মনময়ূরী,১৭,১৮

0
1017

মনময়ূরী,১৭,১৮
Anamika

এশা অল্প একটুখানি খাবার মুখে দিয়ে উঠে যেতে নিলেই মাহির আটকায় তাকে। হাত ধরে রাখায় এশা এগোতে পারে না তবুও একবার ফিরে দেখে না সে। মাহির প্রশ্ন করে,
-এইটুকু খেলে কী করে চলবে এশা?
এশা না ফিরেই অন্যদিকে মুখ করেই বললো,
-আর যাই হোক মরে তো যাব না।
এশার কণ্ঠে অভিমান, কণ্ঠস্বর কাঁপা। মনে হয় কাঁদছে মেয়েটা। মাহির নিজেও উঠে দাঁড়ায়। বলে,
-লুক অ্যাট মি এশা।
এশা তবুও ফেরে না। মাহিরের কঠিন গলা,
-এশা এদিকে ফেরো বলছি।
এশা ফিরে তাকায়। সে কাঁদছে। এশা’কে কাঁদতে দেখে মাহিরের চেহারার কঠিন ভাবটা নরম হয়ে এলো। হাতটা ছেড়ে দুই হাত দিয়ে এশার দুই গালে লেগে থাকা পানি মুছে দিয়ে বললো,
-ডোন্ট ক্রাই। তোর কী হয়েছে বল আমায়?
এশা মাহিরের চোখের দিকে চেয়ে থেকে বলে,
-বললে তুমি বুঝবে?
-কেনো বুঝবো না!
এশ বলতে চেয়েও থেমে যায় তারপর বলে,
-থাক, আমার অনেক তাড়া আছে। ক্লাস আছে ইম্পর্ট্যান্ট খুব। যেতে হবে, ছাড়ো আমায়।
মাহির এশার ব্যবহারে অবাক না হয়ে পারে না। মেয়েটা কিছু একটা বলতে চায় আবার নিজেকে আড়াল করে ফেলে। কী হয়েছে ওর! জানতে তো হবেই। এইভাবে ছেড়ে দিলে তো চলে না। মেয়েটা নিজেকে নিজেই কষ্ট দিচ্ছে কিন্তু যতক্ষণ না কারণ জানতে পারছে ততক্ষণ তো আর সমাধান করতে পারে না। যাই হোক এই মেয়েকে জোর করলে কিছু বের করতে পারবে না সেটা জানে মাহির তাই জোর না করে এখন যেতে দেওয়াটাই ঠিক হবে। তারপরেও বলে,
-একটু ওয়েট কর আমিও তো যাব। যাওয়ার সময় তোকে ড্রপ করে দেবো।
এশা সরাসরি প্রস্তাব নাকোচ করে বলে,
-আমি একাই যেতে পারবো এমনিতেও তুমি আমি একসাথে বাঁধা পড়লেও আমাদের পথ তো ভিন্ন।
মাহির এশার কথার মানে কিছুটা আঁচ করতে পারে তাই তাকে প্রশ্ন করার জন্য প্রস্তুত হয় সেই সময়টুকুতেই এশা বেরিয়ে যায় যার ফলে আর প্রশ্ন করা হয়ে ওঠে না ওর। রাতে এসে এর একটা সমাধান করতে হবে না হলে চলবে না। এইভাবে আর কতো? মাহির বেরিয়ে যায় নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

