#ভ্যাম্পায়ার_লাভার,পর্বঃ-০৭,০৮
লেখনীতেঃ-কাশপিয়া মেহজাবিন রিমশা।
পর্বঃ-০৭
—কিহ বিড়াল? বিড়াল কেনো?(সাদাফ)
—যাতে বিড়ালটা তোমার পেটের ভেতরে সেই ইঁদুর গুলোকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারে।(শ্রুতি)
শ্রুতির এমন কথায় সাদাফ হাসতে হাসতে শেষ। এসব আজাইরা টাইপ কথা একমাত্র এই মেয়ের মাথায় আসতে পারে।
সাদাফ দেখলো শ্রুতির হাত পুড়ে গেছে। সাদাফ শ্রুতির হাত ধরে ফেলে।
—একি হাত পুড়লো কিভাবে তোমার?
—পুলি পিঠা বানাতে গিয়ে!
—কে বলেছে এসব বানাতে?
—কেউ খেতে ভালোবাসে।
—হুহ আর এদিকে তো আর কেউ খেতে ভালোবাসেনা।(মেহের অনেকটা অভিমান করে কথাটা বলে)
—আরেহ শাঁকচুন্নি তোর জন্যও এনেছি রে,হা কর খাইয়ে দিই।
শাঁকচুন্নি নামটা খারাপ হলেও শ্রুতির মুখে শুনতে বেশ ভালো লাগে মেহেরের।
পুলি পিঠার পাঠ চুকিয়ে ওরা সেদিন বাসায় ফিরে আসে। শ্রুতি কাঁদ থেকে ব্যাগ রাখতে গিয়ে দেখে সে পোড়া দাগটা নেই। শ্রুতি অনেকটা অবাক হয়। এও কি আদৌ সম্ভব? কিন্তু
শ্রুতির এসব ব্যাপারে মাথা ব্যাথা নেই।
সাদাফের সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর সাদাফ আর শ্রুতি কেউ আর কোনো দুঃস্বপ্ন দেখে নি। সেদিক দিয়ে অনেকটা মন ফুরফুরা লাগছে শ্রুতির। হতে পারে সাদাফকে ভালো লাগার জন্য এসব আবোল তাবোল স্বপ্ন সে দেখেছে। কিন্তু সাদাফ? ও কেনো দেখলো?
ধুর কিসব কি। এই দুনিয়ায় অসম্ভব বলতে কিছু নেই।
কোন এক পিছুটান,ভেঙে দিলো ব্যাবধান,
দেখা হয়ে গেল তাই আবার!
মিলেছি দুটিতে,এই আমি কিছুতে,হারাতে দেবনা তোকে আর!
আমি হেরে বসে আছি তোর কাছে,
তবে এই হারে সুখ যে আছে।
তোর ওই হাসি দেখে যাই,
নিয়ে একে একে সব অভিমানেরাই এ নাই!
তুই তো এমন কেউ যার সাথে কখনো রাগ করে থাকা যায়না!
ভালোবাসি বলে প্রতিদিন চলে তোর মনে আসা আর যাওয়া!
থাকতে যদি চাই সেখানে সবসময় হবে কি তা খুব বেশি চাওয়া?
আমি হেরে বসে আছি তোর কাছে!
তবে এই হারে সুখ যে আছে!
তোর ওই হাসি দেখে যাই,
নিয়ে একে একে সব অভিমানেরাই এ নাই!
তুই তো এমন কেউ যার সাথে কখনো রাগ করে থাকা যায়না!
