#ভ্যাম্পায়ার_লাভার,পর্বঃ-১৩,১৪
লেখনীতেঃ- কাশপিয়া মেহজাবিন রিমশা।
পর্বঃ-১৩
অজানা আশঙ্কায় সাদাফের মন বলছে সে ভ্যাম্পায়ারটা শ্রুতি নয় তো? দূরর কি সব কি।
এবার সাদাফের ধুকপুকানিটা আরও বেড়ে চলেছে। শ্রুতি কোথায়?
সাদাফ দূর থেকে দেখতে পায় সামনে আরও একটি মেয়ের লাশ। সাদাফ ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যায়। মন হাজারো কুকথা বলছে। এই শহরে কে এই ভ্যাম্পায়ার? যার একজন মানুষের রক্তেও স্বাদ মিটছেনা?
সাদাফ লাশটির কাছে পৌঁছে যায়। লাশটিকে খুব চেনা চেনা লাগছে সাদাফের। সাদাফ লাশটির আরও কাছে যায় এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মেয়েটার গায়ে শ্রুতির পড়া সেই জামা। সাদাফের পুরো শরীর কম্পন শুরু করে দিয়েছে। সাদাফ মনে মনে খোদাকে ডাকছে এটা যেনো শ্রুতি না হয়। সাদাফ মেয়েটিকে উল্টিয়ে দেখে এটা শ্রুতিই। সাদাফের মনে হচ্ছে চারিদিকে খুব ভয়ংকর ভাবে ভুমিকম্প হচ্ছে।
—না না এটা হতে পারে না,কিছুতেই না।
সাদাফ শ্রুতির ঘাড় দেখে, না ঘাড়ে কোনো দাগ নেই। সাদাফ শ্রুতির নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখে এখনও নিঃশ্বাস আছে।
সাদাফ বড় করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে,শ্রুতিকে কোলে করে তার বাসায় নিয়ে যায়।
এদিকে মেহেরের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। মেহের হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনতে পায়। মেহের আল্লাহকে ডাকছে। কিন্তু দরজা খুলছে না।
অন্যদিকে সাদাফ শ্রুতিকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে সেই কখন থেকে।মেহের দরজা খুলছে না।
—মেহের, মেহের, মেহের।
মেহের সাদাফের কন্ঠ শুনে প্রাণ ফিরে পায়। তার মানে এতক্ষণ দরজার কড়া সাদাফই নাড়ছিলো। মেহের গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
—শ্রুতিইইইইইইইইইই
—চুপ,আস্তে আস্তে কেউ শুনতে পারলে সমস্যা হবে। চিল্লানোর কিছু নেই।
—শ্রুতির মুখে রক্ত কেনো? (কেঁদে কেঁদে বললো মেহের)
—সে-তো আমারও অজানা। শ্রুতির জ্ঞান আসুক সব জানা যাবে।
মেহের কেঁদেই যাচ্ছে। শ্রুতির কি হলো? শ্রুতির কিছু হলে ও তো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।
সাদাফ শ্রুতিকে বিছানায় রাখে। মেহের তাড়াতাড়ি পানি এতে শ্রুতির মুখে কয়েক ছিটা পানি দিতেই শ্রুতির জ্ঞান ফিরে।
—আমি আগের মতো হয়ে যেতে চাই প্লিজ তোমরা আমাকে আবার মানুষ করে দাও। আমি আর ওসব নোংরা জিনিস খেতে পারবনা।
(শ্রুতির জ্ঞান ফিরে আসতেই কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলে)
— কি বলছিস তুই এসব? তোকে মানুষ বানিয়ে দিবো মানে? তুই কি মানুষ না?
