছে। পূর্ব আকাশের অন্ধকার ফ্যাকাশে।
শারু চূড়ান্ত রাগ নিয়ে গাঁকগাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল,
-‘এখনো আসছে না কেন! উফ!’
ঠিক তখনই তার পেছন থেকে ভেসে এলো একটি কণ্ঠস্বর, ‘আমাকে খুঁজছিলে?’
শারু ঝট করে পেছনে তাকিয়েই মৃদু হেসে উঠে।
-‘অবশেষে, অবশেষে তোমার দেখা পেলাম ম্যাডাম!’
মহুয়া শারুর খুব কাছে এসে, শারুর শার্টের কলারে হাত বোলাতে বোলাতে এক ভ্রু উঁচু করে নিয়ে বলল,
-‘কেন? খুব কষ্ট হচ্ছিল বুঝি আমাকে না দেখতে পেয়ে?’
মহুয়ার গলায় আলতো আঙুলের ছোঁয়া স্পর্শ করায় শারু। সেই আঙুল ধীরে ধীরে গলা থেকে নেমে চিবুক, তারপর বুকের মধ্যিখানে গিয়ে থেমে দাঁড়াল। তার ওষ্ঠে দুষ্টু হাসি। গলার স্বর টেনে টেনে সে উত্তর করল,
-‘হুউউউম। খুউউউব। খুব কষ্ট হচ্ছিল ম্যাডাম।’
ঠোঁটে হাসি রেখেই মহুয়া শারুর হাতটা সরিয়ে দিলো। শারুর কপালের উপর থাকা এলো চুলগুলোকে গুছোতে গুছোতে বলল,
-‘এখন নয়। আগে কাজটা শেষ হোক।’
-‘জি আজ্ঞা ম্যাডাম।’
বলে নিজের ঘাড়টা নাটকীয় ভঙ্গিতে নিচু করে শারু। প্রত্যুত্তরে মহুয়া হেসে উঠে। নিজের সৌন্দর্য এবং আকর্ষণীয় আচরণ দিয়ে যেকোনো পুরুষকে কাবু করতে সে সক্ষম, তা যেন আরও একবার প্রমাণিত হলো।

-‘ও কী এসেছে?’
প্রশ্ন ছোঁড়ে মহুয়া। শারু উত্তর করল,
-‘জানি না। চলো, কক্ষে গিয়ে দেখা যাক।’
-‘আমি যা যা রেডি করতে বলেছিলাম, সব কিছু রেডি করেছো কী?’
-‘জি জনাবা। সব তৈরি। শুধু তোমার আমার বাসর ঘরটাই তৈরি না এখনো।’
বলে এক চোখ টিপে দিলো শারু। মহুয়া সদ্য কিশোরে পা দেওয়া কিশোরীর ন্যায় খিলখিল করে হেসে উঠে। শারুর নাকটা টিপে ধরে বলে,
-‘তুমি কিন্তু অনেক দুষ্টু আছো ছেলে। কাজটা শেষ হোক, দেখবো কত তেজ শরীরে।’
-‘ভেবে দেখো। আমি কিন্তু একবার ধরলে সহজে ছাড়ব না।’
-‘তুমি ভেবে দেখো। আমার হাত থেকে ছাড়া পাওয়া কিন্তু অনেক মুশকিল। এমনকি, তোমার জান চলে যাবে, তাও ছাড়া পাবে কীনা সন্দেহ।’
মহুয়ার কথাগুলো শোনায় রহস্যময়, কিন্তু কামুকের আগুনে জ্বলতে থাকা শারুর নিকট তা স্বাভাবিক কথোপকথন যেন।
নিজের টোন ঠিক করে মহুয়া ফের বলল,
-‘চলো,কক্ষে চলো। আর ওই লাবণীর কী ব্যবস্থা করেছো শুনি?’
-‘ওকে? নিজেকে অনেক বড় শেয়ানা ভেবেছিল বুঝলে। লাইটগুলো সরাতে গিয়েছিল। ভাগ্যিস আমার লোক ওকে দেখে ফেলে। পরে আর কী, গিয়ে একটা বারি দিলাম মাথায়। ওখানেই চিৎপটাং। আর ওর সঙ্গের টা কাঁদছে ভেউ ভেউ করে। হা হা হা!’
মহুয়া ক্রুর হাসি হাসে।
-‘জুলিয়াকে আমার জীবিত চাই শারু। মনে আছে তো?’
-‘আছে। তাই তো ওকে আমি এখন অবধি ছুঁয়েও দেখিনি। কিন্তু ওকে দিয়ে কী করবে তুমি? একটা অপদার্থ মেয়ে। পারে শুধু চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলতে আর নিজের সৌন্দর্যের বড়াই করতে।’
-‘কী করব,সেটা পরে দেখা যাবে। তোমাকে যা বললাম, তা মনে রেখো। কোনোকিছু এদিক ওদিক হলে…’
-‘হবে না। কিন্তু বিনিময়ে আমাকে কী দিবে,তাও মনে রেখো।’
শারুর পুরুষাঙ্গকে স্পর্শ করে মহুয়া বিদ্রুপের সুরে বললাম,
-‘এর শান্তি চাই,তাই তো? ওকে মনে রাখলাম।’