(অসম্ভব সুন্দর একটি গান)
কানে ইয়ারফোন গুঁজে গানটা শুনতে থাকে শ্রুতি। কি মধুর সময়। ভালোবাসার মানুষকে মনে করা সাথে লাভ সং, অনুভূতি টা সত্যিই অনেক সুন্দর।
—আচ্ছা সাদাফ কি আমাকে মেনে নিবে? সাদাফ কোরিয়ান নায়কদের মতো কত সুন্দর আর সেখানে আমি কি সাদাফের যোগ্য? ধুরর কিসব ভাবছি আমি। সাদাফ আমাকে মেনে নিবে,আমি যে ওর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে অবশেষে চলে এসেছে শ্রুতির জন্মদিন। শ্রুতি আজ আকাশী রঙের শাড়ী পড়েছে। হাত ভর্তি আকাশী রঙের রেশমী চুড়ি পড়েছে। চোখে হালকা কাজল,ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক আর কপালে একটা টিপ। সে তার এলোকেশী চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। আজ সবাই শ্রুতির জন্মদিন উপলক্ষে ছোটখাটো একটা পার্টি এরেঞ্জ করেছে। আজ ফ্রাইডে কলেজও অফ,সেদিক দিয়ে ভালোই হলো।
শ্রুতির সাজা কমপ্লিট এখন সে বেরুবে। বের হওয়ার আগে আয়নায় নিজেকে একবার দেখা যাক।
—বাহ শ্রুতি বাহ,তোকে তো দারুণ লাগছে। সাদাফ তো তোর থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না।
নিজের মনে কথাগুলো বলে হাসতে থাকে শ্রুতি।
শ্রুতি রেস্তোরাঁয় ঢোকা মাত্রই হাজারও গোলাপের পাপড়ির বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। শ্রুতি চোখ বন্ধ করে ভালোই উপভোগ করছে।
—হ্যাপি বার্থডে শ্রুতি(সবাই একত্রে বলে উঠে)
শ্রুতি চোখ খুলে তাকায়। চারিদিকে রঙ বেরঙের বেলুন দিয়ে সাজিয়েছে। তার উপরে বেলুন দিয়ে লেখা হ্যাপি বার্থডে শ্রুতি। সাথে চকোলেট কেক,আহ শ্রুতির ভীষন প্রিয়। চারিদিকে গিফটের ছড়াছড়ি। আজ আবিরও এসেছে,মেহেরের বয়ফ্রেন্ড। কিন্তু সাদাফ কই? এতো জাঁকজমকের মাঝে ওকে তো দেখা যাচ্ছে না। তবে কি সাদাফ আসে নি?
—কিরে শ্রুতি তোর চোখ কাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে? এসেছিস পর্যন্ত দেখতেছি এদিক সেদিক কি যেনো খুঁজছিস?(মেহের)
—কই কি খুঁজবো আবার? চারিদিকে দেখতেছি কত সুন্দর করে সাজিয়েছিস তোরা।
—হইছে হইছে আয় এবার।
মেহের শ্রুতিকে নিয়ে কেকের পাশে দাড় করায়। এখন কি সাদাফকে ছাড়া সে তার বার্থডে সেলিব্রেশন করবে?উফফ এত্তো প্যারা দেয় কেনো ছেলেটা।
-কেমন আছেন আবির ভাই?
—এইতো ভালোই। তোমার কি খবর?
—হুম ভালো।
মেহের বলে উঠে
—তাহলে এখন কেক কাটা শুরু করা যাক…
কিছুক্ষণ পর,
—কিরে শ্রুতি কি ভাবছিস? নে ধর কাঁচিটা। কেকটা কাট।
—হুম
শ্রুতির মন খারাপ হয়ে গেলো। ভেবেছে ততক্ষণে সাদাফ আসবে। কিন্তু সাদাফ এলো না। শ্রুতি যেই কেক কাটতে যাবে…
—কি আমাকে বুঝি কেকের ভাগ দিবে না? নিজে একাই খেয়ে ফেলার প্ল্যান করছো বুঝি?
শ্রুতির মুখে হাসি ফুটে। এই কন্ঠস্বর কার শ্রুতি ঠিক চিনতে পেরেছে। শ্রুতি মুখ তুলে তাকায়।
—এতক্ষণে আসলে যে? কই ছিলে এতোক্ষণ?
