ভূমধ্যসাগরের তীরে #পর্বঃ১১ #লেখিকা দিশা মনি

0
37

#ভূমধ্যসাগরের তীরে
#পর্বঃ১১
#লেখিকা দিশা মনি

মিষ্টি হতাশ চিত্তে বসেছিল জানালার কার্নিশ ঘেষে। এই অচেনা অজানা মার্সেই শহরে সে যেন এখন অনেক বেশিই অসহায় হয়ে উঠেছে৷ একেই তো বুঝতে পারছে না কিভাবে রাফসানকে খুঁজে বের করবে৷ তার উপর এখন আবার পাসপোর্ট ভিসাও হারিয়ে ফেলেছে৷ এখন এই অচেনা দেশে তার থেকে নিরুপায় বোধহয় আর কেউ নেই। এমন সময় ফাতিমার বিবির কন্ঠস্বর শোনামাত্রই সে সজাগ হলো৷ ফাতিমা বিবি মিষ্টির রুমে এসে বললেন,
“কি অবস্থা মিষ্টি? তুমি এখন কেমন আছ?”

“জ্বি, ভালো।”

“ওহ। তো যেটা বলার জন্য আসা। আমার মেয়ে আমিনা চলে এসেছে। ও তোমার সাথে দেখা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে৷ তুমি একটু কষ্ট করে ওর সাথে পরিচয় হয়ে নাও। আমার একটু কাজ আছে তো।”

“আচ্ছা,কোন ব্যাপার না। আপনার মেয়ে কোথায়?”

এমন সময় এক অষ্টাদশী তরুণী এসে দোর গড়ায় দাঁড়িয়ে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম, আপু। আমি আমিনা আল খলিলি। ফাতিমা বিবির আদরের মেয়ে এবং ইয়াসিন ভাইয়ের চোখের মনি।”

আমিনাকে দেখেই মিষ্টি বুঝতে পারল মেয়েটা অনেক মিশুক। সে হালকা হেসে বলল,
“ভেতরে এসো।”

ফাতিমা বিবি আমিনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
“তুমি একটু মেয়েটাকে সঙ্গ দাও। এই অচেনা, অজানা শহরে মেয়েটা একদম একলা হয়ে পড়েছে। তুমি তো প্রায় ওর সমবয়সী। তোমার সাথে থাকলে হয়তো ও একটু ভালো বোধ করবে। আমি তো বয়স্ক মানুষ, আমার সাথে হয়তো মনের সব কথাও খুলে বলতে পারবে না।”

আমিনা হালকা হেসে বলে,
“তুমি কিছু চিন্তা করো না আম্মু। আমি মিষ্টি আপুর সাথে একদম নিজের বোনের মতোই মিশে যাব ইনশাআল্লাহ। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।”

ফাতিমা বিবি বেরিয়ে যেতেই আমিনা একদম মিষ্টির পাশে এসে বসে। মিষ্টি আমিনাকে দেখে হালকা হেসে বলে,
“কি অবস্থা তোমার? তোমার ব্যাপারে তোমার মা ভাইয়ের থেকে অনেক কিছু শুনলাম। তোমাকে দেখেও মনে হচ্ছে তুমি অনেকটাই খুশি আমায় দেখে। তবে আমার মনে একটু খচখচানিটা যাচ্ছে না। তুমি কিছু বলবে এই ব্যাপারে? তোমার কি সত্যিই আমাকে নিয়ে বিন্দুমাত্র সমস্যা নেই? কারণ তোমার সাথে আমার একই ঘর শেয়ার করে থাকতে হবে।”

“আরে না, এই নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না আপু। আমার এই নিয়ে কোন সমস্যা নেই। আপনার মতো বোন পেয়ে অনেক খুশি৷ ভাইয়ার সাথে তো আমার সম্পর্ক অনেকটাই ফর্মাল। এখন মনে হলো একজন কাছের কাউকে পেলাম৷ যাইহোক, আপনার ব্যাপারে অনেক কিছুই শুনলাম মায়ের কাছে। কিভাবে আপনি এই দেশে এলেন, আপনার স্বামীর খোঁজে তার উপর এখানে এসে কিভাবে পাসপোর্ট, ভিসা হারিয়ে ফেললেন। সব কিছুই আমি শুনলাম৷ তাই বুঝতে পারছি এখন আপনার মার্সেই শহরে টিকে থাকা কতটা কঠিন। তবে এখানে টিকে থাকতে চাইলে কিন্তু আপনাকে কিন্তু ফরাসি ভাষা শিখতেই হবে৷ আপনি কি শিখতে আগ্রহী?”