—মেহের শান্ত হও। ওকে আগে একটু রেস্ট নিতে দাও। পরে নাহয় সব জানবো। (বলল সাদাফ)
শ্রুতিকে মেহের খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। জ্ঞান আসার পর থেকে বলছে আমাকে আগের মতো করে দাও, আমাকে আগের মতো করে দাও। মেহের বুঝতে পারছে না শ্রুতি এসব কেনো বলছে। ওইদিকে সাদাফ শ্রুতির থেকে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করতেও দিলো না।
রাতের খাবার সেরে সাদাফ আর মেহের ঘুমোতে যায়।
—মেহের?
—হুম সাদাফ বলো।
—শ্রুতিকে জাগাইয়ো না। আর রাতে কোনো সমস্যা হলে আমাকে ডেকে দিও। শ্রুতির খেয়াল রাখিও।
—ঠিক আছে শুভ রাত্রি।
সাদাফ নিজের রুমে চলে যায় আর মেহের শ্রুতির কাছে।
সাদাফের ঘুম হচ্ছে না। সারাক্ষণ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে এসব কেনো হলো?আর কি হলো?
হঠাৎ চারিদিকে কম্পন শুরু হয়। শো শো করে বাতাস হচ্ছে। লাইট একবার জ্বলছে আর নিভছে। আশেপাশের সব জিনিস পড়ে ভেঙে যাচ্ছে। সাদাফের ভয় লাগছে শ্রুতিরা ঠিক আছে তো?
সাদাফ শ্রুতিদের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পড়ে যায়। কোনোমতে দাড়াতে পারছে। এতো ভয়ংকর বাতাস বইতে পারে তা সাদাফ আগে জানতো না। সাদাফ কোনোমতে সাঁতরে সাঁতরে জিনিসপত্র ধরে শ্রুতিদের রুমের দিকে যায়। ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।
—শ্রুতি দরজা খুলো।
—সাদাফ বাঁচাও আমাদের।
ভেতর থেকে মেহেরের চিৎকার শুনতে পায় সাদাফ।
—মেহের শ্রুতি কই? তোমরা ঠিক আছো তো?
(সাদাফের কান্না চলে আসছে, কি হয়ে গেলো এখন)
—সাদাফ আমরা ঠিক আছি। বাতাস আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্লিজ আমাদের বাঁচাও।
(চিল্লিয়ে মেহের বলে উঠে)
(ওরা ঠিক আছে শুনে সাদাফ কিছুটা হলেও শান্তি হয়)
—মেহের, মেহের তুমি ভারী কিছু ধরে দরজার পাশে আসো আর দরজা খুলো।
—সাদাফ আমি পারছিনা।
—মেহের চেষ্টা করো।
ওইদিকে শ্রুতি খাটের পায়া ধরে বসে আছে। ভয়ে আর বাতাসে ঠকঠক করে কাঁপছে।
মেহের দরজার পাশের আলমারির হেন্ডেল ধরে দরজাটা খুলে দিতেই সাদফ হুরমুরিয়ে ভেতরে ঢোকে পড়ে যায়।
শ্রুতি সাদাফকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে আরও জোড়ে কান্না করে দেয়। সাদাফের কাছে আসার চেষ্টা করতেই সাদাফ হাওয়ায় ভেসে দেওয়ালের সাথে খুব জোড়ে ধ্বাক্কা খায় । মেহের ও শ্রুতি দুজনে একত্রে চিৎকার দিয়ে উঠে। সাদাফের পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়ে গেছে। সাদাফ অবচেতন হয়ে পড়ে আছে। বার বার কিছু একটা সাদাফকে আঘাত করছে। এই নিয়ম আরও কিছুক্ষণ চললে সাদাফের মৃত্যু নিশ্চিত হবে।
শ্রুতি ও মেহের বুঝতে পারে অশুভ অদৃশ্য সেই শক্তিটারই কাজ এসব। দুজনেই চিন্তিত, হতাশ,অসহায় আর নিরুপায়। কিভাবে এর থেকে সাদাফকে বাঁচাবে ওরা।
তখনই মেহের বলে উঠে
—শ্রুতি শোনতে পাচ্ছিস?
