মনময়ূরী,১৩,১৪

0
1115

মনময়ূরী,১৩,১৪
Anamika

এশার যখন ঘুম ভাঙে সে নিজেকে অন্য এক পরিবেশে আবিষ্কার করে। ঘুমটা একটু ছুটতেই তার মনে পরে সে তো এখন অন্য এক জগতে মাহিরের কাছে এসেছে। অচেনা দেশে, অচেনা শহরে শুধু এক অচেনা মানুষের টানে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে লাগেজ থেকে কামিজ আর প্লাজো বের করে কাপড় চেঞ্জ করে নেয় সে। অন্ধকার নেমেছে শহর জুরে, রুম থেকে বেরিয়ে আসে এশা। পুরো ফ্ল্যাটটা ভালো মতো পর্যবেক্ষণ করে নেয় সে। পরেই আবার খেয়াল হয় মাহির তাকে বলে গিয়েছিলো খাবার খেয়ে নিতে। এখন যদি এসে শোনে এশা কিছু খায়নি তবে নির্ঘাত রেগে যাবে সে। এশা আর দেরি করে না সোজা চলে যায় কিচেনে। খুঁজতে হয়নি, মাহির একেবারে ঠিকঠিক বলে গিয়েছিলো। কিচেনে গিয়ে ফ্রীজ খুলতেই একটা পিৎজা দেখতে পায় সে। জিহ্বাটা ঠোঁটের চারপাশে ঘুরিয়ে ‘উম্মম’ আওয়াজ করে হাত বাড়িয়ে পিৎজাটা বের করে। সেটা নিয়ে এসে বসে পড়ে সে। এখন আয়েশ করে খাবে। ইয়াম্মি। কিন্তু ঢাকনা সরাতেই একটা চিরকুট দেখে তার মেজাজ বিগড়ে যায়। চিরকুটে লিখা আছে,
-ওয়ে পিৎজা পেটুক, খবরদার যদি ঠান্ডা ঠান্ডা খেয়েছিস তো। যা ওভেন এ গরম করে নিয়ে তারপর খা।
এশা চিনতে পারে এই হাতের লিখা মাহিরের ই। সে আর দেরি করে না উঠে গরম করে নেয়। এবার খাবে। এমনিতেও খেতে পারতো কিন্তু তার রেকর্ড আছে ফ্রীজ থেকে বের করে সাথে সাথে যতবার কিছু খেয়েছে জ্বর-সর্দি বাধিয়েই ছেড়েছে। মাহিরের সেটাও মনে আছে! এতোগুলো বছর এই দেশে থেকেও এশার একটুতে অসুস্থ হওয়ার বিষয়টা তার মাথায় ছিল! অবাক হলেও ভালোই লাগে এশার কাছে। সে দেরি না করে খেতে শুরু করে।