অফিসের কাজে মন বসাতে পারছে না মাহির। কিছুতেই তার মস্তিষ্ক থেকে এশার কান্না মাখা মুখের ছবিটা সরতেই চাইছে না। মাহির শুরু থেকে ভাবতে শুরু করে। সবকিছু ঠিকই চলছিলো দেখতে দেখতে এশার সেমিস্টার ফাইনাল চলে এলো আর তখন থেকেই মেয়েটা কেমন মনমরা হয়ে গেল। আজও মাহিরের মনে আছে এশা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কাটিয়ে দিত। কোনো কারণ ছাড়াই তার চেহারা মলিন হয়ে থাকতো। প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর আসতো না৷ তবে এসবের কিছুই তার পড়াশোনায় প্রভাব ফেলেনি তা রেজাল্ট দেখলেই বোঝা গিয়েছে। তবে এসবের কারণ আজও খুঁজে পায়নি মাহির৷ আজ নিজেকে তৈরি করতে হবে। এশাকে আজ যে করেই হোক ছাড়া চলবে না। প্রশ্নের উত্তরগুলো পাওয়া যে খুবই প্রয়োজনীয়। উত্তরগুলো পেয়ে গেলে হয়তো মাহির পারবে সেই সমস্যার সমাধান করতে। এশা’কে এইভাবে দেখে আর সহ্য হচ্ছে না তার।

রাতে বাড়ি ফিরেছে মাহির। শীতল এক পরিবেশ, বাড়ির ভেতরটা অন্ধকারে ছেয়ে আছে। দেখেই কিছু একটার ভয় বাসা বেঁধে ফেলে মাহিরের মনে। এমনটা তো কখনো হয়নি যে ফিরে এসে বাড়িটা স্তব্ধ পেয়েছে মাহির। তবে আজ কেনো? এশা কী ফেরেনি? না, তা কী করে হয়। বেশি হলে সন্ধ্যে হতে পারে তার বাড়ি ফিরতে তবে এখন তো রাত দশটা বাজে। এই মুহুর্তে এশার বাড়িতেই থাকার কথা। ঘুমিয়ে পড়েনি তো! ভেবেই মাহির এগিয়ে যায় রুমের দিকে। রুমের দরজা ভেজানো আছে। সেটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে আবারও অবাক হয়। এখানেও অন্ধকার। অন্য দিনগুলোতে এশা এই সময় পড়ার টেবিলে বইয়ের মাঝে মুখ গুঁজে বসে থাকে। আজ সবকিছুই কেমন যেনো গোলমেলে লাগছে। রুমের ভেতরের আলো জ্বালায় মাহির। আলো জ্বলে ওঠার সাথে সাথে দেখতে পায় এশা’কে। মেয়েটা বিছানায় শুয়ে রয়েছে। মনে হয় ঘুমোচ্ছে। তবুও মাহির ডাক দেয় দুই চার বার। এশার কোনো সাড়া শব্দ নেই। মেয়েটা ঘুমোলে এমনই, কোনোদিকে হুঁস থাকে না তার। এই মুহুর্তে তাকে কেউ তুলে নিয়ে গেলেও টের পাবে না। কথাটা মনে আসতেই একটু শব্দ করে হাসে মাহির। কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে আসে সে। এসে এশার মাথার কাছে বসে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে ডাকতে থাকে।
-এশা, এই এশা ওঠ।
এশা কোনো রকম সাড়া দেয় না। আলতো করে গালে হাত রেখে তাকে আবারও ডাকে এবারও একই রকম, কোনো সাড় শব্দ নেই ওর মাঝে। মাহির ঘাবড়ে যায়। এশার বাহু ধরে ঝাকিয়ে তোলার চেষ্টা করে তবুও ওঠে না মেয়েটা। কে জানে কবে থেকে এইভাবে পড়ে আছে ও। একটু ভালো করে খেয়াল করতেই দেখতে পায় এশা এখনও সকালের পোশাকটাই পরে আছে। এমন তো হয় না কখনো যে এশা বাসায় ফিরে চেঞ্জ না করে রেস্ট নিতে যাবে৷ তার মানে আসার পরেই কিছু ঘটেছে৷ এমনিতেও ক’দিন থেকে খাওয়াতে অনিয়ম করে যাচ্ছিলো মেয়েটা। আজ সকালেও তো এমনই করেছে। দুপরে হয়তো কিছু খায়নি। উফফ আজ অন্যদিনের মতো মাহির খোঁজও নেয়নি। এমন ইররেসপন্সিবল হলো কবে থেকে ও!

