ভৌতিকপ্রেম,পর্বঃ৫,৬
Mahfuza_Monira
পর্বঃ৫
লিমন তোহার কথা পাত্তা না দিয়ে তোহাকে বলে-
– দ্রুত চোখ বন্ধ করো। কেউ আসছে।
তোহাও তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে নেয় নিজের। আর লিমন তার ভৌতিক পাওয়ার দিয়ে তোহাকে আবার মানুষ বানিয়ে দেয়। তোহা চোখ খুলে নিজের পা দেখতে পায় আবার। সে লিমন কে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি পাহাড়ের ওপাশ থেকে বিধান,শীষ,মিলি,রিনি এসে হাজির হয়। তোহাকে এখানে একা একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে যারপরনাই অবাক হয় তারা।
বিধান তোহার কাছাকাছি এসে বলে-
– আমি জানতাম তুই এখানেই থাকবি কিন্তু এখানে করছিস টা কী? আর এসেছিস যে আমাদের বলে আসা যেত না? কত টেনশন হচ্ছিল জানিস?
শীষ ও এই প্রথম বিধানের কথায় সায় দিয়ে বলে-
– বিধান একদম ঠিক বলছে। আর এদিকে পানির স্রোত দেখেছিস? নিজেকে ঠিক রাখা যায়না। যদি ভেসে যেতি কোথাও তখন কি হতো? পানির নিচের মাছের সাথে বিয়ে করে সংসার পাততি তখন তাইনা?
মেকী রাগী স্বরে মিলি বলে-
– আমরা ওর কে যে আমাদের কে বলে কোথাও যাবে! যখন যা ইচ্ছা সেটাই করে। কিন্তু এরপরে যে আমাদের কত টেনশন হয় সেটা তো আর ও বুঝবে না!!
তোহা কোনো জবাব না দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ওদের সবার দিকে। তা দেখে রিনি এগিয়ে এসে তোহাকে কিঞ্চিৎ ধাক্কা মেরে বলে-
– কিরে! জবা দিচ্ছিস না কেন? কেন এসেছিস এখানে। বলিস না কেন?
এপর্যায়ে তোহার চোখ তার অজান্তেই ভরে আসে। তোহা হুহু করে কেঁদে উঠে। তা দেখে বাকিরা সবাই বেশ অবাক হয়। বিধান এসে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে তোহাকে। আর বলে-
– কিরে পাগলি কাঁদছিস কেন? আচ্ছা যা,যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাইস,শুধু আমাদের একটু বলে যাইস। ওকে?
– হ্যাঁ রে। এখন কান্না থামা। (শীষ)
মিলি আর রিনি কিছু না বলে অবাক দৃশ্য তাকিয়ে আছে তোহার দিকে।
কিছু সময় পর তোহা কান্না থামিয়ে নাকি স্বরে বলে-
– আমার জন্য কত চিন্তা তোদের, কত ভালোবাসিস আমায়! আর দেখ আমি তোদের চিন্তায় ফালাই শুধু। বাবার তো সময়ই নেই আমার জন্য! সারাদিন রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত আর মা তার সমাজ সংগঠন নিয়ে। ছোট থেকে তোরাই আমার সাথে আছিস। একদম পরিবারের মত। মনে আছে গোসল সেড়ে বের হলে মিলি আমার চুল মুছে দিতো,জামা পড়িয়ে দিতো। বিধান তুই তো সবসময় আমার চুল বেধে দিতি। আর আমি যদি জিজ্ঞেস করতাম প্রতিদিন চুল বেধে দিস কেন,তুই বলতি প্রতিদিন চুল বাধার দিবস থাকে তাই। আর শীষ আমাকে প্রায় রাতে খাইয়ে দিতো। আলসেমির জন্য খেতে চাইতাম না আমি,কিন্তু তুই আমাকে জোর করে খাইয়ে দিতি।
একটু দম নেয় তোহা। তারপর আবার বলে-
– আর রিনি,ও আর আমি একই বয়সী হলেও ও যেন আমার মার মতো ছোট বেলা থেকেই। মা যতটা না চিন্তা করে,তার থেকে বেশি চিন্তা করে ও।
তোদের সবাইকে আমি ভীষণ ভালোবাসি রে,ভীষণ ভালোবাসি।
তোহার কথা শুনে মিলি আর রিনির চোখের কোনায় জল জমে। তারা দুজনে এসে তোহাকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। শীষ আর বিধান ও তাদের জড়িয়ে ধরে।
দূর থেকে একটা গ্রুপ হাগ দেখছে লিমন। তোহার প্রতিটা কথা সে শুনেছে। আসলেই,কিছু কিছু বন্ধু শুধু বন্ধু হয়না,তারা পরিবার হয়।
.
