ভূবন_বিলাসী part 10
#লেখিকাঃসীমা
আলিয়াঃআয়ান তুমি ভুল ভাবছো।
আয়ানঃকি ভুল ভাবছি দরজা লক করা ছিলো আর তোমরা….সাদিয়া আপু আমাকে না বললে তোমাদের এভাবে ধরতে পারতাম না।
আলিয়া সাদিয়ার দিকে তাকাতে সাদিয়া মাথা নিচু করে।
আয়ানঃওর দিকে তাকিয়ে লাভ নেই।
দাদিঃআলিয়া তুই এত নিচে নেমে গেছিস যে দুলাভাইয়ের সাথে।
আদি মুচকি মুচকি হাসছে।
আলিয়ার দাদির চিৎকার শুনে বাকি সবাই রুমে আসে।
আলিয়ার দাদি সবাই সব বলে।
আলিয়ার মাঃতুই আমার মেয়ে হয়ে ছি আলিয়া
আলিয়ার বাবাঃকখনো ভাবতে পারিনি তুমি এমন করবে আলিয়া।
সায়ানঃপাপা আমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে আলিয়া এমন না।
দাদিঃকোনো ভুল হচ্ছে না আমরা নিজ চোখে দেখেছি।
আলিয়ার চাচ্চুঃকেনো আলিয়া তোমারতো বিয়ে হয়েছে?
আলিয়ার চাচিঃওকে কেনো বকছো আদিও তো অপরাধ করেছে আলিয়া এমন না।
আলিয়ার চাচ্চুঃঅপরাধ আলিয়ায় করেছে ভাই ওকে বাড়ি থেকে বের করে দাও।
আয়ানঃআলিয়া তোমার সাথে আমি সংসার করবো না।খুব ভালোবেসেছিলাম তোমাক।
আলিয়ার চাচ্চুঃভাই ভাবী সঠিক শিক্ষা দিতে পারেনি বেয়াদব হয়েছে।
,
,
আলিয়াঃস্টপ(চিৎকার করে)চাচ্চু তুমি কত ভালো ছিলে যে একজনকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রেগন্যান্ট করে অন্য জনকে বিয়ে করো?
আলিয়ার বাবাঃআলিয়া চুপ করো।
আলিয়াঃনা বাবা আমাকে বলতে হবে আজ।
আলিয়ার চাচিঃবল মা কি বলবি?
আলিয়াঃআয়ান কি হল চুপ কেনো বলো সব?
আয়ানঃআসলে শিহাব চাচ্চু আমার বাবাকে বলেছিল ফুপির সন্তানের বাবা মেহরাব আংকেল।তাই বাবা ফুপিকে বিয়ে করার জন্য মেহরাব আংকেলকে বলে।
সবাই অবাক হয়ে যায়।শিহাব মাথা নিচু করে।
আলিয়াঃএরপর আমি বলছি মাম্মা আদিই সেই ছেলে যাকে আমি ভালোবেসেছিলাম এই আয়ান তোমাদের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমাকে মেরে ফেলার বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে গুলি ওই করেছিলো। বাসররাতে জানতে পারি আয়ানের আসল রূপ আদিকে ওই পাঠিয়েছিলো প্রেমের অভিনয় করার জন্য আমাকে এত দিন খুব মেরেছে।
,
আলিয়া বিয়ের দিন থেকে যা ঘটেছিল সব বলে।
আলিয়াঃআর তোমরা আমার একবারো খোজ নাওনি।আয়ান বলেছিল আমি ব্যস্ত আছি আর তোমরাও মেনে নিলে বাহ(হাতে তালি দিয়ে)মাম্মা পাপা বাহ।সায়ান ভাইয়া তুমিও খোজ নাওনি আর নেবেই বা কেনো নিজের বোন হলে নিতে।আর আদি সাদিয়া আপু ধন্যবাদ তোমাদের ভালোভাবে অভিনয় তোমরা করতে পেরেছো।
আয়ানঃঅভিনয়(অবাক হয়ে)
আদিঃহুম আলিয়া তোমার সত্যিটা সামনে আনার জন্য প্ল্যান ছিলো এটা।
আলিয়াঃসবাই মুখে বলে আমাকে সবাই অনেক ভালোবাসে কিন্তু আজ প্রমান হয়ে গেলো কে কতটুকু ভালোবাসে?
আলিয়ার বাবাঃশিহাব তুই আমার নাম বলেছিলি?
আলিয়ার চাচ্চুঃসরি ভাই আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই
সায়ানঃআমি তাহলে অবৈধ সন্তান।
দাদিঃনা আজই রুবিনাকে শিহাব বিয়ে করবে এটা আমার আদেশ আর বউমা তোমার কি কোনো আপত্তি আছে?
আলিয়ার চাচিঃনা মা রুবিনা আপা কি সুস্থ আছে?
আয়ানঃহুম ফুপি সুস্থ হয়েছে।আলিয়া সরি
সবাইঃসরি আলিয়া
আলিয়াঃআমি আর এ বাড়িতে থাকব না যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে থাকতে পারব না। আমি আমার মতো করে বাঁচতে চাই। আদি ভাইয়া টিকিট কেটে এনেছো?
