ভুলবশত_প্রেম,৪২,৪৩

0
810

#ভুলবশত_প্রেম,৪২,৪৩
#লেখনীতে:সারা মেহেক
৪২

” আমার মনে রোহান ভাইয়া আপুকে উনাদের ফার্ম হাউজে রেখেছেন।”

আদ্রিশ ঈষৎ বিস্মিত কণ্ঠে বললেন,
” ওদের ফার্ম হাউজও আছে!”

” হ্যাঁ। মেইন শহরের বাইরে। ”

” কোথায়? ঠিকানা বলো। ”

এবার আমি কিছুটা সংকুচিত হলাম। মিনমিনে কণ্ঠে বললাম,
” আমার না এ ব্যাপারে কিছুই মনে নেই। শুধু জানি, রোহান ভাইয়াদের শহরের বাইরে ফার্ম হাউজ আছে। কিন্তু কোথায়, কত দূরে তা জানি না। ”

আদ্রিশ ও ইমাদ ভাইয়া আমার কথায় হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়লেন। ইমাদ ভাইয়া নিরাশ কণ্ঠে বললেন,
” শেষ আশাটুকুও আর রইলো না। এখন নাফিসাকে….”

ইমাদ ভাইয়কে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়েই বললাম,
” আশা হারাচ্ছেন কেনো ইমাদ ভাইয়া। আমি রিতুকে জিজ্ঞেস করবো এ ব্যাপারে। ও নিশ্চয়ই বলে দিবে। ”

আদ্রিশ আমার দিকে সন্দিহান চাহনিতে চাইলেন। উনার এরূপ চাহনি দেখেই আমি উনার মনে চলমান প্রশ্নটি চট করে ধরে ফেললাম। ফলে ঈষৎ হাসার চেষ্টা করে বললাম,
” রিতু ওমন না। ও রোহান ভাইয়ার থেকে একদম আলাদা। বরং ও তো রোহান ভাইয়াকে ভয় পায়। আর এ ব্যাপারে ওর কাছে নিশ্চয়ই সরাসরি জিজ্ঞেস করবো না আমি। কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে। আর এ কাজটা করতে হবে সরাসরি, আগামীকাল সকালে। কারণ এখন প্রায় রাত হয়ে গিয়েছে। আর এ সময়ে রিতুর কাছে ফার্ম হাউজের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলে ওর মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরতে পারে। ”

আদ্রিশ কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে কিছু ভাবলেন। অতঃপর চট করে দাঁড়িয়ে প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” চল ইমাদ। কিছু খেয়েনে৷ দুপুরে কিছু খাসনি৷ এখন একটু খেয়েদেয়ে রেস্ট নে। আগামীকাল সকাল থেকে আমাদের কাজ শুরু করবো। ”

ইমাদ ভাইয়া নিস্তরঙ্গ কণ্ঠে বললেন,
” ক্ষিধে নেই রে। ওদিকে নাফিসা ঐ হা** কব্জায় আর এখানে আমি খেয়েদেয়ে ঘুমাবো! অসম্ভব কথাবার্তা বলিস কেনো। আজ রাতটা আমার নির্ঘুম কাটবে। তোরা খেয়েদেয়ে রেস্ট নে। ”
এই বলে ইমাদ ভাইয়া উঠে দাঁড়ালেন। দূর্বল পদগতিতে হেঁটে আমাদের রুম হতে বেরিয়ে গেলেন।
উনি বেরিয়ে যেতেই আমি আদ্রিশের দিকে চাইলাম। আদ্রিশ ক্লান্ত ভঙ্গিতে আমার পাশে বসে পড়লেন। ঈষৎ নিরাশযুক্ত কণ্ঠে বললেন,
” নাফিসা ভাবীকে পাবো তো আমরা? যদি নাফিসা ভাবীর কোনো ক্ষতি হয় তাহলে আমি কোনোদিনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না মিশমিশ। এখন আমারও মনে হচ্ছে এ ঘটনার সম্পূর্ণ দায়ভার আমার একারই। ”

উনার কথার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আমি তৎক্ষনাৎ উনার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললাম,
” আপুর কিচ্ছু হবে না। ভরসা রাখুন আল্লাহর উপর৷ আর এসবের জন্য নিজেকে দায়ী করা বন্ধ করুন আদ্রিশ। আপনার জন্য আপুকে কিডন্যাপ করেনি। আপনার কাছ থেকে ড্রাগ ফর্মুলাটা পাওয়ার জন্য আপুকে শুধু একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে। ব্যস। আর আপনি এভাবে ভেঙে পড়ছেন কেনো? আপনি ভেঙে পড়লে আমাকে কে সামলাবে শুনি?”

