ভূমধ্যসাগরের তীরে #পর্বঃ২৩(ধামাকা) লেখিকা দিশা মনি

0
60

#ভূমধ্যসাগরের তীরে
#পর্বঃ২৩(ধামাকা)
লেখিকা দিশা মনি

মিষ্টির দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল রাফসান। তার চোখে ছিল নানান অজানা প্রশ্নের উত্তর জানার কৌতুহল। সেই কৌতুহল বাড়াতেই বোধহয় মিষ্টি একটু অস্পষ্ট স্বরে বলল,
“এদিকের সমস্যা মিটলে আশেপাশে কোন ক্যাফেতে গিয়ে বসবেন চলুন। সেখানে অনেক সত্য জানতে পারবেন আপনি।”

রাফসানকে কথাটা বলে দ্বিধার মধ্যে ফেলে একটু সামনের দিকে এগিয়ে যায় মিষ্টি। রাফসানও কৌতুহলকে পাশে ঠেলে নিজের কাজের মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করে। আপাতত তাকে এই সমস্ত বন্দুকধারী সন্ত্রাসীদেরকে ঠেকাতে হবে।

★★
কফিশপে মুখোমুখি বসে আছে মিষ্টি এবং রাফসান। দুজনের মুখেই কোন কথা নেই। দীর্ঘ সময়ের নীরবতা ভেঙে মিষ্টিই বলে ওঠে,
“আপনার সাথে আমার বিয়ে হওয়া, অতঃপর আমার মার্সেইতে আসা, আপনার সাথে কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়ে যাওয়া সবটাই ছিল আমার পূর্ব পরিকল্পনার অংশ!”

রাফসান স্তম্ভিত হয়ে মিষ্টির দিকে তাকায়। মিষ্টি কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে বলে,
“আপনি হয়তো জানেন যে, আমার বাবা মোর্শেদ চৌধুরী একজন নামী বিজনেসম্যান তবে তার আরো একটা গোপন পরিচয় আছে। তিনি একজন আন্ডারকভার ডিটেকটিভ এজেন্সির সদস্য। যিনি নিজের পরিচয় লুকিয়ে দীর্ঘ দিন যাবত চতুরতার সাথে গোয়েন্দাকিরি করে এসেছেন। এমনকি তার পরিবারের লোকজনও এ ব্যাপারে জানত না! আমি নিজেও জেনেছি আমার ১৭ বছর বয়সে। তাও আকস্মিক ভাবে৷”

রাফসান শিকদার বলেন,
“তার মানে তোমার বাবার মাধ্যমেই কি তুমি এই মিশন সম্পর্কিত তথ্য পেয়েছ?”