(জোড়ে বাতাস হওয়ার জন্য আওয়াজ গুলো মিলিয়ে যাচ্ছে তাই মেহের জোড়ে জোড়ে বলছে)
—হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। মেহের আমার ভয় হচ্ছে সাদাফকে তো ছুঁতে পারছিনা।
ওইদিকে সাদাফ একপাশ থেকে অন্যপাশের দেয়ালের সাথে ধ্বাক্কা খেয়েই যাচ্ছে। মাথে ফেটে রক্তে পুরো শরীর লাল হয়ে গেছে সাদাফের।
শ্রুতি এসব দেখে আরও জোড়ে কাঁদতে থাকে।
—শ্রুতি তুই ওই পাথরটা বের করে তাড়াতাড়ি সানজানা’কে ডাক।
শ্রুতি তাড়াতাড়ি পাথরটা খুঁজে দেখে। কিন্তু হায়,পাথরটা কই গেলো। শ্রুতি নিজের প্যান্টের পকেটেই রেখেছিলো সেটা। কিন্তু এখন নিখোঁজ। তুফানটাও আরও প্রবলবেগে বেড়েই যাচ্ছে। আজ নিশ্চিত সব শেষ। শ্রুতির মাথা ঘুরছে।
—কি হলো শ্রুতি শুনতে পারছিস না? তাড়াতাড়ি সানজানা’কে ডাক।
শ্রুতি কেঁদে কেঁদে বলে,
—মেহের রে পাথরটা আমি খুঁজে পাচ্ছি না।
শ্রুতির কথা শুনে মেহের ধুম করে বসে পড়ে। তবে সব শেষ আজ। আর কোনো উপায় নেই। সাদাফকে আর বাঁচানো যাবে না।
শ্রুতি দমে যাওয়ার মেয়ে নয়। সে আজ তার ভালোবাসাকে বাঁচাবেই যে করেই হোক। জ্বলা নিভার এটুকু আলোতেই শ্রুতি কোনোমতে রুম থেকে বের হয়। মেহের সেটা দেখতে পেয়ে বলে,
—শ্রুতি তুই আবার কই যাচ্ছিস?
শ্রুতি মেহেরের কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
শ্রুতি ডাইনিং রুমে যায় সেখানে সবখানে খুঁজেও পাথরটা খুঁজে পেলো না। শ্রুতি আরও খুঁজতে থাকে। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শ্রুতি সোফার নিচে পাথরটা দেখতে পায়। শ্রুতি তাড়াতাড়ি সেটা নেয় আর বলে,
—সানজানা, সানজানা, সানজানা দয়া করে সাহায্য করুন।
কিছুক্ষণ পর…..
আস্তে আস্তে সব থেমে যায়। মেহেরের চিৎকার শুনে শ্রুতি দৌড়ে সাদাফের কাছে যায়। তখনই কারোর মিষ্টি কন্ঠ শুনতে পায় শ্রুতি আর মেহের।
—শ্রুতি ভয় পেয়ো না। ও তোমাদের ক্ষতি করার জন্য সব করবে। আমি কোনোমতে ওকে থামিয়েছি। তোমরা সাবধানে থেকো আর সাদাফের মাথায় হাত বুলিয়ে দিও। বিদায়।
শ্রুতির এখন সানজানা’কে পুরোপুরি বিশ্বাস হচ্ছে।
—শ্রুতি কি ভাবছিস? সানজানা যা বললো তা কর জলদি।
শ্রুতি তাড়াতাড়ি গিয়ে সাদাফোর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
সাথে সাথে সাদাফের সব ক্ষত সেরে যায়। এতে শ্রুতি অবাক হয়না। কিন্তু মেহের চরম বিস্ময়ের পর্যায়ে পৌছে যায়। এসব কি করে সম্ভব।
সাদাফ পিটপিট করে চোখ খুলে….
