ভ্যাম্পায়ার,পর্ব:০৬,৭,শেষ পর্ব ৮?
Writer: Asstha Rahman
পরেরদিন সন্ধ্যায় তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বাসায় ফিরলাম। বেশ জোরে তুফান হচ্ছে। ফিরে দেখি রুজিনী ভীষণ পিনিকে আছে, কয়টা বিয়ার গিলেছে কে জানে! কিসব বিড়বিড় করছে। ওকে কাঁধের উপর ভর দিয়ে ড্রয়িংরুম থেকে বেডরুমে নিয়ে এলাম। হুট করে ইলেক্ট্রিসিটি ও চলে গেল, মোমবাতি কয়েকটা জ্বালিয়ে দিলাম।
পিছন ফিরে দেখি রুজিনী দাঁড়িয়ে আমার দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
.
ও আমার দিকে এগোতে লাগল, আমি পিছু নামতে লাগলাম। বারবার জিজ্ঞেস করছি এমন করছে কেন? ও কিছু না বলে এক ধাক্কায় আমাকে বিছানায় ফেলে দিল।
আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, আমি শর্ট গেঞ্জি পড়ে ছিলাম। একটানে সেটা ছিঁড়ে ফেলল। বুঝলাম ও কি করতে চলেছে। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম, এখন যদি ওকে আটকাতে না পারি তবে ওর জীবন চলে যাবে গোমেজের হাতে।
ও থামলোনা বরং আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বুক, গলায় চুমু খেতে লাগল।
হঠাত আমার মাথায় রাগ উঠে গেল।জানি কিসের বশে আমার হাত বেডটেবিলে রাখা কাচের ফুলদানিটি নিল। আমার হাত আমার আয়ত্বে নেই।নিজের অনিচ্ছায় ফুলদানিটা দিয়ে চোষনলীলায় ব্যস্ত রুজিনীর মাথায় সজোরে আঘাত করলাম।
.
উচ্চচিৎকার দিয়ে রুজিনী বেডে লুটিয়ে পড়ল। আমি উঠে ওর নিশ্বাস চেক করলাম। এই আমি কি করেছি? আমি তো নিজের ইচ্ছায় এটা করতে চাইনি! আমি আমার হাত সরানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু হাত আমার বশে ছিলনা। নিজের হাতেই নিজের বন্ধুকে মেরে দিলাম।ভেবেই কাঁদতে শুরু করলাম।
এমনসময় ঘরের মোমবাতিগুলো
নিভু নিভু হয়ে এল। ঘাড়ের কাছে বেশ গরম নিশ্বাস অনুভব করলাম।
ঘাড় ফিরিয়ে দেখি একটা কালো পোশাক পড়া লোক, মুখ দিয়ে দুটো সুচালো সরু দাত বের হয়ে এসেছে।
চোখ দুটো ভীষণ লাল।
ভয়ে চিৎকার করে আমি সরে গেলাম। সে হাসতে হাসতে আমার গায়ে উপর উঠে গেল,
তারপর আমার শরীরের সাথে নাক লাগিয়ে কিছুক্ষন শুঁকে বলল,
” আহা! সেই মাতাল করা ঘ্রাণ! নরম মাংসল শরীর।”
বলেই যেই কামড় বসাতে গেল, আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। একটু পর খুলে দেখি লোকটা নেই, একটা বাদুড় জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল।
এই তবে সেই গোমেজ, ওর বশেই রুজিনীকে আমি হত্যা করেছি। ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে গেল আমার কাছে। চোখের পানি মুছে রুজিনীর লাশটা বহুকস্টে স্টোররুমে রেখে আসলাম।
কাল সকালে এটাকে অন্যত্র ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার যে কিচ্ছু করার নেই, অভিশাপের টানাপোড়নে আমি বড্ড অসহায়।
.
