মনময়ূরী,১৯,২০

0
901

মনময়ূরী,১৯,২০
Anamika

সময়ের সাথে সাথে এশা স্বাভাবিক হতে থাকে, মাহির মুখে না বললেও কাজের মাধ্যমে বোঝাতে চেষ্টা করে এশা শুধু মাত্র তার কাছে একটা দ্বায়িত্ব নয় যা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সে টানতে বাধ্য। মাহির এশা’কে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় কারণ তার ভালোলাগে। মাহির এও বুঝিয়ে দেয় সে কোনো বাচ্চা নয় যে কারো কথা শুনে চলবে। সে এশাকে নিয়ে এসেছে কারণ সে এশা’কে খুশি দেখতে চায়। সে এশার খেয়াল রাখে কারণ তাতে তার ভালোলাগা মিশে থাকে। এশা মাহিরের করা ইঙ্গিত গুলো বোঝে তবে চুপ করে থাকে। হতে পারে সে একটু বেশিই ভেবে নিচ্ছে আবার তার ভাবনা গুলোও ঠিক হতে পারে। এর উত্তর সে জানে না। সে শুধু অপেক্ষায় থাকে কখন মাহির নিজে থেকে নিজের কথাগুলো তার সামনে রাখবে, এইভাবে ইশারা ইঙ্গিতে আর কতোদিন!

মাহির আজ আসার সময় ডিনারের ব্যবস্থা করেই আসে মানে খাবার অর্ডার করে আসে। ঠিক সময়ে চলে আসবে সেটা। আজ এইটুকু সময় সে এশার সাথে আলাদা করে কাটাবে ভেবে নিয়েছে। অন্য দিনগুলোতে এমন হয় যে মাহির এসে নিজে কিচেনে ঢোকে বা এশা যায়। তারপর খাওয়ার সময়টুকুই একসাথে বসা হয়। মাহিরের আবার খেতে খেতে কথা বলা পছন্দ না যদিও এশা বকবক করতো আগে কিন্তু এখন আর তেমনটা নেই। শেষ বার দেশে ফিরেছিল বিয়ের সময় তার আগের বার যেবার গিয়েছিলো সেবার এশা’কে দেখে বেশ অবাক হয়েছিলো মাহির। তার মাঝে চাঞ্চল্য থাকলেও কিছু কিছু অভ্যেসে পরিবর্তন যার কারণে একটা সময় মাহিরের কাছে বকাও খেতে হতো তার। ওই দিন গুলোকে খুব মিস করে মাহির। এশার চাঞ্চল্যকর স্বভাব যেন আর তার মাঝে নেই। কেনো নেই আজ পর্যন্ত জানতে পারেনি সে। জানতে ইচ্ছে করে, খুব ইচ্ছে করে তবুও প্রশ্ন করে উঠতে পারে না। আজ জেনেই ছাড়বে প্রয়োজনে হাত পা বেঁধে চাকু দেখিয়ে কথা বের করবে। এইটুকু মাথায় আসতেই মাহির আপনমনে হেসে দেয়। সে কী তবে এখন ভিলেনগিরি শুরু করবে! করতেই পারে, অন্যের বউয়ের সাথে তো আর করছে না। যা করছে সব নিজের বউয়ের সাথেই করছে। উহু করছে না, করবে বলে ভাবছে।

