#মধ্যবিত্ত
#পার্টঃ০৪
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
১৭.
“মা তুমি ভাত খাবেনা?”
রাতের খাবার খাওয়ার সময় মেঘ কথাটি তার মাকে বলতেই তার মা আমতা আমতা করে বলে,
“তোরা আগে খেয়ে নে মা। তারপর আমি খাবো।”
আরিফ মিয়া স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“হ্যাঁ তাইতো..বসে পড়োনা আমাদের সাথে।”
“না পরে সব কাজ গুছিয়ে খেয়ে নিবো। তুমি খাও।”
“মা আমায় আরও ভাত দাওতো…”
আদির কথায় আরিফ সাহেবের স্ত্রী হেসে বললেন,
“এক্ষুনি দিচ্ছি বাবা।”
রান্নাঘরে আসলেন তিনি। ভাতের পাতিলটা বুলিয়ে দেখলেন। আর একমুঠ ভাত আছে। আদি কে দিয়ে দিলে তিনি খাওয়ার কিছুই থাকবেনা। চোখের পা*নি মুছে বললেন,
“আমার সন্তানরা খেলেই আমার খাওয়া হয়ে যাবে।”
১৮.
মেঘ হঠাৎ অর্ধেক ভাত রেখে উঠে বললো,
“আমার আর খেতে ভালো লাগছেনা মা। আমি গেলাম ঘুমাতে।”
নীল অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
“কেনো মেঘ তোমার আবার হঠাৎ কি হলো?”
“কিছুনা ভাইয়া। তরকারিটা ঝা*ল হয়েছে ভীষণ।”
“অন্য তরকারি দেয় মা?”
“না মা আর খাবোনা।”
কথাটি বলেই মেঘ নিজের রুমে চলে আসলো। সে জানে এখন তার মা তার রাখা অর্ধেক ভাতটুকু খাবে। মাকে খাওয়ানোর জন্যইতো সে ইচ্ছে করে ভাত রেখে উঠে এলো৷ সেতো জানে মা নিজে না খেয়ে তাদেরকে সবটুকু দিয়ে দিয়েছিলো।
১৯.
“ভাইয়া জানো? ক্লাসে কেউ আমার সাথে মিশেনা। আমার স্কুল ড্রেস এইরকম দেখে।”
আদির কথায় মেঘ আর নীল চমকে উঠে৷ পড়তে বসেছিলো তিনজন৷ মেঘের সাথেও ক্লাসে এমনটা হয়ে থাকে তাই সে জানে কতোটা খারাপ অনুভূতি হয় সেই সময়টাই। নীল চুপসে আছে। সে তার ভাইকে কি বলবে? নীল আদির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“যে যাই বলুক আদি তুমি ওগুলো কানে নিবেনা। আর সবচেয়ে বড় কথা বিদ্যালয় পোশাক আশাক দেখেনা, কে বেষ্ট পড়াশোনায় ওইটা দেখে। তুমি ক্লাসের টপার। ম্যাচিউরড। চুপচাপ থাকবে। কারো সাথে কথা বলবেনা। পড়ার সময় পড়া দিবে। কি দরকার? মানুষের কথায় কা*ন দেওয়া। নি*ন্দু*কের কাজইতো নি*ন্দা করা।”
মেঘ মনে মনে আওড়ালো, “মানুষের জীবন কতো বিচিত্রময়।”
২০.
“মা বাবার কি হয়েছে?”
“দেখনা নীল তোর বাবা যেনো কি করছে৷ বু*কে ভীষণ ব্য*থা পাচ্ছে।”
কেঁ*দে কেঁ*দে বললেন আরিফ সাহেবের স্ত্রী। নীল মেঘ আদি মায়ের চিৎকার শুনে পড়া থেকে উঠে বাবার রুমে আসে। এসে দেখে আরিফ সাহেব বু*কে হাত দিয়ে ঘ*ন ঘ*ন শ্বা*স ফেলছে। ঘা*ব*ড়ে যায় সবাই। নীল তড়িঘড়ি করে বললো,
“বাবাকে এখনি সামনের ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হবে।”
২১.
“অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা ওনাকে উ*ত্তে*জি*ত করেছে। তাই ওনার এই অবস্থা।”
নীল ডাক্তারের হাত ধরে বললো,
“এখন কি করতে হবে ডক্টর?”
“আপাতত হসপিটালে ওনাকে এডমিট করে রেখে যান। ওনার ট্রিটমেন্ট দরকার। আর কয়েকদিন রেখেই আমরা ছেড়ে দিবো। তখন ওনাকে কোনো টেনশনে রাখা যাবেনা। সবসময় সুস্থ পরিবেশে রাখতে হবে।”
২২.
“মাটির ব্যাংকটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসে নীল। চোখ দুটো ভিজে উঠছে বার বার। টিউশনি করে হাত খরচ বাদে যে টাকাটা সে রাখতো সেই টাকাটাই সে এই মাটির ব্যাংকে ফেলে দিতো। ভেবেছিলো একটা বাইক কিনবে। তাহলে বাবাকে আর হেঁটে কোথাও যেতে হবেনা। মেঘ আদিকেও স্কুলে পৌঁছে দিতে পারবে। কিন্তু এখন! এখন তার কাছে বাইক আগে নয়, আগে হচ্ছে তার বাবা। বাবার ট্রিটমেন্ট করানো যে ভীষণ জরুরী। মনে মনে বললো,
” সব ইচ্ছে কি আর পূরণ হয়? থাকনা কিছু ইচ্ছে অপূর্ণতায়।”
নীল ব্যাংকটা ভেঙ্গে দেখলো মোট ৮৫০০ টাকা হয়েছে। তখনি মেঘ কা*ন্না চোখে এসে বললো,
“ভাইয়া..”
নীল বোনের দিকে তাকায়। মায়াবী চোখে পা*নি জমেছে তার বোনের। আলতোভাবে বললো,
“কি হয়েছে মেঘ?”
“এই নাও কিছু টাকা। জানিনা কতো আছে এতে কিন্তু আশা করি হয়ে যাবে। টিফিনের টাকা জমিয়েছিলাম। জানিনা কতো হয়েছে।”
“মেঘ!”
“ভাইয়া..তুমিই বলোনা…আজ যদি আমরা হিসেব না করে চলতাম তবে কি আর আজ বাবার জন্য টাকা দিতে পারতাম?”
নীল জড়িয়ে ধরে বোনকে৷ দুই ভাইবোনের চোখে খুশির অ*শ্রু*কণা।
চলবে…