গায়ে লেগে থাকা রুজিনীর রক্ত মুছার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলাম। ভালো করে শাওয়ার নিয়ে জিন্স আর শার্ট পড়ে নিলাম, এতক্ষন অর্ধনগ্ন অবস্থায় ঘুরছিলাম।
যেই ওয়াশরুম থেকে বের হতে যাব তখনি চোখে পড়ল আলেসকে।
— তোমাকে এত্ত ডাকি সাড়া দাওনা কেন আলেস? জানো গোমেজ আমার….
— হুম জানি। ও তোমার হাতকে বশে এনে রুজিনীকে মেরে ফেলেছে।
— একে বিনাশ করব কি করে?
— একটা না একটা উপায় তো আছেই, সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
— হুম ভাবছি উপায়টা।তুমি আমার ডাকে সাড়া দাওনা কেন?
— আমার আত্মা এইখানে বন্দি, কোনো শরীরে প্রবেশ করা ছাড়া
আমি এই সীমানা অতিক্রম করতে পারবনা।
— তাহলে তুমি আমাকে সাহায্য করতে পারবেনা?
— এই সীমায় থেকে যতটুকু পারি ততটুকুই করতে পারব। আজই গোমেজ তোমার উপর আক্রমণ করতে পারত, কিন্তু সে পূর্নতিথির অপেক্ষায় আছে।
ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বেরিয়ে এলাম। এই ভয়ানক শয়তানের সাথে কি করে লড়াই করব।
ভেবেও কুল কিনারা পেলামনা। পরেরদিন বিকালে এক কলিগের কাছ থেকে একটা বই নিয়ে আসলাম।
সে আবার তন্ত্র-মন্ত্র করে কিছুটা। বাসায় এসে বইয়ের লেখানুযায়ী চক্রাকারে একটি বৃত্ত একে তার চারপাশে মোম জ্বালিয়ে দিলাম।
বৃত্তের মাঝখানে রুজির লাশটা রাখলাম।
আজ আমি এমন কিছু করতে যাচ্ছি, যেটা আমার জন্য বড় একটা সহায়ক হবে।
জানিনা, মিশন সাকসেস হবে কিনা? সবকিছু সাজিয়ে নিয়ে বইয়ের মন্ত্র গুলো বিড়বিড় করতে জপতে লাগলাম।
আহবান করতে লাগলাম তাকে। কিছুটা সময় কেটে যাওয়ার পর
ফ্লোরটা কাপতে লাগল, সেইসাথে মোম বাতিগুলো এক এক করে নিভে যেতে লাগল।
মনে হচ্ছে, আমি সফল হয়েছি। এখন শুধু কিছুটা সময়ের অপেক্ষা…..
(চলবে)
ভ্যাম্পায়ার
পর্ব: ০৭
.
রুজিনী চোখ খুলল। আমি পেরেছি, ভীষণ খুশি লাগছে। রুজিনী উঠে দাঁড়াল। আমি এগিয়ে এসে বললাম,
— আলেস, এখন থেকে তুমি রুজিনীর শরীরে থাকবে। এতে তুমি আমাকে সাহায্য করতে পারবে।
আলেস খুশি হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আলেস খুব ভালোভাবে রুজিনীর শরীরে মানিয়ে নিল।আমার চিন্তা ও দূর হল কেননা, রুজিনী দেহ অন্যত্র ফেলে দেওয়া বা সন্দেহের ঝামেলা থেকে তো বাঁচলাম।
আলেস আর আমি বিভিন্ন বইপত্র ঘাটাঘাটি করেও গোমেজকে বিনাশ করার কোনো উপায় খুঁজে পেলামনা।
আলেসকে খুব আগলে রাখছিলাম যাতে করে গোমেজ ওকে চিনতে বা ওর কোনো ক্ষতি করতে না পারে।
.
আমি আর ও কিচেনে রান্না করছিলাম। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম। হ্যারি ঢুকেই আমাকে কোলে নিয়ে ঘুরাতে লাগল। কপালে একটা আলতো চুমু খেয়ে বলল,
— কেমন আছো ব্রেনি?
