ভূমধ্যসাগরের তীরে #পর্বঃ৬ #লেখিকা দিশা মনি সুহাসিনী

0
6

#গল্পঃভূমধ্যসাগরের তীরে
#পর্বঃ৬
#লেখিকা দিশা মনি সুহাসিনী

মিষ্টির দিনগুলো তার শ্বশুরবাড়িতে মোটামুটি স্থিতিশীল কাটছিল। রোকসানা শিকদার এখন আর আগের মতো কঠোর ব্যবহার করেন না। অনেকটা নরম হয়েছে তার উপর। মিষ্টিও আস্তে ধীরে সব কাজ শিখে বাড়ির পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।

এরইমধ্যে সপ্তাহ খানেক অতিবাহিত হলো৷ মিষ্টি আপাতত সংসারের পাশাপাশি নিজের পড়াশোনার জীবনেও ফিরে গেছে। নিত্যদিন সে ভার্সিটিতে যায়। রোকসানা শিকদারের মিষ্টির পড়াশোনায় কোন আপত্তি নেই। তবে ফারিয়ার কাছে ব্যাপারটা ভালো লাগে না। তার মনে হয় মিষ্টি একটু বেশিই স্বাধীনতা পাচ্ছে।

মিষ্টিকে আজ ভার্সিটি থেকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে যায় তার এক বন্ধু যার নাম আসাদ। ফারিয়া ছাদ থেকে এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করে। মিষ্টি বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই ফারিয়াও ছাদ থেকে নিচে নেমে আসে। অতঃপর ফারিয়ার মুখোমুখি হয়ে তাকে প্রশ্ন করে,
“বাহ! ভালোই তো চলছে। স্বামী বিদেশে আর বউ অন্য কারো গাড়িতে করে ভার্সিটি থেকে বাড়িতে ফিরছে!”

মিষ্টি ফারিয়ার এমন ঠেস মারা কথা শুনে বিব্রতবোধ করে। খানিক অসন্তোষ নিয়ে বলে,
“এসব আপনি কি বলছেন আপু?”

“যা সত্যি তাই বলছি। তোমাকে তো আমি ভালো মেয়েই ভেবেছিলাম। সব সময় কেমন সাধাসিধা, ভাজা মাছ উলটে খেত জানো না এমন ভাব নিয়ে থাক। অথচ পিছন পিছন তো ভালোই শেয়ানা।”

“ভদ্রভাবে কথা বলুন।”

“তোমার মতো চরিত্রহীন মেয়ের সাথে এর থেকে ভালো ভাবে কথা বলা যায়না।”

মিষ্টি এবার ভীষণ রেগে বলে ওঠে,
“মুখ সামলে কথা বলুন আপু! আপনি আমার বড় জন্য এতক্ষণ ধরে আপনাকে সমীহ করে কথা বলছি। আমার ভদ্রতাকে আমার দূর্বলতা ভাববেন না। আপনি আমার চরিত্র সম্পর্কে এহেন মন্তব্য করতে পারেন না। সেই অধিকার আপনার নেই।”

ফারিয়া বলে,
“বাইরে নষ্টামি করে বেড়াবে আর আমি সেটা বললেই ক্ষেপে উঠবে।”

এরইমধ্যে রোকসানা শিকদার সেখানে উপস্থিত হন। তিনি এসেই বলেন,
“কি হচ্ছেটা কি এখানে? এত চিৎকার চেচামেচি কেন?”

ফারিয়া রোকসানা শিকদারকে দেখেই বলে ওঠেন,
“এই তো মা, আপনি এসে গেছেন। নিজের ছোট বৌমাকেই জিজ্ঞেস করুন আজ কি করেছে ও।”

রোকসানা শিকদার মিষ্টির দিকে তাকান। মিষ্টি বলে,
“আপু আমার সাথে শুধু শুধু ঝামেলা করছে। উনি আমার নামে যা নয় তাই বলছেন।”

ফারিয়া বলে,
“এই মেয়ে। আসল ঘটনাটা বলো। জানেন মা, এই মেয়ে আজ একটা ছেলের গাড়িতে করে ভার্সিটি থেকে ফিরেছে। কত বড় দুঃসাহস ভাবুন। আমাদের বাড়ির বউ হয়ে এসব নষ্টামি করে বের হচ্ছে। ভাগ্যিস আমি ছাদ থেকে নিজের চোখে সবটা দেখেছিলাম।”

রোকসানা শিকদার মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলেন,
“বড় বৌমা যা বলছে তা কি সত্যি মিষ্টি? তুমি কি সত্যি কোন একটা ছেলের গাড়িতে করে ফিরেছ। কেন করেছ এমন? আমাদের বাড়ি থেকে তো তোমাকে আসা-নেয়ার জন্য গাড়ি পাঠানো হয়।”

মিষ্টি বিনয়ের সাথে বলে,
“আসলে আজ আমি ভার্সিটিতে ক্লাস চলাকালীন অনেক দূর্বল বোধ করছিলাম তাই একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে চাচ্ছিলাম। আর আমাদের গাড়িটাও মাঝপথে খারাপ হয়ে যায়। তখন আমার ফ্রেন্ড আসাদ আমায় বলে সে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেবে। আমি প্রথমে ওকে বারণ করে বলেছিলাম যে আমি পাবলিক ট্রান্সপোর্টে করে ফিরব কিন্তু আমার শরীর খারাপ ছিল বিধায়…”

