ভেজাগোলাপ❤️ #লেখিকা-মালিহা খান #পর্ব-১০

0
609

#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান
#পর্ব-১০

“ভালোবাসা”শব্দটা খুব ছোট হলেও এর অনুভূতির বিস্তার প্রকাশ করা সম্ভব নয়।ভালবাসার অনুভূতি কেবল সেই বোঝে সে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসতে পারে।

গত কয়েকদিনে নীরাদ আর রোদ্রির মধ্যেকার সম্পর্কটা বেশ সহজ হয়ে ওঠেছে।এখন সংকোচের পাহাড় সমান দেয়ালটা নেই তাদের মাঝে।প্রায়ই নীরাদের বাসায় আসা যাওয়া করে রোদ্রি।মনিরা আহমেদ এর সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠেছে তার।এমনকি মিরাও মাঝেমাঝে রোদ্রির সাথে নীরাদের বাসায় যায়।
একসাথে তিনজনের সময়টা বেশ ভালোই কাটে তাদের।

আজ ভার্সিটিতে পরীক্ষা ছিলো রোদ্রির।ফাইনাল পরীক্ষা ছিল তাই পড়াশোনার চাপটাও একটু বেশি ছিলো এই কয়েকদিন।দম ফেলার সময় পায়নি।বেশ রিল্যাকস মুডে ভার্সিটি থেকে বের হলো রোদ্রি।বের হতেই মুখে বিরক্তির ছাপ দেখা দিলো তার।আশেপাশে কোথাও ড্রাইভার আঙ্কেলকে পেলোনা সে।বেশ গরম পরেছে আজকে।সুর্যের তাপ মনে হয় আজ একটু বেশিই।তাকে কি কেউ নিতে আসেনি নাকি?খুজাখুজি শেষে আবার মেইন গেটের সামনে আসতেই কপাল কুচকে চোখ ছোট ছোট করে ফেলে রোদ্রি।সামনে নীরাদকে দেখে দ্রুতপায়ে এগিয়ে যায়।নীরাদ তখন উল্টোদিকে ফিরে কানে ফোন লাগিয়ে ছিল।

-মি.নীরাদ আপনি এখানে?

রোদ্রির কথায় দ্রুত পেছনে ফিরে নীরাদ।কান থেকে ফোনটা নামিয়ে অস্থির কন্ঠে বলে,

-মিস.রোদ্রি আপনাকে কতবার ফোন করলাম,ফোন কোথায় আপনার?রিসিভ করছিলেন না কেন?কই গিয়েছিলেন?আপনাকে না পেয়ে কতোটা টেনশনে পরে গিয়েছিলাম জানেন?

নীরাদের একঝাঁক প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে যায় রোদ্রি।পরক্ষনেই ভেতরে ভেতরে হেসে উঠে।নীরাদ তার জন্য কতো টেনশন করে।

-আমি আসলে ড্রাইভার আঙ্কেলকে খুঁজতে একটু ওই দিকটায় গিয়েছিলাম।ভাবলাম উনি হয়তো নিতে আসেননি তাই চলে আসলাম আরকি…বলে একটা বোকা বোকা হাসি দিল রোদ্রি।

-আঙ্কেল আসবেনা।আমিই নিতে এসেছি আপনাকে।আজ নাকি আপনার পরীক্ষা শেষ।তাই মা আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে বলেছে।আপনার ভাবিও ওখানেই।এই নিন আপনার ভাবির সাথে কথা বলে নিন।
বলে রোদ্রির দিকে ফোনটা এগিয়ে দিল নীরাদ।

ফোনটা কানে দিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ব্যস্ত ভঙ্গিতে কথা শোনা গেল মিরার,

-হ্যালো,রোদ্রি।তুই নীরাদের সাথে চলে আয় ওদের বাসায়।চাচী আর আমি মিলে রান্না করছি।তুই চলে আয় তাড়াতাড়ি।ঠিকাছে?বেশ উৎসুক শোনায় মিরার গলা।

-হু,আসছি।

গাড়ীর সামনের অংশ খুলে চিন্তিত চেহারায় বারবার কি যেন করছে নীরাদ।এমন একটা সময় গাড়িটা কিভাবে নষ্ট হলো বুঝতে পারছেনা সে।কিছুতেই স্টার্ট হচ্ছেনা।
পাশেই মাথায় ঘোমটা টেনে দাড়িয়ে আছে রোদ্রি।গরমে শেষ সে।সকালে যে কেন চুলগুলো বেঁধে আসেনি।বারবার ওড়না দিয়ে ঘাম মুছছে।
রোদ্রির দিকে ঘুড়ে খানিকটা ইতস্তত গলায় নীরাদ বললো,
-রিকশায় যেতে পারবেন?গাড়িটায় কি সমস্যা হলো বুঝতে পারছিনা।

রোদ্রি তাকাল নীরাদের দিকে।রিকশায় যেতে ওর সমস্যা নেই।ও প্রায়ই রিকশায় আসা যাওয়া করে।কিন্তু নীরাদের সাথে এক রিকশায় যেতে হবে তাই একটু অসস্তি হচ্ছে।
-জি?রিকশায়?
-হুম।(নীরাদ জানে রোদ্রির অসস্তি হচ্ছে তাই জোর করলোনা)গরমে অসুস্থ হয়ে যাবেনতো।ঘেমে যাচ্ছেন।তাই বললাম।

নীরাদকে গভীরভাবে কয়েক সেকেন্ড খেয়াল করতেই রোদ্রি দেখল।উনার ও টি-শার্ট অর্ধেক ভিজে গেছে।অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ার চেহারাটা হাল্কা লাল হয়ে গেছে।কপালে গলায় ঘাম চিকচিক করছে রোদে।হাতের ঘন লোমগুলো ঘেমে লেপটে আছে শরীরের সাথে।ওর জন্য কত কষ্ট করে দাঁরিয়ে আছেন উনি।

-যেতে পারবেন মিস?