মিষ্টি মাথা নাড়িয়ে বলে,
“অনেকটা সেরকমই বলা চলে। একদিন বাবার রুমে প্রবেশ করে তার বিছানার উপর একটা ফাইল দেখে কৌতুহলবশত সেটা খুলে ফেলি আমি। আর তখনই আমি বাবার আসল পরিচয় সম্পর্কে জানতে পারি। বাবা এমনিতে এমন ভুল করার মানুষ নয় কিন্তু সেদিন তার তাড়াহুড়োয় করায় একটা ভুল আমাকে সত্যের সামনে নিয়ে আসে। অতঃপর আমি বাবার কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাই। তখন বাবা আমায় সব খুলে বলে। যে কিভাবে কিছু মানুষ পরিকল্পনা করছে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীটাকে ধ্বংস করে দেবার। আর কিভাবে কিছু সাহসী ব্যক্তি পৃথিবীকে এই সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে গোপন মিশন শুরু করেছে। বাবার কাছ থেকেই আমি এসব তথ্য সম্পর্কে জানতে পারি৷ এসব জেনে আমি অবাক হয়ে যাই! তবে আমার মনেও হঠাৎ করে ইচ্ছা ভেসে ওঠে এই মিশনে যোগ দেয়ার। বাবাকে এই ব্যাপারে জানাতেই তিনি আমায় সাথে সাথে নিষেধ করে দেন। কারণ এই মিশনে জীবনের অনেক ঝুঁকি আছে তাছাড়া তিনি ভাবেন, আমি এই মিশনের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত নই৷ কিন্তু আমি ছোটবেলা থেকেই বেশ একরোখা ছিলাম৷ তাই আমার জেদের কাছে বাবার বারণ বেশিক্ষণ টিকল না। একসময় বাবা আমায় অনুমতি দিয়েই দিল এই মিশনে যুক্ত হবার।তারপর থেকেই আমি নিজেকে এই মিশনের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য গোপনে ট্রেনিং নিতে শুরু করি। দীর্ঘ ৫ টা বছর আমি এই মিশনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছি। অতঃপর আমি সুযোগ খুঁজতে থাকি কিভাবে এই মিশনে সম্পৃক্ত হবো৷ বাবা আমাকে জানায়, এই মিশনে আমাকে ফ্রান্সে পাঠানোর জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে। বিশেষ করে ফ্রান্সের মার্সেই শহরে। কেননা,এই শহরে অনেক পারমাণবিক স্থাপনা থাকায় সেসকল সন্ত্রাসীদের অন্যতম প্রধান টার্গেট ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী এই মার্সেই শহর। তবে আমার এই মিশনে যোগ দেয়াটা এতটা সহজ ছিল না। কারণ আমার মা তখনো অব্দি এই ব্যাপারে কিছু জানতেন না। তিনি বাবার আসল পরিচয়ও জানতেন না। তাই তার কাছ থেকে সবটা লুকিয়ে আমার এভাবে মার্সেই শহরে আসাটা সম্ভব ছিল না। এসবের জন্যই মূলত আমি বাবাকে বলি কোন একটা উপায় বের করতে। এমন সময় বাবা আপনার ব্যাপারে জানতে পারেন যে আপনিও এই মিশনের সাথে যুক্ত। আর যেহেতু আপনার বাবার সাথে আমার বাবার আগে থেকেই একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল তাই তার খাতিরেই আমাদের বিয়েটা ঠিক করেন উনি। সবটা পরিকল্পনামাফিকই চলে। আপনি আমাকে বিয়ে করার পর মার্সেইতে চলে আসেন। অতঃপর আমি অবলা নারী হওয়ার অভিনয় চালিয়ে যাই। মাসখানেকের মধ্যে আপনার মৃত্যুর খবর আসতেই আমি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করি। আপনাকে খোঁজার কথা বলে এই মার্সেই শহরে পা রাখি। এটা বলায়, এই মার্সেই শহরে আসার একটা অজুহাতও পাওয়া গেছে এবং কেউ কিছু সন্দেহও করে নি।”

রাফসানের কাছে এবার সবটা ধীরে ধীরে পরিস্কার হতে থাকে। সে এবার মিষ্টির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তুমি তো দেখছি অনেক বুদ্ধিমতী! আমি ভাবতেও পারিনি তুমি এতটা ধুরন্ধর বের হবে!”

মিষ্টি একটা রহস্যজনক হাসি দিয়ে বলে,
“আমার ধুরন্ধরতা সম্পর্কে আপনার কোন আইডিয়া নেই! আপনি আপনার মাকে যেই চিঠিটা দিয়ে এসেছিলাম সেখানে তো শুধু এটাই লিখে রেখেছিলেন যেন আপনাকে ভুলে নতুন জীবন শুরু করি। এদিকে আমার একটা বিশেষ গুণ আছে জানেন? আমি মানুষের হাতের লেখা হুবহু নকল করতে পারি। এই গুণটাকে কাজে লাগিয়েই আমি মার্সেইতে আপনার গোপন মিশনে থাকার কথা আর আপনাকে খুঁজতে যাওয়ার কথা জুড়ে দেই! আর এতেই মার্সেইতে আসার আরো শক্তপোক্ত কারণ দাঁড় করাতে পারি। তারপর এখানে এসেই নিজের মোবাইল ফোনটা ফেলে দেই যাতে বাইরের দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। নিজেরই ঠিক করা লোককে দিয়ে নিজের পাসপোর্ট, ভিসা সব অপহরণও করাই! কারণ আমি চাই নি, এখানে কোন ভাবে আমার আসল পরিচয় প্রকাশ পাক।”

