ভুবন_বিলাসী part 12
#লেখিকাঃসীমা
আলিয়া অনেক কষ্টে রাগ কন্ট্রোল করে।
আলিয়াঃলুচু মেয়ে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে বিরক্ত করছে।(বিড়বিড় করে)
মায়া আলিয়াকে একটা চোখ টিপ্পনী দিলে আলিয়া হা করে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
কোনোমতে ক্লাস শেষ করে আলিয়া বাড়ির দিকে রওনা দেয় কিন্তু মায়া মেয়েটা তার পিছন ছাড়ছে না।কাজল আর পিয়া আলিয়াকে পিছন থেকে ডাক দেওয়ায় থেমে যায়।
কাজলঃকিরে আমাদের রেখে যাচ্ছিস কেনো?
আলিয়াঃনতুন মেয়েটার হাবভাব আমার ভালো লাগছে না সারাক্ষন নাছোড়বান্দার মত পিছনে পরে আছে।
পিয়াঃও কোনো ছেলে নয় যে ভয় করবি চল।
মায়া কোথা থেকে তখন এসে বলল,
মায়াঃআমাকে একটু ড্রপ করে দিবে আলিয়া?
আলিয়াঃপারব না চলে যাও
মায়াঃআমরা তো ফ্রেন্ড তাইনা।
পিয়াঃআলিয়া এমন করছিস কেনো মায়া তুমি এসোতো।
আলিয়া অনিচ্ছার সত্ত্বেও গাড়ি বসে ড্রাইভ করে থাকে।মায়া আলিয়ার পাশে বসে বারবার তাকাচ্ছে আলিয়ার দিকে যেটা আলিয়া মোটেও পছন্দ করছেনা।
আলিয়াঃএভাবে আমাকে দেখার কি আছে(বিরক্ত হয়ে)
মায়াঃকিছু না।
কাজল আর পিয়া তাদের বাসার সামনে নেমে পরে।
আলিয়া এবার মায়াকে বলে,
আলিয়াঃআয়ান কাল থেকে যেন ক্লাসে আর না দেখি।
মায়া চমকে আলিয়ার দিকে তাকায়।
আলিয়াঃযা বলছি যেনো মনে থাকে আর হা করে কি দেখছো বুঝলাম কি করে?তুমি মেয়ে সেজেছ ঠিক আছে কিন্তু তোমার আঙ্গুলের আংটিটা খুলতে তুমি ভুলে গেছো।যখন তুমি আমার কোমরে হাত দিয়েছিলে তখনি দেখেছিলাম।সবার সামনে তোমার মান সম্মান যেনো না যায় এজন্য চুপ ছিলাম। আমি চাইনা তুমি আমার সামনে এসো।এবার গাড়ি থেকে নেমে যাও একটা মেয়েকে হয়তো কিডন্যাপ করা সহজ কিন্তু ছেলেকে না।
আয়ান হা করে সব কথা শুনছিলো।
আয়ানঃআলিয়া তুমি অনেক বুদ্ধিমতি এত সহজে পিছু আমি ছাড়ছি না।
আয়ান আলিয়াকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।আলিয়ার ঠোটে কিস করে আয়ান নেমে পড়ে।যাওয়ার সময় বলে,
আয়ানঃরাতে তোমাদের বাড়িতে আসবো।(মুচকি হেসে)
আলিয়া ভেংচি দিয়ে বাড়ি চলে আসে বাড়িতে।
,
,
রাতে আয়ান আর ওর বাবা আসে আলিয়াদের বাড়িতে।আয়ানের বাবা আলিয়ার পরিবারের সবার কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চায়।বিশেষ করে মেহরাবের কাছে।
আয়ানের বাবাঃআমাকে ক্ষমা করে দিস এতোদিন আমি আর আয়ান যা করেছি তার জন্য খুবই অনুতপ্ত।
আলিয়ার বাবাঃআরে কি করছিস তোর জায়গায় আমি থাকলে এটা করতাম আর ভুলে গেছিস বন্ধুত্বে নো সরি নো থ্যাংস।
রায়হান চৌধুরী মেহরাবকে জড়িয়ে ধরে।সবাই গল্পে ব্যস্ত থাকলে আলিয়ার রুমে আয়ান চলে যায়।
আলিয়া বই পড়ছিলো বেডে শুয়ে আয়ান আলিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
আলিয়াঃতুমি এখানে কি করছো?
