ভূবন_বিলাসী part 11
#লেখিকাঃসীমা
সায়ানঃআমি যাবো চল।
আয়ান আর সায়ান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।আলিয়ার দাদি প্রথম নিজের ভুল বুঝতে পারে।
আলিয়া সবার সামনে ট্রেনের কথা বললেও ও আবির ওকে গাড়িতে করে হোস্টেলে দিয়ে আসে।আয়ান আর সায়ান আলিয়াকে খুজে না পেয়ে নিরাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।
দাদিঃআয়ান আলিয়াকে পেয়েছো?
আয়ানঃনা দাদি।
দাদিঃসব আমার দোষ সংসারে নিজের ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে আজ এমন হলো।
আলিয়ার বাবাঃনা মা আমাদেরও দোষ আছে আমরা ওকে নিজের কাছে না রেখে হোস্টেলে রেখেছি।
আলিয়ার চাচ্চুঃসব থেকে আমি অপরাধি রুবিনাকে বিয়ে করলে এসব হতো না।
সায়ানঃএখন আলিয়াকে খুজে বের করতে হবে ও নিশ্চয় হোস্টেলে ফেরত গেছে আমরা কাল সকালে রওনা হবো।কাজল আর পিয়াকে ফোন করছি আমি আলিয়া গেলে জানাতে বলব।
আয়ানঃএখন আমি চুপ করে থাকতে পারব না আমি ওকে খুজতে গেলাম।
আয়ান আলিয়াকে খুজতে বের হয়।সায়ানও ফোন করে কাজল আর পিয়াকে বলে আলিয়া গেলে যেন জানায়।
আয়ান বাড়ি থেকে হয়ে আবার স্টেশনে গিয়ে আশে পাশে খুজতে থাকে।
আলিয়া গাড়ি থেকে নেমে আবিরকে বিদায় জানিয়ে হোস্টেলে আসে।কাজল আর পিয়া আলিয়াকে দেখে খুশি হয়।
কাজলঃআলিয়া আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি?
আলিয়াঃনা আবির ভাইয়া রেখে গেছে।
পিয়াঃতোর সায়ান ভাইয়া ফোন দিয়েছিলো বলেছে তুই আসলে ফোন করে জানাতে।
আলিয়াঃকাউকে ফোন করার দরকার নেই।
পিয়াঃতুই ঠিক আছিস? (আলিয়ার কাধে হাত রেখে)
আলিয়া সব খুলে বলে।
কাজলঃআমাদের দশা একই আমাদের বাবা মাও হোস্টেলে রেখে দিয়েছে তোর নাহয় দাদির জন্য আর আমার তো দাদি নেই বাবা মা দুজনে অফিসে চাকরি করে বাসায় এলে দুজনে ঝগড়া শুরু করে দেয়।আমি ঠিকমত পড়তে পারতাম না ঘুমাতে পারতাম না এজন্য হোস্টেলে চলে আসি।
পিয়াঃআমার তো কপাল আরো খারাপ বাবা ব্যবসা করে মা গৃহিনী হলেও সারাদিন সিরিয়াল নিয়ে পড়ে থাকে।আমার দিকে তাকানোর সময় নেই।
আলিয়াঃআমাদের জীবন কেনো এমন রে?ভালো লাগে না কিছু।
কাজলঃএখন ঘুমিয়ে পড় কালকে কথা হবে।গুড নাইট
আলিয়া আর পিয়াঃগুড নাইট।
,
,
কাজল বা পিয়ার ফোন না আসায় সবাই চিন্তায় পড়ে যায়।আয়ান সারারাত ধরে খোজে পায় না।সকালে আয়ান বাড়িতে চলে যায়।কলিং বেল বাজালে মিলি দরজা খুলে দেয়।মিলি আয়ানকে দেখে জড়িয়ে ধরে।
মিলিঃআয়ান তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে তোমাকে আমি খুব মিস করেছি।
আয়ান নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মিলির গালে থাপ্পর বসিয়ে দেয়।
আয়ানঃবোন বোনের মত থাকবি ভুলে যাবি না আমি তোর বড় ভাই।
রাগে ফুসতে ফুসতে আয়ান রুমে যায়।মিলি গালে হাত দিয়ে তখনও কান্না করে যাচ্ছে।
মিলিঃআমি এর শেষ দেখে ছাড়ব আয়ান।
আয়ান রুমে গিয়ে কেঁদে উঠে।আলিয়ার স্মৃতি জড়িয়ে আছে এ রুমের প্রত্যেক জিনিসে।মাছের একটা একুরিয়াম অনেক ভালবাসতো আলিয়া।জোড়া মাছ আছে সেখানে আলিয়া প্রতিদিন মাছদের খাবার দিতো।একদিন আলিয়ার হাত থেকে একুরিয়াম পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো আলিয়া মাছদের বাচানোর জন্য জন্য পানির জগের মধ্যে মাছদের রেখেছিলো।আয়ান পানি খেতে গিয়ে মাছ দেখে আলিয়াকে প্রশ্ন করলে আলিয়া কেদে দেয়।আয়ান নতুন একুরিয়াম কিনে এনে আলিয়াকে দেয়।
একুরিয়ামের দিকে আয়ান আপন মনে হেসে ওঠে।
আয়ানঃতোমাকে আমি ফিরাবো আলিয়া যেকোনো মূল্যে।
,
,
আলিয়ার পরিবারে সবাই আলিয়ার কাছে এসে ক্ষমা চায়।আলিয়া খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে।
দাদিঃএতো রাগ তোর আমাদের ছেড়ে চলে এলি
আলিয়াঃসরি দাদি(মাথা নিচু করে)
দাদিঃআমি কিছু মনে করিনি চল এবার আমরা একসাথে থাকব হোস্টেলে থাকবি না।
আলিয়াঃআমার পড়াশুনা?
