ভূমধ্যসাগরের তীরে #পর্বঃ৩২ লেখিকা দিশা মনি

0
18

#ভূমধ্যসাগরের তীরে
#পর্বঃ৩২
লেখিকা দিশা মনি

মিষ্টি তার সন্তানের আগমনের কথা শুনে একইসাথে অবাক ও খুশি হয়ে যার। তার মনে পড়ে রাফসানের সাথে কাটানো কিছু সুন্দর মুহুর্ত। গত এক মাসে তারা অনেক কাছে চলে এসেছে। তাদের এই প্রেমেরই ফসল তাদের এই সন্তান। তাই তো মিষ্টি নিজের পেটে হাত দিয়ে বলে,
“আমার আর রাফসানের সন্তান!”

মিষ্টির কথা শুনে আমিনা ও ফাতিমা বিবি এত কষ্টের মাঝেও আনন্দ প্রকাশ করে। ফাতিমা বিবি বলেন,
“তোমার সন্তানস্মভবা হবার কথা শুনে আমার ভীষণ ভালো লাগল। নিজের সন্তানকে তো আমি হারিয়ে ফেলেছি, তবে আল্লাহর কাছে দোয়া করব তোমার সন্তান যেন সুস্থ ভাবে এই পৃথিবীতে আসে এবং একটা সুন্দর জীবন পায়। তাহলেই তোমার বাকিটা জীবন ভালো ভাবে যাবে।”

আমিনাও বলে,
“তোমার সন্তানের একটা ভালো ভবিষ্যতের আশা করছি আমি। তুমি মিস্টার রাফসানকেও এই সুখবরটা দিয়ে দাও যে, তার সন্তান এই পৃথিবীতে আসতে চলেছে।”

মিষ্টি খুশি প্রকাশ করে বলে,
“ঠিক বলেছ তুমি আমিনা। আমার রাফসানকেও এই খুশির খবরটা দেয়া উচিৎ। ”

বলেই মিষ্টি নিজের ফোন বের করে রাফসানকে কল দিতে থাকে। কিন্তু ফোনটা বারবার রিং হবার পরেও রাফসান ফোনটা রিসিভ করে না। মিষ্টি কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে,
“উনি ফোনটা রিসিভ করছেন না কেন?”

মিষ্টির এহেন ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে আমিনা বলে ওঠে,
“মনে হয় কোন জরুরি কাজে আছেন। আমি তো নিজেও একজন গোয়েন্দা তাই আর এউ মিশনেও যুক্ত। তাই ওনার ব্যস্ততাটা বুঝতে পারছি।”

মিষ্টির তবু কেন জানি ভীষণ চিন্তা হচ্ছিল তাই সে আবার ফোন দিল রাফসানের নাম্বার। অতঃপর ফোনটার কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। রিং বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু রাফসান ফোন ধরেনি। এক অজানা আশঙ্কা মনের মধ্যে খোঁচা দিতে লাগল। সে কি ব্যস্ত, নাকি অন্য কোনো বিপদে পড়েছে? মিষ্টি নিজেকে আশ্বস্ত করতে চাইল, কিন্তু পারল না।

ফাতিমা বিবি মিষ্টির মুখের চিন্তিত অভিব্যক্তি দেখে বললেন,
“মা, দুশ্চিন্তা করিও না। পুরুষ মানুষ যখন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তখন এসব খেয়ালই থাকে না। একটু পর আবার চেষ্টা করো।”

মিষ্টি হালকা হাসল, তবে মন থেকে অস্থিরতা কাটল না। আমিনা পাশে বসে বলল,
“তবে একটা ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার, মিস্টার রাফসানের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আমরা বেশি কিছু জানি না। গোয়েন্দাগিরির কাজ সহজ না। সে হয়তো এমন জায়গায় আছে, যেখানে ফোন ধরা সম্ভব নয়।”