আয়ানঃবউটাকে দেখতে এসেছি জানো কালকে ঘরোয়াভাবে ফুপি আর চাচ্চুর বিয়ে হবে?
আলিয়াঃ(নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে)জানি তোমাদের এতদিনের আশা পূরণ হবে শুধু মাঝখানে আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো।
আয়ানঃআলিয়া তোমার পায়ে পড়লে কি আমায় ক্ষমা করবে ঠিক আছে তাই করবো।
আলিয়ার পা জড়িয়ে ধরে আয়ান।
আলিয়াঃকি করছো আমার পা ছাড়ো?
আয়ানঃআগে বলো ক্ষমা করেছ তার পর ছাড়বো।
আলিয়াঃঠিক আছে ক্ষমা করলাম এবার উঠো।
আয়ান উঠে আলিয়াকে জড়িয়ে ধরে বেডে শুয়ে পড়ে।
আয়ানঃআজ আমার সাথে তোমাকে যেতে হবে আমাদের বাড়িতে।
আলিয়াঃআয়ান আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি তাইবলে আমি তোমার সাথে সংসার করতে পারব না প্লিজ চলে যাও।
আয়ানঃআমি যাবো না তোমাকে নিয়ে যাবো।
আয়ান আলিয়াকে পাগলের মত কিস করে।আলিয়ার গলায় একটা কামড় বসিয়ে দেয় আয়ান।আলিয়া আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে বেড থেকে ফ্লোরে ফেলে দেয়।
আলিয়াঃপাগল হয়ে গেছো তুমি?
আয়ান ফ্লোরে বসে হাসতে থাকে।
আয়ানঃআলিয়া তুমি রাগলে অনেক সুন্দর লাগে তোমাকে। (ফ্লোর থেকে উঠে)আমি জানি আমি যা করেছি তা হয়তো কোনোদিন ক্ষমা পাবো না তবু আমি তোমাকে ছাড়তে পারব না।
আলিয়াঃআ….
আলিয়া কিছু বলার আগে আয়ান আলিয়ার ঠোটে কিস করে।
আয়ানঃরেডি হয়ে নাও তুমি ও বাড়ির বউ আমার মা নেই যে সব সামলিয়ে নিবে তাই তোমার এটা কর্তব্য।
আলিয়াঃআয়ান তোমাকে আমি…(রেগে)
আয়ানঃভালবাসবে।
আলিয়াঃহুহু ভালবাসবো ঐ আশায় সারাজীবন বসে থাকো।আমি তোমার বাড়িতে যাবো না।
আয়ানঃআমি তোমাকে নিয়ে যাবো।(আলিয়ার হাত ধরে)
আলিয়াঃমাম্মাআআআআ???
আয়ানঃআবার কি হলো?
আলিয়াঃএকটা রাক্ষস আমার হাত ধরেছে।
আয়ানঃ???
আলিয়া আবার চিৎকার করতে গেলে আয়ান আলিয়া মুখ চেপে ধরে।
আয়ানঃপিচ্চি এত চিৎকার করো কেনো(আলিয়াকে জড়িয়ে ধরে)
সখিনাঃআমি কিছু দেখি নাই(চোখ ঢেকে)
আলিয়া নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আয়ানের দিকে রাগি চোখে তাকায়।
আলিয়াঃকেনো এসেছিস?
