মধুচন্দ্রিমা পর্ব ১১,১২,১৩

0
638

মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ১১,১২,১৩
তানিয়া রহমান
১১

মেহবুব ডিভানে বসে টিভিতে বিভিন্ন চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজ দেখছিল। কফির মগে চুমুক দিয়ে আর চোখে ইরিনের দিকে তাকালো, নজরুলের কবিতার বই পড়ছে ইরিন। একহাতে কোমড় জরিয়ে মেহবুব ইরিনকে নিজের কাছে নিয়ে এল।ইরিনের গায়ের femme এর সৌরভ মেহবুবকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়, নিজেকে সামলে নিয়ে বলে- কি পড়ছো
ইরিন আবৃত্তি করে বলল –
তোমার কন্ঠে রাখিয়া এসেছি মোর কন্ঠের গান
এইটুকু শুধু রবে পরিচয়
আর সব অবসান
বাকিটা মেহবুব বলল-
অন্তর তলে অন্তর তরে
যে ব্যাথা লুকায়ে রয়
গান আড়ালে পাও নাই তার
কোনদিন পরিচয়?
দুজনেই হেসে উঠলো।ইরিনের পাশে থাকা এটা সেটা নিয়ে খুনসুটি করা মেহবুবের নিয়মের জীবনে লাগিয়ে দিয়েছে এক অনিয়মের হাওয়া। মেহবুব বুঝতে পারে বদলে যাচ্ছে তার মরিচা ধরা জীবন।

অপু পর্দা সরিয়ে রুমে ঢুকে ইরিনের হাতে ফোন দিয়ে বলল – তোমার বন্ধু অন্জন, কল ব্যাক করতে বলেছে
– ওর ফোন তোমার কাছে কেন
– আন্টি আমার রুমে রেখে এসেছিল,তারপর হেসে বলল”বাবা জানো আন্টির বন্ধুরা আন্টিকে কি বলে ডাকে”
ইরিন চোখ পাকিয়ে ইশারায় মানা করলো না বলতে
অপু মেহবুবের গলা জরিয়ে ধরলো
– তুমি শুনতে চাও বাবা
মেহবুব আগ্রহের দৃষ্টিতে অপুর দিকে তাকালো
অপু খিলখিল করে হেসে বলে উঠলো – আন্টিকে ওরা মিসেস টাকলা বলে
মেহবুব একথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না, হাতে থাকা কফির মগ থেকে কিছুটা ছলকে পরলো মেঝেতে আর মুখে যেটুকু ছিল তাও আটকে গেল গলায়। ভারী কন্ঠ নিয়ে ইরিনের দিকে তাকিয়ে বলল – আমি মোটেও টাকলা নই
– বেশতো ওদের বলব চুল গুণে সার্টিফিকেট দিয়ে যেতে
ইরিনের কথা শুনে অপুর হাসির বেগ বেড়ে গেল।
মেহবুব গম্ভীর ভাবে বলল – ইটস নট ফেয়ার অপু
– স্যরি বাবা কিন্তু আমার যে হাসি পাচ্ছে
ইরিন হাসি চেপে বলল – অপু! তোমার না এক্সাম চলছে যাও পড়তে বস

মনিরের মা সাতদিন ধরে হসপিটালাইজড্।মনির বারবার মেহবুবকে বলেছে ইরিনকে ওর মা দেখতে চায় কিন্তু মেহবুব নির্বিকার।
গতকাল মনির আবার ফোন করে বলল- দোস্ত আম্মার অবস্থা ভাল না প্লিজ তুই ইরিকে বলনা চোখের দেখা দেখে যেতে
– বিকেলে নিয়ে আসব
– থ্যাংস দোস্ত

ইরিন বেবীপিংক কালারের সালোয়ার স্যুট পরেছে সাথে নুড কালার লিপস্টিক আর কাজল তাতেই সে হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয়।
মেহবুব ইরিনের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইল কিছুসময়, ড্রেসিংটেবিলের উপর রাখা টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে লিপস্টিক আর কাজল মুছে বলল- আমরা হসপিটাল যাচ্ছি পার্টিতে নয়
– এটা মোটেও পার্টি সাজ নয়
– তা নয়,কিন্তু যাচ্ছিতো বিস্টের গুহায় আমার বিউটিকে যদি রেখে দেয়
– এত ভয়!
মেহবুব হেসে ইরিনের কানের লতিতে হালকা করে কামড়ে দিল
– উফ!এটা কি হলো
– জেন নজর না লাগে

