মধুচন্দ্রিমা,পর্ব ২,০৩,০৪

0
690

মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ২,০৩,০৪
তানিয়া রহমান
০২

ইরিন আর মনির মুখোমুখি বসে আছে। ওয়েটার এসে দুমগ কফি রখলো টেবিলের উপর। মনির বলল- ইরি!কফি নাও
– কফি খাব না, এমনিতেই রাতে ঘুম হয় না
– অল্প খাও
-কেন ডেকেছো
করুন চোখে তাকিয়ে মনির বলল- আমাকে ক্ষমা করা যায় না
– আমি তোমাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি,আর তাছাড়া এত বছর পর তুমি কেন এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছ
মনির ইরিনের হাত ধরে মিনতির স্বরে বলল – চল আমরা আবার বিয়ে করে ফেলি
হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ইরিন বলল- আমার মনে হয় তোমার মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে, ভাল একজন সাইক্রিয়েটিস্ট দেখাও
– আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি ইরি,তোমাকে ছেড়ে থাকা সত্যিই কষ্টের
– দু’বছর পর তোমার মনে হলো আমাকে ছেড়ে থাকা কষ্টের
– অনেক আগেই মনে হয়েছে কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না তোমার মুখোমুখি হবার
– শোভা কেমন আছে
-জানিনা
– ওকেও ডিভোর্স করেছো
– বিয়ে করলেতো ডিভোর্সের প্রশ্ন
– বিয়ে করনি কেন? সে নিশ্চয় তোমাকে বাবা ডাক শোনাতে পারতো
– বাবা ডাক শোনার ইচ্ছে থাকলে প্রথম দিকেই তোমাকে ছেড়ে দিতাম। বাবা হওয়া কখনো আমার কাছে মুখ্য ছিল না
ইরিন কাঁচের দেয়াল ভেদ করে বাহিরে তাকালো,সন্ধ্যা নেমে এসেছে। সোডিয়াম লাইটের আলোয় ঢাকা শহর জ্বল জ্বল করছে
ইরিন বলল- আমাকে যেতে হবে
– আমার প্রোপোজাল একসেপ্ট করেছো
– মনির তোমাকে কিছু কথা বলি মনোযোগ দিয়ে শুন
– বল শুনছি
-হিল্লা বিয়ে মানে বুঝো
– ওটা ফালতু
– মোটেই ফালতু নয়
– বুঝিয়ে বল
– তুমি যখন আমাকে থার্ড নোটিশ পাঠালে তখন থেকে সারাজীবনের মতো তোমার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছি।এখন নতুন করে তোমাকে পেতে হলে আমাকে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে,কোন ডিলের মাধ্যমে নয় কখনো যদি কোনদিন ঐ ব্যক্তি মিউচুয়াল ভাবে আমাকে ডিভোর্স করে কিংবা মারা যায় তবেই তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারবে।যা কখনো কোনদিন সম্ভব না কারণ আমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করবো না।
মনির অসহায় দৃষ্টি নিয়ে ইরিনের দিকে তাকিয়ে রইল। ইরিন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, হ্যান্ড ব্যাগটা টেবিল থেকে নিয়ে বলল -আশি,ভালো থেকো।

মাইগ্রেনের ব্যাথায় ইরিন আজ দুদিন যাবৎ শয্যাশায়ী। রুমের সব দরজা জানালা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে শুয়ে আছে। অসুস্থ হলে ইরিনের প্রায়ই মনে হয় “ইশ!কেউ যদি থাকতো তার মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করার কেমন ফিল করছে”
ইরিন শ্বাস ছেড়ে পাশ ফিরে শুলো।সেল ফোন ভাইব্রেট করছে অনেকক্ষন। ইরিন পাশ না ফিরে বা হাত দিয়ে হাতরে হাতরে ফোন কানের কাছে নিয়ে বলল- হ্যালো
– ইরি আমি মনির
-বল
– আজ বিকেলে দেখা করতে পারবে
– না
– প্লিজ আধঘন্টার জন্য এসো খুব ভাল নিউজ আছে
– কোথায় আসতে হবে
– সেদিন যেখানে মিট করেছিলাম

