#ভ্যাম্পেয়ার_রাজ্য,পর্বঃ ০৬
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা
” অরুণিমা অরু।” প্রিশা মুচকি হেসে বললো
” খুব সুন্দর নাম তোমার।” অরু আলতো হাসলো। প্রিশা আশেপাশে তাকিয়ে কাউকেই দেখতে পেলো না। প্রিশা অরুকে জিজ্ঞেস করতে থাকে
” তুমি কার সাথে এসেছো এখানে ? ব্রেকফাস্ট করেছো ? সবাই কোথায় আছে জানো ?” অরু নরম স্বরে বললো
” সাইরা আপু আমাকে এখানে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে। বলেছে কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। আর কাউকে দেখিনি বা চিনি না আমি।” প্রিশা সুর দিয়ে বললো
” ওও আচ্ছা।” প্রিশা অরুর সাথে টুকিটাকি কথা বলে অরুকে নরমাল করার চেষ্টা করে। কোন ক্লাসে পরে, বয়স কতো এসবই জিজ্ঞেস করতে থাকে। কথা বলার মাঝে প্রিশার খেয়াল হলো অরুর হাতে রাতে যেই আঘাতটা ছিলো সেটা দেখা যাচ্ছে না। প্রিশা চোখ দিয়েই অরুর হাত পা চেক করতে থাকে।
শায়ান নিচে নেমে আসে হাই দিতে দিতে। প্রিশার সামনে এসে বড় একটা হাই তুলে বললো
” হাই, ফেন্ড ! রাতে কোথায় ছিলে তুমি ?” প্রিশা শায়ানের হাত ধরে অরুর থেকে কিছুটা দূড়ে নিয়ে গেলো। আতঙ্কিত গলায় বললো
” এসব কি শায়ান ভাইয়া ? অরুর গায়ে গভীর একটা ক্ষত ছিলো রাতে, সেটা কোথায় এখন ? আমি তো কোথাও দেখছি না। অরুর গায়ে সেই ক্ষতগুলো নেই কেনো? কোথায় উধাও হয়ে গেলো?” শায়ান ঢোক গিলে অরুর দিকে এক পলক তাকালো। মেয়েটা চুপচাপ বসে রয়েছে। শায়ান চুপসে যাওয়া চাহনিতে তাকিয়ে বললো
” রাত ছিলো তো তুমি হয়তো ভুল দেখেছো। ওর হাতে তো কোনো ক্ষতই ছিলো না।” প্রিশা শক্ত গলায় বললো
” মিথ্যা বলছো কেনো ভাইয়া ? আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম আর হাতের রক্ত দেখেই তো আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। তোমরা সবাই আমাকে অন্ধকারে রাখার চেষ্টা করছো তাই না ?”
শায়ান নাকচ করে কিছু বলার আগেই সেখানে শুভ্র এসে বলে উঠলো
” কেউ তোমাকে অন্ধকারে রাখছে না। তোমাকে অন্ধকার থেকে বের করতেই এখানে আসা তোমার। সব কিছু জানার সময় এখনও হয়নি তাই কেউ তোমাকে কিছু বলছে না।”
প্রিশা শক্ত গলায় বললো
” ঠিকাছি সব কিছুই মানছি কিন্তু অরুর গায়ে ক্ষত গুলো কোথায় গিয়েছে সেগুলো তো বলা যায় ! নাকি সেগুলোও সময় হলেই বলবে।”
শুভ্র শায়ানকে ইশারায় চলে যেতে বললো। শায়ান কোনোরকমে প্রিশার সামনে থেকে পালিয়ে গেলো। শুভ্র প্রিশাকে নিয়ে সাইরার রুমে ঢুকলো। বেডের এক পাশে প্রিশাকে বসিয়ে নিজেও পাশে বসে নিচু স্বরে বললো
” তোমাকে বলেছিলাম না আমরা ভ্যাম্পেয়ার ! আমরা সত্যিই ভ্যাম্পেয়ার। আমি কিন্তু জানি তুমি আমার কথাটা মজার হিসেবে নিয়ে ছিলে কিন্তু এটাই সত্যি। আমাদের মধ্যে অনেক ধরনের ক্ষমতা রয়েছে। তেমনই অরুর ক্ষতগুলো সারিয়ে দিয়েছে শায়ান ।” প্রিশা স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। শুভ্র প্রিশার হাতের উপর আলতোভাবে হাত রাখতেই প্রিশা শুভ্রর দিকে তাকিয়ে অবাক স্বরে বললো