-‘লাবণী, লাবণী প্লিজ জেগে উঠো লাবণী, প্লিজ..’
জুলিয়া চাপাস্বরে কাঁদছে। তার চেয়ে একটু দূরে এলোমেলো ভাবে অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছে লাবণী। সে যেইমাত্র লাইটগুলো ছুঁতে যাবে,ওমনি শারু চলে আসে কক্ষের ভেতর। তারপর খানিকক্ষণ ধস্তাধস্তি শেষে লাবণীর মাথায় তীব্র আঘাত করে বসে শারু। লাবণী মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়ে ধূলো মাখানো মাটির উপরে। অপরদিকে জুলিয়া, কোনোকিছু দেখতে না পেলেও আঘাতের শব্দ এবং লাবণীর অজ্ঞান হয়ে যাওয়াটা ঠিকই টের পেয়েছে। একটু সন্দেহও জাগছে তার মনে। লাবণী ম’রে ট’রে গেল না তো!

-‘লাবণী, কী হয়েছে লাবণীর?’

আচানক ম্যাক্সের প্রশ্নে জুলিয়া বিদ্যুৎ বেগে পিঠ সোজা করে বসল। আশেপাশে খুঁজে বেড়ায় ভাইকে। ম্যাক্স একটা নির্দিষ্ট দিক থেকে বলল,
-‘আমি এখানে জুলিয়া। আমি আসছি। আমার হাতে ‘ব্লাড স্টোন’। এই আলো আমার কিছুই করতে পারছে না। কিন্তু লাবণী,ওর কী হয়েছে জুলিয়া?’
-‘লাবণীকে আঘাত করেছে শারু ভাইয়া। ও, ও অজ্ঞান ভাইয়া। ও আমাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল।’
-‘শারু!’
দাঁত কটমট করে নামটা উচ্চারণ করল ম্যাক্স।
জুলিয়া তড়িঘড়ি করে বলল,
-‘তুমি এখান থেকে চলে যাও ভাইয়া। শারু আর ওর দলবল আশেপাশেই আছে। তোমাকে দেখতে পেলে..’
-‘কিচ্ছু করতে পারবে না। আমার হাতে ‘ব্লাড স্টোন’ আছে, এর ক্ষমতা তুই জানিস?’