মনিরের মা শাহানা আছে ২৩০নাম্বার কেবিনে। ইরিন আর মেহবুব এল সন্ধ্যার পর।ইরিনকে দেখে মনির বলল- তুমি এসেছো,এত দেরি হলো যে,আমি কখন থেকে ওয়েট করছি
শাহানা মনিরের কথা শুনে চোখ মেলে তাকালো,ইরিনকে দেখে ইশারায় পাশে বসতে বলল। ইরিন গুটি গুটি পায়ে শাহানার কাছে এসে চেয়ার টেনে বসে বলে- কেমন আছেন
শাহানার চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। অস্ফুট স্বরে বলল – আমাকে ক্ষমা করে দাও মা
– এভাবে বলবেন না প্লিজ! তাছাড়া আপনিতো কোন অপরাধ করেননি
– মনিরের অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছি এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে
-যা হবার ছিল হয়েছে ওসব নিয়ে ভেবে আর কি হবে
মেহবুবের দিকে তাকিয়ে শাহানা বলল- ও কে! তোমার বর
ইরিন বলার আগেই মনির বলে উঠলো – আমার বন্ধু মেহবুব তোমার মনে নেই আম্মা, আমরা এক সঙ্গে স্কুল কলেজ পড়েছি তারপর ও বুয়েটে চলে গেল আর আমি ডিফেন্সে
– ও আচ্ছা, অনেক কিছু মনে থাকে না, তুমি কিছু মনে করোনা বাবা
– না না ঠিক আছে আন্টি মেহবুব ইরিনের দিকে তাকালো, ইরিন বুঝতে পারলো মেহবুবের চোখের তীব্রতা,ইরিন শাহানার মাথায় হাত দিয়ে আদর করে বলল – আমি আশি
– যেও না, কথা আছে, মেহবুবের দিকে তাকিয়ে অনুরোধের স্বরে বলল “তুমি কি একটু বাইরে যাবে
– ওহ্ সিওর
মেহবুব বাহির হয়ে এল।অস্থিরতা নিয়ে কিছু সময় পায়চারি করলো।বন্ধ দরজার দিকে তার মনে হলো সে কনডেম সেলে আছে। দ্রুত ম্যাসেজ পাঠালো ইরিনকে ” বের হয়ে আস, আমার দম বন্ধ লাগছে, মনে হচ্ছে তুমিই আমার অক্সিজেন।”
মেহবুব আরও কিছু সময় ওয়েট করে কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে ইরিনের হাত ধরে টেনে উঠালো, শাহানার দিকে তাকিয়ে বলল – স্যরি! আমাদের কাজ আছে আজ আশি
মনির বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে মেহবুবের দিকে তাকিয়ে রইল। মেহবুব মনিরকে উপেক্ষা করে ইরিনকে নিয়ে বেরিয়ে এল।

ইরিন মেহবুবকে অপলকভাবে দেখে যাচ্ছে। মেহবুব একবার পায়চারি করছেতো আর একবার সোফায় বসে দু’হাতে মুখ ঘসছে,মেহবুবের অস্থিরতা দেখে ইরিন বলল- ঘুমাতে আসুন
– অস্থির লাগছে ইরিনের পাশে বসে বলল মেহবুব
– কোন কারণে টেন্স
– একটা কথা জিজ্ঞেস করি
– বলুন
– কিছু মনে করবে না তো
– কি মনে করবো
– মনিরের মা তোমাকে কি বলল
– কি আর বলবে সব কিছু ভুলে মনিরকে মেনে নিতে বলল
– তুমি কি বললে
– বলার সুযোগ পেলাম কই তার আগেইতো আপনি টেনে নিয়ে এলেন
– বেশ করেছি,আমার বৌকে নিয়ে নিতে চাইছে, হাও ফানি!
ইরিন হাসি চেপে বলল – আপনিতো আমাকে বৌ মানতে নারাজ
– কে বলেছে
ইরিন বালিশে মাথা রেখে পাশ ফিরে শুলো
– আলো নিভিয়ে দিন চোখে লাগছে
মেহবুব আলো নিভিয়ে দিয়ে ড্রিম লাইট জ্বেলে ইরিনকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো। চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে বলল- তোমাকে একটু আদর করি
-এখন না প্লিজ!
– ওকে!
চলবে

মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ১২
তানিয়া রহমান

মেহবুব হাফবেলা অফিস করে বাসায় চলে এল। ইরিনকে ডেকে বলল- একসেট পাজামা পাঞ্জাবি বের কর আমি শাওয়ার নিয়ে আসছি।
ইরিন লাইট ব্লু কালারের পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা বের করে বেডের উপর রেখে দিল।
মেহবুব টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে বলল- ইরা! তুমি যাবা
– কোথায়
– মনিরের মা এক্সপায়ার করেছে তুমি জান না?মেহবুব পাঞ্জাবি পরতে পরতে বলল।
– অনেক রিলেটিভস্ থাকবে আজেবাজে কথা বলবে সেজন্য যেতে চাচ্ছি না
-ওকে!উটকো ঝামেলা কাঁধে নেয়ার কোন দরকার নাই,তুমি বরং আমাকে কিছু খেতে দাও ক্ষুধা পেয়েছে
– টেবিলে ভাত দিয়েছি, আসুন
কপালে কপাল ঠেকিয়ে দু’হাতে ইরিনের দুবাহু ধরে বলল- আমার বৌটা কি আমায় খাইয়ে দিবে
– অপু আছে বাসায়
– তো! কি হয়েছে
– আমি পারব না, আপনার দেখছি লজ্জা বলতে কিছু নেই
– এখানে নিয়ে এস

মনির বারবার গেটের দিকে তাকাচ্ছে, এত লোকের মধ্যেও মনিরের একজোড়া চোখ বিশেষ একজনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আছড়ের নামাযের সময় হয়ে গিয়েছে, আনমনে বলল- এখনো কেন আসছ না ইরি
মেহবুব গাড়ী পার্ক করে দ্রুত হেটে মনিরের কাছে এসে বলল- স্যরি দোস্ত দেরি করে ফেললাম
– ইটস ওকে! ইরি কই
– ও আসেনি
মনিরের বুকটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল যতটা না মাকে হারানোর ব্যাথায় তার চেয়ে বেশি ভেঙ্গে গেল কাছের মানুষকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে না পারার কষ্টে। বেদনা ভরা মুখ নিয়ে বলল – আম্মাকে শেষ দেখাটাও দেখতে এল না
– তোদের অনেক রিলেটিভস্ এসেছে, নানা ধরনের মন্তব্য করবে সেজন্য আসেনি
মনির এলোমেলো পায়ে কফিনের কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো,একহাতে মায়ের মুখ আগলে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো, তীব্র কষ্ট নিয়ে বলতে লাগলো ” আমাকে ভালবাসার আর কেউ রইল না আম্মা, আমাকে তুমি কার কাছে রেখে গেলে, না আছে আমার কোন সন্তান না আছে স্ত্রী ”
মনিরের কথা শুনে মেহবুবের বুক ভারী হয়ে উঠল, ঝাপসা চোখে ভাবতে লাগলো “কোন কোন ভুলের সত্যি বুঝি কোন প্রায়শ্চিত্ত নেই। ”

জানাজা শেষে মাটি মঞ্জুর করে আসার সময় মনির বলল- মেহবুব
মেহবুব চোখ তুলে তাকালো মনিরের দিকে
মনির আবার বলল – বড় আপা ইরির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে,তোর বাসায় নিয়ে আশি?
– কবে যেতে চাইছিস
– তোকে ফোন করে জানাব
– বাসায় অপু আছে, আপাকে বলিস ম্যানেজ করে কথা বলতে
– তুই চিন্তা করিস না, আপা যথেষ্ট বুদ্ধিমতী

বাসায় ফিরে গম্ভীর মুখে স্টাডি রুমে বসে রইল মেহবুব, কিছু থ্রিডি ডিজাইন করার বাকি আছে কিন্তু মেহবুবের ইচ্ছে করছে না। ইরিন রুমে এসে মেহবুবের পাশে বসে বলল – কি হয়েছে
মেহবুব ইরিনের দিকে চোখ তুলে তাকালো, নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল – ওরা তোমাকে নিয়ে নিতে চাইছে
– আপনি কি চাইছেন
ইরিনের চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বলল – তুমি বুঝনা আমি কি চাই
– এত টেন্স হচ্ছেন কেন অসুখ করবে
– তুমি বুঝি আমাকে নিয়ে ভাব? ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল মেহবুব
– না ভাবার কি আছে
– তবে কাছে আসতে দাও
– কাছেইতো আছেন
– আরও কাছে যতটুকু আসলে বর -বৌ পূর্ণতা পায়
ইরিন চোখ নামিয়ে নিল
– আপনার ঘুম দরকার, চলুন ঘুমাবেন
মেহবুব ইরিনের কাঁধে নাক ঘঁষে ফিসফিস করে বলল- আমার এই ছন্নছাড়া জীবন তোমার কাছে আশ্রয় চায়ছে ইরা

ইরিনের চোখ জলে ভরে উঠলো, মেহবুব যখনই খুব কাছে আসতে চায় তখনই ইরিন অনুভব করে উনত্রিশ বছরের ছিড়ে যাওয়া এক রঙহীন সুতোর অদৃশ্য টান।এ টান থেকে কি আদৌও সে বেরিয়ে আসতে পারবে?