এক বুক অস্থিরতা নিয়ে মনির ওয়েট করছে ইরিনের জন্য। কিছু সময় পর ইরিন এল,মনিরের মুখোমুখি বসে বলল- বল কি বলবে
মনির ইরিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ইরিনকে এলোমেলো লাগছে।জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল – কি হয়েছে
– মাইগ্রেনের ব্যাথা বেরেছে,তারাতাড়ি বল বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে
– আমার ফ্রেন্ড মেহবুবের কথা মনে আছে তোমার
-কোন মেহবুব
– আর্কিটেক্ট মেহবুব, বুয়েট থেকে পাশ করেছিল, ওর ওয়াইফও আর্কিটেক্ট ছিল
– না মনে পরছে না
-ও খুব ভাল ছেলে, গতবছর ওর ওয়াইফ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা যায়,তারপর আর বিয়ে করেনি
– এসব বলার জন্য আমাকে ডেকেছো
– না তা না,আমি ওর সঙ্গে আমাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি ও হেল্প করতে রাজী হয়েছে
– কিভাবে হেল্প করবে
-তুমিতো আবার সেকেন্ড বিয়ে ছাড়া আমার কাছে আসবে না তাই ও তোমাকে বিয়ে করবে তারপর ডিভোর্স
মনির কথা শেষ করতে পারলো না ইরিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রসগোল্লার মতো বড় বড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
মনির ঢোক গিলে আবার বলল – এছাড়া কোন উপায় নেই ইরি
– তুমি বোধহয় খেয়াল করনি আমি সেদিন কি বলেছিলাম
– এত কিছু বুঝিনা আমি চাই আবার আমরা এক হয়ে যাব
হঠাৎ ইরির মাথায় খেলে গেল এইতো সময় রিভেঞ্জ নেয়ার।
– ওকে! তোমার বন্ধুর ফোন নাম্বার দাও
– ফোন নাম্বার দিয়ে কি করবে
– যাকে বিয়ে করবো তার সঙ্গে কথা বলবো না?
– ওটা বিয়ে নয়
– যাই হোক
– কাল তোমাকে মেহবুবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব
-ঠিক আছে