— খুব ভালো। না জানিয়ে চলে এলে?
— আমার বউটাকে দেখতে। খুব মিস করছিলাম তোমাকে।
এর মধ্যে আলেস চলে এল। ওকে দেখে হ্যারির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম।
.
রাতে দুজন ব্যালকুনির পাশে বসে গল্প করছিলাম। হ্যারি কথার মাঝে মাঝে একটু আধটু আদর করছিল, বেশ ভালোই লাগছে।
হ্যারিকে পেয়ে আমার সাহস অনেক বেড়ে গেল।
আলেসকে কোথাও দেখলাম না। হয়তো আমাদের অবস্থা বুঝে আমাদের একান্ত সময় কাটাতে দিয়ে অন্য রুমে বসে আছে।
হ্যারির কথায় ঘোর কাটল,
— এই ব্রেনি! বিয়ের পর এই প্যালেসে ছোট্ট একটা সংসার সাজাব। তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমোবো।
রাগ করলে লুকোচুরি খেলব।
প্যালেসের কথা উঠতেই গা কেপে উঠল। এই প্যালেসে সংসার অসম্ভব।
হ্যারি শরীরের কাপুনিটা টের পেল।
— এই ব্রেনি, ঠান্ডা লাগছে?
— কই না তো! বলার আগেই ও বুকে টেনে নিল। গালে আলতো চুমু খেল। ঠোটে স্পর্শ করল। যখন প্রায় চরম মূহুর্তে আমরা, তখনি আলেস রুমে চলে এল। আমরা একে অপরকে ছেড়ে দিলাম।
.
ভাগ্যিস আলেসটা চলে এল! আমি নিজেও কন্ট্রোল হারিয়ে ফেললাম, আমার ভুলের জন্য হ্যারিকে হারাতে হত। ওহ গড!
ভাবতে ভাবতে কিচেনে চলে আসলাম।
আলেস চোখ না তুলেই ভেজিটেবল কাটতে কাটতে বলল,
— ব্রেনি, তোমার আরেকটু সতর্ক হওয়া উচিত।
— হুম আলেস! নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছিলাম
— তোমার ছোট্ট ভুলের জন্য তোমার বাগদত্তাকে হারাতে হবে।
— ধন্যবাদ আলেস! ভাগ্যিস তুমি রান্নার অজুহাতে ডেকে আনলে, নাহলে…
— আরেহ, বোকা মেয়ে। ধন্যবাদ তো তুমি আমার কাছে পাওনা। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি কিছু একটা করা দরকার।
আমরা বিপদের সাথে বাস করছি, এটা মাথায় রেখো।
আলেস ঠিকি বলছে, নিজেকে আরো একটু সতর্ক রাখা দরকার।কফি নিয়ে হ্যারির কাছে এলাম। হ্যারি একটু বিরক্তভাব নিয়ে বলল,
— তোমার ফ্রেন্ড কি সময়- অসময় বুঝেনা?
— কেন কি হল?
— রোম্যান্সের টাইমে এন্ট্রি নিল।
বিড়বিড় করে বললাম, তার জন্যই তো তুমি বেচে গেলে..
— কিছু বললে ব্রেনি?
— হুম, বলছিলাম যে আমাদের বিয়ের শপিং কবে করবে?
— তুমি যখনই বলবে। তোমার হ্যা শোনার জন্য আমি সবসময় প্রস্তুত।
— তাহলে, কালই আমেরিকা ফিরে আমাদের বিয়ের শপিং করে ফেল.
— সবে তো এলাম, কালই চলে যাব।
— হুম, তোমাকে ছাড়া আর থাকতে ইচ্ছে করছেনা। তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলব।
— অকে, বেবি। কাল সন্ধ্যেই রওনা দিব।
.
হ্যারিকে এইখান থেকে সরানো জরুরী ছিল, কারণ ওর জীবনটা আমি বিপন্ন করতে চাইনা। আমার এখনো আসল লড়াইটা বাকি।এই লড়াইয়ে আমি জীবনও হারাতে পারি..