আদ্রিশ দূর্বলভাবে হেসে বললেন,
” আমার সামলানোর কোনো প্রয়োজন নেই মিশমিশ৷ উল্টো তুমিই আমাকে সামলাচ্ছো। জানতাম না, তুমি এতোটা শক্ত থাকতে পারবে এ পরিস্থিতিতে। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এখন অনেক কান্নাকাটি করতো। কিন্তু তুমি স্ট্রং দেখাচ্ছো নিজেকে। ”

আদ্রিশের কথায় আমি ক্ষীণ শব্দে হেসে উঠে বললাম,
” আমি কিন্তু এতোটা স্ট্রং নই যতোটা এখন দেখাচ্ছি নিজেকে। আজ আমার কি হয়েছে জানি না৷ কিন্তু আমি শক্ত থাকতে চেষ্টা করছি এবং পারছিও। আমি জানি, আমি শক্ত থাকতে না পারলে আম্মুকে সামলানো কষ্ট হয়ে যাবে। কারণ আভা যথেষ্ট স্ট্রং থাকতে পারবে। কিন্তু আমি চিন্তা করছি আম্মুকে নিয়ে। অবশ্য আম্মুকে অনেকক্ষণ দেখিনি৷ ঘুমিয়ে পড়েছে না কি আল্লাহ জানে। দেখে আসি গিয়ে।”
এই বলে আমি উঠে পড়লাম। দরজার দিকে পা বাড়াতেই আদ্রিশ পিছন থেকে আমার হাত ধরলেন। আমি খানিক চমকে উঠলাম। জিজ্ঞাসু চাহনিতে পিছনে ফিরে তাকাতেই উনি পেলব গলায় বললেন,
” একটু জড়িয়ে ধরি তোমায়?”

অকস্মাৎ উনার এ অনুরোধে খানিক ভড়কে গেলাম আমি। উনার চোখে এ মুহূর্তে বিরাজ করছে প্রবল ক্লান্তির ছাপ। চেহারা যেনো ক্লান্তিতে নুয়ে পড়েছে। উনার সুন্দর চেহারাখানাও এ মুহূর্তে
মলিন দেখাচ্ছে। আদ্রিশের এহেন পরিস্থিতি দেখে উনার এ অনুরোধ নাকচ করতে পারলাম না আমি। ধীর লয়ে মাথা দুলিয়ে সায় দিতেই উনি উঠে দাঁড়ালেন। আমার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে দৃঢ়ভাবে জড়িয়ে ধরলেন আমায়। যেনো উনার সকল ক্লান্তি এখানে গড়িয়ে দিচ্ছেন উনি৷

ক্ষণিক বাদে আদ্রিশ হতাশ গলায় বললেন,
” এখনও মনে খুঁট খুঁট করছে। ভালো লাগছে না কিছু। সবকিছু কেমন ওলোটপালোট হয়ে গেলো। আমি সবসময় স্বাভাবিক থাকতে চাই মিশমিশ। কিন্তু পরিস্থিতি কি করে যেনো আমার সামনে কিছু বিপদ, কিছু অশান্তি এনে দেয়। এরপর আমি আর সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে পারি না। আর প্লিজ, এখন এ নিয়ে কিছু বলো না। আমার বুকে কিছুক্ষণ থাকো। আরাম লাগছে খুব। ”

আদ্রিশের শেষোক্ত কথার পিঠে আমি আর কথা বাড়ালাম না। উনায় জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। অতঃপর আরো কিছুক্ষণ পর উনি আমায় ছেড়ে দিলেন। বললেন,
” যাও আম্মুকে দেখে আসো। কিছু খাইয়েও দিয়ে এসো। ”

এই বলে উনি ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালেন। আমিও খানিক বাদে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।

.

আম্মু এখনও কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে আম্মুর গাল দুটো চিটচিটে হয়ে এসেছে। কিন্তু আম্মুর কান্না থামানো যাচ্ছে না। শেষমেশ আব্বু আম্মুর সামনে পুলিশের মাধ্যমে আপুর খবর পাওয়ার মিথ্যা অভিনয় করলো। এতে কাজ হলো বটে। আম্মু একটু হলেও শান্ত হলো। অতঃপর আম্মু ধীরেধীরে কান্না থামাতেই আমি আম্মুকে খাইয়ে দিলাম। খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পর আম্মু ঘুমিয়ে গেলো।

আমি ও আভা রুম থেকে বেরিয়ে ড্রইংরুমে এলাম। ড্রইংরুমে কামাল আংকেল, আব্বু, আদ্রিশের আব্বু, ইমাদ ভাইয়া, আদ্রিশ, জেবা ভাবী ও ইমতিয়াজ ভাইয়া বসে আছেন। আমি ও আভা গিয়ে খালি সোফায় বসলাম।