মেহবুব দরজা খুলে মনির আর তার আপাকে বলল- আপা বসুন, আমি ইরাকে ডেকে আনছি

ইরা শাড়ী চেঞ্জ করে সালোয়ার কামিজ পরেছে, শাড়ীটা সে মেহবুবের জন্য পরে, এই বিশেষ পোশাক অন্য কারো জন্য নয়।
মেহবুব ঘড়ে ঢুকে ইরিনের মুখোমুখি দাঁড়ালো, কোন কথা না বলে ইরিনকে জরিয়ে ধরে গলার কাছে গভীরভাবে চুমু খেল।
ইরিন বলল- কি করছেন, দরজা খোলা
কে শুনে কার কথা, বড্ড বেপরোয়া আজ মেহবুব, নিজের জিনিস নিজের কাছে রাখতে হলে অভদ্র হওয়া ছাড়া উপায় নেই তার।
বেশ কিছু সময় পর মেহবুব ছেড়ে দিল ইরিনকে।
আয়নায় ইরিন দেখলো গলার কাছে গাঢ় হয়ে কয়েক জায়গায় দাগ পরেছে।দোপাট্টা দিয়ে ঢাকতে গেলে মেহবুব বলল- একদম ঢাকবে না
– পাগল নাকি
– আমি যা বলছি তাই করবে
চলবে

মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ১৩
তানিয়া রহমান

লিভিং রুমে মনির আর মনিরের বোন সালমা পাশাপাশি বসে আছে, ইরিন মনিরের মুখোমুখি হয়ে মেহবুবের পাশে বসলো।
সালমা স্মিথ হেসে বলল – কেমন আছ ইরিন
– ভাল,আপনি
– ঐ আছি আর কি
ইরিন খেয়াল করলো মনির অপলকভাবে তার গলার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরিনের মনটা নেচে উঠলো মনিরের চুপসে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে। মনে মনে বলল “কেমন লাগছে মনির? আমারো কষ্ট হতো,তুমি কখনো বুঝতে চাওনি ভালবাসার মানুষকে অন্য কেউ ভালবাসলে কতটা যন্ত্রণা হয়।”
সালমা মেহবুবকে বলল- আমি ইরিনের সাথে আলাদা করে কথা বলতে চাচ্ছি
– ইরা! আপাকে স্টাডি রুমে নিয়ে কথা বল
ইরিন সালমাকে নিয়ে চলে যাবার পর মনির তীক্ষ্ণ চোখে মেহবুবের দিকে তাকিয়ে বলল- তুই কি ওকে ভালবাসিস
– আমার কথা বাদ তোদের সমস্যার সমাধান কর
– ইরিনকে দেখে মনে হচ্ছে তোদের সম্পর্ক অনেক গভীরে পৌঁছেছে
– স্যরি দোস্ত, বুঝতেই পারছিস–,আর এটাতো লিগ্যাল তাই না!
মনিরের ইচ্ছে করছে মেহবুবের মুখটা গুড়িয়ে দিতে,শালা!আমার বৌ নিয়ে ফুর্তি করে আমাকে লিগ্যাল শিখাচ্ছে।
অনেকটা সময় পার হবার পরও ইরিন যখন আসছে না তখন মেহবুব ঘামতে শুরু করলো, মাথা ভারী হয়ে এল,মেহবুব মনিরকে বলল- আমার খারাপ লাগছে, তুই বোস আমি ভিতরে যাচ্ছি
অপুকে ডেকে বলল- ব্লাড প্রেশার মাপ
অপু বাবার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো মেহবুবের শরীর খারাপ করেছে।প্রেশার মেপে দেখলো বেশ বাড়তি।
– বাবা! সকালে মেডিসিন নিয়েছিলে
– হুম
– রেস্ট নাও
– তোমার আন্টিকে ডাক, স্টাডি রুমে আছে
অপু প্রায় দৌড়ে স্টাডি রুমে এল, ইরিনকে হাত ধরে টেনে বলল- তারাতাড়ি এস বাবার শরীর খারাপ করেছে
ইরিন ফ্রিজ থেকে আইস ব্যাগ বের করলো,আম্বিয়াকে ডেকে বলল- তেঁতুলের জুস বানিয়ে নিয়ে আসুন
মেহবুব এসির মধ্যেও দরদর করে ঘামছে, ইরিন অপুকে বলল- এসি কমিয়ে এইটিনে দাও
মেহবুবের টিশার্ট খুলে ভেজা টাওয়াল দিয়ে গা মুছিয়ে দিল, ঘাড়ের কাছে আইস ব্যাগ ধরে বলল- রিল্যাক্স! প্লিজ! আমি বলছিতো টেনশনের কিছু নাই
মেহবুব ইরিনের একটা হাত বুকের কাছে চেপে ধরলো
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে মনির আর সালমা সবই অবলোকন করছে, মনিরের ভিতর ক্ষয়ে যাচ্ছে এক অজানা কষ্টে।
অপু আর চোখে মনির আর সালমার দিকে তাকালো, মনিরের সঙ্গে চোখাচোখি হওয়ায় মনির বলল- হসপিটাল নিয়ে যাই কি বল
অপু দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বাইরে এসে বলল- লাগবে না, আসুন আমরা লিভিঙে বসি

