#ভূমধ্যসাগরের তীরে
#পর্বঃ৩
#লেখিকা দিশা মনি
সুইটি চৌধুরী মিষ্টির হাত ধরে টেনে বলেন,
“তোমার আর এখানে থাকার কোন প্রয়োজন নেই। আমার সাথে বাসায় চলো তুমি।”
মোর্শেদ চৌধুরী নিজের স্ত্রীর উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”এমন বাড়াবাড়ি করো না সুইটি।”
“বাড়াবাড়ি আমি না বাড়াবাড়ি করেছ তুমি। আর আমি কিছুতেই তোমাকে আমার মেয়ের জীবন নিয়ে খেলতে দেব না। তোমার বাড়াবাড়ির ফল আমার মেয়ে ভোগ করবে এটা হতে পারে না।”
এমন সময় রোকসানা শিকদার এগিয়ে এসে বলেন,
“এসব হচ্ছে টা কি এখানে?”
রোকসানা শিকদার কে দেখে সুইটি চৌধুরী বলেন,
“আপনার ছেলে কোন আক্কেলে বিয়ের পর নিজের নতুন বউকে ফেলে বিদেশে চলে গেল? আমার মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার আপনার ছেলেকে কে দিয়েছে?”
রোকসানা শিকদার বলেন,
“কি সব উলটা পাল্টা কথা বলছেন আপনি? আমার ছেলে কেন আপনার মেয়ের জীবন নিয়ে খেলবে? ও তো আর একে বারের জন্য চলে যায়নি। ও আবার ফিরবে!”
“সেটাই তো জানতে চাই, যে কবে ফিরবে আপনার ছেলে? আর আপনার ছেলে যত দিন না ফেরে তত দিন তো আমার মেয়ের এই বাড়িতে থাকার কোন মানে হয় না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি,আমার মেয়েকে নিয়ে আমি ফিরে যাব আমার বাসায়। তারপর আপনার ছেলে এই দেশে ফেরার পর নাহয় ওকে আবার এখানে ফিরিয়ে দিয়ে যাব।”
“এটা কেমন কথা বলছেন আপনি মিসেস চৌধুরী? আমাদের বাড়ির বউকে আপনি এভাবে বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে পারেন না।”
“বাহ! আপনার ছেলে নিজের বউকে ফেলে চলে যেতে পারে আর আমি আমার মেয়ে কে নিয়ে যেতে পারব না? এটা কি মগের মুল্লুক পেয়েছেন?”
“মগের মুল্লুক আমি না মগের মুল্লুক পেয়েছেন আপনি। দোষ তো এখানে আমার ছেলের না। ওর প্রফেশনটাও তো আপনাকে দেখতে হবে। সবটা জেনেই তো আপনারা আপনাদের মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন। তাই না? তাহলে এখন এসব নাটক করার মানে কি বলুন?”
সুইটি চৌধুরী রাগী চোখে নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি মোটেই এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। আমার কোন ইচ্ছাই ছিল না আপনার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হোক। আর না তো আমার মেয়ের ইচ্ছা ছিল আপনার ছেলেকে বিয়ে করার। আমার স্বামী জোর করে এই বিয়ে টা দিয়েছেন। বুঝলেন? আর এখন আপনার ছেলের যা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখছি তাতে এই সম্পর্ক টা আর টিকিয়ে রাখার মানে দেখি না। আমি আমার মেয়ে কে নিয়ে এখান থেকে চলে যাচ্ছি এরপর আপনার ছেলে ফিরে আসার পর বলবেন আমার মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে মুক্তি দিতে। এরপর আমি আমার পছন্দ মতো ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেব। যেখানে আমার মেয়ে সুখী হবে।”
রোকসানা শিকদার এবার রাগে ফেটে পড়েন৷ দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,
“আপনি দেখছি সত্যিই এখানে মগের মুল্লুকই পেয়েছেন। আমাদের মান সম্মানের পরোয়া করছেন না। বাড়িভর্তি মেহমানের সামনে এ সব কি ধরণের কথা বলছেন?”
