ভোরের শিশির,পর্বঃ৭

0
1763

ভোরের শিশির,পর্বঃ৭
লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম

“আপাতত তোমাকে চাইছি।”

“আমাকে চাইছেন মানেহ?”

“মানে হল আমি চাইছি তুমি বউ সাজে আমার সাথে আমার বাড়িতে যাবে।এবং আজ থেকে সেটাই হবে তোমার নিজ বাড়ি।”

“আমি যাব না আপনার সাথে,আর খুব শীঘ্রই আপনি ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবেন।”

“তুমি যদি আমার সাথে যাও তবে এক মাসের মধ্যে তোমাকে আমি সমস্ত প্রমান হাতে দিব।কে,কেন,কীভাবে ঐ শ্রমিকদের সাথে ওমন করেছে সেসব তোমার হাতে পেয়ে যাবে।তবে তোমাকে কথা দিতে হবে তুমি আমার বাড়িতেই থাকবে নিজ ইচ্ছেতে।”

আমি কিছুক্ষণ একমনে ভেবে উওর দেই।

“ঠিক আছে যাব আমি,তবে আজ নয় কয়েকদিন পর।”

“ঠিক আছে সমস্যা নেই,তবে চালাকি করতে যেও না।”

তারপর উনি চলে আসে সেদিন,আর আমি নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হই।একমাসের ব্যাপার সেটা দেখতে দেখতেই চলে যাবে।প্রমানগুলো হাতে পেলেই আমি চলে আসব।আমার এই কাজে অনেকগুলো মানুষ ন্যায় পেয়ে যাবে।এমনটা ভেবে আমি রাজি হই উনার বাসায় যাব।কয়েকদিন পর উনি আমার জন্য বউ সাজার জন্য শাড়ি,গহনা পাঠায়।যেগুলো পড়ে উনার বাড়িতে যেতে বলেছে আমাকে।আর এখান থেকে কোন জামা,কাপড়,কসমেটিকস নিতেও বারন করেছে।

আমিও তার পাঠানো শাড়ি গহনা দিয়ে তৈরি হয়ে নেই।আমার পরিবার কিছুই জানত না যে আমার আর হামিমের মধ্যে সমস্যা ছিল।তাই যেতেও কোন সমস্যা হয় নি।বাড়ি থেকে নিচে এসে দেখি উনি গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি বাবা,মা আর ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে উনার পাশে বসে পড়ি।উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলেন।
তারপর সেদিন উনার বাড়িতে ঢোকার পর একটা মেয়েকে দেখতে পাই।উনি তখন ঐ মেয়েটাকে দেখেই আমাকে জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হাটার জন্য বলে উঠে।কথাটা শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম কারন আমাদের মধ্যে তেমন কিছুই হয় নি যে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবেন না।উল্টো উনি জোড় করে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।পরে ওদের কথাতে বুঝতে পারি মেয়েটা উনার বড় বোন।আর সেদিন উনার বোন বলেছিল উনার বাবা,মা ছোট থাকতে মারা গেছিল তবে সে মহিলা কে যে কয়েকদিন আগে মারা গেলো?এমন নানা প্রশ্ন এখনও আমার মাথায় ঘুরে।
তারপরও আমি ঐ মানুষগুলোকে ন্যায় পাইয়ে দেয়ার জন্য কয়লার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে চেয়েছি।এক পা দিয়েছিলামও তারপর কী হয় মনে নেই।তবে জ্ঞান ফেরার পর পায়ে কোন পোড়া দাগ দেখি নি।সেটাও আমার কাছে একটা রহস্য।আর সেদিন রাতে আমি উনার ল্যাপটপটা শাড়ি পড়ার জন্য নেই নি।উনার ল্যাপটপে ঐ শ্রমিকদের দুর্ঘটনার প্রমান থাকতে পারে সেটা ভেবে নিয়েছিলাম যাতে প্রমানগুলো হাতে চলে আসে সেদিনই।কিন্তু কপাল খারাপ তাই ল্যাপটপ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।

ফ্লাসব্যাক এন্ড

অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ি মনে নেই।কিন্তু হঠাৎ গালে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠি।

“দিয়া উঠো,খাবার এনেছি খাবে চলো।”

হামিমের গলার স্বর পেয়ে আমি ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠি।উনি সেটা দেখে মুচকি হাসে।

“খাবার নিয়ে চলে যান খাব না আমি।”

“মাইর খেতে না চাইলে চুপচাপ খেয়ে নাও।”

“খাবার থেকে মাইর খাওয়াই ভালো।কারন এতএত প্রশ্ন মাথায় নিয়ে আমি খেতে পারব না।”

“কী প্রশ্ন জাগছে তোমার মনে?”