চলবে…
#ভ্যাম্পায়ার_লাভার
পর্বঃ-১৪
লেখনীতেঃ- কাশপিয়া মেহজাবিন রিমশা।
সাথে সাথে সাদাফের সব ক্ষত সেরে যায়। এতে শ্রুতি অবাক হয়না। কিন্তু মেহের চরম বিস্ময়ের পর্যায়ে পৌছে যায়। এসব কি করে সম্ভব।
সাদাফ পিটপিট করে চোখ খুলে। শ্রুতিকে দেখা মাত্রই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। সাদাফের সাথে শ্রুতি,মেহের দুজনেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।
সাদাফ শ্রুতিকে ছাড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—শ্রুতি এসব কি হচ্ছে আমাদের সাথে? উপরওয়ালার এ কেমন বিচার আমাদের উপর? আজ যদি তোমাদের কিছু হয়ে যেতো তো….
কথাটা বলেই আরও জোরে কেঁদে উঠে সাদাফ। শ্রুতি সাদাফকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলে,
—তুমি নিজেই মৃত্যুর পথে ছিলে। অশুভ অদৃশ্য শক্তিটা তোমারই ক্ষতি করছিলো। তারপরেও তুমি আমাদের নিয়ে ভাবছো?ভয় পেয়ো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সবাই কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে। কেউ কিছু বলছে না।
একটু পর মেহের বলে উঠলো,
—আমার মন বলছিলো এরকম কিছু একটা হবে। জানিস একবার একটা মুভিতে দেখেছিলাম নায়ক,নায়িকা দুজনে আগের জন্মে রাজা আর রাজকন্যা ছিলো। তারা একে অপরকে খুব ভালোবাসতো। রাজকন্যা ছিলো অনেক অদৃশ্য শক্তির অধিকারী। যা সে ছাড়া আর কেউ জানতো না। এমনকি তার ভালোবাসার মানুষও না।রাজকন্যা যা বলতো তাই হতো। তা নিয়ে লোকে অনেক কানাঘুষাও করতো। কিন্তু রাজকন্যার এতে কিছু যায় আসতো না। আর তাদের আগের জন্মে রাজকন্যার বড় বোনের স্বামী রাজকন্যাকে প্রচুর পছন্দ করতো। রাজকন্যার দিকে লোভতুর দৃষ্টিতে তাকাতো। তারপর ওই বজ্জাত লোকটা সয়তানের পূঁজো করতে শুরু করে এবং পরবর্তীতে সে হয়ে উঠে ভয়ংকর দানব। গল্পের নায়ককে আগের জন্মে খুব নৃশংস ভাবে হত্যা করে সেই দানবটি ওরফে রাজকন্যার দুলাভাই। এবং সে রাজকন্যার সঙ্গম চাইলে রাজকন্যা তার পেটে চুরি ডুকিয়ে দেয় এবং নিজে আত্মহত্যা করে। ওইদিকে দানবটি মৃত্যুর যন্ত্রণায় চটপট করতে করতে বলে আমি আবার ফিরে আসবো,তোদের আবার জন্ম হবে। যখন তোদের মাঝে আবারও ভালোবাসা জন্ম নিবে তখন আমার উদয় হবে। পরের জন্মে তুই হবি শুধু আমার। আমি তোর ভালোবাসাকে তোর সামনে আবারও হত্যা করবো। এই বলে সে হাসতে হাসতে দানবটি মারা যায়। প্রায় ১০০ বছর পর আবার সেই রাজা আর রাজকন্যার জন্ম হয়। তবে তারা এখন রাজা আর রাজকন্যা নয়,সাধারণ মানুষ হিসেবেই জন্মে। তারা একই কলেজে পড়তো। একে অপরের সাথে ভীষণ ঝগড়া করতো৷ পরে আস্তে আস্তে একে অপরকে ভীষন ভালোবেসে ফেলে দুজনে। সেই সাথে