#ভ্যাম্পায়ার_লাভার,পর্বঃ-১৮
লেখনীতেঃ- কাশপিয়া মেহজাবিন রিমশা।
আশেপাশে নেই কোনো ডাক্তার, সেই কোনো নার্স, নেই কোনো মানুষ।
হঠাৎ সাদাফ খেয়াল করলো হাসপাতালটা কাঁপছে। ভীষণরকমের কাঁপছে। সাদাফ এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছে না। চারিদিকে শাঁ শাঁ বাতাস বইছে। হাসপাতালের দেওয়াল খসে পড়ে যাচ্ছে। চারিদিকের সব জিনিস এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু উপরে উঠে আবার পড়ে যাচ্ছে। হুবহু সেইরাতের মতো। আশ্চর্য বিষয় এতো প্রলয়ের মাঝেও শ্রুতি,আবির আর মেহের বেঘুরে ঘুমাচ্ছে।
সাদাফ শ্রুতি,আবির ও মেহেরকে অনেক ডেকেছে। চারিদিকে এতো কাঁপাকাঁপি, এতো ছড়াছড়ি তারপরেও ওদের ঘুম ভাঙার লেশমাত্র নেই।
সাদাফ মনে মনে ভাবছে এটা কোন ভৌতিক জায়গায় ওরা এসে পড়লো। তান্ত্রিকের কাছে যাওয়ার পথে কাছাকাছি কোনও হাসপাতাল তো ওদের চোখে পড়েনি। আর যে পথে এক্সিডেন্ট হয়েছে সেদিকে তো মানুষের যাতায়াত নেই। গাড়ি তো পুরোপুরি ঠিক ছিলো। এক্সিডেন্ট হওয়ার কোনো কথাই আসে না।
এখন এই বিপদ থেকে একমাত্র সানজানা নামক আত্মাটি বাঁচাতে পারে। তাই সাদাফ, আবির আর মেহেরকে ডেকে বৃথা চেষ্টা না করে সেই তখন থেকে শ্রুতিকে ডেকে চলেছে।
এদিকে শাঁ শাঁ বাতাসের সাথে ধুলোবালিও উড়ে বেড়াচ্ছে। চোখ মেলে তাকাতে ভিষণ বেগ পেতে হচ্ছে সাদাফকে। সাদাফ এসবের মাঝেও বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতে থাকে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আলো চলে গেছে, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সাদাফ হাতড়ে হাতড়ে কোনো একটা দরজা আবিষ্কার করে কিন্তু কিছুতেই সেটা খুলতে পারে না। সাদাফ এখন বুঝতে পারছে এসব কার কাজ। কে করছে এসব।
সাদাফ আবার হাতড়ে হাতড়ে শ্রুতির কাছে যায়। শ্রুতিকে ডাকছে কিন্তু শ্রুতির ঘুম ভাঙছেনা। সাদাফ শ্রুতির গা ঝাকিয়ে ডাকতে লাগলো তাও শ্রুতির ঘুম ভাঙার কোনো নাম নিশানা নাই। পাথরটা শ্রুতির কাছেই আছে,ওর কোমরে গুঁজা। সাদাফ শ্রুতির কোমরে হাত দিয়ে ওই পাথরটা নিতে ইতস্তত বোধ করছে।