মাহির যখন রুমে প্রবেশ করে তখন সেখানে এশা ছিল না। পরে আবার ভাবতেই মনে হয় ও হয়তো কিচেন পেরিয়ে ওপাশের বারান্দায় থাকতে পারে। জায়গাটা ফাঁকা হওয়ায় খুব ভালো লাগে সেখানে। মাহির রুম থেকে বেরিয়ে একবার উঁকি দিয়ে দেখে নেয়, হ্যা যা ভেবেছিল ঠিক তাই। এশা ওই সাইডটাতেই বসে আছে। পা দুটো দেখা যাচ্ছে শুধু। এশা কী শুয়ে আছে? মনে তো তাই হচ্ছে। মাহির দ্রুত পায়ে রুমের ভেতরে গিয়ে ওয়ারড্রবের সব নিচে থাকা বড় ড্রয়ারটা খুলে দেখে। যা ভেবেছিল তাই। এশা ফ্লোরিং এর যত প্রয়োজনীয় বস্তু ছিল সব বের করেছে। ও কী আগেই দেখেছিল এসব! হতেও পারে। কেনো না মাহির তাকে এই বিষয়ে কিছু বলেনি কখনো। যাই হোক এসব ভেবে কাজ নেই বরং কাজ হলো সেটা যেটা ভেবে বাড়িতে পা রেখেছে সে। যেটা ভেবে রাতের খাবার অর্ডার করে বাড়ি ফিরেছে সে। এশার সাথে সময় কাটানোর জন্যই তো আজ এতোকিছু। তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হতে চলে যায় মাহির। আজ একেবারে গোসল সেরেই বের হলো। খুব ক্লান্তি না হলে রাতের সময়টা গোসল করা এভয়েড করেই চলে সে। তবে আজ কী যে হলো কে জানে, হতে পারে নারভাসনেসের কারণেই এমন হলো।