আলিয়ার বাবাঃবাড়ি থেকে করবে তোমার ভার্সিটির কাছাকাছি আমাদের যে বাড়িটা আছে সেটাতে সবাই থাকব।
আলিয়াঃসত্যিইইইইই(খুশি হয়ে)
আলিয়ার মাঃসত্যি এটা তোর দাদির ডিসিশন।কাজল আর পিয়ার বাবা মাকেও তোর দাদি সব বুঝিয়েছে তাই ওরা রাজি হয়েছে আমাদের বাড়ির পাশে ওরা বাসা ভাড়া নিয়েছে।
কাজলঃতাই???
কাজলের মাঃ(পিছন থেকে)হুম তাই মা আমরা তোদের সময় এতদিন না দিয়ে খুব ভুল করেছি আর কোনোদিন ঝগড়াও করবো না।
কাজলের বাবাঃকাজল হোস্টেল থেকে সব গুছিয়ে নাও।
পিয়াঃআমার কেউ আসেনি???
পিয়ার মাঃকে বলেছে আসেনি???
পিয়াঃমা???
পিয়ার বাবাঃতোমার মাও আর কোনোদিন সিরিয়াল দেখবে না এই সিরিয়াল শুধু পরিবারে অশান্তি ডেকে আনে।
পিয়ার মাঃআমি বুজেছি যখন আলিয়ার দাদি বলেছিল আর কোনোদিন সিরিয়াল দেখব না।
,
,
আলিয়া,কাজল আর পিয়া খুশিতে নাচতে নাচতে সব গুছিয়ে নিয়ে গাড়িতে ওঠে।
আলিয়ারা নতুন বাড়িতে আসে।এ বাড়িতে আলিয়া আগে আসেনি শুধু শুনেছিল।বাড়ির সামনে সুইমিংপুল আর বাগানও আছে।বাড়ির ছাদে এমনকি বারান্দায় গাছ লাগানো হয়েছে ঠিক আলিয়া যেমন চেয়েছিলো।
দাদিঃপছন্দ হয়েছে দাদুভাই।
আলিয়াঃহুম অনেক thank you দাদি???
আলিয়াকে ওর দাদি একটা বড় রুমে নিয়ে যায়।
দাদিঃএটা তোর রুম।
আলিয়াঃএখানে তো ক্রিকেট খেলা যাবে দাদি???
দাদিঃহুম এখন ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।দুদিন পর তোর চাচ্চু আর রুবিনার বিয়ে।
,
,
আয়ান ওর ফুপির রুমে যায়।ওর ফুপি ওকে দেখে উঠে বসে।
আয়ানঃকেমন আছো ফুপি?
আয়ানের ফুপিঃভালো আলিয়াকে আনিসনি?
আয়ানঃ ও আমার উপর রাগ করে চলে গেছে।
আয়ানের ফুপিঃতোর কাছে একটা সত্যি কথা লুকিয়েছি এতদিন।
আয়ানঃকিসের সত্যি ফুপি?
আয়ানের ফুপিঃআলিয়া যেদিন প্রথম এসে আমার হাত ধরে কেদেছিল সেদিনে আমার জ্ঞান ফেরে আলিয়ার জন্য আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পেরেছি।
আয়ানঃকিন্তু তুমি বলেছিলে রিমি নাকি তোমাকে সুস্থ করেছে?
আয়ানের ফুপিঃআলিয়া আমাকে সত্যিটা তোকে জানাতে বারন করেছিলো তাই বলিনি ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।
আয়ানঃঠিক আছে ফুপি ওর জন্য তোমাকে শিহাব চাচ্চু বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।
আয়ানের ফুপিঃবিয়েটা বড় ব্যাপার না মেহরাব ভাই আমার সন্তানকে নিজের পরিচয়ে বড় করেছে এটাই অনেক।ওদের কোল থেকে আমি সায়ানকে এখন নিতে পারব না।
আয়ানঃসেটা পরে দেখা যাবে।
,
,
,
পরদিন আলিয়া,কাজল আর পিয়া একসাথে ভার্সিটি যায়।আজ তাদের ক্লাসে নতুন একটা মেয়ে এসেছে।মেয়েটা দেখতে মোটামুটি সুন্দর সব ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে।এতদিন তারা আলিয়াকে দেখত আজ মেয়েটাকে দেখছে।ক্লাসে ঢুকে স্যার মেয়েটার পরিচয় সবাইকে দিলো।
স্যারঃএ হল মায়া তোমাদের নিউ বন্ধু সবাই একে বন্ধু হিসেবে কোনো সমস্যা হলে সাহায্য করবে।
সবাইঃওকে স্যার।
স্যারঃআলিয়া তুমি মায়াকে সব নোট দিবে।
আলিয়াঃওকে স্যার।
মায়া আলিয়ার পাশে গিয়ে বসলো।আলিয়ার কোমড়ে হাত রাখতে আলিয়া বড় বড় চোখ করে মায়ার দিকে তাকালো।
মায়াঃএত দূরে কেনো বসেছো?
আলিয়া অনেক কষ্টে রাগ কন্ট্রোল করে।
আলিয়াঃলুচু মেয়ে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে বিরক্ত করছে।(বিড়বিড় করে)
মায়া আলিয়াকে একটা চোখ টিপ্পনী দিলে আলিয়া হা করে মায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
চলবে