সাদাফ শ্রুতিকে ছেড়ে হাতড়ে হাতড়ে মেহেরের বেডের পাশে যায়। মেহেরের বেডের পাশ থেকে আবিরের বেডের কাছে যায়। আবিরকে গা ঝাঁকিয়ে ডাকছে সাদাফ। কিছুতেই আবিরকে জাগাতে পারছে না। তুফানের সাথে সাদাফ পেরে উঠছেনা। তাল সামলাতে না পেরে কয়েকবার হুমড়ি খেয়েও পড়েছে। এই বিপদে কাউকেই সাদাফ পাশে পাচ্ছে না। তার চেয়ে কী হতো যদি সেদিন রাতেই মরে যেতো। সাদাফ আর ভাবতে পারছেনা। চোখ দু’টো জলে চিকচিক করছে। সাদাফ নিজেকে স্বাভাবিক করে আবার আবিরকে ডাকতে থাকে। সাদাফ খেয়াল করলো আবিরের হাত পা নড়ছে। তার মানে আবিরের জ্ঞান ফিরে আসছে। সাদাফ আবিরকে ডেকেই চলেছে।
কিছুক্ষণ পর আবির জেগে যায়। আচমকা তুফানের প্রবল সইতে না পেরে আবির ধুম করে উঠে বসে। যা অন্ধকারেও সাদাফ বেশ বুঝতে পারে। আবির ভয়ে সাদাফে হাত খামচে ধরে। আর জিজ্ঞেস করে ওরা কোথায় আর কি হচ্ছে। সাদাফের জ্ঞান আসার পর থেকে যা যা দেখেছে সবই আবিরকে খুলে বলে। আবির সব শুনে সাদাফকে তাড়া দেয় শ্রুতিকে তোলার জন্য। সাদাফ বেডগুলো হাতড়ে হাতড়ে শ্রুতির বেডের কাছে যায়। অন্যদিকে আবির মেহেরকে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু দুই বান্ধবীর জ্ঞান আসার কোনো নাম নেই।
অাবির ধৈর্যহারা হয়ে সাদাফকে বলে,
—সাদাফ ওদের ডেকে আর বৃথা চেষ্টা করিস না। তার চেয়ে বরং চল এখান থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তা আছে নাকি দেখি।
সাদাফ বলল,
— দোস্ত আমি সব জায়গা দেখেছি। বাতাস শুরু হওয়ার আগে সবই স্বাভাবিক ছিলো। তখন আমি এখানে একটা মাত্রই দরজা দেখেছি এখান থেকে বের হওয়ার। যেটা এখন খুলা যাচ্ছে না।
সাদাফের কথা শুনে আবির বলে,
—আবার চেষ্টা করি।
দুজনে অনেক চেষ্টার ফলেও দরজা খুলতে পারেনি। ওইদিকে বাতাসের বেগ প্রচন্ডভাবে বেড়ে চলেছে। আশেপাশে সব জিনিস উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কীসের সাথে যেন সাদাফ বেশ কয়েকবার বাড়িও খেয়েছে। তখন ওরা শুনতে পায় শ্রুতি অস্ফুট স্বরে কাউকে ডাকছে।
সাদাফ আর আবির কোনোমতে হাতড়ে হাতড়ে শ্রুতির পাশে যায়।
—শ্রুতি উঠো। উঠো শ্রুতি। এখন ঘুমানোর সময় না,আমাদের এখান থেকে বেরুতে হবে। উঠো।
সাদাফ শ্রুতিকে ধরে বসায়। আচমকা চারিদিকের এমন অবস্থা দেখে শ্রুতি ভয়ে সাদাফের বুকে লুকায়। সাদাফ শ্রুতিকে শান্তনা দেয়।
ওইদিকে মেহের মরার ঘুম ঘুমাচ্ছে। আবির হাজার চেষ্টা করেও মেহেরকে জাগাতে পারেনি। মেহেরের জন্য আবিরের ভয় হচ্ছে। যদি ওর মেহেরের কোনো ক্ষতি হয়ে যায়?