চলবে

মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ৩
তানিয়া রহমান

কেবি স্কয়ারে বসে আছে মেহবুব।এসির বাতাসেও দরদর করে ঘামছে,জীবনে সে বহু ভাবে বন্ধুদের উপকার করেছে কিন্তু বিয়ে করেও যে উপকার করা যায় এটা ভাবতেই কেমন অস্বস্তি কাজ করছে। তৃতীয়বারের মতো বরফ শীতল গ্লাস মুখের কাছে তুলে ধরলো মেহবুব।
ইরিন বলল- আরও পানি অর্ডার করব
মেহবুব দু দিকে মাথা নাড়ালো যার অর্থ না
ইরিন আবার বলল -আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আছে
মেহবুব এবার আরও দ্রুত দু’দিকে মাথা নাড়ালো
ইরিন হেসে বলল – আমার কিন্তু অনেক কিছু জিজ্ঞেস করার আছে
মেহবুব এবার প্রথম কথা বলল- জ্বি বলুন
– আপনার কোন বেবী আছে
– একটা মেয়ে
– কোন ক্লাসে পড়ছে
– ঢাকা ভার্সিটিতে ফিজিক্সে অনার্স
– ওয়াও!আপনার মেয়ের কোন ছবি আছে
মেহবুব সেলফোন থেকে ছবি বের করে ইরিনকে ফোন এগিয়ে দিল।ছবি দেখে ইরিন বলল- খুব সুন্দর! কি নাম ওর
– অপরাজিতা, আমি ওকে অপু বলে ডাকি
– আপনি যে বিয়ে করছেন ও জানে
– না বলিনি
– আপনি ওর সঙ্গে কথা বলুন কিন্তু ভুলেও ডিল টিলের কথা বলবেন না, এটা আপনার এবং আমার দুজনের জন্যই অপমানজনক
– জ্বি বলব না
– গার্ডিয়ান বলতে আমার বড় ভাই – ভাবী ছাড়া কেউ নেই, ওদেরকে আপনার কথা বলেছি, ভাইয়া আপনার সঙ্গে পরিচিত হতে চাচ্ছে।
মেহবুব কেশে উঠলো, এই ষাটে পা দেয়া বুড়োকে আবার দেখাদেখির কি আছে বুঝতে পারলো না। মিনমিন করে বলল – এটাতো ওরকম অর্থে বিয়ে না
– সে যেরকম অর্থেই হোক আমিতো আর রাস্তার মেয়ে নই যে আপনার সঙ্গে ঢ্যাংঢ্যাং করে হাটা দিব
– ছিঃছি আমি আসলে ওভাবে বুঝাতে চাইনি
– আপনি আজ বিকেলে আমাদের বাসায় আসতে পারবেন
– আজই যেতে হবে
– হুম ভাইয়া সেরকমই বলছিল
মেহবুব মনে মনে বলল ” বন্ধুকে সাহায্য করতে যেয়ে নিজেইতো নাজেহাল হয়ে যাচ্ছি,সামনে আরও কত কি আছে কে জানে
মেহবুব, প্রিতম আর রুনার সামনে বসে আছে পাশে ইরিন।প্রিতম আর রুনা যেভাবে খুটিয়ে খুটিয়ে তাকে দেখছে তাতে মেহবুবের মনে হল চিড়িয়াখানার সবচেয়ে দূর্লভ জন্তু সে।
মেহবুব মাথা নিচু করে বসে আছে, প্রিতম আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলল- ইরিনকে বিয়ে করতে হলে আপনাকে একটা কথা দিতে হবে
মেহবুব মাথা নিচু করেই বলল- জ্বি বলুন
– কোনভাবেই আপনি ইরিনকে কষ্ট দিতে পারবেন না এই শর্তে রাজী হলে বিয়ে হবে।
– আমি রাজী

ইরিন বসুন্ধরা শপিংমলে এসেছে অপু আর মেহবুবকে বিয়ের শপিং করে দেওয়ার জন্য। সেলসম্যান বিভিন্ন প্যাটার্নের কাঞ্জিভরম শাড়ী দেখাচ্ছে। অপু বলল- আন্টি এত ভারী শাড়ী আমি নিব না, তুমি বরং আমাকে জামদানী কিনে দাও
– ইরিনা সেলসম্যানকে বলল- জামদানী হবে
– জ্বি ম্যাম
ইরিন বেবী পিংক কালারের জামদানী কিনে দিল অপুকে আর মেহবুবকে কিনে দিল রয়েল ব্লু কালারের পাঞ্জাবি আর রাডো ঘড়ি।
মেহবুব জানে ইরিন তার বাবার সম্পত্তির একটা বিশাল অংশের মালিক, টাকার অভাব নেই কিন্তু তাই বলে এত দামী ঘড়ি তার কাছে বিলাসিতা ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না।
মেহবুব আমতা আমতা করে ইরিনকে বলল- আমার মনে হচ্ছে এত দামী ঘড়ির প্রয়োজন নেই, এটা জাস্ট বিলাসিতা
– বিয়েতে না হয় একটু বিলাসী হলেন
– আমার অস্বস্তি হচ্ছে
– হোক, সবসময় সবকিছু যে স্মুথলি হবে সেটা কেন ভাবছেন
মেহবুব আর কথা এগুলো না ও বুঝে গিয়েছে এ মেয়ে কথা শোনার নয়।

