ভোরের শিশির,পর্বঃ৯
লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
সকালে কারো চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে আমার।আমি চোখ খুলে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই।কারন গতকাল উনি আমাকে যে বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল এটা সে বাড়ি নয়।এটা আগের সেই বাড়িটা,বুঝলাম না কিছু। রাতে ঐ বাড়ি আর সকালে এই বাড়ি,উনি এমন কেন করছেন!এসব ভাবনার মাঝেই আবার নিচ থেকে চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসে।আমি হুরমুরিয়ে দৌড়ে নিচে ড্রয়িং রুমে চলে আসি।আর এসে দেখি নীলা আপু এসেছে,আর হামিম নীলা আপুর সাথে রেগে কথা বলছে।বুঝি না বাবা উনি আপুর সাথে এমন আচরন কেন করে?
নীলা আপু আমাকে দেখে আমার সামনে এসে গালে হাত দিয়ে বলে,,,
“কেমন আছো দিয়া?”
আমি কিছু বলব তার আগেই হামিম আমাকে চিৎকার করে বলে উঠে।
“এই তুমি এখন এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?সকালে ঘুম থেকে উঠার পর কী তোমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছি আমি?”
“না মানেহ,আপু,,,
“চুপ কোন কথা না,তাড়াতাড়ি এখন ফ্রেশ হয়ে বাগানে যাও।আর প্রতিটা গাছে পানি দিয়ে আসবে,নয়ত সকালের খাওয়া বন্ধ।”
আপুর সামনে উনার এমন কথায় আমি একটু অপমানিত বোধ করলাম।আপুর সামনে এভাবে না বললেও পারতেন উনি।আর গাছে পানি দেয়ার পরও খাব না আমি,একবেলা না খাওয়ার জন্য আর মরে যাব না।প্রমান গুলো শুধু হাতে পাওয়ার অপেক্ষা করছি,তারপর আর উনার এমন বাজে আচরন শয্য করতে হবে না।এসব ভেবে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বাগানে চলে আসি।
বাগানটা খুব বেশি বড় নয়,আবার খুব ছোটও নয়।কিন্তু বাগানটা বেশ গুছানো,আর নানা ধরনের গাছগাছালিও আছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর দেখি নীলা আপু রাগে হনহনিয়ে গেট দিয়ে বের হচ্ছে।হামিম লোকটা বড্ড রহস্যময়,কেন যে নিজের আপুর সাথে এমন করছে বুঝতে পারছি না!
এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাছগুলোতে পানি দিচ্ছিলাম তখন পিছন থেকে কে যেন কোমড়ে চিমটি কাটে।আমি কোমড়ে হাত দিয়ে রেগে পিছনে তাকিয়ে দেখি হামিম।তারমানে উনিই চিমটি কেটেছে,রাগটা আবার মাথায় চড়ে বসল।
“ঐ মিয়া আপনি চিমটি কাটলেন কেন?যখন তখন এমন খোঁচা মারেন কেন?”
উনি আমার রাগকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো রেগে বলে উঠে।
“কোমড় দেখাতে বেশ ভালোই লাগে তাই না!কোমড় থেকে যদি আরেকদিন কাপড় সরছে ত দেখো কী করি!আজ ত চিমটি কাটলাম,পরের বার ব্লেড চালাব কোমড়ে।”
আমি উনার কথাশুনে তাড়াতাড়ি কোমড়ের দিকে তাকাই আর দেখি সত্যি সত্যি কোমড় থেকে কাপড় সরে গেছে।আমি তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে শাড়ি আকড়ে ধরলাম যাতে কোমড় না দেখা যায়।ইস্ লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে উনার সামনে কোমড়ের কাপড় সরে গেছিল।
“হয়েছে এখন এত লজ্জা পেতে হবে,গাছে পানি দেও।”
কথাটা বলেই উনি আমার পিছনে দোলনায় বসে পড়লেন।আমি কোনমতন শাড়িটা ঠিক করে গাছে পানি দেয়ায় মনযোগ দিলাম।কিন্তু কেমন আনইজি ফিল হচ্ছে,উনি কীভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।এভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে কী কাজ করা যায় নাকি!
“এই আপনি এখান থেকে যান ত,তখন থেকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছেন।”
উনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আমার দিকে,যেন উনি বুঝতেই পারে নি আমি কী বলেছি।
“চোখ দিয়ে আবার গিলে খায় কীভাবে?মুখ দিয়ে খাওয়া যায় জানি কিন্তু চোখ দিয়ে কীভাবে খায়?”
“আল্লাহ দরি ফালাও এই ডাইনোসরটাকে উঠাইয়া দেই।শালা বজ্জাত,পঁচা কুমড়ো,ইচ্ছে করতাছে কিক মাইরা উগান্ডা পাঠাইতে।চোখ দিয়ে গিলে খায় কেমনে জানে না।ডং কত!এখনও ছোট বাবু রয়েছে তিনি হুহ।”
রাগের মাথায় কথাগুলো উনার সামনেই বলে ফেলি।কথাগুলো বলার পর উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার ঠিক পিছনে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“আর কিছু বলার আছে?”