সখিনাঃদাদিজান আপনারে ডাকতাছে নিচে আসেন।
আলিয়া আর আয়ান নিচে নেমে আসে।
দাদিঃআলিয়া আমরা চাচ্ছি যে তুই আয়ানদের সাথে ওদের বাড়িতে যা।
আলিয়াঃঠিক আছে দাদি তবে আমার একটা শর্ত আছে(আয়ানের দিকে তাকিয়ে)
দাদিঃবল দাদুভাই।
আলিয়াঃবিয়ের পর আমি আয়ানকে ডিভোর্স দিবো এটা তোমাদের সবাইকে মানতে হবে।
সবাই অবাক হয়ে আলিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আলিয়ার মাঃএসবের মানে কি আলিয়া?
আলিয়াঃমাম্মা প্লিজ আমার জীবন আমার মত করে কাটাতে দাও।এমনিতে আয়ান আমার পরিবার তোমাকে আপন করে নিতে পারলেও আমি পারবনা।যতবার তোমার আপন করে নেয়ার চেষ্টা করেছি ততবার তোমার আঘাতের কথা মনে হয়েছে।এমনিতেও তোমার গুলিতে বা পানিতে যখন ফেলেছিলে কিংবা হাসপাতালে যখন মারার চেষ্টা করেছিলে তখন যদি চলে যেতাম কি করতে?
আয়ানঃআলিয়া….
আলিয়াঃআমি তোমাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারব না ক্ষমা করে দিও আমাকে আর মাম্মা তোমরা আমাকে বাধ্য করো না আবার তোমাদের ছেড়ে চলে যেতে।
সায়ানঃআলিয়া বুজতে চেষ্টা কর তোর এই শর্ত কেউ মানতে পারবে না।বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি মেয়েদের আসল বাড়ি হয়।
আলিয়াঃকেনো এ বাড়িতে থাকার আমার কোনো অধিকার নেই?মনে রেখো তোমাদের মত দাদুও আমাকে সমান সম্পতি লিখে দিয়ে গেছেন।
সায়ানঃআমাদের ভুল বুঝছিস কেনো আমরা তোর ভালো চাই।
আলিয়াঃভাইয়া প্লিজ তুমি যদি চাও তো আমার কলিজাটা বের করে তোমার হাতে দিবো কিন্তু আয়ানকে আমার পক্ষে মানা সম্ভব না।
আয়ানঃঠিক আছে তোমাকে আমি ডিভোর্স দিবো তবে একটা শর্ত আমার আছে,তোমাকে পাঁচমাস আমার বাড়িতে থাকতে হবে আমার বউ হয়ে।পাঁচমাস পরে যদি মনে হয় তুমি আমাকে ভালবাসো না তো আমি সেদিনই তোমাকে ডিভোর্স দিবো।
আলিয়াঃআমি তোমার এই শর্ত মানতে পারব না।
আয়ানঃকেনো ভয়ে কাজল তো বলেছিল তুমি ভয় পাও না।তোমার এই ভয় হচ্ছে তুমি না আমাকে ভালোবেসে ফেলো।
আলিয়াঃতোমাকে আর ভালবাসবো আমি সেটা কোনোদিন হবেনা।
আয়ানঃতো দেখা যাক।
আলিয়াঃওকে আমি রাজি আছি।
আয়ানঃকোনোকিছু নিতে হবে না তোমাকে তোমার জন্য সবকিছু আমি কিনে রেখেছি।
আলিয়া কিছু না বলে নিজের রুমে যায়।
আয়ানের বাবাঃআয়ান এসব কি বললে?
আয়ানঃআলিয়াকে ফেরানোর এই পথ ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। তোমরা চিন্তা করোনা আমার উপর ভরসা রাখো।
আলিয়া সেদিনে আয়ানের সাথে ওর বাড়িতে চলে যায়।বাড়িতে ঢুকতে সবাই অবাক হয়ে যায়….
চলবে