সাদাফ শ্রুতিকে বলে,
—শ্রুতি তাড়াতাড়ি সানজানাকে ডাকো। আমাদের বিপদে একমাত্র ওই সাহায্য করতে পারবে।
শ্রুতি তাড়াতাড়ি পাথর টা বের করে তিনবার সানজানাকে ডাকে।
প্রায় অনেকক্ষণ পর সব থেমে যায়। সাদাফ আর শ্রুতি বুঝতে পেরেছে ওই সয়তানটাকে থামাতে সানজানার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
চারিদিক আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়। আলো জ্বলে উঠে, সব জিনিস আগের জায়গায় চলে আসে। এখন হাসপাতাল সেই গন্ধটাও আসছে। গন্ধটা না থাকলে হাসপাতালকে হাসপাতাল মনেই হয় না।
আবির খেয়াল করলো মেহের পিটপিট করে চোখ খুলছে। চারিদিকে এমন ভাবে থাকিয়ে চোখ খুলছে,ওকে দেখে মনে হচ্ছে চোর চুরি করার আগে সাবধানতা অবলম্বন করছে।
আবির দৌড়ে গিয়ে মেহেরকে জড়িয়ে ধরে। মনে হচ্ছে এতক্ষণে আবির ওর প্রাণভোমরা ফিরে পেয়েছে কিছু বুঝে উঠার আগেই আবিরের এমন জড়িয়ে ধরা মেহেরকে একটুও বিচলিত করে না। মেহেরও আবিরকে জড়িয়ে ধরে। শ্রুতি খেয়াল করেছে মেহেরের চোখ থেকে কয়েকফোঁটা জল গড়িয়ে পরছে।
কিছুক্ষণ পর…..
একজন নার্স আসে একজন আয়া’কে সাথে নিয়ে। উনার হাতে সবার জন্য ট্রে ভর্তি ফলমূল, দুধ আর মেডিসিন। সাদাফ আর আবির এদের দেখে চমকায়। ওরা দুজনে ভেবেছিলো এটা ভুতুড়ে হাসপাতাল। তার মানে হতে পারে এরাও ভুত।
—কাছে আসবেন না আপনারা।দূরে সরুন। (চিল্লিয়ে বলল সাদাফ)
সাদাফের এমন চিৎকারে চমকে যায় নার্স আর সেই আয়া’টি। নার্স শান্ত কন্ঠে বলে,
—শান্ত হোন আপনি,আপনারা খাবারটুকু খেয়ে নেন।
এবার আবির বলল,
—খবরদার সামনে আসবেন না। আপনারা অশরীরী।
অশরীরী কথাটা শুনে নার্স আর আয়া একে অপরের দিকে তাকায়। নার্স মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী। আয়া’ও দেখতে মোটামোটি সুন্দর। তাহলে ওদের কোনদিকে অশরীরী মনে হচ্ছে।
প্রতিউত্তরে নার্স বলল,
—আপনারা শান্ত হোন। কোথায় অশরীরী। এটা সিটি হসপিটাল। এখানে কোনো অশরীরী কেনো থাকবে? আপনারা কি কোনো কারনে ভয় পেয়ে আছেন?
মেহর হাবলা মার্কা মুখ নিয়ে সবার দিকে তাকাচ্ছে। কি হচ্ছে কিছুই সে বুঝতে পারছে না। সাদাফ আর আবির কেনোই বা জলজ্যান্ত মানুষ দুটোকে অশরীর বানিয়ে দিলো?
শ্রুতিরও মনে হচ্ছে এরা অশরীরী।আরেকটু পর ওদের চারজনের ঘাড় মটকাবে। তাই শ্রুতি জড়োসড়ো হয়ে সাতাফের গা ঘেঁষে বসে।
তখন আবির বলল,
—কোনো কারণে ভয় পেয়ে আছি মানে? আপনারা জানেন না আমরা কেনো ভয় পেয়ে আছি?
আবিরের এমন কথায় নার্স আর আয়া দুজনেই ভীষণভাবে অবাক হয়। তারা এদের কথা আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না।
নার্স বলল,
—সত্যিই আমরা জানিনা। দয়া করে কি হয়েছে আমাকে পরিষ্কার করে বলুন।
আবির তখন আবারও বলল,
—একটু আগে এতো তুফান হলো, চারিদিকে সব জিনিস ভেঙে গেলো, লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। এতো কিছুর পরেও বলছেন আপনারা কিছুই জানেন না?
তখন নার্স চারিদিকে তাকিয়ে দেখে সব জিনিস ঠিকঠাকই আছে। আলোও জ্বলছে। সব তো ঠিক আছে।আর কোথায় তুফান হলো?
