ভূবন_বিলাসী part 8

0
1630

ভূবন_বিলাসী part 8
#লেখিকাঃসীমা

আয়ানঃআলিয়া চোখ খুলো তোমার কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।???
রিমিঃভাবি ঠিক হয়ে যাবে। ভাইয়া তোমাদের কে বলেছিলো আলিয়ার বাবা অপরাধী?
আয়ানঃশিহাব ইসলাম আলিয়ার চাচ্চু।
রিমিঃ??????
আয়ানঃঅবাক হলে তাইনা আমার বাবাও হয়েছিলো যখন শিহাব আংকেল বলেছিল মেহরাব আংকেল সায়ানের বাবা।বাবা আর মেহরাব আংকেল ছোটবেলার বন্ধু ছিল।আলিয়াকে আমি আমার এই হাত দিয়ে অনেক কষ্ট দিয়েছি যখন ও হাইস্কুলে পড়তো তখন থেকে আদিকে ওর পিছনে লাগিয়ে দিয়েছিলাম আজ আমার জন্য ওর ছোট মনটা ভেঙ্গে গেছে???
রিমিঃভাবিকে এখন বেশি করে ভালবাসো তাহলে হবে।
আয়ানঃআলিয়া তোমাকে বাচিয়েছে কি যেন বলেছিলে?
রিমিঃশোন তবে আমি ক্লাস শেষে বাড়িতে আসছিলাম তখন…
,
ফ্লাশব্যাকে ঘুরে আসি কি হয়েছিলো সেদিন।
আলিয়া তখন ক্লাসে টেনে পড়ত কোচিং থেকে ফেরার পথে লক্ষ করে কয়েকজন ছেলে একটা মেয়েকে ঘিরে ধরে বাজে কথা বলছে।আলিয়া ওর সব বন্ধু বান্ধবীর নিয়ে ইটের টুকরো ছেলেগুলোর দিকে ছুড়ে মারে আর ছেলেগুলো পালিয়ে যায়।
রিমিঃধন্যবাদ তোমাদের আমার জীবন বাচানোর জন্য।আমি রিমি মেডিকেলে পড়ি
আলিয়াঃআমি আলিয়া এরা আমার ফ্রেন্ডস নীলা,কাজল,পিয়া,অরুন,রাহুল,ইফতি একসাথে আমরা পড়ি ক্লাস টেনে।
রিমিঃতুমি তো পিচ্চি একটা আপু কিভাবে ওদের তাড়ালে ???
আলিয়াঃআমি পিচ্চি না জানেন আমার বিএফ আছে আদি।??
রিমিঃএতটুকু মেয়ের বিএফ???
আলিয়াঃহুম আসি আজ বাই।
,
বর্তমানে
আয়ানঃএই হলো সেই কাহিনী?
রিমিঃহুম সেদিন মিলি আপুকে বারবার বলেছিলাম ক্লাস শেষে গাড়ি পাঠিয়ে দিতে কিন্তু ও দেয়নি কারো পার্টিতে গিয়েছিলো।ভাবির জ্ঞান তাড়াতাড়ি ফিরবে খেয়াল রেখো আমি দেখছি মিলি আপু কি করছে আর ঔষধ রহিম(দারোয়ান)ওকে দিয়ে আনিয়ে নিচ্ছি।

রিমি আর নার্স চলে গেলে আলিয়ার পাশে আয়ান শুয়ে পড়ে।আলিয়াকে দেখে আজ নতুন করে আলিয়ার প্রেমে পড়ে গেলো।
সারাদিন আলিয়ার কাছ থেকে এক সেকেন্ডের জন্য আয়ান সরেনি।আলিয়ার জ্ঞান ফিরলে দেখে এক হাতে স্যালাইন লাগানো আর এক হাত আয়ানের বুকের উপর।আলিয়া হাত সরাতে চাইলে আয়ান ঘুম থেকে জেগে ওঠে।
আয়ানঃআলিয়া কি করছো হাতে ব্যাথা পাবে তো?
আলিয়াঃআমি ব্যাথা পেলে পাবো তাতে তোমার কি?কে তুমি আমার?
