#ভ্যাম্পেয়ার_রাজ্য,পর্বঃ ০৯
#লেখিকাঃ_মার্জিয়া_রহমান_হিমা
শুভ্র দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে দুই দিকে মাথা নাড়ায়। প্রিশা শুভ্রর পাশে বসতেই শুভ্র গম্ভীর গলায় আদেশ রূপে বললো
” যাও, রুমে গিয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে থাকবে।” প্রিশা ভ্রু কুঁচকে বললো
” কেনো আমি একা কেনো যাবো ? আপনিও নিজের রুমে গিয়ে ঘুমান। আর কোথায় গিয়েছিলেন বললেন না যে আমাকে?” শুভ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো
” আমি কি করবো না করবো সব তোমাকে বলতে হবে? আমাদের অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো আমাদের গোপনে করতে হয়। এবার চুপচাপ উপরে যাও।” শুভ্রর রাগের আভাষ টা ধরতে পারলো প্রিশা। প্রিশা কিছুটা অবাক স্বরেই বললো
” এভাবে কথা বলছেন কেনো আপনি? আপনি কি রেগে আছেন?” প্রিশার প্রশ্ন শুনে শুভ্রর রাগ আরো চড়ে উঠলো। শুভ্র রাম ধমকের সঙ্গে বলে উঠলো
” যাও, নিজের রুমে যাও ! একটা কথা কতোবার বলতে হয় তোমাকে ?” ধমক শুনে প্রিশা ভয় পেয়ে গিয়েছে। প্রিশা ভয়ের সাথে কিছুটা অভিমানও জমে গেলো শুভ্রর প্রতি। প্রিশা উঠে চলে যায়। যাওয়ার পথে টেবিলের উপর হাতের বাটিটা রেখে গেলো। শুভ্র দু হাতে মুখ ঢেকে বসে থাকে।
রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। সোডাল্ট এর বাড়িতে গিয়েছিলো। একপ্রকার লুকিয়েই যেতে হয়েছে তাকে সেই পাথরের ব্যাপারে জানতে। সেই গোপন রুমেই সেই পাথর সম্পর্কে সব তথ্য ছিলো। এটা কোনো সাধারণ পাথর না। দুই প্রাণীর বিয়ে এবং তাদের সন্তান হিসেবে সোডাল্ট এর জন্মের সময় কিছু ত্রুটি ছিলো। যার কারণে সোডাল্ট এমন ভয়ঙ্গর প্রাণীতে পরিণত হয়। এই ভয়ঙ্গর প্রাণীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই পাথরের তুলনা নেই। কিন্তু এই পাথর যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে সোডাল্টকে নিয়ন্ত্রণ করা একদমই অসম্ভব হবে এবং কয়েক মুহূর্ত পর সোডাল্ট মারা যাবে।
শুভ্র বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে সে। এই পাথরটা কি ভেঙ্গে ফেলবে ? কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপায় আছে বলেও সে জানে না।
এসব ভাবনাই শুভ্রর মাথায় ঘুরছে বারবার। আবার পথিমধ্যে এসব ভাবতে ভাবতে হেটে আসার সময় এক বয়স্ক ভদ্রলোকের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলো। অতিরিক্ত বয়স্ক হওয়ায় কিছুটা গুরুতর আহত হয়। রাস্তা হওয়ায় শুভ্র তার শক্তি দিয়ে কিছুই করতে পারেনি। তাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে ডক্টর দেখিয়ে তারপর বাড়িতে ছেড়ে এসেছে। যদিও জিজ্ঞেস করেছিলো এতো রাতে রাস্ততায় কি করছে। লোকটা বলেছিলো তার ছেলের অসুস্থ তাই সে তার ছেলের দোকানে গিয়েছিলো। দোকান বন্ধ করে ফিরতে দেড়ি হয়ে গিয়েছে তার।
শুভ্রর তার রাগের কারণে অনুতপ্ত অনুভব করলো। মেয়েটার সাথে এতোদিনে উঁচু গলায় কথা বলেনি আর আজ রেগে কতো ধমক টমক দিয়েছে। প্রিশাও তো অভিমান করেছে। শুভ্রর মাথা ব্যাথা করতে থাকে। একটু ঘুম প্রয়োজন তার তাই সে সব চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর শুভ্র প্রিশার সাথে কথা বলতে চাইলেও প্রিশা বারবার এড়িয়ে যাচ্ছে তাকে। এর মাঝেই প্রিশা দিদার হেল্ড এর গা ঘেঁষে বসলো। পাশেই সাইরা আর অরু বসে গল্প করছিলো। দিদার হেল্ড প্রিশাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। প্রিশা হঠাৎ তাদের গল্পের মাঝে বলে উঠলো
” নানুমনি আমি কালকে বাড়িতে চলে যাবো।”
প্রিশার হুট করে চলে যাওয়ার কথা শুনে সবাই চমকে উঠে। সবাই যার যার কাজ রেখে প্রিশার কাছে এসে বসলো। সিদ্ধার্থ হেল্ড কিছুটা উতলা হয়ে বলে উঠে
” কেনো নানাভাই তোমার কি এখানে ভালো লাগছে না ?” প্রিশা মাথা নেড়ে নাকচ করে বললো
” না, না, নানাভাই। আসলে আগে কখনো মাম্মি,পাপাদের ছাড়া একা একা থাকিনি তাই আর কি !” রিনা এগিয়ে এসে প্রিশার পাশে বসে বললো
” আরে বোকা মেয়ে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে যাবে বুঝলি ! মাত্রই তো কয়েকদিন হলো আরো কয়েকদিন থেকে যাও। এছাড়া এখন তো অরুও তোমার সাথে রয়েছে। তোমরাই তো এখন বাড়ির আনন্দের আসল উৎস। প্রথম আমাদের বাড়িতে আসলে। এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলে কি করে হয় তুমিই বলো !”
