#মধ্যবিত্ত
#পার্রঃ০৫_ও_শেষ
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
২৩.
বেলকনিতে সাদা শার্ট পরিহিত, চোখে সাদা ফ্রেমের চশমা পড়ে কেউ একজন গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ১৪ বছর আগের ঘটনা ভাবতেই গাল বেয়ে পানি পড়ছে তার।
“নীল…..”
মায়ের ডাকে নীল অতীতের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। চশমাটা খুলে চো’খের পা’নি তাড়াতাড়ি মুছে নেয়। চশমা পড়তে পেছন ফিরে তাকায়। দেখে তার মা বেলকনির দরজার সামনো দাঁড়িয়ে আছে।
“বলো মা…”
নীলের মা সাদা পাড়ের মধ্যে একটা শাড়ি পড়ে আছেন। ভদ্র মহিলার হাতে দুখান সো’না’র বালা। নীল বানিয়ে দিয়েছে৷ চুলগুলো পাকা পাকা।
“মন খারাপ বাবা?”
“না মা। তুমি থাকতে কি আর আমার মন খা*রা*প করতে পারে?”
“আজ তো আমাদের খুশির দিন বাবা, মন খা*রা*প করিসনা। ”
নীল মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। কা*ন্না ভে*জা কন্ঠে বলে উঠে,
“আজ আমি একজন বড় বিজনেসম্যান মা। কিন্তু আফসোস বাবা দেখে যেতে পারলোনা। আমার বাবাটা সুচিকিৎসার অভাবে মা*রা গেছে৷ অথচ আজ আমাদের কোনো কিছুর অভাব নেই। গাড়ি, বাড়ি সব আছে আমাদের। আগের মতো দু টু*ক*রো মাং*স করে থালায় নিতে হয়না। মা…মাগো…আমাদের বাবার ক*ষ্টের বিনিময় তাকে যে আমরা দিতে পারলাম না।”
ছেলের এমন কান্না দেখে দীর্ঘশ্বাস নেন ভদ্রমহিলা। চোখের কর্ণিশে জমা হয় টলমলে পা*নি। বারবার মনে পড়ে ওইসব আ*ত্মী*য় স্বজনদের কথা, যারা তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ায়নি। প্রথম প্রথম অবশ্য দয়া দেখিয়েছিলো। তারপর? তারপরতো খবরও নেয়নি।
২৪.
আদি রুমে বসে আছে। তখনি একটা কল আসে। কলটা ধরতেই ওপাশ থেকে একজন বললো,
“উকিল সাহেব আজকের কেইসটায় আমরা জিতবোতো?”
আদি মুচকি হেসে বলে, “সময় হলেই দেখতে পাবেন।”
কলটা কেটে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। বেলকনিতে গিয়ে বেতের সোফায় শুনে বললো,
“বাবা..আজ আমি একজন আদর্শ লয়ার। তোমার স্বপ্ন ছিলো আমি যেনো লয়ার হয়। আজ তো আমি লয়ার হয়েছি বাবা। আমিতো আমার কথা রেখেছি বাবা। কিন্তু তুমি! তুমি যে তোমার কথা রাখোনি..। চলে গেলে যে আমাদের একা করে।”
আদির ক*ষ্টে বু*ক*টা ফেঁ*টে যাচ্ছে। আজ চারিদিকে কোনো কিছুর অভাব না থাকা সত্বেও মনে হচ্ছে সবকিছুর মাঝেই অভাব। “বাবা” নামক ব্যক্তিটির ভীষণভাবে অভাব।
২৫.
প্লেনে বসে আছে মেঘ। আকাশপথে দেশের মাটিতে পা রাখবে সে। লন্ডন থেকে দেশে ফিরছে। আজ তার নামের পাশে ডাক্তার উপাধিটা যুক্ত হয়েছে। আনমনে ভাবছে,
“তার বাবা যখন মা*রা যায় তখন তার মা গ্রামের বাড়ির ভিটেখানি বিক্রি করে তাদের তিন ভাইবোনকে পড়াশোনা করায়। বাবার শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করছে দেখে মায়ের প্রতি মেঘের অসীম অভিমান চা*পা ছিলো। কিন্তু যখন বুঝতে শিখলো তখন বুঝতে পারলো যে, মা যে তার নিরু*পায় ছিলো৷ মেঘ চোখের পা*নি মুছে মনে মনে বললো,
” বাবা…আপনাকে আজ অনেক মিস করছি৷ আজ আপনি থাকলে হয়তো কোনো দুঃ*খের আঁচ লাগতোনা আপনার গাঁয়ে। আজ আমি ডক্টর হয়েছি বাবা। ডক্টর..যেই চিকিৎসার অভাবে আপনি মা*রা গেছেন, সেই সুচিকিৎসা আজ আমি মানুষকে দিচ্ছি। কোনো সন্তান যেনো তার বাবাকে সুচিকিৎসার অভাবে হারাতে না হয় এর জন্যই আজ আমি ডক্টর হয়েছি। আপনি হয়তো নেই, তবে আমাদের মাঝে আছে আপনার আদর্শ।”
এইসব ভাবতেই মেঘের চোখ ভি*জে উঠে।
_________সমাপ্ত_______
মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানদের শত শত জীবন কাহিনী আছে যা আমি আমার ছোট্ট গল্পে লিখেও শে*ষ করতে পারবোনা। ভেবেছিলাম আরও বড় করবো তবে সময় হয়ে উঠছেনা। কিছুটা ব্যস্ততায় আছি। তবে এতটুকু সময়ের মাঝে যতটুকু সম্ভব তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
“স্বপ্ন আছে আমার শত শত,
পূরণ করতে পারিনা কারণ, আমি মধ্যবিত্ত।”