উফফ মাহির আজ তোর সাহস সব গেল কোথায় বল তো? এইটুকু পিচ্চি মেয়েকে ভয় পাচ্ছিস। যা না। সাহস দেখা, যা হবে তা পরে দেখা যাবে। নিজের নিজের উদ্দেশ্যে বলে কথাগুলো। কয়েকবার শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে সে এরপর এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখতে পায় এশা শুয়ে আছে, দৃষ্টি তার বাইরের শহরের দিকে। শীতল বাতাস বইছে যা একটু পর পর এসে এশা’কে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এশা শিউরে উঠছে বার বার। মাহির চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকে সেখানেই। এশাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এশার ঠোঁটে লেগে থাকা হাসিটা বেশ ভালো লাগে মাহিরের কাছে। মনে যেনো প্রশান্তি এনে দেয় এই হাসিটা। এই হাসি দেখলে তার সাথে হাসতে ইচ্ছে করে। এশা হঠাৎ চোখ বন্ধ করে নিলো। মাহির খেয়াল করলো এশার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে ঠিক কানের পাশ বেয়ে নিচের চাদরটা ভিজিয়ে দিচ্ছে। এশা কাঁদছে! মাহিরের সহ্য হয় না সেটা। সে এক পা এগোয় তারপরেই খেয়াল করে ঠোঁটে এখনও সেই হাসিটা লেগে আছে। এশা পাশে থাকা বালিশটা টেনে নিজের পেটের উপর রেখে সেটাকে দুই হাতের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে ফেলে। মাহিরের কী হলো বুঝতে পারলো না। একটু একটু করে এগিয়ে গেল সে এশার দিকে। এশা তার উপস্থিতি টের পায়নি মনে হয়। মাহির সুযোগ বুঝে এশার পাশে শুয়ে পড়ে। এশা তখনও হারিয়ে আছে নিজের মাঝেই।
-কাকে নিয়ে এতো ভাবিস যে আমি এসে পাশে শুয়ে পড়লাম তারও খেয়াল নেই তোর!
এশার কানে মাহির কণ্ঠস্বর পৌঁছুতেই সে সাথেসাথে চোখ মেলে তাকায়। মাহির’কে দেখে কিছুটা চমকে যায় সে। উঠে বসে পড়ে। মাহির সেই সুযোগে বাঁকা হয়ে এশার বালিশের উপর মাথা রেখে আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে পড়ে তারপর এশাকে টান দেয়। এশার মাথাটা এসে মাহিরের বুকের উপর পড়ে এবং পেটের উপর এশার পিঠ। টান দিতেই পজিশন এমন হয় এশার চুলগুলো মাহিরের অন্য হাতের নিচে চাপা পড়ে যায়। এশা ব্যথা পেয়ে ‘আহ!’ বলে মাথায় হাত রাখে৷ মাহির সেটা টের পেয়ে একটু কাত হয়ে এশার চুলগুলো হাতের নিচ থেকে সরিয়ে দিয়ে আবারও আগের মতো শুয়ে এশাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নেয়। এশা নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে বলে,
-কী করছো বলো তো?
-চুপ আর একটা কথা বলার আগে আমি কিছু কথা ক্লিয়ার করে নিই, এই বাসায় আমি আর তুই ছাড়া অন্য কেউ নেই তারমানে জানিস?
এশা কাঁপা কণ্ঠে বলে,
-ক..কী?
-এর মানে এই যে তুই এই বাহানায় উঠতে পারবি না যে কেউ এসে দেখে ফেলবে।
কথটা শুনে এশা ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনের দিকটা নিচের দিকে নিয়ে উপরের দিকে চোখ তুলে মাহিরকে দেখার চেষ্টা করে কিন্তু সফল হয় না। মাহির বিষয়টা বুঝতে পেরে নিজেই মাথা তুলে এশা’কে দর্শন দিয়ে দেয়। এশা মাহিরের পেটে গুঁতো মেরে ফসফস করতে থাকে আর বলে,
-কিছু সময় যেতেই তো বলবে খুধা লেগেছে খাবার দে। আমি কোথায় থেকে খাবার এনে দেব বলো?
মাহির এশার প্রশ্ন শুনে গাল টেনে বলে,
-এর ব্যবস্থা আগেই করে এসেছি। খাবার সময়মতো এসে যাবে চিন্তা নেই। এখন চুপটি করে শুয়ে থাক দেখি। ঠিক লক্ষী বউয়ের মতো।
এশা বউ শব্দট শুনে কিছুটা দমে যায় কিন্তু বেশিক্ষণের জন্য নয়। সে কিছু সময় পরেই বলে,
-তুমি তো পাশে শুয়ে থাকতে পারো এইভাবে ধরে রাখার মানে কী?
-শোন না, তোকে দেখলাম বুঝলি আমার সাইডের বালিশ নিয়ে জড়িয়ে কাউকে মনে করে বেশ চেপে ধরে রেখেছিলি। এখন আমার বালিশটা তোর কাছে, তোর বালিশ আমার নিচে মানে আমার মাথার নিচে তাই তোকে দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে।
এইটুকু শোনার পরেই এশা ক্ষেপে যায়। সে জোর করে উঠে বসে। নিজের হাতে পাশে পড়ে থাকা বালিশটা মাহিরের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে,
-নাও তোমার বালিশ ওটাকেই চেপে ধরে যার মন চায় তার স্বপ্নে ডুবে যাও। আমি এটা একেবারেই এলাও করবো না তুমি আমায় জড়িয়ে ধরে অন্য কাউকে নিয়ে ভাববে।
এশা রেগে গিয়ে স্থান ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত হতেই মাহির তার হাত ধরে আটকে নেয়। এশা তাকায়, মাহির দেখে ও কাঁদছে তবে এবার ঠোঁটে হাসি নেয়। এই কান্না দেখে মাহিরের ভালো লাগে। এটা যে তার জন্য পজিটিভ সাইন।

-হ্যালো, তুই কী আমার অফিসে কন্ট্যাক্ট করেছিলি?
-হুম।
-কেনো?
-তুমি ফোন তুলছিলে না তাই।
-ওহ। আমি তো বাইরে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজে ছিলাম।
-কী এমন ইম্পর্ট্যান্ট কাজ শুনি!
-ও বাবা, অভিমানের জল দেখি টগবগ করে ফুটছে!
-মজা করো না তো।
-সারপ্রাইজ, বলা যাবে না।
-আমার জন্য?
-হু।
এশা খুশি হয়ে যায় কিন্তু ভয়ও হয় তার। সেই একটা সারপ্রাইজ এর কারণেই তো তার জীবনটা থমকে গিয়েছিল একসময়।

Continued….

Anamika

#মনময়ূরী
২০.