উপস্থিত সকলের চোখেমুখে উদ্বিগ্নতা বিরাজ করছে। কথায় কথায় কামাল আংকেল ইমাদ ভাইয়াকে বললেন,
” ইমাদ? শাহেদের নাম্বার বন্ধ পাচ্ছি কেনো? তোর কি কথা হয়েছে শাহেদের সাথে? নাফিসার খোঁজ খবর জানিয়েছে? ”

ইমাদ ভাইয়া বললেন,
” আমারও ওর সাথে আর কথা হয়নি। ওর ফোনে হয়তো চার্জ শেষ তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তুমি আর ফোন দিও না আব্বু৷ আমি আবারো রাতে ওকে ফোন দিয়ে ওর সাথে কথা বলবো। ”

কামাল আংকেল ঈষৎ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন,
” আচ্ছা, আমাকে জানাস কিন্তু। ”

কামাল আংকেলের সাথে আব্বুও বললো,
” একটু তাড়াতাড়ি ফোন দিও ইমাদ। বুঝতেই পারছো তো..”

ইমাদ ভাইয়া দূর্বল হাসলেন। বললেন,
” আপনি চিন্তা করবেন না আব্বু। নাফিসার কিছু হবে না। আর ওর ব্যাপারে কিছু জানলে তো আপনাকে জানাবোই। আপনি আর আব্বু বরং এখন ঘুমিয়ে পড়ুন। আপনাদের একটু বিশ্রাম দরকার। ”

আব্বু ইমাদ ভাইয়ার প্রস্তাবে প্রথমে রাজি না হলেও পরে কামাল আংকেলের জোরাজোরিতে নিচের একটা রুমে চলে যান। অতঃপর জেবা ভাবী ও ইমতিয়াজ ভাইয়াও তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন।
সকলে চলে যাওয়ার পর আমি আভাকে আমাদের রুমে পাঠিয়ে দিলাম। প্রথমে সে যেতে রাজি না হলেও পরে আমার ধমকে সে চলে যায়। আভা রুমে চলে যেতেই আমি ইমাদ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,
” শাহেদ কে ইমাদ ভাইয়া?”

” আমার বন্ধু। নাফিসার ব্যাপারে ওকেই জানিয়েছি আমি। যেহেতু রোহান পুলিশের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখতে বলেছে সেহেতু আপাতদৃষ্টিতে ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ আছে আমার। কিন্তু ওকে আমি সবটা জানিয়ে রেখেছি। আগামীকাল রোহানদের ফার্ম হাউজের ঠিকানা জানার পরপরই আমরা বেরিয়ে পড়বো। পুলিশের ড্রেসআপে যেনো সমস্যা না হয় তাই শাহেদ বলে দিয়েছি ও যেনো ক্যাজুয়াল ড্রেসআপে আসে। ”

” আপনারা সবাই একসাথেই যাবেন?”

আদ্রিশ এবার বললেন,
” না। আমি আর ইমাদ যাবো প্রথমে। এরপর আমাদের ফলো করতে করতে ইন্সপেক্টর শাহেদ ও তার টিমও চলে আসবে।
আর শোনো তোমার কাজ হবে, সকালে রিতুর সাথে দেখা করে ফার্ম হাউজের লোকেশন নিয়ে আমাদের লোকেশন সেন্ট করা। এরপর আমাদের লোকেশন দিয়ে চুপচাপ বাসায় চলে আসা। কারণ বাকি কাজ আমরা সামলে নিতে পারবো।”

” সেই ফর্মুলার কি হবে? ”

” ফেক কিছু কাগজপত্র নিয়ে যাবো আমার সাথে। প্রথম দেখায় রোহান তা ধরতে পারবে না। এ ব্যাপারে ওর বুঝে উঠতে উঠতেই আমরা আমাদের কাজ করে ফেলবো। ”

আদ্রিশ ও ইমাদ ভাইয়ার এ প্ল্যানিং শুনে বেশ স্বস্তি অনুভব করলাম। তারপরেও খুঁতখুঁতে মন নিয়ে কিঞ্চিৎ সন্দিহান হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” যা প্ল্যানিং করেছেন তা সাকসেসফুল হবে তো?”

আদ্রিশ অসংশয়ে হাসলেন। ইমাদ ভাইয়ার দিকে বললেন,
” সাকসেসফুল না হয়ে যাবে কোথায়। ব্যস তুমি তোমার কাজটুকু ঠিকঠাক করো। বাকিটা আমাদের উপর ছেড়ে দাও। ”

অতঃপর আদ্রিশ আমার দিকে চেয়ে বললেন,
” এখন রুমে যাও। আভাকে সাথে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ”

এখানে বসে থাকার ইচ্ছা থাকলেও শরীর দূর্বল অনুভব করায় আদ্রিশের আদেশ মানতে বাধ্য হলাম। কোনোরূপ কথাবার্তা ছাড়াই সিঁড়ি বেয়ে রুমে চলে এলাম।

.