কক্ষের ভেতরে কয়েক জোড়া পায়ের শব্দ হয়। জুলিয়া,ম্যাক্স দু’জনেই তটস্থ হয়ে উঠে। জুলিয়ার কান্নার মাত্রা বেড়ে গেলেও তা নিঃশব্দ রইলো। অপরদিকে ম্যাক্স তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে। প্রথমে শারু ঢুকল, তারপর কেউ একজন। তার চেহারাটা অস্পষ্ট এই শেষ রাতের প্রহরে। ম্যাক্সের চোখের চাহনি সরু করে, আরও শক্তি দিয়ে চাইলো। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয় এবার। মহুয়া!
এত গুলো বছর পর! ম্যাক্সের মনে হলো, তার মাথার উপর আসমান ভেঙে পড়েছে। তার হতবিহ্বল চেহারাটা দেখে যারপরনাই হাসি ফুঁটে উঠে মহুয়ার ঠোঁটে। সে ব্যঙ্গ নিয়ে বলে উঠল,
-‘কেমন আছেন?আমাকে জীবিত দেখে নিশ্চয়ই ভালো নেই।’
-‘তু…তুমি?’
ম্যাক্সের উচ্চারণ তোতলে আসে। সত্যিই,সে এবং তার পরিবার জানত মহুয়া বেঁচে নেই। কিন্তু..
মহুয়া শব্দ করে হেসে উঠল।
-‘রাজকুমারের কণ্ঠ কাঁপছে, এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে!’
কথাটা শোনা মাত্রই তড়িৎ নিজেকে সামলে শক্ত হয়ে উঠে ম্যাক্স। গলার স্বরে কাঠিন্য যোগ করে বলল,
-‘হেয়ালি ছাড়ো মহুয়া। তুমি এখানে কী করছো? তাও আবার শারুর সাথে..’
-‘কাম অন রাজকুমার। তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে দেখে কী ভেবেছো, আমি আর কারও হবো না? তোমার অপেক্ষাতেই থাকবো? নো। শারু আমার নতুন ভালোবাসা। সে তোমার চেয়েও বেশি ভালোবাসে আমাকে। আমি যদি তাকে আমার জন্য জান দিয়ে দিতে বলি, তবে সে তা-ই করতে প্রস্তুত। আর তুমি সামান্য ‘ব্লাড স্টোন’ আমাকে দিতে পারলে না!’
-‘ওটাকে ভালোবাসা না,মোহ বলে। যার কাছে নিজের জীবন দামী নয়, তার কাছে তুমি কেমন দামী, তা আমার বুঝতে বাকী নেই আর। আর খবরদার যদি ‘ব্লাড স্টোন’ কে তুমি সামান্য বলো। অবশ্য তোমার মতো সামান্য মেয়ের মুখে এছাড়া আর কীইবা আশা করা যায়।’
ম্যাক্সের ঠোঁটের কোণে ঠাট্টারা লুটোপুটি খায়। মহুয়া শক্ত হয়ে উঠে। জোরালো কণ্ঠে বলে,
-‘তোমার এই বড় বড় কথাগুলো একটু পরেই গায়েব হয়ে যাবে রাজকুমার। মনে রেখো।’
-‘এর আগেও আমাকে অপদস্ত করার কম চেষ্টা করেছো কী? পেরেছো বলো?’
-‘না পারি তবে এবার পারবো।’
মহুয়া চিৎকার করে উঠে। শারুকে ইশারায় কিছু একটা ইঙ্গিত করতেই ম্যাক্স যেখানে দাঁড়িয়ে, তার পেছন দিক থেকে একটা বড় পাথর গড়িয়ে নামল। ম্যাক্স কিছু বুঝে উঠার আগেই পাথরের ধাক্কায় মাটিতে পড়ে গেল। সেই সঙ্গে হাত থেকে খসে পড়ে ‘ব্লাড স্টোন’। একই সঙ্গে উপর থেকে অনেক গুলো বড় বড় লতা গড়িয়ে পড়ল ম্যাক্সের গায়ের উপর। প্রতিটি লতায় পঞ্চাশ পিস করে ছোট উজ্জ্বল লাইট। ম্যাক্স আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠে। নাম ধরে ডাকল, ‘মহুয়ায়ায়ায়ায়ায়া…’