মিষ্টি কিছুক্ষণ চুপ করে আমিনার কথা শুনছিল। এই মিষ্টি স্বভাবের মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে তার মনটা অনেকটা হালকা লাগছিল। এতদিন পর এমন একজনকে পেল, যাকে নিজের মনের কথা বলা যায়। মিষ্টি একটু লাজুক হেসে বলল,

“ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখতে তো আমি অবশ্যই চাই। কিন্তু জানি না পারব কি না। তুমি তো জানো, আমার ফরাসি ভাষা শেখা অবস্থা এখন একদম শূন্য।”

আমিনা মিষ্টির হাতটা ধরে বলল,
“আপু, মন খারাপ করবেন না। আমরা সবাই আল্লাহর উপর ভরসা করি, তাই না? ফরাসি শেখা তেমন কঠিন কিছু নয়। আমি প্রতিদিন এক ঘণ্টা সময় দেব আপনাকে। এই শহরে টিকে থাকতে গেলে ভাষাটা জানা জরুরি। তার উপর, ভাষা জানলে আপনার স্বামীকে খুঁজে বের করাও অনেক সহজ হবে।”

মিষ্টি মৃদু হেসে বলল,
“তোমার মতো মিশুক আর হাসিখুশি মেয়ে আমার পাশে থাকলে হয়তো আমি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করতে পারব।”

আমিনা হেসে বলল,
“আপু, আমি ঠিক করেছি, আপনাকে আমার মতো করে এই শহরটা ঘুরিয়ে দেখাব। আপনি এখানে নতুন, তাই না? তবে আগে ভাষাটা একটু আয়ত্ত করা যাক। তারপর পুরো মার্সেই ঘুরিয়ে দেব।”

মিষ্টি প্রথমবারের মতো একটু আশার আলো দেখতে পেল। আমিনার কথাগুলো যেন তাকে এক নতুন শক্তি এনে দিল।

আমিনা বলল,
“আপু, কোনো কাজ যদি ঠিকভাবে শুরু না করা যায়, তবে তা শেষ করা কঠিন। আমি চাই আপনি দ্রুত শিখুন।”

এই বলে আমিনা ফরাসি ভাষার বেসিক কিছু শব্দ শেখানো শুরু করল।
“প্রথমে আপনি আমাকে বলুন, ‘হ্যালো’ বলতে চান?”

মিষ্টি একটু ইতস্তত করে বলল,
“হ্যালো তো ইংরেজিতেও হয়। ফরাসিতে কীভাবে বলি?”

“ফরাসিতে আমরা বলি, Bonjour।”

মিষ্টি তার উচ্চারণের চেষ্টা করল, “বনজুর।”
“না আপু, একটু নরম করে বলুন। শুনুন, Bon-joooour।”

মিষ্টি কিছুক্ষণ চর্চা করার পর তা ঠিকঠাক বলতে পারল। আমিনা খুশি হয়ে বলল,
“আপনি তো বেশ ভালো শিখছেন।”

~~~~~~~~
এলিসকে নিয়ে মার্সেই বন্দরের সামনে এসে থামল ইয়াসিন৷ এলিস ক্যাব থেকে নেমে বন্দরেই দাঁড়িয়ে রইল। এখান থেকে দাঁড়িয়ে দূর থেকেই সমুদ্রকে দেখে যাচ্ছিল সে।

এলিস ইয়াসিনকে বলে,
“তুমি কি আমার প্র‍তি অনেক বেশিই বিরক্ত?”

ইয়াসিন বলে,
“সেটা কি আপনি বুঝতে পারেন না?”

“একইভাবে আমার মনের অনুভূতিও তো তুমি বোঝো না,”

ইয়াসিন বলে,
“২ ঘন্টার মাঝে আর মাত্র ৩০ মিনিট সময় বাকি আছে আপনার জন্য। এখন আপনি বলুন, এখন কি ফিরবেন নাকি আরো কোথাও যাবেন?”

“আমার সাথে আরো একটু থাকো না৷ দয়া করে, একটু সময়েরই ব্যাপার। আমার কিছু বলার আছে।”

“যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।”

“এলিজা সিস পাপাকে বলছিল সে তার নতুন বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে কর‍তে চায়৷ জানিনা, কোথা থেকে একটা নতুন বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করেছে ও। সে আবার পুলিশ অফিসারও। আমি ভাবছি পরবর্তীতে আমরাও বিয়েটা করে নেই।”

ইয়াসিন রাগী কন্ঠে বলে,
“এই নিয়ে আমি আর কিছু শুনতে বা বলতে চাই না।”

“কেন ইয়াসিন?”

ইয়াসিন রেগে নিজের ক্যাব নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এলিস দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“আমার ভালোবাসাটা তাহলে তুমি বুঝলে না ইয়াসিন! এই দুঃখ আমি কোথায় রাখব? আমার যেন বুক চিড়ে শুধু দীর্ঘ শ্বাসই বের হয়।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
(গত পর্বের শেষের দিকে ভুল করে এলিসের যায়গায় এলিজা লিখেছিলাম। আসলে এলিস হবে সেই মেয়ে যে ইয়াসিনকে একতরফাভাবে ভালোবাসে। আর এলিজা হলো এলিসের বড় বোন। এই ভুলের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আশা করি, ব্যাপারটা বুঝতে আর কারো অসুবিধা হবে না। আর পরবর্তী পর্বে অনেক বড় টুইস্ট থাকছে। যার জন্য সবাই অপেক্ষায় আছে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here