খাওয়া শেষ করে ঘণ্টা-খানেক ঘরেই মাঝেই ঘোরাঘুরি করে সে। এইভাবে একটা ফ্ল্যাটের মাঝে এক ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করা অনেক বোরিং একটা বিষয় তবুও করতেই হলো। কী করবে সে, মাহির তো ফেরার নামই নিচ্ছে না। না অনেক হয়েছে আর এইভাবে এইটুকু জায়গার মাঝে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। একই কাজ বারবার করতে কারই বা ভালো লাগে? এশা গিয়ে বিছানায় বসে। কিছুক্ষণ বসে থেকে ফোন হাতে নিয়ে আবার রেখে দেয়। ফোনের সিম এখনো চেঞ্জ করা হয়নি তাই কিছুই করা যাবে। উফফফ! বিরক্তিকর। সে বালিশ টেনে কোলে নিয়ে সেটার উপর হাতের কুনুই ভর দিয়ে দুই গালে হাত দিয়ে বসে থাকে। অপেক্ষা করে মাহিরের। কিন্তু এতোটা সময় পেরিয়ে গেল সে আসলোই না। এদিকে এখন অবধি বাবা-মায়ের সাথে কথা বলা হয়ে ওঠেনি। চিন্তা করবে না অবশ্য কেনো না মাহির আগেই জানিয়ে দিয়েছে এশার পৌঁছে যাওয়ার কথাটা। তবুও এশা একা একা মন খারাপ করে বসে থাকবে এর থেকে তো ভালো হতো বাড়িতে কথা বলে নিতো। ফোন আবারও হাতে নেয় এশা। ওয়াইফাই অন করে সে। কিন্তু এখানেও নিরাশ হতে হয়। পাসওয়ার্ড দেওয়া আছে যে! আবারও রেখে দেয় ফোনটা। সামনে তাকাতেই নজরে আসে মাহিরের ল্যাপটপ। সে ল্যাপটপ নিয়ে বিছার উপর পা তুলে বসে পড়ে। ল্যাপটপ খুলে আবারও তাকে নিরাশ হতে হয়। ‘এখানেও পাসওয়ার্ড’ বিরক্তির সাথে তার কণ্ঠে অস্পষ্ট স্বরে বেরিয়ে আসে কথাটা। ‘ধ্যাত’ বলে ল্যাপটপ পাশে রেখে শুয়ে পড়ে সে। কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে থাকতেই ঘুম এসে ভর করে চোখে।

মাহির যখন ফেরে তখন অনেকটা রাত হয়েছে। সে বেশ চিন্তিত এইভাবে এশা’কে একা ফেলে এতোটা সময় বাইরে থাকা ঠিক হয়নি তার। না জানি মেয়েটা কী ভাবছে, হয়তো একা একা ভয় পাচ্ছে। সে এই মুহুর্তে গ্রাউন্ড ফ্লোরের লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে। লিফট এখন আছে বিশ নম্বর ফ্লোরে আর তাকে যেতে হবে সেভেন্থ ফ্লোরে। এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে অনেকটা সময় লাগবে। সে থার্ড ফ্লোর অবধি সিঁড়ি বেয়ে ওঠে অতঃপর লিফট পেয়ে যায়। ব্যস আর কিছু মিনিট পরে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে সে। ডিনারের জন্য খাবার সাথে নিয়েই এসেছে। এশার নিশ্চয়ই খিদে পেয়ে গেছে এতক্ষণে। মাহির যখন রুমে প্রবেশ করে তখন এশা ঘুমিয়ে ছিল। ঘুমটা বেশ গভীর বলে তাকে আর জাগাতে ইচ্ছে হলো না মাহিরের। সে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানার অন্যপাশে থাকা ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে। কিছু কাজ আছে কমপ্লিট করতে হবে।

কাজ করতে করতে ঘাড়টা টেনে আসে। সে ঘাড় ঘুরিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। ঘাড় ঘোরাতে ঘোরাতে একটা সময় এশার উপর নজর আটকে যায় তার। বাচ্চাদের মতো করেই ঘুমোয় মেয়েটা ঠিক আগের মতো। হেসে ফেলে মাহির। এই পিচ্চি মেয়েটাকে কিনা এতো কঠোর বানিয়ে ফেলেছিলো তার মা। মাহিরের মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা। সেদিন মেয়েটা স্কলারশিপ এপ্লাই করতেও চাইছিল না। বলেছিল তার ভয় করে। কী সুন্দর অভিনয় করতে পারে সে! একেবারে নিখুঁত, কেউ ধরতেই পারবে না। এতোগুলো বছর মাহির এই দেশে তাই জানেও না মেয়েটার সাথে ঠিক কী কী ঘটেছে যার ফলে এমন হয়ে গেছে সে। তবে যাই হোক না কেনো মাহির ঠিক ওকে আগের মতো করে ছাড়বে। চঞ্চল প্রাণবন্ত এশা। হ্যা, এমনটাই তো ছিল এশা। সকলকে হাসিয়ে মারতো, আবার জ্বালিয়েও মারতো।