ততক্ষণে ‘ব্লাড স্টোন’ মাটি থেকে কুড়িয়ে মহুয়া নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। অবাক বিস্ময় নিয়ে ‘ব্লাড স্টোন’ ঘুরে ঘুরে দেখে সে। জীবনে এই প্রথম, এই প্রথম ‘ব্লাড স্টোন’ নিজের হাতের মুঠোয় পেল। অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বড় হা করে ‘ব্লাড স্টোন’ টাকে মুহূর্তেই নিজের মুখের ভেতর পুড়ে গিলে নিলো মহুয়া। শারু ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়। মহুয়া তাকে দেখে হেসে উঠে। শারুর দিকে হাত বাড়ালেও শারু আরেকটু দূরে সরে যায় হাত ধরার বদলে। মহুয়া বলল,
-‘কী শারু? বাসর করবে না আমার সাথে?’
-‘তু..তুমিও মা..মানুষ..’
-‘হুম, আমিও মানুষ নই। আমি পিচাশ। আমি পিচাশ রাজ্যের রাজকন্যা মহুয়া। হা হা হা।’
দু’দিকে দু’হাত প্রশস্ত করে কক্ষ কাঁপিয়ে তোলে হাসির দমকে। পরক্ষণেই হাসি থামিয়ে আদেশের সুরে শারুকে বলল,
-‘তোলো..তোলো ওই মেয়েটাকে।’
শারু সঙ্গে সঙ্গে আদেশ পালন করল। খাঁচা সরিয়ে জুলিয়াকে ধরতেই জুলিয়া চিৎকার করে ‘ভাইয়া…ভাইয়া’ বলে ডাকতে লাগল। ওদিকে ম্যাক্স পড়ে রয়েছে হাজার হাজার লাইটের নিচে। প্রায় অবশ,অচেতন হয়ে যাওয়া অবস্থায়। তার দু’চোখ ইতিমধ্যেই অন্ধ হয়ে গিয়েছে।
জুলিয়াকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে লাগল শারু। মহুয়া ম্যাক্সের কাছে এসে নিচু হয়ে ম্যাক্সের কানের কাছে মুখটা নামিয়ে ফিসফিস কণ্ঠে বলল,
-‘তোমাকে কেন বাঁচিয়ে রাখলাম জানো? যেন তোমাদের জগতে গিয়ে নিজেই নিজের বোকামির কথাটা বলতে পারো। আমাকে যে অপমান, লজ্জা তোমার কারণে নিজের জগতে সহ্য করতে হয়েছিল, তা এবার তুমি হাড়ে হাড়ে টের পাবে। এবং তারপর এই অন্ধ চোখ নিয়ে শত লাঞ্চনা গঞ্জনা সহ্য করার চাইতে ম’রে যাওয়া উত্তম মনে করবে। এটাই হবে তোমার শাস্তি ম্যাক্স।আর আমি? আমি হবো এই পৃথিবীর সবচাইতে শক্তিশালী এবং সুখী ব্যক্তিটি…আমার অন্তরে যে গেঁথে গিয়েছে তোমাদের অতি দামী ‘ব্লাড স্টোন’। বায় মিঃ ম্যাক্স। তোমার মৃ’ত্যু হলে আমি অনেক গুলো র’ক্তচোষাকে র’ক্ত খাইয়ে দিবো। প্রমিস।’

জুলিয়াকে আর ‘ব্লাড স্টোন’ কে নিয়ে যে ম্যাক্সের ফেরার অপেক্ষায় তার বাবা-মা অপেক্ষারত, সেই জুলিয়া এবং ‘ব্লাড স্টোন’ নিয়ে চলে গেল মহুয়া। অন্ধকার ধূলো মাখানো ঘরটায় পড়ে রইলো নিস্তেজ, অবশ হয়ে যাওয়া অন্ধ র’ক্তচোষা এবং র’ক্তে-মাংসের মানবীটি। এরপর? মহুয়া কী জিতে গেল তাহলে? জুলিয়ার শেষ পরিণতি কী হবে? ম্যাক্স কী আদৌও বেঁচে ফিরবে নাকি ম’রে যাবে আত্মগ্লানি সইতে না পেরে। আর অভাগী কন্যা লাবণী, তারই বা শেষ পর্যন্ত কী হবে?

বাইরে নতুন ভোরের প্রথম আলো ফুঁটি ফুঁটি করছে। ভোর সবার জীবনে নতুন সুযোগ, নতুন উদ্যম নিয়ে এলেও ম্যাক্স এবং লাবণীর জীবনে কী শুধুই অন্ধকার নিয়ে নামলো?

(১ম পরিচ্ছদের সমাপ্তি)

গল্পের ২য় পরিচ্ছদ এরপর থেকেই শুরু হবে। কবে নাগাদ শুরু করতে পারব বলতে পারছি না। শুরু করার আগে অবশ্যই জানিয়ে দেবো। মাজহাব, রুবা, তনয় সহ বাকিসব রহস্যও ২য় পরিচ্ছদে শেষ হবে আশা করি। সবাই ভালো থাকবেন ততদিন, আল্লাহ হাফেজ।]

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here