এশা’র মনে একটা ভয় বাসা বেঁধেছিল। ভয়, মাহিরকে হারিয়ে ফেলার ভয়। যদিও মাহিরের কাজে মনে হয়নি কখনো এশা’কে শুধু দ্বায়িত্ব মনে করে সে বরং এটাই প্রতিত হয় যে মাহির এশা’কে ভালোবাসে। ভালোবাসে অনেকটা ভালোবাসে। যার কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এই অতিরিক্ত ভালোবাসাটাই এশার ভয়, মাহির যে এখনও নিজের মুখে বলেনি ‘ভালোবাসি’। আচ্ছা মুখে বলাটাই কী সব! না, এশা যেটা অনুভব করতে পারছে, মাহির যা ইঙ্গিত দিচ্ছে সেটাই তো অনেক কিছু বলে যায় তবুও কেনো মন চায় সে নিজে এসে বলুক ‘ভালোবাসি’।

এশার হাতে বই, চোখ বইয়ের দিকেই তবে অন্যদিনের মতো মনোযোগ বইয়ের মাঝে নেই। আজ মনোযোগ মাহিরের দিকে। মাহিরকে আড়চোখে পর্যবেক্ষণ করছে সে। কিন্তু মাহিরের সেদিকে কোনো নজর নেই। সে একমনে কাজ করেই যাচ্ছে। এশার বিরক্ত লাগে। আন-রোমান্টিক হাজব্যান্ড একটা হুহ। এশা ভাবে কিছু একটা করতে হবে। এইভাবে চলা যাবে না। সে ভাবতে ভাবতেই দাঁত দিয়ে নখ কাঁটতে শুরু করে। মাহির তখন পেপার পেন্সিল হাতে কিছু একটার প্ল্যান চার্ট বানাতে ব্যস্ত ছিল। সে পেপারের দিকে চোখ রেখেই বললো,
-তোকে কী আমি না খাইয়ে রেখেছি?
এশার কানে যেতেই সে খেয়াল করে নখ কাঁটছে। সে যে এতোক্ষণ নখ কাঁটছিল তার খেয়ালই ছিল না। এমনটাই হয় সবসময়। কোনো কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকলে আর কোনো দিকের কথা মাথাতেই থাকে না।
-কিছু জানার থাকলে বলে ফেল দেখি।
কথাটা বলে মাহির চোখ তুলে এশার দিকে তাকায়। চোখাচোখি হতেই এশা চোখ নামিয়ে দেয়। মাহির উঠে এগিয়ে আসে এশার দিকে। এশার হাত থেকে বইটা নিয়ে বন্ধ করে রেখে দেয় টেবিলে। এশা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
-এটা কী হল?
মাহির এশা’র দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবার নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে বসে পড়ে। পেন্সিল হাতে নিয়ে বলে,
-শুধু শুধু বই নিয়ে বসে ছিলিস তাই রেখে দিয়েছি।
-আমি পড়ছিলাম তো।
এশার কথা শুনে মাহির বিরক্তি ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এশার দিকে। এশা তা বুঝতে পেরে ঢোক গেলে। মাহির হাতের ইশারা করে যার মানে দাঁড়ায় সে এশা’কে তার পাশে গিয়ে বসতে বলছে। এশা শব্দ করেই হেঁটে যায় মাহিরের কাছে। তার অর্থ এশা রেগে গিয়েছে। কিন্তু তাতে কী হবে! মাহিরের উপর এর কোনো প্রভাব পড়লো না সে বসেই রইলো আগের মতোই। এশা দাঁড়িয়ে রইলো। মাহির বিরক্তির সাথে বলে,
-এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে তোকে ডাকা হয়নি। বোস পাশে।
এশা বসে পড়ে। সে বলে,
-আমি তোমায় বিরক্ত করতে চাইনি তুমিই আমার পড়াতে ব্যাঘাত ঘটিয়ে আমায় এইখানে ডাকলে।
-ওই ড্রামাবাজ, আর নাটক করতে হবে না।
-আমি মোটেও নাটক করছি না।
-তাই?
-হ্যা, তাই।
মাহির এবার একটু নড়ে বসে। একটা পা উপরে তুলে আরেক পা ঝুলিয়ে ডান হাতটা সোফার পেছনে তুলে দিয়ে বসে। এশার মুখোমুখি। মাহিরকে ওইভাবে বসতে দেখে এশা কিছুটা নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে। মাহির বলে,
-শোন এশা যখন তোকে কেউ বার বার পর্যবেক্ষণ করে বা একটু পরপর তোর দিকে তাকায় তখন তুই যতোই মনোযোগ দিয়ে কাজ করিস না কেনো ডিস্টার্ব ফিল হয়৷ আমারও হচ্ছিলো। অপেক্ষা করছিলাম নিজে থেকেই বলবি কী চলছে তোর মনে কিন্তু তুই তো সেই তখন থেকে আড়চোখে দেখেই যাচ্ছিলি। না নিজের পড়ায় মন ছিল তোর আর না তো আমায় কাজে মন দিতে দিচ্ছিলিস। এবার বল দেখি হয়েছেটা কী?
-ক..কোই কিছু ন..ন..না তো।
এশার এমন আটকে আটকে কথা বলা দেখে মাহিরের আরোও সন্দেহ হলো। সে বললো,
-বলবি না তো!
-না।
সরাসরি কথাটা বলার পরে কথা ঘোরাতে এশা বলে,
-না মানে যেখানে কিছু নেই সেখানে আমি কী এখন বানিয়ে বানিয়ে বলবো নাকি বলো তো!
-আচ্ছা।
মাহির কিছুক্ষণ এশার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের কাগজপত্র গুটিয়ে নিয়ে রুমের বাইরে চলে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায়।
-তুই তবে পড়। মন দিয়ে পড়বি। আমি থাকলে ডিস্টার্ব ফিল হতে পারে তাই আমি বাকি কাজটা ড্রইংরুমে কামপ্লিট করে নেবো।
মাহির যেতেই এশা নিজের মাথায় গাট্টা মারলো। মাহির নিজে থেকেই উত্তর যেতে চাইছিল তাকে প্রশ্ন করলেই হতো।