.
আরো কিছুক্ষণ থাকার পর সবাই হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আর তোহা এভাবেই পানির নিচে দেখা জিনিসটার কথা ভুলে যায়।
.
.
হোটেলে ফিরে যে যার রুমে গিয়ে ভালো মতন গোসল সেড়ে আসে। তারপর সবাই ডিভানে বসে একসাথে খাবার সেড়ে নেয় তাদের।
খাওয়া শেষে তোহা নিজের রুমে চলে আসে। একটা লম্বা ঘুমের প্রয়োজন তার। শরীরে বেশ ক্লান্তি ভাব এসেছে।
.
.
তোহা বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে। লিমন এসে পর্দা গুলো সরিয়ে দেয় জানালা থেকে। ওমনি তোহা চিল্লিয়ে উঠে।
– পর্দা টানছো কেন? রোদ আসে তো। পর্দা মেলো।
– আসুক রোদ। রোদ আসলে শরীরে ভিটামিন-ডি পাবা। তখন শরীরের হাড় শক্ত হবে,মজবুত হবে।
– ওরে আমার ডাক্তারের বাচ্চা, তুই পর্দা মেলবি নাকি আমি উঠবো?
লিমন আরেকটু মজা নেওয়ার জন্য বলে-
– উঠে কি চুমু দিবা আমায়? ওকে আমি রাজি আছি। আসো,চুমু দিয়ে যাও।
তোহা উঠতে উঠতে বলে-
– খাওয়াচ্ছি তোরে চুমু।
ধুম ধুম করে কয়েকটা কিল মারে লিমনের পিঠে। লিমন “ওরে মাগো” বলে নিচু হয়ে যায়। তা দেখে তোহা বলে-
– আরো লাগবে চুমু?
– না না,তুমি যাও ঘুমাও। আমি পর্দা মেলে দিচ্ছি।
– এবার তোমার ব্রেইন ঠিক জায়গায় এসেছে। হুহ!!
তোহা গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
লিমন পর্দা মেলতে মেলতে বলে-
– লিমন বাবু, সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বউয়ের সব কথায় “ইয়েস বস” বলা টা শিখে নাও। তবেই শরীর,স্বাস্থ্য সব ভালো থাকবে।
তোহা মাথাটা হালকা উচু করে বলে –
– কিছু বললা?
– না না কিচ্ছু না। তুমি আরাম করে ঘুমাও বউ।
– হুহ।
তোহা “হু” বলেই তলিয়ে যায় ঘুমের দেশে।
.
.
.
তোহার ঘুম ভাঙে ফোনের শব্দে। তার ফোন বাজছে। তোহা ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে থাকে। সচরাচর এখানে নেটওয়ার্ক ওতটা ভালো না। তবে আজ বোধহয় একটু ভালোই সার্ভিস দিচ্ছে!
তোহা ফোন হাতে নিয়ে দেখে তার বাবার ফোন।
তোহা ভাবতে থাকে সে ধরবে কিনা। সাতপাঁচ ভেবে ফোনটা ধরেই ফেলে সে।
হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে আবরার সাহেব বলেন-
– কেমন আছিস মা?
তোহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে –
– ভালো আছি। তুমি আর মা কেমন আছো?
– আমরাও ভালো আছি। ওখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
– উঁহু।
– খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করছিস তো?
– হু।
– টাকা পয়সা আরো লাগলে বলিস আমায়।
– হু।
আবরার সাহেব কিছুক্ষণ থামেন। এরপর বলেন-
– জানি তুই রাগ আমাদের উপর। আমরা তোকে সময় দিতে পারিনা তাই। কিন্তু আমরা তো তোর ভালোর জন্যেই করছি এসব না? টাকা পয়সা সব তো তোর জন্যই আয় করছি। তুই যেদিন মা হবি,সেদিন বুঝবি।
তোহা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে –
– আমি অবশ্যই আমার ছেলেমেয়ের জন্য টাকা পয়সা আয় করার চেষ্টা করবো। কিন্তু আগে ওদের ভেতর টা দেখবো। ওরা যদি আমার থেকে টাকা না চেয়ে শুধু সময় চায়,তাহলে এত টাকা দিয়ে করবো টা কি?
আবরার সাহেব আর কিছু না বলে চুপ করে থাকেন। তোহা আবারো বলে-
– এই প্রশ্নের উত্তর না তোমাদের কাছে ছিল,আর না আছে,আর না থাকবে। বাদ দাও।।ভালো থেকো।রাখছি এখন।
আবরার সাহেব কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দেয় তোহা। তারপর ফোন হাতে নিয়েই বসে থাকে সে।
.