সেই রাতের পরে তিন দিন কথা বলেনি এশা মাহিরের সাথে। শেষমেশ না পেরে মাহির তার চাচ্চু মানে এশার বাবার কাছে কল করে৷ বলে,
-চাচ্চু, তুমি একবার ওকে বুঝিয়ে বলবে প্লিজ। ও যদি স্কলারশিপ পেয়ে যায় তবে ওর ফিউচারটাই অন্যরকম হবে। ওকে কারো উপরে ডিপেন্ড করে থাকতেই হবে না। এটা ওর ক্যারিয়ারের জন্য খুব জরুরি চাচ্চু।
চাচ্চুর দীর্ঘশ্বাস শোনে মাহির। নিরাশ হয়ে বলে,
-তুমি কিছু করবে না তাই তো?
-এমন নয় মাহির।
-তবে কেমন চাচ্চু?
-তোর কী মনে হয় একজন বাবা হয়ে আমি চাইবো না আমার মেয়ের ভালোটা হোক।
-অবশ্যই চাইবে, তাই তো উপায় না পেয়ে তোমার সাথে কথ বলছি চাচ্চু। একবার বোঝাও ওকে, তোমার কথা নিশ্চয়ই বুঝবে ও। আচ্ছা বোঝাতে হবে না জাস্ট আমার সাথে একবার কথা বলতে বলো প্লিজ।
-দেখ বাবা….
উনি কথা বলেন না। হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়ায় মাহির বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। চিন্তিত কণ্ঠে বারবার ডাকতে থাকে সে,
-চাচ্চু, হ্যালো… চাচ্চু শুনতে পারছো তুমি?
ওপাশ থেকে অন্য একটা কণ্ঠস্বর শোনা যায়। শুনে মাহির চুপ করে থাকে। বোঝার চেষ্টা করে কী হচ্ছে! কণ্ঠস্বর মাহিরের বাবার, তিনি ভাইকে প্রশ্ন করছেন,
-লাইনে কে আছে? মাহির?
-জি, দাদা।
-দেখি আমায় দে।
এরপর কি হলো বুঝলো না মাহির। চাচ্চু কী বাবার হাতে ফোনটা দিয়েছে? কে জানে? কিছুক্ষণ পেরোতেই মাহিরের বাবা কথা বলেন।
-কেমন আছিস মাহির?
-ভালো বাবা।
-তুমি কেমন আছো বাবা?
-শারীরিক দিক থেকে ভালোই আছি তবে তোদের অবস্থা দেখে মন ভালো নেই। তাই এসেছিলাম তোর সাথে কথা বলবো বলে। এসে দেখি তোর চাচ্চু আগে থেকেই তোর সাথে ফোনে আছে।
-কিছু বলবে বাবা?
-হ্যা, বলবো।
-বলো কী বলবে।
-তুই খুব চিন্তিত আমি জানি। এশা পরীক্ষা দেবে চিন্তা করিস না। আমি কথা বলবো ওর সাথে।
-বাবা তুমি?
-হ্যা বাবা আমি। আমিই কথা বলবো। ওকে রাজি করাব। তবে সমস্যাটা সেখানে নয় জানিস তো, সমস্যা অন্য কোথাও সৃষ্টি হয়েছে।
-বুঝছি বাবা, একটু বুঝিয়ে বলবে প্লিজ?
-সমস্যার সৃষ্টি তোর মা করেছে।
-মা!
-অবাক হওয়ার কিছুই নেই মাহির। তোর মায়ের দ্বারা এমনটাই সম্ভব।
-কিন্তু কেনো বাবা?
-আসলে তোর মা……….

continued……..

Anamika

#মনময়ূরী
১৪.