এশা চোখ মেলেছে দেখে মাহিরের বিষন্নতার চাদরে ঢেকে থাকা মুখটাতে হাসির রেখা দেখা দেয়। হন্তদন্ত হয়ে প্রশ্ন করে,
-তুই ঠিক আছিস তো?
এশা চোখ খুলে একটুখানি রুমটা পর্যবেক্ষণ করে তারপর মাহিরের গালে হাত রেখে প্রশ্ন করে,
-তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? আর… এটা কোন জায়গা?
-হাসপাতাল।
-আমি এখানে কেনো?
-তুই তো সেন্স হারিয়ে পড়ে ছিলি ঘরে। তুই জানিস আমার উপর দিয়ে কেমন ঝড় বয়ে গেছে৷ তোর কিছু হয়ে গেলে কী হতো বলতো!
-কী আবার হতো, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া দ্বায়িত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে যেতে।
এশার কণ্ঠে অভিমান। মেয়েটা এমন কেনো বলছে? তবে কী ওর এমন বিহেভিয়ারের পেছনে এইটাই কারণ! নাকি অন্যকিছু আছে? যাই হোক এখন ওসব ভাবতে চায় না মাহির। এশা এই মুহুর্তে ঠিক আছে সেটাই অনেক বড় পাওয়া তার কাছে। সকাল পেরিয়েছে অনেক আগেই। দুপুর হতে চললো এখন মাহিরের প্রচন্ড খিদে পাচ্ছে। রাতেই এশা’কে এখানে নিয়ে এসেছিলো ও। মানুষ চিন্তার মাঝে থাকলে নাওয়া খাওয়া সব ভুলে যায়, মাহিরেত সাথেও তাই হয়েছে কিন্তু এই মুহুর্তে চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথে খিদেটা সজাগ হয়ে গেছে। এশাকেও তো খাওয়াতে হবে। এখন থেকে জোর করে খাওয়াবে এশা’কে তবুও ওর ঠিকমতো খেতে হবে। এমন উইক হয়েছে যে এখন শরীরে বল নেই মেয়েটার। মাহির বলে,
-তুই রেস্ট নে আমি তোর খাবার নিয়ে আসি। হসপিটালের ফ্রেশ বয়েল্ড সবজি।
ইশা মুখটা বিকৃত করে বলে,
-ইয়াক, কোনো মশলা থাকে না ওতে। আমি ওসব খাব না, প্লিইইজ।
-আগে যখন বলেছিলাম ঠিকমতো খেতে তখন তো শুনিসনি এখন শাস্তি ভোগ কর। আমি এখানে কিছু করতে পারবো না। মাফ করবি। ডাক্তারের উপদেশ মানতে বাধ্য আমি। একদিক দিয়ে ভেবে দেখলাম তেল মশলার খাবার খাওয়াতেও তোকে তেল দিতে হতো, তাও খেতিস না। বদলা নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি হাতছাড়া করছি না আমি।
-তোমার মতো মানুষ আমি আর দু’টো দেখিনি।
-কী বলতো এমন মানুষ এক পিস ই আছে এই পৃথিবীতে আর সেটা তোর বর। মানে আমি।
-মানো তুমি!
-কী?
-না, কিছু না।
-আচ্ছা থাক কিছুক্ষণ একা, আমি আসছি।

মাহির যখন এশার জন্য খাবার আনতে যাচ্ছিলো তখন ওর ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে৷ পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখে ‘Baba’ শব্দটা ভাসছে। কাল রাতে এশা’কে ওই অবস্থায় দেখে আর বাড়িতে কথা বলার কথা খেয়াল ছিল না, ওখানে সকলে হয়তো চিন্তা করছে। মাহির ফোন রিসিভ করে কথা বলে নেয়। এশা’র ব্যপারে জানালো না। এশা তো এখন সুস্থই আছে। কী প্রয়োজন বলে টেনশন দেওয়ার। আর চাচী তিনি শুনলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন সিওর। তাই না বলাটাই ঠিক মনে হলো মাহিরের কাছে।

continued……

Anamika

#মনময়ূরী
১৮.