রোকসানা শিকদার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
“বুঝলাম। যাইহোক, এরপর থেকে এমন কোন ঘটনা ঘটলে আমাদের জানাবে। বুঝতেই তো পারছ, তোমার স্বামী দেশে নেই। এই অবস্থায় তোমাকে নিয়ে কোন দূর্নাম ছড়ানো ভীষণ সহজ। আমি চাই না, তোমাকে এমন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হোক।”

অতঃপর রোকসানা শিকদার ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলেন,
“আর বড় বৌমা! তুমি কান খুলে শুনে রাখো, কোন কিছু না জেনে এভাবে কোন কারণ ছাড়াই কারো দিকে এত বড় অভিযোগ আনবে না। তুমি কি মিষ্টিকে দেখেছ কোন ছেলের সাথে নোংরামি করতে? তাহলে শুধুশুধু কেন ওর নামে এসব দূর্নাম রটাচ্ছ? বাড়ির লোকই যদি এমন করে তাহলে বাইরের লোক কি করবে? এরপর থেকে যেন এমন না দেখি। নাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।”

“কিন্তু মা আমি তো ভালোর জন্যই..”

“চুপ, একদম চুপ করে থাকো। অনেক ভালো করেছ আর ভালো করতে হবে না। তুমি নিজের কাজে মন দাও৷ অন্যের পিছনে সারাক্ষণ লেগে থেকো না। বুঝলে?”

ফারিয়া অনিচ্ছাসত্ত্বেও মাথা নাড়ায়। রোকসানা শিকদার নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ান। যাওয়ার আগে মিষ্টিকে বলেন,
“তোমার শরীর খারাপ হলে নিজের ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নেও। আর হ্যাঁ, যথাসময়ে খাবারটাও খেয়ে নিও।”

“জ্বি, আচ্ছা।”

রোকসানা শিকদার চলে যাবার পর ফারিয়া একটা কঠোর দৃষ্টিতে তাকায় মিষ্টির দিকে। যেন সে এরপর কোন সুযোগ পেলে মিষ্টিকে গিলে খাবে। মিষ্টি হতাশার শ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়।

নিজের রুমে এসেই দরজা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে থাকে মিষ্টি। এর আগে কেউ কখনো তাকে এত জঘন্য ভাবে অপমান করে নি যেমনটা আজ ফারিয়া করল। মিষ্টি কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“কেন? কেন উনি আমার সাথে এমন করছেন? ওনার সাথে তো আমার কোন শত্রুতা নেই। শুধু শুধু আমাকে এত কথা শুনিয়ে উনি কি লাভ পেলেন?”

এরপর সে কিছু একটা ভেবে নিজের চোখের জল মুছে বলল,
“নাহ, আমায় এভাবে কাঁদলে চলবে না। নিজেকে শক্ত রাখতে হবে আমায়৷ সবাই দূর্বল মাটিতেই আঘাত হানে। তাই আমায় নিজেকে শক্ত রেখে চলতে হবে।”

★★
ফারিয়ার স্বামী রাহুল দুপুরের সমস্ত ঘটনা শুনল তার মায়ের মুখে। সে বাড়িতে ফিরেই তীব্র রেগে ফেট পড়ে ফারিয়াকে বলল,
“এসব আমি কি শুনছি ফারিয়া? তুমি আজ আবার কি নতুন অশান্তি করেছ?”

“আমি আবার কি করলাম? তোমার ছোট ভাইয়ের বউয়ের অকাম টাই তো তুলে ধরেছি শুধু।”

“শোনো, এরপর এমন কিছু হলে আমি বরদাস্ত করব না। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, আমার পরিবার আমার কাছে সবথেকে মূল্যবান। আমার পরিবারের কোন সদস্যকে যদি তুমি এভাবে বলো সেটা আমি ভালো চোখে দেখব না। আর মিষ্টি..ও তো একদম নিষ্পাপ, সহজ-সরল একটা মেয়ে
।ওর সাথে কি শত্রুতা তোমার? নাকি তোমার পুরানো রাগ ওর উপর মিটাচ্ছ?”

“রাহুল!”

রাহুল ফারিয়াকে চোখ রাঙিয়ে বলে,
“একদম চুপ! তোমার অতীত আমি ভুলে যাইনি। তুমি নিজে যেমন অন্য সবাইকেও কি তেমন ভাবো? আমি কিন্তু এখনো ভুলিনি কিভাবে আমাদের বিয়ের পরেও তুমি তোমার পুরাতন প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ রেখে গেছ। শুধুমাত্র নিজের পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে এবং তোমার অনুরোধের কারণে আমি তোমাকে একটা দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছিলাম। তবে এখন যদি তুমি আবার নতুন করে আমাদের সংসারে কোন অশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করো তাহলে কিন্তু আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।”

বলেই রাহুল হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। এদিকে ফারিয়া রাহুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাগী চোখে বলে,
“তোমাদের পরিবারকে তো আমি ধ্বংস করেই ছাড়ব। আমার বাবা জোরপূর্বক আমার সাথে তোমার বিয়ে দিয়েছিল। এই বিয়েতে আমার মোটেই মত ছিল না। তারপর বিয়ের পর এই পরিবারে এসে আমি আমার সব স্বাধীনতা হারাই, আগে কত সুন্দর ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়ে ঘুরতাম আর এখানে আসার পর এই এই বিশ্রী শাড়ি পড়ে এত অনুশাসনের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। আমার প্রেমিকের সাথেও বিচ্ছেদ হয়েছে তোমার জন্য। আমি এত সবকিছু ভুলব না এত সহজে৷ সবকিছুর শোধ আমি তুলব।”

#চলবে…? ✨
👉 তাফসির জাহান
👉 সাহিত্যের কুটির
(ফারিয়ার সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করে যান।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here