-তোর মা চাচ্ছে না এশা কোনোভাবে বাইরে যাক, তোর ওখানে তো মোটেও না।
-মায়ের হঠাৎ কী হলো বলো তো!
-তোর মা পাগল হয়েছে।
বলেই হাসেন মাহিরের বাবা এরপরে বলেন,
-আসলে কী হয়েছে বল তো তুই সাত সাতটা বছর ধরে ওই দেশেই পড়ে আছিস মাঝখানে এসেছিস তাও আবার হাতে গোণা পাঁচ বার। তোর মা এশা’কে খুব ভালোবাসে মাহির, সে চায় এশা নিজের জীবনে এগিয়ে যাক কিন্তু তোর জন্য স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। লোভ বুঝলি তো… লোভ, নিজ সন্তানকে কাছে, চোখের সামনে পাওয়ার লোভ চেপে ধরেছে তোর মা’কে। তার ধারণা এশা একবার তোর কাছে চলে গেলে তুই তো ফিরবিই না ওকেও ফিরতে দিবি না। তোরা দু’টোই তো আছিস আমাদের। তোরাই দূরে চলে গেলে কী করে চলবে বলতে পারিস? তবুও আমরা নিজেদের শক্ত করে নিতে পারি, সামলে নিতে পারি। তোর মাও পেরেছে, আমার বিশ্বাস আরও পারবে সে। কিন্তু ওই যে ভয়। তার কথা অনুযায়ী এশা এখানে থাকলে তুই ঠিকই ফিরে আসবি কিন্তু….
-আমি বুঝেছি বাবা। একবার মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দিতে পারবে বাবা?
-আজ নয়, এখন তোর মা’কে কিছু বলতে গেলেই সে নাকোচ করে বসবে। সে জানে তুই ঠিক কোন বিষয়ে তার সাথে কথা বলবি। আমি আগে কথা বলি, স্বাভাবিক হোক তখন আমি নিজেই কল দেবো। তবে হ্যা, তুই এখন এশার সাথে কথা বলে নে।
-এশা তো কথা বলতেই চাইছে না বাবা। ইভেন ও ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে তুমি জানো?
-স্বাভাবিক।
-এটা কী করে স্বাভাবিক হয় বাবা?
-তোর মা এশা’কে একপ্রকার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেছে শুধু পায়ে ধরতে বাকি রেখেছিল বুঝলি। এশা বুঝতে পেরে আগেই রাজি হয়ে গেছে। এখন তোর মা শর্তও জুড়ে দিয়েছে এর মাঝে তাকে টেনে আনা যাবে না। যা করার এশাকেই করতে হবে। তোকে কীভাবে মেনেজ করবে তা এশার উপর। তাই হয়তো কথা বলছে না যেন তুই কিছু বুঝে না যাস।
-এই মেয়েটাও না!
-তুই চিন্তা করিস না, আমি দেখছি এদিকটা নাগালের মধ্যে আসলেই তোকে জানাবো। ভালো থাকিস।
-নিজের খেয়াল রেখো বাবা।
-খেয়াল রাখার মতো জোয়ান ছেলে থাকতেও নেই যখন, তখন তো নিজেকেই খেয়াল রাখতে হবে।
-বাবা!
মাহিরের আহত কণ্ঠস্বর। কথা ঘোরাতে ছেলেকে প্রশ্ন করেন,
-তুই কী এখনো রেগে আছিস আমার উপর?
-কোন বিষয়ে?
-বিয়ের বিষয়টা।
-ওসব কথা থাক না বাবা।
বাবা ছেলের কথা শেষ হলো। মাহির ফোনটা রেখে দুই হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে কয়েকবার গালের সাথে হাত ঘষে হাত জোড় করে দুই হাতের তর্জনি আঙুল কপালে ঠেকিয়ে বসে থাকে। মায়ের এমন কান্ডে সে অবাক হয় আবার ভাবে মায়ের জায়গাতে অন্যকেউ থাকলেও হয়তো এমনটাই করতো। কোন মা পারে এমনভাবে সহ্য করতে? দেশে তো যে কোনো মুহুর্তে কাজ পেয়ে যাবে এখানে পরিবারের থেকে দূরে থাকা মাহিরের সাজে না। তবুও আছে। যেই কারণে ছিল সেটা তো আর নেই এবার তবে ফেরার পালা। মা রাজি না হলে আর কিছু করার তো নেই। শেষ বারের মতো চেষ্টা করেও না হলে মাহির ফিরে যাবে।