পুরো রাত আধো আধো ঘুমে কাটিয়ে দিলাম। ঘুম আসলেও আপুর চিন্তায় কিছুক্ষণ পর পর ঘুম ভাঙছিলো আমার। অপেক্ষায় ছিলাম কখন সকাল হবে আর আমি কখন রিতুর কাছে গিয়ে সবটা শুনবো।
অবশেষে সে সময় এলো। প্রথমে আটটার দিকে যাওয়ার কথা হলেও খুব বেশি সকাল হয়ে যায় বলে সে সময় পিছিয়ে সকাল দশটা করা হলো। আমি রিতুর সাথে ফোনে যোগাযোগ করে একটা রেস্টুরেন্টে আসতে বললাম ওকে। আমাকে সেখানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আদ্রিশ গেলেন আমার সাথে। আমরা দুজনে রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসার আগে বাসার সবাইকে মিথ্যে অজুহাত দেখিয়ে বের হলাম৷ কারণ এ প্ল্যানিং যত কম মানুষ জানবে ততই তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

আদ্রিশ আমাকে রেস্টুরেন্টে নামিয়ে দিয়ে হাইওয়ের দিকে চলে গেলেন। আমিই বলেছিলাম কাজটা এগিয়ে রাখার জন্য পূর্ব হতেই হাইওয়েতে চলে যেতে। যেনো এদিকে আমি উনাকে ঠিকানা বলার মুহূর্তমধ্যেই উনি ফার্ম হাউজে চলে যেতে পারেন।

আমি আর রিতু চেয়ারে বসে টুকটাক গল্প করতে লাগলাম। রিতু যেনো আমায় কোনোরূপ সন্দেহ করে না বসে এজন্য তার সাথে নানা রকম কথাবার্তা বললাম। যে কথা এখন একদমই বলে সময় নষ্ট করা উচিত নয়, সে কথাও বললাম ওর সাথে। এরপর ধীরেধীরে কথার মাঝে তাদের ফার্ম হাউজের কথা আনলাম। রিতুকে জিজ্ঞেস করলাম,
” রিতু? তোদের ফার্ম হাউজের কি খবর রে? আদ্রিশরা ওদিকে জায়গা কিনবে তো তাই জানতে চাইছিলাম। ”

রিতু আমাদের ওর্ডার করা খাবার খেতে খেতে বললো,
” অনেকদিন সেখানে যাওয়া হয় না আমাদের। আব্বু হয়তো গত মাসে গিয়েছিলো। ”

” তাহলে এখন কি ওটা বন্ধ থাকে? মানে কেউ যায় না ওখানে?”

” নাহ। আব্বুর পর আর কেউ যায়নি। ”

” আচ্ছা? জায়গাটা কেমন হবে বল তো? মানে আশেপাশে মানুষজন আছে না কি সুনসান পরিবেশ? ”

” আর বলিস না মিম। একেবারে সুনসান একটা জায়গা। আমার ওখানে যেতেই ভয় করে। কে বলেছে আব্বুকে ওখানে ফার্ম হাউজ বানাতে যেখানে আমরা সবসময় যেতেই পারি না!”

” তা ঠিক বলেছিস। জায়গাটা কি হাইওয়ে থেকে অনেক দূরে?”

” আরে না। মাত্র দেড় কিলোমিটারের রাস্তা। খুব বেশিদূর না। কিন্তু তবুও আমার কাছে দূর……”
রিতুর কথা সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পূর্বেই ওর ফোনে কল এলো। টেবিলের উপর তার ফোন থাকায় স্ক্রিনে স্পষ্ট দেখতে পেলাম ‘ভাইয়া’ লেখা ভেসে উঠেছে। অর্থাৎ রোহান ভাইয়া কল করেছে। রিতুর ফোনে এ মুহূর্তে রোহান ভাইয়ার কল দেখেই আমার হাত পা প্রায় অসার হয়ে এলো। হৃদপিণ্ড প্রচণ্ড তেজে ধুকপুক শব্দ তোলার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়লো। মস্তিষ্কে ভয়ংকর কিছু সম্ভাবনার প্রশ্ন ঘুরপাক খেলো,
” এখন যদি রিতু রোহান ভাইয়াকে আমাদের দেখা হওয়ার সম্পর্কে বলে দেয় তবে? আমাদের সব প্ল্যানিং কি তাহলে ভেস্তে যাবে? আপুর শেষ রক্ষা করতে পারবো তো?”
®সারা মেহেক(পাঠকদের জন্য একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খোলা হয়েছে। যারা এড হতে চান বা হননি তারা আমার আইডিতে ম্যাসেজ রিকুয়েষ্ট দিয়ে রাখবেন। এতে আপনাদের এড করতে সুবিধা হবে)