সাদাফ বুঝতে পারলো নার্সের মনের অবস্থা৷ আবিরও চারিদিকে তাকানোর পর বড় করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। তার মানে যা হলো সব ওদের চারজনের সাথেই হয়েছে। নার্সকে প্রশ্ন করাটা বোকামি সেটা বুঝতে পেরেছে আবির।তাই সাদাফ বলল,
—দুঃখিত সিস্টার আসলে আমরা তখন ওভাবে এক্সিডেন্ট করায় তাল সামলাতে পারিনি। আর উল্টাপাল্টা স্বপ্নও দেখেছি। তাই…দুঃখিত আসলে।
তখন নার্স বলল,
— ঠিক আছে,সমস্যা নেই। এবার আপনারা খেয়ে নিন। আপনাদের শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম লাগবে।
নার্সরা খাবার দেওয়ার পর চলে যাওয়ার সময় সাদাফ উনাকে পিছু ডাকে। এতে শ্রুতি চোখ বড় করে সাদাফের দিকে তাকায়। সাদাফ শ্রুতির দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল স্মাইল দেয়।
শ্রুতির এখন ইচ্ছ করছে সাদাফকে কাপড়ের মতো ধোলাই করতে। মেয়ে দেখলেই জিভ লকলক করে। শ্রুতি সাদাফকে ভেঙচি দিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে।
নার্স বলল,
—জ্বি বলুন। কোনো প্রয়োজন?
নার্সের কথাটা এমন আদুরে গলায় বলল যে, তা শুনে শ্রুতির রাগ দ্বিগুন বেড়ে যায়।
সাদাফ শ্রুতির দিকে তাকাতে পারছেনা। হাসি পাচ্ছে ওর, কোনোমতে ঠোঁট দিয়ে হাসি চেপে রেখে সাদাফ নার্সকে বলে,
—আচ্ছা আমরা এখানে কিভাবে আসলাম? মানে আমাদের এখানে কে নিয়ে আসলো?
তখন নার্সটি বলল,
—আমি।
নার্সের কথা শুনে,সাদাফ, শ্রুতি,মেহের, আবির, চারজনেই চমকে যায়।
আবির বলল,
—ওদিকের রাস্তা দিয়ে তো তেমন কেউ আসা-যাওয়া করে না।
—হুম,আসলে আজকে আর্জেন্ট ডাক পড়ে গেছিলে। একজন সিরিয়াস পেশেন্টের অপারেশন হওয়ার কথা ছিলো। ডাক্তার ফোন করেছিলো জলদি আসার জন্য। আমাদের লেট হয়ে যাওয়াতে শর্টকার্ট রাস্তা ধরেছিলাম। আর আসার পথেই দেখলাম একটা গাড়ি গাছের সাথে ধ্বাক্কা খেয়ে পড়ে আছে। আমার সাথে আমার স্বামীও ছিলো
উনি এই হসপিটালের ডাক্তার। উনি এম্বুলেন্সে ফোন করে দেয়। আর আপনাদের এখানে নিয়ে আসে।
নার্সের কথা শুনে সাদাফ আর আবির নার্সকে কৃতজ্ঞতা জানায়। এরপর রিলিজ পাওয়ার পর সবাই বাড়ি ফিরে আসে।
বাসায় আসার পর শ্রুতির মা হুলুস্থুলে কান্ড বাঁধিয়ে ফেলে। অনেক বুঝানোর পর তিনি শান্ত হন। শ্রুতি নাস্তা করে রেস্ট নিতে নিজের রুমের যায়। গিয়ে দেখে রুমের সব জিসিস উলটপালট। যা দেখে শ্রুতির রাগ চড়কগাছে উঠে যায়।
—মাআআআআআআআ
মা’কে চিৎকার দেয় শ্রুতি। শ্রুতির মা দৌড়ে শ্রুতির কাছে আসে।
—কি হয়েছে? কি হয়েছে?
শ্রুতি চেঁচিয়ে বলে,
— কি হয়েছে দেখতে পারছো না? আমার রুমের এই অবস্থা কে করেছে? কে ঢুকেছে আমার রুমে?
শ্রুতির মা শ্রুতির এমন কথায় হতবাক। উনি চারিদিকে তাকিয়ে দেখেন কিছুই নেই। শ্রুতির রুম আগে যেরকম ছিলো এখনও ঠিক তেমনই আছে। সম্পূর্ন গোছগাছ।
—চোখ কি হাতে নিছো?