রাফসান শিকদার মিষ্টিকে জিজ্ঞেস করে,
“তাহলে ইয়াসিন আল খলিলিদের সাথে তোমার দেখা হওয়া থেকে শুরু করে বাকি ঘটনার মানে কি?”

মিষ্টি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“জানি না, এ ব্যাপারে আমি আন্দাজ করিনি কিছুই। যখন আমি নিজের পাসপোর্ট, ভিসা সব ছিনতাই করাই তখনই ভেবে নিয়েছিলাম মার্সেইতে আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে থাকব। কিন্তু কোথা থেকে যেন ইয়াসিন নামক ব্যক্তিটার সাথে হঠাৎ দেখা হলো। উনি আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন৷ আর তারপর তো এত কিছু ঘটে গেল। ছেলেটা ভীষণ ভালো জানেন, আর ওনার পরিবারও।”

মিষ্টির মুখে এভাবে অন্য একটা ছেলের প্রশংসা শুনে রাফসান শিকদার বেশ জেলাস হয়। সেটা তার মুখ চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। মিষ্টিও সেটা বুঝতে পেরে মনে মনে বেশ হাসে। এদিকে রাফসান গম্ভীর স্বরে বলে,
“কিন্তু এলিজা যে তোমায় সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করল এর মানে কি?”

মিষ্টি হেসে বলে,
“মিস এলিজার সাথে আমার এখানে আসার আগেই যোগাযোগ হয়েছিল। আমি চাই নি, আমাকে এখানে কেউ সন্দেহ করুক যে আমি কোম গোপন মিশনে আছি। বিশেষ করে সন্ত্রাসীরা। আর সেজন্যই নিজের পরিচয় লুকাতে এই নাটক করেছি। আর এর ফলটাও হাতেনাতে পেয়েছি। যখন এখানকার সন্ত্রাসীরা বুঝতে পেরেছে পুলিশ আমাকে সন্ত্রাসী বলে সন্দেহ করছে তখন তারা আমাকে ফাঁসানোর জন্য আমার ব্যাগে গ্রেনেড রেখে গেছে। আমি তো অল্পের জন্য তাদের ধরেও ফেলেছিলাম কিন্তু চোখের নিমেষে তারা যেন হারিয়ে গেল! অতঃপর না জানি কে রেলস্টেশন থেকে আমায় কিডন্যাপ করেছিল। তবে সেই সময় আমার আবছা আবছা জ্ঞানে আমি কিছু কথা শুনি৷ তারা পরিকল্পনা করছিল ক্রিসমাসের কিছুদিন আগেই মার্সেই এর এই ক্রিসমাস বাজারে হামলা করার! আর এটা শুনেই মূলত আমি এই বাজারে চলে আসি। যাতে করে সম্ভাব্য বিপদ থেকে বাচাতে পারি।”

“আর ভূমধ্যসাগরের তীরে তোমায় কে গুলি করেছিল? এই ব্যাপারে কিছু জানো?”

“না, এটাও একটা অমিমাংসীত রহস্য। তবে এসব রহস্যের সমাধান খুব শীঘ্রই হবে। আমার মনে হয়, ঐ সন্ত্রাসীরা এই বার ক্রিসমাসের দিন বড় কোন হামলার পরিকল্পনা করছে। আমাদের এখনই দ্রুত একশন নিতে হবে। যাতে তাদের ঠেকাতে পারি।”

‘ঠিক বলেছ তুমি। আমাদের মিশনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় এসে গেছে।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here