তোহা ঘুমোচ্ছিল বলে লিমন একটু হাটতে বের হয়েছিল। তারপর দুটো কফির মগ হাতে করে রুমে ফিরে আসে। এসে দেখে তোহা চুপ করে বসে আছে। চোখের ভেতর নোনাজল।
লিমন কফি দুটো টেবিলের উপর রেখে তোহার কাছে গিয়ে বসে বলে-
– কি ব্যাপার তুমি কাঁদছো কেন?
তোহা নিজেও জানেনা কখন তার চোখে জল ছাপিয়ে উঠেছে। সে চুপ করে নিচু হয়ে কাঁদতে থাকে। তা দেখে লিমন বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। তোহার হাত দুটি নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে লিমন চোখ বন্ধ করে তোহার মাইন্ড পড়তে শুরু করে।
তোহার সাথে তার বাবার কথোপকথন সব টাই চোখের সামনে ভেসে উঠে লিমনের। লিমন চোখ খুলে তোহাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। তোহার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে-
– একদিন আংকেল আন্টি ঠিক বুঝবে যে তুমি তাদের কাছে একটু সময় চেয়েছো, টাকা না। দেখে নিও।
.
.
সন্ধ্যার দিকে রুম থেকে বের হয় তোহা। কিন্তু বাকিদের কোথাও খুঁজে পায়না। লিমন কে উদ্দেশ্য করে বলে –
– বাকিরা কোথায়? একটু দেখো তো।
লিমন চোখ বন্ধ করে থাকে কিছুক্ষণ তারপর বলে –
– পেছনের দিকের বাগান টায় আছে তারা।
তোহা সেদিকে এগোতে এগোতে বলে-
আসলেই একটা ভূত বিএফ থাকা ভাগ্যের ব্যাপার। সব বিষয়ে হেল্প পাওয়া যায়।
.
.
তোহাকে দেখে সবাই তাকেও আমন্ত্রণ জানায় তাদের গল্পের আসরে।
বিধান,শীষ,মিলি,রিনি সবাই ঘাসের উপর গোল করে বসে ছিল। তোহাও সেখানে গিয়ে বসে।
মিলির হাতে চিমটি কেটে বলে-
– এখানে গল্প করা হচ্ছে! আর আমাকে একটু ডাকলিও না তোরা!!
মিলি বলে-
– তুই তো একা থাকতে পছন্দ করিস। আর আমরা ভাবলাম তুই ঘুমোচ্ছিস,তাই আর ডাকিনি। বাট কি করে বুঝলি আমরা এখানে আছি?
তোহা লিমনের দিকে একনজর তাকিয়ে বলে-
– আমার কাছে জাদু আছে। সব কিছু জানতে পারি আমি।
.
.
অনেকক্ষণ গল্প করে একদম রাতের খাবার খেয়ে যে যার রুমে শুতে যায়।
.
তোহা চুপটি করে লিমনের বুকের উপর হেলান দিয়ে বসে আছে। লিমন হঠাৎ প্রশ্ন করে –
– আজকে মৎস্যকন্যার বেশে দারুন লেগেছে তোমায়। কেমন ঘুরলে পানির নিচে?
লিমনের করা প্রশ্ন শুনে তোহার ঝট করে মনে পড়ে যায় পানির নিচে থাকা রহস্যের কথা। সে লিমনের দিকে ঘুরে বসে বলে-
– ভালো লেগেছে। তবে লিমন জানো,আমি পানির নিচে কিছু দেখেছি।
লিমন হেসে বলে-
– তোমার ফিউচার বর কে দেখেছিলে নাকি?
তোহা কপট রাগ দেখিয়ে বলে-
– সাবমেরিন দেখেছি,মানুষ দেখেছি।
এবার লিমন আর মজা করে না। তার কপালে সূক্ষ্ম রেখার ভাজ পড়েছে। সে তোহার দিকে ঝুকে বলে-
– ঠিক বলছো তুমি?
– হ্যাঁ ঠিক বলছি। ওরা পানির অনেক গভীরে ছিল। অনেক গভীরে। একদম পানির নিচে থাকা মাটির কাছাকাছি। ওখানে ডাইভ স্যুট পড়া ৪ জন লোক ছিল। তাদের হাতে গ্রেনেড আর বোম ছিল লিমন। সত্যি বলছি আমি নিজ চোখে দেখেছি। তারা আমাকে দেখার আগেই আমি উঠে আসি।
লিমন চিন্তায় পড়ে যায়। তোহা আবারো বলে-
– ওরা বিছানাকান্দিতে কিছু একটা করার বুদ্ধি আটছে নিশ্চয়ই। আমাদের তো কিছু একটা করা উচিত লিমন।
– কিন্তু কি?