আয়ানঃজানি তুমি অনেক রেগে আছো কিন্তু তোমার শরীর দূর্বল তাই বেশি কথা বলোনা।আমি কিছু ফল নিয়ে আসছি খেয়ে ঔষধ খেতে হবে।
আলিয়াঃআমি তোমার টাকা দিয়ে কেনা কোনোকিছু খাবোনা। স্যালাইন হাত থেকে খুলে দাও।
আয়ানঃপাগলামো করো না আলিয়া আমি তোমার স্বামী আর স্বামীর উপার্জনের টাকায় তার স্ত্রীর পুরো হক আছে।
আলিয়াঃকোন স্বামীর কথা বলছো যে বাসররাতে তার স্ত্রীকে চেয়ারের সাথে বেধে নির্মমভাবে মারে?যে সারাক্ষন স্ত্রীকে কটুকথা বলে তাকে?নাকি যে স্ত্রীর হাত পা পুড়ে দেয় তাকে?বলো কোন স্বামীর কথা বলছো?আমার শরীর এখনো দাগ শুকোয় নি নাকি আরো মারবে?আমি তো ভুলেই গেছি আমার পরিবারকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তুমি আমাকে বিয়ে করেছো তো বলো কিভাবে কষ্ট দিবে আবার মারবে?
আয়ানঃআলিয়া স্টপ প্লিজ (হাত ধরে)ভুলে যাও সব আমরা নতুন করে জীবন শুরু করবো।
আলিয়াঃআয়ান তুমি আমাকে মেরে ফেললেও হাসিমুখে মেনে নিতাম কিন্তু তুমি তো আদিকে দিয়ে অনেক বড় খেলা খেলেছো আমার সাথে।
আয়ানঃআলিয়া..
আলিয়াঃপ্লিজ আমাকে একা থাকতে দাও তোমার মিলির কাছে তুমি যাও।
,
,
আয়ান কিছু না বলে চলে যায়।কিছুক্ষন পর একটা বাটিতে করে সুপ নিয়ে আসে।
আয়ানঃহা করো আমি নিজে বানিয়েছি তোমার জন্য
আলিয়া আয়ানের হাত থেকে বাটিটা ফ্লোরে ফেলে দেয়।
আলিয়াঃচলে যাও নয়তো আমি আমার ক্ষতি করবো।
আয়ানঃযাবো না আমি দেখি তুমি কি করে?
,
আলিয়া ওর হাত থেকে স্যালাইন খুলে ফেলে অন্য হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলে।হাত দিয়ে আবার রক্ত পড়তে থাকে।আয়ান তাড়াতাড়ি হাতটা ধরে ফেলে ব্যান্ডেজ করতে থাকে।
আলিয়াঃমাম্মাআআআআআ
আয়ানঃকি হয়েছে চিৎকার কেনো করছো?
আলিয়াঃআমার হাত ব্যাথা করছে।
আয়ানঃপাগলি একটা নিজে নিজেকে কষ্ট দেয় আবার নিজে চিৎকার করে।
আলিয়াঃমাম্মা আমাকে নিতে আসবে না?
আয়ানঃআসবে কিন্তু কয়েকদিন পর আমি বলেছি তাদের দেরী করে আসতে।
আলিয়াঃযেন আমার মারতে পারো???
আয়ানঃনা আদর করবো ??আমি আবার সুপ নিয়ে আসি।
আলিয়াঃআমি খাবো না যাও এখান থেকে।রহিমা খালাকে দিয়ে সুপ পাঠিয়ে দাও।
আয়ানঃআমি তোমাকে খাইয়ে দিলে সমস্যা কি তোমার?