দানবটি আবার বেঁচে উঠে। এতোদিন সে খারাপ আত্মা হয়ে ছিলো পৃথিবীতে। এখন সে একজন সুদর্শন যুবককে খুন করে তার শরীরে দানবটির আত্মা ডুকে। সে সহজেই নায়ক আর নায়িকার উপর নজর রাখতে পারতো। সে নানানভাবে নায়কের ক্ষতি করতো। নায়ক নায়িকা দুজনে অদৃশ্য, অদ্ভুদ আর বিদঘুটে আওয়াজ শুনতো। যে আওয়াজ টা তাদের দুজনকে বার বার হুমকি দিতো। বিশেষ করে নায়ককে। পরে তারা তাদের এক বন্ধুর সাহায্যে এক তান্ত্রিকের কাছে যায়। তান্ত্রিক সব শুনে ওদের দুজনকে দুইটা তাবিজ দেয় এবং বলে এ তাবিজটা যতদিন থাকবে ততদিন কোনো অশুভ শক্তি ওদের ক্ষতি করতে পারবে না। যতদিন তাবিজ ছিলো ততদিন ওরা সুরক্ষিত ছিলো। সাময়ের সাথে সাথে বাড়ে তাদের ভালোবাসার পাল্লা। কেউ কাউকে মুখ ফুঁটে বলতে পারছেনা ভালোবাসি। একদিন নায়কের এক বন্ধু নায়কের সাথে কথার তালে তালে তাবিজটি খুলে ফেলে, যা নায়ক ঘুনাক্ষরেও ঠের পেলো না। আর বন্ধুটি ছিলো সেই দানব। আবার তাদের ক্ষতি করতে শুরু করে সেই দানব। তারা আবার তান্ত্রিকের কাছে যায়। তান্ত্রিক ওদের ১০০ বছরের পুরনো একটা বউ হাতে দিয়ে বলে এতে তোমাদের সমস্যার সব সমাধান আছে। যাও কাজে নেমে পড়ো নয়তো অশুভ শক্তি বেঁচে যাবে হেরে যাবে ভালোবাসা।
ভালোবাসার কথা শুনে নায়ক নায়িকা দুজনে চমকায়। তান্ত্রিক কি করে জানলো এসব?
তখন তান্ত্রিক হেসে বলে আমি সবার মনের খবর পড়তে পারি। তারপর তারা দুজনে বইটি পড়ে এবং দেখে সেখানে একটা গুহার সম্পর্কে বলা আছে। যেখানে এসব অশুভ সয়তানরা থাকে। নায়ক আর নায়িকা যথেষ্ট সাহস আর সব যাবতীয় জিনিস নিয়ে যায় সেই গুহায়। গুহাটায় থাকতো সেই দানবটি। দানবটির আঘাতে নায়িকা সিলিংয়ের সাথে ধ্বাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। নায়ক অনেক চেষ্টা করেও নায়িকার জ্ঞান ফেরাতে সক্ষম হয়নি।অনেক যুদ্ধের পর দানবটির মৃত্যু হয়। আর জয় হয় ভালোবাসার।
এতক্ষণ কাহিনীটা মন দিয়ে শুনছিলো সাদাফ আর শ্রুতি। মেহের আবার বলে উঠে,
—কাহিনীটা তোদের বললাম এইজন্যই যে এটার সাথে তোদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো প্রায়ই মিলে। আমি ওই চিন্তা থেকে বললাম আজ রাতে এরকম কিছু হতে পারে আর হলও তাই। আমাদের উচিৎ কোনো তান্ত্রিকের কাছে যাওয়া।
শ্রুতি বললো,
—যাওয়া যায় কিন্তু আগের জন্ম, পরের জন্ম এ ব্যাপারগুলো তো কাল্পনিক। বাস্তবে তো এমন হয় না।
—মানলাম এরকম হয় না। কিন্তু, এই টপিকটা ছাড়া বাকি সব তোদের সাথে মিলে না?
—হ্যাঁ মিলে।
—তাহলে যোগাযোগ কর কোনো বড় তান্ত্রিকের।
—সাদাফ তোমার চেনাজানা কেউ আছে?(শ্রুতি)
সাদাফ বললো,
—তার আগে বলো তখন ওইভাবে হুট করে কই চলে গিয়েছিলে?