– আমরা তো ওদের রহস্য ফাস করে সরকারের কাছে ওদের ধরিয়ে দিতে পারি। তাইনা?
– কিন্তু ফাঁস করবোই বা কিভাবে?
এবার তোহাও চিন্তায় পড়ে যায়। সে কি যেন ভেবে বলে-
– আচ্ছা এখন ঘুমাও। কাল সকালে আমার বাকি বন্ধুদের এই ব্যাপারে বলবো আমি।
– আর তারা যদি জিজ্ঞেস করে তুমি পানির ওত গভীরে কিভাবে গেছো তখন?
তোহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
– ওদের কে সব খুলে বলবো। তোমার কথাও। কালকে তুমি ওদের সামনে দৃশ্যমান হবে৷ আমার বিশ্বাস ওরা তোমাকে মেনে নিবে।
.
.
রাত ৩ টা। লিমন তোহা দুজনেই গভীর ঘুমে।
হঠাৎ তোহা ঘুম থেকে উঠে লিমনের কানের কাছে চিল্লিয়ে বলে –
– লিমন উঠো। আগুন আগুন…
লিমন লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে। তোহার দিকে তাকিয়ে বলে-
– কি হইছে?
তোহা ন্যাকামি সুরে বলে-
– আমি আইসক্রিম খাবো।
(চলবে)
ভৌতিকপ্রেম
পর্বঃ৬
@Mahfuza_Monira
সকাল সকাল তোহা সবাইকে ডেকে এনে রিসোর্টের বাগান টার এককোনায় জড়ো করে। বিধান হাই তুলতে তুলতে বলে-
– সকাল ৬ টা বাজে এখন। তুই এত সকালে ডেকে এনেছিস কেন? কীর্তন করতে?
শীষ বিধানের কথা শুনে খিকখিক করে হেসে উঠে। তা দেখে মিলি বলে-
– এত বড় হলি কিন্তু হাসি টা এখনো ঠিক করতে পারলি না! কি হাসিরে বাবা! যেন হাসি থেকে মুক্ত না,তেলাপোকা ঝড়ে।
তোহা চুপচাপ একেকজনের বকবক শুনছিল। এক্ষনে সে বলে উঠে –
– থামবি তোরা? তোদের কে ভীষণ জরুরি কিছু বলার জন্যেই ডেকেছি।
তোহাকে দেখে বড্ড সিরিয়াস লাগছে তাই সবাই চুপ হয়ে যায়। অপেক্ষা করতে থাকে তোহার সেই গুরুত্বপূর্ণ কথা শোনার জন্য
তোহা একটা দম নেয় প্রথমে।।তারপর বলে-
আমি একজন কে ভালোবাসি কিন্তু সেটা নর্মাল কথা। ভালোবাসতেই পারি কিন্তু যাকে ভালোবাসি সে মানুষ না,ভূত। মানি মৃত। আমি তোদের থেকে দূরে দূরে থাকতাম তারই জন্য, একা একা তার সাথেই বকবক করতাম। কালকে যখন বিছানাকান্দি যাই, ঐ পাহাড়ের পেছনে যাওয়ার পর আমার সেই বিএফ আমাকে মৎস্যকন্যা বানিয়ে দেয়। আমি পানির নিচে যাই আর তারপর সেখানে কিছু মানুষ দেখি যারা বিছানাকান্দি তে কোনো এট্যাক করার ফন্দি আঁটছে। তোদের সাহায্যের প্রয়োজন তাই। আমি চাই বিছানাকান্দি কে,আমার দেশ কে সেসব লোকের থেকে বাঁচাতে।
তোহা কোনো ভনিতা না করে সরাসরি বলে সব কিছু। তোহার কথা শুনে হাহাহা করে হেসে উঠে সবাই। বিধান পেটে হাত চেঁপে হাসতে হাসতে বলে-
– কোন ফিল্মের কাহিনী বলছিস? কাহিনী টা কিন্তু সেই।
তোহা রেগে যায়। দাতে দাত চেঁপে বলে-
– বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা?
– উঁহু মোটেও না।
– আচ্ছা। বিশ্বাস করাচ্ছি।
তোহা হাত দিয়ে তুরি মারতেই লিমন অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান হয়। তা দেখে সবার হাসি নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়। বিধান হা করে তাকিয়ে থাকে লিমনের দিকে। অস্ফুটস্বরে বলে-
– এই জাদু কোথা থেকে শিখেছো তুমি?