আলিয়াঃতোমার হাতে আমি কোনোকিছু খাবো না আমি খারাপ কিছু বলার আগে প্লিজ সামনে থেকে চলে যাও।
আয়ান নিচে গিয়ে রহিমাকে পাঠিয়ে দেয়।
,
রহিমা সুপ নিয়ে রুমে আসে।
রহিমাঃআমি তোমারে খাইয়ে দেই।
আলিয়াঃদিন।
রহিমা আলিয়াকে সুপ খাইয়ে দিয়ে চলে যায়।
,
,
কিছুদিন পর আলিয়া একটু সুস্থ হয়।আয়ান আলিয়ার অনেক কেয়ার করে আলিয়া আয়ানকে বকে তবু আয়ান আলিয়াকে ভালবাসে।
আজ আলিয়ার বাবা মা আলিয়াকে নিতে আসবে তাই আলিয়া খুব খুশি হয়।
আলিয়া লাগেজে সব কাপড় গুছিয়ে রাখে।
আয়ানঃআলিয়া আমার দেওয়া শাড়িতো একটাও নাও নি।
আলিয়াঃওসব মিলিকে দিয়ে দিয়েছি তুমি আমাকে যা কিছু গিফট করেছো সব।
আয়ান আলিয়াকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে কিস করে।
আয়ানঃকেনো দিয়েছো??
আলিয়াঃওর সংসার ওর স্বামী আর ওকে দিবোনা? আমি আর এ বাড়িতে ফিরবো না কোনোদিন মিলিকে বিয়ে করে তোমাদের ভালবাসা পূর্নতা পাবে আর এমনিতেও আমাকে তুমি তো ভালবাসো না তাহলে এই বিয়ের কোনো মানে নেই।আর হ্যা মাম্মা বা পাপা তোমাকে নিয়ে যেতে চাইলে বলবে তোমার অফিসের কাজের জন্য যেতে পারবেনা।
আয়ানঃআর কিছু বলবে এবার আমার কথা শোন আমি তোমার সাথে সংসার করবো।
আয়ান দরজা লক করে আলিয়াকে কোলে তুলে নেয়।
আলিয়াঃআয়ান ছাড়ো আমাকে।
আয়ানঃআজ তোমাকে ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিবো।
,
,
,
আলিয়ার পরিবার ওকে নিতে বিকেলে আসে।আলিয়া ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
আলিয়াঃআমি তোমাদের কেউ না তাইনা এই কয়েকদিন আমার সাথে ফোনেও কথা বলোনি???
আলিয়ার মাঃঅনেক মনে পরেছিল কিন্তু যখন ফোন দেই তুই ব্যস্ত থাকিস।
আলিয়া বুঝতে পারে আয়ান ইচ্ছে করে আলিয়াকে ফোন দেয়নি।
আলিয়ার বাবাঃমামনি কেমন আছো?
আলিয়াঃভালো পাপা বাড়ির সবাই কেমন আছে?
আলিয়ার মাঃভালো আয়ান কেমন আছো?
আয়ানঃভালো।আপনারা ভালো আছেন?
আলিয়ার বাবাঃহুম তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও নয়তো রাত হয়ে যাবে।
আলিয়াঃপাপা আমি রেডি চলো।
আলিয়ার মাঃআয়ান তুমি রেডি হয়ে নাও।
আলিয়াঃমাম্মা ওর অফিসে কাজ আছে তাই যেতে পারবে না।
আয়ানঃনা মা আলিয়া মিথ্যা কথা বলছে আমি যাবো(আলিয়াকে চোখ টিপ্পনী দেয়???)
আলিয়ার মাঃআলিয়া এসব কিন্তু ভালো না।
আলিয়া রেগে রুমে যায় আয়ান পিছু পিছু চলে যায়।মিলি যাতে ঝামেলা করতে না পারে সেজন্য রিমি ওকে নিয়ে শপিং করতে চলে গিয়েছে।
আয়ানঃবউ ও বউ রাগ করেছো????
আলিয়াঃকথা বলবে না আমার সাথে???
আয়ানঃওকে আমার কাপড় গুছিয়ে নিয়েছি চলো।
আলিয়াঃতুমি গেলে আমি যাবো না।
আয়ান আলিয়াকে কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।আলিয়ার বাবা মা অন্য গাড়িতে উঠে।
আলিয়াঃআমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে আয়ানের সত্যিটা সবার সামনে আসে।(মনে মনে)
আয়ানঃআলিয়া তুমি কি ভাবছো আমি জানি ওখানে শুধু তোমার চাচ্চুর মুখোশ খুলে দিতে যাচ্ছি(মনে মনে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here