“আর আপনারা যে বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে আমার মেয়ে টাকে অপ্রস্তুত করেছেন তার বেলা? আমি কি কিছু বলছি আপনাদের সেই নিয়ে? বলি নি তো। তাহলে চুপ থাকেন। আমি এক্ষুনি আমার মেয়েকে নিয়ে এখান থেকে ফিরে যাব। আর কারো কথা শুনব না।”
রোকসানা শিকদার সুইটি চৌধুরীর পথ আটকে ধরলেন। অতঃপর বললেন,
“আমি আপনাকে আর এক পাও নড়তে দেব না। আমার বাড়ির বউকে এভাবে আপনি নিয়ে যেতে পারেন না।”
এবার রফিক শিকদার এগিয়ে এসে বলেন,
“এভাবে ঝামেলা করা ভালো দেখাচ্ছে না। আমরা তো বসেও কথা বলতে পারি।”
“এখানে বসাবসির কিছু নেই। আমি যা সিদ্ধান্ত জানাবার আপনাদের জানিয়ে দিলাম।”
মোর্শেদ চৌধুরী এবার রাগী স্বরে বলেন,
“এমন সিনক্রিয়েট করা বন্ধ করো সুইটি। তুমি আমার মান-সম্মান আর কিছু রাখলে না।”
“তুমি চুপ করো চৌধুরী সাহেব। নাহলে কিন্তু আমার ভয়ানক রূপ দেখাবো। আমার মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার তোমার নেই।”
“ভুলে যেও না, মিষ্টি আমারও মেয়ে।”
“ও তাই? যদি সত্যিই নিজের মেয়ের ভালো চাইতে তাহলে এই পরিবারে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে না। আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাই না। মিষ্টি তুমি আমার সাথে চলো তো।”
রোকসানা শিকদার এবার মিষ্টিকে জিজ্ঞেস করেন,
“মিষ্টি, আমি শেষবারের মতো তোমার থেকে একটা কথা জানতে চাই। তুমি কি সত্যিই তোমার মায়ের সাথে যেতে যাও? যদি চাও তাহলে আমি তোমায় বাঁধা দেব না। কিন্তু যদি তুমি এখানে থাকতে চাও তাহলে আমি তোমার সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাবো।”
মিষ্টির মন যেন দোলাচলে পড়ে যায়। সে কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না। এমন সময় সুইটি চৌধুরী বলে ওঠেন,
“ও আবার কি বলবে? আমার কথাই আমার মেয়ের কথা। ও জানে,আমি ওর বাবার মতো নই। আমি অবশ্যই ওর ভালো চাই। ও আমার সাথেই যাবে।”
মোর্শেদ চৌধুরী মিষ্টিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
“দেখ, মিষ্টি। আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্যই করেছি। রাফসান অনেক ভালো ছেলে। ওর সাথে সংসার করলে তুমি সুখী থাকবে। নিজের বাবার উপর এতটুকু ভরসা রাখো। এখন হয়তোবা পেশাদারিত্বের দায়বদ্ধতা থেকে ওকে ফ্রান্সে যেতে হয়েছে কিন্তু ও একবার ফিরলে তুমি দেখো, ও নিজের দায়িত্ব পালনে কোন গাফিলতি করবে না। দয়া করে তোমার মায়ের কথা শুনো না। তোমার মা তোমার সংসার ভাঙতে চাইছে।”
“তুমি একদম আমার মেয়েকে ব্রেনওয়াশ করার চেষ্টা করবে না। ও খুব ভালো করেই জানে কে ওর ভালো চায়।”
গর্জে উঠে বলেন সুইটি চৌধুরী। মিষ্টি নিজের বাবা-মায়ের এসব কথায় তিতিবিরক্ত হয়ে বলে,
“চুপ করো তোমরা! তখন থেকে শুধু তোমরা নিজেদের কথাই বলে যাচ্ছ। আমার মতামত নেয়ার কোন প্রয়োজনীয়তাই বোধ করছ না। যে যার মতো তোমাদের সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপাতে চাইছ। কিন্তু কেন? আমাকে কি তোমাদের কোন মানুষ মনে হয়না? আমার কি কোন নিজস্ব মতামত নেই?”
বলেই সে রাগে কাপতে কাপতে বলে,
“আমার ভালো টা আমি নিজেই বুঝে নিতে পারব। আর আমি সেটা অলরেডি ভেবেও নিয়েছি।”
সুইটি চৌধুরী বলেন,
“হ্যাঁ, তুমি এবার এদেরকে বলে দেও তো যে, তুমি এখানে এক মুহুর্ত থাকবে না। আমার সাথে ফিরে যাবে বাসায়।”
“মম, প্লিজ..আমাকে বলতে দাও।”
এরপর মিষ্টি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তাই এখন এই বাড়িটাই আমার আসল বাড়ি। আমার স্বামীর অবর্তমানেও তাই আমি এখানেই থাকব। আর আমার স্বামীর ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করব।”
এই কথা শুনে মোর্শেদ চৌধুরী, রফিক শিকদার, রোকসানা শিকদার সবাই খুশি হয়ে যান। এদিকে সুইটি চৌধুরীর মুখে আমাবস্যা নেমে আসে৷ তিনি বলেন,
“যা বলছ, ভেবে বলছ তো?”
“হ্যাঁ, মম। আমি এখানেই থাকব। এটাই আমার শেষ সিদ্ধান্ত। আশা করি, আর কারো আমার এই সিদ্ধান্তে কোন আপত্তি থাকবে না। অবশ্য আপত্তি জানালেও আমি মানতে বাধ্য নই। আমার যা জানানোর আমি জানিয়ে দিয়েছি।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
[আপনারা কি মিষ্টির সিদ্ধান্তকে সাপোর্ট করেন?]