-কেমন আছো মা?
-ভালো।
-যা বলবি বলে ফেল।
-মা এশা’কে আটকে রেখে কী পাবে তুমি? আমি তো ফিরে আসবো না উল্টো এশার ফিউচারের সাথে ওর ইচ্ছের সাথেই খেলা করা হবে তোমার, এছাড়া তো আর কিছু হাসিল হবে না।
মাহিরের মায়ের চেহারায় রাগী ভাব ফুটে ওঠে। উনি ভাবেন এশা সবটা বলে দিয়েছে মাহির কে। তাই তিনি বলেন,
-ওহ খবর তবে তোর কানে দেওয়া হয়ে গেছে! বারন করেছিলাম তবুও মেয়েটা নিজের মনের করলো। আমি তো যেনো অদৃশ্য কেউ, আমার কোনো অস্তিত্ব নেই তোদের জীবনে।
-আবারও ভুল করছো মা।
-কী ভুল করছি আমি বলতে পারিস আমায়? এমন তো নয় যে তুই এইখানে থেকে কিছু করতে পারবি না তবে ওই দূর দেশে কেনো পড়ে আছিস। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর আমার ছেলে দূরে পড়ে আছে আর আমার চাওয়াটা ভুল। বল?
-আমি সেটা বলছি না মা। বোঝার চেষ্টা তো করো।
-কী চেষ্টা করবো শুনি?
-একটুখানি শান্ত হও প্লিজ।
ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে মাহির মিটিমিটি হাসে। তার মায়ের রাগ মানেই যা বলবে তা শুনবে তবে ট্যারা প্রক্রিয়ায়। শান্ত হতে বলতেই কেমন চুপ হয়ে গেছে! যাক এবার যা বলার বলতে হবে ভেবে বলে,
-মা, তুমি মনে করছো এশা’কে ওইখানে আটকে রাখলে আমি ফিরবো তবে ভুল মনে করছো তুমি। এমন মনে করার কোনো যুক্তি নেই। তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো বিয়েটা বাবা জোর করে দিয়েছিলেন, আমি কিন্তু এশা’কে বিয়ে করতে চাইনি। হ্যা এটা ঠিক যে আমি বিয়ে না করলে আরও অনেককেই পেয়ে যেতে আবার এমনও হতে পারে এশা নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করতো বিয়ের চিন্তা ছেড়ে দিয়ে। কিন্তু বাবা সেদিন জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলো। মা, আমার ফিরে আসার কারণ জানো তুমি? আমি বিয়েটা মেনে নিতে পারিনি তাই নিজেই ছুটি ক্যান্সেল করেছিলাম, অফিস থেকে কিছুই করা হয়নি। মিথ্যে বলে চলে এসেছিলাম। বলতে পারো পালিয়েছিলাম একটা সম্পর্ক থেকে। সম্পর্কটা এশা আর আমার সম্পর্ক। এখন ভাববে এখন এসব কথার মানে কী? আসলে মা তুমি হয়তো ভাবছো এশার টানে আমি দেশে ফিরে আসবো সেটা ভুল তার প্রমাণ দিতেই এসব বলা। আমার কোনো টান-ফান নেই ওর প্রতি যে দৌঁড়ে দৌঁড়ে আসবো আমি। টান থাকলে অবশ্যই মিথ্যে বলে বিয়ের ছয়দিনের মাথায় চলে আসতাম না। যাই হোক শোনো, আমার মাঝে একটা অপরাধ বোধ কাজ করে জানো তো। মনে হয় যেন আমার কারণেই এশার লাইফটা শেষ হয়ে যেতে বসেছে। ওর ইচ্ছে আছে মা হায়ার স্টাডিজ-এর জন্য স্কলারশিপ পেলেই সেটা গ্রহণ করবে। মা তুমি এশা’কে খুব ভালোবাসো আমি জানি, অন্য কোনো জায়গায় হলে তোমরা ওকে নিয়ে টেনশনে থাকবে সেখানে এইখানে আমি থাকবো। নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে তোমরা। আর এখনও তো ঠিকই হয়নি এশা কোন দেশে যাচ্ছে। তবে তুমি জেদ ছেড়ে যদি দোয়া করতে ওর জন্য তবে আমি খুব খুশি হতাম মা। মা, তুমি কী চাও আমি সারাজীবন একটা অপরাধবোধে ভুগতে থাকি। তুমি আমার মা, তোমার উপরেই আজ সবটা ছেড়ে দিলাম। তুমি যদি নিজে মুখে বলো আমাকে সারাজীবন এই গিল্ট নিয়ে বাঁচতে হবে তবে সাথে সাথে আমি ফিরে আসবো। একটুও দেরি করবো না। কথা দিলাম তোমায়।
ওপাশ থেকে কানো শব্দ এলো না। মাহির ফোন কানের কাছে ধরেই রইলো। কিছুক্ষণ বাদে ফোনটা কেটে গেল। মাহির উঠে পানি খেয়ে আবার বসলো। এখন বাকিটা বাবার উপর। ঠিক জায়গায় দিয়েছে কথাগুলো। এখন মায়ের মন গলতেই হবে। আর যদি কিছু বেঁচে যায় সেটা বাবা গলিয়ে দেবে।