মিষ্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আমিনার কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু তবু, একটা অস্বস্তি তাকে গ্রাস করে ফেলল। সে জানে, রাফসান এখন কোথায়, কী করছে এসব কিছু জানা তার পক্ষে সম্ভব না।

তবু, সে আবার ফোন দিল। এবারো রাফসান ফোন ধরল না। বরং কয়েক সেকেন্ড পরেই একটা মেসেজ এল,
“আমি ব্যস্ত আছি। পরে কথা হবে।”

মিষ্টি ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইল। কীসের এত ব্যস্ততা? মিষ্টির আশংকা যেন বাড়তে লাগল। মিষ্টির চোখে পানি এসে গেল, কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিল।

ফাতিমা বিবি আর আমিনা বিষয়টা বুঝতে পারছিলেন। ফাতিমা বিবি বললেন,
“কিছু কিছু সুখবর সময় নিয়ে বলতে হয় মা। ঠিক সময়ে বলবে। এখন নিজের শরীরের খেয়াল রাখো।”

মিষ্টি মাথা নাড়ল। কিন্তু তার মনে হচ্ছিল, কিছু একটা ঠিকঠাক নেই।

★★
রাফসান ভূমধ্যসাগরের তীরে সন্ত্রাসীদের ধরতে এক ভীষণ জরুরি অভিযানে যুক্ত হয়েছে। মূলত সন্দেহ করা হচ্ছে যে, ভূমধ্যসাগরের নিচে সন্ত্রাসীরা কোন গোপন আস্তানা গড়ে তুলেছে। সেই আস্তানার সন্ধান পেতেই এই অভিযানটা চালু করা হয়েছে।

রাফসানের দলের এক লোক এসে রাফসানকে বলল,
“অনেকক্ষণ তো খুঁজলাম, তবুও তো কোন প্রমাণ খুঁজে পেলাম না।”

রাফসান রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
“এত সহজে হাপিয়ে উঠলে চলবে না। আমাদের কোন না কোন প্রমাণ খুঁজে বের করতেই হবে৷ এটা গোটা মানবসভ্যতাকে রক্ষা করার লড়াই। এই লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে।”

সবাই আবারো খোঁজাখুঁজিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। হঠাৎ করেই একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলে ওঠেন,
“এদিকে আসুন সবাই..এখানে টানেলের মতো কিছু একটা দেখতে পারছি।”

কথাটা শুনেই রাফসান সহ সবাই সেদিকে ছুটে যায়। গিয়ে দেখতে পায় সেখানে একটা টানেল জাতীয় কিছু আসে। এই টানেলটা একদম ভূমধ্যসাগরের কোল ঘেষে। অথচ মাটির কয়েক ফুট নিচে তৈরি। মাটি খুড়েই এই টানেলটা খুঁজে পাওয়া গেছে।

একজন জানতে চায়,
“এখন আমরা কি করবো? এই টানেলের ভেতরে যাব?”

রাফসান বলে,
“এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ আমরা জানি না এর ভেতরে ঠিক কি থাকতে পারে। আমাদের আগে কিছু বিশেষজ্ঞর সাথে কথা বলতে হবে। ফ্রান্স সরকারের থেকেও অনুমতি নিতে হবে।”

বাকি সবাই সম্মতি দিয়ে মাথা নাড়ায়। অতঃপর রাফসান বলে,”আমি একটু আশপাশটা ভালো করে খুঁজে দেখছি। যদি আরো কোন কিছু প্রমাণ খুঁজে পাই তাহলে ভালো হবে।”

বলেই রাফসান তার কিছু টিমমেট নিয়ে ভূমধ্যসাগরের তীরে এসে উপস্থিত হয়। এমন সময় তার মিষ্টির কথা মনে পড়ে। মিষ্টি বারবার তাকে ফোন দিচ্ছিল। তখন ব্যস্ততার জন্য মিষ্টিকে ফোন দেয়া হয় নি। তাই এখন একটু সুযোগ পেতেই রাফসান আর দেরি না করে মিষ্টির নাম্বারে ফোন করে।