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে না বুঝিয়ে সাথে সাথে উল্টো ঘুরে দৌড় লাগাই।আর পিছনে তাকিয়ে দেখি উনিও আমার পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে।এটা দেখে ভয়ে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল।আমি দৌড়ের স্পিড আরো বাড়িয়ে দেই,আর একটা সময় আমার পায়ে কিছু লাগলে আমি মাটিতে হঠাৎ করে বসে পড়ি।তাকিয়ে দেখি পায়ে কাটা ফুটেছে কিন্তু রক্ত পড়ছে না।তারপরও পায়ে খুব ব্যাথা করছে,আমি কাটাটা টান দিয়ে উঠিয়ে ফেলি,সাথে সাথে রক্ত পড়া শুরু হয়।আর ব্যাথায় চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।আমি চোখের পানিটা মুছে দেখি হামিম আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।উনি আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পায়ে হাত দিতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে থেমে যায়।আর কিছু না বলে আমাকে ওখানে রেখেই বাড়ির ভিতরে চলে আসে।
উনার এমন কাজে কেন যেন খুব খারাপ লাগছে,তারপরও আমি এটা নিয়ে বেশি না ভেবে উঠে দাঁড়াই।আর স্বাভাবিক ভাবেই হেঁটে চলেছি,পায়ে যে কাটা ফুটেছে তার বিন্দুমাত্র প্রভাব আমার উপরে পড়ে নি এমন ভাব করে।রুমে এসে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ি।এতটা সময়ে উনাকে কোথাও দেখতে পাই নি,এতে খারাপ লাগলেও পাত্তা দিলাম না।
_____________________________________
হসপিটালে পৌঁছানোর পরপরই একটা কল আসে,একটা পেসেন্ট দেখার জন্য তার বাড়িতে যেতে হবে।সে নাকি খুবই অসুস্থ,তাই হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পড়ি রোগী দেখার জন্য।পেসেন্টের বাড়ির ঠিকানা অনুযায়ী একটা ফ্ল্যাটের সামনে আসি আর কলিং বেল বাজাই।কিছুক্ষনের মধ্যে একটা মহিলা দরজা খুলে দিয়ে আমাকে ভিতরে নিয়ে যায়।কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি খুব বেশি অবাক হয়ে যাই।কারন হামিম রয়েছে এখানে,আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনিও ভ্রু কুঁচকায়।আমি পিছন ফিরে সেই মহিলাকে কিছু জিজ্ঞেস করব কিন্তু দেখি সে মহিলা নেই।আর ঘরের দরজাটাও বন্ধ,এসব কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না আমি।
“আপনি এখানে কেন?আর পেসেন্ট কোথায়?”
“আমারও একই প্রশ্ন তুমি এখানে কেন?আর কোন পেসেন্টের কথা বলছো?”
“আমাকে ত ফোন করা হয়েছিল কে নাকি খুব
অসুস্থ দেখে যেতে।আর বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দেয়।ভুল ঠিকানায় আসি নি ত?”
আমি এবার আমার ফোনে ম্যাসেজ চেক করে দেখি ঠিকানা ঠিকই আছে।
“ঠিকানা ত ঠিকই আছে,ভুল ঠিকানায় ত আমি আসি নি।কিন্তু আপনি এখানে কেন?”
“এমনি।”
“এমনি মানেহ?কেন এসেছেন?এটা কার বাসা?আর রোগী কোথায়?”
“বড্ড বেশি প্রশ্ন করছো তুমি,তুমি জানো না আমার যা করতে মন চায় তাই করি।আর তার কৈফিয়ত কাউকে দেই না।চুপ করে এখানে বসে থাকো,খালি বেশি কথা।”
“ওকে থাকুন আপনি এখানে,আমি গেলাম।”
কথাটা বলে বেরিয়ে আসতে নিলেই উনি হাত টেনে খাটে বসিয়ে দেয় আমাকে।আর আমার সামনে নিচে বসে আমার পা উনার হাঁটুর উপর রাখে।আমি পা সরিয়ে নিতে চাইলে উনি সরাতে দেয় না।উনি পকেট থেকে কিছু একটা বের করে হাত দিয়ে আমার দুই পায়ে একটা ঔষধ লাগিয়ে দেয়।
“পায়ে কী লাগালেন ওটা?”
“ঔষধ,তখন পায়ে কাটে ফুটেছিল তার জন্য।”
“এক পায়ে কাটা ফুটেছে দুই পায়ে না।”
“হুম জানি কিন্তু এটা খেয়াল নাই কোন পায়ে ফুটেছে তাই দুই পায়েই লাগিয়ে দিলাম।”
“এখন এমন কেয়ার করার কারন কী?তখন ত দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে আসলেন।তবে এখন এত কেয়ারিং হাসবেন্ডের রোল পালন করছেন কেন?”
“তার কৈফিয়ত তোমাকে দিব না।”
কথাটা বলেই দরজায় তিনটে টোকা মারেন আর কেউ দরজা খুলে দেয়।উনি বেরিয়ে যায় রুম থেকে,আর আমার মাথায় কিছু ডুকছে না।এত রহস্যময় মানুষ কীভাবে হয়,পুরোই রহস্যের গোডাউন।
চলবে,,,