“বললেই ত আর উওর দিবেন না,ত বলেও লাভ নেই।”

“বলতেও ত পারি,তুমি বলেই দেখ না।”

“সত্যি বলবেন?”

“হুম বলব,তবে সেসব উওর দেয়ার মত হলে শুধু দুইটা প্রশ্নের উওর দিব।”

“উওর দেয়ার মতই,আর আপনার কাছেই সব উওর আছে।”

“বেশ ত বলো কী প্রশ্ন আছে!আর খাবারটা মুখে নিয়ে নাও।”

উনি আমার মুখের সামনে খাবার ধরে কথাটা বলে।আমিও কিছু না ভেবে উনার হাত থেকেই খেতে শুরু করি।আর খেতে খেতেই উনাকে প্রশ্ন করে উঠি।

“আপনার মা ত কয়েকদিন আগে মারা গেলো তবে সেদিন নীলা আপু কেন বলল বাবা মা মারা যাওয়ার পর ছোট থেকে উনি আপনাকে বড় করেছে?

উনি হঠাৎ আমাকে খাইয়ে দেয়া বন্ধ করে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।আমি ঐ দৃষ্টির মানে বুঝলাম না,তবে বেশ কিছুক্ষণ পর উনি বলে উঠল।

” কয়েকদিন আগে যিনি মারা গেছে উনি আমার মা নন।উনাকে আমি বৃদ্ধাশ্রম থেকে নিয়ে এসে মায়ের আসনে বসিয়েছি দুই বছর আগে।ছোট থাকতে মা-বাবা মারা যান,প্রথম বাবা তারপর মা।আমার মাকে আমি বড্ড বেশি ভালবাসতাম।তাই মা মারা যাওয়ার পর মায়ের মৃত্যুটা আমাকে বড্ড বেশি আঘাত করে।তখন নিজেকে মানিয়ে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু কোন ভাবেই পারছিলাম না।আপু আমাকে খুব ভালবাসে,আপু আমাকে আগলে রাখত সবকিছু থেকে।কিন্তু তারপরও আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি নি।একদিন একটা কেসের তদন্ত করার জন্য বৃদ্ধাশ্রমে যাই আর সেখানে গিয়ে উনাকে দেখে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে খুব।মনে হচ্ছিল আমার মা বুঝি এখানেই রয়েছে,আমি প্রায় সময়ই ওখানে যেতাম গিয়ে দেখা করে আসতাম উনার সাথে।এভাবে উনার প্রতি আমার মায়া দিনদিন বাড়তে থাকে।তাই আমি উনাকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসে মায়ের আসনে বসাই।আর এসব কিছুতে আপুর আপত্তি ছিল,তাই উনি মারা যাওয়ার পরও উনাকে দেখতে আসেন নি।”

উনি কথাগুলো বলার সময় চোখে পানি টলমল করছিল।আমারও চোখের কোনে পানি জমেছে।উনি নিজেকে সামলে আমার মুখের সামনে খাবার ধরে।আমিও উনার দিকে তাকিয়ে খাবারটা খেয়ে নেই চুপচাপ।

“আরেকটা প্রশ্ন করতে পারবে,তাড়াতাড়ি করো নয়ত আর উওর পাবে না।”

আমি উনার কথা শুনে ভুলেই গিয়েছিলাম যে দুইটা প্রশ্ন করতে পারব।

“ঐদিন আমাকে জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে কেন বলেছিলেন?”

আমার এই কথাটা শোনার পর উনার চোখ মুখের রং আবারও পাল্টে যায়।চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠে,,,

“এই প্রশ্ন বাদ দিয়ে অন্য কোন প্রশ্ন করো।”

“আপনি না বললেন দুইটা প্রশ্নের উওর দিবেন ত দিন না উওর।এমন কেন করছেন বলুন ত!”