এশা’কে বাড়িতে নিয়ে এসেছে আজ দু’দিন হলো। এশা এই দুইদিন ভার্সিটি যায়নি মাহির অবশ্য অফিস করেছে তবে জলদিই ফিরতে হয়েছে তার। আজও ব্যতিক্রম হয়নি। মাহির ফিরে এসে ফ্রেশ হয়েই এশার পাশে বসে। এশা তখন শুয়ে ছিল, মাহির এশার মাথায় হাত রাখতেই সে চোখ মেলে তাকায়। মাহির হাসে সেই হাসির উত্তরে এশাও হাসে। মলিন সেই হাসিটা দেখে মাহির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রশ্ন করে,
-জেগে ছিলি এতক্ষণ!
-হু।
-তুই কী কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত এশা?
-কোই না তো।
খুব সহজেই মিথ্যে বলে দিলো মেয়েটা। মাহির সেটা দেখে বেশ অবাক হয় আবার অবাক ভাব কাটতেও সময় লাগে না৷ কারণটাই এমন। মাহির আবারও প্রশ্ন করে,
-তোর শরীরের অবস্থা কেমন?
-ভালোই তো।
-কাল থেকে ভার্সিটিতে যেতে পারবি?
এশা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। মাহির সেটা খেয়াল করে এশার গাল টেনে দিয়ে বলে,
-তুই থাক আমি গিয়ে দেখি ডিনারের জন্য কী করা যায়।
মাহির উঠতে নিলেই এশা আটকে নেয় তাকে। মাহিরের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি খেয়াল করে এশা বলে,
-যেতে হবে না। আমি সব করেই রেখেছি।
মাহির রেগে যায়। রেগে বলে,
-কোন সাহসে তুই রান্না করতে গিয়েছিস?
এশা ঢোক গেলে তারপর বলে,
-আসলে আমার শরীরটা একটু ঠিক মনে হচ্ছিলো তো ভাবলাম তুমি অফিস শেষে এসে ক্লান্ত শরীরে আবার রান্না করবে তাও যখন আমি সুস্থই আছি তখন, সেটা তো মেনে নেওয়া যায় না বলো।
-খুব কথা শিখেছিস দেখছি।
-ও মা! আমি তো কথা সেই ছোট্ট বেলায় শিখেছি যেমনটা তুমি শিখেছ।
-হয়েছে, ড্রামাবাজ। আর ড্রামা করতে হবে না তোমার। রেস্ট নে তবে আমি কিছু কাজ সেরে ফেলি সেই ফাঁকে।
-আচ্ছা।
এশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মাহির উঠে যায় সেখান থেকে। এশা’কে আরেকটু সময় দিয়ে তারপর তার সাথে বসতে হবে। বাবার থেকে যদি কিছুটা জেনেছে সে তবে পুরোপুরি সবটা এশাই বলতে পারবে।

আলো জ্বালিয়ে রাখলে এশার সমস্যা হবে ভেবে মাহির ড্রইং রুমে এসে বসে কাজ করছিলো মাহির। কাজ করতে করতে ঘাড় টেনে আসায় ঘাড়ের ঘুরিয়ে ব্যায়াম করে নেয় সে৷ তখনই পেছনে নজর যায় তার। রুমের আলো জ্বলছে। কৌতূহল বশত সে উঠে দাঁড়ায় এরপর এগিয়ে যায় সেইদিকে। গিয়ে দেখে এশা নিজের বইগুলো নাড়াচাড়া করছে। মাহির এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে,
-কিছু খুঁজছিস?
এশা মাহিরের কথায় কান দিলো না। সে নিজের মতো রয়েছে যা দেখে মাহির এগিয়ে গিয়ে তাকে থামায়। এশা মাহিরের দিকে ফিরে প্রশ্ন করে,
-ওহ তুমি। কাজ হয়ে গেছে তোমার?
-না হয়নি।
-তো?
-তুই এইখানে কী করছিস? কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বল আমি খুঁজে দিচ্ছি।
-ওই একটা ইম্পর্ট্যান্ট নোট খুঁজছি। খুব প্রয়োজন।
-এখন নোটস দিয়ে কী হবে শুনি?
-পড়াশোনা হবে। এই ছাড়া তো আমার কোনো কাজ নেই বলো।
-থাপ্পড় চিনিস?
-তুমি আমায় মারবে!
কাঁদো কাঁদো চেহারা বানিয়ে কথাটা বললো এশা৷ এমন সিরিয়াস মুহুর্তেও মেয়েটা মজা করছে, কী অদ্ভুত! মাহির এশার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে সোফাতে বসায় তারপর এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে সেটা পান করতে বলে। এশা কথা না বাড়িয়ে মাহির যেমন যেমন করতে বলে ঠিক তেমনটাই করে।