—আরে আর বলো না, এদিকের সব যখন ঠিকটাক করছিলাম তখন একটা ইম্পর্ট্যান্ট কল আসে। তাই যেতে হলো।
—আচ্ছা আসো এবার।
সাদাফ মনে মনে বলে,
যাক বাবা বাঁচা গেলো শ্রুতি আর কিছু জিজ্ঞেস করে নাই। জিজ্ঞেস করলেও ওকে বানিয়ে কিছু একটা বলতে হতো। আসল কারন তো ও কারও দেহ থেকে সব রক্ত চুষে এসেছে। এই ভেবে সাদাফ তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।
—কি হলো সাদাফ ভাই হাসছো যে? (আবির)
—এমনিতেই।
এমনিতেই কেউ হাসে নাকি? এমনিতে কেউ হাসলে ধরে নিতে হবে সে পাগল। পাগলেরা না কোনো কারন ছাড়া হাসে। (মনে মনে ভাবতে থাকে আবির)
—চলো শুরু করা যাক(সাদাফ)
শ্রুতি কেক কেটে একে একে সবাইকে খাইয়ে দেয়। আর গিফট বুঝে নেয়।
মেহের বলে উঠে,
—শ্রুতি একটু বস সাদাফের সাথে। আবিরের নাকি কি কাজ আছে।আমি একটু এগিয়ে দিয়ে আসি।
—একি আবির ভাই এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবেন?আমাদের সাথে লাঞ্চ টা অন্তত করে যেতে পারতেন।
—না শ্রুতি কাজটা না পড়লে ঠিকই থাকতাম তোমাদের সাথে। কথা দিচ্ছি অন্য একদিন সবার সাথে লাঞ্চে আসবো।
—ঠিক আছে।
মেহের আর আবির বের হয়ে যায়। এইতো সুযোগ। শ্রুতি সাদাফের কাছে যায়।
—তোমাকে আকাশী পরীর মতো লাগছে।
শ্রুতি হেসে উত্তর দেয়,
—পরী দেখেছো কখনও?
—না।
—তবে কিভাবে বলছো পরীর মতো লাগছে?
—এতোদিন পরী কেমন হয় তার বর্ণনা জানতাম কত,শত বইয়ে পড়ছি। কিন্তু আজ সেসব বর্ণনার সাথে কারও মিল পাচ্ছি। আজ কোনো পরী সচক্ষে দেখার সুযোগ হলো এই অধমের।
লজ্জায় শ্রুতির মুখ লাল হয়ে যায়।
—লজ্জা রাঙা মুখটা অধিক প্রিয়।(সাদাফ)
—মানে?
—কিছু না।
শ্রুতির মনে রীতিমতো ভুমিকম্প চলছে। কিভাবে সে সাদাফকে সব জানাবে।
—সাদাফ?
—হুম
—ভালোবাসি?
—মানে?
—তোমাকে ভালোবাসি সাদাফ।
সাদাফ জানতো এরকম কিছু একটা হবেই৷ তাই সে শ্রুতিকে ধরা দিতে চায়নি। চেয়েছিলো ভালোবাসাটা লুকায়িত রাখতে তার মনে। কিন্তু সে পারেনি, শ্রুতির কাছে হেরে গেছে। এখন সে কি করবে? শ্রুতিকে ভালোবাসে কিন্তু প্রকাশ করতে পারবেনা কিছুতেই। একটা মানুষের সাথে সম্পর্কে গেলে সাদাফের বাবা সাদাফকে মেরেই ফেলবে। কারন সাদাফের বাবা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাজা। তাই তো সাদাফ সুযোগ পেয়েছে ভ্যাম্পায়ারদের জগৎ ফেলে মানুষের সাথে পড়ালেখা করতে। অবশ্য এর জন্য সাদাফকে অনেক কাড়খট পোড়াতে হয়। সে গল্পটা না হয় অন্য একদিন বলবো।
মেয়েটা কখনও জানতে চায়নি ওর পরিবারে কে কে আছে,সাদাফ কোথায় থাকে। শ্রুতি কিচ্ছু জানতে চায়নি কখনো। এখন সাদাফ কি করবে? শ্রুতিকে না করে দিলে যদি ও শ্রতিকে হারিয়ে ফেলে?
—সাদাফ আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।
—কিন্তু আমি তোমাকে বাসিনা।
—তুমি মিথ্যা বলছো কেনো সাদাফ? তুমি আমাকে ভালোবাসো সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।
সাদাফ একপ্রকার চেচিয়ে বলে,
—-না তুমি ভুল জানো শ্রুতি। তুমি কিচ্ছু জানো না।
তুমি কখনও জানতে চেয়েছো আমি কে? কি আমার পরিচয়? আমি কোথায় থাকি?
—সাদাফ আমার তোমাকে হলেই হবে।
—না শ্রুতি,তুমি অনেক বেশী আবেগপ্রবণ হয়ে গেছো তাই এমন বলতেছো।
—সাদাফ তুমি আমাকে বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ। তুমি যেই হও না কেনো আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
—শ্রুতি তুমি বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ। এটা হয় না।
—সাদাফ প্লিজ এমন করো না।
—শ্রুতি আমি কোনো মানুষ না।
সাদাফের এমন কথায় সাদাফের দিকে ড্যাপড্যাপ করে থাকিয়ে থাকে শ্রুতি। ও ঠিক শুনেছে তো?