শ্রুতি সাদাফের কথায় অবাক হয়। শ্রুতি ভাবছে সাদাফকে বলবে না-কি না। অবশ্য এসব সাদাফের থেকে লুকিয়ে রাখার কোনো প্রশ্নই আসে না।
—সাদাফ আমিও একজন ভ্যাম্পায়ার। (বলল শ্রুতি)
সাদাফ মনে মনে এরকম কিছু একটা আঁচ করেছিলো। ওইদিকে মেহেরের মনে হচ্ছে ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড একজন ভ্যাম্পায়ার? হাউ? হয়েন? হয়্যার? মেহেরের ভয় লাগছে তার পাশে দুজন আস্ত ভ্যাম্পায়ার বসে আছে।
— কি যা তা বলছো শ্রুতি? (সাদাফ)
—সাদাফ আমি মিথ্যা কিছু বলছিনা।
—কিভাবে হলো এসব?
শ্রুতি মেহেরের দিকে তাকায়। দেখে মেয়েটা ভয়ে কাঁপছে। শ্রুতি মেহেরের হাতের উপর হাত রাখতেই মেহের আঁতকে উঠে। আর বলে,
—ভয় পাস না মেহুপাখি।
মেহের কিছুটা আস্বস্ত হয়।
তারপর শ্রুতি ওদের দুজনকে সব খুলে বলে। সাদাফ খুশির চাইতে চিন্তা করছে বেশি। একটা জলজ্যান্ত মানুষ কি করে ভ্যাম্পায়ার হয়ে যেতে পারে।
সাদাফকে চিন্তা করতে দেখে শ্রুতি বলে,
— সাদাফ ভ্যাম্পায়ারদের রক্তের নেশাটা কতটা ভয়ংকর আমি বুঝতে পেরেছি। তখন আমাদের কোনো হুশই থাকে না। সাদাফ আমি একবারেই হাঁপিয়ে উঠেছি। আমাদের তৃষ্ণা মেঠানোর জন্য কতশত অসহায় প্রাণের আলো নিভে যায়। আর মানুষ রুপে ফিরে আসার পর ওগুলো মনে পড়লে আমার বমি পায়। মানুষেন রক্ত আবার খাওয়ার জিনিস হয়? ভ্যাম্পায়াররা অন্য কিছু খেতে পারতো না?
সাদাফ কোনো উত্তর দিলো না। পাশ থেকে মেহের শ্রুতির কথা শুনে গরগর করে বমি করে দিলো। শ্রুতি তাড়াতাড়ি মেহেরকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে ফ্রেশ করিয়ে দেয়। আর শুইয়ে দেয়। সকাল হতে আরও দুই ঘন্টা বাকি।
বেচারি মেহের ওদের কথাগুলো হজম করতে পারলো না। শ্রুতি মেহেরকে শুইয়ে সাদাফের কাছে যায়।
—সাদাফ?
—হুম, মেহেরের কি অবস্থা?
—ঘুমোচ্ছে।
সাদাফ আর কিছু বললো না। শ্রুতি আবার বলে উঠলো,
—সাদাফ একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
—করো।
—তুমি তো আগে থেকেই ভ্যাম্পায়ার ছিলে। যতদূর জানি তারা মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তো দূর ভালো করে মিশেও না। আর তুমি সে জায়গায় আমার কোনো ক্ষতি করলে না যে?
— তোমাকে কে বললো ভ্যাম্পায়াররা মানুষের সাথে মিশে না?