এশা এখন চুপটি মেরে বসে আছে আর মাহিরের কথা শুনছে। মাহির বলছে,
-আমাদের অসুখ করে বা এমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়ে যাই যার ফলে পড়াশোনায় দু এক দিনের গ্যাপ হয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টা তো ন্যাচেরাল এশা। স্বাভাবিক একটা বিষয়কে এইভাবে বড় ইস্যু বানিয়ে ফেলছিস কেনো?
-আমি কী করলাম?
এশা ঘাবড়ে গিয়ে প্রশ্ন করে। ওর মনে হয় যেনো ও ধরা খেয়েছে মাহিরের কাছে। মাহির প্রশ্ন করলে এখন কী হবে; সে কী উত্তর দেবে?
-তুই কোনো একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত…
বলে থামে মাহির। এশার ডান হাতটা নিজের দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
-সহজ করে বুঝি তোর মাথায় তো আবার বাংলা কম ঢোকে। ওভারথিংকিং বা বেশি ভেবে ফেলা যেটাকে বলে আরকি। তুই সেই কাজটাই করছিস। এখনও অনেক সময় আছে তোর হাতে পড়াশোনা করবি সেটেলড হবি। চাইলে আমার থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারিস…
এইটুকু বলার পরে এশার দিকে দেখে মাহির। ঠিক যা ধরেছিলো তাই। এশার চোখদুটো বড় বড় করে চেয়ে আছে তারই দিকে। মাহির আবার বলে,
-চাইলেই আমার থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারিস বাট অবশ্যই তার পেছনে তোর কোনো রিজন থাকতে হবে। এমনি এমনি তুই ভেবে নিলি আমি তোর সাথে থাকতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করছি না আর সেই ভেবে নিজের মাঝেই চিন্তার পাহাড় বানিয়ে ফেললি তারপর একসময় নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লি। এটা কেমন মনে হয় তোর কাছে এশা? আমি বলি, আমার কাছে এসব পুরোপুরি ভিত্তিহীন মনে হয়।
এই মুহুর্তে এসে এশা মুখ খোলে,
-কিন্তু বড় মা যে বলেছিল তুমি জোর করে আমার সাথে আছো। এমনকি আমার ক্যারিয়ার গড়ে দেবে বলেই এখানে পড়ে আছো। আমি না থাকলে তার ছেলে তার থেকে কখনো দূরে থাকতো না। আমি তোমার কাছে একটা বোঝা মাত্র যা তোমার বাবা তোমার উপর চাপিয়ে দিয়েছে। সেই দ্বায়িত্ব নামক বোঝা থেকে মুক্তি পেতে তুমি আমায় সহ্য করে যাচ্ছ। এমনটা হলে তো আমাকে সবার আগে এইসব পড়াশোনার চ্যাপ্ট্যার ক্লোজ করতে হবে। আচ্ছা সময় থমকে আছে কেনো বলো তো। দ্রুত চলে যাক না। আমার পড়াশোনা শেষ তুমিও দ্বায়িত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে।
এশার কথাগুলো অগোছালো হলেও বেশ বুঝতে পারলো মাহির। বাবার সাথে কথা বলে এইটুকু তো জানতে পেরেছিল যে তার মা এশাকে কিছু একটা বলেছে তবে এইসব বলেছে সেটা আশা করেনি সে। মেয়েটা তো রিতীমত ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এশা’কে এখান অবধি আনাতে মা’কে ইমোশনালি যেই যেই কথাগুলো শুনিয়েছিলো মা সেগুলো উল্টো এশার উপরেই এপ্লাই করবে কে জানতো। এখন এশাকে বোঝানোও তো সহজ হবে না। উফফ মাও না। এখন এশাকে কিছু বলতে গেলেই সে উল্টো বুঝবে। আরও রিস্কি হবে সেটা। এরথেকে ভালো আপাতত কিছুটা অপেক্ষা করবে তারপর যা করার সবটা করবে।