—মানে?
—মানে আমি তোমাদের মতো দেখতে হলেও আমি মানুষ নই।
শ্রুতি তো অবাকের উপরে অবাক হচ্ছে।
—সাদাফ আমি তবুও তোমাকে ভালোবাসি।তুমি যেই হও।
—শ্রুতি একটু বুঝো। আমি তোমাকে ভালোবাসিনা।
—কেনো বাসো না সাদাফ?
শ্রুতি কথাটা বলে আরও কাঁদতে থাকে।
—কারন আমি একজন ভ্যাম্পায়ার।
—না আমি বিশ্বাস করিনা।
—আমি একজন ভ্যাম্পায়ার। তোমার বিশ্বাস অবিশ্বাসে কি যায় আসে।
—সাদাফ আমার যায় আসে। কারণ বাকিটা জীবন আমি তোমার সাথে কাটাতে চাই।
বর্তমান
—তোমাকে আর কতবার বলবো আমি তোমাদের মতো কোনো মানুষ না,আমি একজন ভ্যাম্পায়ার।
শ্রুতিকে কথাটা বলেই পেছন ফিরে হাঁটা ধরলো সাদাফ। সবার আড়ালে সাদাফ তাড়াতাড়ি তার ভেজা চোখগুলো মুছে নিলো। ভ্যাম্পায়ারদের কাঁদতে নেই,তাদের মধ্যে মায়া থাকতে নেই। তারা হয় মায়াহীন,দয়াহীন। তারা খুব কঠিন,তাদের শুধু চাই রক্ত।
শ্রুতিকে ওভাবে কাঁদতে দেখে একপ্রকার দৌড়েই আসে মেহের।
—শ্রুতিপাখি তুই এভাবে কাঁদছিস কেনো?
—–
—শ্রুতি কিছু তো বল? ওহ বুঝতে পেরেছি আমি দেরী করে আসায় রাগ হয়েছে?
——–
—শ্রুতি চুপ করে থাকিস না কি হয়েছে বল আমাকে আর সাদাফ কোথায়?
শ্রুতি কাঁদতে কাঁদতে বলে
—মেহের সাদাফ মানুষ নয় ও নাকি একজন ভ্যাম্পায়ার।
চলবে।
#ভ্যাম্পায়ার_লাভার
পর্বঃ-০৮
লেখনীতেঃ- কাশপিয়া মেহজাবিন রিমশা।
—শ্রুতি চুপ করে থাকিস না কি হয়েছে বল আমাকে আর সাদাফ কোথায়? (মেহের)
শ্রুতি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—মেহের সাদাফ মানুষ নয় ও নাকি একজন ভ্যাম্পায়ার।
শ্রুতির কথা শুনে মেহেরের মনে হচ্ছে ওর মাথায় বড় রকমের বাজ পড়ছে। ভ্যাম্পায়ার কি সত্যিকারে থাকতে পারে? ভ্যাম্পারদের স্থান তো শুধু গল্পে হয়। তাই তো শ্রুতির কথাটা মেহেরের হজম করতে কষ্ট হচ্ছে।
—শ্রুতি তোর কোথাও ভুল হচ্ছে। সত্যিকারে ভ্যাম্পায়ার কিভাবে থাকবে?
শ্রুতি আরও জোরে কেঁদে উঠে,
—তাহলে ও আমাকে যে বললো?
—শ্রুতি হয়তো তোর সাথে প্র্যাঙ্ক করছে।
—না না না(শ্রুতি একপ্রকার চিৎকার দিয়ে বলে)
—শ্রুতি তুই আগে শান্ত হ। তারপর আমাকে সব বল।
তারপর শ্রুতি মেহেরকে সব খুলে বলে। তাদের একসাথে স্বপ্ন দেখা,তাদের স্বপ্নে অভ্র আর সোফিয়া হয়ে আসা, সাদাফের বিপদের আগে সেই বিপদ টা স্বপ্নে দেখা,
হাত লাগার সময় শক খাওয়া,আর প্রপোজ। প্রথম থেকে এই পর্যন্ত মেহেরকে সব জানায় শ্রুতি। মেহেরের এখনও এসব স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। হ্যাঁ ও এগুলো গল্পে পড়েছে কিন্তু, বাস্তবধর্মী এগুলো হতে পারে এরকম কিছুই ও কখনও দেখেনি বা শুনেনি। এসব কি করে হতে পারে।
মেহের সেদিন শ্রুতিকে কোনোমতে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে যায়। পাগলের মতো করতেছে শ্রুতি।
আচ্ছা আমাদের কি কখনো একসাথে চাঁদ দেখা হবে না?