(দাঁতে কটমট করতে করতে বলে শ্রুতির মা)
—হোয়াট দ্য ফাউ….
আর কিছু বলার আগে শ্রুতি চারিপাশে তাকিয়ে দেখে রুম গোছানো,পরিষ্কার। কোথাও এলোমেলো নেয়।
—মা যাও, ঘুমাবো।
শ্রুতির মা আর কথা না বাড়িয়ে রান্নাঘরে চলে যান। শ্রুতি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মনে পড়ে সাদাফের কথা। শ্রুতি সাদাফকে ফোন দেয়। রিং হতে দেরী,সাদাফের রিসিভ করতে দেরী নেয়।
—মনে হচ্ছে আমার কলের অপেক্ষা করছো?(শ্রুতি)
—ওইরকম কিছু একটা হবে।
—অপেক্ষা না করে নিজেও তো কল দিতে পারতে।
—কল দিই নাই তুমি কোন পরিস্থিতিতে থাকো না থাকো সেই ভয়ে।
—মানে? ভয়, পরিস্থিতি এসব কি বলছো?
—এই যেমন ধরো আমি তোমাকে কল দিলাম আর তোমার মা তোমার সামনে। তুমি জড়তা কাটিয়ে ফোন রিসিভ করতে পারছো না আর এদিকে আমি টেনশন করতে থাকবো। যার ফলে বার বার তোমাকে ফোন দিবো। তোমার মা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলবে, কে রে এটা? বারবার কল দিচ্ছে কেনো?
বাপরে বাপ তোমার মা যে রাগী মহিলা। কি না কি হয়। সেজন্য তোমাকে কল না দিয়ে তোমার কলের অপেক্ষা করছিলাম।
—হয়েছে শেষ?(শ্রুতি)
—হুমম(সাদাফ)
—এবার এক গ্লাস পানি খাও।(শ্রুতি)
—কেনো?(সাদাফ)
—বা-রে তুমি হাঁপিয়ে গেলে না? (শ্রুতি)
—হুহ তোমাকে বলছি আমি?(সাদাফ)
—বুঝে নিছি। (শ্রুতি)
—হয়েছে এবার বলো ঠিক আছো তো তুমি? (সাদাফ)
—তুমি ঠিক আছো? (শ্রুতি)
—হ্যাঁ। (সাদাফ)
—তাহলে আমিও ঠিক আছি। (শ্রুতি)
—তাহলে মানে কি আবার? এতক্ষণ ঠিক ছিলে না? (সাদাফ)
—ছিলাম না,এখন ঠিক আছি। (শ্রুতি)
—হেয়ালি করো না-তো। (সাদাফ)
—হুমম, আচ্ছা ঠিক আছে রাখছি, বাকিদের ফোন দিবো। (শ্রুতি)
—দিতে হবে না ওদের সাথে আমার কথা হইছে। ওরাও ঠিক আছে। (সাদাফ)
—আচ্ছা তাহলে। (শ্রুতি)
—নিজের যত্ন নিও।
শ্রুতি কল কেটে দেয়। এই ছেলেটার মাঝে কি আছে কিজানি। যত কথা বলি তত ওর কন্ঠ আরও বেশি শুনতে ইচ্ছে করে। হাসলো শ্রুতি।
—-
শ্রুতিকে কে যেনো একটা গুহার মধ্যে নিয়ে গেলো। খুব মারছে শ্রুতিকে। শ্রুতির পড়নে সাদা রঙের গাউন। শ্রুতির সাদা রঙের জামাটা লাল আবরণে ঢেকে গেছে। রক্তাক্ত শ্রুতি বার বার সাদাফকে ঢেকে চলেছে,
—সাদাফ বাঁচাও, প্লিজ সাদাফ আমাকে বাঁচাও। বাঁচাও না আমাকে।