#চলবে

#ভুলবশত_প্রেম
#লেখনীতে:সারা মেহেক

৪৩

রিতুর ফোনের স্ক্রিনে রোহান ভাইয়ার নাম্বার দেখে আমি ভয়ার্ত চাহনিতে রিতুর দিকে চাইলাম। আশ্চর্যের ব্যাপার, রিতুও আমার দিকে ভয়ার্ত চাহনিতে চাইলো। আমি কিঞ্চিৎ উদ্বিগ্নতা সহিত রিতুকে বললাম,
” রিতু, রোহান ভাইয়ার কল রিসিভ করিস না। আর রিসিভ করলেও আমার কথা বলিস না। ”

রিতু ফোন হাতে নিতে নিতে বললো,
” চিন্তা করিস না। ভাইয়াকে তোর কথা বলবো না।”

এই বলে সে কল রিসিভ করে রোহান ভাইয়াকে বলল,
” ভাইয়া, কোনো দরকার ছিলো? ”

“…….”

” আমি বাইরে। আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছি। ”

“…….”

” লিজার সাথে দেখা করতে এসেছি। তুমি চিনবে না ওকে। আমি বাসায় বলে এসেছি। ”

“…..”

” আচ্ছা। রাখছি।”
এই বলে রিতু কল কেটে দিলো। মুহূর্তমধ্যেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম আমি এই ভেবে যে, রিতু আমার ব্যাপারে রোহান ভাইয়াকে কিছু বলেনি৷। রিতু ফোন রেখে আমায় বললো,
” তোর নাম বলতাম না ভাইয়ার কাছে। কারণ তোর সাথে দেখা করার কথা বললে ভাইয়া আমাকে আস্ত রাখতো না। ”

” যাক, ভালো কাজ করেছিস। আজ তাহলে উঠি। আমাকে বাসায় যেতে হবে। ”

রিতু আর কথা বাড়ালো না। ব্যাগ নিয়ে উঠতে উঠতে বললো,
” আচ্ছা চল। আরেকদিন দেখা হবে। ”

আমি রিতুর কথার প্রত্যুত্তর দিলাম না। বরং ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে ওর পাশাপাশি হাঁটা শুরু করলাম। এ মুহূর্তে আদ্রিশকে লোকেশন জানানোর কথা রইলেও আমি কোনো প্রকার ম্যাসেজ দিলাম না উনাকে।
কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা রেস্টুরেন্টের বাইরে চলে এলাম। বাইরে বেরিয়ে দেখলাম আদ্রিশ গাড়ির সামনে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমায় এবং রিতুকে দেখে উনি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। রিতু হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে আদ্রিশকে বললেন,
” কেমন আছেন আদ্রিশ ভাইয়া?”

আদ্রিশ মৃদু হেসে বললেন,
” এই তো ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? ”

” আমিও ভালো আছি। তো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে?”

রিতুর প্রশ্নে আদ্রিশ আমার দিকে একবার চাইলেন। অতঃপর বললেন,
” ওকে ড্রপ করতে এসেছিলাম। পরে ভাবলাম ওকে একেবারে বাসায়ই নিয়ে যাই। এজন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। ”

” ওহ আচ্ছা। তাহলে থাকুন আপনারা। আমি আসি আজ।”
এই বলে রিতু সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো। রাস্তার ওপারে ওর গাড়ি দাঁড় করানো।
অতঃপর আমি ও আদ্রিশ একত্রে রিতুকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। যতক্ষণ রিতুকে দেখা গেলো ততক্ষণ আদ্রিশ বসে রইলেন। আমিও উনার উনার পাশে ফ্রন্ট সিটে বসে রইলাম। ধীরেধীরে রিতুর গাড়ি মিলিয়ে যেতেই আদ্রিশ আমায় বললেন,
” আমাকে এখনও লোকেশন পাঠাওনি কেনো? দ্রুত লোকেশন বলো। আর গাড়ি থেকে নামো। ”

আমি পাশ ফিরে শান্ত চাহনিতে একবার আদ্রিশের দিকে চাইলাম। অতঃপর পুনরায় সম্মুখ পানে চেয়ে বসে রইলাম। আদ্রিশ হয়তো আমার এহেন কাজে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়েছেন। এজন্যই হতভম্ব হয়ে বললেন,
” কি ব্যাপার? এভাবে কথা না বলে বসে আছো কেনো? দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। আমি এখান থেকে বের হলে ইমাদকে ম্যাসেজ দিয়ে জানাবো। জলদি লোকেশন বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়ো। আমি একটা রিকশা ঠিক করে দিচ্ছি। ”

আমি আদ্রিশের সম্পূর্ণ কথার পিঠে ছোট্ট করে বললাম,
” আমিও যাবো আপনার সাথে। ”
এই বলে আমি উনার দিকে চাইলাম। উনার বিস্ময়াভিভূত মুখমণ্ডল দেখার উপযোগী হলো। উনি কিয়ৎক্ষণ শান্ত চাহনিতে আমার দিকে চেয়ে প্রায় ধমকের সুরে বললেন,
” তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে মিশমিশ? তুমি ওখানে যাবে কেনো? ওখানে গিয়ে কি কাজ তোমার?”