আলেসও আমার ভাবনাটাতে সায় দিল। রুজিনীর শরীরে আলেস ঢুকার পর ওকে আমি একা ছাড়িনি। ভয় হত ওকে নিয়ে।
কিন্তু হ্যারিকে এয়ারপোর্ট এ ছেড়ে দিয়ে আসার জন্য ও একা বাসায় রেখে চলে
আসলাম।
হ্যারি ভিতরে ঢুকে যাওয়ার পর থেকে আলেসকে টানা কল দিয়ে যাচ্ছি।
রিসিভ করছেনা, এই মেয়ে যা ঘুমকাতুরে।
হয়তো পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে।
বাসায় এসে দেখি রুমের সব জিনিসপত্র এলোমেলো। মনে হল কেউ ধস্তাধস্তি করেছে।
আলেসকে কোথাও দেখলামনা। হঠাত ব্যালকুনির দিকে চোখ গেল। হ্যা আলেসই তো! কাছে গিয়ে দেখি ও নগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে। স্তনের অনেকটা অংশ কেটে নেওয়া হয়েছে। মুখটা রক্তশুন্য।
গোমেজ আমার অনুপস্থিতিতে আলেসকে হত্যা করেছে।
অহ গড! তুমি আমাকে পথ দেখাও। বসে বসে ভাবছি কি করব! আলেসের লাশটা দেখার কিছুক্ষণ পর ওইটা উধাও হয়ে গেল।
নিশ্চয়ই জলসা ঘরেই আছে।
গোমেজের কন্ঠস্বর পেয়ে মাথা তুলে দেখি ও আমার মুখোমুখি বসে আছে।
আমার মুখটা চেপে ধরে বলল,
” কি ভেবেছিস! আমাকে বিনাশ করবি? হা হা, কিচ্ছু করতে পারবিনা। যত জন তোকে সাহায্য করতে আসবে ততজনকে আমি এভাবেই শেষ করে দিব! তৈরী থাকিস, দুইদিন পর তোকেও তাদের কাছে ফিরতে হবে” বলেই ভয়ংকর হাসি দিল।
অতঃপর বাতাসের সাথে উবে গেল।
.
মাথায় প্রচন্ড জেদ চেপে গেল, যে করেই হোক একে আমি শেষ করেই ছাড়ব।
আমিও ব্রেনিসা। এখন শুধু আমার খেলা দেখে যাও গোমেজ।
ভেবেই প্যালেস থেকে বেরিয়ে গেলাম উপায় খোঁজার উদ্দেশ্যে…..
( চলবে)
ভ্যাম্পায়ার
Writer: Asstha Rahman
শেষ পর্ব ৮?
.
.
গীর্জায় এসে খ্রীস্টের সামনে নতজোরে সারারাত পড়ে রইলাম। শেষরাতে ফাদার আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
— ডিয়ার, কি হয়েছে তোমার? এভাবে বসে আছো কেন?
— ফাদার, আমি গডের কাছে উপায় খুজছি।
উনাকে আমি সব বললাম। উনি বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
— এসো আমার সাথে ডিয়ার।
আমি উঠে উনাকে অনুসরণ করলাম,উনার পিছু পিছু কবরস্থানে এলাম।
একটা পুরোনো কবরের সামনে এসে উনি দাঁড়ালেন। চোখ বন্ধ করে কাউকে ডাকতে লাগলেন।আমিও করজোড়ে উনার পিছনে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাত কবর থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসল,
— কিছু বলবে, সাকুরা?