পেরিয়ে যায় দু’টো সপ্তাহ। সেদিন মাহিরের অফিসের অফ ডে ছিল বলে সে বাড়িতে তবে এশার একটা প্রজেক্ট সাবমিট করতে হতো বলে সে বেরিয়েছিলো। আসার পর থেকে একটু অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিলো তাকে। মাহির বিষয়টা খেয়াল করলেও চুপ করে থাকে। অপেক্ষা করে সঠিক সময় এলে প্রশ্ন করবে। তবে সময়টা সঠিক কিনা জানে না মাহির। এশা তার সামনেই বসে ছিল হঠাৎ তার কথায় সোজা হয়ে বসে মাহির। এশা কী বলতে চায় বোঝার চেষ্টা করছে সে।
-আচ্ছা বড় বাবা যদি তোমায় জোর না করতো তবে কী তুমি আমার সাথে আজ এইভাবে থাকতে?
মাহিরের চাহনিতে অবাক হওয়ার ছাপ স্পষ্ট। এশার প্রশ্নের মানে সে বোঝেনি। এশা আবারও বলে,
-ধরো আমি নেই। তুমি তো কাউকে না কাউকে বিয়ে করতে যে সত্যি সত্যি তোমার বউ হতো। তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে। এমনকে সে ডাকলে তুমি ছুঁটে দেশে ফিরে যেতে তাই না! আর আমাকে দেখো, আমায় বিয়ে করে কী পেলে তুমি! কিছু না। শুধু উটকো একটা ঝামেলা হয়ে রয়েছি আমি তোমার জীবনে। এই দেখো না সেমিস্টার ফাইনালের পরে গ্যাপ ছিল কিছুদিন খুব সহজে আমরা দেশে গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারতাম৷ আমার কারণেই তোমারও যাওয়া হলো না বলো।
মাহির সচকিত হয়ে প্রশ্ন করে,
-তুই আবার মায়ের সাথে কথা বলেছিস?
এশা উত্তর দেয় না। মাহির উঠে চলে যায় ঘরে। এশা একইভাবে বসে রয়।
মাহিরের মনে আছে এশা ফিরতে চেয়েছিল, দু’দিনের জন্য হলেও যেতে চেয়েছিল। মাহির নিজেই কাজের বাহানা দিয়ে আটকে রাখে। আজ উল্টো কথা শুনে বুঝে যায় আবারও তার মা কিছু বলেছে এশা’কে। মায়ের পাগলামিগুলো নিতে পারে না মাহির। যাওয়ার কথা প্রায় কনফার্ম ছিল কিন্তু গিয়ে ফিরতে পারবে না জানতো। তাই সিদ্ধান্ত নেয় অন্তত এশার পড়া কমপ্লিট হলে তারপর ফিরবে। এরপর যদি আর নাও আসতে পারে তবে সমস্যা থাকবে না কোনো। কিন্তু এইভাবে বার বার মেয়েটাকে এইসব বলে তার মাঝে অপরাধ বোধের সৃষ্টি করতে থাকলে সে তো ধীরে ধীরে মেন্টালি উইক হয়ে পড়বে।

continued……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here