” আপনারা তাহলে মানুষ না। তাহলে ! আমার মাম্মি ? আ…মার মাম্মিও কি মানুষ নয়?” প্রিশার ছলছল আখি জোড়া দেখে শুভ্রর বড্ড মায়া হলো কিন্তু সত্য তো জানতেই হবে প্রিশাকে। শুভ্র মাথা নেড়ে বললো
” নাহ তোমার মাম্মি মানুষ নয়। শুধু তোমার মাম্মি নয় তোমার পাপা, বোন আর তুমিও মানুষ নও। আর এই বাড়িতেও কয়েকজন ছাড়া কেউ মানুষ না”
প্রিশা চমকে উঠে শুভ্রর কথায়। প্রিশা ঢোক গিলে বললো
” আমরা মানুষ নই মানে ? ম..মজা করছেন আমার সাথে ? আমরা জানি আমরা মানুষ। আমিও মানুষ। সত্যি করে বলুন তো আপনি আমাকে আজগুবি গল্প শোনাচ্ছেন তাই না ?”
শুভ্র প্রিশার হাত শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে আবার খুললো। ভয়ে প্রিশার আত্মা কেঁপে উঠে শুভ্রর নীল চোখ জোড়া দেখে। প্রিশা ভয়ে শুভ্রর হাত ছাড়িয়ে নিতে যায় কিন্তু শুভ্রর সাথে পেরে উঠে না। শুভ্র শক্ত হাতে ধরে রেখেছে প্রিশার হাত। প্রিশা ভয়ে কেঁদে দেয় তাও শুভ্র প্রিশার হাত ছাড়ল না। শুভ্র সম্পূর্ণ ভ্যাম্পেয়ার রূপে আসলো। প্রিশা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। চোখ থেকে অনবরত পানি পরছে কিন্তু শুভ্র এখনও তাকে ধরে রেখেছে। প্রিশা চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে। শুভ্র প্রিশাকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। প্রিশা ছাড়াতে চাইলেও পারে না। শুভ্র নরমাল হয়ে প্রিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
” ভয় পেয়ো না। এখানে কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। আমি তোমার ক্ষতি ভাবতেই পারি না। সবার প্রাণপাখিটা তোমার মাঝেই রয়েছে।” প্রিশা গুটিশুটি মেরে শুভ্রর বক্ষস্থলেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর শান্ত হয় প্রিশা। শুভ্র প্রিশাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো
” ভয় করছে এখনও?” প্রিশা মাথা নেড়ে হ্যা জানালো। শুভ্র ফিচলে হাসলো, বললো
” ভয় পেয়ো না। আই থিংক, এই কয়েকদিনে এতোটুকু বুঝতে পেরেছো বাড়ির সবাই তোমাকে কতোটা ভালোবাসে।” প্রিশা মাথা নিচু করে বললো
” সবাই ভালোবাসে।”
” হুম এবার নিজেকে স্বাভাবিক করো। আর চলো অরুর সাথেও আমাদের পরিচয় হতে হবে”
প্রিশা মাথা নেড়ে হ্যা বললো। প্রিশা ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে শুভ্রর সাথে ড্রইংরুমে আসলো।
সবাই একসঙ্গে জড়ো হয়ে আছে। অরুকে নানা রকম প্রশ্ন করছে কিন্তু অরু কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। শুভ্র গম্ভীর গলায় বললো
” সবাই ব্রেকফাস্ট শেষ করে নাও তারপর তোমাদের কৌতূহল মিটিয়ে নিও। দেখছই তো অরু ভয় পাচ্ছে তোমাদের। আগে নিজেকে স্বাভাবিক করতে দাও।” দিদার হেল্ড তখন রুম থেকে এসে সম্মতি দেয় আর সবাইকে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসতে বললো।
ব্রেকফাস্ট শেষ হলে সবাই বেরিয়ে যায় নিজ নিজ কাজের জন্য। শুভ্র আর শায়ানকে দেখে রিনা ভ্রু কুঁচকে বললো
” তোমরা ভার্সিটিতে যাবে না ?”