আদ্রিশের এরূপ প্রতিক্রিয়া দেখে আমি ভীত হওয়ার পরিবর্তে উল্টো ঠায় বসে রয়ে বললাম,
” আছে একটা কাজ। সে কাজটা না করলেই নয় এমন।”

” কি এমন কাজ শুনি?”

” সেখানে গেলেই জানতে পারবেন। এখন দ্রুত চলুন। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। ”

আদ্রিশ এবার পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ ক্রোধান্বিত স্বরে বললেন,
” মিশমিশ, বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। ভালোভাবে বলছি গাড়ি থেকে নামো। তুমি নিজেও জানো জায়গাটা সেইফ না তোমার জন্য। তারপরও কেনো রিস্ক নিচ্ছো?”

আমি স্মিত হেসে আত্মপ্রত্যয়ের সহিত বললাম,
” আপনি আছেন না আমার সাথে। আমার আর চিন্তা নেই। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন এবার।”

আদ্রিশ আমার কথায় ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লেন। কিয়ৎক্ষণ আমার দিকে চেয়ে সংশয় নিয়ে বললেন,
” এতোটা বিশ্বাস করো না আমার উপর। যদি তোমার কিছু হয়ে যায় আমি কখনোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না মিশমিশ।”

আমি আদ্রিশের হাতের উপর হাত রেখে পূর্বের ন্যায় বললাম,
” আমার কিচ্ছু হবে না আদ্রিশ। আমি আপনার উপর পুরোপুরি বিশ্বাস করি। আর এও জানি যে আপনি আমার শরীরে একটা আঁচড়ও লাগতে দিবেন না। কারণ আমি আপনাকে চিনি। আমায় নিয়ে আপনার মাঝে তৈরী হওয়া অনুভূতি সম্পর্কে আমি অবগত। এজন্য এতোটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে বলছি এ কথা। ”

আমার কথায় আদ্রিশ দূর্বল হাসলেন। কিছু বলতে উদ্যত হতেই আমি নড়েচড়ে বললাম,
” এটা ভুলে যাবেন না যে, একমাত্র আমিই ফার্ম হাউজের লোকেশন জানি। আর আমায় না নিয়ে যাওয়া অব্দি আমি এ বিষয়ে কিছুতেই মুখ খুলবো না। এবার বুঝে নিন ব্যাপারটা।”

আদ্রিশ প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে হাসলেন। অতঃপর স্টিয়ারিং এ হাত রেখে বললেন,
” তোমায় নিয়ে আর পারলাম না। তুমি এভাবে ব্ল্যাকমেইল করবে জানলে কখনো তোমার মাধ্যমে লোকেশন নিতাম না। ”

উনার কথায় আমি শব্দ করে হেসে উঠলাম। বললাম,
” স্কিলটা নতুন করে আয়ত্ত করছি। কারণ বিপদে খুব কাজে লাগে এটা।”

আদ্রিশ মাথা নাড়িয়ে হেসে উঠলেন। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বললেন,
” আরেকটা স্কিলও খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করেছো। তা হলো জিদ। তুমি বড্ড জিদ্দি হয়ে গিয়েছো মিশমিশ।”

” এসব আপনার প্রভাব মিস্টার। ”

” আচ্ছা? আর কি কি প্রভাব ফেলেছি তোমার উপর? এখন জানতে মন চাইছে। কিন্তু পরিবেশ, পরিস্থিতি কোনোটাই অনুকূলে না। পরে ঠিকই জেনে নিবো আমি। ”

এই বলে আদ্রিশ গাড়ি চালিয়ে হাইওয়ের রাস্তায় ছুটলেন। আমি কথা না বাড়িয়ে গাড়ির বাইরে দৃষ্টিপাত করলাম। স্নিগ্ধ শীতল হাওয়া এসে আমার চোখেমুখে বাড়ি খেলো। হাওয়ার তীব্র আক্রোশে আমি রূদ্ধ নয়নে বসে রইলাম। মনের মাঝে ক্ষীণ ভীতিকর অনুভূতি জেগে উঠলো। আমার মন মস্তিষ্ক স্পষ্টরূপে জানান দিচ্ছে, জায়গাটা আমার জন্য নিরাপদ নয়। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমার আগমন পরিস্থিতি বিপজ্জনক করে তুলতে পারে। কিন্তু আমার সেখানে যাওয়া প্রয়োজন। দুটো কারণে প্রয়োজন। প্রথমত আপুকে সে পরিস্থিতিতে স্বান্তনা দেওয়া, সামাল দেওয়া। দ্বিতীয়ত রোহান ভাইয়ার এ নিচ কাজের জন্য উপহার স্বরূপ তাকে কিছু দেওয়া। আর তাকে এ উপহার না দেওয়া অব্দি আমি কিছুতেই শান্ত থাকতে পারবো না।

.