“দুইটা প্রশ্নের উওর যদি দেয়ার মত হয় তবে দিব বলেছি।আর এটা উওর দেয়ার মত প্রশ্ন নয় ত অন্য প্রশ্ন করো।”

বুঝতে পারলাম উনি এই প্রশ্নের উওর দিবে না।তাই অন্য প্রশ্ন করাই ভালো তাতে করে একটা রহস্যভেদ ত করতে পারব।আর নয়ত এভাবেই রহস্যর মায়াজালে ঝুলে থাকতে হবে আমাকে।

“কী ভাবছো?”

“না মানে ভাবছিলাম তখন কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে এসেছিলেন কেন?”

“ঐ বাড়িতে আপু আর দুলাভাই এসেছে তাই এখানে নিয়ে এসেছি।তোমাকে ভালো করে বললে তুমি আসতে না তাই এভাবে নিয়ে আসা।”

“কিন্তু আমি ওখানে থাকলে সমস্যা কী ছিল?”

“অনেক সমস্যা ছিল যেটা এখন তোমাকে বলা যাবে না।তাই চুপচাপ এবার শুয়ে পড়ো,আমি আসছি এখনি।”

“মানেহ?আপনি আসবেন কেন?”

“বাহ্ রে আমার ঘর আমার বউ ত আমি আসব না নাকি?”

“মানে আপনি আমার সাথে এক ঘরে থাকবেন নাকি?”

“হুম বউ থাকতে বউয়ের সাথে থাকব না ত কী একা একা থাকব?আর এতদিন বিয়ে করার পরও একা থেকেছিলাম কারন বউ শ্বশুর বাড়িতে ছিল।কিন্তু এখন ত তুমি আমার বাড়িতেই।আর গতরাতে একা শুতে দিয়েছি বলে যে আজও একা শুতে দিব এতটাও ভালো আমি নই।তাই আজ আমি তোমার সাথেই থাকব,আর তুমি থাকবে আমার বুকে।”(শয়তানি হেঁসে)

“ননননননননননা,আমি ঘুমাব না আপনার সাথে।”

“আস্তে চিল্লাও,কানের পর্দা ফেটে যাবার উপক্রম।”

“আমি শুব না আপনার সাথে,চলে যান এখান থেকে।”

“তোমার শুতে হবে না আমিই শুব তোমার সাথে।”

কথাটা বলে উনি ঘর থেকে চলে যায় আর আমি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে দরজা লাগিয়ে দেই।আর হাফ ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ি।
হঠাৎ মাঝরাতে কারো গরম নিশ্বাসে ঘুম ভেঙে যায় আমার।আমি ধীরে ধীরে চোখ খুলে আমার উপর হামিমকে দেখে খুব জোড়ে একটা চিৎকার দেই।

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ আপনারা আদিয়া আর হামিমের বিয়েটা কীভাবে হল জানতে চেয়েছিলেন।আর এটাও জানতে চেয়েছিলেন যে আদিয়া কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে কী না!আর হামিমের বাবা মা ছোট বেলার মারা যাওয়ার পর আবার মা আসল কীভাবে?ত আমি সেসবটা ক্লিয়ার করেছি,তারপরও যারা বুঝবেন না তারা কমেন্টে জানাবেন।আমি পরের পর্বে সেটা ক্লিয়ার করে দিব।

আর আমি পুরোপুরি রহস্যভেদ করি নি,হামিমের মধ্যে থাকা রহস্যভেদ করি নি।কারন এখনই যদি হামিমের মধ্যে থাকা রহস্য ভেদ করতে যাই তবে জগাখিচুরি টাইপ হয়ে যাবে।তাই ইচ্ছে করেই হামিমের কিছু কাজের মানে আমি এখনও ক্লিয়ার করি নি।সেটা ধীরে ধীরে জেনে যাবেন আপনারা।
তাই ধৈর্য নিয়ে বাকি গল্পটা পড়ুন,আর উত্তেজিত হবেন না আপনারা দয়াকরে।কারন আপনারা উত্তেজিত হলে আমিও উত্তেজিত হয়ে পড়ি রহস্যভেদ করার জন্য।আর তাড়াতাড়ি রহস্যভেদ করতে গিয়ে গত পর্বের মত অগোছালো পর্ব উপহার দিতে হবে আমাকে?।

তাই ডিয়ার পাঠক/পাঠিকাগন ধৈর্য নিয়ে পড়ুন?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here