তোর হাত কি স্পর্শ করা হবে না?
তোকে কি বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়ানো হবে না?
পড়ন্ত বিকেলে ল্যামপোস্টের আলোয় তোর সাথে কি হাঁটা হবে না?
তোকে কি কখনো নিজের হাতে খাইয়ে দেওয়া হবে না?
তোর গুছানো সিল্কি চুলগুলো কি কখনো এলোমেলো করে দেওয়া হবে না?
তোর সাথে কি কখনো বসে গল্প জুড়ে দেওয়া হবে না?
তোকে কি আর কখনো বলা হবে না ভালোবাসি?
তোকে কি বলা হবে না,তোর সুখই আসার সুখ?
তোকে কি বলা হবে না,তোর হাসিটায় আমার সব?
তোর বুকে কি কখনো মাথা রাখা হবে না?
ভয় পেলে তোকে কি জড়িয়ে ধরা হবে না?
শুয়ে শুয়ে শ্রুতি এসব ভাবতে থাকে। ওকে যে করেই হোক পারতে হবে। না শ্রুতি না এখন তোকে ভেঙে পড়লে চলবে না।
শ্রুতি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমায় যায়। কাঁদার পর ঘুমটা অনেক ভালো হয়। শ্রুতির মা ওকে অনেক খেতে ডেকেছিলো কিন্তু সে খেতে যায়নি। শ্রুতির মা বুঝে না মেয়েটার মাঝে মাঝে কি হয়।
সাদাফ মাতালের মতো হয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তার কোনোদিকে হুশ নেই। শুধু হেঁটেই যাচ্ছে। পেছন থেকে একটা বাস নিমিষের মধ্যে সাদাফকে মেরে দেয়। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সাদাফের লাশ।
শ্রুতি চিৎকার দিয়ে উঠে
—নাহহহহহহহ
শ্রুতির ঘুম ভেঙে যায়। আবারও দুঃস্বপ্ন। কিন্তু সাদাফ? সাদাফ ঠিক আছে তো? এটা নিশ্চয়ই সত্যি হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখন শ্রুতি কি করবে?
শ্রুতি ফোন নিয়ে দেখে রাত তিনটা।ও তাড়াতাড়ি সাদাফকে কল দেয়। কিন্তু সাদাফের ফোন বন্ধ। ফোনে কোনোমতেই সাদাফকে পাচ্ছে না শ্রুতি। যতবার কল দিচ্ছে ততবারই ফোন সুইসড অফ বলছে।
না শ্রুতির এভাবে বসে থাকলে হবে না। সাদাফের বিপদ ওকে বাঁচাতেই হবে। শ্রুতি কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে বেরিয়ে পড়ে ঘর থেকে। উদ্দেশ্য সাদাফের কাছে যাওয়া। কিন্তু সাদাফ এখন কোথায় কি করছে কিচ্ছুই শ্রুতি জানে না। শ্রুতি পাগলের মতো রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছে। এখনও পর্যন্ত সাদাফের দেখা মেলেনি। তবে কি ওর স্বপ্ন টা সত্যি হয়ে গেলো?
যে মেয়েটা রাতে এই রুম থেকে ওই রুমে যেতে পারতো না ভয়ে সে মেয়েটা আজ ভালোবাসার মানুষকে বাঁচানোর জন্য কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ছুটছে।
চারিদিকে শুনশান নিরবতা। আজ প্রকৃতিও এদের দুই প্রেমিক প্রেমিকার সাথে নেই। কি হতো এসব যদি না হতো?
ওদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো?