— হুম, বড়ফাদার। এই মেয়েটি প্রচন্ড বিপদে রয়েছে। আপনি তাকে পথ দেখান, সাহায্য করুন।
— পথ তো ঈশ্বর দেখান, আমি কেবল সাহায্য করতে পারি। বৃত্তান্ত আমাকে বল।
ফাদার এক এক করে সব খুলে বললেন। কবর থেকে আবার আওয়াজ আসল,
— ব্রেনিসা, আমি তোমাকে বিস্তারিত কিছু বলবনা। কেবল একটি ধাঁধা দিতে পারি, এর মাঝেই তুমি তোমার উপায় খুঁজে পাবে।
” কেটে হৃৎপিন্ড
ছিটাও ছাইজল বিন্দ,
পুড়িয়ে যদি নাহি হয় পার
তব খুঁজিয়া লহ নিজ বিরাজে!”
ধাঁধাটা মাথায় গেঁথে নিলাম। ভেবে-চিন্তে বের করা যাবে।
.
ফাদার খানিকটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
— ডিয়ার, ফিরে যাও প্যালেসে।
— ফাদার, গোমেজ সবসময় আমার আশেপাশে থাকে। ও তো আমাদের সব কিছু শুনে ফেলল।
— ডিয়ার, গীর্জায় কোনো অভিশপ্ত আত্মা প্রবেশ করতে পারেনা। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। এখন সূর্যের আলো ফুটে ওঠেছে, ও তোমার কাছে ঘেঁষবে না। ভ্যাম্পায়াররা সূর্যের আলো সহ্য করতে পারেনা।
তাই তোমাকে সবকিছু দিনেই শেষ করতে হবে। আজ ৭টার সময় কিন্তু পুর্নচন্দ্রিমা প্রকাশিত হবে।
ফাদারের কথায় আশ্বস্ত হলাম। গাড়ি নিয়ে প্যালেসে ফিরে এলাম। কফি নিয়ে বসে গেলাম ধাঁধার উত্তর খুঁজতে।
.
আমি আবার সেই জলসাঘরে ঢুকলাম। এইখানেই কোথাও গোমেজের কবর রয়েছে, সেটাই আমাকে খুঁড়তে হবে।
জলসাঘরটা পুরো ফাকা। অয়েস বা রুজিনীর লাশ কোথাও নেই।
ভাবছি কোনদিকটায় খুঁড়ব! এমনসময় চোখে পড়ল ফ্লোরের মাঝখানটায় ছোট্ট সাইজের লাল রঙের বাদুড় আকা। দেরী না করে জায়গাটা খুঁড়তে শুরু করলাম। অনেকটা খোঁড়ার পরে একটা ধাতব কিছুর সন্ধান পেলাম। অনেককস্টে সেটা বের করলাম, উপরে উঠিয়ে দেখি সেটা একটা তালাবদ্ধ কফিন।
তালাটা খোলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু ওইটায় মরিচা পড়ায় সহজে খুলছিলো না।
.
বহুযুদ্ধের পর তালা খুলতে সক্ষম হলাম। কফিনের ঢাকনা সরাতে দেখি গোমেজের লাশ।
এইবার আমার আসল কাজ শুরু। সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসছে, দিনের আলোয় গোমেজ আমাকে আটকাতে না পারলেও এখন সে অবশ্যই আটকাবে।
তাড়াতাড়ি হাতে ছুরি নিলাম। ধাঁধায় বলা ছিল হৃৎপিন্ড কেটে তার উপর ছাইপানি ফেলে পুড়িয়ে ফেলতে।
গোমেজের বুক ছিঁড়ে হৃৎপিন্ডটা বের করলাম। এটা এখনো তাজা।
হৃৎপিন্ডটার উপর ছাইপানি ছিটালাম। কাঠি দিয়ে সবে আগুন জ্বালালাম, তখনি গোমেজ এসে হাজির।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে তার ভয়ংকর হাসিটা হাসতে লাগল।
— শয়তান, যত পারিস হেসে নে। এখনি তোর বিনাশ ঘটবে।
বলেই কাঠির আগুনটা হৃৎপিন্ডের উপর ছুড়ে মারলাম। দাউ দাউ করে সেটা জ্বলতে লাগল। কিন্তু গোমেজের হাসি থামছেনা, কিচ্ছু হচ্ছেনা তার। মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে কি করব!
