#মধ্যবিত্ত
#পার্টঃ০২
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
৬.
“আজ এতো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলে যে নীল?”
নীল বাসায় ঢু*ক*তে*ই তার বাবা তাকে প্রশ্নটা করে বসলো। নীল চুপচাপ দাঁড়িয়ে বাবার দিকে চোখ রাখলো। হেসে বললো,
“বাবা আসলে আজকে টিউশনি তাড়াতাড়ি শে*ষতো তাই।”
“যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো।”
“আচ্ছা বাবা।”
নীল নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় ধ*পা*স করে বসে পড়ে। ছেলে হয়েও আজ তার ভীষণ কাঁ*দ*তে মন চাইছে। সে কি করে বাবাকে বলবে যে তার টিউশনটি আর নে*ই।
৭.
খাবার টেবিলে তিন ভাইবোন সহ আরিফ সাহেব আর ওনার স্ত্রী খেতে বসেছেন। নিলা চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। আদিও তাই। শুধু খাচ্ছেনা নীল। খাবার হাত দিয়ে নাড়ছে আর ভাবুক হয়ে বসে আছে। আরিফ সাহেব আঁড়চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে খেতে খেতে বললেন,
“তোমার কি কিছু হয়েছে নীল?
নীল আগের ন্যায় ভাবশেল হয়ে আছে। আরিফ সাহেব নিজের স্ত্রীর দিকে এক পলক তাকালেন। আদি মেঘও ভাইয়ের দিকে তাকায়। সবাই সবার দিকে চাহনি দিলো। নীলের কোনো হেলদোল নেই। মেঘ এইবার কুনুই দিয়ে ভাইকে খোঁ*চা দিলো। ভাবনার ছেদ থেকে বেরিয়ে আসে নীল। চমকে সবার দিকে তাকায়। সবার দৃষ্টি নীলের দিকে। নীল বুঝতে না পেরে বললো,
” ক্ কি হয়েছে?
“নীল তোমার কি কিছু হয়েছে?
” না বাবা কিছু হয়নি।”
“তুমি না খেয়ে খাবার নেড়ে যাচ্ছো যে?”
“বাবা..আসলে..
” কি?”
“সামনে পরীক্ষা। বেতন দিতে হবে.. নয়তো…
আরিফ সাহেব আর ছেলেকে কিছু বলতে না দিয়ে বললেন,
“তুমি ওসব নিয়ে ভাইবোনা আব্বা। তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে খাও। কাল বেতন নিয়েই কলেজ যাবে।”
কথাগুলো বলে আরিফ সাহেব অর্ধেক খাবারে পানি ঢে*লে চেয়ার থেকে উঠে চলে যান।
৮.
“ভাইয়া তুমি না প্রাইভেট পড়াও? ওই টাকা কোথায়?”
মেঘের প্রশ্নে নীল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“এতো অল্প শিক্ষিত ছেলের কাছে কি আর ওনারা পড়াবে? আজই আমাকে না করে দিয়েছে যে,ওনারা আর পড়াবেনা। ”
৯.
“গিন্নি আমি পারলাম না বাবার সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে…এইটা বলেই স্ত্রীর হাত দুটো করে কেঁ*দে ফেলেন আরিফ সাহেব।
” তুমি কাঁ*দ*ছো কেনো বলোতো? সৃষ্টিকর্তা যেহেতু দুঃ*খে*র মুখ দেখিয়েছেন, তেমনি দেখো..একদিন সুখের মুখও আমাদের দেখাবেন।”
“গিন্নি হাতে যে একটা কা*না কড়িও নেই৷ কিভাবে আমি মেঘের প্রাইভেটের টাকা দিবো? কিভাবে আমি নীলের বেতন দিবো? কিভাবে আদি’র বেতন দিবো? কীভাবে??
আরিফ সাহেবের স্ত্রী চোখের পানিটুকু মুছে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
১০.
আরিফ সাহেবের স্ত্রী রুমে পুনরায় এসে দেখলেন, আরিফ মিয়া জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। কারো হাতের স্প*র্শ পেয়ে আরিফ সাহেব পেছনে তাকালেন দেখলেন ওনার স্ত্রী হাতে লাল কাপড়ে মু*ড়া*নো কিছু একটা ওনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
” এই নাও।”
“এইগুলো কি গিন্নি?”
“খুলেই দেখোনা।”
আরিফ সাহেব লাল কাপড়ের টু*ক*রো*য় মু*ড়া*নো সেই কাপড়টা ধীর হাতে খুললো। খুলে অবাক চোখে স্ত্রীর দিকে তাকালো। আরিফ সাহেবের স্ত্রী হেসে বললেন,
“আপাতত এই বালা দুখানা বিক্রি করে সব সামলে নাও। আর তো কিছু নেই দেওয়ার।”
“এ তুমি কি বলছো গিন্নি? আমি এই দুটো বালা’য় আজ অব্দি এতো অভাব গেলো তাও হাত দেয়নি। এই বালা দুটোই ছিলো বিয়ের পর তোমাকে দেওয়া আমার থেকে ভালো কিছু উপহার। এরপর অভাব অ*ন*ট*নে তোমাকে কিছুইতো দিতে পারিনি আমি। এমনকি..একটা ভালো শাড়িওনা। আমি এই বালা নিতে পারবোনা গিন্নি। বালা দুখানা আগের জায়গায় রেখে দাও।”
“তুমি আমাকে বিয়ের পর টাকা দিয়ে না হোক ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছো। বিয়ের পর তোমার মনে হয় তুমি আমায় কিছু দাওনি। কিন্তু আমার কাছে নয়৷ কারণ, আমি সুখের সংসারেই বসবাস করছি। যদিও আমাদের টাকা নেই কিন্তু আমাদের তিন সন্তানইতো আমাদের সুখ-শান্তি। ওরা বড় হলে না হয় আবার এমন বালা বানিয়ে নিবো৷ সন্তানদের ভবিষ্যৎ সবার আগে। জীবনে বাঁ*চ*লে এইসব কতো গহনা আমাদের হবে..। তুমি আর না করোনা যাও বালা দুইটা বিক্রি করে সব মি*টি*য়ে নাও।”
আরিফ সাহেব শার্ট পড়তে পড়তে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। ক*ষ্ট হচ্ছে কিন্তু তিনি নিরুপায়।
দরজার বাইরে থেকে সবকিছু দাঁড়িয়ে দেখছিলো নীল। চোখ দুটো পা*নি*তে ট*ল*মল করছে। তার বাবা-মায়ের অতি প্রিয় জিনিসগুলোও তারা তিন ভাইবোনের জন্য হা*রি*য়ে যাচ্ছে। চোখ দুটো মুছে মনে মনে বললো,
“হে খোদা এমন সামর্থ দিও যেনো মা-বাবার সকল ইচ্ছে পূরণ করতে পারি। যেনো তাদের হাতে সুখ তুলে দিতো পারি, যেনো আমার মা-বাবার সকল চোখের পানি একেকটা শা*ন্তি হিসেবে এনে দিতে পারি।”
চলবে….