শ্রুতির চিৎকারে সাদাফের বুক তছনছ হয়ে যাচ্ছে। শ্রুতির চিৎকার শুনা যাচ্ছে কিন্তু কোথায় শ্রুতি? সাদাফ গুহার ভেতরে পথ হারিয়ে ফেলেছে। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর সাদাফ শ্রুতিকে অবচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। সাদাফ দৌড়ে শ্রুতির কাছে যায়। শ্রুতির মাথা সাদাফ ওর কোলে রাখে। শ্রুতি পিটপিট করে চোখ খুলে। চোখ খুলার পর শ্রুতি সাদাফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। ঠোঁটে থাকা সেই হাসি নিয়ে শ্রুতি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
—শ্রুতিইইইইইইইই
সাদাফের চিৎকারে পুরো দুনিয়া কেঁপে উঠে। নিশাচর পাখিরা ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে চলে যায়।
———
সাদাফ ঢকঢক করে দুই গ্লাস পানি খেয়ে ফেলে। তার মানে এতক্ষণ সব স্বপ্ন ছিলো না। সাদাফ মনে মনে উপরওয়ালার কাছে শুকরিয়া জানায়।
সাদাফ সাতপাঁচ না ভেবে শ্রুতিকে কল দেয়। কিন্তু নাম্বার বিজি।
আবার কল দেয় আবারও বিজি। এভাবে কয়েকবার চেষ্টা করেও শ্রুতির নাম্বার বিজি আসে।
———
অন্যদিকে শ্রুতিও একই স্বপ্ন দেখে ভয়ে ঘুম থেকে উঠে যায়। শ্রুতি স্বপ্নে দেখেছিলো সাদাফকে কেউ মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। সাদাফের সাদা শার্ট রক্তে লাল হয়ে গেছিলো। সাদাফ যেরকম স্বপ্ন দেখে শ্রুতিও ঠিক সেরকম স্বপ্ন দেখেছে। শুধু সাদাফের জায়গায় শ্রুতি আর শ্রুতির জায়গায় সাদাফ।
অনেকক্ষণ যাবত সাদাফকে কল দিচ্ছে শ্রুতি। প্রত্যেকবার কল বিজি আসতেছে। শ্রুতি এবার ফোন রেখে আল্লাহর কাছে সাদাফের মঙ্গল কামনা করছে। ওমনি সাদাফের কল আসে। শ্রুতি তড়িঘড়ি করে সাদাফের ফোন রিসিভ করে,
—শ্রুতি তুমি ঠিক আছো? আবারও স্বপ্ন দেখলাম। না স্বপ্ন না দুঃস্বপ্ন। (বলল সাদাফ)
—আমি ঠিক আছি। তুমি ঠিক আছো? বারবার তোমাকে ফোন দিচ্ছিলাম কিন্তু কল বিজি আসতেছিলো। (শ্রুতি)
শ্রুতির কথায় সাদাফ অবাক। এতক্ষণ শ্রুতির নাম্বার বিজি পাচ্ছিলো সাদাফ। আর ও বলছে সাদাফের নাম্বার বিজি।
—আমি ঠিক আছি। কিন্তু এতক্ষণ আমিও তোমাকে ফোন দিচ্ছিলাম আর তোমাকেও বিজি পাচ্ছিলাম। (সাদাফ)
—কোন টাইমে কল দিছিলে? (শ্রুতি)
— দুই,এক মিনিট হবে। (সাদাফ)
—ওহহ বুঝেছি। (শ্রুতি)
—কী?(সাদাফ)
—তার আগে বলো তুমি ভয় পাওনি? (শ্রুতি)
—কিসের জন্য? (সাদাফ)
—এই যে আমার নাম্বার বিজি পাচ্ছিলে? (শ্রুতি)
—হ্যাঁ ভয় হচ্ছিলো, তুমি ঠিক আছো কি-না ওইটা ভেবে। (সাদাফ)
শ্রুতি হাসলো আর বলল,
—আমি তো কোনো ছেলের সাথে কথাও বলতে পারতাম।
—উফফ নেগেটিভ বলিও না তো। তুমি এরকম কিছুই করবে না। বিশ্বাস ছিলো। (সাদাফ)
—এখন নেই?
চলবে…?