-জি আচ্ছা।সমস্যা নেই।

নীরাদ একটা রিকশা ডাকল।রোদ্রিকে উঠিয়ে দিয়ে নিজেও উঠল।
নীরাদ উঠতেই রোদ্রি একটু চেপে গেল।কিন্তু জায়গা কম হওয়াতে গায়ের সাথে গা লেগেই গেল।
রিকশায় হুটতোলা তাই দুজনেই প্রায় দুজনের নি:শ্বাসের শব্দ পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছে।
এখানে রোদ নেই তাই মাথার ঘোমটাটা ফেলে দিল রোদ্রি।চুলগুলা ঠি ক করছে তখন নীরাদ বলল,

-খোঁপা করে ফেলেন।এই গরমে চুল খোলা রেখেছেন কেন?তার উপর যে বড় চুল আপনার।মাশাআল্লাহ।

রোদ্রি কিছু বললোনা।নিরবে চুলগুলা হাতখোপা করতে ব্যস্ত হয়ে পরল।
নীরাদ মুচকি হাসলো।রোদ্রির গালের লাল আভাটা চোখ এড়ায়নি ওর।

হঠাৎই রোদ্রির কি হলো ও নিজেও বুঝলোনা।নীরাদের ঘাড়ে হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে মুছে দিতে দিতে বলল,

-ইশশ..আপনি তো পুরো ঘেমে ভিজে গেছেন।আমার জন্য এতটা কষ্ট করতে হলো আপনার।
নীরাদ হাসলো।রোদ্রির ছোয়াঁতে নিমিষেই নীরাদের ক্লান্তি দুর হয়ে গেলো।
-কষ্টের কিছু নেই মিস.রোদ্রি।আপনি বুঝবেননা।
রোদ্রি এখনো হাত সরায়নি।
-আমার ব্যাগে পানি আছে।বের করে দিব?খাবেন?

নীরাদ আচমকাই মাথা ঘুড়িয়ে রোদ্রির একদম চোখে চোখ রাখল।রোদ্রি নীরাদের দিকেই চেয়ে ছিলো।আচমকা ধরা পরে যাওয়ায় বেশ লজ্জা পেলো সে।

-“খেয়াল রেখেন মিস.রোদ্রি,আপনার করা কেয়ারগুলো আবার আমার অভ্যাসে পরিণত না হয়ে যায়,হলে কিন্তু ঝামেলায় পরবেন”।

রোদ্রির খুব করে বলতে ইচ্ছা হলো”সেই ঝামেলায় আমি বারবার পরতে চাই মি.নীরাদ”।কিন্তু বলতে পারলোনা,কথাগুলো মনের ভিতরেই জমা হয়ে রইলো।হয়তো কোনো এক নিস্তব্ধ মধ্যাহ্নে সে ব্যক্ত করবে তার অব্যক্ত কথাগুলো।

___________________
বাসায় ঢুকেই বিরিয়ানির সুবাস পেলো রোদ্রি।রান্নাঘরে যেয়ে দেখলো মনিরা আর মিরা মিলে রান্না করছে।কাজের মেয়ে টাও আছে।

রোদ্রিকে দেখে উজ্জল হয়ে উঠলো মনিরার মুখ।উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,

-রোদ্রি মা।কতদিন পরে দেখলাম তোমাকে।

-কতদিন না আন্টি।আমি ১৫ দিন আগেই এসেছিলাম।পরীক্ষা শুরু হয়েছিলো তো তাই আসতে পারিনি।আজকেই শেষ হলো।

মনিরা এগিয়ে আসলো মাথার হাত বুলিয়ে বললো,

-কেমন হয়েছে পরীক্ষা?

-ভালো।বসে মুচকি হাসলো রোদ্রি।

-তুই হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় রোদ্রি।খাবার হয়েই গেছে।

______________
ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই দেখলো টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে মিরা আর মনিরা।

-সালাদটা আনতে ভুলে গেছি।বলে কাজের মেয়ে টুম্পা কে ডাকতে গেলে রোদ্রি বলে,

-আমি এনে দিচ্ছি আন্টি।বলে দ্রুতপায়ে রান্নাঘরে ঢুকলো রোদ্রি।প্লেটটা হাতে নিতেই বিস্ফোরিত একটা শব্দ হলো।আগুনের ধোঁয়ায় ভরে গেল পুরো ঘর।
জ্ঞান হারানোর আগমুহুর্তে শুধু পরিচিত কিছু মানুষের কন্ঠের চিৎকার কানে আসলো রোদ্রির।

চলবে…

[ভুল-ক্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,কেমন হয়েছে কমেন্টে জানাবেন]

আগের পর্বের লিংক কমেন্টে দিয়ে দিব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here