হাইওয়ে হতেই আমরা সেই ফার্ম হাউজের কিঞ্চিৎ অংশ দেখতে পেলাম। গাছগাছালিতে ঘেরা ফার্ম হাউজটির দৃশ্যমান অংশ বলতে শুধু দুটি জানালা দেখা যাচ্ছে। দূর হতেই বুঝা গেলো, ফার্ম হাউজটি তৈরী করতে অনেক টাকা গুণতে হয়েছে।

আদ্রিশ গাড়ি নিয়ে হাইওয়ে হতে ছোট সড়কে নেমে এলেন। ফার্ম হাউজ থেকে বেশ দূরেই গাড়ি আড়াল করে পার্ক করে রাখলেন। ইমাদ ভাইয়া আমাদের পূর্বেই এখানে এসে হাজির হয়েছেন। উনিও ঠিক একই জায়গায় গাড়ি পার্ক করে রেখেছেন।
গাড়ি থামাতেই আমি ও আদ্রিশ নেমে পড়লাম। আচমকা ইমাদ ভাইয়া আমায় দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন। বিস্মিত কণ্ঠে বললেন,
” মিম এখানে কেনো! ওকে কেনো এনেছিস আদ্রিশ? জানিস, জায়গাটা রিস্কি খুব। তারপরও?”

আদ্রিশ আমার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
” শখে আনিনি ওকে। ওর কাছে লোকেশন ছিলো। এ নিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করেই এসেছে। গাড়ি হাইওয়ে পাওয়ার একটু আগে ওর কাছ থেকে লোকেশন নিয়েই তোকে সেন্ট করেছিলাম। ”

ইমাদ ভাইয়া আমার দিকে চেয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লেন। অতঃপর বললেন,
” মেয়েটা আজ আমাদের বিপদে ফেলেই ছাড়বে।”

আমি বললাম,
” এমন কিছুই হবে না। চিন্তা করবেন না। চলুন এবার। আর আপনার সে বন্ধু কোথায়?”

” অন দা ওয়ে। ”
এই বলে ইমাদ ভাইয়া আদ্রিশকে বললেন,
” মিমকে এতদূর এনেছিস ভালো কথা। এবার ওকে গাড়িতে লক করে রেখে দে। ও আমাদের সাথে আসা মানেই বিপদ বাড়ানো। ”

আদ্রিশ চট করে আমার দিকে চেয়ে বললেন,
” ভালো কথা বলেছিস। এখন তো আর ব্ল্যাকমেইলের কিছু নেই। ”

আমি উনাদের কথায় তৎক্ষনাৎ প্রতিবাদ করে বললাম,
” মোটেও না। আমি আপনাদের সাথে যাবো মানে যাবোই। ”

আদ্রিশ এবার গরম চোখে চেয়ে বললেন,
” বাচ্চাদের মতো জিদ করো না। এতদূর এসেছো ভালো কথা। এবার গাড়িতে বসে থাকো।”

” কখনো না। আমি যা করতে চাইছি তা গাড়িতে বসে সম্ভব না। এর জন্য আমাকে আপনাদের সাথে যেতে হবে। ”

ইমাদ ভাইয়া সন্দেহ সহিত জিজ্ঞেস করলেন,
“এই বিপদে কি এমন কাজ করতে চাইছো তুমি?”

” তা বলতে পারবো না। তবে এটুকু জেনে রাখুন। একজনের কিছু পাওনা দিতে হবে তাকে। আর এটা অনেকক্ষণ ধরেই আমার ভেতরে পুষে রেখেছি আমি৷ তাই প্লিজ দেরি না করে দ্রুত চলুন। আর কথা বাড়াতে আসবেন না। কারণ আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল। আমার সাথে জোর করেও লাভ নেই। ”

আদ্রিশ ও ইমাদ ভাইয়া ব্যর্থ ভঙ্গিতে একে অপরের দিকে চাইলেন। ইমাদ ভাইয়া আদ্রিশকে বললেন,
” আগের চেয়েও আরো সতর্কতার সাথে কাজ করতে হবে আমাদের।”

আদ্রিশ সায় দিয়ে বললেন,
” হ্যাঁ। আমরা বরং শাহেদ এলেই যাই ওখানে। এতে কিছুটা হলেও রিস্ক কম থাকবে। ওকে নিয়ে আমি কোনোপ্রকারেরই রিস্ক নিতে চাচ্ছি না।”,
এই বলে আদ্রিশ কিঞ্চিৎ ক্রোধান্বিত চাহনিতে আমার দিকে চাইলেন। আমি উনার চাহনির বিপরীতে এমন ভাব ধরলাম যে, এ বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ অনবগত।