– আমি জাদু শিখিনি। মৃত্যুর পর সবার কাছেই একটা পাওয়ার আসে। আমি সেই পাওয়ার থেকেই নানান ধরনের জিনিস করতে পারি।
শীষ এসে লিমন কে গুঁতো দিয়ে বলে-
– আর ইউ রিয়েল?
– ইয়েস। আমি রিয়েল!
সবাই এক হাত ছিটকে দূরে সরে যায় লিমনের থেকে। তা দেখে তোহা বলে-
– বলেছিলাম না, এবার হলো তো আমার কথা বিশ্বাস?
সবাই মাথা নাড়ায় চুপচাপ করে।
তোহা এবার কিছুটা শান্ত হয়ে বলে –
– লিমন কে আমি ভীষণ ভালোবাসি। ওকে মেনে নিবি তো তোরা?
সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। কিন্তু রিনি এগিয়ে এসে বলে-
– কখনো না। ও মৃত আর তুই জীবিত। তোদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আর আমি তোকে জেনে শুনে অন্ধকারে ঠেলতে পারিনা। আমি ঢাকায় গিয়েই আংকেল আন্টি কে বলে দিবো সব। মনে রাখিস।
.
.
বাগানের এক কোনায় দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে তোহা। সবার কাছে বলা টাই বোধহয় ভুল হয়ে গেছে তার। নিজেই নিজেকে গালি দিচ্ছে ভিতরে ভিতরে।
রিনি আরেক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। তাচ্ছিল্যের সুরে বলে-
– প্রেম! ভালোবাসা! যতসব ফালতু জিনিস! ভালোবাসছিস তো একটা জীবিত কাউকে বাসতি। এই ভূতের সাথে মরতে গেলি কেন!?
তা শুনে চোখ মুছে নেয় তোহা। সামনে এগিয়ে এসে বলে-
– ভালোবাসা কখন কার প্রতি কিভাবে হয় সেটা স্বয়ং নিজেও বুঝতে পারেনা। যেদিন তুইও কাউকে ভালোবাসবি সেদিন বুঝবি। মনে রাখিস।
লিমন এগিয়ে এসে বিধানের হাত ধরে বলে-
– এখনের পর থেকে ১০ মিনিট পর যেটা হবে সেটাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তোমরা যদি সাপোর্ট করো,আমাদের ভবিষ্যৎ অবশ্যই সুন্দর হবে। সব সমস্যারই একটা সমাধান আছে তো। শুধু ইচ্ছা থাকতে হয়। প্লিজ মেনে নাও ভাই।
তোহাও বলে
– হ্যাঁ রে। মেনে নে। তোরাই তো আমার পরিবার। আমার সুখের জন্য হলেও মেনে নে প্লিজ।
বিধান মিলির চোখের দিকে তাকায়। দুজনে চোখেচোখে কিছু বললো হয়তো।
এরপর শুকনো হাসি দিয়ে দুজনেই বলে
– ঠিক আছে। যদি তুই লিমনের সাথেই সুখে থাকিস তাহলে আমরা মেনে নিলাম।
কথা টা শুনে তোহা ওদের দুজনকেই জড়িয়ে ধরে।
কিন্তু রিনি পেছন থেকে বলে-
– আমি জীবনেও মানবো না তোহা। মনে রাখিস কথাটা।
রিনি হনহন করে ভেতরে চলে যায়।
শীষ ও রিনির পক্ষ নিয়ে সেও ভেতরের দিকে চলে যায়। বাগানে শুধু দাঁড়িয়ে থাকে বিধান,মিলি,তোহা আর লিমন।
বিধান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে –
– বাদ দে ওদের কথা। তোদের সাহায্য আমরা করবো। বল কবে যাবি বিছানাকান্দি তে? আর প্ল্যান কি?
তোহা স্মিত হেসে বলে –
– বিকেলে আমার রুমে চলে আসিস। ওখানে বসেই প্ল্যান করবো আমরা।
.
.
এই প্রথম হয়তো আজ দুপুরে রিনি আর শীষ আলাদা লাঞ্চ করেছে। সেই ঘটনার পর থেকে সকাল থেকে আর কথাও বলেনি রিনি কারো সাথে। তা দেখে তোহার মন টা ছোট হয়ে যায় খুব। মিলি তোহার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে-
– একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই মন খারাপ করিস না।
– হুম তাই যেন হয়।
(চলবে)