শুভ্র খেতে খেতে বললো
” নাহ। কয়েকদিন পর এক্সাম তাই বাড়িতে পড়বো।” শায়ান শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো
” হ্যা, আমিও পড়বো।” রিনা আর পাখি একে অপরের দিকে তাকালো। প্রিশা নিজেও এখনও খাচ্ছে আর অরুকে একের পর একটা খাবার দিচ্ছে। অরুর পেট ফেটে হাসি আসছে প্রিশার কাজ দেখে কিন্তু মাথা নিচু করে বসে আছে যাতে কেউ দেখতে না পায়। দিদার হেল্ড প্রিশার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
” নানুমনি কালকে রাতে কোথায় ছিলে তুমি ? গতরাতে তো খাওনি।” প্রিশা মুখে খাবার নিয়ে বলতে থাকে
” কাল তো ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু মাঝরাতে উঠে খেয়েছি আমি।” রিনা চিন্তিত হয়ে বললো
” কি খেয়েছিস মা ? ফ্রিজে তো কাল কিছুই ছিলো না।” পাখি প্রিশার দিকে তাকিয়ে বললো
” কখন উঠলি আমাকে ডাকলি না কেনো পাশেই তো ঘুমিয়ে ছিলাম? কি না কি খেয়েছিস।”
প্রিশা খেতে খেতে অস্পষ্ট ভাবে বললো
” আরে চিন্তা করছো কেনো। ফ্রিজ থেকে ডেজার্ট দিয়ে শুভ্র ভাইয়া আমাকে সালাদ বানিয়ে দিয়েছিলো।” শুভ্র তব্দা মেরে বসে রইলো খাওয়া রেখে। খাবার মুখে রেখে কথা বলার প্রিশার কথা বুঝতে কিছুটা সময় লেগে যায় সবার। বুঝতে পারে সবাই শুভ্রর দিকে তাকালো। শুভ্র কোণা চোখে একবার সবার দিকে তাকিয়ে নেয়। লজ্জায় ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করলো শুভ্রর কিন্তু গেলো না। উপরে উপরে গাম্ভীর্যতা বজায় রাখার চেষ্টা করে খাবার খেতে থাকে। ডোন্টকেয়ার একটা ভাব তার মাঝে সেটাই বোঝাতে চাইলো। কে কি বুঝলো তা তো জানে না কিন্তু কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলো না। বরং রিনা হাসি মুখে বললো
” ভালো হয়েছে। অরু তুমি খাচ্ছো না কেনো খাও যা ইচ্ছে। আমাদেরকে, নিজের বাড়ির লোক মনে করো।” প্রিশা নিজের খাওয়া শেষ করে অরুকে আরো খাবার দিয়ে উঠে গেলো। প্রিশা যেতেই অরু ফিকফিক করে হেসে দেয়। শুভ্র সব খেয়াল করে নিজেও হাসলো।
খাওয়া দাওয়ার দফা শেষ হতেই সবাই অরুকে নিয়ে বসলো। মানুষ এখন কম হওয়ায় অরুও কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বসলো। শুভ্র শান্ত গলায় বললো
” এবার বলো কি হয়েছিলো তোমার সাথে ? আমার তো সাধারণ কিছু মনে হচ্ছে না।” অরু ধীর গলায় বললো
” আগে আমি সেই জিনিসটা চাই যেটা আমার কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছে।” শায়ান তার রুমে চলে গেলো কিছুক্ষণ পর জ্বলজ্বল করা সাদা পাথরটা এনে অরুর সামনে ধরলো। অরু দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পাথরটা হাতে তুলে নেয়। দিদার হেল্ড কিছুটা অস্থির গলায় জিজ্ঞেস করলো
” কোথায় পেয়েছো এটা তুমি ? এটা কি তোমার নিজের ?” অরু কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো
” আপনি জানেন এটা কি ?” দিদার হেল্ড বললো
” না জানি না তবে এটা দেখে মনে হচ্ছে এটা আমার চেনা বা দেখেছি আমি।” অরু বিস্ময়ের সাথে তাকালো। শুভ্র চুপচাপ বসে রয়েছে। কারো মতিগতি ঠিক লাগছে না তার।
চলবে……….