কয়েক মিনিটের মাঝেই শাহেদ সাহেব ও তার টিম চলে এলেন। তারা সকলে সাধারণ মাইক্রোতে এসেছেন। মাইক্রোটা আমাদের গাড়ির পিছে থামতেই শাহেদ সাহেবসহ চারজন নেমে এলেন সেখান থেকে। প্রত্যেকের চোখেমুখে তীব্র আত্মবিশ্বাস। শাহেদ সাহেব ইমাদ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলেন,
” বাড়ির আশেপাশে গিয়েছিস?”

” হ্যাঁ। সামনের দিকে দুটো গার্ড বসে আছে। আর পিছনে একটা ব্যাকডোর আছে। আমাদের ওখান দিয়েই যেতে হবে। ”

শাহেদ সাহেব তীক্ষ্ণ চাহনিতে ফার্ম হাউজের দিকে চেয়ে বললেন,
” হুম। ওদিক দিয়েই যাবো।”

এই বলে উনি উনার টিমের লোকদের বাড়ির চারপাশে ছড়িয়ে যেতে বললেন। উনার টিম মেম্বার উনার কথামতোই কাজ করলো। লোকগুলো চলে যেতে শাহেদ সাহেব আমাদের সাথে নিয়ে চুপিচুপি পায়ে এগিয়ে চললেন।
আমরা গাছগাছালি ঘেরা জায়গাটুকু দিয়ে নিজেদের লুকানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে হাঁটছি। যদিও বাড়ির ভেতর থেকে আমাদের নজরে পড়ার কথা না। তবুও সাবধানতার সাথে চলতে হবে।

বাড়ির ব্যাকডোরে আসতেই দেখলাম একজন লোক সেখানে পাহারাদার হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা লোকটিকে দেখে দেয়ালের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে ফেললাম। শাহেদ সাহেব আমাদের দেখে চুপিচুপি গিয়ে লোকটিকে পিছন থেকে জাপটে ধরে পিঠে গান চেপে ধরলেন এবং সাথে সাথে একটি গুলি চালিয়ে দিলেন৷ গুলি চালানোয় চাপা একটি শব্দ হলো। অর্থাৎ গানে সাইলেন্সার লাগিয়ে কাজ করলেন উনি।
লোকটির উপর গুলি চালিয়ে এক কোনায় ফেলে রেখে আমাদের ভেতরে ঢোকার নির্দেশ দিলেন উনি৷ লম্বা করিডোর ধরে চাপা পায়ে এগিয়ে গেলাম আমরা।
করিডোরের ভেতর দিয়ে জানালার সাহায্যে প্রতিটা রুমে নজর বুলালাম সকলে। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। অতঃপর করিডোরের শেষ দিক দিয়ে দ্বিতীয় রুমে আপুকে হাত বাঁধা অবস্থায় দেখলাম। আপুকে দেখেই আমার বুকটা ধক করে উঠলো। সাথে সাথেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম আমি। তবে কিঞ্চিৎ ভয়ও জেঁকে বসলো আমার মনে। কারণ এখনও আপুর নাগালে আসতে পারিনি আমরা। এখনও অব্দি বিপদের তীব্র আশংকা রয়েছে।

শাহেদ সাহেব আশপাশে একবার নজর বুলিয়ে রুমের ভেতরে চাইলেন। রুমে আপু বাদে কেউ নেই এবং দরজা বাইরে থেকে লক করা। শাহেদ সাহেব চারপাশ কিঞ্চিৎ বিপদমুক্ত দেখে ধীর শব্দে জানালা খুললেন। জানালার গ্রিল না থাকায় খুব সহজেই রুমের ভেতর চলে গেলেন উনি। এরপর একে একে ইমাদ ভাইয়া ও আদ্রিশও ভেতরে চলে গেলেন। উনাদের দেখাদেখি আমিও ভেতরে যেতে উদ্যত হতেই আকস্মিকভাবে রুমের দরজা খুলে রোহান ভাইয়া রুমে প্রবেশ করলেন। আমি উনাকে দেখে সাথে সাথে জানালার আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। পিছে রোহান ভাইয়ার ক্রুর কণ্ঠস্বর শুনলাম,
” পাখিরা খাঁচায় বন্ধি হলো শেষমেশ। আমাকে ধরা কি এতোই সহজ? উঁহু। এতো সহজে তোদের হাতে ধরা পড়বো না আমি৷ তবে তোরা তো আমার হাতে ধরা খেয়ে গেলি। এখন কোথায় পালাবি তোরা?”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here