এদিকে মিষ্টি যে রাফসানের চিন্তায় মশগুল ছিল, তাকে নিজেদের সন্তানের আগমনের খবর দিতে উদগ্রীব ছিল সে যখন দেখল রাফসান কল করেছে তখন তার দুশ্চিন্তা কমল। ভীষণ খুশি মন নিয়ে মিষ্টি ফোনটা রিসিভ করে।

রাফসান ফোনটা রিসিভ করেই বলে,
“হ্যালো, মিষ্টি। তখন ফোন দিয়েছিলে কিন্তু আমি ব্যস্ততার জন্য রিসিভ করতে পারি নি। পরে ম্যাসেজ দিয়েছিলাম। যাইহোক, এখন বলো কেন বার বার ফোন করছিলে? কোন জরুরি কথা কি জানাতে চাও?”

মিষ্টি প্রফুল্ল চিত্তে বলে,
“আপনাকে ভীষণই একটা খুশির সংবাদ দিতে চাই। যা শোনার পর আপনি চমকে উঠবেন। আপনার জীবনের সেরা খুশির খবর হতে চলেছে এটি।”

মিষ্টির কথায় রাফসান কিছুটা আগ্রহ নিয়ে বলে,
“কি এমন খুশির খবর যা শুনে আমি এতটা খুশি হবো?”

মিষ্টি সহাস্যে বলে,
“আপনি বা…”

মিষ্টি নিজের পুরো কথা শেষই করতে পারে না এমন সময় হঠাৎ একটি তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পায়। অতঃপর ফোনটাও কেটে যায়।

মিষ্টির রুহ যেন কেপে ওঠে। সে কাপা কাপা কন্ঠে বলে,
“হ্যালো, রাফসান..আপনি শুনতে পাচ্ছেন আমায়? কিসের শব্দ হলো? আপনি কি ঠিক আছেন?”

কিন্তু বিপরীত দিক থেকে কোন উত্তর আসে না। মিষ্টির গলা ভয়ে শুকিয়ে যায়। সে ক্রন্দনরত স্বরে বলে,
“কি হয়েছে মিস্টার রাফসান এর? কিসের শব্দ শুনলাম আমি। আর কলটাই বা কেন কেটে গেলো। ওনার আবার কোন বিপদ হলো নাতো?”

সকালে রাফসানের বলা কথা গুলো মিষ্টির ভয় আরো বাড়িয়ে দেয়। এরইমধ্যে আমিনা বলে,
“তুমি চিন্তা করো না মিষ্টি আপু। হয়তো এমনি কোন শব্দ হবে।”

“না, শব্দটা বিকট ছিল। এমনি এমনি এমন শব্দ হবার কথা না। মনে হলো যেন কোন বিস্ফোরণ..”

এমন সময় আমিনাদের এক প্রতিবেশী তাদের বাড়িতে ছুটে এসে বলে,
“আমিনা, ফাতিমা খালা, খবর শুনেছেন?”

আমিনা বলে,
“কি খবর?”

“মার্সেই পোর্টে, ভূমধ্যসাগরের তীরে নাকি ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। যতদূর শোনা যাচ্ছে এখনো অব্দি শতাধিক মানুষ মারা গেছে। আরো হাজার হাজার মানুষ আহত। পুরো ১ কিলোমিটার যায়গা জুড়ে বোমাটা প্রভাব বিস্তার করেছে। ভীষণ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা ছিল।”

কথাটা শোনামাত্রই মিষ্টি নিজের পেটে হাত দিয়ে বসে পড়ে। তার সামনে ভেসে ওঠে রাফসানের চেহারা। মিষ্টি চিৎকার করে বলে ওঠে,”রাফসান! আপনার কিছু হতে পারে না।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here