শ্রুতি দৌড়াতে দৌড়াতে জঙ্গলের পাশের রাস্তার মধ্যে চলে এসেছে। ওইতো সাদাফ,হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছে। সামনে স্বপ্নে দেখা সেই বাসটির মতো হুবহু একটি বাস সাদাফের দিকে এগিয়ে আসছে।
—সাদাফ সরো ওখান থেকে।
—সাদাফ সরো।
শ্রুতির কোনো কথায় সাদাফের কান দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। বাসটা প্রায় সাদাফের কাছে চলে এসেছে। শ্রুতি দ্রুতবেগে দৌড়াচ্ছে। সাদাফকে জোরে একটা ধাক্কা দেয় শ্রুতি। ছেলেটা পড়ে গেছে রাস্তায়। শ্রুতি মনে মনে খোদাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। বড় বাঁচান বেঁচে গেলো সাদাফ। ওভাবে আচমকা পড়ে যাওয়ায় সাদাফের হুশ আসে। এতোক্ষণ শ্রুতিকে নিয়ে ভাবায় মত্ত ছিলো সে।
—একি শ্রুতি তুমি?(সাদাফের চোখ চলচল করছে)
শ্রুতি আর কিছু না বলে সাদাফকে ঝাপটে ধরে। আর কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। শ্রুতির এমন জড়িয়ে ধরায় সাদাফ অনেক অবাক হয়। সাদাফ ভাবে এই মেয়েটা এখানে কেনো? কিভাবে এসেছে?
আজ যদি শ্রুতির সাদাফের কিছু হয়ে যেতো তো ও নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারতো না।
—কান্না থামাও প্লিজ।
শ্রুতি তো কেঁদেই যাচ্ছে।
—কি হলো কান্না থামাতে বলছি না?
সাদাফের এমন ধমকে শ্রুতি চুপ হয়ে যায়।
সাদাফ শ্রুতির চোখের জল সহ্য করতে পারছে না। শ্রুতির চোখের প্রত্যেকটা পানির ফোঁটা সাদাফের বুকে খুব করে বিধছে। হাজার হউক শ্রুতিকে ভালোবাসে সে। সাদাফ শ্রুতির চোখ মুছে দিতে দিতে বলে,
—কারও চোখের নোনাপানি গুলোয় আমার বুকে রক্তক্ষরণ হয়। সে চাইলেও পারে সেই রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে।
শ্রুতি হা করে তাকিয়ে থাকে সাদাফের দিকে।
—মানে?
—কিছুনা৷ আগে বলো এখানে কিভাবে এসেছো? তোমার বাড়ি থেকে এই জঙ্গল এক কিলোমিটার দূরে।
শ্রুতি নিজেও বুঝতে পারছেনা দৌড়াতে দৌড়াতে এই এক কিলোমিটার পথ কিভাবে চলে আসলো এতো তাড়াতাড়ি। শ্রুতি চারিদিকে তাকাতেই ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এতো রাতে শ্রুতি একা কিভাবে আসলো সেটা ভাবতেই শ্রুতির বুক ধড়াস ধড়াস করে লাফাচ্ছে।
শ্রুতির চেহেরার এই অবস্থা দেখে সাদাফ হেসে ফেলে।
—আবারও স্বপ্ন দেখেছিলে?
সাদাফের কথায় শ্রুতি মুখ তুলে তাকায়। শ্রুতি মাথা নাড়ায় যার অর্থ হ্যাঁ।
শ্রুতি সাদাফের শরীরের ক্ষত স্থানগুলো দেখছে। যে সিল্কি চুলগুলোয় কপাল ঢাকা থাকতো সেই কপালে এখন রক্ত। শ্রুতির খুব কান্না পাচ্ছে। এতো জোরে ধাক্কা না দিলেও পারতো। শ্রুতি ফুফিয়ে কেঁদে উঠে।
সাদাফ বুঝতে পারে শ্রুতি কেনো কাঁদছে। শ্রুতির চোখের জল দেখে সত্যিই সাদাফের বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সাদাফ শ্রুতিকে বলে,
—একটা ম্যাজিক দেখবে?