গোমেজ আমার দিকে এগিয়ে আসছে। ধাঁধার পরের অংশটা যেন কি ছিল, টেনশনে ভুলে গেছি।
গোমেজ আমাকে দেয়ালে ঠেসে ধরল। তার ধারালো নখ দিয়ে আমার টপসটা ছিন্নভিন্ন করে ফেলল। তার সুচালো দাত এগিয়ে আসতে লাগল আমার নগ্ন স্তনের দিকে।
আমি হাতিয়ে পাশের টেবিলের উপর থেকে উজ্জ্বল সৌর টর্চটা হাতে নিয়ে আলোটা গোমেজের দিকে মারলাম।
গোমেজ সূর্যের আলো ভেবে দূরে সরে গেল। তক্ষুনি আমি ফ্লোরে পড়ে থাকা ছুরিটা হাতে নিলাম। শেষ ধাঁধার উত্তর আমি পেয়ে গেছি।এখন গোমেজকে বিনাশ করতে হলে আমি নিজেকে শেষ করতে হবে। ছুরি দেখে গোমেজ হেসে বলল,
— এই ছুরি তোমাকে রক্ষা করতে পারবেনা। এর আঘাতে আমার কিছু হবেনা।
— আমার তো হবে তাইনা? আজ তোকে বিনাশ করেই ছাড়ব নিজের জীবনের বিনিময় হলেও।
বলেই ছুরি দিয়ে নিজের পেটে পরপর কয়েকবার আঘাত করলাম।
গোমেজ চিৎকার দিয়ে উঠল। ওর শরীর দাউদাউ করে পুড়ে যাচ্ছে।
আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। নিশ্বাসবন্ধ হয়ে আসছে। হ্যারির মুখটা চোখের সামনে ভাসছে। আমার আর ওর বউ হওয়া হলনা। কিন্তু আফসোস নেই, একটা শয়তানকে তো বিনাশ করতে পেরেছি। আর চোখ খুলে রাখতে পারলামনা। শেষনিঃশ্বাস টা নিয়েই নিলাম।
.
.
ধীরে ধীরে চোখ খুললাম, পাশে হ্যারি আর ফাদারকে দেখলাম। কিন্তু উঠে বসার শক্তি পেলামনা।
— ডিয়ার ওঠোনা।
তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন।
— ফাদার আমি বেচে গেলাম কি করে?
— তোমার শরীরে গোমেজের পূর্ন শক্তির আধার ছিল। তুমি নিজেকে আঘাত করে কেবল সেটাকেই শেষ করেছো।
ণিজেকে নও। যদিও অই আঘাতের ক্ষত এখনো তোমার শরীরে রয়ে গেছে।
অনেক বড় একটা কাজ করেছো তুমি ডিয়ার। হ্যারির দিকে তাকালাম। বেচারার চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে গেছে। এখনো জল ফেলেই যাচ্ছে। আমি হাত দিয়ে মুছে দিলাম। ও আমার হাত জড়িয়ে বলল,
–আমার জন্য আজ তোমার এই অবস্থা। যদি তোমাকে এই প্যালেসটা না গিফট করতাম, কিছুই হতনা।
–হ্যারি, এখন সব অকে না?
–ওই প্যালেসে তুমি আর থাকবেনা।আমি প্যালেসটা জ্বালিয়ে দিব, তারপর এখান থেকে ফিরে যাব আমেরিকায়।
গাড়িতে ওঠে বসলাম এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে। গাড়ির জানালা থেকে দেখলাম প্যালেসটা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে।
সেই আগুনের শিখার সাথে পুড়ে যাচ্ছে আলেস, রুজিনী আর অয়েস।
চোখ দুটো ভারী হয়ে এল। আস্তে আস্তে প্যালেসটা চোখের আড়াল হয়ে গেল।
সমাপ্তি