সিদার হেল্ড হাসতে হাসতে বললো
” এই কয়েকদিনই যদি থাকতে না পারো তাহলে বিয়ের পর সারাজীবন মা, বাবাকে ছাড়া থাকবে কি করে ? বলো তো !” সবাই হেসে উঠে তার কথায়। প্রিশা না হাসলেও কিছু লজ্জা পায়। আর শুভ্র একদম শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যেনো একটা মূর্তি সে। প্রিশা আড়চোখে এক শুভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখে শুভ্র তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। প্রিশা মুখ ফুলিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে ভেংচি কাটে। শুভ্র প্রিশার কান্ড দেখে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ঠোঁট চেপে হাসলো। প্রিশা মামাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” মামা বিয়ে যখন হবে তখন সেসব দেখা যাবে। কালকে আমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে তুমি।” সিদার হেল্ড আমতা আমতা করে
” আরে আমি নিয়ে যাবো মানে ? কোথাও যাওয়া হবে না তোমার।” দিদার হেল্ড নাকচ করে বললো
” হ্যা। কোথাও যাওয়া হবে না তোমার। দ্বিতীয় বার যেনো এসব নিয়ে কথা না হয়।” প্রিশা মন খারাপ করে ফেলে। সবাই গিয়ে ব্রেকফাস্ট করার জন্য টেবিলে গিয়ে বসে। সাইরা প্রিশাত পাশে বসে প্রিশার দুই কাধে হাত রেখে বললো
” আরে পিচ্চি তোমার কলেজ খুলতে এখনও অনেকদিন বাকি। এই কয়েকটা দিন এখানে কাটালে কি হয় বলো তো ! দেখো তুমি আছো বলে কিন্তু আমরা এতো সুন্দর সুন্দর সময় কাটাতে পারছি। তুমি চলে গেলে তো ওই বোরিং লাইফ কাটাতে হবে আবার। তার চেয়ে আরও কয়েকদিন থাকো বুঝলে ! তুমি চলে গেলে সবাই দুঃখ পাবে। এছাড়া শায়ান কিন্তু পারলে তোমাকে বেধে রাখবে।” শায়ানের কথা বলতেই প্রিশা সহ অরু আর সাইরা হেসে উঠে একসঙ্গে।
কিছুক্ষণের মধ্যে খাওয়া শেষ করে ছেলেরা অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। আজ সিদ্ধার্থ হেল্ড অফিসে যাচ্ছে। কয়েকদিন যায়নি সে। অফিসের সময়টা প্রিশার সাথে কাটাতো। আজ অফিসে একটা ডিল হবে তাই যেতে হচ্ছে।
আজ রিনা ছেলেকে বকেঝকে দিয়ে ভার্সিটিতে যেতে বললো। শুভ্র চোখ, মুখ শুকিয়ে চলে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
প্রিশা সারাদিন আজ অরু আর সাইরাদের সাথে কাটিয়েছে। সন্ধ্যার পর কিছু সময় সব মেয়েরা লিভিংরুমে বসে গল্পগুজব করে কাটালো। তখন শুভ্র আর শায়ান আসলো বাড়িতে। শুভ্রকে দেখে রিনা তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো
” শুভ্র ! কোথায় ছিলে এতোক্ষণ ? ভার্সিটি তো আরো আগে ছুটি হয়েছে।”
শুভ্র কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা উপরে নিজের রুমে চলে গেলো। মায়ের প্রশ্নের উত্তরও দিলো না। সবাই শায়ানের দিকে তাকাতেই। শায়ান মাথা নেড়ে বলল
” কিচ্ছু জানি না আমি। তবে রেগে আছে কোনো কারণে।” শায়ানও নিজের রুমে ছুটে গেলো।
দিদার হেল্ড রিনাকে উদ্দেশ্য করে বললো
” কি দরকার ছিলো জোড় করে ভার্সিটিতে পাঠানোর ? ভার্সিটিতে না গেলেও শুভ্রর পড়াশোনা নিয়ে গাফলতি হয়না সেটা তো জানোই।” রিনা সায় জানিয়ে আর কিছু বললো না।