এশার মাথায় আসলে অনেক কিছুই ঘুরছে। তার মধ্যে একটা মাহিরের বলা সারপ্রাইজ। সারপ্রাইজের কথা মাহির এশা’কে বলেছিল কিন্তু যখন বাসায় ফেরে তখন তার হাতে কিছুই ছিল না। এশা কত্ত আশা নিয়ে বসে ছিল আজ একটা সারপ্রাইজ পাবে। পুরোনো সারপ্রাইজের কথা ভেবে ভয় পেলেও পরে সেই ভয়টা কেটে গিয়েছিল অবশ্য। কিন্তু মাহির যখন খালি হাতে ফিরলো তখন মনটাই ভেঙে গেল। এইভাবে ধোঁকা দিতে পারলো মাহির! সারপ্রাইজ বলেও কিছুই আনলো না। এশার কাঁদতে ইচ্ছে করছে। ভেবেছিল মাহিরের মনে আছে কিন্তু না এখন দেখছে কিছুই মনে নেই। সে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যায় উঁকি মেরে দেখে মাহিরকে। মাহির কাজের মাঝে ডুবে আছে। আর কিছু মিনিট পরেই বারটা বাজবে আর মাহির! তার কোনো হেলদোল নেই! ধ্যাত,… ধ্যাত… ধ্যাত…. এশা কতো আশায় ছিল মাহির এই স্পেশাল দিনকে আরও স্পেশাল বানিয়ে ফেলবে কিন্তু না। সেটা আর হলো কোই। সে তো কাজে ডুবে আছে। সে কাজে ডুবে আছে তাতে এশার কী! পারলে সাঁতার কাটুক গিয়ে এশা ঘুমোবে। হ্যা, ঘুমোবে। আজ খাবেও না। সে না খেলেই বা কার কী!