সন্ধ্যে কিছু সময় পরে মাহিরের বাবা বাড়িতে আসেন কিছু পুরোনো কাগজপত্র প্রয়োজন যেগুলো তাদের ঘরের আলমারিতে রাখা আছে। তিনি ঘরের গেট খুলে অবাক হোন। এইসময় তো ঘরের আলো জালিয়ে রাখার কথা, বন্ধ করে রেখেছে কেনো? তবে কী মাহিরের মা আশে পাশে কারো বাড়িতে গিয়েছে! না, তা তো মনে হয় না। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে পা রাখার মানুষ তার স্ত্রী নন। তবে? তিনি ডাক দেন,
-মাহিরের মা।
-এইতো আমি।
আওয়াজটা ঘরের ভেতর থেকেই এলো। উনি এগিয়ে গিয়ে সুইচ বোর্ড হাতরে লাইটের সুইচ অন করে পেছনে ফিরলেন। স্ত্রীর চেহারার হাবভাব ভালো ঠেকলো না তার কাছে। এগিয়ে গিয়ে পাশে বসে প্রশ্ন করলেন,
-সেকি, কী হয়েছে এইভাবে বসে আছো যে? চোখ মুখের এমন অবস্থা কেনো?
উত্তর পাওয়া গেল না এই প্রশ্নের উল্টো তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হলো,
-বসো আমি পানি নিয়ে আসি। পানির সাথে কিছু আনবো? খাবে?
-দাঁড়াও। কোথায় যাচ্ছ তুমি?
-বারে, বলছি তো পানি নিয়ে আসি।
-লাগবে না পানি, এসে বসো এখানে।
স্বামীর ধমক শুনে চুপসে যান মাহিরের মা। তিনি গিয়ে বসেন। এবার নরম সুরে প্রশ্ন করেন মাহিরের বাবা,
-কী হয়েছে?
-ছেলেটা কী আমার ফিরবে না?
-কে বলেছে ফিরবে না?
-সে নিজেই তো বললো।
-ফিরবে ঠিকই ফিরবে। কিন্তু ফেরার পথটা তো তুমিই বন্ধ করে রেখেছো।
-আমি?
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মাহিরের মা।

Continued……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here