রাত বাড়ছে। সাইরা তার বই নিয়ে পড়ায় ব্যস্ত, শায়ান গেমস নিয়ে খেলতে ব্যস্ত। তাদের মা’রা রান্নাঘরে কাজের সাথে সাথে গল্প করতে ব্যস্ত। শায়ানকে গেমস খেলা থেকে জোড় করে উঠিয়ে আনে শুভ্র। হুরমুর পায়ে অরুর রুমে প্রবেশ করলো। আচমকা শব্দে অরু আর প্রিশা চমকে সেদিকে তাকায়। শুভ্র আর শায়ানকে দেখে শান্ত হয়। প্রিশা শুভ্রর দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আলতো হেসে শায়ানকে বললো
” ভাইয়া সারাদিন কোথায় ছিলে ? সকালেও দেখস হয়নি তোমার সাথে।” শায়ান কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হওয়ার আগেই শুভ্র গম্ভীর গলায় বলে উঠলো
” বাইরে চলো কথা আছে আমার।” প্রিশা অন্যদিকে তাকিয়ে কিড়মিড় গলায় বললো
” আমার সাথে কি কথা আপনার ?” শুভ্র হুট করে এসে প্রিশার হাত চেপে ধরে টেনে বিছানা থেকে নামাতে নামাতে বললো
” কি কথা সেটা শুনলেই বুঝতে পারবে।” প্রিশা শক্ত গলায় চেঁচিয়ে বললো
” কোথাও যাবো না আমি আপনার সাথে, ছাড়ুন আমাকে !”
শুভ্র কিছু না বলে প্রিশাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকলো। অরু আর শায়ান ফ্যালফ্যাল করে শুধু দেখেই গেলো। দুজনের মধ্যে যে কিছু একটা হয়েছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।
শুভ্র প্রিশাকে নিয়ে এতো বাড়ির বাগানের দিকটা গেলো। প্রিশা হাত ছাড়িয়ে নিতেই শুভ্র আবার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। শুভ্র ধীর গলায় বললো
” সরি, কালকের জন্য। কালকে একটু ঝামেলায় ছিলাম তো টেনশনে তোমার সাথে রাগারাগি করে ফেলেছিলাম।”
প্রিশা মুখ ফুলিয়ে রাখে। শুভ্র প্রিশার গাল টেনে বললো
” আরে পিচ্চি আর কতোক্ষণ রেগে থাকবে বলো তো !” প্রিশা গাল থেকে হাত ছাড়িয়ে রাগি গলায় বলল
” গাল টানছেন কেনো ?” শুভ্র হেসে বললো
” বাঃরে ! পিচ্চি রাগ করে মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। রাগ ভাঙবো কি করে বলো তো !” প্রিশা কিছু না বলে ভেংচি কাটলো।
হুট করেই চারপাশে বাতাস শুরু হয়। শুভ্র আলতো হেসে প্রিশার উড়ন্ত চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিলো। প্রিশা চোখ বন্ধ করে ঘার বাঁকিয়ে নেয় কিছুটা।
বাতাসের বেগ হুট করেই বেড়ে গেলো। শুভ্র কিছু বুঝতে পারলো না। এর মধ্যে শুভ্রর মধ্যে ভ্যাম্পেয়ার রূপটা দৃশ্যমান হতে থাকে। প্রিশা শুভ্রকে দেখে আঁতকে বলে উঠে
” একি ! আপনি ভ্যাম্পেয়ার হচ্ছেন কেনো ?”
শুভ্র রাগি গলায় বললো
” সোডাল্ট আসছে। তুমি আড়ালে গিয়ে দাঁড়াও।” প্রিশার চোখে মুখে আতঙ্ক দেখা গেলো। প্রিশা এলোমেলো পায়ে বাড়ির সাথে লেগে গাছের আড়ালে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণের মধ্যে মারাত্মক বাতাসের মাঝে সোডাল্ট সেখানে উপস্থিত হয়। সোডাল্টকে দেখেই প্রিশার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো ভয়ে। বুকের ভেতরটা অসম্ভব ভাবে ধড়ফড় করতে থাকে। শুভ্র আর সোডাল্ট আজ মুখোমুখি।
চলবে………..