– বাসায় এসে অপু রাগ হয়ে মেহবুবকে বলল- বাবা এটা তুমি কেন করলে
– আমি আবার কি করলাম
– তুমি আন্টিকে কেন কিছু কিনে দিলে না
– ও হ্যাঁ তাইতো,এটাতো আমার মাথায় আসেনি
-এখনই চল
– কোথায়
– আন্টির জন্য শপিং করবো
– এখনি কেন কাল যাব
– না এখনই যাবে

মেয়েকে নিয়ে আবার বসুন্ধরা শপিংমলে এল মেহবুব। নুড কালারের কাঞ্জিভরম শাড়ী কিনে মেহবুব সেলসম্যানকে বলল- আরও একটা কাতান দেখান
অপু বলল- কার জন্য বাবা
মেহবুব আনমনে বলল- বিয়ের শপিং জোরায় জোরায় করতে হয়
সবুজ রঙের সানন্দা আর নুড কালারের কাঞ্জিভরম নিয়ে যখন ফিরছিল তখন অপু বলল- বাবা চল ম্যাচিং ব্লাউজ নিয়ে নিই এত তারাতাড়ি তো বানানো যাবে না
মেয়ের কথায় সায় দিল মেহবুব
আন্ডারগার্মেন্টস শপে মেহবুবকে ঢুকিয়ে দিয়ে অপু বলল- তুমি কিনে ফেল আমার একটা জরুরী কল এসেছে কথা বলে আসছি
মেহবুব মেয়ের বাহানা বুঝতে পারলো।
ম্যাচিং পেটিকোট ব্লাউজ কেনার পর সে একটা ভয়াবহ কাজ করে ফেলল,ম্যাচিং কাচুলি, প্যান্টি আর দুটো নাইটি কিনে ফেলল।
বিল পে করার পর সেলসগার্ল যখন শপিং ব্যাগ হাতে দিল তখন মেহবুবের মনে হল”এটা সে কি করল!ব্লাউজ, পেটিকোট পর্যন্ত ঠিক ছিল কিন্তু বাকীগুলো?” অপু দেখে কি ভাববে!এটা মনে হতেই মেহবুবের পানি পিপাসা পেল।
কাঁচের দরজা ঠেলে বাইরে আসতেই অপু কোথা থেকে যেন উড়ে এসে বলল- বাবা তারাতাড়ি চল আন্টির জন্য রিং নিতে হবে
শপিং করার বিশাল ঝামেলায় মেহবুবের এক ফাঁকে মনে হল “মনিরকে দু ঘা লাগিয়ে দিতে, শালা আর মানুষ পেল না, তার কাঁধেই বন্দুক রেখে শুট করতে হবে?
চলবে

মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ৪
তানিয়া রহমান

বিয়ের দুদিন আগে ইরিন মেহবুবকে ফোন করে বলল – আপনার সঙ্গে ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিল।
মেহবুব ঢোক গিলে নিল,না জানি কোন ফ্যাসাদে পরতে যাচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল – জ্বি বলুন
– আপনার বাসায় রুম কয়টা
– কেন বলুনতো
– আমাকে কেমন রুমে রাখবেন জানতে হবে না? নাকি আমার বাসায় শিফ্ট হবেন
– ছিঃছি তা কেন হব,আমার বাসায় চারটা রুম
– কোনটা কার জন্য
– একটা আমার আর ঋতুর,ঋতু হচ্ছে আমার ওয়াইফ, জানেন বোধহয় ও গতবছর এক্সপায়ার করেছে।
– হুম শুনেছি, তারপর
– একটা অপুর আর একটা স্টাডি রুম,আ–র গেস্ট রুম
– আপনি আমার আর আপনার জন্য গেস্ট রুমটা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখবেন।অপুর মায়ের রুমে ভাগ বসাতে চাচ্ছি না
মেহবুব কেশে উঠলো। এক গ্লাস পানি খেয়ে ধাতস্ত হয়ে বলল- আপনি আমার বাসায় উঠবেন?
– তো কোথায় উঠবো?
– মনির যদি কিছু মনে করে
– আমার ভাইয়াতো আপনার হাতে আমাকে দিবে,তারপর আপনার যদি মনে হয় অনাকাঙ্ক্ষিত বিড়ালের মতো আমাকে বিনে ফেলবেন তাতেতো আমার কিছু বলার নেই
-আপনি এভাবে কেন বলছেন আমি আজই আপনার জন্য রুম রেডি করছি।
– শুনুন অলকানন্দা আমার খুব পছন্দের ফুল আপনি চাইলে ওটা দিয়েও সাজাতে পারেন।
মেহবুব এবার সত্যি ভাষা হারিয়ে ফেলল।কাশতে কাশতে তার হেঁচকি উঠে এল।
ইরিন বলল- যক্ষা টক্ষা হয়েছে নাকি এত কাশছেন কেন
মেহবুব কাশি থামিয়ে সিরিয়াস মুড নিয়ে বলল – আমি এখন ব্যাস্ত পরে কথা বলব
– আরও একটা কথা বলার ছিল
কন্ঠে কাঠিন্য এনে মেহবুব বলল- বলুন।
-আজ অপু দুটো শপিং ব্যাগ দিয়ে গিয়েছে, তারপর ফিসফিস করে বলল “নাইটি দুটো দারুণ ”
– আমি রাখছি
মেহবুবের কান দুটো লাল হয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। নিজেকে গালি দিতে দিতে বলল “কোন কুক্ষণে এমন বিচিত্র সাহায্যের হাত বারিয়ে ছিলাম আল্লাহ মালুম ”

মেহবুব ডিনার করতে এসে দেখে আম্বিয়া ডাল সব্জী আর দেশী মুরগীর ঝোল করেছে। হট পটের ঢাকনা খুলে দেখলো রুটি নেই, অপুকে বলল- আম্বিয়া খালা আজ রুটি করেনি
– না,ভাত খেয়ে নাও
মেহবুব প্লেটে ভাত নিতে নিতে বলল – গেস্ট রুম ক্লিন করে রেখ তোমার আন্টি ওখানে থাকবে
– হুম জানি,আন্টি বলেছে,থেমে আবার বলল অলকানন্দা অর্ডার করেছি কাল টাকা রেখে যেও।

মেহবুব অপুর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে ভাত খাওয়ায় মনোযোগী হলো।তার মনে হচ্ছে দুটো পাখা থাকলে উড়ে যেত নয়তো মাটি ফুঁড়ে তার ভিতর ঢুকে পরতো।মেয়ে সাজাতে চাচ্ছে বাবার বাসর এ কথা শোনার আগে তার বধির হওয়া উচিৎ ছিল।