ম্যাজিকের কথা শুনে শ্রুতির কান্না বন্ধ হয়ে যায়। শ্রুতি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।
সাদাফ একটা হাসি দিয়ে বলে দেখো,
তখন সাদাফ ওর হাত দিয়ে ওর শরীরের ক্ষতস্থানে হাত লাগায়। হাত লাগার সাথে সাথে ক্ষতস্থান গুলো সেরে যায়। একদম আগের মতো সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে যায় সাদাফ। শ্রুতি এবার বুঝতে পারে ওইদিন ওর হাতে পোড়া দাগটা কিভাবে সেরে যায়। এটা ভেবে শ্রুতি মুচকি হাসে। শ্রুতির মুখে হাসি দেখে যেন সাদাফ প্রাণ ফিরে পায়। শ্রুতিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাদাফ। এতে শ্রুতি অবাক হলেও মনে খুব শান্তি লাগছে। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর হঠাৎ কি মনে করে সাদাফ শ্রুতিকে ছেড়ে দেয়। শ্রুতি কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতো হা করে থাকে। তখন পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সাদাফ বলে,
—চলো তোমাকে বাড়ি দিযে আসি।
—না সাদাফ আজ তোমার সাথেই থাকবো।
—আমার সাথে কিভাবে থাকবে। তাছাড়া এখন ক’টা বাজে খেয়াল আছে? ০৪ঃ৪৮ একটু পর আলো ফোঁটে যাবে। তোমাকে বাসায় দেখতে না পেয়ে তোমার বাসার সবাই তোমকে নিয়ে চিন্তা করবে। সো আর কোনো কথা না।
সাদাফ হাঁটতে লাগলে শ্রুতি শক্ত করে সাদাফের হাত ধরে সাদাফকে দাঁড় করিয়ে দেয়।
—কি হলো এভাবে দাঁড় করালে যে?
—সাদাফ তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
এতে সাদাফ একটা হাসি দিয়ে বলে,
— একটা জিনিস দেখবে?
শ্রুতি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।
সাদাফ শ্রুতিকে নিয়ে জঙ্গলের অনেক গভীরে যায়। গা থমথমে পরিবেশ দেখে শ্রুতির ভয় হলেও সাদাফ ওর পাশে আছে ওর কিচ্ছু হবে না। এই ভেবে মনে মনে শান্ত হয়।
—শ্রুতি আমার রুপ দেখবে?
—হুমম।
—ভয় পাবে না তো?
—ভয় পেলে এতক্ষণ থাকতাম নাকি।
সাদাফ জানে শ্রুতি কি পরিমানের ভিতু একটা মেয়ে। সাদাফের সামনে নিজেকে সাহসী প্রমাণ করার জন্য মিথ্যে বলছে।
সাদাফের রুপ বদলাতে শুরু করে। চোখদুটো নীল হয়ে যায়। চোয়াল থেকে দুই পাশের দুইটা সুঁচালো দাঁত বের হয়। হাতের নকগুলোও বাড়তে থাকে। কালো কুচকুচে সেই নক। কি বিভৎস সেই চেহেরা।
সাদাফকে এই অবস্থায় দেখে শ্রুতির প্রাণ কই মাছের মতো লাফাচ্ছে। যেন এক্ষুনি টুপ করে বেড়িয়ে আসবে। শ্রুতি তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে সাদাফকে জড়িয়ে ধরে। শ্রুতির কাছে সাদাফের রুপকে ভয় লাগলেও সাদাফের মনকে একদমই ভয় করছে না। তাই তো এই অবস্থায়ও শ্রুতি সাদাফকে জড়িয়ে ধরে। এতে সাদাফ অনেক অবাক হয়। সাদাফ বুঝে যায় শ্রুতি ওকে ঠিক কতটা ভালেবাসে।
সাদাফ এবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। শ্রুতিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দেখে মেয়েটা এখনও চোখ বুঁজে আছে। এই মুহুর্তে শ্রুতির চেহেরাটা একদম বাচ্চাদের মতো হয়ে যায়। সাদাফের অনেক হাসি পাচ্ছে ওকে এভাবে দেখে। কোনোমতে হাসি আটকে গম্ভীর গলায় বলে,
—শ্রুতি চোখ খুলো।
শ্রুতি প্রথমে এক চোখ খুলে সাদাফকে দেখে সব ঠিকটাক দেখার পর আরেক চোখ ও খুলে। শ্রুতিকে এভাবে দেখার পর সাদাফ আর হাসি আটকে রাখতে পারছে না। অনেকক্ষণ হাসিটা চেপে রেখেছে সে। সাদাফ হাসতে হাসতে মাঠিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
সাদাফকে এভাবে হাসতে দেখে শ্রুতির খুব ভালো লাগছে। যে কোনো মেয়ে এই গজ দাঁতের হাসির প্রেমে পড়তে বাধ্য।
সাদাফ হাসি থামিয়ে আবারও গম্ভীর ভাব নিয়ে বলে
—এইভার বিশ্বাস হলো আমি ভ্যাম্পায়ার?
চলবে…