মনির আর সালমা উত্তরায় ফিরে এসেছে।
নিজের রুমে শুয়ে ফেসবুক স্ক্রল করছিল মনির। সালমা দরজায় নক করে বলল – আসব?
শোয়া থেকে উঠে বসে বলল মনির – এস আপা
-কি একটা বিশ্রী ব্যাপার হলো বলতো
– কোন ব্যাপারে বলছো
– তুই যে বললি মেহবুব আর ইরিনের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই আমার কিন্তু সেরকম মনে হচ্ছে না
– আপা! ইরিনের সঙ্গে কেউ টানা সাতদিন কথা বললে ওর প্রেমে পরে যাবে আর সেখানে ওরাতো এক বাসায় থাকছে,বাই দ্যা ওয়ে ইরিন কি বলল, আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো মনির
– কি আর বলবে তার আগেইতো মেহবুব অসুস্থ হয়ে গেল
– তোমার কি মনে হয় ইরিন ফিরে আসবে
– কি দরকার ঝামেলা বাড়ানোর,তার চেয়ে একটা ভাল মেয়ে দেখে বিয়ে কর
– ভাবিনি যে তা নয় কিন্তু পারছি কই, সালামার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে আবার বলল – ওর জন্য আমার এত পুরে কেন আপা
মনিরের কথায় সালমার চোখ ভিজে এল।

অসুস্থ মেহবুবকে দেখার ছুতোয় মনির পরের দিন আবার চলে এল মেহবুবের বাসায়। আম্বিয়া দরজা খুলে দিলে মনির বলল- মেহবুব আছে
-জ্বে আছে
– ডেকে দিন
– ফোন দেন,খালাম্মা -খালুজানের ঘড়ে যাওয়া নিষেধ
মনির লিভিং রুমে বসে শুনতে পেল ইরিন আর মেহবুবের হাসির শব্দ, কল না করে ইরিনের রুমের দিকে এগিয়ে গেল মনির এক দুর্নিবার আকর্ষণে।
ফ্যানের বাতাসে দরজার পর্দা সরে গিয়েছে অনেকটা,তার ফাঁক গলে দেখা যাচ্ছে ইরিন আর মেহবুব বেডে শুয়ে খুনসুটি করছে।মেহবুব ইরিনের পেটে সুরসুরি দিচ্ছে আর কানের কাছে মুখ নিয়ে কি জেন বলছে, ইরিন লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে, হাতের সুরসুরিতে কখনো আবার খিলখিল করে হেসে উঠছে।
মনির লিভিং রুমে ফিরে এসে পকেট থেকে ফোন বের করে মেহবুবকে কল করলো।
হাসির শব্দ নিমিষেই উবে গেল। মেহবুব ফোন রিসিভ করে বলল – দোস্ত কি খবর
– আমি তোর বাসায়
– কখন এলি
– এইতো
– বোস আসছি
বেড থেকে উঠে বসে ইরিনকে বলল মেহবুব – কোথাও যাবে না, আমি আসছি ওনলি টেন মিনিটস
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here