আদিঃহুম আজ রাতের ট্রেন।
আলিয়াঃআয়ান আদি আমার প্রেমিক ছিলো একথা সত্যি কিন্তু তার থেকে বড় সত্যি ও আমার জিজু।জিজুর সাথে খারাপ কিছু করার শিক্ষা আমি পাইনি।
আলিয়ার বাবাঃমামনি আমরা না বুজে….
আলিয়াঃপাপা প্লিজ আমি যা বোঝার বুঝে গেছি আমি আদির প্রেমে কোনোদিন পরতাম না যদি তোমরা আমাকে তোমাদের কাছে রাখতে।যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে হোস্টেলে রেখেছো। বাবা মায়ের আদর ভালোবাসা পাইনি খুব কষ্ট হতো যখন আমার ক্লাসমেটদের বাবা মা তাদের এসে নিয়ে যেত পাপা তুমি তো বিদেশে থাকো বেশি সময় মাম্মা এখানে দাদির সেবায় আমি কোথায় যাচ্ছি কি করছি সেটার তো খোজ রাখার মত কেউ নেই।দাদি তোমার মাম্মা আর চাচিকে যখন এত কাছে রাখার শখ তাহলে শহরে কেনো থাকো না আমাকে কেনো আলাদা করলে?প্রত্যেক জন্মদিনে ইচ্ছে হতো সবার হাত ধরে কেক কাটবো কিন্তু কেনো সেদিন আমাকে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে সারাদিন ঘুমাতে হতো?আদি আমাকে বড় ভাইয়ের মত শাসন করতো কোনোদিন আমার হাত পর্যন্ত ধরেনি খারাপ কথাও বলেনি।সবসময় ভালো থাকার উপদেশ দিতো।
,
,
আলিয়ার চোখ দিয়ে পানি বয়ে পড়ছে।সবাই নিচু মাথা হয়ে সব শুনছে।
আলিয়া আবার বলতে শুরু করে।
আলিয়াঃএ বুকে কষ্ট চেপে রেখে আমি হাসতাম খেলতাম কাউকে বুঝতে দেইনি।মা দিবসে বাবা দিবসে সবাই সবার বাবা মাকে উইশ করতো আর আমি পারতাম না। অনেকে বলতো আমি নাকি অনাথ।ক্লাসমেটরা কটু কথা বলতো আমার মনে কতখানি আঘাত পেত তোমরা জানো না।(চোখের পানি মুছে)আমি চলে যাচ্ছি তোমরা সবাই সুখে থেকো মনে করবে আলিয়া নামে কেউ ছিলো না।আয়ান মিলিকে বিয়ে করে সুখে থেকো।
,
,
আলিয়া লাগেজে সব কাপড় গুছিয়ে নেয়।
আলিয়াঃআশা করি আমাকে বাধা দেওয়ার কেউ চেষ্টা করবে না সে অধিকার কারো নেই।
সবাই বাধা দিতে চাইলেও দাড়িয়ে যায়।
আয়ানঃতুমি যেতে পারবে না।
আলিয়াঃতোমার তো প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে আর আমি তো খারাপ মেয়ে তুমি ভালো মেয়েকে খুজে নিও।
আলিয়ার মাঃমামনি শোন….
আলিয়াঃআমি যা বলেছি কি কারো কানে ঢুকেনি? তোমাদের বাধা দেওয়ার অধিকার নেই।
আলিয়া আদির কাছ থেকে টিকিট নিয়ে লাগেজ নিয়ে চলে যায়।সবাই আলিয়ার পিছনে যেতে চাইলে আদি আর সাদিয়া আটক করে।
আয়ানঃবাবা ভেঙ্গে পরবেন না আমি স্টেশন থেকে আলিয়াকে নিয়ে আসবো।
সায়ানঃআমি যাবো চল।
আয়ান আর সায়ান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।আলিয়ার দাদি প্রথম নিজের ভুল বুঝতে পারে।
আলিয়া সবার সামনে ট্রেনের কথা বললেও ও আবির ওকে গাড়িতে করে হোস্টেলে দিয়ে আসে।আয়ান আর সায়ান আলিয়াকে খুজে না পেয়ে নিরাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।
চলবে
(কিছু কথা যারা বাবা মা তারা সন্তানকে সময় দিবেন নয়তো আলিয়ার মত আপনাদের আপনার সন্তান ভুল বুজবে।আমরা ভাবি বাচ্চা ছোটথেকে হোস্টেলে রাখা বেশি ভালো হবে কিন্তু না ঐ সময় আমাদের ভালবাসা বেশি প্রয়োজন।আলিয়ার দাদির মত অনেক দাদি আছে আমি বলব না তারা খারাপ কিন্তু তাকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করবেন না।আলিয়ার দাদি যদি শহরে গিয়ে থাকত বা আলিয়ার বাবা মাকে সেখানে থাকতে দিতো তাহলে হয়তো গল্পটা অন্য দিকে মোড় নিতো।আমার কথা কেউ খারাপ ভাবে এটাই বাস্তব।এখন আপনার সন্তান বড় হলে কেনো আপনার দায়িত্ব নিতে চায়না একবার ভেবে দেখেছেন কেনো?কারণ ওর যখন আপনার দরকার ছিলো আপনি ওকে দূরে রেখেছেন।)