ইরিন মেহবুবের সেগুনবাগিচার ফ্ল্যাটে বউ হয়ে এল।অপু ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ছবি আপলোড করার পর সমস্ত রিলেটিভস্, বন্ধু বান্ধব কনগ্র্যাস জানাতে লাগলো। কেউ কেউ আবার অতি উৎসাহী হয়ে ফোনও করে ফেলল।মেহবুবের নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে মন চাইছে যদিও তার মাথায় চুল প্রায় শূন্যের কোঠায়। জাতীয় পর্যায় শেষ করে মেহবুব এখন আন্তর্জাতিক কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে।মেহবুবের বড় বোন থাকে মেলবোর্ন। এই মহিলা আবার ছিচকাদুঁনে টাইপ। আয়েশা বলল- তোরা বাপবেটি মিলে এত বড় একটা কান্ড করলি অথচ আমাকে জানালিও না
– আপা!ব্যাপারটা ওরকম না
– কি রকম? আমার একমাত্র ভাই বিয়ে করলো অথচ আমি জানি না
– এখনতো জানলে
– এটাকে জানা বলে? পাড়াপ্রতিবেশিদের মতো ফেসবুক থেকে জানলাম।
– কাদঁছো কেন
– কাদঁবো না! বিদেশে থাকি বলে তোরা আমাকে পর করে দিবি?
– আমার খুব টায়ার্ড লাগছে, রাখি
– তোরতো এখন টায়ার্ড লাগবেই, অপুকে দে
– উত্তরা থেকে বড় ফুফুআম্মা এসেছে অপু তার সাথে আছে
– ফুফুআম্মা জানতো?
– না জানতো না, ফেসবুকে দেখেছে
– এ্যাই বাবু শোন্ না তোর বউকে কিন্তু আমার খুব পছন্দ হয়েছে
মেহবুব কাশতে শুরু করলো
– কাশছিস কেন
– বুঝতে পারছি না মনে হয় ঠান্ডা লেগেছে
– আদা চা খা, আর শোন তোর দুলাভাইকে বলেছি এক সপ্তাহের মধ্যে আমাকে দেশে পাঠাতে
– দেশে এসে কি করবে
– কি করবো মানে? তুই আমাকে দেশেও আসতে দিবি না
মেহবুব বুঝতে পারলো বেফাঁস কথা বলে ফেলেছে।দ্রুত রাখি বলে ফোন রেখে দিল আয়েশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।
মনে মনে মেহবুব বলল “ব্যাপারটা যত সহজ ভেবেছিলাম তত সহজ নয়,এই যে ফুফুআম্মা এসেছে এখন ইচ্ছে না থাকলেও বাসর ঘড়ে যেতে হবে, তা না হলে ফুফুআম্মা ঘটাবে আরেক বিপত্তি। ”
মেহবুবের ফোন আবার ভাইব্রেট করে উঠলো। আর চোখে তাকিয়ে দেখলো মনিরের কল,দ্রুত রিসিভ করে বলল – শালা! তোর বউ তুই এসে নিয়ে যা,আমি এসব ঝামেলা আর নিতে পারছি না
– দোস্ত কি হয়েছে
– কি হয়েছে মানে? আমার চোদ্দগুষ্টির কাছে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে
– স্যরি দোস্ত, আমি ভাবছিলাম তোর সাতকূলে কেউ নেই
– এরকম কেন মনে হলো,আমি কি বানের জলে ভেসে আসছি
– দোস্ত প্লিজ! কয়টা দিনই তো!
মেহবুব কথা না বাড়িয়ে কল কেটে দিল।লিভিং রুমে এসে দেখলো তার আরও কয়েকজন কাজিন চলে এসেছে, অপু আর আম্বিয়া ছোটাছুটি করে তাদের আপ্যায়ন করছে।
মেহবুবের খালাতো বোন সারা বলল- ভাইয়া ভাবীর পাশে এসে বোস কয়েকটি ছবি তুলি
মেহবুবের ইচ্ছে করছে সবকটাকে চরিয়ে বিদায় দিতে।
সারার কথা অগ্রাহ্য করে মেহবুব বলল- বড় ফুফুআম্মা কইরে
এলিজা বলল- ঋতু ভাবীর রুমে ঘুমোচ্ছে
– তোরা কি আজকে থাকবি
সবকটা কাজিন এক সঙ্গে বলল- এত রাতে কই যাব
মেহবুব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত একটা বাজে।আর চোখে একবার ইরিনের দিকে তাকালো তারপর অপুর খোঁজে পা বাড়ালো।
অপু কিচেনে আম্বিয়াকে হেল্প করছে, বাবাকে দেখে বলল- কিছু বলবে
– এত রাতে কি করছো
– ফুপিরা বলল রাত জাগবে তাই কফি বানাচ্ছি
– অনেক রাত হয়েছে তোমার আন্টির ঘুমানোর আয়োজন কর।
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here