—মুভিতে দেখেছি।
তারপর সাদাফ বলে,
—জানো শ্রুতি আমার রুপটা দেখতে অনেকটা কোরিয়ান হিরোদের মতো বলে মেয়েরা সহজে আমার সৌন্দর্যের কাছে পটে যেতো। তাদের রক্ত খেয়ে আমি আমার মনের পিপাসা মেটাতাম। তুমিও তাদের মতোই আমার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলে। আমিও ঠিক করে নিলাম তুমিই আমার নেক্সট ঠার্গেট। তোমাকে কিছুদিন ফলো করি। আর সুযোগ বুঝে মেহেরের থেকে তোমার ডিটেইলস জেনে নিই। একদি…
শ্রুতি সাদাফকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
—কই এই সম্পর্কে মেহের তো আমাকে কিছু বলে নি।
—আরেহ বলবে কোথা থেকে। কলেজে কত ছেলেই তো ওর সাথে কথা বলে, আমি কৌশলে তোমার খবর জেনে নিয়েছিলাম বোকা মেয়েটা বুঝতেই পারেনি।
—তারপর?
—তারপর একদিন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ চলে আসে। চুপি চুপি তোমার বাসায় যায়। তোমার রক্ত খেতে। তোমার কাছে যেতেই আমার অন্যরকম ভালো লাগা শুরু হয়। মনে অনেক প্রশান্তির বাতাস বয়ে যায়। যা এর আমি কখনও অনুভব করিনি। তাও তোমার ঘাড়ের কাছে আমি আমার দাঁত দুটো বসাতে যাই,তাও পারলাম না। তখন থেকেই তোমার প্রতি ভালোলাগা কাজ করতো।
শ্রুতি এবার বুঝতে পারে সেদিন রাত্রে কারও নিঃশ্বাসের শব্দ শুনেছিলো সে হলো সাদাফ।
সাদাফ কথা শেষ করে শ্রুতির দিকে তাকিয়ে দেখে,
শ্রুতি কাঁদছে।
—আরে পাগলী কাঁদছো কেনো?
—তোমাকে ভালোবাসি বলে।
সাদাফ উঠে চলে যাওয়ার সময় শ্রুতি সাদাফের হাত ধরে সাদাফকে বসিয়ে ফেলে। আর সাদাফকে হুট করে জড়িয়ে ধরে। সাদাফ মুচকি হেসে শ্রুতিকে জড়িয়ে ধরে। এখন শ্রুতিকে কাছে পেতে তার আর কোনো ভয় নেই।
—বাহ। আমার থেকে লুকিয়ে দুজনের ভালোবাসা বাসি হচ্ছে?(ভ্রুজোড়া কুঁচকিয়ে বললো মেহের)
মেহেরের কথা শুনে শ্রুতি তাড়াতাড়ি সাদাফকে ছেড়ে দেয়। আর সাদাফ হেসে উঠে।
—ছিঃ কি নির্লজ্জ। কিভাবে হাসছে দেখো।
—কি বিরবির করছো?(সাদাফ)
—ক-কই কিছু না। মেহের শুন না আমি সেদিন…
—হয়েছে হয়েছো আর বলতে হবে না আমি সব শুনেছি।(হাসতে হাসতে বলে মেহের)
——-
“পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দময় জিনিসগুলির জন্যে কিন্তু টাকা লাগে না। বিনামুল্যে পাওয়া যায়।যেমন জোছনা, বর্ষার দিনের বৃষ্টি, মানুষের ভালবাসা”
কথাটি বলেছিলো হুমায়ুন আহমেদ। আসলেই তাই এগুলো অমূল্য সম্পদ।
——
আজকের বাংলাদেশের সব চ্যানেলের হেডলাইন জুড়ে একটিই খবর। মাহমুদ কলোনির পাশে একজন মহিলার লাশ পাওয়া গেছে। ঘাড়ে সেই রহস্যময়ী দুইটা ফুঁটো। কে বা কারা খুন করলো তা এখনও অজানা। তারা অত্যন্ত বুদ্ধির সহিত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ডিলিট করে দিয়ে।তাই পুলিশরা এ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। খুব শীঘ্রই পুলিশ তাদের খুঁজে বের করবে বলে তাদের ধারনা।
চলবে