সবে ঘুমটা গাঢ় হয়েছে আর এমনি কেউ ধাক্কা দিচ্ছে। আওয়াজটা কী ভয়ংকর শোনাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো রাক্ষুসে কণ্ঠে এশার নাম নেওয়া হচ্ছে। ঘুমের মাঝে মনে হয় এমনই আওয়াজ শোনা যায়! ঘুমটা কাটতেই আওয়াজটা স্পষ্ট হলো। মাহিরের আওয়াজ। সে এশা’র নাম নিয়ে ডেকে যাচ্ছে৷ মাঝেমাঝে কাঁধে ধাক্কা দিচ্ছে। এশা হুড়মুড়িয়ে উঠে বসে। ঘুম জড়ানো চোখদুটো পিটপিট করে সামনে দেখে আবার বন্ধ করে নেয়। কেউই তো নেই সামনে। শুয়ে যেতে নিলেই পেছনে বাধা অনুভব করে। পেছন হাত বাড়িয়ে কিছু একটা হাতের মুঠোয় আসে তার। সাথে সাথে একটা শব্দ শোনা যায়। ‘আহ!’ এই শব্দটা শুনে পেছনে ফিরে দেখে মাহির বসে আছে। একটু খেয়াল করে বুঝতে পারে সে যা ধরেছিল সেটা মাহিরের গাল ছিল। আর সেই গালে ভালোই নখ বসিয়েছে সে ঘুমের ঘোরে। আঘাত দেখে ঘুম পালিয়ে গেল।

এশা মাথা নিচু করে প্রশ্ন করে,
-কেনো জাগালে আমায়? দেখো কেমন আঘাত পেলে তুমি।
মাহির গালে হাত দিয়ে বলে,
-সে কিছু হয়নি। ঠিক হয়ে যাবে। বিবাহিত পুরুষদের এমন আঘাত লাগা স্বাভাবিক।
এশা বুঝতে পারলো মাহির কোন দিকে ইঙ্গিত করছে। সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
-যাও তো সরো। আমি ঘুমোবো।
-না খেয়ে নো ঘুম। চল ওঠ।
-আমি খাবো না৷
-আমি বলছি মানে খেতে হবে।
-আমি খাচ্ছি না।
বলেই এশা শুয়ে পড়ে। এবার যত চেষ্টা করার করুকগে সে আর উঠছে না ব্যস। কিন্তু মাহিরের সাথে পেরে উঠলো না সে। উঠতেই হলো তাকে। মাহির টেনে তুললো তাকে৷ হা হা। জেদ করে পার পেল না। অভিমানে মুখ ফিরিয়ে বললো,
-জোর খাটানোর চেষ্টা করো না। যাও। আমি খাব না বলেছি তো। কানে শোনো না?
-শুনেছি কিন্তু মানতে পারছি না। চল খেয়ে নিবি। আমিও খাইনি এশা।
এশা মাহিরের দিকে তাকায়। তারপর আবার বলে,
-কেনো কাজ করো গিয়ে। আমার কথা ভাবতে কে বলেছে তোমায়?
-তুই রেগে আছিস আমার উপর?
-রাগ করার মতো কিছু কী হয়েছে? হয়নি তো। তাহলে আমি রাগ করিনি।
-আচ্ছা শুয়ে পড় তবে।
মাহির উঠে যাচ্ছিলো তখন এশা খপ করে হাতটা ধরে নিয়ে বলে,
-রাগ করিনি বলেছি তাই বলে চলে যাবে! আমি অভিমান করেছি বোঝো না।
মাহির হেসে আবারও বসে তারপর এশার গাল টেনে দিয়ে বলে,
-হঠাৎ এই ছোট্ট মনে অভিমান জমলো কেনো?
-তুমি জানো না?
মাহির হাসলো হেসে বললো,
-না।
-থাক জানতে হবে না। তোমার খিদে পেয়েছে তাই না?
মাহির মাথা নাড়ায় যার অর্থ তার খিদে পেয়েছে। এশা নিজে থেকে বিছানা ছেড়ে নামে। মাহিরের হাত ধরে তাকেও নামায়।
তারপর দু’জনে একসাথে বাইরে আসে। এসেই সামনে দেখে থমকে যায় এশা।

Continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here